alt

উপ-সম্পাদকীয়

হ্যালোইনে আমি একা

রহমান মৃধা

: বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪

হ্যালোইন একটি বিশেষ উৎসব, যা ভয়, সৃষ্টিশীলতা এবং সম্প্রদায়ের এক ভিন্ন মেজাজ তৈরি করে। এটি মূলত আয়ারল্যান্ডের প্রাচীন সামহেইন উৎসব থেকে উদ্ভূত, যেখানে মৃত আত্মাদের পৃথিবীতে ফিরে আসার বিশ্বাস ছিল। এই উৎসবের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ভয়ের মুখোমুখি হওয়ার সাহস তৈরি হয় এবং তারা ভুতুড়ে পোশাকে সেজে একে অপরকে ভয় দেখিয়ে আনন্দ উপভোগ করে। হ্যালোইন পালনের মূল থিমগুলো হলোÑ

মৃত্যু ও স্মৃতি : হ্যালোইন মৃতদের স্মরণে উৎসর্গ করা হয়। এটি জীবনের অমোঘ সত্য, মৃত্যু এবং স্মৃতির সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের প্রতি এক গভীর দৃষ্টি দেয়।

ভয় এবং হাসি : ভয়ের সঙ্গে মজার সমন্বয়। ভুতুড়ে পোশাক এবং সাজসজ্জার মাধ্যমে মানুষ ভয়কে উপভোগ করে। এটি আমাদের শেখায় যে, ভয় অথবা অজানা কিছু থেকে পালানোর বদলে সেটাকে মোকাবেলা করা এবং উপভোগ করা সম্ভব।

সম্প্রদায়ের সংহতি : হ্যালোইন এক ধরনের সামাজিক মিলনমেলা। এটি মানুষকে একসাথে নিয়ে আসে, যেখানে তারা আনন্দ এবং মজা ভাগ করে নেয়। শিশুদের ‘ট্রিক অর ট্রিট’ করার মাধ্যমে এবং বড়রা পার্টির আয়োজন করে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হন।

সৃষ্টিশীলতা : হ্যালোইন কল্পনা ও সৃষ্টিশীলতার একটি প্ল্যাটফর্ম। কুমড়া খোদাই, ভুতুড়ে সাজসজ্জা এবং ভৌতিক খেলাধুলা সবই আমাদের সৃজনশীলতা প্রকাশের সুযোগ দেয়।

মরতে তো একদিন হবেইÑ এ কথা সবাই জানে, কিন্তু মৃত্যুতে মজা, না সাজা, তা কেবল মৃতরাই জানে। শরৎচন্দ্র শ্রীকান্ত উপন্যাসে লিখেছেন, ‘মরতে তো একদিন হবেই।’ এই বাক্যটি যেন জীবনের এক অনিবার্য সত্য। জীবন তার আপন গতিতে চলে, থেমে থাকে না এবং চলার মধ্যে কখনো পর হয়ে যায় আপন, কখনো দিন হয়ে যায় রাত।

আমার একটি বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা স্মরণ করতে পারি, যা আমাকে জীবন এবং মৃত্যুর থিমগুলোর সঙ্গে সংযোগ করতে সাহায্য করেছে। অক্টোবরের শেষ দিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডর্মিটরি ছিল প্রায় ফাঁকা। বন্ধুরা ছুটিতে বাড়ি গেছে। সুইডেনে এই সময়টা ‘আল হেলগোন’ নামে পরিচিত, যখন মৃতদের স্মরণে কবরস্থানে মোমবাতি ও ফুল নিয়ে যাওয়া হয়।

১৯৮৫ সালের ৩১ অক্টোবর, আমি ডর্মিটরিতে একা ছিলাম। ঠা-া বাতাস ও তুষারবৃষ্টিতে বাইরের পরিবেশ ছিল ভীষণ ভয়ানক। রাতের অন্ধকারে, নিঃশব্দ ডর্মিটরিতে হঠাৎ দরজার বেল বেজে উঠল। দরজা খুলতেই দেখি, দু’টি পেতœীর মতো চেহারার মেয়ে। গা ছমছম করে উঠলÑ সুইডেনে ভূত?

