alt

উপ-সম্পাদকীয়

সিগমুন্ড ফ্রয়েড ও মনঃসমীক্ষণ

রিপন আল মামুন

: বুধবার, ২৪ জুলাই ২০২৪

সেই আদিকাল থেকে মানুষের মন নিয়ে রহস্যের শেষ নেই। এ যেন রহস্যে ঘেরা সৃষ্টিকর্তার এক জটিল বস্তু। মানুষের এই মন যেমন জটিল ঠিক তেমনি তার আচার-আচরণও আরও বেশি জটিল। আর এই জটিলতাকে সরলীকরণ করার জন্য বিজ্ঞানের একটি স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে গড়ে উঠেছে মনোবিজ্ঞান। বিজ্ঞানের এই শাখায় মানুষের মন ও তার আচার-আচরণ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ ও গবেষণা করা হয়। অনেক মনোবিজ্ঞানীর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে মনোবিজ্ঞান বিজ্ঞানের একটি স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে আমাদের কাছে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। সেই সব ব্যক্তিদের মধ্যে উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে ঝলমলে করে উঠে যে নামটি সেটি সিগমুন্ড ফ্রয়েড।

সিগমুন্ড ফ্রয়েড ছিলেন অস্ট্রিয় স্নায়ু চিকিৎসক ও মনোস্তত্ত্ববিদ। ফ্রয়েডই প্রথম মনোবিজ্ঞানকে চিকিৎসা শাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। অস্ট্রিয় এই মানসিক রোগ চিকিৎসক ও মনস্তাত্ত্বিক সিগমুন্ড ফ্রয়েড এর জন্ম ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দের ৬ মে। সিগমুন্ড ফ্রয়েড “মনঃসমীক্ষণ” নামক মনোচিকিৎসা পদ্ধতির উদ্ভাবক। তাকে “মনোবীক্ষণের জনক” বা মনোবিজ্ঞানের জনকও বলা হয়।

সিগমুন্ড ফ্রয়েডের বাবা-মা ছিলেন ইহুদি, পশ্চিম ইউক্রেন এবং পোল্যান্ডের মধ্যবর্তী অঞ্চল গালিসিয়ার বাসিন্দা ছিলেন। তার বাবার নাম ছিল জেকব ফ্রয়েড এবং মায়ের নাম ছিল এমালিয়া নাথানশন। বাবা ছিলেন উলের ব্যবসায়ী।

ফ্রয়েডের প্রাথমিক শিক্ষা ভিয়েনাতে শুরু হয়। তিনি পড়াশোনায় মেধাবী ছাত্র ছিলেন এবং জার্মান, ফ্রেঞ্চ, ইতালিয়ান, স্প্যানিশ ইংলিশ, ল্যাটিন ও গ্রিক ভাষার ওপর অসাধারণ দক্ষতা ছিল। ১৮৭৩ সালে ফ্রয়েড স্পার্ল জিমনেসিয়াম থেকে স্নাতক হন। এরপর তিনি ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় মনোবিদ্যার ওপরে কাজ করতে শুরু করেন। ১৮৮১ সালে মার্চ মাসে তিনি এম.ডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৮৮২ সালে তিনি ভিয়েনার জেনারেল হসপিটালে ক্লিনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনি হিসেবে কাজ শুরু করেন।

পরবর্তীতে সিগমুন্ড ফ্রয়েড মনোবিজ্ঞানের ওপর বৃহৎ পরিসরে কাজ শুরু করেন। তার এই কাজ এবং গবেষণাগুলো তারই লেখা বিভিন্ন গ্রন্থের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আর এই গ্রন্থগুলো বিশ্বব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। ফ্রয়েডের প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘ইন্টারপ্রিটেশন অফ ড্রিমস’ (১৯০০), ‘সাইকোপ্যাথলজি অফ এভরি ডে লাইফ’ (১৯০১), ‘জোকস এন্ড দেয়ার রিলেশনস টু দি আনকন্সাস’ (১৯০৫), ‘ফাইভ লেকচারস অন সাইকো অ্যানালিসিস’ (১৯১০), ‘দি ইগো অ্যান্ড দি ইড’ (১৯২৩) ইত্যাদি।

সিগমুন্ড ফ্রয়েড সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় “মনঃসমীক্ষণ” নামক মনোচিকিৎসা পদ্ধতির উদ্ভাবনের জন্য। ফ্রয়েডের মতে আমাদের মনোজগতে যত ভাব, অনুভূতি, আবেগ ইত্যাদি আছে, তা তিনটি শ্রেণীভুক্ত। ফ্রয়েডের পূর্ব পর্যন্ত মনের অন্যান্য অংশের ক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের বিজ্ঞানসম্মত ধারণা ছিল না। তিনি বলেছেন তিনটি স্তর আছে- চেতন, অবচেতন বা প্রাক-চেতন এবং অচেতন।

