alt

উপ-সম্পাদকীয়

‘মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়ন জলে ভাসি’

মানজার চৌধুরী সুইট

: রোববার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। গানটি আমাদের জাতীয় সংগীত হওয়ার পেছনে বিশাল এক ইতিহাসের পটভূমি রয়েছে এবং বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধে অসংখ্য সাধারণ মানুষ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সৈনিকদের আত্মাহুতি, সম্ভ্রমহারা নারীদের আর্তবেদনা মিশে রয়েছে এই সোনার বাংলার জাতীয় সংগীতের সঙ্গে। মুক্তিযুদ্ধকালে কোটি কোটি বাঙালি এ গান কণ্ঠে তুলে নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করেছেন। কেমন করে আমাদের জাতীয় সংগীত হলো, তার পেছনের কিছু জানা-অজানা ইতিহাস পাঠকদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি রচনা করেছিলেন ১৯০৫ সালে। এ গানটির সুর তিনি করেছিলেন কুষ্টিয়ার শিলাইদহের ডাক হরকরা গগন চন্দ্র দাস রচিত ‘আমি কোথায় পাব তারে, আমার মনের মানুষ যে রে’ শীর্ষক বাউল গান থেকে।

‘আমার সোনার বাংলা’ গানটির মধ্যে রয়েছে বাঙালির দেশাত্মবোধের নান্দনিক অনুভূতি ও ঐক্যের প্রেরণা। ১৮৯০ এর শেষে অথবা ১৮৯১ এর গোড়ার দিকে যুবক রবীন্দ্রনাথ তার পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদেশে পূর্ববঙ্গের জমিদারির দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়ে সপরিবারে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে আসেন। তিনি গ্রামবাংলার অপরূপ রূপ দেখে উপলব্ধি করেন, বাংলাদেশের প্রাণ লুকিয়ে রয়েছে প্রকৃত অর্থে গ্রাম বাংলায়। শিলাইদহের জমিদারির দায়িত্ব পালনকালে বাংলার লোকদর্শন ও সুরের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটেছিল। এ সময় তার সঙ্গে লালনের বেশ কয়েকজন শিষ্যের পরিচয় হয়। তারা হলেনÑ গগন মন্ডল, গোসাই গোপাল, সর্বক্ষেপী বোষ্টমী, গোসাই রাম লাল প্রমুখ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্র বলেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বর্ণনায় শিলাইদহ অঞ্চলের বাউলদের সম্পর্কে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। তিনি লিখেছেনÑ আমরা যখন শিলাইদহে ছিলুম তখন রোজ আমাদের বোটে সেখানকার গ্রাম্য গাইয়েদের আমদানি হয়। তার মধ্যে দুজন আমাদের মার্কামারা হয়ে পড়েছিল। একজন কাঙ্গাল ফিকির চাঁদ ফকিরের গান গাইত, আরেকজন সুনাউল্লাহ এর একদিনের পাল্লায় তার দু’আনা পয়সা বরাদ্ধ ছিল। নিয়মিত বরাদ্দ ছাড়াও কাকি মা’র (রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী মৃণালিনী দেবী) দানশীলতায় তার একখানি শাড়ি এবং তার সহচরীর ফসফরিক সালসার একটি খালি বোতল লাভ হয়েছিল। বলেন্দ্রনাথ বাউল সুনাউল্লাহর কাছ থেকে বারোটি গান খাতায় টুকে নিয়েছিলেন। সেই বারোটি গানের মধ্যে সাত নম্বর গানটির রচয়িতা ছিলেন গগন মন্ডল। গগন মন্ডল নামের পাশে বলেন্দ্রনাথ তার পরিচয় লিখেছিলেন শিলাইদহের ডাক হরকরা। আর সে গানটি ছিল ‘আমি কোথায় পাব তারে, আমার মনের মানুষ যে রে’।

