alt

উপ-সম্পাদকীয়

স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে আয়ুর্বেদের সম্ভাবনা

সমীর কুমার সাহা

: রোববার, ২৮ জুলাই ২০২৪

আয়ুুর্বেদ হলো একটি ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা পদ্ধতি যা এই উপমহাদেশে বহু শতাব্দী ধরে চর্চা হয়ে আসছে। এই ঐতিহ্যগত চিকিৎসা পদ্ধতিটি প্রায় ৫,০০০ বছর আগে ভারতবর্ষে উদ্ভূত হয়েছিল। এটি এই বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে যে মানবদেহ মহাবিশ্বের একটি অণুজীব এবং সেই স্বাস্থ্য অর্জিত হয় যখন শরীর প্রকৃতির সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখে। বর্তমানে, ৩০টিরও বেশি দেশ আয়ুুর্বেদকে চিরাচরিত চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

আয়ুুর্বেদ ভেষজ, ওষুধ, ম্যাসেজ, যোগব্যায়াম এবং ডায়েটসহ স্বাস্থ্য এবং কল্যাণ উন্নীত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের থেরাপি ব্যবহার করে। আয়ুুর্বেদ হলো স্বাস্থ্যের জন্য একটি সামগ্রিক পদ্ধতি যা সুস্থতার শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক দিকগুলোকে বিবেচনা করে।

মানবদেহ তিনটি দোষ দ্বারা গঠিত, যথা: বাত, পিত্ত এবং কফ। প্রতিটি দোষ আবার বিভিন্ন শারীরিক এবং মানসিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে যুক্ত। দোষের ভারসাম্য থাকলে সুস্বাস্থ্য অর্জিত হয়। আর দোষের ভারসাম্যহীনতার কারণে রোগ হয়। আয়ুুর্বেদ চিকিৎসাগুলো মূলত এই দোষের ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করতে এবং স্বাস্থ্য ও সুস্থতার উন্নতি করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

আয়ুুর্বেদ হজম সমস্যা, শ্বাসকষ্ট, ত্বকের সমস্যা, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, দীর্ঘস্থায়ী রোগসহ বিভিন্ন রোগ-ব্যাধির চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

আয়ুুর্বেদ দীর্ঘকাল ধরে ওষুধের অন্যতম প্রাচীন এবং সু-নথিভুক্ত পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত এবং আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। একজন সুস্থ ব্যক্তির সুস্থতা বজায় রাখা বা একজন অসুস্থ ব্যক্তির চিকিৎসা করা; যাই হোক না কেন, এটি একটি স্বতন্ত্র সামগ্রিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা পদ্ধতির সমাধান দেয়। রোগ প্রতিরোধ এবং স্বাস্থ্যের উন্নতিই আয়ুুর্বেদের প্রধান লক্ষ্য।

এই মুহূর্তে বাংলাদেশ তার স্বাস্থ্য খাতে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন। বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়া মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। নানা কারণে দেশে সঠিক চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগে আক্রান্তরা। দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার যন্ত্রপাতি থাকলেও নানাবিধ সমস্যার কারণ অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসার ব্যায় ও ওষুধের ক্ষতিকারক প্রতিক্রিয়ার কারণে রোগীরা আস্থাহীনতায় ভুগছে।

বাংলাদেশ এখন ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্য কাজ করছে। আমরা যদি এই সময়ের মধ্যে আমাদের স্বাস্থ্য খাতে এই লক্ষ্য অর্জন করতে চাই তবে আমাদের স্বাস্থ্য খাতে আরও বিনিয়োগ করতে হবে। যদি তা না করা হয়, তাহলে এটি আমাদের জন্য একটি বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি করবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংবিধান নিশ্চিত করে যে, স্বাস্থ্যের সর্বোচ্চ অর্জনযোগ্য মান উপভোগ করা একটি মৌলিক মানবাধিকার। ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ (ইউএইচসি) নিশ্চিত করার জন্য আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। ইউএইচসি মানে প্রত্যেকে আর্থিক কষ্ট ছাড়াই মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারে। এটি একটি সহজাত রাজনৈতিক লক্ষ্য যা মানুষের স্বাস্থ্যের অধিকারের মধ্যে নিহিত।

