alt

উপ-সম্পাদকীয়

নদীর প্রাণ শুশুক, নিরাপদে বেঁচে থাকুক

দীপংকর বর

: শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

ডলফিন বা শুশুক নদী ও সমুদ্রের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে এক অসাধারণ ভূমিকা পালন করে। ডলফিন আমাদের পরিবেশের এক গুরুত্বপূর্ণ সূচক। জলজ বাস্তুসংস্থানের স্বাস্থ্য ও স্থিতিশীলতা নির্ভর করে এই প্রজাতির ওপর। বিশেষ করে মিঠা পানির ডলফিন জলজ প্রাণীদের খাদ্য শৃঙ্খল সুরক্ষিত রাখে। জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণ যখন আমাদের নদী, হ্রদ ও সাগরকে বিপর্যস্ত করে তুলছে, তখন ডলফিন এক ধরনের প্রাকৃতিক সতর্ক বার্তা দেয়। যদি ডলফিনের সংখ্যা কমতে থাকে বা তাদের মধ্যে রোগ দেখা দেয়, তা সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রে দূষণ বা অন্যান্য পরিবেশগত সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। তাই ডলফিনের অবস্থান এবং সংখ্যা পরিবেশের সঠিক অবস্থা জানার অন্যতম প্রধান মানদ- হিসেবে বিবেচিত। তারা শিকারি হিসেবে দুর্বল ও অসুস্থ মাছ খায়, যা পানির জীববৈচিত্র্যকে স্বাস্থ্যকর রাখে। ডলফিনের এই শিকার করার প্রবণতা সমুদ্রের মাছের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। ডলফিনের সংরক্ষণ সামুদ্রিক জীবনের অন্যান্য প্রজাতির জন্যও উপকারী, কারণ তাদের অনুপস্থিতি বা সংখ্যার হ্রাস সামুদ্রিক পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে।

নদীর প্রাণ ডলফিন-শুশুক, নিরাপদে বেঁচে থাকুক প্রতিপাদ্যে ২৪ অক্টোবর আন্তর্জাতিক মিঠাপানির ডলফিন দিবস পালিত হয়েছে। বন অধিদপ্তরের তথ্য মতে, আমাদের দেশে যে দুটি নদীর ডলফিন আছে তা হলো শুশুক ডলফিন আর ইরাবতী ডলফিন। আই.ইউ.সি.এন এর গ্লোবাল রেড লিস্ট ক্যাটাগরিতে দুটোই ঝুঁকিপূর্ণ ‘এন্ডেঞ্জার্ড এনিম্যাল’। বাংলাদেশে গঙ্গা নদীর ডলফিনসহ অন্যান্য প্রজাতির ডলফিন বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে। এর প্রধান কারণ হলো নদীর দূষণ, অপ্রয়োজনীয় মাছ ধরার জাল, জলবিদ্যুৎ বাঁধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নদীর প্রবাহে পরিবর্তন। এদের সংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে, যা আমাদের বাস্তুসংস্থানকে ঝুঁকিতে ফেলছে। ডলফিন সংরক্ষণ শুধু একটি প্রজাতি সংরক্ষণ নয়, বরং আমাদের পরিবেশের সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। যখন ডলফিনকে রক্ষা করা হয়, তখন তা জলজ পরিবেশের অন্যান্য প্রাণীদের জন্যও উপকার বয়ে আনে।

সুন্দরবন ডলফিনের নিরাপদ আবাসস্থল হওয়ায় ২০১২ সনের জানুয়ারি মাসে দেশের প্রথম তিনটি ডলফিন অভয়ারণ্য ঘোষিত হয়। সুন্দরবনের চাঁদপাই, ঢাংমারী এবং দুধমুখী ডলফিন অভয়ারণ্যে যে কোনো সময় গেলেই ডলফিন দেখা যায়। সুন্দরবন এবং এর আশপাশের এলাকায় ২০২০ সাল পর্যন্ত ডলফিন এবং জলজ প্রতিবেশ রক্ষায় সরকারের প্রথম প্রকল্পটি সত্যিকার অর্থেই একটি সফল প্রকল্প। যে প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সুন্দরবন নির্ভর জনসাধারণ বিশেষ করে জেলে সম্প্রদায়ের মধ্যে ডলফিনের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বেড়েছে।

