alt

উপ-সম্পাদকীয়

ছয়টি কমিশন গঠিত হলো কিন্তু শিক্ষা কোথায়?

মাছুম বিল্লাহ

: মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের কারণে দেশের জনসাধারণ বহু আগেই রাজনৈতিক নেতা তথা রাজনৈতিক সরকারের কাছে প্রকৃত মঙ্গলজনক কিছু আশা করা ছেড়ে দিয়েছে বহু আগেই। তাই দেশের মানুষ এমন সব ব্যক্তিকে রাষ্ট্র পরিচালনায় দেখতে চান যারা নিজেদের আখের গোছানো, অর্থবৃত্তের পাহাড় গড়া আর বিদেশের ব্যাংকে কাড়ি কাড়ি টাকা রাখার চিন্তা করবে না। জনসাধারণের সেই ধরনের ব্যক্তি দ্বারা বর্তমানে দেশ পরিচালিত হচ্ছে কিন্তু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে যারা কর্মরত, যারা সরাসরি জনগণকে সেবা প্রদান করবেন তারা তো অধিকাংশই সেই রাজনৈতিক নেতাদের ধব্জাধারী, তাদের সৃষ্ট এবং দেশের সব প্রতিষ্ঠান দৃর্বৃত্তায়ন আর দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে রূপান্তর করে রেখেছেন। তাদের নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারকে। তারপরও জনগণ আশায় বুক বেঁধে আছেন। তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সীমাবদ্ধতা ও বাধার পাহাড় সম্পর্কে তারা জানেন তারপরেও একটু বেশি বেশি আশা করে আছেন। দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে সংস্কার করতে হবে, ঢেলে সাজাতে হবে যা চাট্টিখানি কথা নয়। অনেক বন্ধুর, অনেক চ্যালেঞ্জিং এই পথ! তারপরেও মানুষের আকাক্সক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বর্তমান সরকার সেসব সংস্কারে হাত দিয়েছে।

আমরা দেখলাম যে, সরকার ইতোমধ্যে ছয়টি কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এসব কমিশন পরিচালানার জন্য বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে ছয়জন বিশিষ্ট নাগরিককে এই কমিশনগুলো পরিচালনা করার দায়িত্ব দিয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচন ব্যবস্থার উন্নয়নে এখানকার সংস্কারকে গুরুত্ব দিয়েছে যা প্রশংসার দাবিদার। নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত নির্বাচন কমিশনসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রশাসন, বিচার প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশনÑ এই চারটি প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য আপরিহার্য। এসব প্রতিষ্ঠানের সংষ্কার জনমালিকানাভিত্তিক, জবাবদিহিমূলক ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখবে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে কাজ করবেন সরফরাজ চৌধুরী, বিচার বিভাগীয় সংষ্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে শাহদীন মালিক দায়িত্ব পালন করবেন। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু আমরা যারা শিক্ষা নিয়ে কাজ করি আমাদের একটি আশা ছিল যে, প্রাথমিকভাবে বর্তমান সরকার শিক্ষা কমিশনও গঠন করবে। সেটি না দেখে আমরা কিছুটা হতাশ হয়েছি। আমরা তারপরেও বিশ^াস করি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে শিক্ষা অগ্রাধিকার পাবে।

