alt

উপ-সম্পাদকীয়

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি

সামসুল আলম

: মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি থাকা কতটা জরুরি? উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি চর্চায় আমরা কি সঠিক পথে আছি? বর্তমান সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে প্রশ্নগুলো অমূলক নয়। উচ্চশিক্ষা ও রাজনীতি একটি রাষ্ট্র বিনির্মাণ, এর সুষ্ঠু পরিচালনা এবং তার বিকাশ ও উন্নয়নের দুইটি প্রধান হাতিয়ার। একই সঙ্গে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-রাজনীতি একে অন্যের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। মূলত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম এক প্রকার ছাত্র তথা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতিরই ফসল। তেমনিভাবে এ উপমহাদেশে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নানান সময়ের নানা প্রেক্ষাপটে প্রভূত কল্যাণকর ও জনতুষ্টি জাগানিয়া সাফল্য অর্জনে সমর্থ হয়েছে।

কিন্তু সময়ের বিবর্তনে প্রেক্ষাপটের যে পরিবর্তন হয় তার সাথে রাজনীতির ধরনে ও রীতি-নীতিতেও পরিবর্তন আনা জরুরি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতির তথ্যানুসন্ধান করে বলা যায়, আজকের ছাত্র রাজনীতি অতীতের সব ঐতিহ্য, অহংকার ও অর্জনের প্রায় সব মঙ্গল দিকগুলোকে জলাঞ্জলি দিয়েছে অনেক আগেই। সমাজে লোক দেখানো হাতেগোনা কয়েকটি ভালো কাজের উদাহরণ ছাড়া আজকের ছাত্র রাজনীতি মানুষকে উল্লেখযোগ্য কিছু দিতে পারছে না।

স্বাধীনতাপূর্ব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র রাজনীতি আজ আর তার স্বমহিমায় বহমান নেই। এর মধ্যে ঢুকে পড়েছে অপরাজনীতি যার ফলশ্রুতিতে ছাত্র নেতাদের মাধ্যমে সমাজে ঘটে যাচ্ছে অভূতপূর্ব অনৈতিক, অসামাজিক ও বেআইনি কার্যকলাপ। তাই আজ পত্র-পত্রিকা ও অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমে আমরা জানতে পারছি ছাত্র-অপরাজনীতির লোমহর্ষক ঘটনা। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ, হত্যা, রাহাজানির মতো ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিচ্ছে বর্তমানে রাজনীতি করা ছাত্ররা। এরা যেন ভুলতে বসেছে রাজনীতির মূলমন্ত্র। আদর্শের ফুলঝুরি মুখে আওড়িয়েই যেন এরা খান্ত হচ্ছে, বাস্তবে এর প্রভাব প্রতিফলিত হচ্ছে না। ফলে ছাত্র রাজনীতি অনেকের কাছেই আতঙ্কের আরেক নামে পরিণত হয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ বলা চলে, কোটা ও বৈষম্যবিরোধী শান্তিপূর্ণভাবে চলা ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র রাজনীতি করা ছাত্রদের বাধা ও আক্রমণের শিকার হয়, অথচ এই ছাত্রদের রাজনীতির মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিলো সাধারণ শিক্ষার্থীর যৌক্তিক দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে তাদের পাশে থাকা।

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরলে একটা পর্যায়ে ছাত্র রাজনীতি যে তার চিরাচরিত রুপে ফিরবে না তার নিশ্চয়তা নেই। যদি তাই হয় তাহলে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৈষম্য নিরসন ও অন্যায়ের অবসান সুদূরপ্রসারি চিন্তা ছাড়া ভিন্ন কিছু নয়। পুনরায় শিক্ষার্থীরা র‌্যাগিঙ্গের শিকার হওয়া, আবাসিক হলগুলোতে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা রাজনীতি করা ছাত্রদের দ্বারা নির্যাতিত হওয়ার ভয়ে আতঙ্কে থাকা, পড়াশোনার ঊর্ধ্বে রাজনীতিকে প্রাধান্য দেয়া, ইভটিজিংয়ের আতঙ্কে থাকা, শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন না করা, রাজনৈতিক পরিচয়ে অতিরিক্ত সুবিধা আদায়সহ নানাবিধ সমস্যা পূর্বের ন্যায় চলমান থাকবে তা বলাই যায়।