ইউনানি ও আয়ুর্বেদের ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি দেশের সবার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

বৈচিত্র্য, নমনীয়তা, সহজলভ্যতা, উন্নয়নশীল দেশে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা এবং উন্নত দেশে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি, আপেক্ষিক কম খরচ, প্রযুক্তিগত ইনপুটের নিম্নস্তর, আপেক্ষিক নিম্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক গুরুত্ব ঐতিহ্যগত ওষুধের কিছু ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য রয়েছে (বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা, ২০০২)।

এই প্রেক্ষাপটে, স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাগুলোতে উন্নত অ্যাক্সেসের লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যসেবায় ঐতিহ্যগত ওষুধের মূলধারায় আনা একটি গুারুত্বপূর্ণ প্রয়োজন রয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিষদ এবং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ দেশগুলোকে ‘সাশ্রয়ী মূল্যের এবং মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবাগুলোতে সর্বজনীন অ্যাক্সেসের দিকে রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করার প্রচেষ্টাকে দ্রুত এবং উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে আহ্বান জানানোর কারণে বিশ্বব্যাপী সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা (ইউএইচসি) আন্দোলন গতি পেয়েছে।

আমাদের স্বাস্থ্য খাতে চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে, একটি বহু ক্ষেত্রগত সামগ্রিক পদ্ধতির একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হতে পারে। ইউএইচসি এর জন্য আয়ুর্বেদ এবং ইউনানির মতো ঐতিহ্যবাহী ওষুধ ব্যবহারের জন্য আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ, এটি সাশ্রয়ী এবং আমাদের দেশে সহজেই পাওয়া যায়।

এমনকি পশ্চিমা বিজ্ঞানীরাও ঐতিহ্যগত ওষুধের প্রতি ক্রমবর্ধমান মনোযোগ দিচ্ছেন। প্রমিত ফর্মুলেশন এবং আধুনিক উৎপাদন পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে প্রাচীন পদ্ধতিটি নতুন মাত্রা পেয়েছে।

যেহেতু আমাদের স্বাস্থ্য খাতে জনবলের ঘাটতি রয়েছে, তাই আমরা ঐতিহ্যবাহী সেক্টরের কর্মীদের ব্যবহার করতে পারি। সময় এসেছে প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতিকে চিনতে এবং এর কর্মশক্তিকে কাজে লাগানোর।

ঐতিহ্যগত ব্যবস্থার স্বীকৃতি ও উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে আমাদের স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন হবে। শ্রীলঙ্কা, ভারত এবং চীন এই ব্যবস্থার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে সুবিধা পেয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সবাই যথাযথ ভূমিকা পালন করলে ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা ব্যবস্থা আমাদের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

[লেখক : প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বাংলাদেশ আয়ুুর্বেদ অ্যান্ড ন্যাচারোপ্যাথি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ]

চিকিৎসা যেন বাণিজ্যের হাতিয়ারে পরিণত না হয়

পথশিশু ও বাংলাদেশে সামাজিক চুক্তির ব্যর্থতা

মেগা প্রকল্প : প্রশ্ন হওয়া উচিত স্বচ্ছতা নিয়ে

আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি

স্মার্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা : উপগ্রহ চিত্র ও ওয়েবসাইটের অপরিহার্যতা

ক্ষমতা ও জনপ্রশাসন : আমলাতন্ত্রের ছায়াতলে আমজনতা

জনসংখ্যা : সম্পদ না সংকট?

ব্রিকসে নতুন ভূ-রাজনৈতিক ব্যবস্থার উত্থান

রম্যগদ্য : ‘ল্যাংড়া-লুলা, আতুড়-পাতুড়’

আষাঢ়ী পূর্ণিমা : আত্মশুদ্ধির সাধনায় বুদ্ধের অনন্ত আলো

বদলে যাওয়া মাটিতে সাহসী বীজ : জলবায়ুর বিপরীতে বাংলাদেশের কৃষির অভিযোজনগাথা

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থান-গাথা : ‘শিকলে নাহি দিব ধরা’

প্রাচীন যৌধেয় জাতি ও তাদের সাম্যবাদী শাসন

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন

টেকসই উন্নয়নের স্বপ্নপূরণে উপগ্রহ চিত্রই চাবিকাঠি

রাবার শিল্প : সংকট, করণীয় ও উত্তরণের দিশা

রম্যগদ্য : দুধ, দই, কলা...

