alt

উপ-সম্পাদকীয়

রামু ট্র্যাজেডির এক যুগ

বিপ্লব বড়ুয়া

: সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রিয় মাতৃভূমি খুব বেশি অশান্ত হয়ে উঠেছে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, পাহাড় থেকে সমতলÑ কোথাও যেন শান্তির সুবাতাস নেই। সাম্প্রদায়িক উসকানির দাবানলে পুড়ে ছারখার হচ্ছে সম্প্রীতির বাংলাদেশ। একের পর এক হামলায় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলেছে। শান্তির প্রত্যাশায় রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে সামিল হচ্ছে সর্বত্যাগী বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরুরাও। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ঘটে যাওয়া রামুর ক্ষত এখনো বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মন থেকে মোছেনি। আজ সেই স্মরণকালের ভয়ার্ত দিন। ভয়াবহ ঘটনার এক যুগ। ১২ বছরে মামলার নিষ্পত্তির কথা বাদ, তদন্তই এগোয়নি। বিচার প্রক্রিয়ার গতি নেই। পবিত্র কোরআন অবমাননার মিথ্যা অজুহাত তুলে সেদিন রামু, এরপর উখিয়া, পটিয়া অন্তত ১৫টি বৌদ্ধ বিহার ও ৪০টিরও বেশি বৌদ্ধ জনবসতিতে হামলা, লুটপাট, আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে ইতিহাসের অনন্য গুরুত্বপূর্ণ দলিল, উপসনালয়, বিহার ও বৌদ্ধ স্থাপনা। ‘৬০০ থেকে ১১০০ শতকে নির্মিত কাঠ, পাথর, স্বর্ণ ও ধাতুর তৈরি চার শতাধিক অবিস্মরণীয় বুদ্ধ মূর্তিকে খ--বিখ- করা হয়। ঘটনার পরবর্তীতে সরকারি উদ্যোগে কেন্দ্রীয় সীমা বিহারসহ হাতেগোনা কয়েকটি বিহার সংস্কার ও পুনঃনির্মাণে বিগত শেখ হাসিনা সরকার সহযোগিতা করেছিল। সীমা বিহার সুরম্য স্থাপনায় নির্মিত হলেও সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত বৌদ্ধ শিল্পকর্মের সাজানো গোছানো বিহারের অস্তিত্ব এখন আর দেখা মেলে না। তখন এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৯টি মামলা দায়ের করা হয় কিন্তু এত বছরেও যা জানলাম তার ফলাফল শূন্য। এরই মধ্যে গত ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর দুই দিন পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে ঘটেছে ন্যাক্কারজনক ঘটনা। সেখানেও বৌদ্ধ স্থাপনা ও শতাধিক আদিবাসী সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, ব্যবসা-বাণিজ্যে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে, তিনজন আদিবাসী নাগরিককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, আহত হয়েছে প্রায় শতাধিক।

সব ধর্মে বলা আছে মানুষই সব সৃষ্টির উৎসস্থল। মানুষ না হলে পৃথিবীজুড়ে আজ এত কিছু সৃষ্টি হতো না। জ্ঞান-বিজ্ঞান উন্নত হতো না। ধর্মপ্রচারকগণ সবার ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছে মানব সমাজকে। মানুষ হিসেবে জন্মলাভ করা দুর্লভ ব্যাপার! কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় যে, একশ্রেণীর মানুষ নামের আজব প্রজাতি দেশে যেভাবে পশুপাখির মতো নিধন চালাচ্ছে তা মানব সমাজকে লজ্জিত করছে। ব্যথিত করছে। শুধু সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে মানুষ হয়ে আরেক শ্রেণীর মানুষের কাছে অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। তাদের বাড়িঘর, দোকানপাট, ব্যবসা-বাণিজ্যে হামলা হচ্ছে লুটপাট হচ্ছে, মা-বোন ধর্ষিত হচ্ছে এ কেমন বাংলাদেশ ? বিগত সময়েও ছিল, এখনো আছে, সরকার পরিবর্তন হয়েছে ঠিকই নির্যাতনের ধরন পরিবর্তন হয়নি বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেড়েছে। কোনো সময়ে এ দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী সঠিক বিচার প্রক্রিয়া দেখেনি। সে কারণে প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও সংখ্যালঘুদের ওপর অঘটনের সংবাদ শুনতে পাচ্ছি। বৌদ্ধ সভ্যতার অনন্য নিদর্শন স্থান হচ্ছে পর্যটন জেলা কক্সবাজারের রামু। সুপ্রাচীন কাল থেকে বৌদ্ধরা এতদ্বঅঞ্চলে শান্তি মৈত্রীর বাতাবরণ সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে বসবাস করে আসছে।

বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে রামুর ঘটনার পর পুরো বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা অনিশ্চিয়তার মধ্যে জীবনযাপন করেছিল। ঘটনার এক যুগ পার হলেও বিচাররের কোনো একটি খুঁটিও নড়েনি। তাই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বৌদ্ধরা কি ভিনদেশের মানুষ? কেন এই বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে টালবাহানা। বৌদ্ধ সম্প্রদায় এ দেশের ভূমিজ সন্তান। শত শত বছর ধরে পরম্পরা বাস করে আসছে। শান্তি, সম্প্রীতি, সৌহার্দের মাধ্যমে আলোকিত দেশ গড়ার প্রতিনিয়ত অবদান রেখে চলেছে সুশিক্ষিত বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী। অথচ তাদের ওপর চালানো হয় বর্বর নির্যাতন। একশ্রেণীর ধর্মান্ধ, উগ্রবাদী জনগোষ্ঠীর কারণে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ঘটনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে ভিন্ন সম্প্রদায়ের জনগণকে। অপসংস্কৃতির অন্ধ বেড়াজাল থেকে বের হতে না পারলে মানুষ হিসেবে জন্মলাভ করা শুধু অসম্মানের নয় কলঙ্কিতও বটে? দেশে সংখ্যালঘুদের জীবনমান আজ সংকটাপন্ন। কোথাও তারা নিরাপদ মনে করছে না। প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে মানুষ নামের কিছু দুর্বৃত্ত অমানুষের হাতে নির্যাতিত নিগৃহীত হচ্ছে। অথচ আমরা নিজেদের সভ্য সমাজ, ধার্মিক সমাজের অংশীজন হিসেবে দাবি করি। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ সম্প্রদায়ের ইতিহাসের অংশবিশেষ। বৌদ্ধ বিহার বা প্যাগোডা হচ্ছে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপসনালয়, ধর্ম ও জ্ঞানচর্চার প্রাণকেন্দ্র। বৌদ্ধ ইতিহাস হাজার হাজার বছরে ধরে বাঙালির ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে। ইতিহাস হচ্ছে সঠিক সত্যপথের অবিচল পথনির্দেশনা। ইতিহাস হচ্ছে, হারিয়ে যাওয়া শেকড়; যে শেকড়ের পথ ধরে বৌদ্ধরা প্রতিনিয়ত নিজেদের অস্তিত্ব খুঁজে ফিরে। বিশ^ পরিম-লে বৌদ্ধ সম্প্রদায় একটি সুশিক্ষিত, সুশৃঙ্খল, শান্তিপ্রিয় জাতি হিসেব সমাদৃত। বৌদ্ধরা বিজ্ঞানকে মনেপ্রাণে ধারণ করে বুদ্ধজ্ঞানে পরিশুদ্ধ জীবনযাপনে নিজেদের গড়ে তুলতে অবিরাম চেষ্টা চালায়। হিংসা, হানাহানি, বিদ্বেষ, মিথ্যা, ঠকবাজী কখনো বৌদ্ধরা মনন চেতনায় স্থান দেয় না।

২৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জন্য এক ভয়াল দিন। এই দিনের ক্ষত বাঙালি বৌদ্ধদের হৃদয় থেকে কখনো মুছবে না। রাজনৈতিক সরকারের পটপরিবর্তনের পরেও অনেক বৌদ্ধপল্লী ও সংখ্যলঘু জনেগোষ্ঠীর বাড়িঘর, উপাসনালয়ে হামলা হচ্ছে কিন্তু সরকার ও প্রশাসন নির্বিকার। সম্প্রীতি অটুট রাখতে সরকারে জোরালো ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে ৫ আগস্টের পর থেকে দেশে ২০১০টি সাম্প্রদায়িক হামলার বিবরণ প্রকাশ করেছে, যেদিন তারা (১৯ সেপ্টেম্বর) এই নির্যাতনের সচিত্র বর্ণনা দেশবাসীর সম্মুখে তুলে ধরছিল, সেদিনই ঘটে পার্বত্য চট্টগ্রাম খাগড়াছড়িতে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ওপর ভয়াবহ তা-ব। এদেশ সবারÑ সব জাতি ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বদেশভূমি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ লাভ করেছিল। অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে দেশে শান্তি ফিরে আসবে এ প্রত্যাশা।

[লেখক : প্রাবন্ধিক]

অতীত থেকে মুক্তি এবং ইতিবাচক জীবনযাপন

মুক্তি সংগ্রামে তিনটি ধারা

বাসযোগ্যতার সূচকে ঢাকা কেন পিছিয়ে

শুধু নিচেই নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর

উপেক্ষিত আটকে পড়া পাকিস্তানিরা

রম্যগদ্য : সিন্দাবাদের বুড়ো ও আমরা

নেই কেনো সেই পাখি

বায়ুদূষণ থেকে মুক্তি কোন পথে

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র : রাষ্ট্র সংস্কারের দুর্গম পথ

পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র

বিজয়ের প্রেরণা

মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার পুনর্বীক্ষণ

সিদরাত জেবিনের মৃত্যু অথবা প্রশ্নহীন বায়ুদূষণ

বিজয়ের গৌরব ও সম্ভাবনাময় তরুণ সমাজ

ছবি

মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি বন্ধুদের অবদান

ছবি

বিজয় সংগ্রামের সূচনার সন্ধানে

মানসম্মত কনটেন্ট ও টিআরপির দ্বৈরথ

জিকা ভাইরাস রোধে প্রয়োজন সচেতনতা

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক

স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার গুরুত্ব

ঢাকার বাতাস বিষাক্ত কেন

চরের কৃষি ও কৃষকের জীবন

নিম্ন আয়ের মানুষ ভালো নাই

সবার আগে নিজেকে পরিবর্তন করা দরকার

পুলিশ কবে পুলিশ হবে

জীবন ফিরে আসুক বাংলার নদীগুলোতে

কান্দন সরেন হত্যা ও ভূমি বিরোধ কি এড়ানো যেত না

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র: রাষ্ট্র বিনির্মাণে সমস্যা কোথায়?

মানবাধিকার দিবস : মানুষের অধিকার নিয়ে কেন এত কথা?

আমলাতান্ত্রিক স্বচ্ছতা : সংস্কারের পথে নাকি পুনরাবৃত্তি?

খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কিছু কথা

ছবি

বেগম রোকেয়া : নারী জাগরণের অগ্রদূত

দুর্নীতির সর্বগ্রাসী বিস্তার বন্ধ করতে হবে

মা তোর বদনখানি মলিন হলে

ব্যবসায়ী নেতৃত্বশূন্য ই-ক্যাব

মূল্যস্ফীতির হিসাব নির্ণয়ে নতুন পদ্ধতির প্রাসঙ্গিকতা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