আমি স্বপ্ন দেখি দেশের বর্তমান উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনীতি ও এর বলয় থেকে একদিন সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চ্যান্সেলর ও ভাইস-চ্যান্সেলর হবে একাডেমিয়াতে অসামান্য ভূমিকা পালনকারী দেশি বা বিদেশি কোন শিক্ষক যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রতিষ্ঠানগুলো স্বমহিমায় ভাস্বর হবে। শিক্ষকেরা জ্ঞান সৃষ্টি ও তা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিতরণের কাজে ব্যস্ত থাকবে। সৃজনশীল কর্ম আর নৈতিক মূল্যবোধে তাড়িত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে সদা নিবেদিত থাকবে। কিউএস, টাইমস হায়ার এডুকেশনের মতো বিশ্বের নামিদামি প্রতিষ্ঠানের র‌্যাংকিংয়ে স্থান পাবে এ দেশের প্রতিটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্বমহিমায় উদ্ভাসিত থাকবে এসব প্রতিষ্ঠান। মেধা পাচার রোধ হবে সম্পূর্ণরূপে। দেশের যেকোন ক্লান্তিকালে রাষ্ট্র পরিচালনায় জড়িত কর্তাব্যক্তিদের সদপুদেশ ও পরামর্শের নির্ভরযোগ্য সমাধান হবে এ দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুযোগ্য শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রীরা। প্রতি বছর যেসব গ্র্যাজুয়েট বের হবেন তারা প্রত্যেকে হবে এক একটি জীবন্ত রাষ্ট্রীয় সম্পদ।

অন্যদিকে শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় শিক্ষক রাজনীতি ছাত্র অপরাজনীতির মুদ্রার অপরপিঠ হিসেবে বিবেচিত হতে চলেছে। শিক্ষকতার মতো এই মহান পেশায় নিরপেক্ষতার ব্রত আজ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা যেন ভুলতে বসেছে। দেশের তিন শ্রেণীর উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আন্তর্জাতিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে এ প্রবণতা নেই বা দেখা যায় না বললেই চলে। তবে স্বায়ত্তশাসিত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা বিভিন্ন নামে (সাদা, নীল, হলুদ প্রভৃতি) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে কোন একটি রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করে যাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের সরকারি চাকরিজীবীদের কোনপ্রকার রাজনীতিতে জড়ানোর ব্যাপারে রয়েছে সরকারি নিষেধাজ্ঞা। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনেও এ বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে স্পষ্টভাবে।

মোটা অঙ্কে বলতে গেলে আমাদের শিক্ষক রাজনীতি শিক্ষক নিয়োগে নগ্ন হস্তক্ষেপ আর সাধারণ শিক্ষকদের পদোন্নতিসহ ন্যায্য অধিকার আদায়ের বিষয়গুলোকে জিম্মি করে উচ্চশিক্ষার মান হ্রাস করা ছাড়া তেমন কোন ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারছে না। ফলে সরকারি খাতের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ও এতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের যোগ্য শিক্ষক পাওয়া থেকে বঞ্ছিত করা হচ্ছে যুগের পর যুগ ধরে। এছাড়া রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নিয়োগপ্রাপ্ত কিছু শিক্ষকদের শ্রেণীকক্ষে ক্লাস ফাঁকি, কম পড়িয়ে সেমিস্টার পার করিয়ে দেয়া, পক্ষপাতমূলক মূল্যায়ন, দলীয় বিবেচনায় অথবা আদর্শগত বা স্বজাতি বিবেচনায় ১ম, ২য়, ৩য় স্থান অধিকার করানোয় ভূমিকা, অপ্রিয় ছাত্রছাত্রীদের অনৈতিকভাবে অকৃতকার্য করিয়ে দেয়ার মতো অশিক্ষকসুলভ আচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

