alt

opinion » post-editorial

উচ্চ ফলনশীল বারি মসুর-৮

এম মনির উদ্দিন

: শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

(শেষাংশ)

বারি মসুর-৮ অনেকটাই স্টেমফাইলিয়াম ব্লাইট রোগ প্রতিরোধী একটি জাত। ফলে এই জাতটিতে সাধারণত মসুর ডালের ফুল ফোঁটার সময় ব্লাইট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে অন্যান্য জাতের বেলায় সঠিক ছত্রাকনাশক ব্যবহার করলে এই রোগটি সহজেই প্রতিরোধ করা যায়। বারি মসুর-৮ এর ফলন বাড়ানোর জন্য এবং কৃষকের জন্য ডাল চাষ লাভজনক করার জন্য ইনোকুলাম ব্যবহার করার উপর জোর দেয়া হয়।

মসুর ডাল চাষের আওতায় যেহেতু চাষের এলাকা দিন দিন কমে যাচ্ছে সেহেতু মসুর ডালের উচ্চ ফলনশীল জাতের প্রবর্তনের মাধ্যমে মোট উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আর এজন্য বারি মসুর-৮ বর্তমানে দেশের একমাত্র মেগা ভ্যারাইটি যার ফলন সর্বোচ্চ। কাজেই বারি মসুর-৮ এর চাষ সম্প্রসারণ করার প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

বারি মসুর-৮ এ নাইট্রোজেন ফিক্সেশন নাইট্রোজেন ফিক্সেশন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে লিগিউম শস্য এবং নির্দিষ্ট রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়া একসাথে কাজ করে গাছের জন্য শিকড়ের চারপাশের মাটির বাতাস থেকে নাইট্রোজেন তৈরি করে। ফসলের বীজ অংকুরিত হওয়ার পরপরই রাইজোবিয়া মুলের লোম বা চুলে প্রবেশ করে। এভাবে রাইজোবিয়া গাছের শিকড়ের মধ্যে দ্রুত সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং উদ্ভিদ নোডিউল নামক বিশেষ কাঠামো তৈরি করে প্রতিক্রিয়া জানায়, যেখানে রাইজোবিয়া থাকে। মুলের সংক্রমন এবং নোডিউল গঠনের প্রক্রিয়াটিকে নোডুলেশন বলা হয়। মসুর বীজের অংকুরোদগমের তিন থেকে চার সপ্তাহ সময় লাগতে পারে গাছের শিকড়ে নোডুলেশন স্পষ্ট হওয়ার জন্য।

মাটির ছোট ছিদ্রে থাকা বাতাসে গ্যাসীয় আকারে প্রায় ৮০ শতাংশ নাইট্রোজেন থাকে এবং এই নাইট্রোজেন গাছের জন্য গ্রহনযোগ্য নয়। যাই হোক, মূল নোডিউলের রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়া অক্সিজেনের সাথে আবদ্ধ হয়ে নাইট্রেট গঠন করে নাইট্রোজেন গ্যাসের এই রুপটিকে ঠিক করতে পারে, যা গাছের ব্যবহারের জন্য গ্রহণযোগ্য।

বারি মসুর-৮ চাষে ইনোকুলেশন ব্যবহার রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়া ধারনকারী পণ্যগুলোকে ইনোকুল্যান্ট বলা হয়। ইনোকুলেশন হচ্ছে সফল নোডুলেশন নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট পরিমানে মাটিতে উপযুক্ত রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়া প্রবর্তন করার প্রক্রিয়া। কমার্শিয়াল ইনোকুল্যান্ট যখন সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয় তখন প্রতিটি গাছ পর্যাপ্তসংখ্যক রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে আসে এবং নোডুলেশন শুরু হয়ে নাইট্রোজেন ফিক্সেশন প্রক্রিয়া শুরু করে। রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়া মাটিতে খুব বেশি গতিশীল নয় এবং এইভাবে শিকড়ের লোমগুলোর সংক্রমন ঘটার জন্য ইনোকুল্যান্টকে বিকাশমান চারার সংস্পর্শে আসতে হয়। নির্দিষ্ট ডাল ফসলের জন্য নির্দিষ্ট রাইজোবিয়াম প্রজাতির দরকার হয়। যেমন মসুর ডাল ফসলে নোডুলেশন করতে সক্ষম একটি রাইজোবিয়াম প্রজাতি ছোলাতে নোডুলেশন করতে সক্ষম নয়। নাইট্রোজেন ফিক্সেশন প্রক্রিয়াকে অনুকূল করার জন্য মাটিতে সাধারনত পর্যাপ্ত সংখ্যক সঠিক রাইজোবিয়াম থাকে না।

