alt

উপ-সম্পাদকীয়

একাকিত্ব : নিজেকে আবিষ্কার ও সৃজনশীলতা বিকাশের পথ

মিজানুর রহমান

: মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের জীবনে এক নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিনিয়ত আমাদের মোবাইল ফোনে বিভিন্ন নোটিফিকেশন আসছে, যা আমাদের মনোযোগ বারবার বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। এই যোগাযোগ মাধ্যমগুলো আমাদের মনকে স্থির থাকতে দেয় না, বরং ক্রমাগত দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ এবং তুলনার দিকে ঠেলে দেয়। প্রতিনিয়ত অন্যের সাফল্য দেখে নিজেকে তুচ্ছ মনে করা, অপরের জীবনের সঙ্গে নিজের জীবনকে তুলনা করা, এই সবকিছুই আমাদের মানসিক স্থিতি নষ্ট করে দেয়।

একাকিত্বের মধ্যে প্রবেশ করার মাধ্যমে আমরা নিজেদের এই সবকিছুর থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যেতে পারি। নিজেকে সময় দেয়া, নিজের চিন্তাগুলোকে একাগ্রভাবে পর্যবেক্ষণ করা, এবং প্রযুক্তির অবিরাম খপ্পর থেকে মুক্ত হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। এই সময়ে আমরা নিজেদের মূল্যবান চিন্তাগুলোকে আরও স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি এবং আত্মশুদ্ধির পথে অগ্রসর হতে পারি।

একাকিত্ব মানে একা থাকা নয়; এটি একটি মানসিক অবস্থা, যেখানে মানুষ নিজের মধ্যে শান্তি খুঁজে পায়। একাকিত্বের মাধ্যমে আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের চাপে চাপা পড়া চিন্তা, ধারণা ও আবেগগুলোকে বোঝার সুযোগ পাই। অন্যের উপস্থিতিতে আমরা আমাদের চিন্তাগুলোকে সম্পূর্ণভাবে প্রক্রিয়াকরণ করতে পারি না। কিন্তু যখন আমরা একা থাকি, তখন আমরা আমাদের চিন্তাগুলোকে বিশ্লেষণ করতে পারি এবং আত্মশুদ্ধির পথে অগ্রসর হতে পারি।

মানুষের সৃজনশীলতা সবচেয়ে ভালোভাবে বিকশিত হয় একাকিত্বে। যখন আমাদের চারপাশে কোনো ব্যাঘাতকারী উপস্থিত থাকে না, তখন আমাদের মনকে সৃজনশীল হতে সময় দেয়। প্রযুক্তির আধিক্য এবং সামাজিক মাধ্যমের অবিরাম নোটিফিকেশন আমাদের মনকে বিভ্রান্ত করে রাখে। এসব থেকে দূরে থেকে আমরা সৃজনশীল চিন্তাগুলোর জন্ম দিতে পারি। শিল্পী, লেখক, গবেষকরা একাকিত্বকে সৃষ্টির প্রধান সময় হিসেবে দেখে থাকেন। একাকিত্বে কাটানো সময় তাদের চিন্তা ও সৃষ্টির গভীরে ডুবিয়ে দেয়, যা কোনো সামাজিক মাধ্যমের উপস্থিতিতে কখনোই সম্ভব নয়।

আমরা যখন একাকিত্বে থাকি, তখন আমাদের মন কোনো নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনার প্রয়োজন অনুভব করে না। এটি সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারে। এই স্বাধীনতাই সৃজনশীলতার মূল। এমন অনেক নতুন ধারণা, যে চিন্তাগুলো আমাদের ব্যস্ত জীবনে স্থান পায় না, একাকিত্বের মধ্যে জেগে ওঠে। এই সময়টিতে আমরা কোনো প্রকল্প বা কাজের ওপর নিবিষ্ট থাকতে পারি, যা আমাদের মননশীলতাকে আরও গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করে।

একাকিত্বের সময় আমরা নিজেদের মননশীলতা এবং ভাবনাগুলোকে পূর্ণাঙ্গভাবে বুঝতে পারি। দিনের পর দিন প্রযুক্তি আমাদের মনকে ক্লান্ত করে দেয়। এই ক্লান্তি আমাদের মনকে আরও গভীর চিন্তা ও আধ্যাত্মিক উন্নতির পথে বাধা দেয়। কিন্তু একাকিত্বের সময় আমরা নিজেদের চিন্তাকে পুনর্গঠন করতে পারি। আমাদের কী করা উচিত, কী ছাড়া উচিত নয়, আমাদের শক্তি এবং দুর্বলতাগুলো কীÑ এ সবকিছুই আমরা একাকিত্বে বুঝতে পারি।