সবদিক বিবেচনায়, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি বন্ধই হতে পারে উচ্চ শিক্ষালয়ের সবাই শিক্ষার্থী ও মেধাবী শিক্ষকবান্ধব আদর্শ বিদ্যাপীঠ। এর মধ্য দিয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মানসম্মত শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন করতে সমর্থ হবে। একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রাজনৈতিক যেসবাই কালিমার লেপন দ্বারা কলুষিত তার থেকে পাবে চিরমুক্তি। তাই উচ্চমহলে বোদ্ধাদের এ বিষয়ে ভাবার এখনই সঠিক ও উত্তম সময়।

আপাতদৃষ্টে এই লেখাকে রাজনীতি বিদ্বেষী মনে হলেও আদতে তা সত্য নয়। শুরুতেই উল্লেখ করেছি, উন্নত জাতি গঠন ও রাষ্ট্র পরিচালনায় যোগ্য নেতৃত্ব দরকার যা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত ছাত্র সমাজ থেকে উঠে আসা বাঞ্ছনীয়। যেহেতু উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি এখন আর ইতিবাচক ধারায় নেই; তাছাড়া এই রীতি হাতে গোনা দুই-একটি দেশ ব্যতীত পৃথিবীর অন্য কোন সভ্য দেশে দেখা মেলা দুরহ, তাই বর্তমান ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে আমার অবস্থান। এখন প্রশ্ন এসে যায়, যদি এমন হয় যে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো, তাহলে দেশে রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে উঠবে কিভাবে? রাজনৈতিক বিশ্ববিদ্যালয় কী হতে পারে এর বিকল্প সমাধান? হ্যাঁ একটি রাজনৈতিক বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে এ বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেশে রাজনৈতিক নেতৃত্ব গঠনের ধারা বহমান রাখার বিকল্প উপায়।

ভবিষ্যতের জন্য যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশে প্রতিষ্ঠিত হবে একটি পলিটিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (প্রতীকী নাম) এবং এ ধরণের একটি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন ও প্রতিষ্ঠাই হবে এ দেশে প্রতিষ্ঠিত সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয়। কেননা দেশে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চাহিদার তুলনায় জোগান অনেক বেশি। আজকের চাকরির বাজার বিবেচনা করলে এ বিষয়টি প্রতীয়মান ও প্রমাণিত হয়।

যাই হোক, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হবেন দেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতি যার সরাসরি তত্ত্বাবধান ও দিক-নির্দেশনায় প্রতিষ্ঠানটি পাবে সঠিক অভিভাবক এবং সামনে এগিয়ে যাবার পাথেয়। অন্যদিকে ভাইস চ্যান্সেলর হবেন প্রখ্যাত কোন রাজনীতিবিদ যিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য সর্বোচ্চ মেধা ও শ্রম দিয়ে লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।

পলিটিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রাষ্ট্রের রাজনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় বিভিন্ন অনুষদ খোলা হবে। প্রতিটি স্বতন্ত্র অনুষদে প্রয়োজন মাফিক বিভাগ খোলা হবে। প্রতিটি বিভাগের কারিকুলাম প্রণয়নে প্রথিতযশা শিক্ষাবিদের পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে কর্মরত রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মচারী যুক্ত থাকবে। এক একটি বিভাগ বিশেষ ক্ষেত্রে যোগ্য বিশেষজ্ঞ তৈরি করবে যেন স্ব স্ব মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন বিভাগ যথাযোগ্য নেতৃত্বের হাত ধরে চতুর্থ-পঞ্চম ও তৎপরবর্তী সবাই প্রজন্মের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে পারে অসীমের গন্তব্যে।

রাজনৈতিক জ্ঞানসমৃদ্ধ মেধাবী ব্যক্তি হবেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ ও রাজনীতির জ্ঞানসমৃদ্ধ অধ্যাপকদের সমন্বয়ে বোর্ড গঠন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, প্রাসঙ্গিক প্রকাশনা, নৈতিকতা, রাজনৈতিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা, শিক্ষাদানে সক্ষমতা, মৌখিক পরীক্ষার যোগ্যতা আমলে এনে মোট ১০০ নম্বরের সারণি তৈরি করা হবে। সারণি অনুযায়ী সর্বোচ্চ প্রাপ্ত নম্বরধারী হবেন চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত শিক্ষক।

