alt

উপ-সম্পাদকীয়

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে করণীয়

মো. নূরন নবী

: শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

শিশুরা আগামী প্রজন্মের স্বপ্ন। অনাগত দিনের নতুন ইতিহাস। এরা বড় হবে। এরা ফুলের মতো বিকশিত হবে। জন্ম-মুহূর্ত থেকে প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই পথপ্রান্তে কত শিশু নিঃশব্দে অকালে ঝরে যায়। ওদের জীবনের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য চাই যথার্থ পরিবেশ, চাই স্বহৃদয় মানসিকতা, চাই মাতৃস্নেহের পরিচর্চা। আর এই পরিচর্চার জন্য প্রয়োজন মানসম্মত শিক্ষা আর এই শিক্ষা অর্জনের মৌলিক ভিত্তি তৈরির স্থানগুলো হলো প্রাথমিক শিক্ষা। যা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই হতেখড়ি হয়ে থাকে।

প্রাথমিক শিক্ষা যে দেশে যত সুষ্ঠুভাবে দেয়া হয় সে দেশ তত উন্নত। তাই দেশের সঠিক উন্নয়নের জন্য সব শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী অনুপস্থিতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এসব শিক্ষার্থী নিয়মিত বিদ্যালয়ে না আসায় মূল ধারা থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে। এসব শিক্ষার্থীর অধিকাংশ অভিভাবক অসচেতন, আর্থিকভাবে অসচ্ছল এবং শিক্ষার্থীদের শিশুশ্রমের প্রতি আগ্রহী। এসব শিক্ষার্থীর বাড়িতে পড়ালেখার সুষ্ঠু পরিবেশের অভাব। তাছাড়া অনেক অভিভাবকের ধারণা, পড়ালেখা করে গরিব মানুষের সন্তানের চাকরি পাওয়া কঠিন। শিক্ষার গুরুত্ব বা সুদূরপ্রসারী ফল নিয়ে চিন্তা করার শক্তিও এসব অভিভাবকের নেই। এসব শিক্ষার্থীর পাঠ্যবইয়ের সিলেবাস সম্বন্ধে পুরোপুরি ধারণা করতে হলে বাস্তব কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। ক) প্রথমে শ্রেণী শিক্ষক দৈনিক শ্রেণী কার্যক্রম শেষে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রস্তুত করবেন। খ) তার পর সেই শিক্ষক তালিকা অনুযায়ী মোবাইলের মাধ্যমে অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ করে শিক্ষার্থীর পড়ালেখার খোঁজখবর নেবেন এবং শ্রেণী পাঠের কার্যক্রম সম্পর্কে অভিহিত করবেন। গ) প্রতি বৃহস্পতিবার এসব শিক্ষার্থীর পড়ালেখার অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান শিক্ষককে অভিহিত করবেন। ফলে এসব শিক্ষার্থী এক সময় পড়ালেখার প্রতি আগ্রহী হবে এবং বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিত হবে। পরবর্তীতে শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার হার শূন্যের কোটায় চলে আসবে। ঘ) এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের চাহিদা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টার অফিসারের সঙ্গে আলোচনা করে বরাদ্দ ব্যবস্থা করবেন।

আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান : সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে সব শিক্ষার্থীকে অর্থাৎ শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের সদিচ্ছা ও আন্ত রিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সঙ্গে বন্ধুসূলভ আচরণ করবে এবং অভিভাবকদের পড়ালেখার গুরুত্ব অনুধাবন করাতে সচেষ্ট হবেন। এ ক্ষেত্রে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। শিক্ষকের অনুপ্রেরণায় অভিভাবক বাড়িতে শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার পরিবেশ তৈরি করবেন এবং শিক্ষকের পরামর্শ অনুযায়ী শিক্ষার্থী বাড়িতে পড়ালেখা করবে। ফলে শিক্ষার্থীর মাঝে পড়ালেখার আগ্রহ সৃষ্টি হবে, বিদ্যালয়ভীতি দূর হবে এবং নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসবে। ফলে শতভাগ উপস্থিতির দিকে বিদ্যালয় অগ্রসর হবে। আর তখনই মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়ন হবে।

