জাঁ-নেসার ওসমান
বাঙালির ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল দিন ১০ জানুয়ারি ১৯৭২। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। সেদিন সাত কোটি বাঙালি তাদের জীবনের বঞ্চনার শোষণের অবসানের মহেন্দ্রক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল।
ভেবেছিলো আজ থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের অমানিশা দূর করে আলোর মশাল জ্বালিয়ে বাংলার ঘরে ঘরে শান্তির পরশ বুলিয়ে দেবেন।
বঙ্গবন্ধু দিল্লির জনসভায় বললেনÑ ‘আমি বিশ্বাস করি সেক্যুলারিজমে, আমি বিশ্বাস করি গণতন্ত্রে, আমি বিশ্বাস করি সোশ্যালিজমে...’ বাংলার মানুষ মনেপ্রাণে সেদিন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিলেন। সুন্দর এক জীবনের স¦প্ন বুনেছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেবদূতের মতো গ্রহণ করলেন। সেদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার বক্তব্যে বলেছিলেনÑ ‘কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন- সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী,/ রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করনি।
কবিগুরুর কথা মিথ্যা, প্রমাণ হয়ে গেছে- আমার বাঙালি আজ মানুষ হয়েছে। ১৫ আগস্টের ১৯৭৫ সালের সেই কলঙ্কিত, বিভীষিকাময়, তিমির রাত্রির অবসান হয়ে যদি কবির ভাষা সত্য হতো, যদি রাত পোহালেই শোনা যেতো বঙ্গবন্ধু মরে নাই...’ তাহলে আজ বঙ্গবন্ধু দেখতেন তার বাঙালি আজ মানুষ হয়েছে, তারা নিজের অর্থায়নে পদ্মাসেতু গড়েছে, তারা মেট্রোরেলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাঙালি নিজস্ব স্যাটালাইটে সিগন্যাল পাঠাচ্ছে, রূপপুর পারমাণবিক চুল্লি হচ্ছে, দেশ আজ খেলাধুলায় বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে স্থান করে নিয়েছে। কর্ণফুলী টানেল তৈরি করেছে। সারা বিশ্বে আজ বাঙালি মাথা উঁচু করে বীরের মতো বেঁচে আছে।
পুরুষের পাশাপাশি আজ মেয়েরা সাফ ফুটবলে ভারতের মতো একশ পঞ্চাশ কোটির দেশকে পরাজিত করেছে। বাংলাদেশ তার সমুদ্রসীমার সমাধান করেছে।
আজ বাঙালি মানুষ হয়েছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী,/ রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করনি।’
সেই কথা আজ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। সাতশ বছর পর আবার বাঙলার মাটিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামের ফলে বাঙালি আবার তার অধিকার জয় করেছে।
আজ জাতিসংঘে বাংলা ভাষায় ভাষণ দিচ্ছে। বঙ্গবন্ধু আমি আর কতো লিষ্ট বাড়াবো। এরই পাশাপাশি যখন দেখি হে বঙ্গবন্ধু, আপনার বাঙালী আজ তিন বছরের মেয়েকে অত্যাচার করছে। প্রতিদিন রাস্তার পাশের হকার থেকে লাইন তুলছে, পর-স্ত্রীকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। জামিন বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ছে। ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করছে। সুইস ব্যাংকে দেশের টাকা পাচার করছে। কানাডার বেগম পাড়ায় বাঙালি প্রাসাদ গড়েছে। বাঙালি হয়ে বাঙালিকে খুন করছে। নানারকম ছলচাতুরি করে অশিক্ষিত গরীব জনগোষ্টিকে ধোঁকা দিচ্ছে। নিজ বৃদ্ধ পিতামাতাকে জায়গাজমির জন্য মারধোর করে রাস্তায় ফেলে দিচ্ছে। তখন কি করে বলি হে কবি গুরু আপনি বলেছিলেন, ‘সাত কোটি বাঙালিরে হে বঙ্গ জননী, রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করনি।’
হে বাংলার বাঙালি, আপনারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্তের সাথে বেইমানি করবেন না, প্লিজ। আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধাভরে বলুন ‘বঙ্গবন্ধু, আপনি আমাদের ভুল বুঝবেন না, আমরা আপনার প্রত্তাবর্তনের আশায় বুক বেঁধেছি, আবার আপনি ফিরে আসুন, কবির সপ্ন যেন সত্যি হয়, রাত পোহালেই যেন আমরা শুনতে পারি আপনি আবার ফিরে এসেছেন, সব বাঙালিকে আপনি আবার এক করেছেন, বাঙালি আর নিজেদের মাঝে মারামারি করছে না। আমরা আর ৭০০ কোটি টাকা চুরি করবো না!