ইতোমধ্যে বিশ^বিদ্যালয়গুলোর উচ্চ প্রশাসনিক পদগুলো পূরণ করে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা বোর্ডে দখলদারিত্বের রাজনীতি বন্ধ করার ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। অতীতে ২৮তম থেকে ৪২তম বিসিএস পর্যন্ত বিপিএসসি কর্তৃক সুপারিশকৃত অনেক প্রার্থী নিয়োগবঞ্চিত ছিলেন, ৮ আগস্ট পরবর্তী সময়ে তাদের মধ্যে ২৫৯ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রথম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বর্তমানের ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা হয়েছে। বই সংশোধন এবং পরিমার্জনের কাজ শেষ পর্যায়ে আছে। এ সংস্কারের কাজ অব্যাহত থাকবে। বর্তমান সরকারের প্রথম মাসে দেশের প্রায় সব বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য পদত্যাগ করেছেন। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এটা বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি করেছে। ক্রমাগতভাবে প্রতিটি বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্য নিয়োগ দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এর ফলে সব সরকারি এবং বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ যেন উজ্জ্বল হয় সেটি নিশ্চিত করতে শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পূর্ণ নজর রয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টা দেশবাসীকে আশ^স্ত করেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা সংস্কার চাই। আমাদের একান্ত অনুরোধ আমাদের ওপর যে সংস্কারের গুরু দায়িত্ব দিয়েছেন, সেই দায়িত্ব দিয়ে আপনারা দর্শকের গ্যালারিতে চলে যাবেন না। আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকুন। আমরা একসঙ্গে সংস্কার করব। এটা আমাদের সবার দায়িত্ব। আপনারা নিজ নিজ জগতে সংস্কার আনুন। একটা জাতির সংষ্কার শুধু সরকারের সংস্কার বলে হয় না। আপনি যেখানে আছেন সেখানে সংস্কার নিয়ে আসুন।’

চমৎকার কথা বলেছেন। অনেকে শুধু অন্যের ওপর নির্ভর করে নিজের দায়িত্ব এড়াতে চান। সবকিছু যেন এমনিতেই হয়ে যাবে, সবই যেন সরকারকে করতে হবে এবং এই সরকারকে, এটি ভুল ধারণা। সবাই মিলে একই লক্ষ্যে আমরা অগ্রসর হতে চাই। আমাদের মধ্যে বিশেষ করে আমাদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে যে সুপ্ত প্রতিভা লুকিয়ে আছে সেটা যেন বিনা বাধায় রাষ্ট্রের এবং সমাজের সহযোগিতায় প্রকাশ করা যায় সেই সুযোগের কাঠামো তৈরি করার প্রচেষ্টা সরকার চালিয়ে যাচ্ছে। ছাত্র- শ্রমিক-জনতার এই বিপ্লবের লক্ষ্যকে আমরা দ্রুত বাস্তবায়ন করার উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়েছে। সংবাদমাধ্যম ও মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা ইতোমধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে এবং জনগণকে মন খুলে সরকারের সমালোচনা করার আহ্বান জানানো হয়েছে যা গঠনতন্ত্রের মূল ভিত্তি। অথচ তথাকথিত গণতান্ত্রিক সরকারগুলো জনগণের কোন সমালোচাই শুনতে রাজি ছিল না। বর্তমান সরকার ‘মিডিয়া কমিশন’ গঠন করার কথাও চিন্তা করছে। আরো যেসব কমিশন সরকারসহ অন্য সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা যায়, সেগুলোর পুনর্গঠন ও সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হচেছ বলে বর্তমান সরকার জানিয়েছে।

যে ছয়টি কমিশন ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলো পূর্ণাঙ্গভাবে গঠিত হওয়ার পর কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী পহেলা অক্টোবর থেকে কাজ শুরু করতে পারবে বলে প্রধান উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন। পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে ধারণা করছেন তিনি। কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকার পরবর্তী পর্যায়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শসভার আয়োজন করবে। চূড়ান্ত পর্যায়ে ছাত্র সমাজ, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সরকারের প্রতিনিধি নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক তিন থেকে সাত দিনব্যাপী একটি পরামর্শসভার ভিত্তিতে সংস্কার ভাবনার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। এতে এই রূপরেখা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তার একটি ধারণাও দেয়া হবে। আরও বিভিন্ন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার কথাও প্রধান উপদেষ্টা পুনর্ব্যক্ত করেন।

আশা করছি ‘শিক্ষা কমিশনের’ কথা শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে। শিক্ষা কমিশন গঠন করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ শিক্ষার সংস্কারের সঙ্গে দেশের প্রতিটি বিভাগের উন্নয়ন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পূর্ববতী সরকারগুলো শিক্ষাক্ষেত্রে অনেকটাই ‘লিপ সার্ভিস’ দিয়ে রাষ্ট্রের বাকি বিভাগগুলোতে অবৈধ সুযোগ-সুবিধার বন্যা বইয়ে দিয়েছিল। ফলে, জনগণের কোন উপকার হয়নি, সরকারগুলো নিজেদের ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে আর শিক্ষাকে সব সময়ই অবজ্ঞা করেছে। কাজেই জনগণের পাহাড়সম আশা বর্তমান সরকার শিক্ষাকে এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যাবে যেটি হবে বিশ^মানের আর সেটি করার জন্য ‘শিক্ষা কমিশন’ গঠন একটি অপরিহার্য শর্ত।