নাইট্রোজেন ফিক্সেশন শুরু না হওয়া পর্যন্ত ডাল ফসলের চারা মাটির উপরের ১৫-৩০ সেমি. স্তর থেকে নাইট্রোজেন ব্যবহার করে। এই গভীরতার নিচে থেকে ছোট চারা নাইট্রোজেন গ্রহণ করতে পারে না। নাইট্রোজেন ফিক্সেশন ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে তিন থেকে চার সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। এ সময়ের জন্য ডাল ফসলের উচ্চ ফলন নিশ্চিত করার জন্য হেক্টরপ্রতি ৩৫-৪০ কেজি ইউরিয়া সার ব্যবহার করে যেতে পারে।

বিশেষ করে, যে মাটিতে নাইট্রোজেনের মাত্রা ১১ কেজি-হেক্টরের কম থাকে, সেখানে গাছের প্রাথমিক বৃদ্ধি ধীর হতে পারে এবং গাছের চারা হলুদ হয়ে যেতে পারে যার কারনে বীজ বপনের সময় কম মাত্রায় ইউরিয়া দরকার হয়।

গাছের বিকাশ, নোডিউল গঠন এবং নাইট্রোজেন ফিক্স করার জন্য ডাল ফসলে অবশ্যই ফসফরাস থাকতে হবে। সেজন্য মসুর ডালের উচ্চ ফলনের জন্য জমিতে ফসফেট সার দেয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে জমিতে ডিএপি সার ব্যবহার করলে আলাদা করে ইউরিয়া সার দেয়ার দরকার নেই। কারণ ডিএপি সারে ফসফরাস ও নাইট্রোজেন দুটোই থাকে। রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ফিক্স করা নাইট্রোজেনের প্রায় সবটুকুই সরাসরি গাছে চলে যায়। তবে কিছু নাইট্রোজেন পরবর্তী নন-লিগিউম ফসলের জন্য মাটিতে লিক বা হস্তান্তর হতে পারে (ওয়ালি এট অল, ১৯৯৬) এবং এর পরিমাণ ১৩.৬১-২২.৬৮ কেজি নাইট্রোজেন-হেক্টর। ইনোকুলেটেড মসুর ডাল গাছ জমিতে হেক্টরে প্রায় ১৫৬ কেজি নাইট্রোজেন (৩৪০ কেজি ইউরিয়া সার) ফিক্সেশন করতে পারে। যার ফলে মসুর ডালের ফলন প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে যায় এবং অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ করতে হয় না।

যেহেতু দেশে মসুর ডালের চাষ কমছে এবং এর কারণে আমাদের বছরে প্রায় ৫-৬ লাখ টন মসুর ডাল আমদানি করতে হচ্ছে। বর্তমানে দেশে মসুর ডালের উৎপাদন প্রায় ২ লাখ টন। আগামী দিনে দেশে মসুর ডালের চাহিদা আরো বেড়ে যাবে এবং মসুর ডাল যেহেতু একটি উদ্ভিজ্জ্য প্রোটিনের একটি অন্যতম উৎস। তাই মসুর ডালকে আমরা গরিবের আমিষও বলে থাকি এবং কৃষক পরিবারগুলোতে মসুর ডালের গ্রহণ বাড়ানোর জন্য এর চাষ বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (গেইন) বাংলাদেশ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট এবং বিএডিসি যৌথভাবে বারি মসুর-৮ এর সম্প্রসারণে ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করছে। তাই আশা করা যায়, জিংক ও আয়রণসমৃদ্ধ বায়োফর্টিফাইড বারি মসুর-৮ এর সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশের গ্রামাঞ্চলের মানুষের জিংক ও আয়রণের ঘাটতি মোকাবেলায় সহায়ক হবে।

[লেখক : এগ্রোনমিস্ট অ্যান্ড কনসালট্যান্ট, গেইন বাংলাদেশ]

জিতিয়া উৎসব

ছবি

অলির পর নেপাল কোন পথে?