হঠাৎ আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম। যখন জ্ঞান ফিরে পেলাম, দেখি আমার দুই সুইডিশ বান্ধবী ছাড়া আর সুজান আমার পাশে। তারা আমাকে হ্যালোইনের সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল, কিন্তু পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছিল যে ওরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। তাদের পরিকল্পনা ছিল হ্যালোইনের ভয়ের মজাটা উপভোগ করা, কিন্তু আমার অবস্থায় তারা ভয় পেয়ে গিয়েছিল যে আমি হয়তো হার্টফেল করেছি। সেদিনের সেই মজার এবং ভয়ের মিশ্রিত ঘটনা আজও মনে পড়ে।

জীবনে শত সমস্যার মাঝেও মজা করা এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। সমস্যাগুলো আমাদের ঘিরে ধরে, কিন্তু কজনই বা শিখেছে কিভাবে তাদের মধ্যে থেকেও হাসিমুখে বেঁচে থাকতে হয়? পৃথিবীর অনেক সমাজেই মানুষ এই দক্ষতাটি অর্জন করেনি; কিন্তু জীবন কেবল দুঃখ-কষ্টে ভরা নয়Ñ এতে আনন্দ, হাসি এবং মজার মুহূর্তও রয়েছে, যদি আমরা তা খুঁজে নিতে পারি।

হ্যালোইন এই ধরনের একটি উদাহরণ হতে পারে। ভয়ের সজ্জা, ভূতের রূপধারণ এবং অদ্ভুত পোশাকের মাধ্যমে মানুষ একে অপরকে ভয় দেখিয়ে মজা পায়; কিন্তু এর গভীরে লুকিয়ে আছে এক শিক্ষণীয় দিক। হ্যালোইন আমাদের শেখায় যে, ভয় বা অজানা কিছু থেকে পালানোর বদলে আমরা সেটিকে উপভোগ করতে পারি। এমনকি ভয়ঙ্কর বা অস্বস্তিকর পরিস্থিতিকেও আমরা মজা করে কাটিয়ে উঠতে পারি।

এখানেই হ্যালোইনের আসল শিক্ষাÑ সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার সময় ভয়ে না গুটিয়ে গিয়ে তার মধ্যে থেকে আনন্দ খুঁজে বের করা। জীবনের প্রতিটি সমস্যাই এক একটি চ্যালেঞ্জ, কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জের ভেতরেই লুকিয়ে থাকে মজা, উদ্যম এবং সৃষ্টিশীলতা। ভয়ের মুখে দাঁড়িয়ে সাহসী হওয়া এবং হাসতে শেখাÑ এটি হ্যালোইনের শিক্ষার মূল কথা।

সুইডেনে হ্যালোইন এবং আল হেলগোন উৎসব একসঙ্গে পালন করা হয়Ñ একদিকে ভয়, অন্যদিকে স্মৃতি ও ভালোবাসার মধ্য দিয়ে মৃতদের স্মরণ করা হয়। দিনশেষে মানুষের মধ্যে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, সহমর্মিতা ও সৌহার্দের বন্ধনটাই আমাদের জীবনকে পূর্ণ করে তোলে।

বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিম, খ্রিস্টান এবং হিন্দু জনগণের দেশে, সবাই যার যার ধর্মে বিশ্বাসী এবং সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করে। যদিও সবাই বেহেশত বা স্বর্গে যেতে চায়, কিন্তু কেউ মরতে চায় না। ধর্মীয় বিশ্বাস আমাদের মধ্যে মৃত্যুকে এক ভয়ঙ্কর সত্য হিসেবে চিহ্নিত করে, যেখানে মৃত্যুর পরের জীবন অপেক্ষা করছে; কিন্তু পশ্চাত্যের সংস্কৃতি, বিশেষ করে হ্যালোইন, মৃত্যু এবং অজানাকে হাস্যরসের মাধ্যমে উপভোগ করার সুযোগ দেয়। এভাবে তারা মৃত্যু নিয়ে খেলতে পারে, যেন সেটি একটি বাস্তবতা হলেও তাতে ভয়ের কিছু নেই।