[লেখক : সাবেক শিক্ষক, রাজউক কলেজ]

মকর সংক্রান্তি : বাঙালির উৎসব ও ঐতিহ্যের ধারক

শৃঙ্খলে আবদ্ধ সামাজিক মানুষ

দাবি আদায়ে জনদুর্ভোগ : অপসংস্কৃতি ও নৈতিক প্রশ্ন

মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে কূটতর্ক

শৃঙ্খলে আবদ্ধ সামাজিক মানুষ

রজিনাদের বেঁচে থাকার লড়াই

মানব পাচার প্রতিরোধে প্রয়োজন সচেতনতা

সংবিধান সংশোধন : আমাদের বলার আছে

চিন্তা ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা

গ্রাম উন্নয়নে যুব সমাজের ভূমিকা

‘দেশজ নাট্যশৈলী’র কেন্দ্রীয় নাট্যআঙ্গিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি

ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ও কিছু প্রশ্ন

রাখাইন পরিস্থিতি : বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির বড় পরীক্ষা

রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব

রম্যগদ্য : নিশুতিরাতের আগন্তুক

গুরু রবিদাস জির কথা

গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালদের জন্য অশনিসংকেত

নতুন বছরের প্রত্যাশা

নৈতিকতা, শিক্ষা ও উন্নয়ন: আমাদের মুক্তির পথ

কোথায় নাই কোটা?

ছবি

ও আমার স্বপ্ন ঝরা আকুল করা জন্মভূমি

ব্রেন রট: বর্তমান সময়ের এক মারাত্মক ব্যাধি

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলুক দেশের গবেষণা

নির্মোহ ইতিহাস চর্চা ও রাষ্ট্র সংস্কার প্রয়াসে শিক্ষা

জলবায়ুর পরিবর্তন ও দেশের ভবিষ্যৎ

প্রসঙ্গ : থিয়েটার ফর থেরাপির তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক পাঠ

শ্বেতপত্রে নতুন কী আছে?

ছবি

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও জুনো ভাইয়ের স্মৃতি

পরিবেশ সুরক্ষায় সার্কুলার ইকোনমি

বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কেন

ভাড়া ‘নির্ধারণ’ কিংবা ‘নিয়ন্ত্রণ’ করবে কে?

ব্যাংক ও আর্থিক খাতের জন্য কেমন ছিল ২০২৪ সাল?

স্বৈরাচারের শেষ নেই...

ছবি

স্মরণ : বাংলা সাহিত্যের অমর কথাশিল্পী

দোষারোপের রাজনীতি আর কত

জ্ঞান, দক্ষতা ও সৃজনশীলতার বিকাশে চাই বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

ছয়টি কমিশন গঠিত হলো কিন্তু শিক্ষা কোথায়?

