রহমান মৃধা
আমেরিকা বিশ্ব রাজনীতিতে এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যুগের পর যুগ ধরে এক অতুলনীয় শক্তির প্রতীক হিসেবে বিরাজ করছে। এই প্রভাবের পেছনে রয়েছে নানা কারণ, যা যুক্তরাষ্ট্রকে শুধু একটি দেশ হিসেবে নয়, বরং বিশ্ব-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দৃশ্যপটের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। কিন্তু কেন পৃথিবীর এত দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত এই দেশটির দিকে?
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রভাব বহুদিন ধরে বিশ্বব্যাপী সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। এটি একটি প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে তার নীতিগুলিকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্র তার সামরিক, অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক ক্ষমতার দ্বারা বহুমাত্রিক প্রভাব বিস্তার করে। উদাহরণস্বরূপ, জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এবং বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের বিষয়টি তাদের বৈশ্বিক প্রভাবকে আরও সুসংহত করেছে।
আমেরিকা বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে শিল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে অবস্থান করছে। দেশটির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা তাকে বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব দিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। যুক্তরাষ্ট্রের বৈচিত্র্যময় শিল্প খাত, যেমন প্রযুক্তি, অর্থনীতি এবং ভোগ্যপণ্য বাজারে প্রাধান্য, তার বিশ্বব্যাপী আর্থিক নেতৃত্বকে আরও দৃঢ় করেছে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলি যেমন অ্যাপল, গুগল এবং মাইক্রোসফটের মতো প্রতিষ্ঠানের আবাসস্থল যুক্তরাষ্ট্র হওয়ায় এর প্রযুক্তিগত আধিপত্য আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো আমেরিকার সংস্কৃতি এবং গণমাধ্যমের প্রভাব। হলিউড, টেলিভিশন অনুষ্ঠান এবং মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির মাধ্যমে আমেরিকা সারা বিশ্বের মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে। তাদের চলচ্চিত্র এবং সঙ্গীত শিল্প শুধু বিনোদন নয়, বরং একটি শক্তিশালী সাংস্কৃতিক মাধ্যম যা বিশ্বব্যাপী মূল্যবোধ, ফ্যাশন, এবং জীবনধারায় প্রভাব ফেলছে। এই গণমাধ্যমের প্রচারণা যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক উপস্থিতিকে আরও শক্তিশালী করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণার ক্ষেত্রেও শীর্ষস্থানীয়। হার্ভার্ড, এমআইটি এবং স্ট্যানফোর্ডের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী অগ্রগণ্য। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তি ও জ্ঞান উদ্ভাবন হচ্ছে, যা তাদের বৈশ্বিক প্রভাবকে আরও সম্প্রসারিত করেছে। বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীরা এই দেশটিতে পড়াশোনার জন্য আকৃষ্ট হয়, যা তাকে সাংস্কৃতিক এবং জ্ঞানগত বৈচিত্র্য দেয়।
এটা সত্য যে, যুক্তরাষ্ট্রের বাকস্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত। যদিও চীন বা রাশিয়া শক্তিশালী অর্থনীতি এবং সামরিক ক্ষমতা রাখে, তাদের গণতান্ত্রিক চর্চার অভাবের কারণে তারা বিশ্বের কাছে আমেরিকার মতো আকর্ষণীয় হতে পারেনি। মানুষ জাতির বৈশিষ্ট্য হিসেবে নতুন কিছু দেখার এবং উদাহরণ হিসেবে গ্রহণ করার প্রবণতা রয়েছে। ফলে, যুক্তরাষ্ট্র তার গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতার উদাহরণ দিয়ে অন্য দেশের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে।
গোটা বিশ্ব তাকিয়ে আছে মার্কিন নির্বাচনের দিকে। মনে হচ্ছে পৃথিবী মানেই আমেরিকা। আসলেই কি তাই? অরাজকতা, অন্যায়, অত্যাচার থেকে শুরু করে ভালো-মন্দ সব কিছুরই প্রভাব রয়েছে সেখানে। সেখানেও মানুষ রাস্তার ধারে বসে ভিক্ষা করে। এমনকি প্রেসিডেন্টের বাসভবন হোয়াইট হাউজের চারপাশ দিয়ে অনেকের রাত কাটে। আবার অনেকে ঠিক সেই দেশ থেকেই মহাশূন্যে পাড়ি দিচ্ছে, চমৎকার। প্রশ্ন হচ্ছে- কী এমন জাদু রয়েছে আমেরিকায়? চীনও কিন্তু একটি বেশ জনবহুল দেশ। তাছাড়া উন্নত দেশের সারিতে তাদের বর্তমান ভালো দাপটও বটে। তা সত্ত্বেও আমেরিকার মতো না গর্জে বা না বর্ষে! কারণ কী? ভেবেছেন কি কখনও?