ছবি

কোপার্নিকাস : আলো হয়ে জন্ম নেওয়া বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবর্তক

জলবায়ু সংকটে মানবসভ্যতা

টেকসই অর্থনীতির জন্য চাই টেকসই ব্যাংকিং

ডিজিটাল দাসত্ব : মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : আস্থা ভঙ্গ ও জবাবদিহিতার সংকট

আসামি এখন নির্বাচন কমিশন

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

ছবি

বাংলার অনন্য লোকসংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

দেশের অর্থ পাচারের বাস্তবতা

খাদ্য নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত

আবারও কি রোহিঙ্গাদের ত্যাগ করবে বিশ্ব?

tab

উপ-সম্পাদকীয়

স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে আয়ুর্বেদের সম্ভাবনা

সমীর কুমার সাহা

রোববার, ২৮ জুলাই ২০২৪

আয়ুুর্বেদ হলো একটি ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা পদ্ধতি যা এই উপমহাদেশে বহু শতাব্দী ধরে চর্চা হয়ে আসছে। এই ঐতিহ্যগত চিকিৎসা পদ্ধতিটি প্রায় ৫,০০০ বছর আগে ভারতবর্ষে উদ্ভূত হয়েছিল। এটি এই বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে যে মানবদেহ মহাবিশ্বের একটি অণুজীব এবং সেই স্বাস্থ্য অর্জিত হয় যখন শরীর প্রকৃতির সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখে। বর্তমানে, ৩০টিরও বেশি দেশ আয়ুুর্বেদকে চিরাচরিত চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

আয়ুুর্বেদ ভেষজ, ওষুধ, ম্যাসেজ, যোগব্যায়াম এবং ডায়েটসহ স্বাস্থ্য এবং কল্যাণ উন্নীত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের থেরাপি ব্যবহার করে। আয়ুুর্বেদ হলো স্বাস্থ্যের জন্য একটি সামগ্রিক পদ্ধতি যা সুস্থতার শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যাত্মিক দিকগুলোকে বিবেচনা করে।

মানবদেহ তিনটি দোষ দ্বারা গঠিত, যথা: বাত, পিত্ত এবং কফ। প্রতিটি দোষ আবার বিভিন্ন শারীরিক এবং মানসিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে যুক্ত। দোষের ভারসাম্য থাকলে সুস্বাস্থ্য অর্জিত হয়। আর দোষের ভারসাম্যহীনতার কারণে রোগ হয়। আয়ুুর্বেদ চিকিৎসাগুলো মূলত এই দোষের ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করতে এবং স্বাস্থ্য ও সুস্থতার উন্নতি করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।

আয়ুুর্বেদ হজম সমস্যা, শ্বাসকষ্ট, ত্বকের সমস্যা, মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা, দীর্ঘস্থায়ী রোগসহ বিভিন্ন রোগ-ব্যাধির চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

আয়ুুর্বেদ দীর্ঘকাল ধরে ওষুধের অন্যতম প্রাচীন এবং সু-নথিভুক্ত পদ্ধতি হিসেবে স্বীকৃত এবং আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। একজন সুস্থ ব্যক্তির সুস্থতা বজায় রাখা বা একজন অসুস্থ ব্যক্তির চিকিৎসা করা; যাই হোক না কেন, এটি একটি স্বতন্ত্র সামগ্রিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা পদ্ধতির সমাধান দেয়। রোগ প্রতিরোধ এবং স্বাস্থ্যের উন্নতিই আয়ুুর্বেদের প্রধান লক্ষ্য।

এই মুহূর্তে বাংলাদেশ তার স্বাস্থ্য খাতে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন। বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়া মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। নানা কারণে দেশে সঠিক চিকিৎসা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগে আক্রান্তরা। দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার যন্ত্রপাতি থাকলেও নানাবিধ সমস্যার কারণ অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসার ব্যায় ও ওষুধের ক্ষতিকারক প্রতিক্রিয়ার কারণে রোগীরা আস্থাহীনতায় ভুগছে।