মাছুম বিল্লাহ

মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রাজনীতির দুর্বৃত্তায়নের কারণে দেশের জনসাধারণ বহু আগেই রাজনৈতিক নেতা তথা রাজনৈতিক সরকারের কাছে প্রকৃত মঙ্গলজনক কিছু আশা করা ছেড়ে দিয়েছে বহু আগেই। তাই দেশের মানুষ এমন সব ব্যক্তিকে রাষ্ট্র পরিচালনায় দেখতে চান যারা নিজেদের আখের গোছানো, অর্থবৃত্তের পাহাড় গড়া আর বিদেশের ব্যাংকে কাড়ি কাড়ি টাকা রাখার চিন্তা করবে না। জনসাধারণের সেই ধরনের ব্যক্তি দ্বারা বর্তমানে দেশ পরিচালিত হচ্ছে কিন্তু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে যারা কর্মরত, যারা সরাসরি জনগণকে সেবা প্রদান করবেন তারা তো অধিকাংশই সেই রাজনৈতিক নেতাদের ধব্জাধারী, তাদের সৃষ্ট এবং দেশের সব প্রতিষ্ঠান দৃর্বৃত্তায়ন আর দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে রূপান্তর করে রেখেছেন। তাদের নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারকে। তারপরও জনগণ আশায় বুক বেঁধে আছেন। তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সীমাবদ্ধতা ও বাধার পাহাড় সম্পর্কে তারা জানেন তারপরেও একটু বেশি বেশি আশা করে আছেন। দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে সংস্কার করতে হবে, ঢেলে সাজাতে হবে যা চাট্টিখানি কথা নয়। অনেক বন্ধুর, অনেক চ্যালেঞ্জিং এই পথ! তারপরেও মানুষের আকাক্সক্ষার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বর্তমান সরকার সেসব সংস্কারে হাত দিয়েছে।

আমরা দেখলাম যে, সরকার ইতোমধ্যে ছয়টি কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এসব কমিশন পরিচালানার জন্য বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে ছয়জন বিশিষ্ট নাগরিককে এই কমিশনগুলো পরিচালনা করার দায়িত্ব দিয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচন ব্যবস্থার উন্নয়নে এখানকার সংস্কারকে গুরুত্ব দিয়েছে যা প্রশংসার দাবিদার। নির্বাচনের সঙ্গে সম্পর্কিত নির্বাচন কমিশনসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কারকেও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রশাসন, বিচার প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশনÑ এই চারটি প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য আপরিহার্য। এসব প্রতিষ্ঠানের সংষ্কার জনমালিকানাভিত্তিক, জবাবদিহিমূলক ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখবে। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে যাচ্ছেন বদিউল আলম মজুমদার, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে কাজ করবেন সরফরাজ চৌধুরী, বিচার বিভাগীয় সংষ্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসেবে শাহদীন মালিক দায়িত্ব পালন করবেন। এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছি। কিন্তু আমরা যারা শিক্ষা নিয়ে কাজ করি আমাদের একটি আশা ছিল যে, প্রাথমিকভাবে বর্তমান সরকার শিক্ষা কমিশনও গঠন করবে। সেটি না দেখে আমরা কিছুটা হতাশ হয়েছি। আমরা তারপরেও বিশ^াস করি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে শিক্ষা অগ্রাধিকার পাবে।

ইতোমধ্যে বিশ^বিদ্যালয়গুলোর উচ্চ প্রশাসনিক পদগুলো পূরণ করে শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক করার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালনা বোর্ডে দখলদারিত্বের রাজনীতি বন্ধ করার ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। অতীতে ২৮তম থেকে ৪২তম বিসিএস পর্যন্ত বিপিএসসি কর্তৃক সুপারিশকৃত অনেক প্রার্থী নিয়োগবঞ্চিত ছিলেন, ৮ আগস্ট পরবর্তী সময়ে তাদের মধ্যে ২৫৯ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রথম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বর্তমানের ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করা হয়েছে। বই সংশোধন এবং পরিমার্জনের কাজ শেষ পর্যায়ে আছে। এ সংস্কারের কাজ অব্যাহত থাকবে। বর্তমান সরকারের প্রথম মাসে দেশের প্রায় সব বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য পদত্যাগ করেছেন। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এটা বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি করেছে। ক্রমাগতভাবে প্রতিটি বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্য নিয়োগ দেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এর ফলে সব সরকারি এবং বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়গুলোতে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ যেন উজ্জ্বল হয় সেটি নিশ্চিত করতে শিক্ষা ব্যবস্থার দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পূর্ণ নজর রয়েছে বলে প্রধান উপদেষ্টা দেশবাসীকে আশ^স্ত করেছেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা সংস্কার চাই। আমাদের একান্ত অনুরোধ আমাদের ওপর যে সংস্কারের গুরু দায়িত্ব দিয়েছেন, সেই দায়িত্ব দিয়ে আপনারা দর্শকের গ্যালারিতে চলে যাবেন না। আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকুন। আমরা একসঙ্গে সংস্কার করব। এটা আমাদের সবার দায়িত্ব। আপনারা নিজ নিজ জগতে সংস্কার আনুন। একটা জাতির সংষ্কার শুধু সরকারের সংস্কার বলে হয় না। আপনি যেখানে আছেন সেখানে সংস্কার নিয়ে আসুন।’