রামু ট্র্যাজেডির এক যুগ

বিপ্লব বড়ুয়া

সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রিয় মাতৃভূমি খুব বেশি অশান্ত হয়ে উঠেছে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, পাহাড় থেকে সমতলÑ কোথাও যেন শান্তির সুবাতাস নেই। সাম্প্রদায়িক উসকানির দাবানলে পুড়ে ছারখার হচ্ছে সম্প্রীতির বাংলাদেশ। একের পর এক হামলায় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে ভীতসন্ত্রস্ত করে তুলেছে। শান্তির প্রত্যাশায় রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে সামিল হচ্ছে সর্বত্যাগী বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরুরাও। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ঘটে যাওয়া রামুর ক্ষত এখনো বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মন থেকে মোছেনি। আজ সেই স্মরণকালের ভয়ার্ত দিন। ভয়াবহ ঘটনার এক যুগ। ১২ বছরে মামলার নিষ্পত্তির কথা বাদ, তদন্তই এগোয়নি। বিচার প্রক্রিয়ার গতি নেই। পবিত্র কোরআন অবমাননার মিথ্যা অজুহাত তুলে সেদিন রামু, এরপর উখিয়া, পটিয়া অন্তত ১৫টি বৌদ্ধ বিহার ও ৪০টিরও বেশি বৌদ্ধ জনবসতিতে হামলা, লুটপাট, আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে ধ্বংস হয়ে গেছে ইতিহাসের অনন্য গুরুত্বপূর্ণ দলিল, উপসনালয়, বিহার ও বৌদ্ধ স্থাপনা। ‘৬০০ থেকে ১১০০ শতকে নির্মিত কাঠ, পাথর, স্বর্ণ ও ধাতুর তৈরি চার শতাধিক অবিস্মরণীয় বুদ্ধ মূর্তিকে খ--বিখ- করা হয়। ঘটনার পরবর্তীতে সরকারি উদ্যোগে কেন্দ্রীয় সীমা বিহারসহ হাতেগোনা কয়েকটি বিহার সংস্কার ও পুনঃনির্মাণে বিগত শেখ হাসিনা সরকার সহযোগিতা করেছিল। সীমা বিহার সুরম্য স্থাপনায় নির্মিত হলেও সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত বৌদ্ধ শিল্পকর্মের সাজানো গোছানো বিহারের অস্তিত্ব এখন আর দেখা মেলে না। তখন এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৯টি মামলা দায়ের করা হয় কিন্তু এত বছরেও যা জানলাম তার ফলাফল শূন্য। এরই মধ্যে গত ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর দুই দিন পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটিতে ঘটেছে ন্যাক্কারজনক ঘটনা। সেখানেও বৌদ্ধ স্থাপনা ও শতাধিক আদিবাসী সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, ব্যবসা-বাণিজ্যে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে, তিনজন আদিবাসী নাগরিককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, আহত হয়েছে প্রায় শতাধিক।

সব ধর্মে বলা আছে মানুষই সব সৃষ্টির উৎসস্থল। মানুষ না হলে পৃথিবীজুড়ে আজ এত কিছু সৃষ্টি হতো না। জ্ঞান-বিজ্ঞান উন্নত হতো না। ধর্মপ্রচারকগণ সবার ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছে মানব সমাজকে। মানুষ হিসেবে জন্মলাভ করা দুর্লভ ব্যাপার! কিন্তু অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় যে, একশ্রেণীর মানুষ নামের আজব প্রজাতি দেশে যেভাবে পশুপাখির মতো নিধন চালাচ্ছে তা মানব সমাজকে লজ্জিত করছে। ব্যথিত করছে। শুধু সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে মানুষ হয়ে আরেক শ্রেণীর মানুষের কাছে অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। তাদের বাড়িঘর, দোকানপাট, ব্যবসা-বাণিজ্যে হামলা হচ্ছে লুটপাট হচ্ছে, মা-বোন ধর্ষিত হচ্ছে এ কেমন বাংলাদেশ ? বিগত সময়েও ছিল, এখনো আছে, সরকার পরিবর্তন হয়েছে ঠিকই নির্যাতনের ধরন পরিবর্তন হয়নি বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে বেড়েছে। কোনো সময়ে এ দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী সঠিক বিচার প্রক্রিয়া দেখেনি। সে কারণে প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও সংখ্যালঘুদের ওপর অঘটনের সংবাদ শুনতে পাচ্ছি। বৌদ্ধ সভ্যতার অনন্য নিদর্শন স্থান হচ্ছে পর্যটন জেলা কক্সবাজারের রামু। সুপ্রাচীন কাল থেকে বৌদ্ধরা এতদ্বঅঞ্চলে শান্তি মৈত্রীর বাতাবরণ সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে বসবাস করে আসছে।

বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে রামুর ঘটনার পর পুরো বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা অনিশ্চিয়তার মধ্যে জীবনযাপন করেছিল। ঘটনার এক যুগ পার হলেও বিচাররের কোনো একটি খুঁটিও নড়েনি। তাই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বৌদ্ধরা কি ভিনদেশের মানুষ? কেন এই বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে টালবাহানা। বৌদ্ধ সম্প্রদায় এ দেশের ভূমিজ সন্তান। শত শত বছর ধরে পরম্পরা বাস করে আসছে। শান্তি, সম্প্রীতি, সৌহার্দের মাধ্যমে আলোকিত দেশ গড়ার প্রতিনিয়ত অবদান রেখে চলেছে সুশিক্ষিত বৌদ্ধ জনগোষ্ঠী। অথচ তাদের ওপর চালানো হয় বর্বর নির্যাতন। একশ্রেণীর ধর্মান্ধ, উগ্রবাদী জনগোষ্ঠীর কারণে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ঘটনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে ভিন্ন সম্প্রদায়ের জনগণকে। অপসংস্কৃতির অন্ধ বেড়াজাল থেকে বের হতে না পারলে মানুষ হিসেবে জন্মলাভ করা শুধু অসম্মানের নয় কলঙ্কিতও বটে? দেশে সংখ্যালঘুদের জীবনমান আজ সংকটাপন্ন। কোথাও তারা নিরাপদ মনে করছে না। প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে মানুষ নামের কিছু দুর্বৃত্ত অমানুষের হাতে নির্যাতিত নিগৃহীত হচ্ছে। অথচ আমরা নিজেদের সভ্য সমাজ, ধার্মিক সমাজের অংশীজন হিসেবে দাবি করি। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ সম্প্রদায়ের ইতিহাসের অংশবিশেষ। বৌদ্ধ বিহার বা প্যাগোডা হচ্ছে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপসনালয়, ধর্ম ও জ্ঞানচর্চার প্রাণকেন্দ্র। বৌদ্ধ ইতিহাস হাজার হাজার বছরে ধরে বাঙালির ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে। ইতিহাস হচ্ছে সঠিক সত্যপথের অবিচল পথনির্দেশনা। ইতিহাস হচ্ছে, হারিয়ে যাওয়া শেকড়; যে শেকড়ের পথ ধরে বৌদ্ধরা প্রতিনিয়ত নিজেদের অস্তিত্ব খুঁজে ফিরে। বিশ^ পরিম-লে বৌদ্ধ সম্প্রদায় একটি সুশিক্ষিত, সুশৃঙ্খল, শান্তিপ্রিয় জাতি হিসেব সমাদৃত। বৌদ্ধরা বিজ্ঞানকে মনেপ্রাণে ধারণ করে বুদ্ধজ্ঞানে পরিশুদ্ধ জীবনযাপনে নিজেদের গড়ে তুলতে অবিরাম চেষ্টা চালায়। হিংসা, হানাহানি, বিদ্বেষ, মিথ্যা, ঠকবাজী কখনো বৌদ্ধরা মনন চেতনায় স্থান দেয় না।

২৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জন্য এক ভয়াল দিন। এই দিনের ক্ষত বাঙালি বৌদ্ধদের হৃদয় থেকে কখনো মুছবে না। রাজনৈতিক সরকারের পটপরিবর্তনের পরেও অনেক বৌদ্ধপল্লী ও সংখ্যলঘু জনেগোষ্ঠীর বাড়িঘর, উপাসনালয়ে হামলা হচ্ছে কিন্তু সরকার ও প্রশাসন নির্বিকার। সম্প্রীতি অটুট রাখতে সরকারে জোরালো ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে ৫ আগস্টের পর থেকে দেশে ২০১০টি সাম্প্রদায়িক হামলার বিবরণ প্রকাশ করেছে, যেদিন তারা (১৯ সেপ্টেম্বর) এই নির্যাতনের সচিত্র বর্ণনা দেশবাসীর সম্মুখে তুলে ধরছিল, সেদিনই ঘটে পার্বত্য চট্টগ্রাম খাগড়াছড়িতে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ওপর ভয়াবহ তা-ব। এদেশ সবারÑ সব জাতি ধর্মের মানুষের অংশগ্রহণে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বদেশভূমি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ লাভ করেছিল। অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে দেশে শান্তি ফিরে আসবে এ প্রত্যাশা।

[লেখক : প্রাবন্ধিক]

back to top