গগন হরকরা সম্পর্কে খুব বেশি জানা যায় না। তার প্রকৃত নাম গগন চন্দ্র দাস। জন্ম আনুমানিক ১৮৪৫ সালে। শিলাইদহের আড়পাড়া গ্রামের এক কায়স্থ পরিবারে। শিলাইদহের ঠাকুর এস্টেটের দীর্ঘদিনের কর্মচারী শচীন্দ্রনাথ অধিকারী গগনের পরিচিতি ও তার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের অন্তরঙ্গ সম্পর্কে একটি চিত্র এঁকেছেন এভাবেÑ পোস্টাপিসের চিঠি বিলির কাজে গাঁয়ে গাঁয়ে একে ঘুরতে হয়। সে সময় মাঠের মধ্যে নদী তীরে ইনি প্রাণের আনন্দে মরমি সংগীত গেয়ে শান্ত প্রকৃতিকে তন্দ্রাচ্ছন্ন করে দিতেন। পল্লীর কুটিরে কুটিরে রসতরঙ্গ জেগে উঠত। চিঠি বিলি করার জন্য রবীন্দ্রনাথের কাছে প্রায় প্রত্যহই এঁকে যেতে হতো। সেখানে চলত রসালাপ, গানের পরে গান, সুর তরঙ্গ। অনেকদিন সন্ধ্যার পর নির্জনে বোটের ছাদে বসে রবীন্দ্রনাথের গীতসুধা পান করতেন।

অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরী তার রবীন্দ্র উত্তরসূরি গ্রন্থে গগন হরকরার বাস্তুভিটা সম্পর্কে লিখেছেন ‘দুই যুগ আগেও গগনের ভিটার অস্তিত্ব ছিল’ লোকমুখে জানতে পারা যায় যে, গগন হরকরার একটি বড় ফলের বাগান ছিল। গগনের বাস্তুভিটায় অসিমদ্দি নামক একজন কৃষক বাড়ি করে থাকতেন এবং সে বাড়িটা আজও দাসের ভিটা নামে পরিচিত। শেষ সময় দাসেরা মন্ডল নামেও পরিচিত ছিল।

রবীন্দ্রনাথ ফ্রান্সে অহ ওহফরধহ ঋড়ষশ জবষরমরড়হ শীর্ষক যে বক্তৃতা দেন তার এক জায়গায় তিনি গগন হরকরার পরিচয় দিয়ে শিলাইদহে তার প্রথম শোনা গান ‘আমি কোথায় পাব তারে’ “(ঞযব ভরৎংঃ ইধঁষ ংড়হম, যিরপয ও পযধহপবফ ঃড় যবধৎ রিঃয ধহু ধঃঃবহঃরড়হ, ঢ়ৎড়ভড়ঁহফষু ংঃরৎৎবফ সু সরহফ. ওঃং ড়িৎফং ধৎব ংড় ংরসঢ়ষব ঃযধঃ রঃ সধশবং সব যবংরঃধঃব ঃড় ৎবহফবৎ ঃযবস রহ ধ ভড়ৎবরমহ ঃড়হমঁব, ধহফ ংবঃ ঃযবস ভড়ৎধিৎফ ভড়ৎ পৎরঃরপধষ ড়নংবৎাধঃরড়হ”.

লালনের মতো গগন হরকরারও তাদের গানের মাধ্যমে সমাজের নানা অসঙ্গতি ও সংস্কারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। এ কারণে এদের সংগ্রাম এদের গানের সহজিয়া লোকদর্শনে আকৃষ্ট হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ, মীর মোশারফ হোসেন, কাঙ্গাল হরিনাথসহ গ্রামের নিরক্ষর সাধারণ মানুষও।

বাউল গান সংগ্রহ প্রচারে রবীন্দ্রনাথ তার পরিবারে কয়েকজন সদস্যের ভূমিকা ছিল খুবই আন্তরিক। ক্ষিতিমোহন সেনের সংগ্রহ থেকে কিছু বাউল গান এবং শিলাইদহ ও ছেউড়িয়া অঞ্চল থেকে সংগৃহীত লালন ফকির ও গগন হরকরার কয়েকটি গান প্রকাশ করেছিলেন। এছাড়া তার অগ্রজ স্বর্ণকুমারী দেবীর একমাত্র সন্তান সরলা দেবী চৌধুরী (১৮৭২-১৯৪৫) ভারতী পত্রিকায় ১৩০২ বঙ্গাব্দের ভাদ্র সংখ্যায় গগন হরকরার কয়েকটি গান প্রকাশ করেছিল। তিনি গগন হরকরার এই গানটির স্বরলিপির প্রথম মুদ্রণ করেন ১৩৫৭ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসে শতগান সংকলনে। এছাড়া ১৩২২ বঙ্গাব্দের বৈশাখে রবীন্দ্রনাথ সংগৃহীত গগন হরকরার ‘আমি কোথায় পাব তারে’ গানটি দিয়ে রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় প্রবাসী পত্রিকায় হারমনি বিভাগে সূচনা করেছে।

