alt

উপ-সম্পাদকীয়

ডেঙ্গু থেকে বাঁচার উপায় কী

মিহির কুমার রায়

: বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪

প্রতিবছর দেশের অনেক মানুষ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং অনেকে মৃত্যুবরণ করছেন। ২০২৩ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর যে ঊর্ধ্বমুখী চিত্র দেখা যায়, সেটার ধারাবাহিকতা বজায় ছিল চলতি বছরের জানুয়ারিতেও। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এই সংখ্যা কমে আসতে থাকে। মে মাস থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। গত কয়েক সপ্তাহে এটি বেশ বেড়েছে। বাংলাদেশে ডেঙ্গু একটি পুনরাবির্ভূত রোগ হিসেবে গণ্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন মোতাবেক এদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বিস্ফোরক পর্যায়ে আছে, ১৯৮২-৮৩ সালের মধ্যে পরিচালিত ঢাকা মহানগরের স্কুলের শিশুদের মধ্যে পরিচালিত এক জরিপে সর্বমোট ২,৪৫৬ রক্তের নমুনার মধ্যে ২৭৮টিতে ডেঙ্গুর লক্ষণ ধরা পড়ে, ১৯৮৪-৮৬ সালে ঢাকা শহরের হাসপাতাল থেকে সংগৃহীত রক্তের ২১টি নমুনার সবগুলোতেই সংক্রমণের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল, ১৯৯৭ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসার জন্য আসা প্রায় ১১% রোগীর (২৫০ জনের মধ্যে ২৭ জন) মধ্যে ডেঙ্গু অ্যান্টিজেনের পজিটিভ অ্যান্টিবডি টাইটার ধরা পড়েছিল, ১৯৯৯ সালে ঢাকার মহাখালীর স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে, বিভিন্ন জেলা থেকে পাঠানো সন্দেহজনক রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে ২৪১টির মধ্যে ৯৮টিতে ডেঙ্গুর অস্তিত্ব পেয়েছিল, ওই ইনস্টিটিউট প্রদত্ত বিস্তারিত তথ্যে এগুলোর মধ্যে কয়েকটি রক্তক্ষরা ডেঙ্গুরও তথ্য ছিল, ঢাকা শহরের চিকিৎসকদের দেয়া তথ্য থেকেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রক্তক্ষরা ডেঙ্গুর অস্তিত্বের কথা জানা গেছে। সাম্প্রতিক কালে স্বাস্থ্য গবেষণা খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকলেও ডেঙ্গু কিংবা অন্য কোন রোগের ওপর তেমন কোন গবেষণার কাজ দেখা যায় না। ডেঙ্গুর ভয়াবহতা হতে পারে এই মর্মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সতর্ক বার্তা দিলেও সিটি করপোরেশন তা আমলে নেয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১২ সালেই একটি সতর্কবার্তা দিয়েছিল যে বিশ্বের শতকরা ৪০ ভাগ মানুষ ডেঙ্গু ঝুঁকিতে রয়েছে যার মধ্যে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কথা বিশেষভাবে উল্লেখিত ছিল যাতে ছিল ডেঙ্গু বৈশ্বিক উদ্বেগের বিষয় হলেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে এমন দেশ তথা আক্রান্ত হয়েছে এমন ৭৫ শতাংশের বসবাস এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে, আরও জানা গেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্তা ২০১২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গু প্রতিরোধে ও নিয়ন্ত্রনের জন্য বৈশ্বিক কৌশলপত্র প্রকাশ করেছিল। এর অংশ হিসাবে ডেঙ্গু জীবানু বহনকারী মশা কিভাবে উৎপত্তি হয়, এর অবস্থান স্থল কোথায়, কখন কামড়ায়, কিভাবে রোগের লক্ষণ শুরু হয় এবং প্রতিকারের উপায় কি এসব নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে একটি আগাম বার্তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দেয়া হয়েছিল আইইডিসিআরের তথ্য মতে, সাধারণত জুন-জুলাই থেকে শুরু করে অক্টোবর-ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ডেঙ্গু বিস্তার থাকে। সাধারণত মশক নিধন কার্যক্রমের স্থবিরতা, গাইডলাইনের অভাব এবং মানুষের অসচেতনতাই ডেঙ্গুর প্রকোপের জন্য দায়ী। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, এখন এমন অনেক জায়গায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে, যার সঙ্গে বৃষ্টির পানির সম্পর্ক নেই, এর মধ্যে বহুতল ভবনের পার্কিংয়ের জায়গা, নির্মাণাধীন ভবনের বেজমেন্ট, ওয়াসার মিটার বাক্স এবং বাসাবাড়িতে জমিয়ে রাখা পানি রয়েছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ চলাকালীন এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু দুই সিটির তেমন কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে দেখা যায়নি। ডেঙ্গু থেকে বাঁচার উপায় কী? চিকিৎসকরা বলছেন, যথাযথ নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া অনুসরণ ও জনসচেতনতা সৃষ্টি হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব যদিও এখনো ডেঙ্গুজ্বরের কোনো প্রতিষেধক বের হয়নি। এ থেকে বাঁচতে মশার প্রজনন বন্ধ করা আর মশা নির্মূলের কোন বিকল্প নাই। পানি জমতে পারে এমন কোন অবস্থাই যেন না হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে। ডাবের খোসা, গাড়ির টায়ার, ভাঙা বোতল, পরিত্যক্ত ফুলের টব ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে নিজ উদ্যোগেই। সরকারের একার পক্ষে ১৭ কোটি মানুষের ভাঙা বোতল, গ্লাস, ডাবের খোসা, বালতি, টায়ার খুঁজে বের করা বা সরিয়ে ফেলা সম্ভব নয়। বাঁচতে হলে যার যার নিজ উদ্যোগেও এগুলোতে অংশগ্রহণ করতে হবে, ব্যক্তিগত উদ্যোগের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবেশীকে সচেতন করা, জনসাধারণকে সঠিক তথ্য সরবরাহ করা, মশা নিধনের জন্য মশা নাশক ঔষধ ছিটানো, বাসা কিংবা অফিসের আর্বজনার স্থানে পানির ব্যবহার না করা ও সর্বোপরি ধর্মীয় অণুশাসনের ভিত্তিতে জীবনকে পরিচালিত করা; ডেঙ্গু মশা নিধনকারী প্রতিষ্ঠানে বাজেটের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা ইত্যাদি। স্বাস্থ্য গবেষনা প্রতিষ্ঠান বিশেষত : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ডেঙ্গু বিষয়ে অতীতের গবেষণার ফলাফল যদি থাকে তার ভিত্তিতে কি প্রায়োগিক কর্মসূচি নেয়া যায় এ ব্যাপারে সরকারকে পরামর্শ দিবেন। আর যদি কোন গবেষক না থাকে তবে প্রধিকার ভিত্তিতে ডেঙ্গুর ওপর গবেষণা করার দাবি রইল। প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা পরিকল্পনায় দেশের অগণিত চিকিৎসক যারা স্নাতকোত্তোর পর্যায়ে গবেষণারত তাদের ডেঙ্গু বিষয়টিকে গবেষণার ক্ষেত্র হিসাবে বাছাই করা উচিত।

