alt

উপ-সম্পাদকীয়

বগুড়ার তাঁতপল্লী

রাকিবুল ইসলাম

: বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪

তাঁতশিল্পের ইতিহাসে বগুড়ার শাওইল বাজার দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। উত্তরবঙ্গের এই তাঁতীগোষ্ঠী আজও ধরে রেখেছে তাদের ঐতিহ্যবাহী তাঁত সংস্কৃতি। বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার নশরৎপুর ইউনিয়নের ছোট্ট একটি গ্রাম শাওইল, যেখানে কয়েক দশক ধরে তাঁতী শ্রেণীর মানুষের বসবাস। এই গ্রামের তাঁত শিল্পের বিকাশ ঘটেছে কয়েক প্রজন্ম ধরে, যা এক বিশাল তাঁতপল্লীতে পরিণত হয়েছে।

ঢাকা, গাজীপুর, সাভার এবং নারায়ণগঞ্জের পোশাক কারখানাগুলো থেকে আসা বাতিলকৃত ঝুট কাপড় শাওইল বাজারে এনে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। কাপড় থেকে হস্তচালিত যন্ত্রে সুতা কেটে ওয়েল্ডিং, ববিন করা এবং এরপর সুতা রং করা হয়। প্রক্রিয়াজাতকৃত এই সুতা কিনতে রাজধানী ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, রংপুর, নরসিংদী, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, জয়পুরহাট, বান্দরবান, খাগড়াছড়িসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন।

শাওইলের স্থানীয় তাঁতীরা বাজার থেকে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সুতা সংগ্রহ করে। সুতাগুলো দিয়ে তাঁতীরা বড় চাদর, কম্বল, লুঙ্গি, গামছা, তোয়ালেসহ বিভিন্ন ধরনের শীতবস্ত্র তৈরি করেন। প্রতিটি পরিবারের সদস্যরা এ কাজে জড়িত, যার ফলে তারা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করে সংসারের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনছেন।

তাঁতের খটখট শব্দ আর সুতার বুননে মিশে আছে শাওইলের মানুষের স্বপ্ন। অনেকের নিজস্ব তাঁত রয়েছে, আবার কেউ অন্যের তাঁতে কাজ করছেন। প্রতিটি বাড়িতে ১ থেকে ৫টি তাঁত রয়েছে, যেগুলোর কোনোটি বৈদ্যুতিক, আবার কোনোটি সম্পূর্ণ হাতে তৈরি বাঁশ-কাঠের তাঁত।

উন্নতমানের চাদর তৈরি হওয়ায় এই চাদর দেশের গ-ি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। শাওইলের তাঁত শিল্প প্রচারবিহীন এবং সরকারি-বেসরকারি সহায়তা ছাড়াই গড়ে উঠেছে। চাদর তৈরির পাশাপাশি এখানে শীতবস্ত্র তৈরির মেশিন, সুতা, রং, তাঁত যন্ত্রপাতি ও লাটাইয়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

শাওইল হাটের সূচনা হয়েছিল মাত্র পাঁচটি দোকান নিয়ে কিন্তু বর্তমানে সেখানে প্রায় আড়াই হাজার দোকান রয়েছে। অনেকেই বংশ পরম্পরায়, আবার কেউ নতুন করে ব্যবসা শুরু করছেন।

শাওইল ছাড়াও দত্তবাড়িয়া, কোমারপুর, মঙ্গলপুর, বিনাহালীসহ আশপাশের শতাধিক গ্রামের চিত্র একইরকম। আশপাশের প্রায় ৮ হাজার তাঁতী পরিবার এবং লক্ষাধিক মানুষ তাঁত শিল্পের ওপর নির্ভরশীল।

শাওইল বাজারে ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক সুতা বাছাই, ফেটি তৈরি এবং সুতা সাজানোর কাজ করছেন। পুরুষ শ্রমিকরা দৈনিক ৩০০ টাকা এবং মহিলা শ্রমিকরা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা মজুরি পান।

শাওইল বাজারে প্রতি শীতকালে ২০ লাখ কম্বল, এক কোটি চাদর, ৫০ লাখ গামছা ও তোয়ালে তৈরি হয়। পাইকারিতে চাদর ১০০ থেকে ১০০০ টাকা, কম্বল ১০০ থেকে ৩০০ টাকা এবং গামছা ৫০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়।