আবার আমরা দৃষ্টি দেই অবিভক্ত বঙ্গদেশের রাজনীতির দিকে। ১৯০৩ সাল লর্ড কার্জন তখন ভারতের বড় লাট কলকাতা ভারতের রাজধানী সরকারি ও প্রশাসনিকভাবে বাংলা অনেক বড় হয়ে যাওয়ায় ইংরেজদের জন্য এর শাসনকার্য পরিচালনা বেশ দুরূহ হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় তখন বাংলায় আবার জাতীয়তাবাদী আন্দোলনও ধীরে ধীরে দানা বেঁধে উঠছিল। এ অবস্থায় ব্রিটিশ সা¤্রাজ্যের গ্রীষ্মাবাস শিমলা পাহাড়ের লাট ভবনে লর্ড কার্জন শ্বেতাঙ্গদের নিয়ে এক গোপন বৈঠকে বসল। তারা সিদ্ধান্ত নিলেন মুসলমানপ্রধান পূর্ববঙ্গ ও আসামকে যুক্ত করে পৃথক একটি প্রদেশ গঠিত হবে। তার রাজধানী হবে ঢাকা। ১৯০৪ সালের জানুয়ারিতে সরকারিভাবে এ পরিকল্পনা প্রকাশ করা হলো। ফেব্রুয়ারিতে লর্ড কার্জন ঢাকায় এসে মুসলমানদের বঙ্গভঙ্গের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে সক্ষম হলেন। ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে ১৯০৫ সালের ১৯ জুলাই। বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্তে গোটা বাংলায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলো। ঢাকার নবাব খাজা সলিমুল্লাহ এবং দলীতদের নেতা গুরুচাঁদ ঠাকুরের নেতৃত্বে পূর্ববঙ্গের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান কৃষক ও নিম্নবর্গের হিন্দু কৃষকরা কার্জনের বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেন। কিন্তু কলকাতার গোটা বর্ণ হিন্দু সমাজ যারা ছিলেন তুলনামূলক শিক্ষিত, অবস্থা সম্পন্ন, জমিদার বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেন। তখনকার বাঙালি সমাজ আরও একটি বড় বিপদ দেখতে পেল আগামীতে। বাঙালি জাতিসত্ত্বা ও সাংস্কৃতিক বিচ্ছেদ এবং ব্রিটিশ রাজদের পুরনো কৌশল ভাগ কর, শাসন কর (উরারফব ্ জঁষব) নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেন রবীন্দ্রনাথের মতো কিছু সংবেদনশীল মানুষও। তারা বঙ্গভঙ্গের সুদূরপ্রসারী এক বিপদ প্রত্যক্ষ করলেন।

বঙ্গভঙ্গের সেই উত্তাল সময়ে রবীন্দ্রনাথ রচনা করলেন স্বদেশ পর্যায়ের অবিস্মরণীয় গানগুলো, গীত বিতানের স্বদেশ পর্যায়ের প্রথম গানটিই ছিল ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’। এই গানগুলো রচনার অনুপ্রেরণা তিনি পেয়েছিলেন পূর্ববঙ্গের কাদা-মাটি-জল থেকে। বাউল গানের ভেতর যে উদার মানবিকতাবোধ ও সম্প্রদায়-সম্প্রীতির চেতনা রয়েছে তা রবীন্দ্রনাথকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছিল।

