alt

উপ-সম্পাদকীয়

জাতিসংঘ ভবন

শঙ্কর প্রসাদ দে

: রোববার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪

আমেরিকার প্রথম রাজধানী ছিল নিউইয়র্ক। অনেকটা চট্টগ্রামের মতো। ইস্ট রিভারের মোহনা ও আটলান্টিকের কোলঘেঁষে এই শহরের পত্তন। এখন এটি গোটা পৃথিবীর রাজধানী। আমি বলি ধনী রাষ্ট্রগুলোর নৈশক্লাব। ডিসেম্বর ২০২৩, অন্তত বিশবার ভবনটির সামনে চক্কর দিয়েছি। খুটিয়ে খুটিয়ে দেখার ইচ্ছে একবারের জন্যও জমল না। যতবার দাঁড়িয়েছি, ততবার মনে পড়েছে একাত্তরের ডিসেম্বরের প্রথমার্ধ, বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকাতে দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধোত্তর সবচে ভয়ংকর ষড়যন্ত্র হয়েছিল এই ভবন থেকে। ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ বিকেল ৫টায় কুয়েত এয়ারের বিশাল বিমানটি নিউইয়র্ক বিমানবন্দরে নেমেছে বটে তবে পার্কিং করতে লেগেছে আধা ঘণ্টা। বুঝলাম সম্ভবত; এটি পৃথিবীর বৃহত্তম বিমানবন্দর। ম্যানহাটন অর্থাৎ জাতিসংঘ সদর দপ্তর। পূর্বতীর ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে সাদামাটা পার্ক। বাহারি ফুলেল সমাবেশ নেই তবে অনেকক্ষণ বসার সুব্যবস্থা আছে। ইস্ট নদীর পশ্চিম তীরে ম্যানহাটন ঘেঁষে বিশাল অট্টালিকা। বিখ্যাত ধনকুবের রকফেলার ১৯৪৮ সালে ৮.৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ১৬ একর জায়গা কিনে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকান সরকার ভবন নির্মাণের সমস্ত ব্যয়ভার বহন করার ঘোষণা দিলে মাত্র ৪ বছরে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ব্রাজিলিয়ান বিখ্যাত স্থপতি অস্কার নিয়েমারের নকশাটি কমিটি কর্তৃক চূড়ান্ত অনুমোদনের সঙ্গে সঙ্গে রকফেলারের উপদেষ্টা হ্যারিসনকে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়। ভবন উদ্ভোধন হয় ১৯৫১ সালের ৯ জানুয়ারি।

ধারণা করা হয় আধুনিক স্থাপত্য শৈলীর শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হলো জাতিসংঘ ভবন। রাতের বেলায় ভবনটির প্রকৃত সৌন্দর্যের এক শতাংশও উপভোগ করা যায় না। মন ভরে দেখতে হলে ইস্ট নদীর পূর্ব পাড় থেকে দিনের বেলায় দেখতে হবে। নিউইয়র্ক শহরের নিরন্তর বর্ধিষ্ণু কর্মকা-ের কারণে ইস্ট নদীর অস্তিত্ব এখন লেকে রূপান্তর ঘটেছে। তীব্র শীত উপেক্ষা করে বসে বসে ভাবছিলাম, কে বলবে লেকের মতো জলাশয়টি একসময় ছিল প্রমত্তা ইস্ট নদী। জাতিসংঘের ভালোমন্দ দুটো দিকই আছে। যদিও সামরিক এবং রাজনৈতিক বিরোধের ক্ষেত্রে এর সফলতা নিতান্ত কর্মদীর্ঘ আশি বছরের ফিলিস্তিন সংকটে জাতিসংঘের সফলতা নেই বললে চলে। আজকের ইউক্রেন সংকটেও জাতিসংঘের বক্তব্য একেবারেই মূল্যহীন। বসনিয়া সংকটে জাতিসংঘ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। পৃথিবীব্যাপী এখনো মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। মায়ানমারের মতো কিছু দেশে মোটামুটি সামরিক শাসনই চলছে। একাত্তরের ডিসেম্বর ১ম সপ্তাহেই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়েছিল সাধারণ পরিষদ। সোভিয়েত ভেটো প্রয়োগ না করলে আমার জন্মভূমি স্বাধীন হতো না শুধু জাতিসংঘের কারণে। হ্যাঁ এখনো রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণ, ফিলিস্তিন উদ্বাস্তুদের মানবিক সাহায্য ও ভরণপোষণসহ পৃথিবীর বহু ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ অঞ্চলে জাতিসংঘই দ্রুততম সময়ে সাহায্যের হাত বাড়ায়। জলবায়ু সচেতনতা যতটুকু অর্জিত হয়েছে তার মূল সফলতা জাতিসংঘের। সভ্যতার ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণে অঙ্গ সংগঠন ইউনেস্কো প্রতিষ্ঠানের কৃতিত্ব ঈর্ষণীয়।