অবসরপ্রাপ্ত রাজনীতিবিদদের মধ্য থেকে অধ্যাপক নিয়োগ দেয়া হবে। বিদেশি স্বনামধন্য রাজনীতিবিদ হবেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর। ছাত্রছাত্রী ভর্তির ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের পাশাপাশি গুরুত্ব পাবে তাদের নেতৃত্বদানের গুণাবলি, নৈতিক চরিত্র, রাষ্ট্রনায়ক হওয়ার বাসনা ও অন্যান্য দিক; যা একজন রাজনীতিবিদের প্রাথমিক গুণ বলে বিবেচিত। প্রাতিষ্ঠানিক বলয়ে থেকে ছাত্র-শিক্ষক নির্দিষ্ট দলের হয়ে কাজ করতে পারবে তবে সেখানে সহাবস্থান যেমন থাকবে তেমনি থাকবে ভিন্ন মতের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি।

শিক্ষানবিশ থাকাকালীন প্রত্যেক ছাত্রছাত্রী মুক্তবুদ্ধির চর্চা করে নিজেকে রাজনীতিবিদ হওয়ার পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সঠিক নেতৃত্ব গঠন, গঠনমূলক আলোচনা-সমালোচনা করার যোগ্যতা, দেশপ্রেম, নৈতিক মূল্যবোধ, মনুষ্যত্ববোধ, সময়ানুবর্তিতা, সততা শিক্ষা দেয়া হবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান ব্রত। বাস্তবমুখী শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা এই শিক্ষার্থীদের সুযোগ্য রাজনীতিবিদ হওয়ার পথে প্রধান নিয়ামক হতে পারে। ডিগ্রি সমাপ্ত করে শিক্ষার্থীরা রাজনীতির মাঠে নিজ যোগ্যতা ও দক্ষতার পরিচয় দেবে।

পলিটিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ বিশ্বে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এক নতুন দ্বার উন্মোচন করবে। এ বিশ্ববিদ্যালয়টি বিশ্বের মধ্যে একটি রোল মডেল হিসেবে কাজ করবে। বিশ্ববিদ্যালয়টির সাফল্যে অন্যান্য দেশেও এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় চালু হবে। নতুন নতুন গবেষণার দ্বার উন্মোচন হবে। সৃজনশীল রাজনীতির নতুন ধারা চালু হবে। পলিটিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা রাজনীতির বিভিন্ন শাখায় তাদের প্রতিভার উজ্বল দৃষ্টান্ত রাখবে। দেশকে তুলে আনবে এক অনন্য উচ্চতায়। দেশের মানুষ গর্ব করবে তাদের কর্মে, ভালোবাসবে মন থেকে, মনে রাখবে যুগ-যুগান্তরে।

[লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর]

অতীত থেকে মুক্তি এবং ইতিবাচক জীবনযাপন

মুক্তি সংগ্রামে তিনটি ধারা

বাসযোগ্যতার সূচকে ঢাকা কেন পিছিয়ে

শুধু নিচেই নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর

উপেক্ষিত আটকে পড়া পাকিস্তানিরা

রম্যগদ্য : সিন্দাবাদের বুড়ো ও আমরা

নেই কেনো সেই পাখি

বায়ুদূষণ থেকে মুক্তি কোন পথে

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র : রাষ্ট্র সংস্কারের দুর্গম পথ

পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র

বিজয়ের প্রেরণা

মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার পুনর্বীক্ষণ

সিদরাত জেবিনের মৃত্যু অথবা প্রশ্নহীন বায়ুদূষণ

বিজয়ের গৌরব ও সম্ভাবনাময় তরুণ সমাজ

ছবি

মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি বন্ধুদের অবদান

ছবি

বিজয় সংগ্রামের সূচনার সন্ধানে

মানসম্মত কনটেন্ট ও টিআরপির দ্বৈরথ

জিকা ভাইরাস রোধে প্রয়োজন সচেতনতা

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক

স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার গুরুত্ব

ঢাকার বাতাস বিষাক্ত কেন

চরের কৃষি ও কৃষকের জীবন

নিম্ন আয়ের মানুষ ভালো নাই

সবার আগে নিজেকে পরিবর্তন করা দরকার

পুলিশ কবে পুলিশ হবে

জীবন ফিরে আসুক বাংলার নদীগুলোতে

কান্দন সরেন হত্যা ও ভূমি বিরোধ কি এড়ানো যেত না

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র: রাষ্ট্র বিনির্মাণে সমস্যা কোথায়?