১৯০৭ সালের ৭ আগস্ট কলকাতায় বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন তীব্র গতি পায়। কলকাতার টাউন হলে লোকারন্যে রবীন্দ্রনাথ প্রবন্ধ পাঠ শেষে তিনি উদার কণ্ঠে গাইলেন ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’।

রবীন্দ্রনাথ বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে কলকাতা শহরের নানা এলাকায় সব সাধারণ মানুষের মাঝে মিছিল করে ‘আমার সোনার বাংলা’ এবং ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’ গাইতে গাইতে সর্বসাধারণের মাঝে রাখি পরাতেন। এখানে কোন ছুত্য-অছুত্য, উঁচু-নিচু, জাত-পাত ছিল না। অবশেষে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয় এবং ব্রিটিশদের কলকাতা রাজধানীর পরিবর্তে দিল্লিতে রাজধানী সরিয়ে নেয়া হয়।

সোনার বাংলা গানটির স্বরলিপি প্রকাশের পর দুটি ডিস্ক বের হয়। গ্রামোফোন কোম্পানি ও কলম্বিয়া রেকর্ড থেকে গানটিতে কণ্ঠ দেন যথাক্রমেÑ সুরেন্দ্র বিজয় দে (রেকর্ড নং-পি-৫৭৮৪) এবং গোপাল চন্দ্র সেন (রেকর্ড নং-আর-৭০৬), এর গানটি জনপ্রিয় করে তুলতে বেতারেরও ভূমিকা ছিল। আকাশ বাণী কলকাতা কেন্দ্র থেকে এ গানটি রবীন্দ্র সংগীত হিসেবে বহুবার প্রচার হয়েছিল। অবিভক্ত বাংলায় ঢাকায় আরেকটি রেডিও স্টেশন ছিল ‘ধ্বনী’। এ স্টেশন থেকেও এ গানটি বহুবার প্রচারিত হয়েছে।

এরপর ইতিহাসের তরি অনেকদূর পথ পাড়ি দিয়েছে। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ও ১৫ আগস্ট দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে হিন্দুস্তান ও পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠন হয়েছে। এরও অনেক অনেক পরে পাকিস্তানশাসিত পূর্ববঙ্গে ১৯৫৪ সালের ২ এপ্রিল শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের ঐতিহাসিক নির্বাচন সাফল্যে যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠিত হয়। যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠনের পর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক ঘটনা ছিল ১৯৫৪ সালের ২৩-২৭ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী ভাষণ প্রদান করেন জ্ঞান তাপস ড. মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। এ অনুষ্ঠানে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি গীত হয়েছিল।

(চলবে)

[লেখক : সাধারণ সম্পাদক, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী]

মানুষের পর কারা হবে বিশ্বজয়ী

স্বাস্থ্য খাতে ফার্মাসিস্টদের অবদান

টেকসই রাষ্ট্রীয় সংস্কারে শিক্ষা ব্যবস্থার অব্যাহত বিনির্মাণের বিকল্প নাই

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সামাজিক অর্থায়নের ভূমিকা

বিশ্ব নরসুন্দর দিবস

মধু পূর্ণিমা ও প্রাসঙ্গিক কথা

‘মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়ন জলে ভাসি’

ছয়টি কমিশন গঠিত হলো কিন্তু শিক্ষা কোথায়?

বৃষ্টি হলেই নগরে জলাবদ্ধতা

শিক্ষাব্যবস্থার বিনির্মাণে শিক্ষা প্রশাসনের পুনর্গঠন ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা

বন্যা পরবর্তী রোগবালাই

রম্যগদ্য : থামব কবে কাইজ্জা-ফ্যাসাদ

প্রসঙ্গ : জাতীয় সংগীত

পানির ব্যবহার, পানির রাজনীতি

রবীন্দ্র ভাবনায় কৃষি এবং আজকের প্রেক্ষাপট

শিক্ষা ব্যবস্থার বিনির্মাণে শিক্ষা প্রশাসনের পুনর্গঠন ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা

‘আবার তোরা মানুষ হ’

ভোজ্যতেল সংকট মেটাতে পাম চাষের গুরুত্ব

গোপনে ধারণকৃত ভিডিও ও ছবি দিয়ে প্রতারণা

হুন্ডি কেন বন্ধ করা যাচ্ছে না

আকস্মিক বন্যা প্রতিরোধ ও প্রস্তুতির কৌশল

পতিতাবৃত্তি কি অপরাধ?