এই ভিন্ন দৃষ্টিকোণ আমাদের শেখায় যে, মৃত্যুকে ভয় পাওয়ার পরিবর্তে, আমাদের জীবনের অভিজ্ঞতাগুলোতে আনন্দ খুঁজে বের করা উচিত। আমাদের আধ্যাত্মিক বিশ্বাসগুলোকে মাথায় রেখেও আমরা যদি মৃত্যুকে একটি নতুন শুরু হিসেবে দেখি এবং জীবনকে উপভোগ করি, তাহলে আমরা জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে একটি বিশেষ স্মৃতি হিসেবে রূপান্তরিত করতে পারব।

এভাবেই জীবন এবং মৃত্যুর সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব, যেখানে ভয় ও আনন্দের এক সুস্থ মিশ্রণ তৈরি হয়।

[লেখক : সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন]

জমি-জমার রেকর্ড সংশোধনে নতুন পরিপত্র ও প্রাসঙ্গিক আইন

র্অথনতৈকি উন্নয়নে জাকাতরে ভূমকিা

কবে মিলবে নতুন নোট

আইনস্টাইনের দেশে

আওয়ামী লীগ থেকে অন্য দলগুলো কি শিক্ষা গ্রহণ করবে?

আজি নূতন রতনে ভূষণে যতনে...

ঈদে বাড়ি ফেরা নিরাপদ হোক

পেঁয়াজের আদ্যোপান্ত

রঙ্গব্যঙ্গ : ‘প্রতিধ্বনি শুনি আমি, প্রতিধ্বনি শুনি...’

মালাকারটোলা গণহত্যা

‘বৈষম্যহীন বাংলায়’ দলিতদের প্রতি সীমাহীন বৈষম্য

বাংলাদেশের রাজনীতি এক কঠিন সন্ধিক্ষণে

স্বাধীনতার ৫৪ বছর

একাত্তরের মার্চে কেমন ছিল শ্রীমঙ্গল

ছবি

মুক্তিযুদ্ধে ভাটি বাংলা

ছবি

‘বীরের রক্তস্রোত, মায়ের অশ্রুধারায়’ প্রাপ্ত স্বাধীনতা

ছবি

সুন্দরবন : দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জনপদের ভরসার স্থল

কখন বসন্ত গেল, এবার হল না গান

সেই কালরাত

মাটির যথার্থ পরিচর্যা : জীবনের ভিত রক্ষার আহ্বান

আমাদের বন, আমাদের পানি : প্রকৃতির সংকট ও আমাদের করণীয়

আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নেই

রামনবমী ঘিরে সাম্প্রদায়িক কৌশল

ঈদে মিলবে না নতুন নোট

প্রসঙ্গ : পুরুষ ধর্ষণ

শাহবাগ শাপলা বিভাজন : দায় যাদের তাদেরই করতে হবে নিরসন

বিশ্ব বর্ণবৈষম্য বিলোপ দিবস

নতুন রাজনৈতিক দল কি প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে?

ছবি

ভারতীয় চলচ্চিত্র ‘ছাভা’ : ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ

রম্যগদ্য : বোধ যখন ক্রোধ

গাছে পেরেক ঠোকা

মানুষ ও বন্য হাতি

আলুর চাষ, বীজ উৎপাদন ও সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ

অখণ্ড বাংলা তত্ত্ব : বাইনারিজম থেকে মুক্তির পথ

রূপকথার মতো মনে হলেও তিনি ছিলেন বাস্তবেরই নায়ক

গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইন প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্ত মত প্রকাশের গুরুত্ব

tab

উপ-সম্পাদকীয়

হ্যালোইনে আমি একা

রহমান মৃধা

বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪

হ্যালোইন একটি বিশেষ উৎসব, যা ভয়, সৃষ্টিশীলতা এবং সম্প্রদায়ের এক ভিন্ন মেজাজ তৈরি করে। এটি মূলত আয়ারল্যান্ডের প্রাচীন সামহেইন উৎসব থেকে উদ্ভূত, যেখানে মৃত আত্মাদের পৃথিবীতে ফিরে আসার বিশ্বাস ছিল। এই উৎসবের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ভয়ের মুখোমুখি হওয়ার সাহস তৈরি হয় এবং তারা ভুতুড়ে পোশাকে সেজে একে অপরকে ভয় দেখিয়ে আনন্দ উপভোগ করে। হ্যালোইন পালনের মূল থিমগুলো হলোÑ

