alt

উপ-সম্পাদকীয়

মুসলিম আইনে জমি অগ্রক্রয়ের অধিকার বনাম বাস্তবতা

সিরাজ প্রামাণিক

: রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪

জমি ক্রয়ে প্রতিবেশী বা জমিসংলগ্ন জমি মালিকের জমি ক্রয়ে যে অধিকার রয়েছে, সেটাই মূলত মুসলিম অগ্রক্রয়। রহিম মিয়া এবং গণি মিয়া দুইজন প্রতিবেশী। রহিম মিয়া গণির সম্মতি ছাড়াই তার এক খ- জমি দূরবর্তী প্রতিবেশী মেহেদী হাসানের কাছে বিক্রি করে দেয়। এক্ষেত্রে গণি মিয়া উক্ত সম্পত্তির ক্ষেত্রে মুসলিম প্রিয়েমশন অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। মুসলিম আইনের ২৩১ ধারা অনুযায়ী ভুক্তভোগী প্রতিকার পেতে পারেন।

এ মামলা করতে কিন্তু বিক্রয়কৃত জমির দলিলের মূল্যমান অনুযায়ী টাকা আগে জমা দিতে হয় না। মোকদ্দমা করে জমি ক্রয়ের ডিক্রি প্রাপ্তির পর আদালতের আদেশ অনুযায়ী জমি ক্রয়ের টাকা জমা দিতে হয়। তিন শ্রেণীর ব্যক্তি এ অগ্রক্রয়ের দাবি করতে পারে। ১. সম্পত্তির সহ-অংশীদার, ২. কোনো সড়ক ব্যবহারের অথবা পানি নিষ্কাশনের অধিকারসম্পন্ন ব্যক্তি এবং ৩. সংলগ্ন স্থাবর সম্পত্তির মালিক।

প্রজাস্বত্ব আইনের ৯৬ ধারা অনুযায়ী শুধু উত্তরাধিকার সূত্রে সহ-শরিকদেরই মামলা করার অধিকার আছে। যেটা দলিলের মূল্য ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক অন্যান্য মূল্য জমা দিয়ে মোকদ্দমাটি করতে হয়। কিন্তু মুসলিম আইন অনুযায়ী, সব সহ-শরিকই মোকদ্দমা করতে পারবে। একে ‘শুফা’ অধিকারের মামলা বলা হয়।

১৯০৮ সালের প্রথম তফসিলের ১০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মুসলীম আইনের অধীনে অগ্রক্রয়ের জন্য রেজিস্ট্রেশনের তারিখ থেকে বা কেবল দখল অর্পণ যোগে বিক্রয় হয়ে থাকলে সেই দখল অর্পণের তারিখ থেকে এক বছরের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে।

রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর ৯৬ (১) ধারা অনুযায়ী এক বা একাধিক সহ-অংশীদারগণ ৮৯ ধারা অনুযায়ী নোটিশ জারির ২ মাসের মধ্যে বা ৮৯ ধারা অনুযায়ী যদি নোটিস জারি করা না হয়, তবে বিক্রয় সম্পর্কে অবগত হওয়ার তারিখ থেকে ২ মাসের মধ্যে অগ্রক্রয়ের মামলা করতে পারবেন। তবে শর্ত থাকে যে, এই ধারার অধীনে কোন আবেদন বিক্রয় দলিল নিবন্ধিত হওয়ার তারিখ থেকে ৩ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলে আর করা যাবে না।

অ-কৃষি প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৪৯ এর ২৪ ধারা অনুযায়ী কোন জমির এক বা একাধিক সহ-অংশীদার ২৩ ধারা অনুযায়ী নোটিস জারীর ৪ মাসের মধ্যে বা ২৩ ধারা অনুযায়ী যদি নোটিস জারি করা না হয়, তবে বিক্রয় সম্পর্কে অবগত হওয়ার তারিখ থেকে ৪ মাসের মধ্যে অগ্রক্রয়ের মামলা করতে পারবেন। মোকদ্দমা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় অগ্রক্রয়কারীর মৃত্যু হলে তার বৈধ প্রতিনিধি উক্ত মোকদ্দমা চালাতে পারেন।

মুুসলিম আইনে মোকদ্দমা করার সময় সীমা নিয়ে উচ্চ আদালতের এ সিদ্ধান্ত থেকে আরও পরিষ্কার জানা যায় যে, কোনো দলিল ০২/১২/১৯৭৫ ইং তারিখে রেজিস্ট্রির জন্য উপস্থাপন করা হয় এবং ঐ দলিলটি যদি ২৪/১০/১৯৭৯ ইং তারিখে রেজিস্ট্রি হয় এবং অগ্রক্রয়ের মামলাটি যদি ১৩/০২/১৯৮০ ইং তারিখে দায়ের করা হয়, সেক্ষেত্রে আপিল আদালত উক্ত মামলাটি তামাদি বলে বারিত করতে পারবে না। [৩১ ডিএলআর (এডি) ১১০]