বাজারটি দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখলেও এখানকার ব্যবসায়ীরা সরকারি সাহায্য থেকে বঞ্চিত। এখানে সরকারি কোনো ব্যাংক নেই এবং বেসরকারি ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংও পর্যাপ্ত নয়। তাছাড়া বাজারে পুলিশ বক্স বা ছাউনি না থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

সরকারের উচিত শাওইল বাজারের উন্নয়নে উদ্যোগ নেয়া, তাঁত শিল্প রক্ষায় প্রকল্প চালু করা এবং এখানে তৈরি চাদর সরকারিভাবে বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা করা।

[লেখক : সংস্কৃতিকর্মী]

দক্ষ মানবসম্পদ ও সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার

আফ্রিকায় হঠাৎ কেন যুক্তরাষ্ট্রের ঝোঁক?

ঢাকা মহানগর ও বুড়িগঙ্গা

জামাই মেলা : উৎসব, ঐতিহ্য ও কৃষ্টির রঙিন চিত্রপট

হারিয়ে যাওয়া ক্লাস, কঠোর মূল্যায়ন আর প্রশ্নের জটিলতায় নুয়ে পড়া এক প্রজন্ম

বৈষম্য দূর করে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলুন

চিকিৎসা যেন বাণিজ্যের হাতিয়ারে পরিণত না হয়

পথশিশু ও বাংলাদেশে সামাজিক চুক্তির ব্যর্থতা

মেগা প্রকল্প : প্রশ্ন হওয়া উচিত স্বচ্ছতা নিয়ে

আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি

স্মার্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা : উপগ্রহ চিত্র ও ওয়েবসাইটের অপরিহার্যতা

ক্ষমতা ও জনপ্রশাসন : আমলাতন্ত্রের ছায়াতলে আমজনতা

জনসংখ্যা : সম্পদ না সংকট?

ব্রিকসে নতুন ভূ-রাজনৈতিক ব্যবস্থার উত্থান

রম্যগদ্য : ‘ল্যাংড়া-লুলা, আতুড়-পাতুড়’

আষাঢ়ী পূর্ণিমা : আত্মশুদ্ধির সাধনায় বুদ্ধের অনন্ত আলো

বদলে যাওয়া মাটিতে সাহসী বীজ : জলবায়ুর বিপরীতে বাংলাদেশের কৃষির অভিযোজনগাথা

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থান-গাথা : ‘শিকলে নাহি দিব ধরা’

প্রাচীন যৌধেয় জাতি ও তাদের সাম্যবাদী শাসন

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন

টেকসই উন্নয়নের স্বপ্নপূরণে উপগ্রহ চিত্রই চাবিকাঠি

রাবার শিল্প : সংকট, করণীয় ও উত্তরণের দিশা

রম্যগদ্য : দুধ, দই, কলা...

ছবি

কোপার্নিকাস : আলো হয়ে জন্ম নেওয়া বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবর্তক

জলবায়ু সংকটে মানবসভ্যতা

টেকসই অর্থনীতির জন্য চাই টেকসই ব্যাংকিং

ডিজিটাল দাসত্ব : মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : আস্থা ভঙ্গ ও জবাবদিহিতার সংকট

আসামি এখন নির্বাচন কমিশন

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

tab

উপ-সম্পাদকীয়

বগুড়ার তাঁতপল্লী

রাকিবুল ইসলাম

বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪

তাঁতশিল্পের ইতিহাসে বগুড়ার শাওইল বাজার দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। উত্তরবঙ্গের এই তাঁতীগোষ্ঠী আজও ধরে রেখেছে তাদের ঐতিহ্যবাহী তাঁত সংস্কৃতি। বগুড়া জেলার আদমদীঘি উপজেলার নশরৎপুর ইউনিয়নের ছোট্ট একটি গ্রাম শাওইল, যেখানে কয়েক দশক ধরে তাঁতী শ্রেণীর মানুষের বসবাস। এই গ্রামের তাঁত শিল্পের বিকাশ ঘটেছে কয়েক প্রজন্ম ধরে, যা এক বিশাল তাঁতপল্লীতে পরিণত হয়েছে।