মৃত্যু ও স্মৃতি : হ্যালোইন মৃতদের স্মরণে উৎসর্গ করা হয়। এটি জীবনের অমোঘ সত্য, মৃত্যু এবং স্মৃতির সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের প্রতি এক গভীর দৃষ্টি দেয়।

ভয় এবং হাসি : ভয়ের সঙ্গে মজার সমন্বয়। ভুতুড়ে পোশাক এবং সাজসজ্জার মাধ্যমে মানুষ ভয়কে উপভোগ করে। এটি আমাদের শেখায় যে, ভয় অথবা অজানা কিছু থেকে পালানোর বদলে সেটাকে মোকাবেলা করা এবং উপভোগ করা সম্ভব।

সম্প্রদায়ের সংহতি : হ্যালোইন এক ধরনের সামাজিক মিলনমেলা। এটি মানুষকে একসাথে নিয়ে আসে, যেখানে তারা আনন্দ এবং মজা ভাগ করে নেয়। শিশুদের ‘ট্রিক অর ট্রিট’ করার মাধ্যমে এবং বড়রা পার্টির আয়োজন করে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হন।

সৃষ্টিশীলতা : হ্যালোইন কল্পনা ও সৃষ্টিশীলতার একটি প্ল্যাটফর্ম। কুমড়া খোদাই, ভুতুড়ে সাজসজ্জা এবং ভৌতিক খেলাধুলা সবই আমাদের সৃজনশীলতা প্রকাশের সুযোগ দেয়।

মরতে তো একদিন হবেইÑ এ কথা সবাই জানে, কিন্তু মৃত্যুতে মজা, না সাজা, তা কেবল মৃতরাই জানে। শরৎচন্দ্র শ্রীকান্ত উপন্যাসে লিখেছেন, ‘মরতে তো একদিন হবেই।’ এই বাক্যটি যেন জীবনের এক অনিবার্য সত্য। জীবন তার আপন গতিতে চলে, থেমে থাকে না এবং চলার মধ্যে কখনো পর হয়ে যায় আপন, কখনো দিন হয়ে যায় রাত।

আমার একটি বিস্ময়কর অভিজ্ঞতা স্মরণ করতে পারি, যা আমাকে জীবন এবং মৃত্যুর থিমগুলোর সঙ্গে সংযোগ করতে সাহায্য করেছে। অক্টোবরের শেষ দিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডর্মিটরি ছিল প্রায় ফাঁকা। বন্ধুরা ছুটিতে বাড়ি গেছে। সুইডেনে এই সময়টা ‘আল হেলগোন’ নামে পরিচিত, যখন মৃতদের স্মরণে কবরস্থানে মোমবাতি ও ফুল নিয়ে যাওয়া হয়।

১৯৮৫ সালের ৩১ অক্টোবর, আমি ডর্মিটরিতে একা ছিলাম। ঠা-া বাতাস ও তুষারবৃষ্টিতে বাইরের পরিবেশ ছিল ভীষণ ভয়ানক। রাতের অন্ধকারে, নিঃশব্দ ডর্মিটরিতে হঠাৎ দরজার বেল বেজে উঠল। দরজা খুলতেই দেখি, দু’টি পেতœীর মতো চেহারার মেয়ে। গা ছমছম করে উঠলÑ সুইডেনে ভূত?

হঠাৎ আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম। যখন জ্ঞান ফিরে পেলাম, দেখি আমার দুই সুইডিশ বান্ধবী ছাড়া আর সুজান আমার পাশে। তারা আমাকে হ্যালোইনের সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল, কিন্তু পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছিল যে ওরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। তাদের পরিকল্পনা ছিল হ্যালোইনের ভয়ের মজাটা উপভোগ করা, কিন্তু আমার অবস্থায় তারা ভয় পেয়ে গিয়েছিল যে আমি হয়তো হার্টফেল করেছি। সেদিনের সেই মজার এবং ভয়ের মিশ্রিত ঘটনা আজও মনে পড়ে।