রম্যগদ্য: “মরেও বাঁচবি নারে পাগলা...”

অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শ্রীপুর পৌরসভা

ভূরিভোজ, উচ্ছেদ এবং আদিবাসী পাহাড়িয়া

অনলাইন সংস্কৃতিতে হাস্যরসের সমাজবিজ্ঞান

মামলাজট নিরসনে দেওয়ানি কার্যবিধির সংস্কার

বাস্তব মস্কো বনাম বিভ্রান্ত ইউরোপ

ছাত্রসংসদ নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ ছাত্ররাজনীতির গতিপ্রকৃতি

সড়ক দুর্ঘটনা: কারও মৃত্যু সাধারণ, কারও মৃত্যু বিশেষ

ঐকমত্য ছাড়াও কিছু সংস্কার সম্ভব

আবার বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম : সংকটে সাধারণ মানুষ

ডায়াবেটিস রোগীর সেবা ও জনসচেতনতা

ভিন্ন ধরনের ডাকসু নির্বাচন

ডাকসু নির্বাচন : পেছনে ফেলে আসি

প্রসঙ্গ : এলডিসি তালিকা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ

“কোপা চাটিগাঁ...”

ই-কমার্স হতে পারে প্রবৃদ্ধির ইঞ্জিন

ভারত-চীনের নতুন সমীকরণ

সাইবার যুগে মানুষের মর্যাদা ও নিরাপত্তা

ছবি

ভারত-চীন সম্পর্কে কৌশলগত উষ্ণতার সূচনা

ভারত-চীন সম্পর্কে কৌশলগত উষ্ণতার সূচনা

একজন নাগরিকের অভিমানী বিদায় ও রাষ্ট্রের নৈতিক সংকট

নিষিদ্ধ জালের অভিশাপে হুমকির মুখে সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য

আধিপত্যবাদের শৃঙ্খল এবং পুঁজির লুন্ঠন যাদের রক্তাক্ত করে, তাদের চাই একজোটে

জার্মানি : কৃচ্ছসাধনের বোঝা জনগণের কাঁধে

পাট চাষের সংকট ও সম্ভাবনা

সামাজিক-প্রযুক্তিগত কল্পনা: বাংলাদেশের উন্নয়ন চিন্তার নতুন দিগন্ত

অগ্রক্রয় মোকদ্দমায় উভয় পক্ষের আইনি ডিফেন্স

পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম

এক সাংবাদিকের খোলা চিঠি

বাংলাদেশের দারিদ্র্য বৃদ্ধি ও অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ

ক্লাউডবার্স্ট: মৃত্যুর বার্তা নিয়ে, আকাশ যখন কান্নায় ভেঙে পড়ে

রম্যগদ্য:“কবি এখন জেলে...”

কারা কর্তৃপক্ষের সীমাবদ্ধতা ও ‘কারেকশন সার্ভিস’-এর বাস্তবতা

ছবি

বাংলাদেশের শহর পরিকল্পনার চ্যালেঞ্জ ও করণীয়

tab

opinion » post-editorial

উচ্চ ফলনশীল বারি মসুর-৮

এম মনির উদ্দিন

শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

(শেষাংশ)

বারি মসুর-৮ অনেকটাই স্টেমফাইলিয়াম ব্লাইট রোগ প্রতিরোধী একটি জাত। ফলে এই জাতটিতে সাধারণত মসুর ডালের ফুল ফোঁটার সময় ব্লাইট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে অন্যান্য জাতের বেলায় সঠিক ছত্রাকনাশক ব্যবহার করলে এই রোগটি সহজেই প্রতিরোধ করা যায়। বারি মসুর-৮ এর ফলন বাড়ানোর জন্য এবং কৃষকের জন্য ডাল চাষ লাভজনক করার জন্য ইনোকুলাম ব্যবহার করার উপর জোর দেয়া হয়।

