alt

উপ-সম্পাদকীয়

ব্যাংক খাতের সংকট

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

: শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪
image

ক্ষমতায় বসেই দেশের ১০টি ব্যাংক দেউলিয়া অবস্থায় আছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। মন্তব্যটি করেছেন সাংবাদিকদের সঙ্গে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে। তিনি অবশ্য ব্যাংগুলোকে রক্ষা করার আশ্বাসও দিয়েছেন। যেসব ব্যাংক আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমাদৃত নয় সেই সব দুর্বল ব্যাংকের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, তাই দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার পরিকল্পনাও তার আছে। ব্যাংক খাতের সংস্কারের জন্য তিনটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে; ইতোমধ্যে একটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত টাস্কফোর্সের কয়েকজন সদস্যের স্বার্থ সংঘাত নিয়েও প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে, একজন ব্র্যাক ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের চেয়ারম্যান, আরেকজন বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। মাঠপর্যায়ে কাজ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ১৭ জনকে নেয়া হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রুটি, অনিয়ম, দুর্নীতি উদ্ঘাটনে এদের পক্ষে নিরপেক্ষভাবে কাজ করা কি সম্ভব? কিছু ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন করে আবার গঠন করেছে। এতে ব্যক্তির পরিবর্তন হয়েছে মাত্র, ব্যাংকের অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয় না। বাণিজ্যিক ব্যাংকের মালিকদের ওপর জনগণের আস্থা থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর তালিকাভুক্ত হওয়ার প্রয়োজন হতো না। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর আস্থা আছে বলেই জনগণ বাণিজ্যিক ব্যাংকে টাকা জমা রাখে। বর্তমান গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জনগণের সেই আস্থায় ধস নামিয়ে দিয়েছেন। পরবর্তীকালে নানা পদক্ষেপ ও আশ্বাস দেয়া সত্ত্বেও জনগণের আস্থা আর ফেরত আসছে না, তারল্য সংকটে ব্যাংকগুলোর নাভিশ্বাস ওঠে যাচ্ছে। দুর্বল কয়েকটার বিশ্বস্ততা নষ্ট করে দিয়ে এখন বাংলাদেশ ব্যাংক তদারকির কঠোর অনুশাসন শুরু করেছে, প্রতিদিন তাদের ২০টি বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করতে হয়। এর ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য স্টেটমেন্ট প্রস্তুতে ব্যাংকগুলো এত বেশি ব্যস্ত থাকে যে, ওঠে দাঁড়ানোর কোন পরিকল্পনাই নিতে পারছে না। ত্রিশ বছর আগেও হাজারো রকমের বিবরণী দাখিলের আবশ্যকতা নিয়ে তপশিলি ব্যাংকগুলো প্রশ্ন তুলত, বাংলাদেশ ব্যাংকে তখন আমরা ছিলাম ‘স্বৈরাচারী’ প্রতিষ্ঠানের ‘ফ্যাসিস্ট’ কর্মকর্তা; তাদের কোন কথার গুরুত্ব দিইনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ফ্যাসিস্ট’ নীতির আস্থাহীনতায় শুধু তদারকি দিয়ে দুর্বল ব্যাংককে সবল করা সম্ভব নয়।

আওয়ামী লীগ আমলেও কিছু ব্যাংকের লিকুইডিটি বা তারল্য সংকট ছিল, কিন্তু এত প্রকট ছিল না। এই সংকট এখন চরম আকার ধারণ করেছে। এর জন্য দায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নরের অবিমৃষ্য ঘোষণা। নাম না নেয়া দুর্বল ব্যাংকগুলো এখন আর কোন আমানত পাচ্ছে না, বরং সবাই তাদের জমা টাকা তোলার জন্য ভিড় করছে; ভিড় যত বাড়ছে ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট তত বেশি উন্মোচিত হচ্ছে, চেকের টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। যে ব্যাংক আমানতকারীর টাকা পরিশোধ করতে পারে না, সেই ব্যাংকে কেউ নতুন করে টাকা জমা রাখবে, এই আশা বাংলাদেশ ব্যাংক করে কী করে! যে কোন ব্যাংকের তারল্য সংকটে বাংলাদেশ ব্যাংক পাশে থাকবে- এই কথাটি বলে আগের গভর্নর রউফ তালুকদার জনগণকে আশ্বস্ত করেছিলেন; নতুন গভর্নর দায়িত্ব নেয়ার পর এমন একটি আশ্বাস দিয়ে গোপনে কঠোর মনিটরিং করতে পারতেন। বাংলাদেশ ব্যাংককে মনে রাখতে হবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন গভর্নরের অবিবেচক মন্তব্যের কারণে মানি মার্কেটে সুনামি হয়ে যেতে পারে।

