শেখর ভট্টাচার্য
দুর্গাপূজা বাঙালি হিন্দুদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন এই সর্বজনীন উদ্দেশ্যকে সফল করার লক্ষ্যে এই পূজা উদযাপন করা করা হয়ে থাকে। একটি কথা ভেবে আমরা যুগপৎ আনন্দ ও গর্ব অনুভব করতে পারি যে দুর্গাপূজার সূচনা ঘটেছিল আজকের স্বাধীন বাংলাদেশের ভৌগোলিক অঞ্চলে। দুর্গাপূজা আজ সারাবিশ্বের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে প্রাণময় এবং একই সঙ্গে ভক্তি-ভরে উদযাপিত পূজা হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশে সূচিত দুর্গাপূজাই ইউনেস্কোর শিল্প ও ঐতিহ্যবাহী উৎসবের তালিকাভুক্ত হয়েছে। যদিও কলকাতার দুর্গাপূজাকে ইউনেস্কো ঐতিহ্যবাহী উৎসবের তালিকাভুক্ত করেছে, তবে এ কথা মনে রাখা উচিত শারদীয় দুর্গাপূজার প্রচলন হয়েছিল এই সুবর্ণভূমিতেই। কলকাতার দুর্গাপূজা বিশ্বজনীন হলে সারা পৃথিবীর দুর্গাপূজাই বিশ্বজনীন হয়ে পড়ে। মা দুর্গা সারাবিশ্বের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে সমান ভক্তি সহকারে পূজিত হন। বিশ্বের বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে দুর্গাপূজার উৎসব, আনন্দ, পূজার প্রক্রিয়ার মধ্যে কোন ভিন্নতা নেই।
এ কথা আমরা সবাই জানি বাল্মীকি রচিত রামায়ণে দুর্গাপূজার কাহিনীর উল্লেখ ছিল না। বাঙালির হাতে যখন রামায়ণ অণূদিত হলো তখন থেকেই দেবী হিসেবে দুর্গার মাহাত্ম্য বাংলাভাষী হিন্দুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শক্তিশালী কবি কৃত্তিবাস ওঝা যখন রামায়ণ বাংলায় অনুবাদ করেন, তখন লোকায়ত গল্পে যেখানে দুর্গার কাহিনী প্রচলিত ছিল, সে মহৎ কাহিনীটি রামায়ণে অন্তর্ভুক্ত করেন।
কৃত্তিবাসী রামায়ণের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, এটি মূল রামায়ণের আক্ষরিক অনুবাদ নয়। কৃত্তিবাস ওঝা সংস্কৃত রামায়ণ বাংলা করার সময় মূল রামায়ণের বাইরের তৎকালীন সমাজে প্রচলিত বাংলার সামাজিক রীতিনীতি ও লৌকিক জীবনের নানা অনুষঙ্গ, মিথ, ইত্যাদিকে অন্তর্ভুক্ত করে মহান গ্রন্থটিকে আরও সমৃদ্ধ করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেন। অন্যভাবে বলা যেতে পারে, তিনি সংস্কৃত রামায়ণ উপাখ্যানকে এমনভাবে বাঙালিকরণ করেন, যা পড়ে মানুষের মনে ভাবনা আসে, রামায়ণের ঘটনাগুলো তৎকালীন সমাজের আয়নায় অঙ্কন করা হয়েছে।