একাকিত্ব আমাদের জীবনের গভীর দিকগুলোকে উন্মোচন করার সুযোগ দেয়। এটি আমাদের ভেতরে নতুন করে চিন্তা করার এবং আত্ম-উন্নতির পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সময় ও সুযোগ দেয়। ধ্যান, যোগব্যায়াম, বই পড়া, অথবা প্রকৃতির মধ্যে সময় কাটানো এই একাকিত্বের অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারে। এটি আমাদের আত্মশুদ্ধি এবং নতুনভাবে নিজেকে আবিষ্কারের পথ দেখায়।

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। জেফ বেজোসের সম্পদের পরিমাণ ২০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। এখন তিনি বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী ব্যক্তি। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ইকোনমিক ক্লাব অব ওয়াশিংটন ডিসিতে দেয়া এক বক্তৃতায় নিজের সাফল্যের পেছনের রহস্য জানিয়েছেন জেফ বেজোস। তিনি জানান, প্রতিদিন সকালে নিজের জন্য এক ঘণ্টার সময় আলাদা রাখেন তিনি। এ সময় স্মার্টফোনসহ সব ধরনের ইলেকট্রনিকস যন্ত্র দূরে রেখে বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তাভাবনা বিশ্লেষণ করেন। জেফ বেজোস মনে করেন এই অভ্যাস তার সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা উন্নত করেছে। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ইত্যাদি সামাজিক মাধ্যমগুলোর প্রায়শই আমাদের সময় এবং মনোযোগ চুরি করে। এগুলো আমাদের মধ্যে অসাবধানতা এবং অস্থিরতা তৈরি করে, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে। এগুলো থেকে নিজেকে দূরে রাখা আমাদের মানসিক শান্তি এবং গভীর চিন্তা করার ক্ষমতা বাঙায়। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকার অভ্যাস তৈরি করা উচিত, যাতে আমরা নিজের সঙ্গে সময় কাটাতে পারি।

প্রতিদিন কিছুটা সময় সম্পূর্ণ একাকিত্বে কাটানো আমাদের জন্য এক ধরনের মানসিক শুদ্ধি বয়ে আনে। এটি আমাদের জীবনের দিকনির্দেশনা সঠিক করতে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য গভীরভাবে চিন্তা করতে সহায়ক হতে পারে। প্রযুক্তির সীমাহীন প্রবাহ থেকে নিজেকে সাময়িকভাবে সরিয়ে রাখা মানেই নয় যে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি; বরং এটি আমাদের আত্মার জন্য একটি প্রয়োজনীয় বিশ্রাম।

একাকিত্বকে আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। প্রযুক্তির বিশ্ব আমাদের জীবনে অনিবার্যভাবে প্রবেশ করলেও, এর অবিরাম প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়া আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একাকিত্বে আমরা নিজের সঙ্গে সময় কাটিয়ে নিজেদের জীবন এবং মনকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি। এ সময়টিতে আমরা নতুন চিন্তা, সৃজনশীলতা এবং ধৈর্যের সঙ্গে কাজ করার অনুশীলন করতে পারি। তাই আমাদের উচিত নিয়মিত একাকিত্বে থাকা এবং প্রযুক্তি থেকে দূরে থেকে নিজেকে আবিষ্কারের পথে এগিয়ে যাওয়া।

[লেখক : প্রভাষক, দর্শন বিভাগ, গাইবান্ধা সরকারি কলেজ]

‘ক্ষুদ্রতার মন্দিরেতে বসায়ে আপনারে আপন পায়ে না দিই যেন অর্ঘ্য ভারে ভারে’

লাগামহীন দ্রব্যমূল্য

বাঁশের বংশবৃদ্ধিতে অন্তরায় বাঁশকরুল সংগ্রহ

একতার অভাবে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে করণীয়

শিক্ষা খাতে দলীয় রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাব

কোন পথে জামায়াতের রাজনীতি?

শ্রমিকের উন্নয়ন ছাড়া গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব নয়

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির ভূমিকা

ডিমের জারিজুরি

যোগ্য নেতৃত্ব সমাজ-সংগঠনকে এগিয়ে নেয়

ব্যক্তি স্বাধীনতার সংকট

কিল মারার গোঁসাই

ছবি

শেকড়ের সন্ধানে সাঁইজির ধামে

বৈষম্যের অন্ধকারে নিমজ্জিত প্রকৌশল শিক্ষার আরেক জগৎ

প্রশাসনিক সংস্কারে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা কতটা প্রতিষ্ঠা পাবে?

