alt

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করতে হবে

কানন পুরকায়স্থ

: রোববার, ১১ আগস্ট ২০২৪

আমরা একটি পট পরিবর্তন লক্ষ্য করছি বাংলাদেশে। এর যেমন ভালো দিক আছে, তেমনি মন্দ দিকও আছে । ভালো মন্দের বিশ্লেষণে আপাতত যাচ্ছি না । পটের যখন পরিবর্তন হয়েছে তখন এই পরিবর্তনের ভেতর সর্বজনস্বীকৃত একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ কীভাবে দেখা যায় তা নিয়েই ভাবছি ।

রাষ্ট্রপ্রধান, সেনাপ্রধান এবং আন্দোলনকারী দলের যৌথ প্রয়াসে গঠিত হয়েছে এক অন্তর্র্বতীকালীন সরকার । এই সরকারে যারা কাজ করবেন তাদের দায়িত্ব অপরিসীম ।দায়িত্ব পালন ও নির্দেশ প্রদানে এর গ্রহণযোগ্যতা একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় । উপদেষ্টারা নির্দেশ প্রদান করলেন কিন্তু জনগণ তা যদি এড়িয়ে যায়, তাহলে কোন কিছুই বাস্তবায়ন সম্ভব নয় । এক্ষেত্রে কিছু প্রস্তাব প্রাসঙ্গিক বলে মনে করি।

দুর্নীতিকে দেশ থেকে নির্মূল করতে হলে সমাজের প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে দুর্নীতিমুক্ত হিসাবে প্রমাণ করতে হবে।

প্রথমতঃ অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের যারা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, তারা তাদের ব্যাংক হিসাব ,সম্পত্তির তালিকা, কোন সংগঠনের সদস্য কিনা, থাকলে তার তালিকা এবং কোন রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য কিনা অথবা সমর্থন করেন কিনা তা প্রকাশ করবেন এবং তাদের এই তথ্য পাবলিক রেকর্ড হিসেবে গণ্য হবে । উল্লেখ্য আমি যুক্তরাজ্যে যখন নির্বাচনের মাধ্যমে কাউন্সিলর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলাম ২০১১ সালে , তখন আমাকে এই সমস্ত তথ্য প্রকাশ করতে হয়েছিল । এই তথ্যের কোন ব্যত্যয় পরবর্তীকালে দেখা গেলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় ।

দ্বিতীয়তঃ স্বাধীনতার সাথে সম্পৃক্ত স্থাপনা , ভাস্কর্য ইত্যাদি ধ্বংসের সাথে সম্পৃক্ত ছিল যারা, সে ছাত্র বা অছাত্র যেই হোক না কেন তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে । কারণ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সাথে সম্পৃক্ত স্থাপনাকে যারা ধ্বংস করে , তারা মূলত বাংলাদেশ নামক দেশটিকে অস্বীকার করে ।

তৃতীয়তঃ যারা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকেরই আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক বিষয়ে দক্ষতা নেই । এ বিষয়ে যোগ্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ প্রয়োজন । প্রতিবেশী দেশসমূহের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করতে না পারলে ভূরাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

চতুর্থতঃ দ্রুত সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন এবং সেই নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

পঞ্চমত সাম্প্রতিক সংঘাতে নিহত ছাত্র জনতার মৃত্যুর কারণ একটি কমিশন গঠনের মাধ্যমে বের করে ন্যায় বিচার এর ব্যবস্থা করতে হবে।

অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা কে ফিরিয়ে আনতে হবে তবে উপরে উল্লেখিত দ্বিতীয় প্রস্তাব বাস্তবায়িত না হলে আইন শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় । সংখ্যালঘু এবং সংখ্যাগুরু বলে একটি জাতিকে দ্বিধা বিভক্ত করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। এ ধরনের বিভাজন সংকট সমাধানের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে । আবারো বলছি উপরের দ্বিতীয় প্রস্তাব কঠিনভাবে বাস্তবায়িত হলে এই বিভাজন থেকেও বাংলাদেশ মুক্ত হতে পারে । উপদেষ্টা মন্ডলীর সভাপতি ড. ইউনূস একজন বিজ্ঞ এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ব্যক্তিত্ব কিন্তু তিনি অশীতিপর । তাকে অন্যদের উপর নির্ভর করতে হবে। এটি মনে রাখতে হবে । সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের শিক্ষক ছিলেন। উপদেষ্টা মন্ডলীদের সম্বলিত প্রয়াস এখানে প্রয়োজন, অন্যথায় মানুষের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা কে অতি দ্রুত প্রমাণ সম্ভব হবে না এবং বাংলাদেশ আরেকটি সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাবে ।