বাকস্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের বেস্ট প্র্যাকটিস নেই সেখানে। চীন এবং রাশিয়া যত ধনী বা শক্তিশালীই হোক না কেন গণতন্ত্রের বেস্ট প্র্যাকটিসের অভাবের কারণে আমেরিকার মতো বিশ্বে প্রভাব ফেলতে পারছে না। মানুষ জাতির কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা সত্যি প্রশংসনীয়। যেমন আমরা নিজেরা ভালো কিছু না করতে পারলেও যখন অন্যরা করে সেটা কিন্তু খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখি। যেমন বাংলাদেশের কথাই বলি, সবাই যে আমেরিকার প্রশংসায় পঞ্চমুখ তা নয়; তবুও সে দেশ সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক।
বাংলাদেশে রাজনীতি মানেই অর্থনীতিতে সাফল্য, জনগণের জন্য কিছু করুক বা নাই করুক চৌদ্দ গোষ্ঠীর জন্য যা করার করে। এখন জনগণ যেমন আস্থা হারিয়েছে রাজনৈতিকদের ওপর, রাজনীতিবিদরাও জনগণের ওপর বিশ্বাস হারিয়েছে। যার ফলে দেশের ভোট সিস্টেম বিলীন হতে চলেছে। দেখা যাচ্ছে টাকা নিয়েও ভোট দেয়নি, আবার ভোট দিয়েছে অথচ টাকা পায়নি। কয়েকবার এমনটি ঘটেছে, শেষে বিনা ভোটে ব্যালট বাক্স ভরা হয়েছে। এটাই জয়ী হওয়ার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কমলা হ্যারিস এবং ট্রাম্পের নেতৃত্ব কী প্রভাব ফেলবে?
ডনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হলে কিছু প্রভাব পড়তে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত বাণিজ্য চুক্তি এবং সম্পর্কের ক্ষেত্রে রক্ষণশীল ও সুরক্ষাবাদী নীতি অনুসরণ করে। তার পুনঃনির্বাচন হলে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য মার্কিন বাজারে প্রবেশাধিকার কঠোর হতে পারে। বিশেষত, তৈরি পোশাক খাতের মতো প্রধান রপ্তানি খাতে শুল্কের পরিমাণ বা বিধিনিষেধ বাড়ানো হতে পারে।
ট্রাম্পের আমলে অভিবাসন নীতি ছিল কঠোর, যা বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ থেকে অভিবাসী প্রেরণের ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশের অনেক মানুষ শিক্ষার জন্য বা কাজের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে যায়, তাই এ ধরনের নীতিগুলো তাদের জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
কমলা হ্যারিস নির্বাচিত হলে তার বা ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্বের প্রভাব একটু ভিন্ন হতে পারে। ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্ব, বিশেষত কমলা হ্যারিস, সাধারণত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নে এবং বৈশ্বিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে জোর দেয়। এর ফলে, বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তন, শিক্ষা এবং উন্নয়ন সহায়তা প্রকল্পে আরও সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ডেমোক্র্যাটিক প্রশাসন সাধারণত মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে গুরুত্ব দেয়। এর ফলে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং মানবাধিকার রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ও সহায়তা উভয়ই বৃদ্ধি পেতে পারে। এটি দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য ইতিবাচক হতে পারে, যদিও এর ফলে সরকারকে নানা ধরনের আন্তর্জাতিক সমালোচনা ও চাপ মোকাবিলা করতে হতে পারে। তবে, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রচারে ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্ব বাংলাদেশের জন্য উন্নয়নের নতুন দ্বার উন্মোচন করতে পারে।
[লেখক : সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন ]
রহমান মৃধা
সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪
আমেরিকা বিশ্ব রাজনীতিতে এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যুগের পর যুগ ধরে এক অতুলনীয় শক্তির প্রতীক হিসেবে বিরাজ করছে। এই প্রভাবের পেছনে রয়েছে নানা কারণ, যা যুক্তরাষ্ট্রকে শুধু একটি দেশ হিসেবে নয়, বরং বিশ্ব-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দৃশ্যপটের কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে। কিন্তু কেন পৃথিবীর এত দৃষ্টি কেন্দ্রীভূত এই দেশটির দিকে?
