সোহান হোসেন
পাম গাছ একটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ। রোপণের ৩-৪ বছরের মধ্যে ফলন শুরু হয়। একটানা ৬০-৭০ বছর ফল দিয়ে থাকে। বছরে ৮-১০টি কাঁদি আহরণ করা যায়। একটি কাঁদিও ওজন ৪০-৮০ কেজি পর্যন্ত হয়। ঝড় জলোচ্ছ্বাসে এই গাছের সহজে ক্ষতি হয় না। পাম গাছ অন্যান্য গাছ থেকে ১০ গুণ বেশি অক্সিজেন দেয়। এছাড়া পাম জল, পাম সিরাপ, পাম চিনি ইত্যাদি তৈরি হয়।
বাংলাদেশে প্রতি বছর ভোজ্যতেলের জন্য নানা ধরনের তেল জাতীয় ফসল চাষ করা হয়। তবে তেলজাতীয় ফসলের মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো সরিষা। এছাড়া দেশে সূর্যমুখী, তিল, চীনাবাদাম, তিসি, কুসুমফুল, সয়াবিন ইত্যাদি চাষাবাদ হয়ে থাকে। সরিষার তেল দিয়েই ভোজ্যতেলের সিংহভাগ চাহিদা পূরণ হয় এবং সরিষার তেল বাঙালির ঐতিহ্যের একটা অংশ। সরিষার তেলের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা জন্য এখন সয়াবিন তেল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে ৬.১০৬ হে. জমিতে ৮.২৪৩ লাখ মে.টন সরিষা উৎপাদিত হয়েছে। অপরদিকে চীনাবাদাম ০.৯৫ লাখ হে. জমিতে ১.৭১ লাখ মে.টন, তিল ০.৬৫১ লাখ হে. জমিতে ০.৭৭১ লাখ মে.টন, সয়াবিন ০.৭৯১ লাখ হে. জমিতে ১.৪২২ লাখ মে.টন, সূর্যমুখী ০.০৯২ লাখ হে. জমিতে ০.১৬ লাখ মে.টন এবং অন্যান্য তেলজাতীয় ফসল ০.০১২ এবং ০.০১৪ লাখ মে.টন, যা থেকে দেখা যায়, সরিষা বাংলাদেশের প্রধান তেলজাতীয় ফসল।
বাংলাদেশে বর্তমানে জনপ্রতি মাথাপিছু ভোজ্যতেলের চাহিদা প্রায় ১২ কেজি। তবে এটি বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, উচ্চবিত্ত পরিবারের মানুষের মাথাপিছু ভোজ্যতেলের চাহিদা মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষের তুলনায় বেশি।
বাংলাদেশে ২০২২-২৩ সালে মোট জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১৬ কোটি। তাই, ২০২২-২৩ সালে বাংলাদেশের জনপ্রতি মাথাপিছু ভোজ্যতেলের চাহিদা ছিল প্রায় ১৯২ কোটি কেজি।
বাংলাদেশে ২০২২-২৩ সালে মোট ভোজ্যতেলের উৎপাদন ছিল প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন। তাই উৎপাদন থেকে চাহিদা পূরণের জন্য প্রতি বছর প্রায় ৩৯ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়। এই পরিমাণ তেলের মোট মূল্য ছিল প্রায় ১৮৪ কোটি ৭৯ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশের পান চাষ একটি সম্ভাবনাময় ভোজ্যতেলের উৎস। বাংলাদেশের বরগুনা, ভোলা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ইত্যাদি অঞ্চলে বর্তমানে পাম চাষ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বাংলাদেশের এই অঞ্চলগুলোতে পাম চাষের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ থাকার কারণে দিন দিন আরো জনপ্রিয়তা লাভ করছে। একটি গবেষণায় দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে প্রায় ১৫,০০০ হেক্টর জমিতে পাম চাষ করা হয়। এই পরিমাণ জমি থেকে প্রায় ১.৫ লাখ মেট্রিক টন পাম ফল উৎপাদিত হয়। এর থেকে প্রায় ৬০ হাজার মেট্রিক টন পাম তেল উৎপাদিত হয়।