বন্যা-পরবর্তী কৃষকের সুরক্ষা করণীয়

নদী সংস্কার : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

নিজের চরকায় তেল দেবার নাম দেশপ্রেম

রম্যগদ্য : ডাক্তারি যখন আইসিইউতে

ডায়াবেটিস ও মুখের স্বাস্থ্য

বাঙালির ইলিশচর্চা

এসডিজি অর্জনে চ্যালেঞ্জ হতে পারে কুষ্ঠ রোগ

প্রসঙ্গ : পরিসংখ্যানের তথ্য বিকৃতি

বোরো ধান বিষয়ে কিছু সতর্কতা এবং সার ব্যবস্থাপনা

বন্যার জন্য ভারত কতটুকু দায়ী

গ্রাফিতিতে আদিবাসীদের বঞ্চনার চিত্র

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা

পুলিশের সংস্কার হোক জনগণের কল্যাণে

জলবায়ু পরিবর্তন ও আমাদের মনস্তত্ত্ব

tab

উপ-সম্পাদকীয়

‘মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়ন জলে ভাসি’

মানজার চৌধুরী সুইট

রোববার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। গানটি আমাদের জাতীয় সংগীত হওয়ার পেছনে বিশাল এক ইতিহাসের পটভূমি রয়েছে এবং বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধে অসংখ্য সাধারণ মানুষ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সৈনিকদের আত্মাহুতি, সম্ভ্রমহারা নারীদের আর্তবেদনা মিশে রয়েছে এই সোনার বাংলার জাতীয় সংগীতের সঙ্গে। মুক্তিযুদ্ধকালে কোটি কোটি বাঙালি এ গান কণ্ঠে তুলে নিয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করেছেন। কেমন করে আমাদের জাতীয় সংগীত হলো, তার পেছনের কিছু জানা-অজানা ইতিহাস পাঠকদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি রচনা করেছিলেন ১৯০৫ সালে। এ গানটির সুর তিনি করেছিলেন কুষ্টিয়ার শিলাইদহের ডাক হরকরা গগন চন্দ্র দাস রচিত ‘আমি কোথায় পাব তারে, আমার মনের মানুষ যে রে’ শীর্ষক বাউল গান থেকে।

‘আমার সোনার বাংলা’ গানটির মধ্যে রয়েছে বাঙালির দেশাত্মবোধের নান্দনিক অনুভূতি ও ঐক্যের প্রেরণা। ১৮৯০ এর শেষে অথবা ১৮৯১ এর গোড়ার দিকে যুবক রবীন্দ্রনাথ তার পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদেশে পূর্ববঙ্গের জমিদারির দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়ে সপরিবারে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে আসেন। তিনি গ্রামবাংলার অপরূপ রূপ দেখে উপলব্ধি করেন, বাংলাদেশের প্রাণ লুকিয়ে রয়েছে প্রকৃত অর্থে গ্রাম বাংলায়। শিলাইদহের জমিদারির দায়িত্ব পালনকালে বাংলার লোকদর্শন ও সুরের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটেছিল। এ সময় তার সঙ্গে লালনের বেশ কয়েকজন শিষ্যের পরিচয় হয়। তারা হলেনÑ গগন মন্ডল, গোসাই গোপাল, সর্বক্ষেপী বোষ্টমী, গোসাই রাম লাল প্রমুখ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভ্রাতুষ্পুত্র বলেন্দ্রনাথ ঠাকুরের বর্ণনায় শিলাইদহ অঞ্চলের বাউলদের সম্পর্কে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। তিনি লিখেছেনÑ আমরা যখন শিলাইদহে ছিলুম তখন রোজ আমাদের বোটে সেখানকার গ্রাম্য গাইয়েদের আমদানি হয়। তার মধ্যে দুজন আমাদের মার্কামারা হয়ে পড়েছিল। একজন কাঙ্গাল ফিকির চাঁদ ফকিরের গান গাইত, আরেকজন সুনাউল্লাহ এর একদিনের পাল্লায় তার দু’আনা পয়সা বরাদ্ধ ছিল। নিয়মিত বরাদ্দ ছাড়াও কাকি মা’র (রবীন্দ্রনাথের স্ত্রী মৃণালিনী দেবী) দানশীলতায় তার একখানি শাড়ি এবং তার সহচরীর ফসফরিক সালসার একটি খালি বোতল লাভ হয়েছিল। বলেন্দ্রনাথ বাউল সুনাউল্লাহর কাছ থেকে বারোটি গান খাতায় টুকে নিয়েছিলেন। সেই বারোটি গানের মধ্যে সাত নম্বর গানটির রচয়িতা ছিলেন গগন মন্ডল। গগন মন্ডল নামের পাশে বলেন্দ্রনাথ তার পরিচয় লিখেছিলেন শিলাইদহের ডাক হরকরা। আর সে গানটি ছিল ‘আমি কোথায় পাব তারে, আমার মনের মানুষ যে রে’।