মনের যে অংশের সঙ্গে বাস্তব জগতের সম্পর্ক বর্তমান বা মনের যে অংশের বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমরা সচেতন, তাকেই তিনি বলেছেন চেতন মন । যখন আমরা কোনো কাজ করি বা কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করি, কোনো কিছু উপলব্ধি করি, কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি তখন আমাদের মনের এ অংশ কাজ করে থাকে। এটি মনের সবচেয়ে বৃহত্তর অংশ। অবচেতন মনে অবস্থিত বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ও অবচেতন মনের বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণাই থাকে না। এক কথায় আমাদের অবচেতন মনের দরজা হলো আমাদের সচেতন মনঃযার মাধ্যমে আমাদের অর্জিত স্মৃতি, অভিজ্ঞতা আমাদের অবচেতন মনে সংরক্ষিত হতে শুরু করে। এই অবচেতন মনই; কিন্তু মানুষের ব্যক্তিত্ব নির্ধারণ করে থাকে। আর মনের যে অংশটি আমাদের জাগ্রত চেতনার আড়ালে অথবা সরাসরি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে তাকে অচেতন মন বলা হয়। অচেতন মন আমাদের জৈবিক প্রয়োজনগুলো যেমন ক্ষুধা, পিপাসা, যৌনতা ইত্যাদির বার্তা আমাদের চেতন মন থেকে সংগ্রহ করে। আবার, মানুষ সচেতন অবস্থায় যেসব চিন্তা, ভাবনা, অনুভূতি উপলব্ধি করে সেই সবকিছু প্রাক-চেতন মনের স্তর পেরিয়ে অচেতন মনে সঞ্চিত হয়।

সিগমুন্ড ফ্রয়েড বলেছেন মানব স্বত্তা মূলত তিনটি মানষিক অবস্থার সমন্বয়ে গঠিত। যাকে আমরা মন বলি তা মূলত এটাই। এর একটি হলো ইড, অন্যটি ইগো এবং শেষটি সুপার ইগো। ইড মূলত : মানুষের আদিম স্বত্তা হিসেবে কাজ করে। মানব মনের স্বভাবজাত চাহিদা পূরণে কাজ করে ইড। এটাকে অনেকটা ‘মন যা চায় তাই’ এর সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। সুপার ইগোকে বলা যেতে পারে মানুষের বিবেক। ইড যখন মানুষের কামনা-বাসনা পূরণে উদ্দীপ্ত করে, সুপার ইগো তখন তাকে বাধা দেয়। সুপার ইগো সবসময় মানুষকে মানবিক চাহিদার ঊর্ধ্বে থেকে ভালো কাজ করতে উদ্দীপিত করে। অন্যদিকে, ইগো হচ্ছে- এই দুই অবস্থার একটি মধ্যবর্তী স্বত্তা। ইগো এবং সুপার ইগোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে চলাই ইগোর কাজ।

মনোস্তাত্ত্বিক এ রকম অনেক বিষয়ের সুক্ষ্ম ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ দিয়েছেন সিগমুন্ড ফ্রয়েড। তবে সিগমুন্ড ফ্রয়েডের জীবনের শেষ পরিণতিটা তেমন সুখকর হয়নি। হয়তো অনেকেই জানেন না সিগমুন্ড ফ্রয়েড প্রচুর সিগারেট খেত। তার হৃদযন্ত্রের অস্বাভাবিক ক্রিয়ার মূল কারণ ছিল এই অতিরিক্ত ধূমপান। তিনি সম্ভাব্য হার্ট অ্যাটাক এড়াতে ১৪ মাস ধূমপান বন্ধ রেখেছিলেন। এরপর পুনরায় ধূমপান শুরু করেন। এই ধূমপান বন্ধ রাখা ও পুনরায় শুরু করা সম্পর্কে তার মন্তব্য ছিল : ধূমপান ছাড়তে গিয়ে তাকে যে অমানুষিক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে, তা ছিল সহ্যসীমার বাইরে। কিছুদিন পর তার মুখের ভেতর এবং চিবুকে ক্যান্সার ধরা পড়ে। এই মারাত্মক পরিণতি যে তার অত্যধিক ধূমপানের ফল, তাও তাকে জানানো হলো। ৩৩টি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রোপচারের পরও তিনি ধূমপান বন্ধ করতে পারলেন না, চালিয়েই গেলেন।