বাস্তবায়নে সুফল : বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী অনুপস্থিতি একটি বিরাট সমস্যা। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে ও অনগ্রসর এলাকায় এ সমস্যা খুব বেশি দেখা যায়। এ সমস্যা সমাধানের জন্য মা সমাবেশ, অভিভাবক সমাবেশ, উঠান বৈঠক ও হোম ভিজিট ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। শিক্ষক সঠিক উপায়ে শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনা করেও তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় যখন শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষক কতজন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত, কেন অনুপস্থিত, কবে উপস্থিত হবে এ বিষয় অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ করে রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করবেন এবং দৈনিক পাঠ সম্পর্কে শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে পরামর্শ দেবেন। এতে

শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হবে, বিদ্যালয়ভীতি দূর হবে, নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসবে, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্কও দৃঢ় হবে এবং মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত হবে।

[ লেখক : উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার, ঝিনাইগাতী, শেরপুর ]

স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার গুরুত্ব

ঢাকার বাতাস বিষাক্ত কেন

চরের কৃষি ও কৃষকের জীবন

নিম্ন আয়ের মানুষ ভালো নাই

সবার আগে নিজেকে পরিবর্তন করা দরকার

পুলিশ কবে পুলিশ হবে

জীবন ফিরে আসুক বাংলার নদীগুলোতে

কান্দন সরেন হত্যা ও ভূমি বিরোধ কি এড়ানো যেত না

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র: রাষ্ট্র বিনির্মাণে সমস্যা কোথায়?

মানবাধিকার দিবস : মানুষের অধিকার নিয়ে কেন এত কথা?

আমলাতান্ত্রিক স্বচ্ছতা : সংস্কারের পথে নাকি পুনরাবৃত্তি?

খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কিছু কথা

ছবি

বেগম রোকেয়া : নারী জাগরণের অগ্রদূত

দুর্নীতির সর্বগ্রাসী বিস্তার বন্ধ করতে হবে

মা তোর বদনখানি মলিন হলে

ব্যবসায়ী নেতৃত্বশূন্য ই-ক্যাব

মূল্যস্ফীতির হিসাব নির্ণয়ে নতুন পদ্ধতির প্রাসঙ্গিকতা

মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারের সফলতা চায়

সবার উপরে মানুষ সত্য

এইচএসসিতে ইংরেজিতে ফল বিপর্যয় কেন, করণীয় কী

ছবি

নিরাপদ এবং সুষম পরিবেশের পরিকল্পনা

ফার্মেসি শিক্ষা ও পেশার সংস্কার প্রয়োজন

মশার কয়েলের প্রভাব : জনস্বাস্থ্যের অদৃশ্য হুমকি

“আইনুন কাইনুন সর্বনেশে...”

কুষ্ঠজনিত প্রতিবন্ধকতার ঝুঁকি ও করণীয়

এই সর্বনাশের দায় কার?

জ্ঞানই শক্তি

বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস : জোর দিতে হবে প্রতিরোধে

ঋণ ব্যবস্থা : তেলা মাথায় ঢালো তেল, ন্যাড়া মাথায় ভাঙো বেল

বিচারকের ওপর হামলা কেন

বৈশ্বিক নিষ্ক্রিয়তার কবলে রোহিঙ্গা ইস্যু

আন্তর্জাতিক দাসপ্রথা বিলোপ দিবস

বৈষম্য ঘোচাতে চাই একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়

রাজনীতির মূল লক্ষ্য জনকল্যাণ

সমস্যার সূতিকাগার

ছবি

বাংলাদেশে আলু চাষে আধুনিক উৎপাদন পদ্ধতি

tab

উপ-সম্পাদকীয়

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে করণীয়

মো. নূরন নবী

শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

শিশুরা আগামী প্রজন্মের স্বপ্ন। অনাগত দিনের নতুন ইতিহাস। এরা বড় হবে। এরা ফুলের মতো বিকশিত হবে। জন্ম-মুহূর্ত থেকে প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই পথপ্রান্তে কত শিশু নিঃশব্দে অকালে ঝরে যায়। ওদের জীবনের সুষ্ঠু বিকাশের জন্য চাই যথার্থ পরিবেশ, চাই স্বহৃদয় মানসিকতা, চাই মাতৃস্নেহের পরিচর্চা। আর এই পরিচর্চার জন্য প্রয়োজন মানসম্মত শিক্ষা আর এই শিক্ষা অর্জনের মৌলিক ভিত্তি তৈরির স্থানগুলো হলো প্রাথমিক শিক্ষা। যা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই হতেখড়ি হয়ে থাকে।