গগন হরকরা সম্পর্কে খুব বেশি জানা যায় না। তার প্রকৃত নাম গগন চন্দ্র দাস। জন্ম আনুমানিক ১৮৪৫ সালে। শিলাইদহের আড়পাড়া গ্রামের এক কায়স্থ পরিবারে। শিলাইদহের ঠাকুর এস্টেটের দীর্ঘদিনের কর্মচারী শচীন্দ্রনাথ অধিকারী গগনের পরিচিতি ও তার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের অন্তরঙ্গ সম্পর্কে একটি চিত্র এঁকেছেন এভাবেÑ পোস্টাপিসের চিঠি বিলির কাজে গাঁয়ে গাঁয়ে একে ঘুরতে হয়। সে সময় মাঠের মধ্যে নদী তীরে ইনি প্রাণের আনন্দে মরমি সংগীত গেয়ে শান্ত প্রকৃতিকে তন্দ্রাচ্ছন্ন করে দিতেন। পল্লীর কুটিরে কুটিরে রসতরঙ্গ জেগে উঠত। চিঠি বিলি করার জন্য রবীন্দ্রনাথের কাছে প্রায় প্রত্যহই এঁকে যেতে হতো। সেখানে চলত রসালাপ, গানের পরে গান, সুর তরঙ্গ। অনেকদিন সন্ধ্যার পর নির্জনে বোটের ছাদে বসে রবীন্দ্রনাথের গীতসুধা পান করতেন।

অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরী তার রবীন্দ্র উত্তরসূরি গ্রন্থে গগন হরকরার বাস্তুভিটা সম্পর্কে লিখেছেন ‘দুই যুগ আগেও গগনের ভিটার অস্তিত্ব ছিল’ লোকমুখে জানতে পারা যায় যে, গগন হরকরার একটি বড় ফলের বাগান ছিল। গগনের বাস্তুভিটায় অসিমদ্দি নামক একজন কৃষক বাড়ি করে থাকতেন এবং সে বাড়িটা আজও দাসের ভিটা নামে পরিচিত। শেষ সময় দাসেরা মন্ডল নামেও পরিচিত ছিল।

রবীন্দ্রনাথ ফ্রান্সে অহ ওহফরধহ ঋড়ষশ জবষরমরড়হ শীর্ষক যে বক্তৃতা দেন তার এক জায়গায় তিনি গগন হরকরার পরিচয় দিয়ে শিলাইদহে তার প্রথম শোনা গান ‘আমি কোথায় পাব তারে’ “(ঞযব ভরৎংঃ ইধঁষ ংড়হম, যিরপয ও পযধহপবফ ঃড় যবধৎ রিঃয ধহু ধঃঃবহঃরড়হ, ঢ়ৎড়ভড়ঁহফষু ংঃরৎৎবফ সু সরহফ. ওঃং ড়িৎফং ধৎব ংড় ংরসঢ়ষব ঃযধঃ রঃ সধশবং সব যবংরঃধঃব ঃড় ৎবহফবৎ ঃযবস রহ ধ ভড়ৎবরমহ ঃড়হমঁব, ধহফ ংবঃ ঃযবস ভড়ৎধিৎফ ভড়ৎ পৎরঃরপধষ ড়নংবৎাধঃরড়হ”.