মা দুর্গাকে বাঙালি হিন্দুদের প্রধানতম দেবী হিসেবে অর্চনা করার জন্য কৃত্তিবাসী রামায়ণের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। একটি কথা সরলীকরণ করে বলা যায় বিশ্বব্যাপী দুর্গাপূজা যে দুর্গোৎসবে পরিণত হয়েছে তার পেছনেও মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য এবং লেখক কৃত্তিবাস ওঝার অবদান অসীম। হিন্দু পুরাণ অথবা লোককাহিনীর মা দুর্গাকে একান্ত বাঙালির ঘরের দেবী হিসেবে মর্ত্যে আবির্ভূত করতে মূল উদ্দীপনা হিসেবে কাজ করেছে কৃত্তিবাসী রামায়ণ। পরবর্তী আলোচনায় আমরা দেখতে পাব দুর্গাপূজাকে সর্বজনীন করে তুলতে আজকের বাংলাদেশের ভৌগোলিক অঞ্চলের মানুষরাই সর্বাগ্রে এবং সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেন।
বাংলার মাটি, বাংলার মানুষের উদ্যোগ, আন্তরিকতা, ভক্তি ভালোবাসাতেই দুর্গাপূজা সর্বজনীন ও প্রাণবন্ত একটি উৎসব হিসেবে বিশ্বের সব বাঙালির কাছে গৃহিত হয়েছে। বাংলার মানুষের অন্তর থেকে উঠে আসা এই উৎসব তাই বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব হিসেবে বাঙালি সমাজে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। তবে এ কথা উল্লেখ করা উচিত প্রধান ধর্মীয় উৎসব হয়ে উঠতে দুর্গাপূজার সময় লেগেছে কয়েকশ বছর। মূলত ব্রিটিশ শাসনের সময় হিন্দু এলিট ও জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে দুর্গাপূজা।
পশ্চিমবঙ্গ তথা কলকাতাতে দুর্গাপূজা নিয়ে যতই হৈ হট্টগোল হোক না কেন, দুর্গাপূজার কিন্তু সূচনা হয়েছিল বর্তমান বাংলাদেশে। সাহিত্যিক রাধারমণ রায়ের কাছ থেকে আমরা জানতে পারি, আকবরের রাজত্বকালেই ১৫৮০ সাল নাগাদ তাহেরপুরের রাজা কংসনারায়ণ বাংলাদেশে শারদীয়া দুর্গাপূজার সূচনা করেন। তা হলে কংসনারায়ণের পূর্বে শারদীয়া দুর্গাপূজার অস্তিত্ব কি ছিল না? রাধারমণ রায়ের মতে, আগে এ দেশে বসন্তকালে হতো দুর্গাপূজা আর শরৎকালে হতো নবপত্রিকা পূজা; যার স্থান আজ গণেশের পাশে। নবপত্রিকাই কালক্রমে চার পুত্র-কন্যাসহ দেবী দুর্গার মৃন্ময়ী মূর্তিতে রূপান্তরিত। যেহেতু আকবরের রাজত্বকালেই কংসনারায়ণ মূর্তি গড়ে শারদীয়া দুর্গাপূজার সূচনা করেছিলেন, তাই অনুমান করা চলে এর আগে ভাদুরিয়ার রাজা জগৎনারায়ণ জাঁকজমকপূর্ণ যে বাসন্তীপূজা করতেন সে পূজাটি সাধারণ মানুষের কাছে উৎসব হিসেবে সর্বজনীনভাবে গৃহীত হয়নি।
বাসন্তীপূজা উৎসব হিসেবে গৃহিত না হওয়ার আর একটি কারণ আছে, তা হলো নিজেদের জৌলুস এবং প্রভাব বৃদ্ধির জন্য জমিদাররা নিষ্ঠুরতার সঙ্গে প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা সংগ্রহ করে বাসন্তীপূজার আয়োজন করতেন। এ কথার অর্থ এই নয় যে মা দুর্গা, মা বাসন্তীর থেকে বড় বা ছোট দেবী। সনাতন ধর্ম অনুসারীদের কাছে দুর্গা এবং বাসন্তীÑ দুজনই পূজ্য তবে কালের বিবর্তনে উৎসব হিসেবে দুর্গাপূজা নানা কারণে শ্রেণী, বর্ণনির্বিশেষে সকলের কাছে গৃহীত হয়ে পড়েছে।