বাংলাদেশ এখন ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের জন্য কাজ করছে। আমরা যদি এই সময়ের মধ্যে আমাদের স্বাস্থ্য খাতে এই লক্ষ্য অর্জন করতে চাই তবে আমাদের স্বাস্থ্য খাতে আরও বিনিয়োগ করতে হবে। যদি তা না করা হয়, তাহলে এটি আমাদের জন্য একটি বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি করবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংবিধান নিশ্চিত করে যে, স্বাস্থ্যের সর্বোচ্চ অর্জনযোগ্য মান উপভোগ করা একটি মৌলিক মানবাধিকার। ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ (ইউএইচসি) নিশ্চিত করার জন্য আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। ইউএইচসি মানে প্রত্যেকে আর্থিক কষ্ট ছাড়াই মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা পেতে পারে। এটি একটি সহজাত রাজনৈতিক লক্ষ্য যা মানুষের স্বাস্থ্যের অধিকারের মধ্যে নিহিত।

ইউনানি ও আয়ুর্বেদের ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি দেশের সবার স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

বৈচিত্র্য, নমনীয়তা, সহজলভ্যতা, উন্নয়নশীল দেশে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা এবং উন্নত দেশে জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি, আপেক্ষিক কম খরচ, প্রযুক্তিগত ইনপুটের নিম্নস্তর, আপেক্ষিক নিম্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক গুরুত্ব ঐতিহ্যগত ওষুধের কিছু ইতিবাচক বৈশিষ্ট্য রয়েছে (বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা, ২০০২)।

এই প্রেক্ষাপটে, স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাগুলোতে উন্নত অ্যাক্সেসের লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যসেবায় ঐতিহ্যগত ওষুধের মূলধারায় আনা একটি গুারুত্বপূর্ণ প্রয়োজন রয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিষদ এবং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ দেশগুলোকে ‘সাশ্রয়ী মূল্যের এবং মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবাগুলোতে সর্বজনীন অ্যাক্সেসের দিকে রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করার প্রচেষ্টাকে দ্রুত এবং উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে আহ্বান জানানোর কারণে বিশ্বব্যাপী সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা (ইউএইচসি) আন্দোলন গতি পেয়েছে।

আমাদের স্বাস্থ্য খাতে চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে, একটি বহু ক্ষেত্রগত সামগ্রিক পদ্ধতির একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হতে পারে। ইউএইচসি এর জন্য আয়ুর্বেদ এবং ইউনানির মতো ঐতিহ্যবাহী ওষুধ ব্যবহারের জন্য আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ, এটি সাশ্রয়ী এবং আমাদের দেশে সহজেই পাওয়া যায়।

এমনকি পশ্চিমা বিজ্ঞানীরাও ঐতিহ্যগত ওষুধের প্রতি ক্রমবর্ধমান মনোযোগ দিচ্ছেন। প্রমিত ফর্মুলেশন এবং আধুনিক উৎপাদন পদ্ধতি গ্রহণের মাধ্যমে প্রাচীন পদ্ধতিটি নতুন মাত্রা পেয়েছে।

যেহেতু আমাদের স্বাস্থ্য খাতে জনবলের ঘাটতি রয়েছে, তাই আমরা ঐতিহ্যবাহী সেক্টরের কর্মীদের ব্যবহার করতে পারি। সময় এসেছে প্রাকৃতিক চিকিৎসা পদ্ধতিকে চিনতে এবং এর কর্মশক্তিকে কাজে লাগানোর।

ঐতিহ্যগত ব্যবস্থার স্বীকৃতি ও উন্নতির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে আমাদের স্বাস্থ্য খাতে উন্নয়ন হবে। শ্রীলঙ্কা, ভারত এবং চীন এই ব্যবস্থার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে সুবিধা পেয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সবাই যথাযথ ভূমিকা পালন করলে ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা ব্যবস্থা আমাদের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।

[লেখক : প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বাংলাদেশ আয়ুুর্বেদ অ্যান্ড ন্যাচারোপ্যাথি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ]

back to top