এরপরও কথা থেকে যায়, জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের কি আদৌ কোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিক আছে? জাতিসংঘের বিরুদ্ধে সবচে বড় অভিযোগ হলো, প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় হোয়াইট হাউসের ইশারায়। এরপরও যারা দাবি করেন ভালো কাজওতো অনেক হয়েছে জাতিসংঘ ভবনটির নীতি নির্ধারণী কক্ষে। তাদের স্মরণ রাখা উচিত তাও হয় আমেরিকা, কানাডা, ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্সের মতো হাতেগোনা কয়েকটি ধনী দেশের অনুকম্পায় এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একদিন ভবনের নিচে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম, আমাদের মতো দরিদ্র দেশগুলো অনেকটাই হাততালির দর্শক, বছরে একবার বক্তৃতা দেয়া আর মাঝে মধ্যে কিছু কনফারেন্সে অংশ নেয়া। এর বাইরে জাতিসংঘ মানে কতেক ধনী দেশের নৈশ খোশগল্প আর খায়েশি সিদ্ধান্ত গ্রহণের বৈশি^ক আড্ডা খানা।

[লেখক : আইনজীবী]

জনসংখ্যা : সম্পদ না সংকট?

ব্রিকসে নতুন ভূ-রাজনৈতিক ব্যবস্থার উত্থান

রম্যগদ্য : ‘ল্যাংড়া-লুলা, আতুড়-পাতুড়’

আষাঢ়ী পূর্ণিমা : আত্মশুদ্ধির সাধনায় বুদ্ধের অনন্ত আলো

বদলে যাওয়া মাটিতে সাহসী বীজ : জলবায়ুর বিপরীতে বাংলাদেশের কৃষির অভিযোজনগাথা

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থান-গাথা : ‘শিকলে নাহি দিব ধরা’

প্রাচীন যৌধেয় জাতি ও তাদের সাম্যবাদী শাসন

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন

টেকসই উন্নয়নের স্বপ্নপূরণে উপগ্রহ চিত্রই চাবিকাঠি

রাবার শিল্প : সংকট, করণীয় ও উত্তরণের দিশা

রম্যগদ্য : দুধ, দই, কলা...

ছবি

কোপার্নিকাস : আলো হয়ে জন্ম নেওয়া বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবর্তক

জলবায়ু সংকটে মানবসভ্যতা

টেকসই অর্থনীতির জন্য চাই টেকসই ব্যাংকিং

ডিজিটাল দাসত্ব : মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : আস্থা ভঙ্গ ও জবাবদিহিতার সংকট

আসামি এখন নির্বাচন কমিশন

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

ছবি

বাংলার অনন্য লোকসংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

দেশের অর্থ পাচারের বাস্তবতা

খাদ্য নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত

আবারও কি রোহিঙ্গাদের ত্যাগ করবে বিশ্ব?

প্লান্ট ক্লিনিক বদলে দিচ্ছে কৃষির ভবিষ্যৎ

ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী করতে করণীয়

রম্যগদ্য : ‘ডন ডনা ডন ডন...’

ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব : কে সন্ত্রাসী, কে শিকার?

সুস্থ ও শক্তিশালী জাতি গঠনে শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব

প্রতিরোধই উত্তম : মাদকমুক্ত প্রজন্ম গড়ার ডাক

tab

উপ-সম্পাদকীয়

জাতিসংঘ ভবন

শঙ্কর প্রসাদ দে

রোববার, ২৭ অক্টোবর ২০২৪

আমেরিকার প্রথম রাজধানী ছিল নিউইয়র্ক। অনেকটা চট্টগ্রামের মতো। ইস্ট রিভারের মোহনা ও আটলান্টিকের কোলঘেঁষে এই শহরের পত্তন। এখন এটি গোটা পৃথিবীর রাজধানী। আমি বলি ধনী রাষ্ট্রগুলোর নৈশক্লাব। ডিসেম্বর ২০২৩, অন্তত বিশবার ভবনটির সামনে চক্কর দিয়েছি। খুটিয়ে খুটিয়ে দেখার ইচ্ছে একবারের জন্যও জমল না। যতবার দাঁড়িয়েছি, ততবার মনে পড়েছে একাত্তরের ডিসেম্বরের প্রথমার্ধ, বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঠেকাতে দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধোত্তর সবচে ভয়ংকর ষড়যন্ত্র হয়েছিল এই ভবন থেকে। ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩ বিকেল ৫টায় কুয়েত এয়ারের বিশাল বিমানটি নিউইয়র্ক বিমানবন্দরে নেমেছে বটে তবে পার্কিং করতে লেগেছে আধা ঘণ্টা। বুঝলাম সম্ভবত; এটি পৃথিবীর বৃহত্তম বিমানবন্দর। ম্যানহাটন অর্থাৎ জাতিসংঘ সদর দপ্তর। পূর্বতীর ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে সাদামাটা পার্ক। বাহারি ফুলেল সমাবেশ নেই তবে অনেকক্ষণ বসার সুব্যবস্থা আছে। ইস্ট নদীর পশ্চিম তীরে ম্যানহাটন ঘেঁষে বিশাল অট্টালিকা। বিখ্যাত ধনকুবের রকফেলার ১৯৪৮ সালে ৮.৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ১৬ একর জায়গা কিনে দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকান সরকার ভবন নির্মাণের সমস্ত ব্যয়ভার বহন করার ঘোষণা দিলে মাত্র ৪ বছরে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। ব্রাজিলিয়ান বিখ্যাত স্থপতি অস্কার নিয়েমারের নকশাটি কমিটি কর্তৃক চূড়ান্ত অনুমোদনের সঙ্গে সঙ্গে রকফেলারের উপদেষ্টা হ্যারিসনকে প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়। ভবন উদ্ভোধন হয় ১৯৫১ সালের ৯ জানুয়ারি।