এটি সবারই জানা যে বর্ষাতেই বৃষ্টির কারণে ডেঙ্গুর প্রভাবটি বেড়ে যায় কিন্তু যারা নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদের বাজেট থাকলেও পরিকল্পনামাফিক এর ব্যয় করার যে অনুশীলন তা না করার কারণে সঠিক কাজটি সঠিক সময়ে হয় না বিধায় যাও হয় তা মানসম্মত নয় যা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে, এখন কি ঔষধ ব্যবহার করা হবে, কোন দেশ থেকে ঔষধ আসবে, কোন পদ্ধতিতে টেন্ডার হবে, কিভাবে হবে ইত্যাদি একটি নির্ধারিত ছকে হওয়ার কথা থাকলেও যেসব কর্মকর্তা এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত তাদের অসাধুতার কারণে বিঘিœত হয় মূল কাজ আর ক্ষতিগ্রস্ত হয় সমাজ যা দেশেরে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার একটি সাধারণ চিত্র। এসব বিষয়গুলো প্রশাসনিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে; স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্য প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় জাতীয় স্বাস্থ্য ঝুঁকি যেমন ডেঙ্গুর মতো বিষয়গুলো যখন ব্যাপকভাবে দেখা দেয় তখন এর নিয়ন্ত্রণ অনেক ক্ষেত্রে কঠিন হয়ে দাঁড়ায় যার ফলশ্রুতিতে জনজীবন বিপন্ন হয় যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রায়শই ঘটছে। তার একটি সমাধান খুঁজে বের করা দরকার। স্বাস্থ্য বাজেট নিয়ে প্রায়শই সমালোচনা শোনা যায় যা জাতীয় বাজেটের মাত্র ২-৩ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে যা দিয়ে স্বাস্থ্য সেবা উপকরণ (ঔষধ, যন্ত্রপাতি হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা) ও স্বাস্থ্য গবেষণা/প্রশিক্ষণের খরচ মেটাতে হয়। তার মধ্যে আবার ডেঙ্গুজনিত রোগ, বন্যাজনিত রোগ, মৌসুমি রোগ ইত্যাদি মোকাবিলার জন্য তেমন কোন বাজেট বরাদ্দ থাকে না। তাহলে স্বাস্থ্য সেবার বিনিময়ে প্রাপ্ত ফি (যদিও সরকারি হাসপাতালে কম) এর টাকা কি বাজেটের ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে না? যদি স্বাস্থ্য বাজেটকে দেশের প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ভাগ করি তা হলে মাথাপিছু বাৎসরিক ব্যয় দাঁড়ায় ১৫১৩ টাকা এবং তা প্রতি মাসে পড়ে ১২৭ টাকা। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার মতে একটি দেশে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ কমপক্ষে জিডিপির ৫ শতাংশ এবং বাজেটের ১৫ শতাংশ হওয়া উচিত। বর্তমানে স্বাস্থ্য খাতে মাথাপিছু বরাদ্দ ১৮.০১ ডলার যা ভারতে ৬২ ডলার, নেপালে ৩৯ ডলার, ভিয়েতনামে ১১১ ডলার, মালদ্বীপে ৭২০ ডলার ও শ্রীলঙ্কায় ১০০০ ডলার।