শেষ পর্যন্ত মুখগহ্বরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন তিনি। ১৯২৩ সালে মুখগহ্বরে লিউকোপ্লাকিয়া নামে একটি অল্প জমাট মাংসপি- দেখতে পান তিনি। পরে এটি কেটে বাদ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি চিকিৎসকরা তার এই রোগটিকে অনিয়ন্ত্রণযোগ্য বলে ঘোষণা করেন। এরপরই তিনি তার চিকিৎসক এবং বন্ধু ম্যাক্স স্কার ও মেয়ে আনা ফ্রয়েডের সঙ্গে পরামর্শ করে স্বেচ্ছামৃত্যু গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৩৯ সালে ২৩ সেপ্টেম্বর যথেষ্ট পরিমাণে মরফিন গ্রহণ করে তার মৃত্যু হয়।

[লেখক : শিক্ষার্থী, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়]

অতীত থেকে মুক্তি এবং ইতিবাচক জীবনযাপন

মুক্তি সংগ্রামে তিনটি ধারা

বাসযোগ্যতার সূচকে ঢাকা কেন পিছিয়ে

শুধু নিচেই নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর

উপেক্ষিত আটকে পড়া পাকিস্তানিরা

রম্যগদ্য : সিন্দাবাদের বুড়ো ও আমরা

নেই কেনো সেই পাখি

বায়ুদূষণ থেকে মুক্তি কোন পথে

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র : রাষ্ট্র সংস্কারের দুর্গম পথ

পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র

বিজয়ের প্রেরণা

মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার পুনর্বীক্ষণ

সিদরাত জেবিনের মৃত্যু অথবা প্রশ্নহীন বায়ুদূষণ

বিজয়ের গৌরব ও সম্ভাবনাময় তরুণ সমাজ

ছবি

মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি বন্ধুদের অবদান

ছবি

বিজয় সংগ্রামের সূচনার সন্ধানে

মানসম্মত কনটেন্ট ও টিআরপির দ্বৈরথ

জিকা ভাইরাস রোধে প্রয়োজন সচেতনতা

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক

স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার গুরুত্ব

ঢাকার বাতাস বিষাক্ত কেন

চরের কৃষি ও কৃষকের জীবন

নিম্ন আয়ের মানুষ ভালো নাই

সবার আগে নিজেকে পরিবর্তন করা দরকার

পুলিশ কবে পুলিশ হবে

জীবন ফিরে আসুক বাংলার নদীগুলোতে

কান্দন সরেন হত্যা ও ভূমি বিরোধ কি এড়ানো যেত না

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র: রাষ্ট্র বিনির্মাণে সমস্যা কোথায়?

মানবাধিকার দিবস : মানুষের অধিকার নিয়ে কেন এত কথা?

আমলাতান্ত্রিক স্বচ্ছতা : সংস্কারের পথে নাকি পুনরাবৃত্তি?

খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কিছু কথা

ছবি

বেগম রোকেয়া : নারী জাগরণের অগ্রদূত

দুর্নীতির সর্বগ্রাসী বিস্তার বন্ধ করতে হবে

মা তোর বদনখানি মলিন হলে

ব্যবসায়ী নেতৃত্বশূন্য ই-ক্যাব

মূল্যস্ফীতির হিসাব নির্ণয়ে নতুন পদ্ধতির প্রাসঙ্গিকতা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

সিগমুন্ড ফ্রয়েড ও মনঃসমীক্ষণ

রিপন আল মামুন

বুধবার, ২৪ জুলাই ২০২৪

সেই আদিকাল থেকে মানুষের মন নিয়ে রহস্যের শেষ নেই। এ যেন রহস্যে ঘেরা সৃষ্টিকর্তার এক জটিল বস্তু। মানুষের এই মন যেমন জটিল ঠিক তেমনি তার আচার-আচরণও আরও বেশি জটিল। আর এই জটিলতাকে সরলীকরণ করার জন্য বিজ্ঞানের একটি স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে গড়ে উঠেছে মনোবিজ্ঞান। বিজ্ঞানের এই শাখায় মানুষের মন ও তার আচার-আচরণ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ ও গবেষণা করা হয়। অনেক মনোবিজ্ঞানীর অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে মনোবিজ্ঞান বিজ্ঞানের একটি স্বতন্ত্র শাখা হিসেবে আমাদের কাছে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। সেই সব ব্যক্তিদের মধ্যে উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে ঝলমলে করে উঠে যে নামটি সেটি সিগমুন্ড ফ্রয়েড।