ধারণা করা হয় আধুনিক স্থাপত্য শৈলীর শ্রেষ্ঠ নিদর্শন হলো জাতিসংঘ ভবন। রাতের বেলায় ভবনটির প্রকৃত সৌন্দর্যের এক শতাংশও উপভোগ করা যায় না। মন ভরে দেখতে হলে ইস্ট নদীর পূর্ব পাড় থেকে দিনের বেলায় দেখতে হবে। নিউইয়র্ক শহরের নিরন্তর বর্ধিষ্ণু কর্মকা-ের কারণে ইস্ট নদীর অস্তিত্ব এখন লেকে রূপান্তর ঘটেছে। তীব্র শীত উপেক্ষা করে বসে বসে ভাবছিলাম, কে বলবে লেকের মতো জলাশয়টি একসময় ছিল প্রমত্তা ইস্ট নদী। জাতিসংঘের ভালোমন্দ দুটো দিকই আছে। যদিও সামরিক এবং রাজনৈতিক বিরোধের ক্ষেত্রে এর সফলতা নিতান্ত কর্মদীর্ঘ আশি বছরের ফিলিস্তিন সংকটে জাতিসংঘের সফলতা নেই বললে চলে। আজকের ইউক্রেন সংকটেও জাতিসংঘের বক্তব্য একেবারেই মূল্যহীন। বসনিয়া সংকটে জাতিসংঘ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। পৃথিবীব্যাপী এখনো মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। মায়ানমারের মতো কিছু দেশে মোটামুটি সামরিক শাসনই চলছে। একাত্তরের ডিসেম্বর ১ম সপ্তাহেই যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়েছিল সাধারণ পরিষদ। সোভিয়েত ভেটো প্রয়োগ না করলে আমার জন্মভূমি স্বাধীন হতো না শুধু জাতিসংঘের কারণে। হ্যাঁ এখনো রোহিঙ্গাদের ভরণপোষণ, ফিলিস্তিন উদ্বাস্তুদের মানবিক সাহায্য ও ভরণপোষণসহ পৃথিবীর বহু ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ অঞ্চলে জাতিসংঘই দ্রুততম সময়ে সাহায্যের হাত বাড়ায়। জলবায়ু সচেতনতা যতটুকু অর্জিত হয়েছে তার মূল সফলতা জাতিসংঘের। সভ্যতার ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণে অঙ্গ সংগঠন ইউনেস্কো প্রতিষ্ঠানের কৃতিত্ব ঈর্ষণীয়।

এরপরও কথা থেকে যায়, জাতিসংঘের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের কি আদৌ কোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিক আছে? জাতিসংঘের বিরুদ্ধে সবচে বড় অভিযোগ হলো, প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় হোয়াইট হাউসের ইশারায়। এরপরও যারা দাবি করেন ভালো কাজওতো অনেক হয়েছে জাতিসংঘ ভবনটির নীতি নির্ধারণী কক্ষে। তাদের স্মরণ রাখা উচিত তাও হয় আমেরিকা, কানাডা, ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্সের মতো হাতেগোনা কয়েকটি ধনী দেশের অনুকম্পায় এসব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একদিন ভবনের নিচে দাঁড়িয়ে ভাবছিলাম, আমাদের মতো দরিদ্র দেশগুলো অনেকটাই হাততালির দর্শক, বছরে একবার বক্তৃতা দেয়া আর মাঝে মধ্যে কিছু কনফারেন্সে অংশ নেয়া। এর বাইরে জাতিসংঘ মানে কতেক ধনী দেশের নৈশ খোশগল্প আর খায়েশি সিদ্ধান্ত গ্রহণের বৈশি^ক আড্ডা খানা।

[লেখক : আইনজীবী]

back to top