alt

উপ-সম্পাদকীয়

নিষ্ঠার সাথে নিজের কাজটুকু করাই দেশপ্রেম

লতিফা নিলুফার পাপড়ি

: রোববার, ১১ আগস্ট ২০২৪

দেশপ্রেম কি? আমার কাছে এর উত্তর হচ্ছে; নিষ্ঠার সাথে নিজের কাজটুকু সৎভাবে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে করাই হলো দেশপ্রেম। পাশাপাশি সমাজে বা দেশে যার যা দায়িত্ব তাকে সেটা করতে দেওয়াও দেশপ্রেম। একজন শিক্ষার্থীর জন্যে সর্বোচ্চ দেশপ্রেম হচ্ছে যে কোন বিষয়ে জ্ঞানার্জনের জন্যে কঠোর পরিশ্রম করা। নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তোলা। যে শিক্ষার্থী আলস্যে সময় কাটায় না, ফেসবুক ও চ্যাটিংয়ে সময় না দিয়ে নিজের লেখাপড়ার জন্যে পর্যাপ্ত সময় দেয় এবং নিজেকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে সে সত্যিকার অর্থেই দেশের কল্যাণেই কাজ করছে। কারণ ছাত্রজীবনে সে যদি নিজেকে বড় কাজের জন্যে তৈরি করতে পারে, তাহলে পরবর্তীতে সে তার জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়ে দেশের মানুষের সেবা করতে পারবে।

একজন শিক্ষকের দায়িত্ব হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও তথ্যে সমৃদ্ধ করা, লক্ষ্য সুস্পষ্ট করে দেয়া, লক্ষ্য অর্জনে মেধার বিকাশ ঘটানো, মূল্যবোধ জাগ্রত করা। একজন শিক্ষকের দায়িত্ব কখনো শিক্ষার্থীকে পঙ্গু করে দেয়া না। তাই শিক্ষকরা যদি আন্তরিকভাবে সৎ থেকে নিজের দায়িত্ব পালন করেন তাহলে সেটিই তার দেশপ্রেম।

একজন সরকারি চাকরিজীবী হচ্ছেন জনগণের সেবক। তার চিন্তা থাকবে কোনোরকম হয়রানি পেরেশানি ছাড়াই ফাইল ছেড়ে দেয়া বা সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করা। যে চাকরিজীবি কর্মস্থলে সময়মতো যান এবং পুরো কর্মঘণ্টা আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন সেটিই তার দেশপ্রেম। যে কাজটি পাঁচ মিনিটে করে দিতে পারেন সেটি পাঁচ দিন ফেলে না রেখে যদি পাঁচ মিনিটেই করে দিতে পারেন, তাহলে সেটিও আপনার দেশপ্রেমের নমুনা।

যিনি রাস্তা নির্মাণ করছেন তার দায়িত্ব হলো কত ভালো উপকরণ দিয়ে টেকসই রাস্তা নির্মাণ করা, যাতে অল্পদিনে রাস্তায় ফাটল না ধরে। আপনি যদি রাস্তা ঝাড়– দেন সেটাই যদি সবচেয়ে সুন্দর ও আন্তরিকভাবে করেন, তবে আপনি একজন দেশপ্রেমিক। আপনি গৃহিণী হলে আন্তরিকতা নিয়ে যদি সন্তানদের লালন-পালন করেন, পরিবারের সবার স্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখে খাদ্যা তৈরির ব্যবস্থা করেন তবে তাও আপনার দেশপ্রেমের নমুনা।

আপনি যদি গাড়ি চালান, কীভাবে নিয়ম ফাঁকি দেয়া যায় তা নয়, বরং আপনাকে নিয়ম মেনে গাড়ি চালাতে হবে এটাও কিন্তু দেশপ্রেম। যে ব্যবসায়ী জনগণের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে ভেজাল পণ্য বিক্রি থেকে বিরত থাকছেন-তিনিও দেশপ্রেমিক।

যে চিকিৎসক আন্তরিকভাবে সেবা দেন রোগীকে, তিনিও দেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটাচ্ছেন। যে চিকিৎসক রোগীকে বাড়তি টেস্ট করতে দেয় না এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ ছাড়া বাড়তি ওষুধ লেখেন না তাহলে এটিও তার দেশপ্রেম।