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রভাব বহুদিন ধরে বিশ্বব্যাপী সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছে। এটি একটি প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে তার নীতিগুলিকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্র তার সামরিক, অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক ক্ষমতার দ্বারা বহুমাত্রিক প্রভাব বিস্তার করে। উদাহরণস্বরূপ, জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা এবং বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের বিষয়টি তাদের বৈশ্বিক প্রভাবকে আরও সুসংহত করেছে।
আমেরিকা বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে শিল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে অবস্থান করছে। দেশটির অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা তাকে বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব দিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। যুক্তরাষ্ট্রের বৈচিত্র্যময় শিল্প খাত, যেমন প্রযুক্তি, অর্থনীতি এবং ভোগ্যপণ্য বাজারে প্রাধান্য, তার বিশ্বব্যাপী আর্থিক নেতৃত্বকে আরও দৃঢ় করেছে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলি যেমন অ্যাপল, গুগল এবং মাইক্রোসফটের মতো প্রতিষ্ঠানের আবাসস্থল যুক্তরাষ্ট্র হওয়ায় এর প্রযুক্তিগত আধিপত্য আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো আমেরিকার সংস্কৃতি এবং গণমাধ্যমের প্রভাব। হলিউড, টেলিভিশন অনুষ্ঠান এবং মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির মাধ্যমে আমেরিকা সারা বিশ্বের মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে। তাদের চলচ্চিত্র এবং সঙ্গীত শিল্প শুধু বিনোদন নয়, বরং একটি শক্তিশালী সাংস্কৃতিক মাধ্যম যা বিশ্বব্যাপী মূল্যবোধ, ফ্যাশন, এবং জীবনধারায় প্রভাব ফেলছে। এই গণমাধ্যমের প্রচারণা যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক উপস্থিতিকে আরও শক্তিশালী করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণার ক্ষেত্রেও শীর্ষস্থানীয়। হার্ভার্ড, এমআইটি এবং স্ট্যানফোর্ডের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী অগ্রগণ্য। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তি ও জ্ঞান উদ্ভাবন হচ্ছে, যা তাদের বৈশ্বিক প্রভাবকে আরও সম্প্রসারিত করেছে। বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীরা এই দেশটিতে পড়াশোনার জন্য আকৃষ্ট হয়, যা তাকে সাংস্কৃতিক এবং জ্ঞানগত বৈচিত্র্য দেয়।
এটা সত্য যে, যুক্তরাষ্ট্রের বাকস্বাধীনতা এবং গণতন্ত্র বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত। যদিও চীন বা রাশিয়া শক্তিশালী অর্থনীতি এবং সামরিক ক্ষমতা রাখে, তাদের গণতান্ত্রিক চর্চার অভাবের কারণে তারা বিশ্বের কাছে আমেরিকার মতো আকর্ষণীয় হতে পারেনি। মানুষ জাতির বৈশিষ্ট্য হিসেবে নতুন কিছু দেখার এবং উদাহরণ হিসেবে গ্রহণ করার প্রবণতা রয়েছে। ফলে, যুক্তরাষ্ট্র তার গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতার উদাহরণ দিয়ে অন্য দেশের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে।
গোটা বিশ্ব তাকিয়ে আছে মার্কিন নির্বাচনের দিকে। মনে হচ্ছে পৃথিবী মানেই আমেরিকা। আসলেই কি তাই? অরাজকতা, অন্যায়, অত্যাচার থেকে শুরু করে ভালো-মন্দ সব কিছুরই প্রভাব রয়েছে সেখানে। সেখানেও মানুষ রাস্তার ধারে বসে ভিক্ষা করে। এমনকি প্রেসিডেন্টের বাসভবন হোয়াইট হাউজের চারপাশ দিয়ে অনেকের রাত কাটে। আবার অনেকে ঠিক সেই দেশ থেকেই মহাশূন্যে পাড়ি দিচ্ছে, চমৎকার। প্রশ্ন হচ্ছে- কী এমন জাদু রয়েছে আমেরিকায়? চীনও কিন্তু একটি বেশ জনবহুল দেশ। তাছাড়া উন্নত দেশের সারিতে তাদের বর্তমান ভালো দাপটও বটে। তা সত্ত্বেও আমেরিকার মতো না গর্জে বা না বর্ষে! কারণ কী? ভেবেছেন কি কখনও?