মানবাধিকার দিবস : মানুষের অধিকার নিয়ে কেন এত কথা?

আমলাতান্ত্রিক স্বচ্ছতা : সংস্কারের পথে নাকি পুনরাবৃত্তি?

খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কিছু কথা

ছবি

বেগম রোকেয়া : নারী জাগরণের অগ্রদূত

দুর্নীতির সর্বগ্রাসী বিস্তার বন্ধ করতে হবে

মা তোর বদনখানি মলিন হলে

ব্যবসায়ী নেতৃত্বশূন্য ই-ক্যাব

মূল্যস্ফীতির হিসাব নির্ণয়ে নতুন পদ্ধতির প্রাসঙ্গিকতা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি

সামসুল আলম

মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি থাকা কতটা জরুরি? উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি চর্চায় আমরা কি সঠিক পথে আছি? বর্তমান সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে প্রশ্নগুলো অমূলক নয়। উচ্চশিক্ষা ও রাজনীতি একটি রাষ্ট্র বিনির্মাণ, এর সুষ্ঠু পরিচালনা এবং তার বিকাশ ও উন্নয়নের দুইটি প্রধান হাতিয়ার। একই সঙ্গে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-রাজনীতি একে অন্যের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। মূলত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম এক প্রকার ছাত্র তথা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতিরই ফসল। তেমনিভাবে এ উপমহাদেশে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নানান সময়ের নানা প্রেক্ষাপটে প্রভূত কল্যাণকর ও জনতুষ্টি জাগানিয়া সাফল্য অর্জনে সমর্থ হয়েছে।

কিন্তু সময়ের বিবর্তনে প্রেক্ষাপটের যে পরিবর্তন হয় তার সাথে রাজনীতির ধরনে ও রীতি-নীতিতেও পরিবর্তন আনা জরুরি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতির তথ্যানুসন্ধান করে বলা যায়, আজকের ছাত্র রাজনীতি অতীতের সব ঐতিহ্য, অহংকার ও অর্জনের প্রায় সব মঙ্গল দিকগুলোকে জলাঞ্জলি দিয়েছে অনেক আগেই। সমাজে লোক দেখানো হাতেগোনা কয়েকটি ভালো কাজের উদাহরণ ছাড়া আজকের ছাত্র রাজনীতি মানুষকে উল্লেখযোগ্য কিছু দিতে পারছে না।

স্বাধীনতাপূর্ব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র রাজনীতি আজ আর তার স্বমহিমায় বহমান নেই। এর মধ্যে ঢুকে পড়েছে অপরাজনীতি যার ফলশ্রুতিতে ছাত্র নেতাদের মাধ্যমে সমাজে ঘটে যাচ্ছে অভূতপূর্ব অনৈতিক, অসামাজিক ও বেআইনি কার্যকলাপ। তাই আজ পত্র-পত্রিকা ও অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমে আমরা জানতে পারছি ছাত্র-অপরাজনীতির লোমহর্ষক ঘটনা। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ, হত্যা, রাহাজানির মতো ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্ম দিচ্ছে বর্তমানে রাজনীতি করা ছাত্ররা। এরা যেন ভুলতে বসেছে রাজনীতির মূলমন্ত্র। আদর্শের ফুলঝুরি মুখে আওড়িয়েই যেন এরা খান্ত হচ্ছে, বাস্তবে এর প্রভাব প্রতিফলিত হচ্ছে না। ফলে ছাত্র রাজনীতি অনেকের কাছেই আতঙ্কের আরেক নামে পরিণত হয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ বলা চলে, কোটা ও বৈষম্যবিরোধী শান্তিপূর্ণভাবে চলা ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র রাজনীতি করা ছাত্রদের বাধা ও আক্রমণের শিকার হয়, অথচ এই ছাত্রদের রাজনীতির মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত ছিলো সাধারণ শিক্ষার্থীর যৌক্তিক দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে তাদের পাশে থাকা।