মসুর ডাল চাষের আওতায় যেহেতু চাষের এলাকা দিন দিন কমে যাচ্ছে সেহেতু মসুর ডালের উচ্চ ফলনশীল জাতের প্রবর্তনের মাধ্যমে মোট উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আর এজন্য বারি মসুর-৮ বর্তমানে দেশের একমাত্র মেগা ভ্যারাইটি যার ফলন সর্বোচ্চ। কাজেই বারি মসুর-৮ এর চাষ সম্প্রসারণ করার প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

বারি মসুর-৮ এ নাইট্রোজেন ফিক্সেশন নাইট্রোজেন ফিক্সেশন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে লিগিউম শস্য এবং নির্দিষ্ট রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়া একসাথে কাজ করে গাছের জন্য শিকড়ের চারপাশের মাটির বাতাস থেকে নাইট্রোজেন তৈরি করে। ফসলের বীজ অংকুরিত হওয়ার পরপরই রাইজোবিয়া মুলের লোম বা চুলে প্রবেশ করে। এভাবে রাইজোবিয়া গাছের শিকড়ের মধ্যে দ্রুত সংখ্যা বৃদ্ধি করে এবং উদ্ভিদ নোডিউল নামক বিশেষ কাঠামো তৈরি করে প্রতিক্রিয়া জানায়, যেখানে রাইজোবিয়া থাকে। মুলের সংক্রমন এবং নোডিউল গঠনের প্রক্রিয়াটিকে নোডুলেশন বলা হয়। মসুর বীজের অংকুরোদগমের তিন থেকে চার সপ্তাহ সময় লাগতে পারে গাছের শিকড়ে নোডুলেশন স্পষ্ট হওয়ার জন্য।

মাটির ছোট ছিদ্রে থাকা বাতাসে গ্যাসীয় আকারে প্রায় ৮০ শতাংশ নাইট্রোজেন থাকে এবং এই নাইট্রোজেন গাছের জন্য গ্রহনযোগ্য নয়। যাই হোক, মূল নোডিউলের রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়া অক্সিজেনের সাথে আবদ্ধ হয়ে নাইট্রেট গঠন করে নাইট্রোজেন গ্যাসের এই রুপটিকে ঠিক করতে পারে, যা গাছের ব্যবহারের জন্য গ্রহণযোগ্য।

বারি মসুর-৮ চাষে ইনোকুলেশন ব্যবহার রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়া ধারনকারী পণ্যগুলোকে ইনোকুল্যান্ট বলা হয়। ইনোকুলেশন হচ্ছে সফল নোডুলেশন নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট পরিমানে মাটিতে উপযুক্ত রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়া প্রবর্তন করার প্রক্রিয়া। কমার্শিয়াল ইনোকুল্যান্ট যখন সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয় তখন প্রতিটি গাছ পর্যাপ্তসংখ্যক রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে আসে এবং নোডুলেশন শুরু হয়ে নাইট্রোজেন ফিক্সেশন প্রক্রিয়া শুরু করে। রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়া মাটিতে খুব বেশি গতিশীল নয় এবং এইভাবে শিকড়ের লোমগুলোর সংক্রমন ঘটার জন্য ইনোকুল্যান্টকে বিকাশমান চারার সংস্পর্শে আসতে হয়। নির্দিষ্ট ডাল ফসলের জন্য নির্দিষ্ট রাইজোবিয়াম প্রজাতির দরকার হয়। যেমন মসুর ডাল ফসলে নোডুলেশন করতে সক্ষম একটি রাইজোবিয়াম প্রজাতি ছোলাতে নোডুলেশন করতে সক্ষম নয়। নাইট্রোজেন ফিক্সেশন প্রক্রিয়াকে অনুকূল করার জন্য মাটিতে সাধারনত পর্যাপ্ত সংখ্যক সঠিক রাইজোবিয়াম থাকে না।