এখন জানার বিষয় ক্রেতাকে মুসলমান হতে হবে কিনা। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত মোতাবেক, ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কেই অবশ্যই মুসলমান হতে হবে। যেখানে বিক্রেতা একজন হিন্দু সেখানে ক্রেতা মুসলমান হলেও কোন মুসলমান অগ্রক্রয়ের দাবি করতে পারেন না। অতএব কোন হিন্দুর নিকট কোন মুসলমানের সম্পত্তি বিক্রয় হলে এতে কোন মুসলমান অগ্রক্রয়ের অধিকার পেতে পারেন না।

তবে মুসলিম আইন অনুযায়ী অগ্রক্রয়ের দাবী উত্থাপন করতে হলে কিছু আনুষ্ঠানিকতা ও পদ্ধতি যথাযথ ও উপযুক্ত সময় পালন করতে হয়। প্রথম দাবী তলব-ই-মৌসিবত। শব্দগত অর্থে তলব-ই-মৌসিবত হলো লাফ দিয়ে দাবি করা। কিন্তু বাস্তবে বিষয়টি তা নয়। অগ্রক্রয়কারী ব্যক্তিকে বিক্রয় সম্পূর্ণ হওয়ার সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অগ্রক্রয়ের অধিকার প্রয়োগের ব্যাপারে নিজের অভিপ্রায় ঘোষণা করতে হয়। এটা মৌখিকভাবেও করা যেতে পারে আবার লিখিতভাবেও করা যেতে পারে। অর্থাৎ তলব-ই-মৌসিবত যে যথাযথভাবে এবং যথাসময়ে করা হয়েছিল এই বিষয়ে কিছু প্রমাণ থাকতে হবে।

দ্বিতীয় দাবী (তলব-ই-ইশাদ)। যার অর্থ সাক্ষীর সম্মুখে দাবি করা। কমপক্ষে দুইজন সাক্ষীর সামনে হতে হবে। এটি বিক্রেতা বা ক্রেতাকে সম্বোধন করে প্রকাশ করতে হবে। তবে তাদের কাউকে পাওয়া না গেলে দ্বিতীয় দাবিটি বিক্রীত সম্পত্তিটিকে সম্বোধন করে করতে হবে।

তৃতীয় দাবি (তলব-ই-তমলিক) প্রথম দুটি দাবির পরে তৃতীয় দাবি। প্রথম দুটি দাবির পর যদি ক্রেতা মেনে নেয় এবং তার নিকট সম্পত্তিটি বিক্রয় করে দেয় তাহলে অগ্রক্রয়ের দাবি বাস্তবায়িত হয়। সেক্ষেত্রে আর কোনো অতিরিক্ত আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন নেই এবং ক্রেতার স্থলে অগ্রক্রয়কারী প্রতিস্থাপিত হয়। কিন্তু যদি প্রথম দুটি দাবির পর অগ্রক্রয়কারী বিক্রীত সম্পত্তিটি পুনরায় ক্রয় করতে ব্যর্থ হন, তাহলে তাকে আইনগত প্রক্রিয়ার শরণাপন্ন হতে হবে অর্থাৎ আদালতে মুসলিম আইনের ২৩১ ধারা অনুযায়ী মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে।

[লেখক : আইনজীবী ]

জামাই মেলা : উৎসব, ঐতিহ্য ও কৃষ্টির রঙিন চিত্রপট

হারিয়ে যাওয়া ক্লাস, কঠোর মূল্যায়ন আর প্রশ্নের জটিলতায় নুয়ে পড়া এক প্রজন্ম

বৈষম্য দূর করে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলুন

চিকিৎসা যেন বাণিজ্যের হাতিয়ারে পরিণত না হয়

পথশিশু ও বাংলাদেশে সামাজিক চুক্তির ব্যর্থতা

মেগা প্রকল্প : প্রশ্ন হওয়া উচিত স্বচ্ছতা নিয়ে

আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি

স্মার্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা : উপগ্রহ চিত্র ও ওয়েবসাইটের অপরিহার্যতা

ক্ষমতা ও জনপ্রশাসন : আমলাতন্ত্রের ছায়াতলে আমজনতা

জনসংখ্যা : সম্পদ না সংকট?