লালনের মতো গগন হরকরারও তাদের গানের মাধ্যমে সমাজের নানা অসঙ্গতি ও সংস্কারকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। এ কারণে এদের সংগ্রাম এদের গানের সহজিয়া লোকদর্শনে আকৃষ্ট হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ, মীর মোশারফ হোসেন, কাঙ্গাল হরিনাথসহ গ্রামের নিরক্ষর সাধারণ মানুষও।

বাউল গান সংগ্রহ প্রচারে রবীন্দ্রনাথ তার পরিবারে কয়েকজন সদস্যের ভূমিকা ছিল খুবই আন্তরিক। ক্ষিতিমোহন সেনের সংগ্রহ থেকে কিছু বাউল গান এবং শিলাইদহ ও ছেউড়িয়া অঞ্চল থেকে সংগৃহীত লালন ফকির ও গগন হরকরার কয়েকটি গান প্রকাশ করেছিলেন। এছাড়া তার অগ্রজ স্বর্ণকুমারী দেবীর একমাত্র সন্তান সরলা দেবী চৌধুরী (১৮৭২-১৯৪৫) ভারতী পত্রিকায় ১৩০২ বঙ্গাব্দের ভাদ্র সংখ্যায় গগন হরকরার কয়েকটি গান প্রকাশ করেছিল। তিনি গগন হরকরার এই গানটির স্বরলিপির প্রথম মুদ্রণ করেন ১৩৫৭ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসে শতগান সংকলনে। এছাড়া ১৩২২ বঙ্গাব্দের বৈশাখে রবীন্দ্রনাথ সংগৃহীত গগন হরকরার ‘আমি কোথায় পাব তারে’ গানটি দিয়ে রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় প্রবাসী পত্রিকায় হারমনি বিভাগে সূচনা করেছে।

আবার আমরা দৃষ্টি দেই অবিভক্ত বঙ্গদেশের রাজনীতির দিকে। ১৯০৩ সাল লর্ড কার্জন তখন ভারতের বড় লাট কলকাতা ভারতের রাজধানী সরকারি ও প্রশাসনিকভাবে বাংলা অনেক বড় হয়ে যাওয়ায় ইংরেজদের জন্য এর শাসনকার্য পরিচালনা বেশ দুরূহ হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় তখন বাংলায় আবার জাতীয়তাবাদী আন্দোলনও ধীরে ধীরে দানা বেঁধে উঠছিল। এ অবস্থায় ব্রিটিশ সা¤্রাজ্যের গ্রীষ্মাবাস শিমলা পাহাড়ের লাট ভবনে লর্ড কার্জন শ্বেতাঙ্গদের নিয়ে এক গোপন বৈঠকে বসল। তারা সিদ্ধান্ত নিলেন মুসলমানপ্রধান পূর্ববঙ্গ ও আসামকে যুক্ত করে পৃথক একটি প্রদেশ গঠিত হবে। তার রাজধানী হবে ঢাকা। ১৯০৪ সালের জানুয়ারিতে সরকারিভাবে এ পরিকল্পনা প্রকাশ করা হলো। ফেব্রুয়ারিতে লর্ড কার্জন ঢাকায় এসে মুসলমানদের বঙ্গভঙ্গের প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে সক্ষম হলেন। ব্রিটিশ সরকার বঙ্গভঙ্গের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে ১৯০৫ সালের ১৯ জুলাই। বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্তে গোটা বাংলায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলো। ঢাকার নবাব খাজা সলিমুল্লাহ এবং দলীতদের নেতা গুরুচাঁদ ঠাকুরের নেতৃত্বে পূর্ববঙ্গের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান কৃষক ও নিম্নবর্গের হিন্দু কৃষকরা কার্জনের বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেন। কিন্তু কলকাতার গোটা বর্ণ হিন্দু সমাজ যারা ছিলেন তুলনামূলক শিক্ষিত, অবস্থা সম্পন্ন, জমিদার বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেন। তখনকার বাঙালি সমাজ আরও একটি বড় বিপদ দেখতে পেল আগামীতে। বাঙালি জাতিসত্ত্বা ও সাংস্কৃতিক বিচ্ছেদ এবং ব্রিটিশ রাজদের পুরনো কৌশল ভাগ কর, শাসন কর (উরারফব ্ জঁষব) নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেন রবীন্দ্রনাথের মতো কিছু সংবেদনশীল মানুষও। তারা বঙ্গভঙ্গের সুদূরপ্রসারী এক বিপদ প্রত্যক্ষ করলেন।