পিকে হালদারের মতো জীবনে আর ৩০০০ কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে পালাবো না। বিশ্বাস করুন আমরা ২৫ মার্চের রাতে যে বীর পুলিশ বাহিনী বর্বর পাকিস্তানির বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলো, এখন আমরা সেই পুলিশ বাহিনীর পরবর্তী প্রজন্ম দূতাবাসের গেটে পুলিশ হয়ে পুলিশকে গুলি মারছি! না না এসব আর আমরা করবো!
বিশ্বাস করুন চুনারুঘাটের পোলার মতো আমাদের রক্ত ক্লিন করবাম। কোন অন্যায় ট্যাকা আমরার শরীলে ঢঁকতে দিতাম নাই। আমরা বাঙালি আবার আকাশ বাতাশ কাঁপায়া কমু- ‘আমরা ব্যেবাগ বাঙালিরা ভাই ভাই, আমগো কুনো চিহ্ন নাই, মার্কা নাই, আমরা ব্যেবাগ বাঙালিরা ভাই ভাই, সকাল বিকাল দুই বেলা দিল্লির জনসভার প্রতিধ্বনী করমু, কমু ‘আমরা বিশ্বাস করি সেক্যুলারিজমে, আমরা বিশ্বাস করি গণতন্ত্রে, আমরা বিশ্বাস করি সোশ্যালিজমে...।’
আমরা আবার সব বাঙালি এক হমু পঁচিশে মার্চের রাত্রির মতো।
[লেখক : চলচ্চিত্রকার]
জাঁ-নেসার ওসমান
শনিবার, ১৫ জুন ২০২৪
বাঙালির ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল দিন ১০ জানুয়ারি ১৯৭২। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। সেদিন সাত কোটি বাঙালি তাদের জীবনের বঞ্চনার শোষণের অবসানের মহেন্দ্রক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল।
ভেবেছিলো আজ থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের অমানিশা দূর করে আলোর মশাল জ্বালিয়ে বাংলার ঘরে ঘরে শান্তির পরশ বুলিয়ে দেবেন।
বঙ্গবন্ধু দিল্লির জনসভায় বললেনÑ ‘আমি বিশ্বাস করি সেক্যুলারিজমে, আমি বিশ্বাস করি গণতন্ত্রে, আমি বিশ্বাস করি সোশ্যালিজমে...’ বাংলার মানুষ মনেপ্রাণে সেদিন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিলেন। সুন্দর এক জীবনের স¦প্ন বুনেছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেবদূতের মতো গ্রহণ করলেন। সেদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার বক্তব্যে বলেছিলেনÑ ‘কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন- সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী,/ রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করনি।
কবিগুরুর কথা মিথ্যা, প্রমাণ হয়ে গেছে- আমার বাঙালি আজ মানুষ হয়েছে। ১৫ আগস্টের ১৯৭৫ সালের সেই কলঙ্কিত, বিভীষিকাময়, তিমির রাত্রির অবসান হয়ে যদি কবির ভাষা সত্য হতো, যদি রাত পোহালেই শোনা যেতো বঙ্গবন্ধু মরে নাই...’ তাহলে আজ বঙ্গবন্ধু দেখতেন তার বাঙালি আজ মানুষ হয়েছে, তারা নিজের অর্থায়নে পদ্মাসেতু গড়েছে, তারা মেট্রোরেলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাঙালি নিজস্ব স্যাটালাইটে সিগন্যাল পাঠাচ্ছে, রূপপুর পারমাণবিক চুল্লি হচ্ছে, দেশ আজ খেলাধুলায় বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে স্থান করে নিয়েছে। কর্ণফুলী টানেল তৈরি করেছে। সারা বিশ্বে আজ বাঙালি মাথা উঁচু করে বীরের মতো বেঁচে আছে।