দেশে প্রয়োজনাতিরিক্ত ব্যাংকও বর্তমান দুরবস্থার জন্য দায়ী। আমাদের অর্থনীতি এত বড় নয় যে, অর্ধশতাধিক ব্যাংকের প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকার জন্য উপযোগী। আমাদের ছোট আকারের অর্থনীতির জন্য ৬২টি ব্যাংকের প্রয়োজন ছিল না। ৬২টি ব্যাংকের জন্য আমানত সংগ্রহ ও ঋণগ্রহীতা তৈরি করার মতো অর্থনৈতিক পরিবেশ বাংলাদেশ এখনো সৃষ্টি করতে পারেনি। দেশে ব্যাংকের সংখ্যা বাড়লেও সে অনুসারে কাস্টমার না বাড়ায় আমানত সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণে অসম প্রতিযোগিতা বেড়েই চলেছে। কোথাও কোথাও একই ভবনে একাধিক ব্যাংক শাখা। দুর্বল ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবন বীমার কর্মচারীদের মতো টাকার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে, কিন্তু টাকা পাচ্ছে না; কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক যাদের বিশ্বাস করে না, জনগণ তাদের বিশ্বাস করবে কেন? বাংলাদেশ ব্যাংক গ্যারান্টি দেয়া সত্ত্বেও সবল ব্যাংকগুলো দুর্বল ব্যাংগুলোকে ধার দিচ্ছে না। সংকটে পড়ে ১২ শতাংশেরও বেশি সুদে আমানত নিয়ে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সৃষ্ট দুর্যোগ থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে, কিন্তু টেকসই উন্নতি দৃশ্যমান হচ্ছে না।

অদক্ষ ব্যবস্থাপনায় আমানত এবং ঋণের গ্রহণযোগ্য অনুপাত কয়েকটি ব্যাংকে লঙ্ঘিত হয়েছে। এই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে এবং নীতিমালার বাস্তবায়ন নিয়মিত মনিটরিং করা হয়। ব্যাংকগুলোর এই করুণ পরিণতি কি বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণে যথাসময়ে ধরা পড়েনি? ধরা পড়লে পূর্বাভাস দিয়ে তখনি সংশোধনক্ষম ব্যবস্থাদি নেয়া হয়নি কেন? ব্যাংকগুলোর মুমূর্ষু অবস্থায় শুধু দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়নি, ব্যাংকগুলোর কুষ্ঠি নিয়ে টানাটানিও করা হচ্ছে। শুধু অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে নয়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে সীমাহীন অপপ্রচার হয়েছে। ব্যাংকগুলোর দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার গুজব ও অপপ্রচার শুরু হয়েছে করোনার সময় থেকে। বাজারের পণ্যমূল্যের খবর পরিবেশন করে করে মিডিয়া যেভাবে মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেয়, ঠিক তেমনি ‘দেউলিয়া’ ব্যাংক আর ‘খেলাপি’ ঋণের কথা বলে বলে ব্যাংকগুলোর ওপর জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে।