বাঙালি হিন্দুরা যেখানেই বসতি স্থাপন করেছে সেখানেই দুর্গাপূজা সামর্থ অনুযায়ী জাঁকজমকের সঙ্গে উদযাপিত হচ্ছে। প্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্বের সব স্থানে অনুষ্ঠিত পূজা আজ ভার্চুয়ালি সব মানুষই উপভোগ করতে পারেন। বাঙালি হিন্দুরা অন্যায়-অবিচার, অসত্য থেকে দূরে থাকার জন্য মনের ও জগতের অসুর যাতে বিনাশ লাভ করে, এই উদ্দেশ্যে নানারকম প্রার্থনা করে দুর্গাপূজার আয়োজন করে থাকেন।
নির্যাতিত, নিপীড়িত ও অত্যাচারিত জীবের দুর্গতি হরণ করার জন্য দেবী দুর্গার আবির্ভাব হয়। দেবতাদের সম্মিলিত তপস্যা ও জ্যোতি থেকে সৃষ্ট আদ্যাশক্তি মহামায়া দুর্গা নাম ধারণ করে মর্ত্যলোকে আগমন করেন মা দুর্গা। তান্ত্রিক সাধকরা দেবী দুর্গাকে মাতৃজাতির প্রতীক করুণাময়ী বলে দেবী দুর্গাকে নারীমূর্তিতে কল্পনা করেছেন। বাংলা ও বাঙালির একান্ত এ উৎসব থেকে সৃষ্টি হওয়া সংহতি, ভালোবাসা, মানবিক বোধকে ছড়িয়ে দিতে হবে সব মানুষের মধ্যে। উৎসবের আনন্দের সঙ্গে বিশ্বের সব মানুষকে ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে পারলে দুর্গাপূজার মূল উদ্দেশ্য সফল হয়ে উঠবে বলে ধর্মপ্রাণ মানুষ মনে করে থাকেন।
[লেখক : প্রাবন্ধিক ও উন্নয়ন গবেষক]
শেখর ভট্টাচার্য
শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪
দুর্গাপূজা বাঙালি হিন্দুদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন এই সর্বজনীন উদ্দেশ্যকে সফল করার লক্ষ্যে এই পূজা উদযাপন করা করা হয়ে থাকে। একটি কথা ভেবে আমরা যুগপৎ আনন্দ ও গর্ব অনুভব করতে পারি যে দুর্গাপূজার সূচনা ঘটেছিল আজকের স্বাধীন বাংলাদেশের ভৌগোলিক অঞ্চলে। দুর্গাপূজা আজ সারাবিশ্বের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে প্রাণময় এবং একই সঙ্গে ভক্তি-ভরে উদযাপিত পূজা হয়ে উঠেছে।
বাংলাদেশে সূচিত দুর্গাপূজাই ইউনেস্কোর শিল্প ও ঐতিহ্যবাহী উৎসবের তালিকাভুক্ত হয়েছে। যদিও কলকাতার দুর্গাপূজাকে ইউনেস্কো ঐতিহ্যবাহী উৎসবের তালিকাভুক্ত করেছে, তবে এ কথা মনে রাখা উচিত শারদীয় দুর্গাপূজার প্রচলন হয়েছিল এই সুবর্ণভূমিতেই। কলকাতার দুর্গাপূজা বিশ্বজনীন হলে সারা পৃথিবীর দুর্গাপূজাই বিশ্বজনীন হয়ে পড়ে। মা দুর্গা সারাবিশ্বের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে সমান ভক্তি সহকারে পূজিত হন। বিশ্বের বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে দুর্গাপূজার উৎসব, আনন্দ, পূজার প্রক্রিয়ার মধ্যে কোন ভিন্নতা নেই।