জীবনে শত সমস্যার মাঝেও মজা করা এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। সমস্যাগুলো আমাদের ঘিরে ধরে, কিন্তু কজনই বা শিখেছে কিভাবে তাদের মধ্যে থেকেও হাসিমুখে বেঁচে থাকতে হয়? পৃথিবীর অনেক সমাজেই মানুষ এই দক্ষতাটি অর্জন করেনি; কিন্তু জীবন কেবল দুঃখ-কষ্টে ভরা নয়Ñ এতে আনন্দ, হাসি এবং মজার মুহূর্তও রয়েছে, যদি আমরা তা খুঁজে নিতে পারি।

হ্যালোইন এই ধরনের একটি উদাহরণ হতে পারে। ভয়ের সজ্জা, ভূতের রূপধারণ এবং অদ্ভুত পোশাকের মাধ্যমে মানুষ একে অপরকে ভয় দেখিয়ে মজা পায়; কিন্তু এর গভীরে লুকিয়ে আছে এক শিক্ষণীয় দিক। হ্যালোইন আমাদের শেখায় যে, ভয় বা অজানা কিছু থেকে পালানোর বদলে আমরা সেটিকে উপভোগ করতে পারি। এমনকি ভয়ঙ্কর বা অস্বস্তিকর পরিস্থিতিকেও আমরা মজা করে কাটিয়ে উঠতে পারি।

এখানেই হ্যালোইনের আসল শিক্ষাÑ সমস্যার মুখোমুখি হওয়ার সময় ভয়ে না গুটিয়ে গিয়ে তার মধ্যে থেকে আনন্দ খুঁজে বের করা। জীবনের প্রতিটি সমস্যাই এক একটি চ্যালেঞ্জ, কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জের ভেতরেই লুকিয়ে থাকে মজা, উদ্যম এবং সৃষ্টিশীলতা। ভয়ের মুখে দাঁড়িয়ে সাহসী হওয়া এবং হাসতে শেখাÑ এটি হ্যালোইনের শিক্ষার মূল কথা।

সুইডেনে হ্যালোইন এবং আল হেলগোন উৎসব একসঙ্গে পালন করা হয়Ñ একদিকে ভয়, অন্যদিকে স্মৃতি ও ভালোবাসার মধ্য দিয়ে মৃতদের স্মরণ করা হয়। দিনশেষে মানুষের মধ্যে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, সহমর্মিতা ও সৌহার্দের বন্ধনটাই আমাদের জীবনকে পূর্ণ করে তোলে।

বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিম, খ্রিস্টান এবং হিন্দু জনগণের দেশে, সবাই যার যার ধর্মে বিশ্বাসী এবং সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করে। যদিও সবাই বেহেশত বা স্বর্গে যেতে চায়, কিন্তু কেউ মরতে চায় না। ধর্মীয় বিশ্বাস আমাদের মধ্যে মৃত্যুকে এক ভয়ঙ্কর সত্য হিসেবে চিহ্নিত করে, যেখানে মৃত্যুর পরের জীবন অপেক্ষা করছে; কিন্তু পশ্চাত্যের সংস্কৃতি, বিশেষ করে হ্যালোইন, মৃত্যু এবং অজানাকে হাস্যরসের মাধ্যমে উপভোগ করার সুযোগ দেয়। এভাবে তারা মৃত্যু নিয়ে খেলতে পারে, যেন সেটি একটি বাস্তবতা হলেও তাতে ভয়ের কিছু নেই।

এই ভিন্ন দৃষ্টিকোণ আমাদের শেখায় যে, মৃত্যুকে ভয় পাওয়ার পরিবর্তে, আমাদের জীবনের অভিজ্ঞতাগুলোতে আনন্দ খুঁজে বের করা উচিত। আমাদের আধ্যাত্মিক বিশ্বাসগুলোকে মাথায় রেখেও আমরা যদি মৃত্যুকে একটি নতুন শুরু হিসেবে দেখি এবং জীবনকে উপভোগ করি, তাহলে আমরা জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে একটি বিশেষ স্মৃতি হিসেবে রূপান্তরিত করতে পারব।

এভাবেই জীবন এবং মৃত্যুর সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব, যেখানে ভয় ও আনন্দের এক সুস্থ মিশ্রণ তৈরি হয়।

[লেখক : সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন]

back to top