যারা আজ ছাত্র রাজনীতি করছে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দেখে নি সুতরাং তাদের কাছে ৩২ নম্বর ধানমন্ডি এর কোন মূল্য নেই । তবে মনে রাখতে হবে যারা ইতিহাসকে বিশ্বাস করে না তাদের যেমন অতীত নেই তেমনি ভবিষ্যতে নেই । উরুগুয়ের একজন সাহিত্যিক এডওয়ার্ডো গেলিনো লিখেছেন ‘ইতিহাস আসলে কখনো বিদায় বলে না। ইতিহাস বলে, আবার দেখা হবে।’ উপদেষ্টা মন্ডলীতে শ্রদ্ধেয় ড. ইউনুস স্যারের সাথে যারা সম্পৃক্ত আছেন তাদেরকে এসব বিষয় মাথায় রেখেই এগিয়ে যেতে হবে।

[লেখক:’ যুক্তরাজ্যে কর্মরত বিজ্ঞান ও পরিবেশ বিষয়ক উপদেষ্টা ও অধ্যাপক]

চেকের মামলায় বৈধ বিনিময়, লেনদেন, দেনা-পাওনা প্রমাণ ছাড়া আর জেল নয়

নবাগত শিক্ষকদের পেশাগত ভাবনা

মাদকাসক্তি: শুধু নিরাময় নয়, চাই সমাজ ব্যবস্থার সংস্কার

আমেরিকার “নো কিংস” আন্দোলন

ঘি তো আমাদের লাগবেই, নো হাংকি পাংকি!

“মামদানি না জামদানি...”

ভাষার বৈচিত্র্য রক্ষায় নীরব বিপ্লব

উপাত্ত সুরক্ষা আইন : গোপনীয়তা রক্ষা নাকি রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ?

সমতা কি ন্যায্যতা নিশ্চিত করে?

ডেঙ্গু সংকট দূরদৃষ্টির ব্যর্থতা

ষাটের দশকে বামপন্থী ভাবনার উত্থান ও বিবর্তন

দেখিতে পাও না তুমি মৃত্যুদূত দাঁড়ায়েছে দ্বারে!

বায়ুর অপর নাম জীবন

ছবি

হাওরের জীবন ও সংস্কৃতি

বিখণ্ডিত আত্মপরিচয়: তরল সহানুভূতিতে নৈতিক মূলধনের সমাজতত্ত্ব

প্রভাষকের ‘প্রভা’ যখন ‘শোক’: শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি বঞ্চনা

যুদ্ধ বিরতি গাজাবাসীর জন্য জরুরি ছিল

লবলং খালের মৃত্যু: স্মৃতিতে নদী, বাস্তবে দূষণ

বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা: অর্থনৈতিক স্থিতির পূর্বশর্ত

হায় যম! আর কতক্ষণ, হবে অপেক্ষা করিতে মোরে?

পোশাক শিল্প : অগ্রগতি ও শ্রমিকের অধিকার

গণভোটের রাজনৈতিক গুরুত্ব

বামঘরানার বাটখারা...

বাগদা ফার্ম : স্মারকলিপি, অবরোধ, অনশন, আন্দোলন- কিছুতেই বরফ গলেনি

ব্যাটারি-শকট: নতুন সংকট

মতপ্রকাশ কিংবা দ্বিমত পোষণ: নাগরিক অধিকার ও রাজনৈতিক বাস্তবতা

সরকারি কর্মচারীদের জন্য নতুন ব্যাংক কি আদৌ প্রয়োজন

ট্রাম্প ও শি’র ‘কৌশলগত শান্তি’

আশার সমাজতত্ত্ব: বিভ্রান্তির যুগে ভবিষ্যৎ নির্মাণের বিপ্লবী বিজ্ঞান

পিএইচডি: উচ্চ শিক্ষার মানদণ্ড না প্রতীকী মরীচিকা?

ডিম নয় তবু অশ্বডিম্ব!

ছবি

অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও নির্বাচন

পিএইচডি: উচ্চ শিক্ষার মানদণ্ড না প্রতীকী মরীচিকা?

প্রকৃতার্থে ফকির কারা

এনসিপি চায় অবিনাশী জুলাই সনদ

পিএইচডি: উচ্চ শিক্ষার মানদণ্ড না প্রতীকী মরীচিকা?

tab

মতামত » উপ-সম্পাদকীয়

দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করতে হবে

কানন পুরকায়স্থ

রোববার, ১১ আগস্ট ২০২৪

আমরা একটি পট পরিবর্তন লক্ষ্য করছি বাংলাদেশে। এর যেমন ভালো দিক আছে, তেমনি মন্দ দিকও আছে । ভালো মন্দের বিশ্লেষণে আপাতত যাচ্ছি না । পটের যখন পরিবর্তন হয়েছে তখন এই পরিবর্তনের ভেতর সর্বজনস্বীকৃত একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ কীভাবে দেখা যায় তা নিয়েই ভাবছি ।