এ কথা আমরা সবাই জানি বাল্মীকি রচিত রামায়ণে দুর্গাপূজার কাহিনীর উল্লেখ ছিল না। বাঙালির হাতে যখন রামায়ণ অণূদিত হলো তখন থেকেই দেবী হিসেবে দুর্গার মাহাত্ম্য বাংলাভাষী হিন্দুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শক্তিশালী কবি কৃত্তিবাস ওঝা যখন রামায়ণ বাংলায় অনুবাদ করেন, তখন লোকায়ত গল্পে যেখানে দুর্গার কাহিনী প্রচলিত ছিল, সে মহৎ কাহিনীটি রামায়ণে অন্তর্ভুক্ত করেন।
কৃত্তিবাসী রামায়ণের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, এটি মূল রামায়ণের আক্ষরিক অনুবাদ নয়। কৃত্তিবাস ওঝা সংস্কৃত রামায়ণ বাংলা করার সময় মূল রামায়ণের বাইরের তৎকালীন সমাজে প্রচলিত বাংলার সামাজিক রীতিনীতি ও লৌকিক জীবনের নানা অনুষঙ্গ, মিথ, ইত্যাদিকে অন্তর্ভুক্ত করে মহান গ্রন্থটিকে আরও সমৃদ্ধ করার প্রচেষ্টা গ্রহণ করেন। অন্যভাবে বলা যেতে পারে, তিনি সংস্কৃত রামায়ণ উপাখ্যানকে এমনভাবে বাঙালিকরণ করেন, যা পড়ে মানুষের মনে ভাবনা আসে, রামায়ণের ঘটনাগুলো তৎকালীন সমাজের আয়নায় অঙ্কন করা হয়েছে।
মা দুর্গাকে বাঙালি হিন্দুদের প্রধানতম দেবী হিসেবে অর্চনা করার জন্য কৃত্তিবাসী রামায়ণের একটি বড় ভূমিকা রয়েছে। একটি কথা সরলীকরণ করে বলা যায় বিশ্বব্যাপী দুর্গাপূজা যে দুর্গোৎসবে পরিণত হয়েছে তার পেছনেও মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য এবং লেখক কৃত্তিবাস ওঝার অবদান অসীম। হিন্দু পুরাণ অথবা লোককাহিনীর মা দুর্গাকে একান্ত বাঙালির ঘরের দেবী হিসেবে মর্ত্যে আবির্ভূত করতে মূল উদ্দীপনা হিসেবে কাজ করেছে কৃত্তিবাসী রামায়ণ। পরবর্তী আলোচনায় আমরা দেখতে পাব দুর্গাপূজাকে সর্বজনীন করে তুলতে আজকের বাংলাদেশের ভৌগোলিক অঞ্চলের মানুষরাই সর্বাগ্রে এবং সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করেন।
বাংলার মাটি, বাংলার মানুষের উদ্যোগ, আন্তরিকতা, ভক্তি ভালোবাসাতেই দুর্গাপূজা সর্বজনীন ও প্রাণবন্ত একটি উৎসব হিসেবে বিশ্বের সব বাঙালির কাছে গৃহিত হয়েছে। বাংলার মানুষের অন্তর থেকে উঠে আসা এই উৎসব তাই বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব হিসেবে বাঙালি সমাজে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। তবে এ কথা উল্লেখ করা উচিত প্রধান ধর্মীয় উৎসব হয়ে উঠতে দুর্গাপূজার সময় লেগেছে কয়েকশ বছর। মূলত ব্রিটিশ শাসনের সময় হিন্দু এলিট ও জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে দুর্গাপূজা।