বরগুনা, ভোলা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ইত্যাদি অঞ্চলের পাশাপাশি অন্যান্য অঞ্চলে পাম চাষের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে । কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে বাংলাদেশের সব অঞ্চলে পাম চাষ করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। বাংলাদেশে বেশির ভাগ কৃষক স্বল্পশিক্ষিত নতুন কোন কিছুর সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়া এটা তাদের জন্য অনেক কঠিন। যেহেতু পাম একটি নতুন ভোজ্যতেলের উৎস তাই এ ব্যাপারে বেশির ভাগ কৃষকের রয়েছে স্বল্প ধারণা আবার কারো কারো কাছে একদমই অজানা।
দেশে বর্তমানে পাম চাষ করা গেলেও সব থেকে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পাম ফল থেকে তেল উৎপাদনকারী যন্ত্র। বাংলাদেশের সব অঞ্চল মিলে বর্তমানে খুব স্বল্প পরিমাণে পাম চাষ করা হচ্ছে যার কারণে দামি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে পাম ফল থেকে তেল উৎপাদন প্রক্রিয়ায় খরচ হচ্ছে বেশি। যার ফলে কৃষকরা অনাগ্রহ দেখাচ্ছে। যদি সরকার সহজ কিস্তিতে অথবা সরকারি কোন মাধ্যমে পাম ফল থেকে তেল সংগ্রহের যন্ত্র কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতেন তাহলে বাংলাদেশে অদূর ভবিষ্যতে পাম চাষের সম্ভাবনা আরও অনেক গুণ বেড়ে যেত এবং বাংলাদেশে যে ৩৯ লাখ মেট্রিক টন তেল আমদানি করতে হয় তার পরিমাণও কমে অনেক নিচে নেমে আসত এবং দেশের মুদ্রা দেশের ব্যবহার করা যেত। যার ফলে জিডিপিতে বাড়ত কৃষি খাতে আয় যা দেশের উন্নয়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
[লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া]
সোহান হোসেন
বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
পাম গাছ একটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ। রোপণের ৩-৪ বছরের মধ্যে ফলন শুরু হয়। একটানা ৬০-৭০ বছর ফল দিয়ে থাকে। বছরে ৮-১০টি কাঁদি আহরণ করা যায়। একটি কাঁদিও ওজন ৪০-৮০ কেজি পর্যন্ত হয়। ঝড় জলোচ্ছ্বাসে এই গাছের সহজে ক্ষতি হয় না। পাম গাছ অন্যান্য গাছ থেকে ১০ গুণ বেশি অক্সিজেন দেয়। এছাড়া পাম জল, পাম সিরাপ, পাম চিনি ইত্যাদি তৈরি হয়।
বাংলাদেশে প্রতি বছর ভোজ্যতেলের জন্য নানা ধরনের তেল জাতীয় ফসল চাষ করা হয়। তবে তেলজাতীয় ফসলের মধ্যে অন্যতম প্রধান হলো সরিষা। এছাড়া দেশে সূর্যমুখী, তিল, চীনাবাদাম, তিসি, কুসুমফুল, সয়াবিন ইত্যাদি চাষাবাদ হয়ে থাকে। সরিষার তেল দিয়েই ভোজ্যতেলের সিংহভাগ চাহিদা পূরণ হয় এবং সরিষার তেল বাঙালির ঐতিহ্যের একটা অংশ। সরিষার তেলের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা জন্য এখন সয়াবিন তেল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে ৬.১০৬ হে. জমিতে ৮.২৪৩ লাখ মে.টন সরিষা উৎপাদিত হয়েছে। অপরদিকে চীনাবাদাম ০.৯৫ লাখ হে. জমিতে ১.৭১ লাখ মে.টন, তিল ০.৬৫১ লাখ হে. জমিতে ০.৭৭১ লাখ মে.টন, সয়াবিন ০.৭৯১ লাখ হে. জমিতে ১.৪২২ লাখ মে.টন, সূর্যমুখী ০.০৯২ লাখ হে. জমিতে ০.১৬ লাখ মে.টন এবং অন্যান্য তেলজাতীয় ফসল ০.০১২ এবং ০.০১৪ লাখ মে.টন, যা থেকে দেখা যায়, সরিষা বাংলাদেশের প্রধান তেলজাতীয় ফসল।