রাষ্ট্রপ্রধান, সেনাপ্রধান এবং আন্দোলনকারী দলের যৌথ প্রয়াসে গঠিত হয়েছে এক অন্তর্র্বতীকালীন সরকার । এই সরকারে যারা কাজ করবেন তাদের দায়িত্ব অপরিসীম ।দায়িত্ব পালন ও নির্দেশ প্রদানে এর গ্রহণযোগ্যতা একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় । উপদেষ্টারা নির্দেশ প্রদান করলেন কিন্তু জনগণ তা যদি এড়িয়ে যায়, তাহলে কোন কিছুই বাস্তবায়ন সম্ভব নয় । এক্ষেত্রে কিছু প্রস্তাব প্রাসঙ্গিক বলে মনে করি।

দুর্নীতিকে দেশ থেকে নির্মূল করতে হলে সমাজের প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে দুর্নীতিমুক্ত হিসাবে প্রমাণ করতে হবে।

প্রথমতঃ অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের যারা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন, তারা তাদের ব্যাংক হিসাব ,সম্পত্তির তালিকা, কোন সংগঠনের সদস্য কিনা, থাকলে তার তালিকা এবং কোন রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্য কিনা অথবা সমর্থন করেন কিনা তা প্রকাশ করবেন এবং তাদের এই তথ্য পাবলিক রেকর্ড হিসেবে গণ্য হবে । উল্লেখ্য আমি যুক্তরাজ্যে যখন নির্বাচনের মাধ্যমে কাউন্সিলর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলাম ২০১১ সালে , তখন আমাকে এই সমস্ত তথ্য প্রকাশ করতে হয়েছিল । এই তথ্যের কোন ব্যত্যয় পরবর্তীকালে দেখা গেলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় ।

দ্বিতীয়তঃ স্বাধীনতার সাথে সম্পৃক্ত স্থাপনা , ভাস্কর্য ইত্যাদি ধ্বংসের সাথে সম্পৃক্ত ছিল যারা, সে ছাত্র বা অছাত্র যেই হোক না কেন তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে । কারণ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সাথে সম্পৃক্ত স্থাপনাকে যারা ধ্বংস করে , তারা মূলত বাংলাদেশ নামক দেশটিকে অস্বীকার করে ।

তৃতীয়তঃ যারা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকেরই আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক বিষয়ে দক্ষতা নেই । এ বিষয়ে যোগ্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহণ প্রয়োজন । প্রতিবেশী দেশসমূহের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করতে না পারলে ভূরাজনৈতিক কারণে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

চতুর্থতঃ দ্রুত সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন এবং সেই নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

পঞ্চমত সাম্প্রতিক সংঘাতে নিহত ছাত্র জনতার মৃত্যুর কারণ একটি কমিশন গঠনের মাধ্যমে বের করে ন্যায় বিচার এর ব্যবস্থা করতে হবে।

অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা কে ফিরিয়ে আনতে হবে তবে উপরে উল্লেখিত দ্বিতীয় প্রস্তাব বাস্তবায়িত না হলে আইন শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় । সংখ্যালঘু এবং সংখ্যাগুরু বলে একটি জাতিকে দ্বিধা বিভক্ত করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। এ ধরনের বিভাজন সংকট সমাধানের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে । আবারো বলছি উপরের দ্বিতীয় প্রস্তাব কঠিনভাবে বাস্তবায়িত হলে এই বিভাজন থেকেও বাংলাদেশ মুক্ত হতে পারে । উপদেষ্টা মন্ডলীর সভাপতি ড. ইউনূস একজন বিজ্ঞ এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ব্যক্তিত্ব কিন্তু তিনি অশীতিপর । তাকে অন্যদের উপর নির্ভর করতে হবে। এটি মনে রাখতে হবে । সত্তর দশকের মাঝামাঝি সময়ে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের শিক্ষক ছিলেন। উপদেষ্টা মন্ডলীদের সম্বলিত প্রয়াস এখানে প্রয়োজন, অন্যথায় মানুষের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা কে অতি দ্রুত প্রমাণ সম্ভব হবে না এবং বাংলাদেশ আরেকটি সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাবে ।

যারা আজ ছাত্র রাজনীতি করছে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দেখে নি সুতরাং তাদের কাছে ৩২ নম্বর ধানমন্ডি এর কোন মূল্য নেই । তবে মনে রাখতে হবে যারা ইতিহাসকে বিশ্বাস করে না তাদের যেমন অতীত নেই তেমনি ভবিষ্যতে নেই । উরুগুয়ের একজন সাহিত্যিক এডওয়ার্ডো গেলিনো লিখেছেন ‘ইতিহাস আসলে কখনো বিদায় বলে না। ইতিহাস বলে, আবার দেখা হবে।’ উপদেষ্টা মন্ডলীতে শ্রদ্ধেয় ড. ইউনুস স্যারের সাথে যারা সম্পৃক্ত আছেন তাদেরকে এসব বিষয় মাথায় রেখেই এগিয়ে যেতে হবে।

[লেখক:’ যুক্তরাজ্যে কর্মরত বিজ্ঞান ও পরিবেশ বিষয়ক উপদেষ্টা ও অধ্যাপক]

back to top