দেশের সম্পদ রক্ষার বিষয়ে সচেতনতাও দেশপ্রেমের অংশ। দেশের বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ইত্যাদির যেন কোনো অপচয় না হয় সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। আমরা কল ছেড়ে দাঁত ব্রাশ করতে থাকি, এটি ঠিক নয়। রান্নার কাজে যে গ্যাস ব্যবহার করা হয়। অনেকে একটি দেয়াশলাইয়ের কাঠির খরচ কমাতে ২৪ ঘণ্টা গ্যাস জ্বালিয়ে রাখছি। একজন দেশপ্রেমিক মানুষ দেশের সম্পদ ব্যবহারেও সচেতন থাকেন।

অনেকে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলে রাখি। বাদামের খোসা, কলার খোসা নির্দিষ্ট স্থানে ডাস্টবিনে ফেলতে হবে। মনে রাখতে হবে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। আমরা যদি ময়লা আর্বজনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার অঙ্গীকার করি তাহলে দেশের পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যগত অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারব। এটি আসলে অনেক বড়মাপের একটি কাজ।

এ ছাড়া আমরা নিজের দেশের প্রতি সবসময় নিরাশা পোষণ করি। ভাবি এদেশে থেকে কিছু হবে না। যত দ্রুত সম্ভব এ দেশ থেকে চলে যাওয়া ভালো। এখানকার আলো-বাতাস আবহাওয়া মাটি খাদ্যে বেড়ে উঠেছি আমরা। এই দেশটা যেমন একসময় সম্পদশালী ছিল আবারো মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে এ বিশ্বাস রাখুন, ইতিবাচকভাবে ভাবুন। সদ্য প্রকাশিত এক বিশ্ব জরিপে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দিক থেকে দ্বিতীয় এবং আশাবাদী দেশের তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে প্রথম স্থানে। তাই আশাবাদী হোন এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্যে।

চিন্তা করুন কী কী দেয়ার সামর্থ্য ও যোগ্যতা আপনার আছে। আসলে প্রেম হলো কেবল দেয়ার নাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় কেউ চিন্তা করেন নি যে কে কী পাবে। তারা যখন অপারেশনে বের হতেন ভাবতেন এটিই হয়তো তার শেষ যাত্রা বা শেষ অপারেশন। ফিরে আসবেন কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। তারা তখনো ভাবেন নি কে কী পাবে? তারা চিন্তা করতেন আমি কী দিতে পারি, কতটা দিতে পারি। অথচ এখন কতজন মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ না করেও মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট পেয়ে বসে আছে।

আমি আমার ছাত্রদের বলি বড় বড় কাজ যখন সময় হবে করবে, কিন্তু ঠিক এখনই কী করতে পারি? মন দিয়ে পড়তে পারি, মন দিয়ে কাজ করতে পারি, চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখতে পারি, সামাজিক কর্মকা-ে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করতে পারি, নিরক্ষর মানুষটিকে অক্ষরজ্ঞান দিতে পারি। সবার সাথে সুন্দর আচরণ করতে পারি, ঘরের কাজে সাধ্যমতো সহযোগিতা করতে পারি।

নিজেকে শিক্ষা দীক্ষা ও জ্ঞানে-গুণে সুন্দর ও যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। না জানাটা দোষের নয় কিন্তু শিখতে না চাওয়াটা হচ্ছে দোষের। শেখার কোনো সুযোগকে হাতছাড়া করা যাবে না। যত মুক্তমন নিয়ে শিখব তত বেশি যোগ্য ও দক্ষ হবো। শুদ্ধাচার, আচার-আচরণ ও নৈতিক জ্ঞান সবকিছু শিখতে হবে।

আমাদের সমাজে তরুণরাও যে দেশ, মানুষ ও পৃথিবী বদলে ফেলতে পারে তার প্রমাণ তো আমরা নিজের চোখেই দেখলাম।

ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসআপ, ভাইবার ব্যবহারে তরুণ প্রজন্ম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে আমরা হা-হুতাশ করেছি। কিন্তু এগুলো ব্যবহার করেই তরুণরা যে আউটসোর্সিং করছে। অনলাইন শপিংয়ের মতো নতুন ধারণা সৃষ্টি করছে। বিদেশি গবেষকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করে গবেষণার জ্ঞানকে আদান-প্রদান করছে, সে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কিছুই বলছি না। বিশ্বের কোন রাষ্ট্র কেমন চলছে সব তাদের জানা।

আমরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ভাষা আন্দোলন করেছি, মুক্তিযুদ্ধ করেছি, স্বৈরাচারের এরশাদের পতন ঘটিয়েছি বারবার। কিন্তু আমাদের স্বপ্ন সফল হয়নি। ২০২৪-এর আমাদের শিক্ষার্থীদের সংঘটিত আন্দোলন বিফলে গেলে সংকট তৈরি হতে পারে। এখন আমাদের যুদ্ধ নিজের অক্ষমতার বিরুদ্ধে, নিজের অজ্ঞানতার বিরুদ্ধে, নিজের আলস্যের বিরুদ্ধে। আসলে নিজে বদলালেই পৃথিবী বদলে যাবে। এই সত্যকে যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি তাহলে আমাদের দেশ বিশ্বের সেরা জাতিতে রূপান্তরিত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এই দেশ আমাদের গর্ব, এ মাটি আমাদের কাছে সোনা। আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি। এ কথা শুধু বললে হবে না। কাজের মধ্যে দিয়ে তা প্রমাণ করতে হবে এবং আমরা তা করব।

[লেখক: শিক্ষক, সাহিত্যিক]

মকর সংক্রান্তি : বাঙালির উৎসব ও ঐতিহ্যের ধারক

শৃঙ্খলে আবদ্ধ সামাজিক মানুষ

দাবি আদায়ে জনদুর্ভোগ : অপসংস্কৃতি ও নৈতিক প্রশ্ন

মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে কূটতর্ক

শৃঙ্খলে আবদ্ধ সামাজিক মানুষ

রজিনাদের বেঁচে থাকার লড়াই

মানব পাচার প্রতিরোধে প্রয়োজন সচেতনতা

সংবিধান সংশোধন : আমাদের বলার আছে

চিন্তা ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা

গ্রাম উন্নয়নে যুব সমাজের ভূমিকা

‘দেশজ নাট্যশৈলী’র কেন্দ্রীয় নাট্যআঙ্গিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি

ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ও কিছু প্রশ্ন

রাখাইন পরিস্থিতি : বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির বড় পরীক্ষা

রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব

রম্যগদ্য : নিশুতিরাতের আগন্তুক

গুরু রবিদাস জির কথা

গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালদের জন্য অশনিসংকেত

নতুন বছরের প্রত্যাশা

নৈতিকতা, শিক্ষা ও উন্নয়ন: আমাদের মুক্তির পথ

কোথায় নাই কোটা?

ছবি

ও আমার স্বপ্ন ঝরা আকুল করা জন্মভূমি

ব্রেন রট: বর্তমান সময়ের এক মারাত্মক ব্যাধি

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলুক দেশের গবেষণা

নির্মোহ ইতিহাস চর্চা ও রাষ্ট্র সংস্কার প্রয়াসে শিক্ষা

জলবায়ুর পরিবর্তন ও দেশের ভবিষ্যৎ

প্রসঙ্গ : থিয়েটার ফর থেরাপির তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক পাঠ

শ্বেতপত্রে নতুন কী আছে?

ছবি

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও জুনো ভাইয়ের স্মৃতি

পরিবেশ সুরক্ষায় সার্কুলার ইকোনমি

বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কেন

ভাড়া ‘নির্ধারণ’ কিংবা ‘নিয়ন্ত্রণ’ করবে কে?

ব্যাংক ও আর্থিক খাতের জন্য কেমন ছিল ২০২৪ সাল?

স্বৈরাচারের শেষ নেই...

ছবি

স্মরণ : বাংলা সাহিত্যের অমর কথাশিল্পী

দোষারোপের রাজনীতি আর কত

জ্ঞান, দক্ষতা ও সৃজনশীলতার বিকাশে চাই বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

নিষ্ঠার সাথে নিজের কাজটুকু করাই দেশপ্রেম

লতিফা নিলুফার পাপড়ি

রোববার, ১১ আগস্ট ২০২৪

দেশপ্রেম কি? আমার কাছে এর উত্তর হচ্ছে; নিষ্ঠার সাথে নিজের কাজটুকু সৎভাবে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে করাই হলো দেশপ্রেম। পাশাপাশি সমাজে বা দেশে যার যা দায়িত্ব তাকে সেটা করতে দেওয়াও দেশপ্রেম। একজন শিক্ষার্থীর জন্যে সর্বোচ্চ দেশপ্রেম হচ্ছে যে কোন বিষয়ে জ্ঞানার্জনের জন্যে কঠোর পরিশ্রম করা। নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তোলা। যে শিক্ষার্থী আলস্যে সময় কাটায় না, ফেসবুক ও চ্যাটিংয়ে সময় না দিয়ে নিজের লেখাপড়ার জন্যে পর্যাপ্ত সময় দেয় এবং নিজেকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে সে সত্যিকার অর্থেই দেশের কল্যাণেই কাজ করছে। কারণ ছাত্রজীবনে সে যদি নিজেকে বড় কাজের জন্যে তৈরি করতে পারে, তাহলে পরবর্তীতে সে তার জ্ঞান ও দক্ষতা দিয়ে দেশের মানুষের সেবা করতে পারবে।