বঙ্গভঙ্গের সেই উত্তাল সময়ে রবীন্দ্রনাথ রচনা করলেন স্বদেশ পর্যায়ের অবিস্মরণীয় গানগুলো, গীত বিতানের স্বদেশ পর্যায়ের প্রথম গানটিই ছিল ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’। এই গানগুলো রচনার অনুপ্রেরণা তিনি পেয়েছিলেন পূর্ববঙ্গের কাদা-মাটি-জল থেকে। বাউল গানের ভেতর যে উদার মানবিকতাবোধ ও সম্প্রদায়-সম্প্রীতির চেতনা রয়েছে তা রবীন্দ্রনাথকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছিল।

১৯০৭ সালের ৭ আগস্ট কলকাতায় বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন তীব্র গতি পায়। কলকাতার টাউন হলে লোকারন্যে রবীন্দ্রনাথ প্রবন্ধ পাঠ শেষে তিনি উদার কণ্ঠে গাইলেন ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’।

রবীন্দ্রনাথ বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে কলকাতা শহরের নানা এলাকায় সব সাধারণ মানুষের মাঝে মিছিল করে ‘আমার সোনার বাংলা’ এবং ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’ গাইতে গাইতে সর্বসাধারণের মাঝে রাখি পরাতেন। এখানে কোন ছুত্য-অছুত্য, উঁচু-নিচু, জাত-পাত ছিল না। অবশেষে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ করা হয় এবং ব্রিটিশদের কলকাতা রাজধানীর পরিবর্তে দিল্লিতে রাজধানী সরিয়ে নেয়া হয়।

সোনার বাংলা গানটির স্বরলিপি প্রকাশের পর দুটি ডিস্ক বের হয়। গ্রামোফোন কোম্পানি ও কলম্বিয়া রেকর্ড থেকে গানটিতে কণ্ঠ দেন যথাক্রমেÑ সুরেন্দ্র বিজয় দে (রেকর্ড নং-পি-৫৭৮৪) এবং গোপাল চন্দ্র সেন (রেকর্ড নং-আর-৭০৬), এর গানটি জনপ্রিয় করে তুলতে বেতারেরও ভূমিকা ছিল। আকাশ বাণী কলকাতা কেন্দ্র থেকে এ গানটি রবীন্দ্র সংগীত হিসেবে বহুবার প্রচার হয়েছিল। অবিভক্ত বাংলায় ঢাকায় আরেকটি রেডিও স্টেশন ছিল ‘ধ্বনী’। এ স্টেশন থেকেও এ গানটি বহুবার প্রচারিত হয়েছে।

এরপর ইতিহাসের তরি অনেকদূর পথ পাড়ি দিয়েছে। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ও ১৫ আগস্ট দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে হিন্দুস্তান ও পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠন হয়েছে। এরও অনেক অনেক পরে পাকিস্তানশাসিত পূর্ববঙ্গে ১৯৫৪ সালের ২ এপ্রিল শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের ঐতিহাসিক নির্বাচন সাফল্যে যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠিত হয়। যুক্তফ্রন্ট সরকার গঠনের পর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক ঘটনা ছিল ১৯৫৪ সালের ২৩-২৭ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী ভাষণ প্রদান করেন জ্ঞান তাপস ড. মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। এ অনুষ্ঠানে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি গীত হয়েছিল।

(চলবে)

[লেখক : সাধারণ সম্পাদক, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী]

back to top