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরলে একটা পর্যায়ে ছাত্র রাজনীতি যে তার চিরাচরিত রুপে ফিরবে না তার নিশ্চয়তা নেই। যদি তাই হয় তাহলে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বৈষম্য নিরসন ও অন্যায়ের অবসান সুদূরপ্রসারি চিন্তা ছাড়া ভিন্ন কিছু নয়। পুনরায় শিক্ষার্থীরা র‌্যাগিঙ্গের শিকার হওয়া, আবাসিক হলগুলোতে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা রাজনীতি করা ছাত্রদের দ্বারা নির্যাতিত হওয়ার ভয়ে আতঙ্কে থাকা, পড়াশোনার ঊর্ধ্বে রাজনীতিকে প্রাধান্য দেয়া, ইভটিজিংয়ের আতঙ্কে থাকা, শিক্ষকদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন না করা, রাজনৈতিক পরিচয়ে অতিরিক্ত সুবিধা আদায়সহ নানাবিধ সমস্যা পূর্বের ন্যায় চলমান থাকবে তা বলাই যায়।

আমি স্বপ্ন দেখি দেশের বর্তমান উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো রাজনীতি ও এর বলয় থেকে একদিন সম্পূর্ণরূপে মুক্ত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চ্যান্সেলর ও ভাইস-চ্যান্সেলর হবে একাডেমিয়াতে অসামান্য ভূমিকা পালনকারী দেশি বা বিদেশি কোন শিক্ষক যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে প্রতিষ্ঠানগুলো স্বমহিমায় ভাস্বর হবে। শিক্ষকেরা জ্ঞান সৃষ্টি ও তা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিতরণের কাজে ব্যস্ত থাকবে। সৃজনশীল কর্ম আর নৈতিক মূল্যবোধে তাড়িত হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে সদা নিবেদিত থাকবে। কিউএস, টাইমস হায়ার এডুকেশনের মতো বিশ্বের নামিদামি প্রতিষ্ঠানের র‌্যাংকিংয়ে স্থান পাবে এ দেশের প্রতিটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্বমহিমায় উদ্ভাসিত থাকবে এসব প্রতিষ্ঠান। মেধা পাচার রোধ হবে সম্পূর্ণরূপে। দেশের যেকোন ক্লান্তিকালে রাষ্ট্র পরিচালনায় জড়িত কর্তাব্যক্তিদের সদপুদেশ ও পরামর্শের নির্ভরযোগ্য সমাধান হবে এ দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুযোগ্য শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রীরা। প্রতি বছর যেসব গ্র্যাজুয়েট বের হবেন তারা প্রত্যেকে হবে এক একটি জীবন্ত রাষ্ট্রীয় সম্পদ।

অন্যদিকে শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় শিক্ষক রাজনীতি ছাত্র অপরাজনীতির মুদ্রার অপরপিঠ হিসেবে বিবেচিত হতে চলেছে। শিক্ষকতার মতো এই মহান পেশায় নিরপেক্ষতার ব্রত আজ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা যেন ভুলতে বসেছে। দেশের তিন শ্রেণীর উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আন্তর্জাতিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে এ প্রবণতা নেই বা দেখা যায় না বললেই চলে। তবে স্বায়ত্তশাসিত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকেরা বিভিন্ন নামে (সাদা, নীল, হলুদ প্রভৃতি) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে কোন একটি রাজনৈতিক দলের রাজনীতি করে যাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রের সরকারি চাকরিজীবীদের কোনপ্রকার রাজনীতিতে জড়ানোর ব্যাপারে রয়েছে সরকারি নিষেধাজ্ঞা। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনেও এ বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে স্পষ্টভাবে।