বাংলার মৃৎশিল্প

প্রবারণা পূর্ণিমার আলোয় আলোকিত হোক মানবজাতি

খেলাপি ঋণের অপসংস্কৃতি

কথার কথা যত কথা

দলীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত হোক শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

সুইডেনের গণতন্ত্র

বিচ্ছিন্নতা ও একাকীত্ব : শহুরে জীবনধারার মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব

নতুন প্রেক্ষাপটে ‘চলচ্চিত্র সার্টিফিকেশন বোর্ড’ : স্বাধীনতা না প্রতিরোধ?

ধর্মীয় স্বাধীনতা ও কঠিন চীবরদান

ছবি

দুর্গাপূজার মর্মবাণী

মানুষ মূল্যস্ফীতি থেকে রক্ষা পাবে কীভাবে

গুজব ও মিথ্যা তথ্য : সমাজের এক ভয়াবহ ব্যাধি

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে দৃঢ় পদক্ষেপ প্রয়োজন

পুরাতত্ত্বের ধারায় সনাতনী সমাজের দুর্গাপূজা

জীবন-মৃত্যু কী?

নাসা : বিজ্ঞানের পীঠস্থান

শিক্ষা সংস্কারে প্রথাগত চিন্তাধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে

সাংঘাতিক ভাই, সাংঘাতিক...

প্রযুক্তির মায়াজালে বন্দি মানুষ

tab

উপ-সম্পাদকীয়

একাকিত্ব : নিজেকে আবিষ্কার ও সৃজনশীলতা বিকাশের পথ

মিজানুর রহমান

মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর ২০২৪

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের জীবনে এক নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিনিয়ত আমাদের মোবাইল ফোনে বিভিন্ন নোটিফিকেশন আসছে, যা আমাদের মনোযোগ বারবার বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে। এই যোগাযোগ মাধ্যমগুলো আমাদের মনকে স্থির থাকতে দেয় না, বরং ক্রমাগত দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ এবং তুলনার দিকে ঠেলে দেয়। প্রতিনিয়ত অন্যের সাফল্য দেখে নিজেকে তুচ্ছ মনে করা, অপরের জীবনের সঙ্গে নিজের জীবনকে তুলনা করা, এই সবকিছুই আমাদের মানসিক স্থিতি নষ্ট করে দেয়।

একাকিত্বের মধ্যে প্রবেশ করার মাধ্যমে আমরা নিজেদের এই সবকিছুর থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যেতে পারি। নিজেকে সময় দেয়া, নিজের চিন্তাগুলোকে একাগ্রভাবে পর্যবেক্ষণ করা, এবং প্রযুক্তির অবিরাম খপ্পর থেকে মুক্ত হওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। এই সময়ে আমরা নিজেদের মূল্যবান চিন্তাগুলোকে আরও স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি এবং আত্মশুদ্ধির পথে অগ্রসর হতে পারি।

একাকিত্ব মানে একা থাকা নয়; এটি একটি মানসিক অবস্থা, যেখানে মানুষ নিজের মধ্যে শান্তি খুঁজে পায়। একাকিত্বের মাধ্যমে আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের চাপে চাপা পড়া চিন্তা, ধারণা ও আবেগগুলোকে বোঝার সুযোগ পাই। অন্যের উপস্থিতিতে আমরা আমাদের চিন্তাগুলোকে সম্পূর্ণভাবে প্রক্রিয়াকরণ করতে পারি না। কিন্তু যখন আমরা একা থাকি, তখন আমরা আমাদের চিন্তাগুলোকে বিশ্লেষণ করতে পারি এবং আত্মশুদ্ধির পথে অগ্রসর হতে পারি।

মানুষের সৃজনশীলতা সবচেয়ে ভালোভাবে বিকশিত হয় একাকিত্বে। যখন আমাদের চারপাশে কোনো ব্যাঘাতকারী উপস্থিত থাকে না, তখন আমাদের মনকে সৃজনশীল হতে সময় দেয়। প্রযুক্তির আধিক্য এবং সামাজিক মাধ্যমের অবিরাম নোটিফিকেশন আমাদের মনকে বিভ্রান্ত করে রাখে। এসব থেকে দূরে থেকে আমরা সৃজনশীল চিন্তাগুলোর জন্ম দিতে পারি। শিল্পী, লেখক, গবেষকরা একাকিত্বকে সৃষ্টির প্রধান সময় হিসেবে দেখে থাকেন। একাকিত্বে কাটানো সময় তাদের চিন্তা ও সৃষ্টির গভীরে ডুবিয়ে দেয়, যা কোনো সামাজিক মাধ্যমের উপস্থিতিতে কখনোই সম্ভব নয়।