সিগমুন্ড ফ্রয়েড ছিলেন অস্ট্রিয় স্নায়ু চিকিৎসক ও মনোস্তত্ত্ববিদ। ফ্রয়েডই প্রথম মনোবিজ্ঞানকে চিকিৎসা শাস্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। অস্ট্রিয় এই মানসিক রোগ চিকিৎসক ও মনস্তাত্ত্বিক সিগমুন্ড ফ্রয়েড এর জন্ম ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দের ৬ মে। সিগমুন্ড ফ্রয়েড “মনঃসমীক্ষণ” নামক মনোচিকিৎসা পদ্ধতির উদ্ভাবক। তাকে “মনোবীক্ষণের জনক” বা মনোবিজ্ঞানের জনকও বলা হয়।

সিগমুন্ড ফ্রয়েডের বাবা-মা ছিলেন ইহুদি, পশ্চিম ইউক্রেন এবং পোল্যান্ডের মধ্যবর্তী অঞ্চল গালিসিয়ার বাসিন্দা ছিলেন। তার বাবার নাম ছিল জেকব ফ্রয়েড এবং মায়ের নাম ছিল এমালিয়া নাথানশন। বাবা ছিলেন উলের ব্যবসায়ী।

ফ্রয়েডের প্রাথমিক শিক্ষা ভিয়েনাতে শুরু হয়। তিনি পড়াশোনায় মেধাবী ছাত্র ছিলেন এবং জার্মান, ফ্রেঞ্চ, ইতালিয়ান, স্প্যানিশ ইংলিশ, ল্যাটিন ও গ্রিক ভাষার ওপর অসাধারণ দক্ষতা ছিল। ১৮৭৩ সালে ফ্রয়েড স্পার্ল জিমনেসিয়াম থেকে স্নাতক হন। এরপর তিনি ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয় মনোবিদ্যার ওপরে কাজ করতে শুরু করেন। ১৮৮১ সালে মার্চ মাসে তিনি এম.ডি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৮৮২ সালে তিনি ভিয়েনার জেনারেল হসপিটালে ক্লিনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনি হিসেবে কাজ শুরু করেন।

পরবর্তীতে সিগমুন্ড ফ্রয়েড মনোবিজ্ঞানের ওপর বৃহৎ পরিসরে কাজ শুরু করেন। তার এই কাজ এবং গবেষণাগুলো তারই লেখা বিভিন্ন গ্রন্থের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। আর এই গ্রন্থগুলো বিশ্বব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। ফ্রয়েডের প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘ইন্টারপ্রিটেশন অফ ড্রিমস’ (১৯০০), ‘সাইকোপ্যাথলজি অফ এভরি ডে লাইফ’ (১৯০১), ‘জোকস এন্ড দেয়ার রিলেশনস টু দি আনকন্সাস’ (১৯০৫), ‘ফাইভ লেকচারস অন সাইকো অ্যানালিসিস’ (১৯১০), ‘দি ইগো অ্যান্ড দি ইড’ (১৯২৩) ইত্যাদি।

সিগমুন্ড ফ্রয়েড সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় “মনঃসমীক্ষণ” নামক মনোচিকিৎসা পদ্ধতির উদ্ভাবনের জন্য। ফ্রয়েডের মতে আমাদের মনোজগতে যত ভাব, অনুভূতি, আবেগ ইত্যাদি আছে, তা তিনটি শ্রেণীভুক্ত। ফ্রয়েডের পূর্ব পর্যন্ত মনের অন্যান্য অংশের ক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের বিজ্ঞানসম্মত ধারণা ছিল না। তিনি বলেছেন তিনটি স্তর আছে- চেতন, অবচেতন বা প্রাক-চেতন এবং অচেতন।