মোটা অঙ্কে বলতে গেলে আমাদের শিক্ষক রাজনীতি শিক্ষক নিয়োগে নগ্ন হস্তক্ষেপ আর সাধারণ শিক্ষকদের পদোন্নতিসহ ন্যায্য অধিকার আদায়ের বিষয়গুলোকে জিম্মি করে উচ্চশিক্ষার মান হ্রাস করা ছাড়া তেমন কোন ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারছে না। ফলে সরকারি খাতের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ও এতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের যোগ্য শিক্ষক পাওয়া থেকে বঞ্ছিত করা হচ্ছে যুগের পর যুগ ধরে। এছাড়া রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় নিয়োগপ্রাপ্ত কিছু শিক্ষকদের শ্রেণীকক্ষে ক্লাস ফাঁকি, কম পড়িয়ে সেমিস্টার পার করিয়ে দেয়া, পক্ষপাতমূলক মূল্যায়ন, দলীয় বিবেচনায় অথবা আদর্শগত বা স্বজাতি বিবেচনায় ১ম, ২য়, ৩য় স্থান অধিকার করানোয় ভূমিকা, অপ্রিয় ছাত্রছাত্রীদের অনৈতিকভাবে অকৃতকার্য করিয়ে দেয়ার মতো অশিক্ষকসুলভ আচরণ পরিলক্ষিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।

সবদিক বিবেচনায়, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি বন্ধই হতে পারে উচ্চ শিক্ষালয়ের সবাই শিক্ষার্থী ও মেধাবী শিক্ষকবান্ধব আদর্শ বিদ্যাপীঠ। এর মধ্য দিয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মানসম্মত শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন করতে সমর্থ হবে। একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রাজনৈতিক যেসবাই কালিমার লেপন দ্বারা কলুষিত তার থেকে পাবে চিরমুক্তি। তাই উচ্চমহলে বোদ্ধাদের এ বিষয়ে ভাবার এখনই সঠিক ও উত্তম সময়।

আপাতদৃষ্টে এই লেখাকে রাজনীতি বিদ্বেষী মনে হলেও আদতে তা সত্য নয়। শুরুতেই উল্লেখ করেছি, উন্নত জাতি গঠন ও রাষ্ট্র পরিচালনায় যোগ্য নেতৃত্ব দরকার যা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত ছাত্র সমাজ থেকে উঠে আসা বাঞ্ছনীয়। যেহেতু উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি এখন আর ইতিবাচক ধারায় নেই; তাছাড়া এই রীতি হাতে গোনা দুই-একটি দেশ ব্যতীত পৃথিবীর অন্য কোন সভ্য দেশে দেখা মেলা দুরহ, তাই বর্তমান ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে আমার অবস্থান। এখন প্রশ্ন এসে যায়, যদি এমন হয় যে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো, তাহলে দেশে রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে উঠবে কিভাবে? রাজনৈতিক বিশ্ববিদ্যালয় কী হতে পারে এর বিকল্প সমাধান? হ্যাঁ একটি রাজনৈতিক বিশ্ববিদ্যালয় হতে পারে এ বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেশে রাজনৈতিক নেতৃত্ব গঠনের ধারা বহমান রাখার বিকল্প উপায়।

ভবিষ্যতের জন্য যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশে প্রতিষ্ঠিত হবে একটি পলিটিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (প্রতীকী নাম) এবং এ ধরণের একটি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন ও প্রতিষ্ঠাই হবে এ দেশে প্রতিষ্ঠিত সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয়। কেননা দেশে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চাহিদার তুলনায় জোগান অনেক বেশি। আজকের চাকরির বাজার বিবেচনা করলে এ বিষয়টি প্রতীয়মান ও প্রমাণিত হয়।

যাই হোক, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হবেন দেশের বর্তমান রাষ্ট্রপতি যার সরাসরি তত্ত্বাবধান ও দিক-নির্দেশনায় প্রতিষ্ঠানটি পাবে সঠিক অভিভাবক এবং সামনে এগিয়ে যাবার পাথেয়। অন্যদিকে ভাইস চ্যান্সেলর হবেন প্রখ্যাত কোন রাজনীতিবিদ যিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য সর্বোচ্চ মেধা ও শ্রম দিয়ে লক্ষ্য অর্জনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন।

পলিটিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে রাষ্ট্রের রাজনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় বিভিন্ন অনুষদ খোলা হবে। প্রতিটি স্বতন্ত্র অনুষদে প্রয়োজন মাফিক বিভাগ খোলা হবে। প্রতিটি বিভাগের কারিকুলাম প্রণয়নে প্রথিতযশা শিক্ষাবিদের পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে কর্মরত রাজনীতিবিদ ও সরকারি কর্মচারী যুক্ত থাকবে। এক একটি বিভাগ বিশেষ ক্ষেত্রে যোগ্য বিশেষজ্ঞ তৈরি করবে যেন স্ব স্ব মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন বিভাগ যথাযোগ্য নেতৃত্বের হাত ধরে চতুর্থ-পঞ্চম ও তৎপরবর্তী সবাই প্রজন্মের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে পারে অসীমের গন্তব্যে।

রাজনৈতিক জ্ঞানসমৃদ্ধ মেধাবী ব্যক্তি হবেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ ও রাজনীতির জ্ঞানসমৃদ্ধ অধ্যাপকদের সমন্বয়ে বোর্ড গঠন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, প্রাসঙ্গিক প্রকাশনা, নৈতিকতা, রাজনৈতিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা, শিক্ষাদানে সক্ষমতা, মৌখিক পরীক্ষার যোগ্যতা আমলে এনে মোট ১০০ নম্বরের সারণি তৈরি করা হবে। সারণি অনুযায়ী সর্বোচ্চ প্রাপ্ত নম্বরধারী হবেন চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত শিক্ষক।

অবসরপ্রাপ্ত রাজনীতিবিদদের মধ্য থেকে অধ্যাপক নিয়োগ দেয়া হবে। বিদেশি স্বনামধন্য রাজনীতিবিদ হবেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং প্রফেসর। ছাত্রছাত্রী ভর্তির ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের পাশাপাশি গুরুত্ব পাবে তাদের নেতৃত্বদানের গুণাবলি, নৈতিক চরিত্র, রাষ্ট্রনায়ক হওয়ার বাসনা ও অন্যান্য দিক; যা একজন রাজনীতিবিদের প্রাথমিক গুণ বলে বিবেচিত। প্রাতিষ্ঠানিক বলয়ে থেকে ছাত্র-শিক্ষক নির্দিষ্ট দলের হয়ে কাজ করতে পারবে তবে সেখানে সহাবস্থান যেমন থাকবে তেমনি থাকবে ভিন্ন মতের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি।

শিক্ষানবিশ থাকাকালীন প্রত্যেক ছাত্রছাত্রী মুক্তবুদ্ধির চর্চা করে নিজেকে রাজনীতিবিদ হওয়ার পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সঠিক নেতৃত্ব গঠন, গঠনমূলক আলোচনা-সমালোচনা করার যোগ্যতা, দেশপ্রেম, নৈতিক মূল্যবোধ, মনুষ্যত্ববোধ, সময়ানুবর্তিতা, সততা শিক্ষা দেয়া হবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান ব্রত। বাস্তবমুখী শিক্ষা ও অভিজ্ঞতা এই শিক্ষার্থীদের সুযোগ্য রাজনীতিবিদ হওয়ার পথে প্রধান নিয়ামক হতে পারে। ডিগ্রি সমাপ্ত করে শিক্ষার্থীরা রাজনীতির মাঠে নিজ যোগ্যতা ও দক্ষতার পরিচয় দেবে।

পলিটিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ বিশ্বে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এক নতুন দ্বার উন্মোচন করবে। এ বিশ্ববিদ্যালয়টি বিশ্বের মধ্যে একটি রোল মডেল হিসেবে কাজ করবে। বিশ্ববিদ্যালয়টির সাফল্যে অন্যান্য দেশেও এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় চালু হবে। নতুন নতুন গবেষণার দ্বার উন্মোচন হবে। সৃজনশীল রাজনীতির নতুন ধারা চালু হবে। পলিটিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা রাজনীতির বিভিন্ন শাখায় তাদের প্রতিভার উজ্বল দৃষ্টান্ত রাখবে। দেশকে তুলে আনবে এক অনন্য উচ্চতায়। দেশের মানুষ গর্ব করবে তাদের কর্মে, ভালোবাসবে মন থেকে, মনে রাখবে যুগ-যুগান্তরে।

[লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর]

back to top