ডলফিন সংরক্ষণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে হালদা নদীতে ডলফিনের সংখ্যা নির্ণয় এবং ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। বন অধিদপ্তরের টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্পের আওতায় ‘ডলফিন কনজারভেশন প্রোগ্রামস ইন যমুনা, হালদা এন্ড আদার ইম্পর্টেন্ট রিভারস’ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে, ডব্লিউসিএস বাংলাদেশ গাঙ্গেয় ডলফিনের ওপর ব্যাপক পর্যালোচনা ও গভীরতার সমীক্ষা পরিচালনা করে। বাংলাদেশ মেঘনা ও এর শাখা নদী, পদ্মা, যমুনা, কর্ণফুলী এবং হালদা নদীর ১ হাজার ৯০৫ কিমি. এলাকাজুড়ে নদীর ডলফিনের ভিজ্যুয়াল বোট-ভিত্তিক সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। দুটি স্বাধীন পর্যবেক্ষক দল দ্বারা সমীক্ষা চালানো হয়। এই সমীক্ষার ফলে প্রায় ৬৩৬টি দল বা ১ হাজার ৩৫২টি গাঙ্গেয় ডলফিনের উপস্থিতি নির্ধারণ করা হয়।

দেশব্যাপী ডলফিন সংরক্ষণ কার্যক্রম আরও জোরদার করার জন্য এবং বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বন অধিদপ্তর কর্তৃক শুশুক বা গাঙ্গেয় ডলফিনকে জাতীয় জলজ প্রাণী হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রস্তাবটি বাস্তবায়িত হলে ডলফিন সংরক্ষণ আরও গুরুত্ব পাবে বলে আশা করা যায়। এর বাইরে, মিঠা পানির ডলফিন সংরক্ষণে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে বাংলাদেশ সরকার। গবেষণা, ডলফিনের গতিবিধি ও স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ এবং প্রজনন সংক্রান্ত উদ্যোগও গ্রহণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া, বিভিন্ন নদীতে পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও নদী দূষণ রোধে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ বাড়ানো হয়েছে।

ডলফিন সংরক্ষণে সফলতা পেতে হলে সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণ ও সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। প্লাস্টিক, রাসায়নিক পদার্থ এবং অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য নদীতে ফেলার ফলে ডলফিনের আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের প্রতিটি ব্যক্তির দায়িত্ব হলো নদী ও সমুদ্র দূষণ বন্ধে সচেতন হওয়া। প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যের ব্যবহারকে উৎসাহিত করা উচিত। জেলে সম্প্রদায়কে সচেতন করা প্রয়োজন, যাতে তারা ডলফিনদের সংরক্ষণের লক্ষ্যে জাল ব্যবহার করার সময় সতর্ক থাকেন। ডলফিন সংরক্ষণের জন্য নিরাপদ ও আইনসম্মত মাছ ধরার পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। নদী ও উপকূলীয় এলাকায় নৌযান চালানোর সময় ডলফিনদের প্রতি বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে তারা দুর্ঘটনার শিকার না হয়।

ডলফিন শুধু সমুদ্র ও নদীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে না, বরং আমাদের পরিবেশের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডলফিন শুধু পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখে না, তারা আমাদের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যগত জীবনের অংশ। বাংলাদেশের সুন্দরবন ও উপকূলীয় অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের সঙ্গে ডলফিন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমাদের দায়িত্ব শুধু নিজেদের জন্য নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও ডলফিনের এই সুন্দর প্রজাতিকে সংরক্ষণ করা।

[লেখক : জনসংযোগ কর্মকর্তা, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ]

জনসংখ্যা : সম্পদ না সংকট?

ব্রিকসে নতুন ভূ-রাজনৈতিক ব্যবস্থার উত্থান

রম্যগদ্য : ‘ল্যাংড়া-লুলা, আতুড়-পাতুড়’

আষাঢ়ী পূর্ণিমা : আত্মশুদ্ধির সাধনায় বুদ্ধের অনন্ত আলো

বদলে যাওয়া মাটিতে সাহসী বীজ : জলবায়ুর বিপরীতে বাংলাদেশের কৃষির অভিযোজনগাথা

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থান-গাথা : ‘শিকলে নাহি দিব ধরা’

প্রাচীন যৌধেয় জাতি ও তাদের সাম্যবাদী শাসন

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন

টেকসই উন্নয়নের স্বপ্নপূরণে উপগ্রহ চিত্রই চাবিকাঠি

রাবার শিল্প : সংকট, করণীয় ও উত্তরণের দিশা

রম্যগদ্য : দুধ, দই, কলা...

ছবি

কোপার্নিকাস : আলো হয়ে জন্ম নেওয়া বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবর্তক

জলবায়ু সংকটে মানবসভ্যতা

টেকসই অর্থনীতির জন্য চাই টেকসই ব্যাংকিং

ডিজিটাল দাসত্ব : মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : আস্থা ভঙ্গ ও জবাবদিহিতার সংকট

আসামি এখন নির্বাচন কমিশন

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

ছবি

বাংলার অনন্য লোকসংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

দেশের অর্থ পাচারের বাস্তবতা

খাদ্য নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত

আবারও কি রোহিঙ্গাদের ত্যাগ করবে বিশ্ব?

প্লান্ট ক্লিনিক বদলে দিচ্ছে কৃষির ভবিষ্যৎ

ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী করতে করণীয়

রম্যগদ্য : ‘ডন ডনা ডন ডন...’

ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব : কে সন্ত্রাসী, কে শিকার?

সুস্থ ও শক্তিশালী জাতি গঠনে শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব

প্রতিরোধই উত্তম : মাদকমুক্ত প্রজন্ম গড়ার ডাক

tab

উপ-সম্পাদকীয়

নদীর প্রাণ শুশুক, নিরাপদে বেঁচে থাকুক

দীপংকর বর

শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

ডলফিন বা শুশুক নদী ও সমুদ্রের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষার ক্ষেত্রে এক অসাধারণ ভূমিকা পালন করে। ডলফিন আমাদের পরিবেশের এক গুরুত্বপূর্ণ সূচক। জলজ বাস্তুসংস্থানের স্বাস্থ্য ও স্থিতিশীলতা নির্ভর করে এই প্রজাতির ওপর। বিশেষ করে মিঠা পানির ডলফিন জলজ প্রাণীদের খাদ্য শৃঙ্খল সুরক্ষিত রাখে। জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণ যখন আমাদের নদী, হ্রদ ও সাগরকে বিপর্যস্ত করে তুলছে, তখন ডলফিন এক ধরনের প্রাকৃতিক সতর্ক বার্তা দেয়। যদি ডলফিনের সংখ্যা কমতে থাকে বা তাদের মধ্যে রোগ দেখা দেয়, তা সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রে দূষণ বা অন্যান্য পরিবেশগত সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। তাই ডলফিনের অবস্থান এবং সংখ্যা পরিবেশের সঠিক অবস্থা জানার অন্যতম প্রধান মানদ- হিসেবে বিবেচিত। তারা শিকারি হিসেবে দুর্বল ও অসুস্থ মাছ খায়, যা পানির জীববৈচিত্র্যকে স্বাস্থ্যকর রাখে। ডলফিনের এই শিকার করার প্রবণতা সমুদ্রের মাছের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রে ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। ডলফিনের সংরক্ষণ সামুদ্রিক জীবনের অন্যান্য প্রজাতির জন্যও উপকারী, কারণ তাদের অনুপস্থিতি বা সংখ্যার হ্রাস সামুদ্রিক পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে।

নদীর প্রাণ ডলফিন-শুশুক, নিরাপদে বেঁচে থাকুক প্রতিপাদ্যে ২৪ অক্টোবর আন্তর্জাতিক মিঠাপানির ডলফিন দিবস পালিত হয়েছে। বন অধিদপ্তরের তথ্য মতে, আমাদের দেশে যে দুটি নদীর ডলফিন আছে তা হলো শুশুক ডলফিন আর ইরাবতী ডলফিন। আই.ইউ.সি.এন এর গ্লোবাল রেড লিস্ট ক্যাটাগরিতে দুটোই ঝুঁকিপূর্ণ ‘এন্ডেঞ্জার্ড এনিম্যাল’। বাংলাদেশে গঙ্গা নদীর ডলফিনসহ অন্যান্য প্রজাতির ডলফিন বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে। এর প্রধান কারণ হলো নদীর দূষণ, অপ্রয়োজনীয় মাছ ধরার জাল, জলবিদ্যুৎ বাঁধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নদীর প্রবাহে পরিবর্তন। এদের সংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে, যা আমাদের বাস্তুসংস্থানকে ঝুঁকিতে ফেলছে। ডলফিন সংরক্ষণ শুধু একটি প্রজাতি সংরক্ষণ নয়, বরং আমাদের পরিবেশের সার্বিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। যখন ডলফিনকে রক্ষা করা হয়, তখন তা জলজ পরিবেশের অন্যান্য প্রাণীদের জন্যও উপকার বয়ে আনে।

সুন্দরবন ডলফিনের নিরাপদ আবাসস্থল হওয়ায় ২০১২ সনের জানুয়ারি মাসে দেশের প্রথম তিনটি ডলফিন অভয়ারণ্য ঘোষিত হয়। সুন্দরবনের চাঁদপাই, ঢাংমারী এবং দুধমুখী ডলফিন অভয়ারণ্যে যে কোনো সময় গেলেই ডলফিন দেখা যায়। সুন্দরবন এবং এর আশপাশের এলাকায় ২০২০ সাল পর্যন্ত ডলফিন এবং জলজ প্রতিবেশ রক্ষায় সরকারের প্রথম প্রকল্পটি সত্যিকার অর্থেই একটি সফল প্রকল্প। যে প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সুন্দরবন নির্ভর জনসাধারণ বিশেষ করে জেলে সম্প্রদায়ের মধ্যে ডলফিনের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বেড়েছে।

ডলফিন সংরক্ষণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে হালদা নদীতে ডলফিনের সংখ্যা নির্ণয় এবং ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। বন অধিদপ্তরের টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্পের আওতায় ‘ডলফিন কনজারভেশন প্রোগ্রামস ইন যমুনা, হালদা এন্ড আদার ইম্পর্টেন্ট রিভারস’ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে, ডব্লিউসিএস বাংলাদেশ গাঙ্গেয় ডলফিনের ওপর ব্যাপক পর্যালোচনা ও গভীরতার সমীক্ষা পরিচালনা করে। বাংলাদেশ মেঘনা ও এর শাখা নদী, পদ্মা, যমুনা, কর্ণফুলী এবং হালদা নদীর ১ হাজার ৯০৫ কিমি. এলাকাজুড়ে নদীর ডলফিনের ভিজ্যুয়াল বোট-ভিত্তিক সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। দুটি স্বাধীন পর্যবেক্ষক দল দ্বারা সমীক্ষা চালানো হয়। এই সমীক্ষার ফলে প্রায় ৬৩৬টি দল বা ১ হাজার ৩৫২টি গাঙ্গেয় ডলফিনের উপস্থিতি নির্ধারণ করা হয়।

দেশব্যাপী ডলফিন সংরক্ষণ কার্যক্রম আরও জোরদার করার জন্য এবং বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বন অধিদপ্তর কর্তৃক শুশুক বা গাঙ্গেয় ডলফিনকে জাতীয় জলজ প্রাণী হিসেবে ঘোষণা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রস্তাবটি বাস্তবায়িত হলে ডলফিন সংরক্ষণ আরও গুরুত্ব পাবে বলে আশা করা যায়। এর বাইরে, মিঠা পানির ডলফিন সংরক্ষণে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে বাংলাদেশ সরকার। গবেষণা, ডলফিনের গতিবিধি ও স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ এবং প্রজনন সংক্রান্ত উদ্যোগও গ্রহণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া, বিভিন্ন নদীতে পর্যটন নিয়ন্ত্রণ ও নদী দূষণ রোধে আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ বাড়ানো হয়েছে।

ডলফিন সংরক্ষণে সফলতা পেতে হলে সাধারণ জনগণের অংশগ্রহণ ও সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। প্লাস্টিক, রাসায়নিক পদার্থ এবং অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য নদীতে ফেলার ফলে ডলফিনের আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের প্রতিটি ব্যক্তির দায়িত্ব হলো নদী ও সমুদ্র দূষণ বন্ধে সচেতন হওয়া। প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যের ব্যবহারকে উৎসাহিত করা উচিত। জেলে সম্প্রদায়কে সচেতন করা প্রয়োজন, যাতে তারা ডলফিনদের সংরক্ষণের লক্ষ্যে জাল ব্যবহার করার সময় সতর্ক থাকেন। ডলফিন সংরক্ষণের জন্য নিরাপদ ও আইনসম্মত মাছ ধরার পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে। নদী ও উপকূলীয় এলাকায় নৌযান চালানোর সময় ডলফিনদের প্রতি বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে তারা দুর্ঘটনার শিকার না হয়।

ডলফিন শুধু সমুদ্র ও নদীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে না, বরং আমাদের পরিবেশের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডলফিন শুধু পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখে না, তারা আমাদের সাংস্কৃতিক ও ঐতিহ্যগত জীবনের অংশ। বাংলাদেশের সুন্দরবন ও উপকূলীয় অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের সঙ্গে ডলফিন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমাদের দায়িত্ব শুধু নিজেদের জন্য নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যও ডলফিনের এই সুন্দর প্রজাতিকে সংরক্ষণ করা।

[লেখক : জনসংযোগ কর্মকর্তা, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ]

back to top