মনের যে অংশের সঙ্গে বাস্তব জগতের সম্পর্ক বর্তমান বা মনের যে অংশের বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমরা সচেতন, তাকেই তিনি বলেছেন চেতন মন । যখন আমরা কোনো কাজ করি বা কোনো কিছু নিয়ে চিন্তা করি, কোনো কিছু উপলব্ধি করি, কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি তখন আমাদের মনের এ অংশ কাজ করে থাকে। এটি মনের সবচেয়ে বৃহত্তর অংশ। অবচেতন মনে অবস্থিত বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ও অবচেতন মনের বিভিন্ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণাই থাকে না। এক কথায় আমাদের অবচেতন মনের দরজা হলো আমাদের সচেতন মনঃযার মাধ্যমে আমাদের অর্জিত স্মৃতি, অভিজ্ঞতা আমাদের অবচেতন মনে সংরক্ষিত হতে শুরু করে। এই অবচেতন মনই; কিন্তু মানুষের ব্যক্তিত্ব নির্ধারণ করে থাকে। আর মনের যে অংশটি আমাদের জাগ্রত চেতনার আড়ালে অথবা সরাসরি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে তাকে অচেতন মন বলা হয়। অচেতন মন আমাদের জৈবিক প্রয়োজনগুলো যেমন ক্ষুধা, পিপাসা, যৌনতা ইত্যাদির বার্তা আমাদের চেতন মন থেকে সংগ্রহ করে। আবার, মানুষ সচেতন অবস্থায় যেসব চিন্তা, ভাবনা, অনুভূতি উপলব্ধি করে সেই সবকিছু প্রাক-চেতন মনের স্তর পেরিয়ে অচেতন মনে সঞ্চিত হয়।

সিগমুন্ড ফ্রয়েড বলেছেন মানব স্বত্তা মূলত তিনটি মানষিক অবস্থার সমন্বয়ে গঠিত। যাকে আমরা মন বলি তা মূলত এটাই। এর একটি হলো ইড, অন্যটি ইগো এবং শেষটি সুপার ইগো। ইড মূলত : মানুষের আদিম স্বত্তা হিসেবে কাজ করে। মানব মনের স্বভাবজাত চাহিদা পূরণে কাজ করে ইড। এটাকে অনেকটা ‘মন যা চায় তাই’ এর সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। সুপার ইগোকে বলা যেতে পারে মানুষের বিবেক। ইড যখন মানুষের কামনা-বাসনা পূরণে উদ্দীপ্ত করে, সুপার ইগো তখন তাকে বাধা দেয়। সুপার ইগো সবসময় মানুষকে মানবিক চাহিদার ঊর্ধ্বে থেকে ভালো কাজ করতে উদ্দীপিত করে। অন্যদিকে, ইগো হচ্ছে- এই দুই অবস্থার একটি মধ্যবর্তী স্বত্তা। ইগো এবং সুপার ইগোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে চলাই ইগোর কাজ।

মনোস্তাত্ত্বিক এ রকম অনেক বিষয়ের সুক্ষ্ম ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ দিয়েছেন সিগমুন্ড ফ্রয়েড। তবে সিগমুন্ড ফ্রয়েডের জীবনের শেষ পরিণতিটা তেমন সুখকর হয়নি। হয়তো অনেকেই জানেন না সিগমুন্ড ফ্রয়েড প্রচুর সিগারেট খেত। তার হৃদযন্ত্রের অস্বাভাবিক ক্রিয়ার মূল কারণ ছিল এই অতিরিক্ত ধূমপান। তিনি সম্ভাব্য হার্ট অ্যাটাক এড়াতে ১৪ মাস ধূমপান বন্ধ রেখেছিলেন। এরপর পুনরায় ধূমপান শুরু করেন। এই ধূমপান বন্ধ রাখা ও পুনরায় শুরু করা সম্পর্কে তার মন্তব্য ছিল : ধূমপান ছাড়তে গিয়ে তাকে যে অমানুষিক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে, তা ছিল সহ্যসীমার বাইরে। কিছুদিন পর তার মুখের ভেতর এবং চিবুকে ক্যান্সার ধরা পড়ে। এই মারাত্মক পরিণতি যে তার অত্যধিক ধূমপানের ফল, তাও তাকে জানানো হলো। ৩৩টি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রোপচারের পরও তিনি ধূমপান বন্ধ করতে পারলেন না, চালিয়েই গেলেন।

শেষ পর্যন্ত মুখগহ্বরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন তিনি। ১৯২৩ সালে মুখগহ্বরে লিউকোপ্লাকিয়া নামে একটি অল্প জমাট মাংসপি- দেখতে পান তিনি। পরে এটি কেটে বাদ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু ১৯৩৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি চিকিৎসকরা তার এই রোগটিকে অনিয়ন্ত্রণযোগ্য বলে ঘোষণা করেন। এরপরই তিনি তার চিকিৎসক এবং বন্ধু ম্যাক্স স্কার ও মেয়ে আনা ফ্রয়েডের সঙ্গে পরামর্শ করে স্বেচ্ছামৃত্যু গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৩৯ সালে ২৩ সেপ্টেম্বর যথেষ্ট পরিমাণে মরফিন গ্রহণ করে তার মৃত্যু হয়।

[লেখক : শিক্ষার্থী, মনোবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়]

back to top