বাকস্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের বেস্ট প্র্যাকটিস নেই সেখানে। চীন এবং রাশিয়া যত ধনী বা শক্তিশালীই হোক না কেন গণতন্ত্রের বেস্ট প্র্যাকটিসের অভাবের কারণে আমেরিকার মতো বিশ্বে প্রভাব ফেলতে পারছে না। মানুষ জাতির কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা সত্যি প্রশংসনীয়। যেমন আমরা নিজেরা ভালো কিছু না করতে পারলেও যখন অন্যরা করে সেটা কিন্তু খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখি। যেমন বাংলাদেশের কথাই বলি, সবাই যে আমেরিকার প্রশংসায় পঞ্চমুখ তা নয়; তবুও সে দেশ সম্পর্কে জানতে ইচ্ছুক।
বাংলাদেশে রাজনীতি মানেই অর্থনীতিতে সাফল্য, জনগণের জন্য কিছু করুক বা নাই করুক চৌদ্দ গোষ্ঠীর জন্য যা করার করে। এখন জনগণ যেমন আস্থা হারিয়েছে রাজনৈতিকদের ওপর, রাজনীতিবিদরাও জনগণের ওপর বিশ্বাস হারিয়েছে। যার ফলে দেশের ভোট সিস্টেম বিলীন হতে চলেছে। দেখা যাচ্ছে টাকা নিয়েও ভোট দেয়নি, আবার ভোট দিয়েছে অথচ টাকা পায়নি। কয়েকবার এমনটি ঘটেছে, শেষে বিনা ভোটে ব্যালট বাক্স ভরা হয়েছে। এটাই জয়ী হওয়ার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কমলা হ্যারিস এবং ট্রাম্পের নেতৃত্ব কী প্রভাব ফেলবে?
ডনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হলে কিছু প্রভাব পড়তে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনে, যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত বাণিজ্য চুক্তি এবং সম্পর্কের ক্ষেত্রে রক্ষণশীল ও সুরক্ষাবাদী নীতি অনুসরণ করে। তার পুনঃনির্বাচন হলে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য মার্কিন বাজারে প্রবেশাধিকার কঠোর হতে পারে। বিশেষত, তৈরি পোশাক খাতের মতো প্রধান রপ্তানি খাতে শুল্কের পরিমাণ বা বিধিনিষেধ বাড়ানো হতে পারে।
ট্রাম্পের আমলে অভিবাসন নীতি ছিল কঠোর, যা বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশ থেকে অভিবাসী প্রেরণের ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশের অনেক মানুষ শিক্ষার জন্য বা কাজের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে যায়, তাই এ ধরনের নীতিগুলো তাদের জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
কমলা হ্যারিস নির্বাচিত হলে তার বা ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্বের প্রভাব একটু ভিন্ন হতে পারে। ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্ব, বিশেষত কমলা হ্যারিস, সাধারণত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নে এবং বৈশ্বিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে জোর দেয়। এর ফলে, বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তন, শিক্ষা এবং উন্নয়ন সহায়তা প্রকল্পে আরও সহায়তা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ডেমোক্র্যাটিক প্রশাসন সাধারণত মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে গুরুত্ব দেয়। এর ফলে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং মানবাধিকার রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ও সহায়তা উভয়ই বৃদ্ধি পেতে পারে। এটি দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য ইতিবাচক হতে পারে, যদিও এর ফলে সরকারকে নানা ধরনের আন্তর্জাতিক সমালোচনা ও চাপ মোকাবিলা করতে হতে পারে। তবে, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের প্রচারে ডেমোক্র্যাটিক নেতৃত্ব বাংলাদেশের জন্য উন্নয়নের নতুন দ্বার উন্মোচন করতে পারে।
[লেখক : সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন ]