alt

উপ-সম্পাদকীয়

ভবন নির্মাণ ও বিল্ডিং কোড

সামিউর রহমান

: শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

দেশে অর্থনৈতিক কর্মকা- বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ২ হাজার ৭৮৪ মার্কিন ডলার। যাইহোক ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষ সম্পদ আহরণে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। নির্মাণ করছে অট্টালিকা। হোক আবাসিক অথবা অনাবাসিক ভবন। গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী হওয়ায় মানুষ এখন গ্রামে-গঞ্জে টিনের বাড়ির পরিবর্তে এক বা একাধিক তলা বিশিষ্ট পাকা ভবন নির্মাণ করছে। এসব ভবন নির্মাণে ভবন মালিকরা কতটুকু সচেতন? অসচেতনতা অথবা ভুলের কারণে ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা, ঝরে যেতে পারে অসংখ্য প্রাণ, বিনষ্ট হতে পারে বহু সম্পদ, মালামাল। যার উদাহরণÑ ‘রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি’। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল, রোজ বুধবার সাভারে রানা প্লাজা নামের একটি ৯ তলা ভবন ধসে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সবচেয়ে ভয়াবহ ট্র্যাজেডির ঘটনা ঘটে, যা গোটা বিশ্বকেই কাঁপিয়ে দেয়। করুণ অকালমৃত্যু হয় ১ হাজার ১৩৫ শ্রমিকের, পাশাপাশি গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন আরও ১ হাজার ১৬৯ জন। অনুসন্ধানে দেখা যায়, যথাযথভাবে বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করে ভবনটি নির্মাণ করার ফলেই এই ট্র্যাজেডি সংঘটিত হয়। আবার ২০২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ভূমিকম্প আঘাত হানে। এই ভূমিকম্পে তুরস্কের ১০টি ও সিরিয়ার ৪টি প্রদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এএফএডি জানিয়েছে, দেশটিতে ৪৪ হাজার ২১৮ জন মারা গেছেন। আর সিরিয়ায় মারা গেছেন ৫ হাজার ৯১৪ জন। সে সময় অনেকেই টিভিতে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার দৃশ্য অবলোকন করেছি। সেখানে দেখতে পাই ভূমিকম্পজনিত কারণে কীভাবে ভবনগুলো নিমিষেই ধসে পড়ল। অনেক দৃশ্যের মাঝেও অন্য আরেকটি দৃশ্য দেখতে পাই, তা হলো কিছু কিছু ভবন সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। অর্থাৎ অনেক ভবন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল এবং পাশের কিছু ভবন একদম দ-ায়মান। কারণ ওই একটাই। এখানেও ভবন নির্মাণে যথাযথভাবে বিল্ডিং কোড মানা হয় নাই। এর ফলে ভূমিকম্পে বিশাল ক্ষতিগ্রস্ত ও এত প্রাণহানি ঘটে। আর যে ভবনগুলো দ-ায়মান ছিল সেগুলো বিল্ডিং কোড মেনেই নির্মিত হয়েছিল, যা কিনা ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পও ক্ষতি করতে পারেনি। সারাদেশে গ্রাম থেকে শুরু করে খোদ ঢাকা শহরেই ব্যক্তিপর্যায়ে বিল্ডিং কোড না মেনে অনেক ভবন নির্মিত হয়েছে এবং হচ্ছে। আমি নিজেও কিছু মিস্ত্রিকে বলতে শুনেছি- ২০-২৫ বৎসর ধরে অনেক বিল্ডিং নির্মাণ করেছি, এখন পর্যন্ত কোন সমস্যা হয় নাই। আবার অনেক ভবন মালিককেও বলতে শুনেছি- ইঞ্জিনিয়ারের মাধ্যমে কাজ করালে অনেক টাকা চায়। তাছাড়া ওই মিস্ত্রি অনেক অভিজ্ঞ। সে ভালো কাজ বুঝে, ইত্যাদি। এমনকি অনেক ভবনের স্থপতি হচ্ছেÑ ভবন মালিক স্বয়ং নিজেই। বেড রুম, ড্রয়িং রুম, বারান্দা, সিঁড়ি রুম, কিচেন রুমসহ অন্যান্য রুম কোথায় হবে, তা তিনি মিস্ত্রিকে নির্দেশ দেন এবং তার প্রকৌশলী হচ্ছে রাজমিস্ত্রি। সেভাবে মিস্ত্রি ভবন নির্মাণের কাজটি সম্পন্ন করে। এটাই বাস্তবতা। একটি ভবন নির্মাণের সময় ন্যূনতম যে পরিমাণ মান নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন রয়েছে সে সর্ম্পকে বিস্তারিত নির্দেশনা যে কোডের মধ্যে থাকে তাকে বিল্ডিং কোড বা ভবন নির্মাণ বিধিমালা বলে। যে কোন ভবন নির্মাতা বা মালিক কোন স্থাপনা নির্মাণের আগে অবশ্যই যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এই জাতীয় নির্মাণ বিধিমালা মেনে দরকারি ছাড়পত্র গ্রহণ করে তবেই ভবন নির্মাণের অনুমতি পায়। এরূপ জাতীয় নির্মাণ বিধিমালা থাকার মূল লক্ষ্য হল এই ভবনে বসবাসরত সবার জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। পৃথিবীর সব উন্নত দেশেরই এমন নিজস্ব ভবন নির্মাণ বিধিমালা রয়েছে। আমাদেরও রয়েছে। বিল্ডিং কোডের মূল উদ্দেশ্য হলো জনস্বাস্থ্য, সুরক্ষা এবং অন্যান্য কল্যাণ নিশ্চিত করা। প্রশ্ন হচ্ছে, ব্যক্তিপর্যায়ে নির্মিত সবগুলো ভবন বিল্ডিং কোড মেনে নির্মাণ করা হয়েছে বা হচ্ছে কি? হয়তো সামান্য কিছু ভবন বিল্ডিং কোড মেনে নির্মাণ করা হতে পারে। যেগুলো হচ্ছে না, প্রশ্ন ও উদ্বেগের জায়গাটা সেখানেই। যে ভবনটি পরিবারকে সুরক্ষা দেবে, সে ভবনটিই যদি অরক্ষিত হয়, তখন কী হবে? একবার ভেবে দেখেছেন কী? দেশে যেরকম ভূমিকম্পের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রায় সারাদেশের মানুষ ভূমিকম্প আতঙ্কে আছে, বলতে গেলে আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখে আমরা অবস্থান করছি। খোদা না করুক, একবার বড়ধরনের ভূমিকম্প হলে কী অবস্থা দাঁড়াবে? চিন্তা করুন তো, তুরস্ক ও সিরিয়ার পরিণতি। কি সাংঘাতিক অবস্থা! দয়া করে সারাজীবনের কর্ষ্টাজিত অর্থ দিয়ে শুধু মিস্ত্রি বা অনভিজ্ঞ, মানহীন নির্মাণ প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান দিয়ে সস্তায় প্ল্যান, ডিজাইন নিয়ে ভবন নির্মাণ করা থেকে বিরত থাকুন এবং নিজেকে ও পরিবারকে ঝুঁকিমুক্ত রাখুন। সব সময় মনে রাখতে হবে নিরাপত্তাই প্রথম। আর এজন্যই বিল্ডিং কোডের প্রয়োজন রয়েছে। দেশের পশ্চাৎপদ প্রান্তিক পর্যায়ের জনগোষ্ঠী বিশেষ করে যারা গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা পর্যায়ে বসবাস করেন, তাদের জন্য সহজে একজন দক্ষ, অভিজ্ঞ স্থপতি ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শ নিয়ে ভবন নির্মাণ করা খুবই দুঃসাধ্য। কারণ গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা পর্যায়ে একজন দক্ষ, অভিজ্ঞ স্থপতি ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের প্রচ- অভাব রয়েছে। শহরের লোকজন সহজে এই সেবা নিতে পারে, কিন্তু প্রান্তিক পর্যায়ের লোকজন এই সেবাপ্রাপ্তি হতে প্রায়ই বঞ্চিত। বলতে গেলে ব্যক্তিপর্যায়ে সারা বাংলাদেশে আনাচে-কানাচে ব্যাঙের ছাতার মতো, খেয়াল-খুশি, মন চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভবন নির্মাণ হচ্ছে তার মান নিয়ন্ত্রণ বা মনিটরিং করার কোন সরকারী প্রতিষ্ঠান নেই। এই যে নির্মাণকাজে বিশৃঙ্খলা, তা টেকসই নগরায়নের স্বার্থে বন্ধ হওয়া অত্যন্ত অত্যাবশ্যক। বিল্ডিং কোড কীভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব? বাংলাদেশ সরকারের পিডাব্লিউডি উপমহাদেশে ১৮৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যা বর্তমানে গণপূর্ত অধিদপ্তর নামে পরিচিত। প্রায় পৌনে দুইশ বছরের পুরাতন এই ঐতিহ্যবাহী সংস্থাটি ভবন নির্মাণ জগতে এক ও অদ্বিতীয়। তার রয়েছে মেধাবী, অভিজ্ঞ, দক্ষ ও সুশৃঙ্খল সিভিল, ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল প্রকৌশলীরা। রয়েছে নিজস্ব ডিজাইন সেল। যেখানে দেশসেরা ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ায়রা ভূমিকম্প সহনীয় অবকাঠামোগত ডিজাইনের কাজ করেন। রয়েছে ট্রেনিং সেন্টার ও টেস্টিং ল্যাবরেটরি। এই সংস্থায় রয়েছে জাইকার অর্থায়নে জাপানের প্রকৌশলী ও গণপূর্ত প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে একটি গবেষণা সেল। এই গবেষণা সেল যেসব পুরাতন সরকারি ভবনে ভূমিকম্প প্রতিরোধক ব্যবস্থা নেই, সে সব ভবনে ভূমিকম্প প্রতিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কারিগরি সহায়তা প্রদান করে থাকে। সহযোগী হিসেবে স্থাপত্য অধিদপ্তরের দেশ সেরা স্থপতিরা পরিবেশবান্ধব, মানসম্পন্ন, দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য নক্সা প্রণয়নের কাজ করে থাকেন। ইতোমধ্যেই উক্ত সংস্থাদ্বয়ের প্রকৌশলী ও স্থপতিরা তাদের কর্মদক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন এবং তা চলমান রয়েছে। যথাযথ বিল্ডিং কোড মেনে নির্মিত হয়েছে এবং হচ্ছে বহু আবাসিক, অনাবাসিক মানসম্পন্ন, দৃষ্টিনন্দন, নিরাপদ ভবন। এছাড়া সহযোগী সংস্থা হিসেবে কাজ করে ‘হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট’। গণপূর্ত অধিদপ্তরের রয়েছে প্রতি জেলায় একটি করে গণপূর্ত বিভাগীয় অফিস। যাকে বলা হয় গণপূর্ত নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়। কিছু প্রস্তাবনা : গণপূর্ত বিভাগের দপ্তরটি জেলা হতে উপজেলা পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা। যেন সহজেই উপজেলা হতে ইউনিয়নসহ গ্রাম পর্যন্ত ব্যক্তিপর্যায়ের সব ধরনের ভবন নির্মাণকাজের সম্পূর্ণ সেবা জনগণের দোরগোড়া পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারে। এজন্য প্রতি উপজেলায় স্থাপন করতে হবে একটি করে ‘ভবন নির্মাণ পরামর্শ কেন্দ্র’। গণপূর্তের ইঞ্জিনিয়াররা এ পরামর্শ কেন্দ্রের মাধ্যমে জনগণকে খুবসহজেই ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত সকল পরামর্শ / সেবা প্রদান করবে। ঢাকা হতে সম্প্রসারিত করে বৃহত্তর জেলা শহরে একটি করে গণপূর্ত ডিজাইন সেলের অফিস স্থাপন করতে হবে। যেন স্বল্প সময়ের মধ্যে কাঠামোগত নক্সা প্রণয়নের কাজটি সম্পন্ন করে ভবন মালিকের নিকট সরবরাহ করতে পারে। ঢাকা হতে সম্প্রসারিত করে বৃহত্তর জেলা শহরে একটি করে স্থাপত্য অধিদপ্তরের অফিস স্থাপন করতে হবে। যেন স্বল্প সময়ের মধ্যে স্থাপত্য নক্সা প্রণয়নের কাজটি সম্পন্ন করে ভবন মালিকের নিকট সরবরাহ করতে পারে। নির্মাণ বিধিমালা সংশোধন করে ‘ভবন নির্মাণ পরামর্শ কেন্দ্র’ ব্যতিত নিজের খেয়াল-খুশি মতো কোন ভবন নির্মাণ করা যাবে না মর্মে গেজেট প্রকাশ করতে হবে। প্রস্তাবনাসমূহ বাস্তবায়ন হলে প্রান্তিক পর্যায়ের ভবন মালিকগণ ভবন নির্মাণের পূর্বে সকল ধরনের পরামর্শ, স্থাপত্য নক্সা, অবকাঠামোগত ডিজাইন, প্লাম্বিং ডিজাইন, ইলেক্ট্রোমেক্যানিক্যাল ডিজাইন, আগুননিরোধক ডিজাইন প্রণয়নের কাজসমূহ দক্ষ প্রকৗশলী ও স্থপতির মাধ্যমে সম্পন্ন করতে পারবে। নির্মাণকালীন সময়ে দক্ষ প্রকৌশলী ও জনবল দ্বারা কারিগরি সহায়তা পাবেন এবং মানসম্পন্ন, ভ’মিকম্প প্রতিরোধী, পরিবেশবান্ধব মালামালের ঝঢ়বপরভরপধঃরড়হ এর তথ্য সহজেই প্রাপ্ত হবেন। এর ফলে একজন ভবন মালিক কোথায় যাবে, কার কাছ থেকে নক্সা গ্রহণ করবে, যে প্রকৌশলীর খোঁজ পেয়েছে তিনি কতটুকু মানসম্পন্ন ড্রয়িং ডিজাইন করেন এবং বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ভবনের নির্মাণ কাজ হচ্ছে কিনা অর্থাৎ বিল্ডিং কোড বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ামূহ অনুসরণ করা ইত্যাদি কোন চিন্তাই ভবন মালিককে করতে হবে না। এতে নাগরিক সেবা প্রাপ্তি এবং ইঘইঈ ঈড়ফব বাস্তবায়ন নিশ্চিত হবে। ফলশ্রুতিতে ভূমিকম্পজনিত অথবা ন্য কোনভাবে সৃষ্ট প্রাকৃতিক বিপর্যয় হতে জানমালের ক্ষতির সম্ভাবনা অনেকাংশে কমিয়ে বা একদম শূন্যের কোঠায় আনা সম্ভব হবে। সরকার ও জনগণের লাভ কী? গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদঃ ১৮ক অনুযায়ী রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীব-বৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন, বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন বিধায় এ ধরনের সেবা প্রদান করা রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব। এছাড়া এই সেবাটি প্রদানের মাধ্যমে ভবন মালিকের কাছ হতে নির্দিষ্ট ফি সংগ্রহ করে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি আরোহনের পথও উন্মুক্ত হবে। বিনিময়ে একজন ভবন মালিক অতি সহজে একটি নিরাপদ, দৃষ্টিনন্দন, মানসম্পন্ন ভবনে নিশ্চিন্তে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাসের নিশ্চয়তা পাবেন এবং ব্যক্তিপর্যায়ে ভবন নির্মাণকাজের অনিয়ম রোধ করা ও সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা সম্ভব হবে এবং বিল্ডিং কোড বাস্তবায়ন নিশ্চিত হবে। মনে রাখতে হবে ‘বিল্ডিং কোড অনুসরন, নিশ্চিত করে নিরাপদ ভবন’। তবেই একটি সুশৃঙ্খল, দৃষ্টিনন্দন, পরিবেশবান্ধব ও টেকসই নগরায়ন গঠিত হবে। এতে কৃষি জমি, জলাভূমিও রক্ষা পাবে। আর তা না হলে যে কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে গোটা দেশ ও জাতি। আর কালক্ষেপণ নয়। উপরোক্ত প্রস্তাবনাসমূহ দ্রুত বাস্তবায়ন করে গণর্পূত অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের অফিস গণপূর্ত বিভাগকে জেলা হতে উপজেলা পর্যন্ত সম্প্রসারিত করে নির্মাণকাজে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে বিল্ডিং কোড বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের এখনই সঠিক সময়।

[লেখক : প্রকৌশলী, গণপূর্ত রক্ষণাবেক্ষণ সার্কেল, গণপূর্ত অধিদপ্তর]

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ

ধর্মভিত্তিক জোট কোন পথে

ছবি

বিদায় অগ্নিকন্যা

রিমান্ড সংস্কৃতি : আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে একটি মানবাধিকার পরিপ্রেক্ষিত

ছবি

ডেঙ্গুজ্বর : সচেতনতার বিকল্প নেই

ছবি

উন্নয়ন ও পরিবেশের মধ্যে ভারসাম্য রাখা কেন জরুরি

ছবি

মহাপ্রাণ যোগেন্দ্রনাথ ম-ল

নদীর প্রাণ শুশুক, নিরাপদে বেঁচে থাকুক

রম্যগদ্য : গণতন্ত্রের গলিতে গলিতে হিটলার

রাষ্ট্র সংস্কার ও আদিবাসী

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ ইস্যুতে সংবিধান ও অতীত-ইতিহাস

শিক্ষাকে দলীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত করার উপায়

দিবস যায় দিবস আসে, নিরাপদ হয় না সড়ক

‘ক্ষুদ্রতার মন্দিরেতে বসায়ে আপনারে আপন পায়ে না দিই যেন অর্ঘ্য ভারে ভারে’

একাকিত্ব : নিজেকে আবিষ্কার ও সৃজনশীলতা বিকাশের পথ

লাগামহীন দ্রব্যমূল্য

বাঁশের বংশবৃদ্ধিতে অন্তরায় বাঁশকরুল সংগ্রহ

একতার অভাবে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধে করণীয়

শিক্ষা খাতে দলীয় রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাব

কোন পথে জামায়াতের রাজনীতি?

শ্রমিকের উন্নয়ন ছাড়া গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব নয়

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নবায়নযোগ্য জ্বালানির ভূমিকা

ডিমের জারিজুরি

যোগ্য নেতৃত্ব সমাজ-সংগঠনকে এগিয়ে নেয়

ব্যক্তি স্বাধীনতার সংকট

কিল মারার গোঁসাই

ছবি

শেকড়ের সন্ধানে সাঁইজির ধামে

বৈষম্যের অন্ধকারে নিমজ্জিত প্রকৌশল শিক্ষার আরেক জগৎ

প্রশাসনিক সংস্কারে সুশাসন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা কতটা প্রতিষ্ঠা পাবে?

বাংলার মৃৎশিল্প

প্রবারণা পূর্ণিমার আলোয় আলোকিত হোক মানবজাতি

খেলাপি ঋণের অপসংস্কৃতি

কথার কথা যত কথা

দলীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত হোক শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

tab

উপ-সম্পাদকীয়

ভবন নির্মাণ ও বিল্ডিং কোড

সামিউর রহমান

শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

দেশে অর্থনৈতিক কর্মকা- বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ২ হাজার ৭৮৪ মার্কিন ডলার। যাইহোক ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষ সম্পদ আহরণে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। নির্মাণ করছে অট্টালিকা। হোক আবাসিক অথবা অনাবাসিক ভবন। গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী হওয়ায় মানুষ এখন গ্রামে-গঞ্জে টিনের বাড়ির পরিবর্তে এক বা একাধিক তলা বিশিষ্ট পাকা ভবন নির্মাণ করছে। এসব ভবন নির্মাণে ভবন মালিকরা কতটুকু সচেতন? অসচেতনতা অথবা ভুলের কারণে ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা, ঝরে যেতে পারে অসংখ্য প্রাণ, বিনষ্ট হতে পারে বহু সম্পদ, মালামাল। যার উদাহরণÑ ‘রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি’। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল, রোজ বুধবার সাভারে রানা প্লাজা নামের একটি ৯ তলা ভবন ধসে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সবচেয়ে ভয়াবহ ট্র্যাজেডির ঘটনা ঘটে, যা গোটা বিশ্বকেই কাঁপিয়ে দেয়। করুণ অকালমৃত্যু হয় ১ হাজার ১৩৫ শ্রমিকের, পাশাপাশি গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেন আরও ১ হাজার ১৬৯ জন। অনুসন্ধানে দেখা যায়, যথাযথভাবে বিল্ডিং কোড অনুসরণ না করে ভবনটি নির্মাণ করার ফলেই এই ট্র্যাজেডি সংঘটিত হয়। আবার ২০২৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ভূমিকম্প আঘাত হানে। এই ভূমিকম্পে তুরস্কের ১০টি ও সিরিয়ার ৪টি প্রদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তুরস্কের দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ এএফএডি জানিয়েছে, দেশটিতে ৪৪ হাজার ২১৮ জন মারা গেছেন। আর সিরিয়ায় মারা গেছেন ৫ হাজার ৯১৪ জন। সে সময় অনেকেই টিভিতে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার দৃশ্য অবলোকন করেছি। সেখানে দেখতে পাই ভূমিকম্পজনিত কারণে কীভাবে ভবনগুলো নিমিষেই ধসে পড়ল। অনেক দৃশ্যের মাঝেও অন্য আরেকটি দৃশ্য দেখতে পাই, তা হলো কিছু কিছু ভবন সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। অর্থাৎ অনেক ভবন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল এবং পাশের কিছু ভবন একদম দ-ায়মান। কারণ ওই একটাই। এখানেও ভবন নির্মাণে যথাযথভাবে বিল্ডিং কোড মানা হয় নাই। এর ফলে ভূমিকম্পে বিশাল ক্ষতিগ্রস্ত ও এত প্রাণহানি ঘটে। আর যে ভবনগুলো দ-ায়মান ছিল সেগুলো বিল্ডিং কোড মেনেই নির্মিত হয়েছিল, যা কিনা ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পও ক্ষতি করতে পারেনি। সারাদেশে গ্রাম থেকে শুরু করে খোদ ঢাকা শহরেই ব্যক্তিপর্যায়ে বিল্ডিং কোড না মেনে অনেক ভবন নির্মিত হয়েছে এবং হচ্ছে। আমি নিজেও কিছু মিস্ত্রিকে বলতে শুনেছি- ২০-২৫ বৎসর ধরে অনেক বিল্ডিং নির্মাণ করেছি, এখন পর্যন্ত কোন সমস্যা হয় নাই। আবার অনেক ভবন মালিককেও বলতে শুনেছি- ইঞ্জিনিয়ারের মাধ্যমে কাজ করালে অনেক টাকা চায়। তাছাড়া ওই মিস্ত্রি অনেক অভিজ্ঞ। সে ভালো কাজ বুঝে, ইত্যাদি। এমনকি অনেক ভবনের স্থপতি হচ্ছেÑ ভবন মালিক স্বয়ং নিজেই। বেড রুম, ড্রয়িং রুম, বারান্দা, সিঁড়ি রুম, কিচেন রুমসহ অন্যান্য রুম কোথায় হবে, তা তিনি মিস্ত্রিকে নির্দেশ দেন এবং তার প্রকৌশলী হচ্ছে রাজমিস্ত্রি। সেভাবে মিস্ত্রি ভবন নির্মাণের কাজটি সম্পন্ন করে। এটাই বাস্তবতা। একটি ভবন নির্মাণের সময় ন্যূনতম যে পরিমাণ মান নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন রয়েছে সে সর্ম্পকে বিস্তারিত নির্দেশনা যে কোডের মধ্যে থাকে তাকে বিল্ডিং কোড বা ভবন নির্মাণ বিধিমালা বলে। যে কোন ভবন নির্মাতা বা মালিক কোন স্থাপনা নির্মাণের আগে অবশ্যই যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এই জাতীয় নির্মাণ বিধিমালা মেনে দরকারি ছাড়পত্র গ্রহণ করে তবেই ভবন নির্মাণের অনুমতি পায়। এরূপ জাতীয় নির্মাণ বিধিমালা থাকার মূল লক্ষ্য হল এই ভবনে বসবাসরত সবার জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। পৃথিবীর সব উন্নত দেশেরই এমন নিজস্ব ভবন নির্মাণ বিধিমালা রয়েছে। আমাদেরও রয়েছে। বিল্ডিং কোডের মূল উদ্দেশ্য হলো জনস্বাস্থ্য, সুরক্ষা এবং অন্যান্য কল্যাণ নিশ্চিত করা। প্রশ্ন হচ্ছে, ব্যক্তিপর্যায়ে নির্মিত সবগুলো ভবন বিল্ডিং কোড মেনে নির্মাণ করা হয়েছে বা হচ্ছে কি? হয়তো সামান্য কিছু ভবন বিল্ডিং কোড মেনে নির্মাণ করা হতে পারে। যেগুলো হচ্ছে না, প্রশ্ন ও উদ্বেগের জায়গাটা সেখানেই। যে ভবনটি পরিবারকে সুরক্ষা দেবে, সে ভবনটিই যদি অরক্ষিত হয়, তখন কী হবে? একবার ভেবে দেখেছেন কী? দেশে যেরকম ভূমিকম্পের প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রায় সারাদেশের মানুষ ভূমিকম্প আতঙ্কে আছে, বলতে গেলে আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখে আমরা অবস্থান করছি। খোদা না করুক, একবার বড়ধরনের ভূমিকম্প হলে কী অবস্থা দাঁড়াবে? চিন্তা করুন তো, তুরস্ক ও সিরিয়ার পরিণতি। কি সাংঘাতিক অবস্থা! দয়া করে সারাজীবনের কর্ষ্টাজিত অর্থ দিয়ে শুধু মিস্ত্রি বা অনভিজ্ঞ, মানহীন নির্মাণ প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান দিয়ে সস্তায় প্ল্যান, ডিজাইন নিয়ে ভবন নির্মাণ করা থেকে বিরত থাকুন এবং নিজেকে ও পরিবারকে ঝুঁকিমুক্ত রাখুন। সব সময় মনে রাখতে হবে নিরাপত্তাই প্রথম। আর এজন্যই বিল্ডিং কোডের প্রয়োজন রয়েছে। দেশের পশ্চাৎপদ প্রান্তিক পর্যায়ের জনগোষ্ঠী বিশেষ করে যারা গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা পর্যায়ে বসবাস করেন, তাদের জন্য সহজে একজন দক্ষ, অভিজ্ঞ স্থপতি ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শ নিয়ে ভবন নির্মাণ করা খুবই দুঃসাধ্য। কারণ গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা পর্যায়ে একজন দক্ষ, অভিজ্ঞ স্থপতি ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারের প্রচ- অভাব রয়েছে। শহরের লোকজন সহজে এই সেবা নিতে পারে, কিন্তু প্রান্তিক পর্যায়ের লোকজন এই সেবাপ্রাপ্তি হতে প্রায়ই বঞ্চিত। বলতে গেলে ব্যক্তিপর্যায়ে সারা বাংলাদেশে আনাচে-কানাচে ব্যাঙের ছাতার মতো, খেয়াল-খুশি, মন চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভবন নির্মাণ হচ্ছে তার মান নিয়ন্ত্রণ বা মনিটরিং করার কোন সরকারী প্রতিষ্ঠান নেই। এই যে নির্মাণকাজে বিশৃঙ্খলা, তা টেকসই নগরায়নের স্বার্থে বন্ধ হওয়া অত্যন্ত অত্যাবশ্যক। বিল্ডিং কোড কীভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব? বাংলাদেশ সরকারের পিডাব্লিউডি উপমহাদেশে ১৮৫৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যা বর্তমানে গণপূর্ত অধিদপ্তর নামে পরিচিত। প্রায় পৌনে দুইশ বছরের পুরাতন এই ঐতিহ্যবাহী সংস্থাটি ভবন নির্মাণ জগতে এক ও অদ্বিতীয়। তার রয়েছে মেধাবী, অভিজ্ঞ, দক্ষ ও সুশৃঙ্খল সিভিল, ইলেকট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল প্রকৌশলীরা। রয়েছে নিজস্ব ডিজাইন সেল। যেখানে দেশসেরা ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ায়রা ভূমিকম্প সহনীয় অবকাঠামোগত ডিজাইনের কাজ করেন। রয়েছে ট্রেনিং সেন্টার ও টেস্টিং ল্যাবরেটরি। এই সংস্থায় রয়েছে জাইকার অর্থায়নে জাপানের প্রকৌশলী ও গণপূর্ত প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে একটি গবেষণা সেল। এই গবেষণা সেল যেসব পুরাতন সরকারি ভবনে ভূমিকম্প প্রতিরোধক ব্যবস্থা নেই, সে সব ভবনে ভূমিকম্প প্রতিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কারিগরি সহায়তা প্রদান করে থাকে। সহযোগী হিসেবে স্থাপত্য অধিদপ্তরের দেশ সেরা স্থপতিরা পরিবেশবান্ধব, মানসম্পন্ন, দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য নক্সা প্রণয়নের কাজ করে থাকেন। ইতোমধ্যেই উক্ত সংস্থাদ্বয়ের প্রকৌশলী ও স্থপতিরা তাদের কর্মদক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন এবং তা চলমান রয়েছে। যথাযথ বিল্ডিং কোড মেনে নির্মিত হয়েছে এবং হচ্ছে বহু আবাসিক, অনাবাসিক মানসম্পন্ন, দৃষ্টিনন্দন, নিরাপদ ভবন। এছাড়া সহযোগী সংস্থা হিসেবে কাজ করে ‘হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট’। গণপূর্ত অধিদপ্তরের রয়েছে প্রতি জেলায় একটি করে গণপূর্ত বিভাগীয় অফিস। যাকে বলা হয় গণপূর্ত নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়। কিছু প্রস্তাবনা : গণপূর্ত বিভাগের দপ্তরটি জেলা হতে উপজেলা পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা। যেন সহজেই উপজেলা হতে ইউনিয়নসহ গ্রাম পর্যন্ত ব্যক্তিপর্যায়ের সব ধরনের ভবন নির্মাণকাজের সম্পূর্ণ সেবা জনগণের দোরগোড়া পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারে। এজন্য প্রতি উপজেলায় স্থাপন করতে হবে একটি করে ‘ভবন নির্মাণ পরামর্শ কেন্দ্র’। গণপূর্তের ইঞ্জিনিয়াররা এ পরামর্শ কেন্দ্রের মাধ্যমে জনগণকে খুবসহজেই ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত সকল পরামর্শ / সেবা প্রদান করবে। ঢাকা হতে সম্প্রসারিত করে বৃহত্তর জেলা শহরে একটি করে গণপূর্ত ডিজাইন সেলের অফিস স্থাপন করতে হবে। যেন স্বল্প সময়ের মধ্যে কাঠামোগত নক্সা প্রণয়নের কাজটি সম্পন্ন করে ভবন মালিকের নিকট সরবরাহ করতে পারে। ঢাকা হতে সম্প্রসারিত করে বৃহত্তর জেলা শহরে একটি করে স্থাপত্য অধিদপ্তরের অফিস স্থাপন করতে হবে। যেন স্বল্প সময়ের মধ্যে স্থাপত্য নক্সা প্রণয়নের কাজটি সম্পন্ন করে ভবন মালিকের নিকট সরবরাহ করতে পারে। নির্মাণ বিধিমালা সংশোধন করে ‘ভবন নির্মাণ পরামর্শ কেন্দ্র’ ব্যতিত নিজের খেয়াল-খুশি মতো কোন ভবন নির্মাণ করা যাবে না মর্মে গেজেট প্রকাশ করতে হবে। প্রস্তাবনাসমূহ বাস্তবায়ন হলে প্রান্তিক পর্যায়ের ভবন মালিকগণ ভবন নির্মাণের পূর্বে সকল ধরনের পরামর্শ, স্থাপত্য নক্সা, অবকাঠামোগত ডিজাইন, প্লাম্বিং ডিজাইন, ইলেক্ট্রোমেক্যানিক্যাল ডিজাইন, আগুননিরোধক ডিজাইন প্রণয়নের কাজসমূহ দক্ষ প্রকৗশলী ও স্থপতির মাধ্যমে সম্পন্ন করতে পারবে। নির্মাণকালীন সময়ে দক্ষ প্রকৌশলী ও জনবল দ্বারা কারিগরি সহায়তা পাবেন এবং মানসম্পন্ন, ভ’মিকম্প প্রতিরোধী, পরিবেশবান্ধব মালামালের ঝঢ়বপরভরপধঃরড়হ এর তথ্য সহজেই প্রাপ্ত হবেন। এর ফলে একজন ভবন মালিক কোথায় যাবে, কার কাছ থেকে নক্সা গ্রহণ করবে, যে প্রকৌশলীর খোঁজ পেয়েছে তিনি কতটুকু মানসম্পন্ন ড্রয়িং ডিজাইন করেন এবং বিল্ডিং কোড অনুযায়ী ভবনের নির্মাণ কাজ হচ্ছে কিনা অর্থাৎ বিল্ডিং কোড বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ামূহ অনুসরণ করা ইত্যাদি কোন চিন্তাই ভবন মালিককে করতে হবে না। এতে নাগরিক সেবা প্রাপ্তি এবং ইঘইঈ ঈড়ফব বাস্তবায়ন নিশ্চিত হবে। ফলশ্রুতিতে ভূমিকম্পজনিত অথবা ন্য কোনভাবে সৃষ্ট প্রাকৃতিক বিপর্যয় হতে জানমালের ক্ষতির সম্ভাবনা অনেকাংশে কমিয়ে বা একদম শূন্যের কোঠায় আনা সম্ভব হবে। সরকার ও জনগণের লাভ কী? গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদঃ ১৮ক অনুযায়ী রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করিবেন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীব-বৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন, বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করিবেন বিধায় এ ধরনের সেবা প্রদান করা রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব। এছাড়া এই সেবাটি প্রদানের মাধ্যমে ভবন মালিকের কাছ হতে নির্দিষ্ট ফি সংগ্রহ করে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি আরোহনের পথও উন্মুক্ত হবে। বিনিময়ে একজন ভবন মালিক অতি সহজে একটি নিরাপদ, দৃষ্টিনন্দন, মানসম্পন্ন ভবনে নিশ্চিন্তে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাসের নিশ্চয়তা পাবেন এবং ব্যক্তিপর্যায়ে ভবন নির্মাণকাজের অনিয়ম রোধ করা ও সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা সম্ভব হবে এবং বিল্ডিং কোড বাস্তবায়ন নিশ্চিত হবে। মনে রাখতে হবে ‘বিল্ডিং কোড অনুসরন, নিশ্চিত করে নিরাপদ ভবন’। তবেই একটি সুশৃঙ্খল, দৃষ্টিনন্দন, পরিবেশবান্ধব ও টেকসই নগরায়ন গঠিত হবে। এতে কৃষি জমি, জলাভূমিও রক্ষা পাবে। আর তা না হলে যে কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে গোটা দেশ ও জাতি। আর কালক্ষেপণ নয়। উপরোক্ত প্রস্তাবনাসমূহ দ্রুত বাস্তবায়ন করে গণর্পূত অধিদপ্তরের মাঠপর্যায়ের অফিস গণপূর্ত বিভাগকে জেলা হতে উপজেলা পর্যন্ত সম্প্রসারিত করে নির্মাণকাজে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে বিল্ডিং কোড বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের এখনই সঠিক সময়।

[লেখক : প্রকৌশলী, গণপূর্ত রক্ষণাবেক্ষণ সার্কেল, গণপূর্ত অধিদপ্তর]

back to top