ব্রিকসে নতুন ভূ-রাজনৈতিক ব্যবস্থার উত্থান

রম্যগদ্য : ‘ল্যাংড়া-লুলা, আতুড়-পাতুড়’

আষাঢ়ী পূর্ণিমা : আত্মশুদ্ধির সাধনায় বুদ্ধের অনন্ত আলো

বদলে যাওয়া মাটিতে সাহসী বীজ : জলবায়ুর বিপরীতে বাংলাদেশের কৃষির অভিযোজনগাথা

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থান-গাথা : ‘শিকলে নাহি দিব ধরা’

প্রাচীন যৌধেয় জাতি ও তাদের সাম্যবাদী শাসন

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন

টেকসই উন্নয়নের স্বপ্নপূরণে উপগ্রহ চিত্রই চাবিকাঠি

রাবার শিল্প : সংকট, করণীয় ও উত্তরণের দিশা

রম্যগদ্য : দুধ, দই, কলা...

ছবি

কোপার্নিকাস : আলো হয়ে জন্ম নেওয়া বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবর্তক

জলবায়ু সংকটে মানবসভ্যতা

টেকসই অর্থনীতির জন্য চাই টেকসই ব্যাংকিং

ডিজিটাল দাসত্ব : মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : আস্থা ভঙ্গ ও জবাবদিহিতার সংকট

আসামি এখন নির্বাচন কমিশন

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

ছবি

বাংলার অনন্য লোকসংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

tab

উপ-সম্পাদকীয়

মুসলিম আইনে জমি অগ্রক্রয়ের অধিকার বনাম বাস্তবতা

সিরাজ প্রামাণিক

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪

জমি ক্রয়ে প্রতিবেশী বা জমিসংলগ্ন জমি মালিকের জমি ক্রয়ে যে অধিকার রয়েছে, সেটাই মূলত মুসলিম অগ্রক্রয়। রহিম মিয়া এবং গণি মিয়া দুইজন প্রতিবেশী। রহিম মিয়া গণির সম্মতি ছাড়াই তার এক খ- জমি দূরবর্তী প্রতিবেশী মেহেদী হাসানের কাছে বিক্রি করে দেয়। এক্ষেত্রে গণি মিয়া উক্ত সম্পত্তির ক্ষেত্রে মুসলিম প্রিয়েমশন অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। মুসলিম আইনের ২৩১ ধারা অনুযায়ী ভুক্তভোগী প্রতিকার পেতে পারেন।

এ মামলা করতে কিন্তু বিক্রয়কৃত জমির দলিলের মূল্যমান অনুযায়ী টাকা আগে জমা দিতে হয় না। মোকদ্দমা করে জমি ক্রয়ের ডিক্রি প্রাপ্তির পর আদালতের আদেশ অনুযায়ী জমি ক্রয়ের টাকা জমা দিতে হয়। তিন শ্রেণীর ব্যক্তি এ অগ্রক্রয়ের দাবি করতে পারে। ১. সম্পত্তির সহ-অংশীদার, ২. কোনো সড়ক ব্যবহারের অথবা পানি নিষ্কাশনের অধিকারসম্পন্ন ব্যক্তি এবং ৩. সংলগ্ন স্থাবর সম্পত্তির মালিক।

প্রজাস্বত্ব আইনের ৯৬ ধারা অনুযায়ী শুধু উত্তরাধিকার সূত্রে সহ-শরিকদেরই মামলা করার অধিকার আছে। যেটা দলিলের মূল্য ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক অন্যান্য মূল্য জমা দিয়ে মোকদ্দমাটি করতে হয়। কিন্তু মুসলিম আইন অনুযায়ী, সব সহ-শরিকই মোকদ্দমা করতে পারবে। একে ‘শুফা’ অধিকারের মামলা বলা হয়।

১৯০৮ সালের প্রথম তফসিলের ১০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মুসলীম আইনের অধীনে অগ্রক্রয়ের জন্য রেজিস্ট্রেশনের তারিখ থেকে বা কেবল দখল অর্পণ যোগে বিক্রয় হয়ে থাকলে সেই দখল অর্পণের তারিখ থেকে এক বছরের মধ্যে মামলা দায়ের করতে হবে।

রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৫০ এর ৯৬ (১) ধারা অনুযায়ী এক বা একাধিক সহ-অংশীদারগণ ৮৯ ধারা অনুযায়ী নোটিশ জারির ২ মাসের মধ্যে বা ৮৯ ধারা অনুযায়ী যদি নোটিস জারি করা না হয়, তবে বিক্রয় সম্পর্কে অবগত হওয়ার তারিখ থেকে ২ মাসের মধ্যে অগ্রক্রয়ের মামলা করতে পারবেন। তবে শর্ত থাকে যে, এই ধারার অধীনে কোন আবেদন বিক্রয় দলিল নিবন্ধিত হওয়ার তারিখ থেকে ৩ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলে আর করা যাবে না।