ঢাকা, গাজীপুর, সাভার এবং নারায়ণগঞ্জের পোশাক কারখানাগুলো থেকে আসা বাতিলকৃত ঝুট কাপড় শাওইল বাজারে এনে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। কাপড় থেকে হস্তচালিত যন্ত্রে সুতা কেটে ওয়েল্ডিং, ববিন করা এবং এরপর সুতা রং করা হয়। প্রক্রিয়াজাতকৃত এই সুতা কিনতে রাজধানী ঢাকাসহ চট্টগ্রাম, রংপুর, নরসিংদী, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, জয়পুরহাট, বান্দরবান, খাগড়াছড়িসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন।

শাওইলের স্থানীয় তাঁতীরা বাজার থেকে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী সুতা সংগ্রহ করে। সুতাগুলো দিয়ে তাঁতীরা বড় চাদর, কম্বল, লুঙ্গি, গামছা, তোয়ালেসহ বিভিন্ন ধরনের শীতবস্ত্র তৈরি করেন। প্রতিটি পরিবারের সদস্যরা এ কাজে জড়িত, যার ফলে তারা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করে সংসারের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনছেন।

তাঁতের খটখট শব্দ আর সুতার বুননে মিশে আছে শাওইলের মানুষের স্বপ্ন। অনেকের নিজস্ব তাঁত রয়েছে, আবার কেউ অন্যের তাঁতে কাজ করছেন। প্রতিটি বাড়িতে ১ থেকে ৫টি তাঁত রয়েছে, যেগুলোর কোনোটি বৈদ্যুতিক, আবার কোনোটি সম্পূর্ণ হাতে তৈরি বাঁশ-কাঠের তাঁত।

উন্নতমানের চাদর তৈরি হওয়ায় এই চাদর দেশের গ-ি পেরিয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। শাওইলের তাঁত শিল্প প্রচারবিহীন এবং সরকারি-বেসরকারি সহায়তা ছাড়াই গড়ে উঠেছে। চাদর তৈরির পাশাপাশি এখানে শীতবস্ত্র তৈরির মেশিন, সুতা, রং, তাঁত যন্ত্রপাতি ও লাটাইয়ের ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

শাওইল হাটের সূচনা হয়েছিল মাত্র পাঁচটি দোকান নিয়ে কিন্তু বর্তমানে সেখানে প্রায় আড়াই হাজার দোকান রয়েছে। অনেকেই বংশ পরম্পরায়, আবার কেউ নতুন করে ব্যবসা শুরু করছেন।

শাওইল ছাড়াও দত্তবাড়িয়া, কোমারপুর, মঙ্গলপুর, বিনাহালীসহ আশপাশের শতাধিক গ্রামের চিত্র একইরকম। আশপাশের প্রায় ৮ হাজার তাঁতী পরিবার এবং লক্ষাধিক মানুষ তাঁত শিল্পের ওপর নির্ভরশীল।

শাওইল বাজারে ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক সুতা বাছাই, ফেটি তৈরি এবং সুতা সাজানোর কাজ করছেন। পুরুষ শ্রমিকরা দৈনিক ৩০০ টাকা এবং মহিলা শ্রমিকরা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা মজুরি পান।

শাওইল বাজারে প্রতি শীতকালে ২০ লাখ কম্বল, এক কোটি চাদর, ৫০ লাখ গামছা ও তোয়ালে তৈরি হয়। পাইকারিতে চাদর ১০০ থেকে ১০০০ টাকা, কম্বল ১০০ থেকে ৩০০ টাকা এবং গামছা ৫০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়।

বাজারটি দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখলেও এখানকার ব্যবসায়ীরা সরকারি সাহায্য থেকে বঞ্চিত। এখানে সরকারি কোনো ব্যাংক নেই এবং বেসরকারি ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংও পর্যাপ্ত নয়। তাছাড়া বাজারে পুলিশ বক্স বা ছাউনি না থাকায় ক্রেতা-বিক্রেতারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।

সরকারের উচিত শাওইল বাজারের উন্নয়নে উদ্যোগ নেয়া, তাঁত শিল্প রক্ষায় প্রকল্প চালু করা এবং এখানে তৈরি চাদর সরকারিভাবে বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা করা।

[লেখক : সংস্কৃতিকর্মী]

back to top