একজন শিক্ষকের দায়িত্ব হচ্ছে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও তথ্যে সমৃদ্ধ করা, লক্ষ্য সুস্পষ্ট করে দেয়া, লক্ষ্য অর্জনে মেধার বিকাশ ঘটানো, মূল্যবোধ জাগ্রত করা। একজন শিক্ষকের দায়িত্ব কখনো শিক্ষার্থীকে পঙ্গু করে দেয়া না। তাই শিক্ষকরা যদি আন্তরিকভাবে সৎ থেকে নিজের দায়িত্ব পালন করেন তাহলে সেটিই তার দেশপ্রেম।

একজন সরকারি চাকরিজীবী হচ্ছেন জনগণের সেবক। তার চিন্তা থাকবে কোনোরকম হয়রানি পেরেশানি ছাড়াই ফাইল ছেড়ে দেয়া বা সঠিক সময়ে সঠিক কাজটি করা। যে চাকরিজীবি কর্মস্থলে সময়মতো যান এবং পুরো কর্মঘণ্টা আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন সেটিই তার দেশপ্রেম। যে কাজটি পাঁচ মিনিটে করে দিতে পারেন সেটি পাঁচ দিন ফেলে না রেখে যদি পাঁচ মিনিটেই করে দিতে পারেন, তাহলে সেটিও আপনার দেশপ্রেমের নমুনা।

যিনি রাস্তা নির্মাণ করছেন তার দায়িত্ব হলো কত ভালো উপকরণ দিয়ে টেকসই রাস্তা নির্মাণ করা, যাতে অল্পদিনে রাস্তায় ফাটল না ধরে। আপনি যদি রাস্তা ঝাড়– দেন সেটাই যদি সবচেয়ে সুন্দর ও আন্তরিকভাবে করেন, তবে আপনি একজন দেশপ্রেমিক। আপনি গৃহিণী হলে আন্তরিকতা নিয়ে যদি সন্তানদের লালন-পালন করেন, পরিবারের সবার স্বাস্থ্যের দিকে নজর রেখে খাদ্যা তৈরির ব্যবস্থা করেন তবে তাও আপনার দেশপ্রেমের নমুনা।

আপনি যদি গাড়ি চালান, কীভাবে নিয়ম ফাঁকি দেয়া যায় তা নয়, বরং আপনাকে নিয়ম মেনে গাড়ি চালাতে হবে এটাও কিন্তু দেশপ্রেম। যে ব্যবসায়ী জনগণের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে ভেজাল পণ্য বিক্রি থেকে বিরত থাকছেন-তিনিও দেশপ্রেমিক।

যে চিকিৎসক আন্তরিকভাবে সেবা দেন রোগীকে, তিনিও দেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটাচ্ছেন। যে চিকিৎসক রোগীকে বাড়তি টেস্ট করতে দেয় না এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ ছাড়া বাড়তি ওষুধ লেখেন না তাহলে এটিও তার দেশপ্রেম।

দেশের সম্পদ রক্ষার বিষয়ে সচেতনতাও দেশপ্রেমের অংশ। দেশের বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ইত্যাদির যেন কোনো অপচয় না হয় সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। আমরা কল ছেড়ে দাঁত ব্রাশ করতে থাকি, এটি ঠিক নয়। রান্নার কাজে যে গ্যাস ব্যবহার করা হয়। অনেকে একটি দেয়াশলাইয়ের কাঠির খরচ কমাতে ২৪ ঘণ্টা গ্যাস জ্বালিয়ে রাখছি। একজন দেশপ্রেমিক মানুষ দেশের সম্পদ ব্যবহারেও সচেতন থাকেন।

অনেকে যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলে রাখি। বাদামের খোসা, কলার খোসা নির্দিষ্ট স্থানে ডাস্টবিনে ফেলতে হবে। মনে রাখতে হবে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। আমরা যদি ময়লা আর্বজনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার অঙ্গীকার করি তাহলে দেশের পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যগত অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারব। এটি আসলে অনেক বড়মাপের একটি কাজ।