স্বাস্থ্যনীতিতে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে যা হবে মানবিক, নৈতিক, ব্যয়সাশ্রয়ী ও সমাজমুখী, যদিও কাজটি কঠিন তবুও সম্ভব। আর ডেঙ্গু রোগের মতো রোগ যাতে বারবার মানুষকে ভোগাতে না পারে তার জন্য গবেষণা বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

[ লেখক : ডিন, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ]

অতীত থেকে মুক্তি এবং ইতিবাচক জীবনযাপন

মুক্তি সংগ্রামে তিনটি ধারা

বাসযোগ্যতার সূচকে ঢাকা কেন পিছিয়ে

শুধু নিচেই নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর

উপেক্ষিত আটকে পড়া পাকিস্তানিরা

রম্যগদ্য : সিন্দাবাদের বুড়ো ও আমরা

নেই কেনো সেই পাখি

বায়ুদূষণ থেকে মুক্তি কোন পথে

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র : রাষ্ট্র সংস্কারের দুর্গম পথ

পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র

বিজয়ের প্রেরণা

মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার পুনর্বীক্ষণ

সিদরাত জেবিনের মৃত্যু অথবা প্রশ্নহীন বায়ুদূষণ

বিজয়ের গৌরব ও সম্ভাবনাময় তরুণ সমাজ

ছবি

মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি বন্ধুদের অবদান

ছবি

বিজয় সংগ্রামের সূচনার সন্ধানে

মানসম্মত কনটেন্ট ও টিআরপির দ্বৈরথ

জিকা ভাইরাস রোধে প্রয়োজন সচেতনতা

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক

স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার গুরুত্ব

ঢাকার বাতাস বিষাক্ত কেন

চরের কৃষি ও কৃষকের জীবন

নিম্ন আয়ের মানুষ ভালো নাই

সবার আগে নিজেকে পরিবর্তন করা দরকার

পুলিশ কবে পুলিশ হবে

জীবন ফিরে আসুক বাংলার নদীগুলোতে

কান্দন সরেন হত্যা ও ভূমি বিরোধ কি এড়ানো যেত না

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র: রাষ্ট্র বিনির্মাণে সমস্যা কোথায়?