অ-কৃষি প্রজাস্বত্ব আইন, ১৯৪৯ এর ২৪ ধারা অনুযায়ী কোন জমির এক বা একাধিক সহ-অংশীদার ২৩ ধারা অনুযায়ী নোটিস জারীর ৪ মাসের মধ্যে বা ২৩ ধারা অনুযায়ী যদি নোটিস জারি করা না হয়, তবে বিক্রয় সম্পর্কে অবগত হওয়ার তারিখ থেকে ৪ মাসের মধ্যে অগ্রক্রয়ের মামলা করতে পারবেন। মোকদ্দমা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় অগ্রক্রয়কারীর মৃত্যু হলে তার বৈধ প্রতিনিধি উক্ত মোকদ্দমা চালাতে পারেন।

মুুসলিম আইনে মোকদ্দমা করার সময় সীমা নিয়ে উচ্চ আদালতের এ সিদ্ধান্ত থেকে আরও পরিষ্কার জানা যায় যে, কোনো দলিল ০২/১২/১৯৭৫ ইং তারিখে রেজিস্ট্রির জন্য উপস্থাপন করা হয় এবং ঐ দলিলটি যদি ২৪/১০/১৯৭৯ ইং তারিখে রেজিস্ট্রি হয় এবং অগ্রক্রয়ের মামলাটি যদি ১৩/০২/১৯৮০ ইং তারিখে দায়ের করা হয়, সেক্ষেত্রে আপিল আদালত উক্ত মামলাটি তামাদি বলে বারিত করতে পারবে না। [৩১ ডিএলআর (এডি) ১১০]

এখন জানার বিষয় ক্রেতাকে মুসলমান হতে হবে কিনা। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত মোতাবেক, ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কেই অবশ্যই মুসলমান হতে হবে। যেখানে বিক্রেতা একজন হিন্দু সেখানে ক্রেতা মুসলমান হলেও কোন মুসলমান অগ্রক্রয়ের দাবি করতে পারেন না। অতএব কোন হিন্দুর নিকট কোন মুসলমানের সম্পত্তি বিক্রয় হলে এতে কোন মুসলমান অগ্রক্রয়ের অধিকার পেতে পারেন না।

তবে মুসলিম আইন অনুযায়ী অগ্রক্রয়ের দাবী উত্থাপন করতে হলে কিছু আনুষ্ঠানিকতা ও পদ্ধতি যথাযথ ও উপযুক্ত সময় পালন করতে হয়। প্রথম দাবী তলব-ই-মৌসিবত। শব্দগত অর্থে তলব-ই-মৌসিবত হলো লাফ দিয়ে দাবি করা। কিন্তু বাস্তবে বিষয়টি তা নয়। অগ্রক্রয়কারী ব্যক্তিকে বিক্রয় সম্পূর্ণ হওয়ার সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অগ্রক্রয়ের অধিকার প্রয়োগের ব্যাপারে নিজের অভিপ্রায় ঘোষণা করতে হয়। এটা মৌখিকভাবেও করা যেতে পারে আবার লিখিতভাবেও করা যেতে পারে। অর্থাৎ তলব-ই-মৌসিবত যে যথাযথভাবে এবং যথাসময়ে করা হয়েছিল এই বিষয়ে কিছু প্রমাণ থাকতে হবে।

দ্বিতীয় দাবী (তলব-ই-ইশাদ)। যার অর্থ সাক্ষীর সম্মুখে দাবি করা। কমপক্ষে দুইজন সাক্ষীর সামনে হতে হবে। এটি বিক্রেতা বা ক্রেতাকে সম্বোধন করে প্রকাশ করতে হবে। তবে তাদের কাউকে পাওয়া না গেলে দ্বিতীয় দাবিটি বিক্রীত সম্পত্তিটিকে সম্বোধন করে করতে হবে।

তৃতীয় দাবি (তলব-ই-তমলিক) প্রথম দুটি দাবির পরে তৃতীয় দাবি। প্রথম দুটি দাবির পর যদি ক্রেতা মেনে নেয় এবং তার নিকট সম্পত্তিটি বিক্রয় করে দেয় তাহলে অগ্রক্রয়ের দাবি বাস্তবায়িত হয়। সেক্ষেত্রে আর কোনো অতিরিক্ত আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন নেই এবং ক্রেতার স্থলে অগ্রক্রয়কারী প্রতিস্থাপিত হয়। কিন্তু যদি প্রথম দুটি দাবির পর অগ্রক্রয়কারী বিক্রীত সম্পত্তিটি পুনরায় ক্রয় করতে ব্যর্থ হন, তাহলে তাকে আইনগত প্রক্রিয়ার শরণাপন্ন হতে হবে অর্থাৎ আদালতে মুসলিম আইনের ২৩১ ধারা অনুযায়ী মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে।

[লেখক : আইনজীবী ]

back to top