নাইট্রোজেন ফিক্সেশন শুরু না হওয়া পর্যন্ত ডাল ফসলের চারা মাটির উপরের ১৫-৩০ সেমি. স্তর থেকে নাইট্রোজেন ব্যবহার করে। এই গভীরতার নিচে থেকে ছোট চারা নাইট্রোজেন গ্রহণ করতে পারে না। নাইট্রোজেন ফিক্সেশন ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে তিন থেকে চার সপ্তাহ সময় লাগতে পারে। এ সময়ের জন্য ডাল ফসলের উচ্চ ফলন নিশ্চিত করার জন্য হেক্টরপ্রতি ৩৫-৪০ কেজি ইউরিয়া সার ব্যবহার করে যেতে পারে।

বিশেষ করে, যে মাটিতে নাইট্রোজেনের মাত্রা ১১ কেজি-হেক্টরের কম থাকে, সেখানে গাছের প্রাথমিক বৃদ্ধি ধীর হতে পারে এবং গাছের চারা হলুদ হয়ে যেতে পারে যার কারনে বীজ বপনের সময় কম মাত্রায় ইউরিয়া দরকার হয়।

গাছের বিকাশ, নোডিউল গঠন এবং নাইট্রোজেন ফিক্স করার জন্য ডাল ফসলে অবশ্যই ফসফরাস থাকতে হবে। সেজন্য মসুর ডালের উচ্চ ফলনের জন্য জমিতে ফসফেট সার দেয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে জমিতে ডিএপি সার ব্যবহার করলে আলাদা করে ইউরিয়া সার দেয়ার দরকার নেই। কারণ ডিএপি সারে ফসফরাস ও নাইট্রোজেন দুটোই থাকে। রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ফিক্স করা নাইট্রোজেনের প্রায় সবটুকুই সরাসরি গাছে চলে যায়। তবে কিছু নাইট্রোজেন পরবর্তী নন-লিগিউম ফসলের জন্য মাটিতে লিক বা হস্তান্তর হতে পারে (ওয়ালি এট অল, ১৯৯৬) এবং এর পরিমাণ ১৩.৬১-২২.৬৮ কেজি নাইট্রোজেন-হেক্টর। ইনোকুলেটেড মসুর ডাল গাছ জমিতে হেক্টরে প্রায় ১৫৬ কেজি নাইট্রোজেন (৩৪০ কেজি ইউরিয়া সার) ফিক্সেশন করতে পারে। যার ফলে মসুর ডালের ফলন প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়ে যায় এবং অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সার প্রয়োগ করতে হয় না।

যেহেতু দেশে মসুর ডালের চাষ কমছে এবং এর কারণে আমাদের বছরে প্রায় ৫-৬ লাখ টন মসুর ডাল আমদানি করতে হচ্ছে। বর্তমানে দেশে মসুর ডালের উৎপাদন প্রায় ২ লাখ টন। আগামী দিনে দেশে মসুর ডালের চাহিদা আরো বেড়ে যাবে এবং মসুর ডাল যেহেতু একটি উদ্ভিজ্জ্য প্রোটিনের একটি অন্যতম উৎস। তাই মসুর ডালকে আমরা গরিবের আমিষও বলে থাকি এবং কৃষক পরিবারগুলোতে মসুর ডালের গ্রহণ বাড়ানোর জন্য এর চাষ বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (গেইন) বাংলাদেশ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট এবং বিএডিসি যৌথভাবে বারি মসুর-৮ এর সম্প্রসারণে ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করছে। তাই আশা করা যায়, জিংক ও আয়রণসমৃদ্ধ বায়োফর্টিফাইড বারি মসুর-৮ এর সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশের গ্রামাঞ্চলের মানুষের জিংক ও আয়রণের ঘাটতি মোকাবেলায় সহায়ক হবে।

[লেখক : এগ্রোনমিস্ট অ্যান্ড কনসালট্যান্ট, গেইন বাংলাদেশ]

back to top