পুরুষের পাশাপাশি আজ মেয়েরা সাফ ফুটবলে ভারতের মতো একশ পঞ্চাশ কোটির দেশকে পরাজিত করেছে। বাংলাদেশ তার সমুদ্রসীমার সমাধান করেছে।
আজ বাঙালি মানুষ হয়েছে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘সাত কোটি সন্তানেরে, হে মুগ্ধ জননী,/ রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করনি।’
সেই কথা আজ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। সাতশ বছর পর আবার বাঙলার মাটিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামের ফলে বাঙালি আবার তার অধিকার জয় করেছে।
আজ জাতিসংঘে বাংলা ভাষায় ভাষণ দিচ্ছে। বঙ্গবন্ধু আমি আর কতো লিষ্ট বাড়াবো। এরই পাশাপাশি যখন দেখি হে বঙ্গবন্ধু, আপনার বাঙালী আজ তিন বছরের মেয়েকে অত্যাচার করছে। প্রতিদিন রাস্তার পাশের হকার থেকে লাইন তুলছে, পর-স্ত্রীকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। জামিন বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ছে। ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করছে। সুইস ব্যাংকে দেশের টাকা পাচার করছে। কানাডার বেগম পাড়ায় বাঙালি প্রাসাদ গড়েছে। বাঙালি হয়ে বাঙালিকে খুন করছে। নানারকম ছলচাতুরি করে অশিক্ষিত গরীব জনগোষ্টিকে ধোঁকা দিচ্ছে। নিজ বৃদ্ধ পিতামাতাকে জায়গাজমির জন্য মারধোর করে রাস্তায় ফেলে দিচ্ছে। তখন কি করে বলি হে কবি গুরু আপনি বলেছিলেন, ‘সাত কোটি বাঙালিরে হে বঙ্গ জননী, রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করনি।’
হে বাংলার বাঙালি, আপনারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্তের সাথে বেইমানি করবেন না, প্লিজ। আজ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধাভরে বলুন ‘বঙ্গবন্ধু, আপনি আমাদের ভুল বুঝবেন না, আমরা আপনার প্রত্তাবর্তনের আশায় বুক বেঁধেছি, আবার আপনি ফিরে আসুন, কবির সপ্ন যেন সত্যি হয়, রাত পোহালেই যেন আমরা শুনতে পারি আপনি আবার ফিরে এসেছেন, সব বাঙালিকে আপনি আবার এক করেছেন, বাঙালি আর নিজেদের মাঝে মারামারি করছে না। আমরা আর ৭০০ কোটি টাকা চুরি করবো না!
পিকে হালদারের মতো জীবনে আর ৩০০০ কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে পালাবো না। বিশ্বাস করুন আমরা ২৫ মার্চের রাতে যে বীর পুলিশ বাহিনী বর্বর পাকিস্তানির বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলো, এখন আমরা সেই পুলিশ বাহিনীর পরবর্তী প্রজন্ম দূতাবাসের গেটে পুলিশ হয়ে পুলিশকে গুলি মারছি! না না এসব আর আমরা করবো!
বিশ্বাস করুন চুনারুঘাটের পোলার মতো আমাদের রক্ত ক্লিন করবাম। কোন অন্যায় ট্যাকা আমরার শরীলে ঢঁকতে দিতাম নাই। আমরা বাঙালি আবার আকাশ বাতাশ কাঁপায়া কমু- ‘আমরা ব্যেবাগ বাঙালিরা ভাই ভাই, আমগো কুনো চিহ্ন নাই, মার্কা নাই, আমরা ব্যেবাগ বাঙালিরা ভাই ভাই, সকাল বিকাল দুই বেলা দিল্লির জনসভার প্রতিধ্বনী করমু, কমু ‘আমরা বিশ্বাস করি সেক্যুলারিজমে, আমরা বিশ্বাস করি গণতন্ত্রে, আমরা বিশ্বাস করি সোশ্যালিজমে...।’
আমরা আবার সব বাঙালি এক হমু পঁচিশে মার্চের রাত্রির মতো।
[লেখক : চলচ্চিত্রকার]