প্রাথমিক শিক্ষা যে দেশে যত সুষ্ঠুভাবে দেয়া হয় সে দেশ তত উন্নত। তাই দেশের সঠিক উন্নয়নের জন্য সব শিশুর প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী অনুপস্থিতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এসব শিক্ষার্থী নিয়মিত বিদ্যালয়ে না আসায় মূল ধারা থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে। এসব শিক্ষার্থীর অধিকাংশ অভিভাবক অসচেতন, আর্থিকভাবে অসচ্ছল এবং শিক্ষার্থীদের শিশুশ্রমের প্রতি আগ্রহী। এসব শিক্ষার্থীর বাড়িতে পড়ালেখার সুষ্ঠু পরিবেশের অভাব। তাছাড়া অনেক অভিভাবকের ধারণা, পড়ালেখা করে গরিব মানুষের সন্তানের চাকরি পাওয়া কঠিন। শিক্ষার গুরুত্ব বা সুদূরপ্রসারী ফল নিয়ে চিন্তা করার শক্তিও এসব অভিভাবকের নেই। এসব শিক্ষার্থীর পাঠ্যবইয়ের সিলেবাস সম্বন্ধে পুরোপুরি ধারণা করতে হলে বাস্তব কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। ক) প্রথমে শ্রেণী শিক্ষক দৈনিক শ্রেণী কার্যক্রম শেষে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রস্তুত করবেন। খ) তার পর সেই শিক্ষক তালিকা অনুযায়ী মোবাইলের মাধ্যমে অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ করে শিক্ষার্থীর পড়ালেখার খোঁজখবর নেবেন এবং শ্রেণী পাঠের কার্যক্রম সম্পর্কে অভিহিত করবেন। গ) প্রতি বৃহস্পতিবার এসব শিক্ষার্থীর পড়ালেখার অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান শিক্ষককে অভিহিত করবেন। ফলে এসব শিক্ষার্থী এক সময় পড়ালেখার প্রতি আগ্রহী হবে এবং বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিত হবে। পরবর্তীতে শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার হার শূন্যের কোটায় চলে আসবে। ঘ) এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য শিক্ষকরা বিদ্যালয়ের চাহিদা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টার অফিসারের সঙ্গে আলোচনা করে বরাদ্দ ব্যবস্থা করবেন।

আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান : সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে সব শিক্ষার্থীকে অর্থাৎ শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষকদের সদিচ্ছা ও আন্ত রিকতা নিয়ে কাজ করতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সঙ্গে বন্ধুসূলভ আচরণ করবে এবং অভিভাবকদের পড়ালেখার গুরুত্ব অনুধাবন করাতে সচেষ্ট হবেন। এ ক্ষেত্রে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। শিক্ষকের অনুপ্রেরণায় অভিভাবক বাড়িতে শিক্ষার্থীর লেখাপড়ার পরিবেশ তৈরি করবেন এবং শিক্ষকের পরামর্শ অনুযায়ী শিক্ষার্থী বাড়িতে পড়ালেখা করবে। ফলে শিক্ষার্থীর মাঝে পড়ালেখার আগ্রহ সৃষ্টি হবে, বিদ্যালয়ভীতি দূর হবে এবং নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসবে। ফলে শতভাগ উপস্থিতির দিকে বিদ্যালয় অগ্রসর হবে। আর তখনই মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়ন হবে।

বাস্তবায়নে সুফল : বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী অনুপস্থিতি একটি বিরাট সমস্যা। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে ও অনগ্রসর এলাকায় এ সমস্যা খুব বেশি দেখা যায়। এ সমস্যা সমাধানের জন্য মা সমাবেশ, অভিভাবক সমাবেশ, উঠান বৈঠক ও হোম ভিজিট ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। শিক্ষক সঠিক উপায়ে শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনা করেও তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় যখন শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষক কতজন শিক্ষার্থী অনুপস্থিত, কেন অনুপস্থিত, কবে উপস্থিত হবে এ বিষয় অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ করে রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করবেন এবং দৈনিক পাঠ সম্পর্কে শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে পরামর্শ দেবেন। এতে

শিক্ষার্থীদের মধ্যে পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হবে, বিদ্যালয়ভীতি দূর হবে, নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসবে, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্কও দৃঢ় হবে এবং মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত হবে।

[ লেখক : উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার, ঝিনাইগাতী, শেরপুর ]

back to top