আমরা যখন একাকিত্বে থাকি, তখন আমাদের মন কোনো নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনার প্রয়োজন অনুভব করে না। এটি সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে পারে। এই স্বাধীনতাই সৃজনশীলতার মূল। এমন অনেক নতুন ধারণা, যে চিন্তাগুলো আমাদের ব্যস্ত জীবনে স্থান পায় না, একাকিত্বের মধ্যে জেগে ওঠে। এই সময়টিতে আমরা কোনো প্রকল্প বা কাজের ওপর নিবিষ্ট থাকতে পারি, যা আমাদের মননশীলতাকে আরও গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করে।

একাকিত্বের সময় আমরা নিজেদের মননশীলতা এবং ভাবনাগুলোকে পূর্ণাঙ্গভাবে বুঝতে পারি। দিনের পর দিন প্রযুক্তি আমাদের মনকে ক্লান্ত করে দেয়। এই ক্লান্তি আমাদের মনকে আরও গভীর চিন্তা ও আধ্যাত্মিক উন্নতির পথে বাধা দেয়। কিন্তু একাকিত্বের সময় আমরা নিজেদের চিন্তাকে পুনর্গঠন করতে পারি। আমাদের কী করা উচিত, কী ছাড়া উচিত নয়, আমাদের শক্তি এবং দুর্বলতাগুলো কীÑ এ সবকিছুই আমরা একাকিত্বে বুঝতে পারি।

একাকিত্ব আমাদের জীবনের গভীর দিকগুলোকে উন্মোচন করার সুযোগ দেয়। এটি আমাদের ভেতরে নতুন করে চিন্তা করার এবং আত্ম-উন্নতির পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সময় ও সুযোগ দেয়। ধ্যান, যোগব্যায়াম, বই পড়া, অথবা প্রকৃতির মধ্যে সময় কাটানো এই একাকিত্বের অভিজ্ঞতাকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারে। এটি আমাদের আত্মশুদ্ধি এবং নতুনভাবে নিজেকে আবিষ্কারের পথ দেখায়।

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। জেফ বেজোসের সম্পদের পরিমাণ ২০২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। এখন তিনি বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ ধনী ব্যক্তি। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের ইকোনমিক ক্লাব অব ওয়াশিংটন ডিসিতে দেয়া এক বক্তৃতায় নিজের সাফল্যের পেছনের রহস্য জানিয়েছেন জেফ বেজোস। তিনি জানান, প্রতিদিন সকালে নিজের জন্য এক ঘণ্টার সময় আলাদা রাখেন তিনি। এ সময় স্মার্টফোনসহ সব ধরনের ইলেকট্রনিকস যন্ত্র দূরে রেখে বিভিন্ন বিষয়ে চিন্তাভাবনা বিশ্লেষণ করেন। জেফ বেজোস মনে করেন এই অভ্যাস তার সিদ্ধান্ত গ্রহণের দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা উন্নত করেছে। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ইত্যাদি সামাজিক মাধ্যমগুলোর প্রায়শই আমাদের সময় এবং মনোযোগ চুরি করে। এগুলো আমাদের মধ্যে অসাবধানতা এবং অস্থিরতা তৈরি করে, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে প্রভাবিত করে। এগুলো থেকে নিজেকে দূরে রাখা আমাদের মানসিক শান্তি এবং গভীর চিন্তা করার ক্ষমতা বাঙায়। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় প্রযুক্তি থেকে দূরে থাকার অভ্যাস তৈরি করা উচিত, যাতে আমরা নিজের সঙ্গে সময় কাটাতে পারি।

প্রতিদিন কিছুটা সময় সম্পূর্ণ একাকিত্বে কাটানো আমাদের জন্য এক ধরনের মানসিক শুদ্ধি বয়ে আনে। এটি আমাদের জীবনের দিকনির্দেশনা সঠিক করতে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য গভীরভাবে চিন্তা করতে সহায়ক হতে পারে। প্রযুক্তির সীমাহীন প্রবাহ থেকে নিজেকে সাময়িকভাবে সরিয়ে রাখা মানেই নয় যে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি; বরং এটি আমাদের আত্মার জন্য একটি প্রয়োজনীয় বিশ্রাম।

একাকিত্বকে আমাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। প্রযুক্তির বিশ্ব আমাদের জীবনে অনিবার্যভাবে প্রবেশ করলেও, এর অবিরাম প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়া আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একাকিত্বে আমরা নিজের সঙ্গে সময় কাটিয়ে নিজেদের জীবন এবং মনকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি। এ সময়টিতে আমরা নতুন চিন্তা, সৃজনশীলতা এবং ধৈর্যের সঙ্গে কাজ করার অনুশীলন করতে পারি। তাই আমাদের উচিত নিয়মিত একাকিত্বে থাকা এবং প্রযুক্তি থেকে দূরে থেকে নিজেকে আবিষ্কারের পথে এগিয়ে যাওয়া।

[লেখক : প্রভাষক, দর্শন বিভাগ, গাইবান্ধা সরকারি কলেজ]

back to top