পশ্চিমবঙ্গ তথা কলকাতাতে দুর্গাপূজা নিয়ে যতই হৈ হট্টগোল হোক না কেন, দুর্গাপূজার কিন্তু সূচনা হয়েছিল বর্তমান বাংলাদেশে। সাহিত্যিক রাধারমণ রায়ের কাছ থেকে আমরা জানতে পারি, আকবরের রাজত্বকালেই ১৫৮০ সাল নাগাদ তাহেরপুরের রাজা কংসনারায়ণ বাংলাদেশে শারদীয়া দুর্গাপূজার সূচনা করেন। তা হলে কংসনারায়ণের পূর্বে শারদীয়া দুর্গাপূজার অস্তিত্ব কি ছিল না? রাধারমণ রায়ের মতে, আগে এ দেশে বসন্তকালে হতো দুর্গাপূজা আর শরৎকালে হতো নবপত্রিকা পূজা; যার স্থান আজ গণেশের পাশে। নবপত্রিকাই কালক্রমে চার পুত্র-কন্যাসহ দেবী দুর্গার মৃন্ময়ী মূর্তিতে রূপান্তরিত। যেহেতু আকবরের রাজত্বকালেই কংসনারায়ণ মূর্তি গড়ে শারদীয়া দুর্গাপূজার সূচনা করেছিলেন, তাই অনুমান করা চলে এর আগে ভাদুরিয়ার রাজা জগৎনারায়ণ জাঁকজমকপূর্ণ যে বাসন্তীপূজা করতেন সে পূজাটি সাধারণ মানুষের কাছে উৎসব হিসেবে সর্বজনীনভাবে গৃহীত হয়নি।
বাসন্তীপূজা উৎসব হিসেবে গৃহিত না হওয়ার আর একটি কারণ আছে, তা হলো নিজেদের জৌলুস এবং প্রভাব বৃদ্ধির জন্য জমিদাররা নিষ্ঠুরতার সঙ্গে প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা সংগ্রহ করে বাসন্তীপূজার আয়োজন করতেন। এ কথার অর্থ এই নয় যে মা দুর্গা, মা বাসন্তীর থেকে বড় বা ছোট দেবী। সনাতন ধর্ম অনুসারীদের কাছে দুর্গা এবং বাসন্তীÑ দুজনই পূজ্য তবে কালের বিবর্তনে উৎসব হিসেবে দুর্গাপূজা নানা কারণে শ্রেণী, বর্ণনির্বিশেষে সকলের কাছে গৃহীত হয়ে পড়েছে।
বাঙালি হিন্দুরা যেখানেই বসতি স্থাপন করেছে সেখানেই দুর্গাপূজা সামর্থ অনুযায়ী জাঁকজমকের সঙ্গে উদযাপিত হচ্ছে। প্রযুক্তির কল্যাণে বিশ্বের সব স্থানে অনুষ্ঠিত পূজা আজ ভার্চুয়ালি সব মানুষই উপভোগ করতে পারেন। বাঙালি হিন্দুরা অন্যায়-অবিচার, অসত্য থেকে দূরে থাকার জন্য মনের ও জগতের অসুর যাতে বিনাশ লাভ করে, এই উদ্দেশ্যে নানারকম প্রার্থনা করে দুর্গাপূজার আয়োজন করে থাকেন।
নির্যাতিত, নিপীড়িত ও অত্যাচারিত জীবের দুর্গতি হরণ করার জন্য দেবী দুর্গার আবির্ভাব হয়। দেবতাদের সম্মিলিত তপস্যা ও জ্যোতি থেকে সৃষ্ট আদ্যাশক্তি মহামায়া দুর্গা নাম ধারণ করে মর্ত্যলোকে আগমন করেন মা দুর্গা। তান্ত্রিক সাধকরা দেবী দুর্গাকে মাতৃজাতির প্রতীক করুণাময়ী বলে দেবী দুর্গাকে নারীমূর্তিতে কল্পনা করেছেন। বাংলা ও বাঙালির একান্ত এ উৎসব থেকে সৃষ্টি হওয়া সংহতি, ভালোবাসা, মানবিক বোধকে ছড়িয়ে দিতে হবে সব মানুষের মধ্যে। উৎসবের আনন্দের সঙ্গে বিশ্বের সব মানুষকে ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে পারলে দুর্গাপূজার মূল উদ্দেশ্য সফল হয়ে উঠবে বলে ধর্মপ্রাণ মানুষ মনে করে থাকেন।
[লেখক : প্রাবন্ধিক ও উন্নয়ন গবেষক]