মানবাধিকার দিবস : মানুষের অধিকার নিয়ে কেন এত কথা?

আমলাতান্ত্রিক স্বচ্ছতা : সংস্কারের পথে নাকি পুনরাবৃত্তি?

খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কিছু কথা

ছবি

বেগম রোকেয়া : নারী জাগরণের অগ্রদূত

দুর্নীতির সর্বগ্রাসী বিস্তার বন্ধ করতে হবে

মা তোর বদনখানি মলিন হলে

ব্যবসায়ী নেতৃত্বশূন্য ই-ক্যাব

মূল্যস্ফীতির হিসাব নির্ণয়ে নতুন পদ্ধতির প্রাসঙ্গিকতা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

ডেঙ্গু থেকে বাঁচার উপায় কী

মিহির কুমার রায়

বৃহস্পতিবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৪

প্রতিবছর দেশের অনেক মানুষ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন এবং অনেকে মৃত্যুবরণ করছেন। ২০২৩ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর যে ঊর্ধ্বমুখী চিত্র দেখা যায়, সেটার ধারাবাহিকতা বজায় ছিল চলতি বছরের জানুয়ারিতেও। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এই সংখ্যা কমে আসতে থাকে। মে মাস থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। গত কয়েক সপ্তাহে এটি বেশ বেড়েছে। বাংলাদেশে ডেঙ্গু একটি পুনরাবির্ভূত রোগ হিসেবে গণ্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন মোতাবেক এদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বিস্ফোরক পর্যায়ে আছে, ১৯৮২-৮৩ সালের মধ্যে পরিচালিত ঢাকা মহানগরের স্কুলের শিশুদের মধ্যে পরিচালিত এক জরিপে সর্বমোট ২,৪৫৬ রক্তের নমুনার মধ্যে ২৭৮টিতে ডেঙ্গুর লক্ষণ ধরা পড়ে, ১৯৮৪-৮৬ সালে ঢাকা শহরের হাসপাতাল থেকে সংগৃহীত রক্তের ২১টি নমুনার সবগুলোতেই সংক্রমণের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল, ১৯৯৭ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসার জন্য আসা প্রায় ১১% রোগীর (২৫০ জনের মধ্যে ২৭ জন) মধ্যে ডেঙ্গু অ্যান্টিজেনের পজিটিভ অ্যান্টিবডি টাইটার ধরা পড়েছিল, ১৯৯৯ সালে ঢাকার মহাখালীর স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে, বিভিন্ন জেলা থেকে পাঠানো সন্দেহজনক রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে ২৪১টির মধ্যে ৯৮টিতে ডেঙ্গুর অস্তিত্ব পেয়েছিল, ওই ইনস্টিটিউট প্রদত্ত বিস্তারিত তথ্যে এগুলোর মধ্যে কয়েকটি রক্তক্ষরা ডেঙ্গুরও তথ্য ছিল, ঢাকা শহরের চিকিৎসকদের দেয়া তথ্য থেকেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক রক্তক্ষরা ডেঙ্গুর অস্তিত্বের কথা জানা গেছে। সাম্প্রতিক কালে স্বাস্থ্য গবেষণা খাতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকলেও ডেঙ্গু কিংবা অন্য কোন রোগের ওপর তেমন কোন গবেষণার কাজ দেখা যায় না। ডেঙ্গুর ভয়াবহতা হতে পারে এই মর্মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সতর্ক বার্তা দিলেও সিটি করপোরেশন তা আমলে নেয়নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০১২ সালেই একটি সতর্কবার্তা দিয়েছিল যে বিশ্বের শতকরা ৪০ ভাগ মানুষ ডেঙ্গু ঝুঁকিতে রয়েছে যার মধ্যে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কথা বিশেষভাবে উল্লেখিত ছিল যাতে ছিল ডেঙ্গু বৈশ্বিক উদ্বেগের বিষয় হলেও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে এমন দেশ তথা আক্রান্ত হয়েছে এমন ৭৫ শতাংশের বসবাস এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে, আরও জানা গেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্তা ২০১২ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গু প্রতিরোধে ও নিয়ন্ত্রনের জন্য বৈশ্বিক কৌশলপত্র প্রকাশ করেছিল। এর অংশ হিসাবে ডেঙ্গু জীবানু বহনকারী মশা কিভাবে উৎপত্তি হয়, এর অবস্থান স্থল কোথায়, কখন কামড়ায়, কিভাবে রোগের লক্ষণ শুরু হয় এবং প্রতিকারের উপায় কি এসব নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে একটি আগাম বার্তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দেয়া হয়েছিল আইইডিসিআরের তথ্য মতে, সাধারণত জুন-জুলাই থেকে শুরু করে অক্টোবর-ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ডেঙ্গু বিস্তার থাকে। সাধারণত মশক নিধন কার্যক্রমের স্থবিরতা, গাইডলাইনের অভাব এবং মানুষের অসচেতনতাই ডেঙ্গুর প্রকোপের জন্য দায়ী। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, এখন এমন অনেক জায়গায় এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যাচ্ছে, যার সঙ্গে বৃষ্টির পানির সম্পর্ক নেই, এর মধ্যে বহুতল ভবনের পার্কিংয়ের জায়গা, নির্মাণাধীন ভবনের বেজমেন্ট, ওয়াসার মিটার বাক্স এবং বাসাবাড়িতে জমিয়ে রাখা পানি রয়েছে। ডেঙ্গুর প্রকোপ চলাকালীন এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু দুই সিটির তেমন কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে দেখা যায়নি। ডেঙ্গু থেকে বাঁচার উপায় কী? চিকিৎসকরা বলছেন, যথাযথ নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া অনুসরণ ও জনসচেতনতা সৃষ্টি হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব যদিও এখনো ডেঙ্গুজ্বরের কোনো প্রতিষেধক বের হয়নি। এ থেকে বাঁচতে মশার প্রজনন বন্ধ করা আর মশা নির্মূলের কোন বিকল্প নাই। পানি জমতে পারে এমন কোন অবস্থাই যেন না হয় সেটা খেয়াল রাখতে হবে। ডাবের খোসা, গাড়ির টায়ার, ভাঙা বোতল, পরিত্যক্ত ফুলের টব ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে নিজ উদ্যোগেই। সরকারের একার পক্ষে ১৭ কোটি মানুষের ভাঙা বোতল, গ্লাস, ডাবের খোসা, বালতি, টায়ার খুঁজে বের করা বা সরিয়ে ফেলা সম্ভব নয়। বাঁচতে হলে যার যার নিজ উদ্যোগেও এগুলোতে অংশগ্রহণ করতে হবে, ব্যক্তিগত উদ্যোগের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবেশীকে সচেতন করা, জনসাধারণকে সঠিক তথ্য সরবরাহ করা, মশা নিধনের জন্য মশা নাশক ঔষধ ছিটানো, বাসা কিংবা অফিসের আর্বজনার স্থানে পানির ব্যবহার না করা ও সর্বোপরি ধর্মীয় অণুশাসনের ভিত্তিতে জীবনকে পরিচালিত করা; ডেঙ্গু মশা নিধনকারী প্রতিষ্ঠানে বাজেটের সর্বোচ্চ ব্যবহার করা ইত্যাদি। স্বাস্থ্য গবেষনা প্রতিষ্ঠান বিশেষত : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ডেঙ্গু বিষয়ে অতীতের গবেষণার ফলাফল যদি থাকে তার ভিত্তিতে কি প্রায়োগিক কর্মসূচি নেয়া যায় এ ব্যাপারে সরকারকে পরামর্শ দিবেন। আর যদি কোন গবেষক না থাকে তবে প্রধিকার ভিত্তিতে ডেঙ্গুর ওপর গবেষণা করার দাবি রইল। প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা পরিকল্পনায় দেশের অগণিত চিকিৎসক যারা স্নাতকোত্তোর পর্যায়ে গবেষণারত তাদের ডেঙ্গু বিষয়টিকে গবেষণার ক্ষেত্র হিসাবে বাছাই করা উচিত।