চমৎকার কথা বলেছেন। অনেকে শুধু অন্যের ওপর নির্ভর করে নিজের দায়িত্ব এড়াতে চান। সবকিছু যেন এমনিতেই হয়ে যাবে, সবই যেন সরকারকে করতে হবে এবং এই সরকারকে, এটি ভুল ধারণা। সবাই মিলে একই লক্ষ্যে আমরা অগ্রসর হতে চাই। আমাদের মধ্যে বিশেষ করে আমাদের নতুন প্রজন্মের মধ্যে যে সুপ্ত প্রতিভা লুকিয়ে আছে সেটা যেন বিনা বাধায় রাষ্ট্রের এবং সমাজের সহযোগিতায় প্রকাশ করা যায় সেই সুযোগের কাঠামো তৈরি করার প্রচেষ্টা সরকার চালিয়ে যাচ্ছে। ছাত্র- শ্রমিক-জনতার এই বিপ্লবের লক্ষ্যকে আমরা দ্রুত বাস্তবায়ন করার উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়েছে। সংবাদমাধ্যম ও মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা ইতোমধ্যে নিশ্চিত করা হয়েছে এবং জনগণকে মন খুলে সরকারের সমালোচনা করার আহ্বান জানানো হয়েছে যা গঠনতন্ত্রের মূল ভিত্তি। অথচ তথাকথিত গণতান্ত্রিক সরকারগুলো জনগণের কোন সমালোচাই শুনতে রাজি ছিল না। বর্তমান সরকার ‘মিডিয়া কমিশন’ গঠন করার কথাও চিন্তা করছে। আরো যেসব কমিশন সরকারসহ অন্য সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা যায়, সেগুলোর পুনর্গঠন ও সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হচেছ বলে বর্তমান সরকার জানিয়েছে।

যে ছয়টি কমিশন ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলো পূর্ণাঙ্গভাবে গঠিত হওয়ার পর কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী পহেলা অক্টোবর থেকে কাজ শুরু করতে পারবে বলে প্রধান উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন। পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে ধারণা করছেন তিনি। কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকার পরবর্তী পর্যায়ে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শসভার আয়োজন করবে। চূড়ান্ত পর্যায়ে ছাত্র সমাজ, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সরকারের প্রতিনিধি নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক তিন থেকে সাত দিনব্যাপী একটি পরামর্শসভার ভিত্তিতে সংস্কার ভাবনার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। এতে এই রূপরেখা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তার একটি ধারণাও দেয়া হবে। আরও বিভিন্ন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার কথাও প্রধান উপদেষ্টা পুনর্ব্যক্ত করেন।

আশা করছি ‘শিক্ষা কমিশনের’ কথা শীঘ্রই ঘোষণা করা হবে। শিক্ষা কমিশন গঠন করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ শিক্ষার সংস্কারের সঙ্গে দেশের প্রতিটি বিভাগের উন্নয়ন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পূর্ববতী সরকারগুলো শিক্ষাক্ষেত্রে অনেকটাই ‘লিপ সার্ভিস’ দিয়ে রাষ্ট্রের বাকি বিভাগগুলোতে অবৈধ সুযোগ-সুবিধার বন্যা বইয়ে দিয়েছিল। ফলে, জনগণের কোন উপকার হয়নি, সরকারগুলো নিজেদের ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে আর শিক্ষাকে সব সময়ই অবজ্ঞা করেছে। কাজেই জনগণের পাহাড়সম আশা বর্তমান সরকার শিক্ষাকে এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যাবে যেটি হবে বিশ^মানের আর সেটি করার জন্য ‘শিক্ষা কমিশন’ গঠন একটি অপরিহার্য শর্ত।

[লেখক : সাবেক শিক্ষক, রাজউক কলেজ]

back to top