এ ছাড়া আমরা নিজের দেশের প্রতি সবসময় নিরাশা পোষণ করি। ভাবি এদেশে থেকে কিছু হবে না। যত দ্রুত সম্ভব এ দেশ থেকে চলে যাওয়া ভালো। এখানকার আলো-বাতাস আবহাওয়া মাটি খাদ্যে বেড়ে উঠেছি আমরা। এই দেশটা যেমন একসময় সম্পদশালী ছিল আবারো মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে এ বিশ্বাস রাখুন, ইতিবাচকভাবে ভাবুন। সদ্য প্রকাশিত এক বিশ্ব জরিপে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দিক থেকে দ্বিতীয় এবং আশাবাদী দেশের তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে প্রথম স্থানে। তাই আশাবাদী হোন এক উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্যে।

চিন্তা করুন কী কী দেয়ার সামর্থ্য ও যোগ্যতা আপনার আছে। আসলে প্রেম হলো কেবল দেয়ার নাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় কেউ চিন্তা করেন নি যে কে কী পাবে। তারা যখন অপারেশনে বের হতেন ভাবতেন এটিই হয়তো তার শেষ যাত্রা বা শেষ অপারেশন। ফিরে আসবেন কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। তারা তখনো ভাবেন নি কে কী পাবে? তারা চিন্তা করতেন আমি কী দিতে পারি, কতটা দিতে পারি। অথচ এখন কতজন মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ না করেও মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট পেয়ে বসে আছে।

আমি আমার ছাত্রদের বলি বড় বড় কাজ যখন সময় হবে করবে, কিন্তু ঠিক এখনই কী করতে পারি? মন দিয়ে পড়তে পারি, মন দিয়ে কাজ করতে পারি, চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখতে পারি, সামাজিক কর্মকা-ে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করতে পারি, নিরক্ষর মানুষটিকে অক্ষরজ্ঞান দিতে পারি। সবার সাথে সুন্দর আচরণ করতে পারি, ঘরের কাজে সাধ্যমতো সহযোগিতা করতে পারি।

নিজেকে শিক্ষা দীক্ষা ও জ্ঞানে-গুণে সুন্দর ও যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। না জানাটা দোষের নয় কিন্তু শিখতে না চাওয়াটা হচ্ছে দোষের। শেখার কোনো সুযোগকে হাতছাড়া করা যাবে না। যত মুক্তমন নিয়ে শিখব তত বেশি যোগ্য ও দক্ষ হবো। শুদ্ধাচার, আচার-আচরণ ও নৈতিক জ্ঞান সবকিছু শিখতে হবে।

আমাদের সমাজে তরুণরাও যে দেশ, মানুষ ও পৃথিবী বদলে ফেলতে পারে তার প্রমাণ তো আমরা নিজের চোখেই দেখলাম।

ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসআপ, ভাইবার ব্যবহারে তরুণ প্রজন্ম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে আমরা হা-হুতাশ করেছি। কিন্তু এগুলো ব্যবহার করেই তরুণরা যে আউটসোর্সিং করছে। অনলাইন শপিংয়ের মতো নতুন ধারণা সৃষ্টি করছে। বিদেশি গবেষকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করে গবেষণার জ্ঞানকে আদান-প্রদান করছে, সে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কিছুই বলছি না। বিশ্বের কোন রাষ্ট্র কেমন চলছে সব তাদের জানা।

আমরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ভাষা আন্দোলন করেছি, মুক্তিযুদ্ধ করেছি, স্বৈরাচারের এরশাদের পতন ঘটিয়েছি বারবার। কিন্তু আমাদের স্বপ্ন সফল হয়নি। ২০২৪-এর আমাদের শিক্ষার্থীদের সংঘটিত আন্দোলন বিফলে গেলে সংকট তৈরি হতে পারে। এখন আমাদের যুদ্ধ নিজের অক্ষমতার বিরুদ্ধে, নিজের অজ্ঞানতার বিরুদ্ধে, নিজের আলস্যের বিরুদ্ধে। আসলে নিজে বদলালেই পৃথিবী বদলে যাবে। এই সত্যকে যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি তাহলে আমাদের দেশ বিশ্বের সেরা জাতিতে রূপান্তরিত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এই দেশ আমাদের গর্ব, এ মাটি আমাদের কাছে সোনা। আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি। এ কথা শুধু বললে হবে না। কাজের মধ্যে দিয়ে তা প্রমাণ করতে হবে এবং আমরা তা করব।

[লেখক: শিক্ষক, সাহিত্যিক]

back to top