এটি সবারই জানা যে বর্ষাতেই বৃষ্টির কারণে ডেঙ্গুর প্রভাবটি বেড়ে যায় কিন্তু যারা নিয়ন্ত্রক সংস্থা তাদের বাজেট থাকলেও পরিকল্পনামাফিক এর ব্যয় করার যে অনুশীলন তা না করার কারণে সঠিক কাজটি সঠিক সময়ে হয় না বিধায় যাও হয় তা মানসম্মত নয় যা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে, এখন কি ঔষধ ব্যবহার করা হবে, কোন দেশ থেকে ঔষধ আসবে, কোন পদ্ধতিতে টেন্ডার হবে, কিভাবে হবে ইত্যাদি একটি নির্ধারিত ছকে হওয়ার কথা থাকলেও যেসব কর্মকর্তা এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত তাদের অসাধুতার কারণে বিঘিœত হয় মূল কাজ আর ক্ষতিগ্রস্ত হয় সমাজ যা দেশেরে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার একটি সাধারণ চিত্র। এসব বিষয়গুলো প্রশাসনিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে; স্বাস্থ্যসেবা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্য প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় জাতীয় স্বাস্থ্য ঝুঁকি যেমন ডেঙ্গুর মতো বিষয়গুলো যখন ব্যাপকভাবে দেখা দেয় তখন এর নিয়ন্ত্রণ অনেক ক্ষেত্রে কঠিন হয়ে দাঁড়ায় যার ফলশ্রুতিতে জনজীবন বিপন্ন হয় যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে প্রায়শই ঘটছে। তার একটি সমাধান খুঁজে বের করা দরকার। স্বাস্থ্য বাজেট নিয়ে প্রায়শই সমালোচনা শোনা যায় যা জাতীয় বাজেটের মাত্র ২-৩ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে যা দিয়ে স্বাস্থ্য সেবা উপকরণ (ঔষধ, যন্ত্রপাতি হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা) ও স্বাস্থ্য গবেষণা/প্রশিক্ষণের খরচ মেটাতে হয়। তার মধ্যে আবার ডেঙ্গুজনিত রোগ, বন্যাজনিত রোগ, মৌসুমি রোগ ইত্যাদি মোকাবিলার জন্য তেমন কোন বাজেট বরাদ্দ থাকে না। তাহলে স্বাস্থ্য সেবার বিনিময়ে প্রাপ্ত ফি (যদিও সরকারি হাসপাতালে কম) এর টাকা কি বাজেটের ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে না? যদি স্বাস্থ্য বাজেটকে দেশের প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে ভাগ করি তা হলে মাথাপিছু বাৎসরিক ব্যয় দাঁড়ায় ১৫১৩ টাকা এবং তা প্রতি মাসে পড়ে ১২৭ টাকা। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার মতে একটি দেশে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ কমপক্ষে জিডিপির ৫ শতাংশ এবং বাজেটের ১৫ শতাংশ হওয়া উচিত। বর্তমানে স্বাস্থ্য খাতে মাথাপিছু বরাদ্দ ১৮.০১ ডলার যা ভারতে ৬২ ডলার, নেপালে ৩৯ ডলার, ভিয়েতনামে ১১১ ডলার, মালদ্বীপে ৭২০ ডলার ও শ্রীলঙ্কায় ১০০০ ডলার।

স্বাস্থ্যনীতিতে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে যা হবে মানবিক, নৈতিক, ব্যয়সাশ্রয়ী ও সমাজমুখী, যদিও কাজটি কঠিন তবুও সম্ভব। আর ডেঙ্গু রোগের মতো রোগ যাতে বারবার মানুষকে ভোগাতে না পারে তার জন্য গবেষণা বরাদ্দ বাড়াতে হবে।

[ লেখক : ডিন, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ]

back to top