এস আলম সব ব্যাংকের টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে, এমন প্রচারে আমানতকারীর মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হওয়াই স্বাভাবিক। বর্তমান গভর্নর প্রথম প্রথম প্রায় প্রতিদিন এস আলমকে নিয়ে বিবৃতি দিয়ে গেছেন। গভর্নরের অতিরিক্ত বিবৃতির কারণে এস আলমের মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর অস্তিত্ব নিয়ে জনগণের মধ্যে একটা ভীতির জন্ম হয়েছে। এস আলম গ্রুপের অনিয়ম হয়তো পাহাড়সম; কিন্তু তা তো একদিনে হয়নি। পত্রিকায় প্রকাশিত এক লাখ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তারা কী করেছে তা বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সংশ্লিষ্ট তপশিলি ব্যাংকের জানার কথা। ঋণ নেয়া তো অপরাধ নয়, ঋণ প্রদানে অনিয়ম হলে দাতা-গ্রহীতা উভয়ই অপরাধী। মিডিয়ার প্রচারে এমন একটি প্রতীতির জন্ম হয়েছে যে, ঋণখেলাপি মানেই জঘন্য অপরাধী। সাময়িক ঋণখেলাপি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। ব্যক্তিগত পর্যায়েও ধার নিয়ে আমরা অনেক সময় নির্ধারিত তারিখে ফেরত দিতে পারি না। নানা কারণে ঋণ গ্রহীতার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটতে পারে। এস আলমের বিরুদ্ধে হাজারো রকমের অভিযোগ রয়েছে, তাদের কিছু অপকর্মের ফিরিস্তি আমি আমার কয়েকটি কলামে উল্লেখও করেছি, কিন্তু তারা যে ঋণখেলাপি এই কথাটি আজ পর্যন্ত শুনিনি, ঋণখেলাপির তালিকায় তাদের নাম থাকলেও তা বহুল কথিত নয়।

খেলাপি ঋণের হার নিয়ে যেভাবে মিডিয়ায় হইচই হচ্ছে তা অতিরিক্ত ও অতিরঞ্জিত। ত্রিশ বছর আগেও রাষ্ট্রয়াত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ছিল ৩৩ শতাংশের বেশি, এখন সম্ভবত ১১ শতাংশের কাছাকাছি; অবশ্য এখন খেলাপি ঋণের হিসাবায়ন ভিন্নতর। তারপরও এই গ্রুপের বিনাশ কারও কাম্য হতে পারে না। বর্তমানে এস আলমের ছয়টি ব্যাংকে ২৬ হাজার কোটি টাকা জমা আছে বলে জানা যায়, অন্য ব্যাংকেও থাকতে পারে। এই গ্রুপের সম্পদ কত তার হিসাব সম্ভবত এখনো বের করা হয়নি; তবে এক লাখ কোটি টাকার কম হবে বলে মনে হয় না। কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা বেনামে ঋণ নিতে অভ্যস্ত, পরিদর্শনে ধরা পড়লে অতীতে গোপনে নিয়মিত করে জরিমানাসহ তা আদায়ের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে হইচই করছে তা অতীতে কখনো দেখা যায়নি। গোপন রাখা আর হইচই করার মধ্যে কোনটি সঠিক তা বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারণ করুক। মনে রাখতে হবে, রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে এস আলম গ্রুপে কর্মরত এক লাখ আশি হাজার শ্রমিক-কর্মচারীকে কর্মহীন করে দেয়া দেশের জন্য সুবিবেচনার পরিচায়ক হবে না।

কয়েকটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শুধু ব্যাংকের মালিকদের টাকার চাহিদা পূরণের জন্য, কথাটি আমার নয়, বর্তমান অর্থ উপদেষ্টার। এই ব্যাংকগুলো তাদের মালিকদের ঋণের চাহিদা মেটাতে গিয়ে কোন নিয়মনীতি মানেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকও তাতে সায় দিয়েছে, সায় না দিলে এত অনিয়ম হতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট, অনসাইট তদারকির বেড়াজাল ভেদ করে কী করে এত অনিয়ম হলো তা বের করার জন্য একটি কমিশন হওয়া দরকার। অবশ্য নিজের ব্যাংক থেকে মালিকদের অতিরিক্ত ঋণ গ্রহণে প্রতিবন্ধকতা তৈরির ক্ষেত্রে সব সরকারের আমলে আইনের পর আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, কিন্তু তাদের নিয়মবহির্ভূত ঋণ গ্রহণ বন্ধ হয়নি; বরং কঠোর আইনকানুন ব্যাংকের মালিক ও ব্যাংক ব্যবস্থাপকদের দুর্নীতির আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে। বর্তমানে করপোরেট হাউজগুলোর হাতে মিডিয়া, সরকার পরিবর্তন হলে শুধু পত্রিকার সম্পাদক পরিবর্তন হয়, মিডিয়ার সুর পরিবর্তন হয়, কিন্তু মালিকের কর্মকা-ের পরিবর্তন হয় না। নিজস্ব মিডিয়ার আচ্ছাদন ভেদ করে ব্যাংক মালিকদের অপকর্ম থেকে নিবৃত্ত করতে হলে নিয়মনীতির ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের দৃঢ় অবস্থান অপরিহার্য।