বাংলাদেশে বর্তমানে জনপ্রতি মাথাপিছু ভোজ্যতেলের চাহিদা প্রায় ১২ কেজি। তবে এটি বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষের ওপর নির্ভর করে ভিন্ন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, উচ্চবিত্ত পরিবারের মানুষের মাথাপিছু ভোজ্যতেলের চাহিদা মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষের তুলনায় বেশি।
বাংলাদেশে ২০২২-২৩ সালে মোট জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১৬ কোটি। তাই, ২০২২-২৩ সালে বাংলাদেশের জনপ্রতি মাথাপিছু ভোজ্যতেলের চাহিদা ছিল প্রায় ১৯২ কোটি কেজি।
বাংলাদেশে ২০২২-২৩ সালে মোট ভোজ্যতেলের উৎপাদন ছিল প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন। তাই উৎপাদন থেকে চাহিদা পূরণের জন্য প্রতি বছর প্রায় ৩৯ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়। এই পরিমাণ তেলের মোট মূল্য ছিল প্রায় ১৮৪ কোটি ৭৯ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশের পান চাষ একটি সম্ভাবনাময় ভোজ্যতেলের উৎস। বাংলাদেশের বরগুনা, ভোলা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ইত্যাদি অঞ্চলে বর্তমানে পাম চাষ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বাংলাদেশের এই অঞ্চলগুলোতে পাম চাষের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ থাকার কারণে দিন দিন আরো জনপ্রিয়তা লাভ করছে। একটি গবেষণায় দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে প্রায় ১৫,০০০ হেক্টর জমিতে পাম চাষ করা হয়। এই পরিমাণ জমি থেকে প্রায় ১.৫ লাখ মেট্রিক টন পাম ফল উৎপাদিত হয়। এর থেকে প্রায় ৬০ হাজার মেট্রিক টন পাম তেল উৎপাদিত হয়।
বরগুনা, ভোলা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ইত্যাদি অঞ্চলের পাশাপাশি অন্যান্য অঞ্চলে পাম চাষের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে । কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে বাংলাদেশের সব অঞ্চলে পাম চাষ করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। বাংলাদেশে বেশির ভাগ কৃষক স্বল্পশিক্ষিত নতুন কোন কিছুর সঙ্গে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়া এটা তাদের জন্য অনেক কঠিন। যেহেতু পাম একটি নতুন ভোজ্যতেলের উৎস তাই এ ব্যাপারে বেশির ভাগ কৃষকের রয়েছে স্বল্প ধারণা আবার কারো কারো কাছে একদমই অজানা।
দেশে বর্তমানে পাম চাষ করা গেলেও সব থেকে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পাম ফল থেকে তেল উৎপাদনকারী যন্ত্র। বাংলাদেশের সব অঞ্চল মিলে বর্তমানে খুব স্বল্প পরিমাণে পাম চাষ করা হচ্ছে যার কারণে দামি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে পাম ফল থেকে তেল উৎপাদন প্রক্রিয়ায় খরচ হচ্ছে বেশি। যার ফলে কৃষকরা অনাগ্রহ দেখাচ্ছে। যদি সরকার সহজ কিস্তিতে অথবা সরকারি কোন মাধ্যমে পাম ফল থেকে তেল সংগ্রহের যন্ত্র কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতেন তাহলে বাংলাদেশে অদূর ভবিষ্যতে পাম চাষের সম্ভাবনা আরও অনেক গুণ বেড়ে যেত এবং বাংলাদেশে যে ৩৯ লাখ মেট্রিক টন তেল আমদানি করতে হয় তার পরিমাণও কমে অনেক নিচে নেমে আসত এবং দেশের মুদ্রা দেশের ব্যবহার করা যেত। যার ফলে জিডিপিতে বাড়ত কৃষি খাতে আয় যা দেশের উন্নয়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
[লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া]