দুর্বল ব্যাংকগুলোর সংকট কাটিয়ে তোলার নিমিত্তে আওয়ামী লীগ আমলে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক ‘প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন ফ্রেমওয়ার্ক’ শিরোনামে একটি সার্কুলার ইস্যু করে; এই সার্কুলারের ভাষ্য অনুযায়ী ব্যাংকগুলো উক্ত ফ্রেমওয়ার্ক বাস্তবায়নপূর্বক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে ব্যর্থ হলে ২০২৫ সাল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূত করার মতো পদক্ষেপ নিতে পারবে। পতনোম্মুখ ব্যাংককে উদ্ধার করার এই নীতি বাস্তবায়নের কথা বর্তমান গভর্নরও বলছেন। আমাদের দেশে দুর্বল ব্যাংকগুলো স্বেচ্ছায় মার্জ হবে না, মার্জ হলে মালিকদের ক্ষমতা হারানোর ভয় রয়েছে; তাই ব্যাংকের মালিকরা তাদের ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া করতে রাজি থাকলেও মার্জ করতে রাজি হবে না। ব্যাংক নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া আর মিডিয়ায় বিভ্রান্তিমূলক তথ্য পরিবেশন করা এক কথা নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু থাকলে তা নিরুদ্বিগ্ন চিত্তে উপশম করাই শ্রেয়। সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত সাইফুর রহমানও রাষ্ট্রয়াত্ত ব্যাংকগুলোর সংকটকালীন মূলধনের জোগান দিয়েছেন। দেউলিয়া থেকে রক্ষা করার লক্ষ্যে আমেরিকাও তাদের ব্যাংকগুলোকে এক সময় অর্থায়ন করেছে। সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশয়ের কথা জনগণকে জানিয়ে পতনোন্মুখ ব্যাংকগুলোর পতন নিশ্চিত করা সুবিবেচনাপ্রসূত বলে মনে হয় না।

[ লেখক : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ]

অতীত থেকে মুক্তি এবং ইতিবাচক জীবনযাপন

মুক্তি সংগ্রামে তিনটি ধারা

বাসযোগ্যতার সূচকে ঢাকা কেন পিছিয়ে

শুধু নিচেই নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর

উপেক্ষিত আটকে পড়া পাকিস্তানিরা

রম্যগদ্য : সিন্দাবাদের বুড়ো ও আমরা

নেই কেনো সেই পাখি

বায়ুদূষণ থেকে মুক্তি কোন পথে

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র : রাষ্ট্র সংস্কারের দুর্গম পথ

পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র

বিজয়ের প্রেরণা

মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার পুনর্বীক্ষণ

সিদরাত জেবিনের মৃত্যু অথবা প্রশ্নহীন বায়ুদূষণ

বিজয়ের গৌরব ও সম্ভাবনাময় তরুণ সমাজ

ছবি

মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি বন্ধুদের অবদান

ছবি

বিজয় সংগ্রামের সূচনার সন্ধানে

মানসম্মত কনটেন্ট ও টিআরপির দ্বৈরথ

জিকা ভাইরাস রোধে প্রয়োজন সচেতনতা

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক

স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার গুরুত্ব

ঢাকার বাতাস বিষাক্ত কেন

চরের কৃষি ও কৃষকের জীবন

নিম্ন আয়ের মানুষ ভালো নাই

সবার আগে নিজেকে পরিবর্তন করা দরকার

পুলিশ কবে পুলিশ হবে

জীবন ফিরে আসুক বাংলার নদীগুলোতে

কান্দন সরেন হত্যা ও ভূমি বিরোধ কি এড়ানো যেত না

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র: রাষ্ট্র বিনির্মাণে সমস্যা কোথায়?

মানবাধিকার দিবস : মানুষের অধিকার নিয়ে কেন এত কথা?

আমলাতান্ত্রিক স্বচ্ছতা : সংস্কারের পথে নাকি পুনরাবৃত্তি?

খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কিছু কথা

ছবি

বেগম রোকেয়া : নারী জাগরণের অগ্রদূত

দুর্নীতির সর্বগ্রাসী বিস্তার বন্ধ করতে হবে

মা তোর বদনখানি মলিন হলে

ব্যবসায়ী নেতৃত্বশূন্য ই-ক্যাব

মূল্যস্ফীতির হিসাব নির্ণয়ে নতুন পদ্ধতির প্রাসঙ্গিকতা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

ব্যাংক খাতের সংকট

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

image

শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪

ক্ষমতায় বসেই দেশের ১০টি ব্যাংক দেউলিয়া অবস্থায় আছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। মন্তব্যটি করেছেন সাংবাদিকদের সঙ্গে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে। তিনি অবশ্য ব্যাংগুলোকে রক্ষা করার আশ্বাসও দিয়েছেন। যেসব ব্যাংক আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমাদৃত নয় সেই সব দুর্বল ব্যাংকের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, তাই দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার পরিকল্পনাও তার আছে। ব্যাংক খাতের সংস্কারের জন্য তিনটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে; ইতোমধ্যে একটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত টাস্কফোর্সের কয়েকজন সদস্যের স্বার্থ সংঘাত নিয়েও প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে, একজন ব্র্যাক ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের চেয়ারম্যান, আরেকজন বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। মাঠপর্যায়ে কাজ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ১৭ জনকে নেয়া হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রুটি, অনিয়ম, দুর্নীতি উদ্ঘাটনে এদের পক্ষে নিরপেক্ষভাবে কাজ করা কি সম্ভব? কিছু ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন করে আবার গঠন করেছে। এতে ব্যক্তির পরিবর্তন হয়েছে মাত্র, ব্যাংকের অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে বলে মনে হয় না। বাণিজ্যিক ব্যাংকের মালিকদের ওপর জনগণের আস্থা থাকলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর তালিকাভুক্ত হওয়ার প্রয়োজন হতো না। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর আস্থা আছে বলেই জনগণ বাণিজ্যিক ব্যাংকে টাকা জমা রাখে। বর্তমান গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জনগণের সেই আস্থায় ধস নামিয়ে দিয়েছেন। পরবর্তীকালে নানা পদক্ষেপ ও আশ্বাস দেয়া সত্ত্বেও জনগণের আস্থা আর ফেরত আসছে না, তারল্য সংকটে ব্যাংকগুলোর নাভিশ্বাস ওঠে যাচ্ছে। দুর্বল কয়েকটার বিশ্বস্ততা নষ্ট করে দিয়ে এখন বাংলাদেশ ব্যাংক তদারকির কঠোর অনুশাসন শুরু করেছে, প্রতিদিন তাদের ২০টি বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে অবহিত করতে হয়। এর ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের জন্য স্টেটমেন্ট প্রস্তুতে ব্যাংকগুলো এত বেশি ব্যস্ত থাকে যে, ওঠে দাঁড়ানোর কোন পরিকল্পনাই নিতে পারছে না। ত্রিশ বছর আগেও হাজারো রকমের বিবরণী দাখিলের আবশ্যকতা নিয়ে তপশিলি ব্যাংকগুলো প্রশ্ন তুলত, বাংলাদেশ ব্যাংকে তখন আমরা ছিলাম ‘স্বৈরাচারী’ প্রতিষ্ঠানের ‘ফ্যাসিস্ট’ কর্মকর্তা; তাদের কোন কথার গুরুত্ব দিইনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ফ্যাসিস্ট’ নীতির আস্থাহীনতায় শুধু তদারকি দিয়ে দুর্বল ব্যাংককে সবল করা সম্ভব নয়।

আওয়ামী লীগ আমলেও কিছু ব্যাংকের লিকুইডিটি বা তারল্য সংকট ছিল, কিন্তু এত প্রকট ছিল না। এই সংকট এখন চরম আকার ধারণ করেছে। এর জন্য দায়ী বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নরের অবিমৃষ্য ঘোষণা। নাম না নেয়া দুর্বল ব্যাংকগুলো এখন আর কোন আমানত পাচ্ছে না, বরং সবাই তাদের জমা টাকা তোলার জন্য ভিড় করছে; ভিড় যত বাড়ছে ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট তত বেশি উন্মোচিত হচ্ছে, চেকের টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। যে ব্যাংক আমানতকারীর টাকা পরিশোধ করতে পারে না, সেই ব্যাংকে কেউ নতুন করে টাকা জমা রাখবে, এই আশা বাংলাদেশ ব্যাংক করে কী করে! যে কোন ব্যাংকের তারল্য সংকটে বাংলাদেশ ব্যাংক পাশে থাকবে- এই কথাটি বলে আগের গভর্নর রউফ তালুকদার জনগণকে আশ্বস্ত করেছিলেন; নতুন গভর্নর দায়িত্ব নেয়ার পর এমন একটি আশ্বাস দিয়ে গোপনে কঠোর মনিটরিং করতে পারতেন। বাংলাদেশ ব্যাংককে মনে রাখতে হবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন গভর্নরের অবিবেচক মন্তব্যের কারণে মানি মার্কেটে সুনামি হয়ে যেতে পারে।

দেশে প্রয়োজনাতিরিক্ত ব্যাংকও বর্তমান দুরবস্থার জন্য দায়ী। আমাদের অর্থনীতি এত বড় নয় যে, অর্ধশতাধিক ব্যাংকের প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকার জন্য উপযোগী। আমাদের ছোট আকারের অর্থনীতির জন্য ৬২টি ব্যাংকের প্রয়োজন ছিল না। ৬২টি ব্যাংকের জন্য আমানত সংগ্রহ ও ঋণগ্রহীতা তৈরি করার মতো অর্থনৈতিক পরিবেশ বাংলাদেশ এখনো সৃষ্টি করতে পারেনি। দেশে ব্যাংকের সংখ্যা বাড়লেও সে অনুসারে কাস্টমার না বাড়ায় আমানত সংগ্রহ ও ঋণ বিতরণে অসম প্রতিযোগিতা বেড়েই চলেছে। কোথাও কোথাও একই ভবনে একাধিক ব্যাংক শাখা। দুর্বল ব্যাংকগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবন বীমার কর্মচারীদের মতো টাকার জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে, কিন্তু টাকা পাচ্ছে না; কারণ কেন্দ্রীয় ব্যাংক যাদের বিশ্বাস করে না, জনগণ তাদের বিশ্বাস করবে কেন? বাংলাদেশ ব্যাংক গ্যারান্টি দেয়া সত্ত্বেও সবল ব্যাংকগুলো দুর্বল ব্যাংগুলোকে ধার দিচ্ছে না। সংকটে পড়ে ১২ শতাংশেরও বেশি সুদে আমানত নিয়ে ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক সৃষ্ট দুর্যোগ থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে, কিন্তু টেকসই উন্নতি দৃশ্যমান হচ্ছে না।

অদক্ষ ব্যবস্থাপনায় আমানত এবং ঋণের গ্রহণযোগ্য অনুপাত কয়েকটি ব্যাংকে লঙ্ঘিত হয়েছে। এই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে এবং নীতিমালার বাস্তবায়ন নিয়মিত মনিটরিং করা হয়। ব্যাংকগুলোর এই করুণ পরিণতি কি বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণে যথাসময়ে ধরা পড়েনি? ধরা পড়লে পূর্বাভাস দিয়ে তখনি সংশোধনক্ষম ব্যবস্থাদি নেয়া হয়নি কেন? ব্যাংকগুলোর মুমূর্ষু অবস্থায় শুধু দেউলিয়া ঘোষণা করা হয়নি, ব্যাংকগুলোর কুষ্ঠি নিয়ে টানাটানিও করা হচ্ছে। শুধু অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে নয়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেও ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে সীমাহীন অপপ্রচার হয়েছে। ব্যাংকগুলোর দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার গুজব ও অপপ্রচার শুরু হয়েছে করোনার সময় থেকে। বাজারের পণ্যমূল্যের খবর পরিবেশন করে করে মিডিয়া যেভাবে মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেয়, ঠিক তেমনি ‘দেউলিয়া’ ব্যাংক আর ‘খেলাপি’ ঋণের কথা বলে বলে ব্যাংকগুলোর ওপর জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে।

এস আলম সব ব্যাংকের টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে, এমন প্রচারে আমানতকারীর মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হওয়াই স্বাভাবিক। বর্তমান গভর্নর প্রথম প্রথম প্রায় প্রতিদিন এস আলমকে নিয়ে বিবৃতি দিয়ে গেছেন। গভর্নরের অতিরিক্ত বিবৃতির কারণে এস আলমের মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর অস্তিত্ব নিয়ে জনগণের মধ্যে একটা ভীতির জন্ম হয়েছে। এস আলম গ্রুপের অনিয়ম হয়তো পাহাড়সম; কিন্তু তা তো একদিনে হয়নি। পত্রিকায় প্রকাশিত এক লাখ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তারা কী করেছে তা বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সংশ্লিষ্ট তপশিলি ব্যাংকের জানার কথা। ঋণ নেয়া তো অপরাধ নয়, ঋণ প্রদানে অনিয়ম হলে দাতা-গ্রহীতা উভয়ই অপরাধী। মিডিয়ার প্রচারে এমন একটি প্রতীতির জন্ম হয়েছে যে, ঋণখেলাপি মানেই জঘন্য অপরাধী। সাময়িক ঋণখেলাপি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। ব্যক্তিগত পর্যায়েও ধার নিয়ে আমরা অনেক সময় নির্ধারিত তারিখে ফেরত দিতে পারি না। নানা কারণে ঋণ গ্রহীতার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটতে পারে। এস আলমের বিরুদ্ধে হাজারো রকমের অভিযোগ রয়েছে, তাদের কিছু অপকর্মের ফিরিস্তি আমি আমার কয়েকটি কলামে উল্লেখও করেছি, কিন্তু তারা যে ঋণখেলাপি এই কথাটি আজ পর্যন্ত শুনিনি, ঋণখেলাপির তালিকায় তাদের নাম থাকলেও তা বহুল কথিত নয়।

খেলাপি ঋণের হার নিয়ে যেভাবে মিডিয়ায় হইচই হচ্ছে তা অতিরিক্ত ও অতিরঞ্জিত। ত্রিশ বছর আগেও রাষ্ট্রয়াত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের হার ছিল ৩৩ শতাংশের বেশি, এখন সম্ভবত ১১ শতাংশের কাছাকাছি; অবশ্য এখন খেলাপি ঋণের হিসাবায়ন ভিন্নতর। তারপরও এই গ্রুপের বিনাশ কারও কাম্য হতে পারে না। বর্তমানে এস আলমের ছয়টি ব্যাংকে ২৬ হাজার কোটি টাকা জমা আছে বলে জানা যায়, অন্য ব্যাংকেও থাকতে পারে। এই গ্রুপের সম্পদ কত তার হিসাব সম্ভবত এখনো বের করা হয়নি; তবে এক লাখ কোটি টাকার কম হবে বলে মনে হয় না। কর্পোরেট ব্যবসায়ীরা বেনামে ঋণ নিতে অভ্যস্ত, পরিদর্শনে ধরা পড়লে অতীতে গোপনে নিয়মিত করে জরিমানাসহ তা আদায়ের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক যেভাবে হইচই করছে তা অতীতে কখনো দেখা যায়নি। গোপন রাখা আর হইচই করার মধ্যে কোনটি সঠিক তা বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারণ করুক। মনে রাখতে হবে, রাজনৈতিক বক্তব্য দিয়ে এস আলম গ্রুপে কর্মরত এক লাখ আশি হাজার শ্রমিক-কর্মচারীকে কর্মহীন করে দেয়া দেশের জন্য সুবিবেচনার পরিচায়ক হবে না।

কয়েকটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শুধু ব্যাংকের মালিকদের টাকার চাহিদা পূরণের জন্য, কথাটি আমার নয়, বর্তমান অর্থ উপদেষ্টার। এই ব্যাংকগুলো তাদের মালিকদের ঋণের চাহিদা মেটাতে গিয়ে কোন নিয়মনীতি মানেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকও তাতে সায় দিয়েছে, সায় না দিলে এত অনিয়ম হতে পারে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের অফসাইট, অনসাইট তদারকির বেড়াজাল ভেদ করে কী করে এত অনিয়ম হলো তা বের করার জন্য একটি কমিশন হওয়া দরকার। অবশ্য নিজের ব্যাংক থেকে মালিকদের অতিরিক্ত ঋণ গ্রহণে প্রতিবন্ধকতা তৈরির ক্ষেত্রে সব সরকারের আমলে আইনের পর আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, কিন্তু তাদের নিয়মবহির্ভূত ঋণ গ্রহণ বন্ধ হয়নি; বরং কঠোর আইনকানুন ব্যাংকের মালিক ও ব্যাংক ব্যবস্থাপকদের দুর্নীতির আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছে। বর্তমানে করপোরেট হাউজগুলোর হাতে মিডিয়া, সরকার পরিবর্তন হলে শুধু পত্রিকার সম্পাদক পরিবর্তন হয়, মিডিয়ার সুর পরিবর্তন হয়, কিন্তু মালিকের কর্মকা-ের পরিবর্তন হয় না। নিজস্ব মিডিয়ার আচ্ছাদন ভেদ করে ব্যাংক মালিকদের অপকর্ম থেকে নিবৃত্ত করতে হলে নিয়মনীতির ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের দৃঢ় অবস্থান অপরিহার্য।

দুর্বল ব্যাংকগুলোর সংকট কাটিয়ে তোলার নিমিত্তে আওয়ামী লীগ আমলে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক ‘প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন ফ্রেমওয়ার্ক’ শিরোনামে একটি সার্কুলার ইস্যু করে; এই সার্কুলারের ভাষ্য অনুযায়ী ব্যাংকগুলো উক্ত ফ্রেমওয়ার্ক বাস্তবায়নপূর্বক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে ব্যর্থ হলে ২০২৫ সাল থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক একীভূত করার মতো পদক্ষেপ নিতে পারবে। পতনোম্মুখ ব্যাংককে উদ্ধার করার এই নীতি বাস্তবায়নের কথা বর্তমান গভর্নরও বলছেন। আমাদের দেশে দুর্বল ব্যাংকগুলো স্বেচ্ছায় মার্জ হবে না, মার্জ হলে মালিকদের ক্ষমতা হারানোর ভয় রয়েছে; তাই ব্যাংকের মালিকরা তাদের ব্যাংকগুলোকে দেউলিয়া করতে রাজি থাকলেও মার্জ করতে রাজি হবে না। ব্যাংক নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া আর মিডিয়ায় বিভ্রান্তিমূলক তথ্য পরিবেশন করা এক কথা নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু থাকলে তা নিরুদ্বিগ্ন চিত্তে উপশম করাই শ্রেয়। সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত সাইফুর রহমানও রাষ্ট্রয়াত্ত ব্যাংকগুলোর সংকটকালীন মূলধনের জোগান দিয়েছেন। দেউলিয়া থেকে রক্ষা করার লক্ষ্যে আমেরিকাও তাদের ব্যাংকগুলোকে এক সময় অর্থায়ন করেছে। সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশয়ের কথা জনগণকে জানিয়ে পতনোন্মুখ ব্যাংকগুলোর পতন নিশ্চিত করা সুবিবেচনাপ্রসূত বলে মনে হয় না।

[ লেখক : বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ]

back to top