অরূপরতন চৌধুরী
টাইপ-২ ডায়াবেটিস বিশ^ব্যাপী সর্বাধিক দীর্ঘস্থায়ী রোগগুলোর মধ্যে একটি, যা সব ধরনের ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে ৯৫ শতাংশেরও বেশি। তবে টাইপ-২ ডায়াবেটিস সহজেই প্রতিরোধযোগ্য। ধূমপান ত্যাগ করা শুধু টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকিই হ্রাস করে না, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও অনেক সাহায্য করে এবং ডায়াবেটিসের জটিলতার ঝুুঁকি হ্রাস করে। গবেষণা প্রমাণ করে যে, ধূমপান রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে। ধূমপান ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা যেমন কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, কিডনি জটিলতা এবং অন্ধত্বের ঝুুঁকিও বাড়ায়। ধূমপান ক্ষত নিরাময়ে বাধা সৃষ্টি করে এবং নিম্ন অঙ্গ পঙ্গুত্বের ঝুঁকি বাড়ায়, যা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর একটি উল্লেখযোগ্য বোঝা তৈরি করে। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে এবং ডায়াবেটিস জটিলতা এড়াতে মানুষকে ধূমপান বন্ধ করতে জোরালোভাবে উৎসাহিত করে। এই কথাটি পরিষ্কার যে ধূমপান ত্যাগ করা শুধু স্বাস্থ্যকর ফুসফুস এবং হৃদয়ের জটিলতা এড়াতে নয়; এটি টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করার ক্ষেত্রেও একটি শক্ত পদক্ষেপ। স্বাস্থ্যকর্মীরা তামাক ছাড়ার ক্ষেত্রে টাইপ-২ ডায়াবেটিসযুক্ত ব্যক্তিদের অনুপ্রাণিত ও গাইড করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন, একই সঙ্গে সরকারকেই এর গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করা জরুরি। যখন ডায়াবেটিস হয় তখন শরীর এ পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি হয় না বা ইনসুলিন খুব ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারে না। যখন পর্যাপ্ত ইনসুলিন থাকে না, বা কোষগুলো ইনসুলিনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়, তখন বেশি পরিমাণে চিনি রক্তপ্রবাহে থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা যেমনÑ হৃদরোগ, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস এবং কিডনি রোগের কারণ হতে পারে। ডায়াবেটিস একটি অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া দ্বারা সৃষ্ট বলে মনে করা হয়, যা শরীরকে ইনসুলিন তৈরি করতে বাধা দেয়। সারা বিশে^ খুব কম লোকেরাই টাইপ-১ ডায়াবেটিস থাকে, যা প্রায়শই শিশু-কিশোর বা অল্প বয়স্কদের মধ্যে নির্ণয় করা হয়। ধূমপানের সঙ্গে ডায়াবেটিসের সম্পর্ক কী? গবেষণায় দেখা গেছে যে, ধূমপান টাইপ-২ ডায়াবেটিসের একটি কারণ, প্রকৃতপক্ষে, যারা সিগারেট পান করেন তাদের ধূমপান না করা লোকদের তুলনায় টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভবনা ৩০-৪০% বেশি। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যারা ধূমপান করেন, তাদের ইনসুলিন ডোজ বা মাত্রা কার্যকর করতে সমস্যা হওয়ার সম্ভবনা বেশি। একজন ধূমপায়ী যত বেশি সিগারেট পান করবেন, তার টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি তত বেশি। যে ধরনের ডায়াবেটিস থাকুক না কেন, ধূমপান বা তামাক গ্রহণ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা আরও শক্ত করে তোলে। যদি কারো ডায়াবেটিস হয় এবং তিনি যদি ধূমপান করেন তবে ডায়াবেটিস থেকে তার বিভিন্ন জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। যেমনÑ হৃদরোগ, কিডনি রোগ এবং পায়ে দুর্বল রক্তপ্রবাহ যা সংক্রমণ, আলসার এবং সম্ভাব্য পা কেটে ফেলার কারণ হতে পারে (পায়ের আঙুল বা পায়ের অংশ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শরীরের কোন অংশ কেটে ফেলা) তাছাড়া রেটিনোপ্যাথি চোখের রোগ যা অন্ধত্বের কারণ হতে পারে। পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি হাতে ও পায়ে ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়ু যা অসাড়তা, ব্যথা, দুর্বলতা সৃষ্টি করে। তামাকজাত পণ্যগুলোতে পাওয়া নিকোটিন একটি রাসায়নিক বিষাক্ত পদার্থ যা রক্তে শর্করাকে বাড়িয়ে তোলে। সিগারেট এবং অন্যান্য তামাকজাত পন্যগুলোর রাসায়নিক পদার্থ দেহের ক্ষতি করে এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে (প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে)। দেহের এই প্রদাহ এবং নিকোটিন উভয়ই দেহের রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করে তোলে। যারা ধূমপান করেন তাদের পেটের চর্বি হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে, যা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বাড়িয়ে তোলে, এমনকি তাদের ওজন যদি বেশি না-ও থাকে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা চ্যালেঞ্জিং এবং ধূমপান সেটাকে আরও কঠিন করে তুলতে পারে। যেহেতু নিকোটিন রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়, তাই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যারা ধূমপান করেন তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য ধূমপান ছেড়ে দেয়া কেন প্রয়োজন : আপনি কতবার ধূমপান করেছেন বা কখন ছেড়ে দিলে আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে। আপনি যখন ধূমপান বন্ধ করবেন সেই সময় থেকে আপনার শরীর নিজেই নিরাময় শুরু করবে। যেমনÑ ১২ ঘণ্টার মধ্যে, আপনার রক্তে কার্বন মনোক্সাইড (সিগারেটের ধোঁয়া থেকে একটি বিষাক্ত গ্যাস) স্বাভাবিক হয়ে যাবে। ২ সপ্তাহ থেকে ৩ মাসের মধ্যে, আপনার রক্ত সঞ্চালন এবং ফুসফুস আগের চাইতে উন্নত হবে। এক বছরের মধ্যে, আপনার রক্ত সঞ্চালন অনেক বেশি স্বাভাবিক হবে। এক বছরের মধ্যে আপনার হৃদরোগ ঝুঁকি যারা এখনও ধূমপান করে এমন ব্যক্তির চেয়ে অর্ধেক নেমে আসবে। ধূমপান ত্যাগ করলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা আরও সহজ করতে সহায়তা করে। শরীর ধূমপানমুক্ত হওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য না হওয়া পর্যন্ত রক্তে শর্করা পরিমাণ ঘন ঘন পরীক্ষা করতে হবে। নিকোটিন পণ্য যেমন নিকোটিন প্যাচ এবং লজেন্স ধূমপন বন্ধ করতে সহায়তা করার জন্য করতে পারে। এগুলো সরঞ্জাম ব্যবহারে ছাড়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে নিকোটিনযুক্ত পণ্যগুলো রক্তে শর্করাকে বাড়িয়ে তোলে, তাই যদি ডায়াবেটিস থাকে তবে সেগুলো ব্যবহার সম্পর্কে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন। প্রথম চেষ্টায় ছাড়তে সক্ষম না হলেও হাল ছাড়া ঠিক হবে না। পিছলে গেলেও মন খারাপ করার দরকার নাই, ভালোর জন্য ধূমপানমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এটি বেশ কয়েকবার প্রচেষ্টা নিতে হতে পারে (যদিও কিছু লোক তাদের প্রথমবারই ছেড়ে দেয়)। যদি ডায়াবেটিস থাকে এবং আপনি ধূমপান করেন তবে ধূমপান ত্যাগ করা এখনই আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকার আনবে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিরা যারা ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ছেড়ে দেন তারা রক্তে শর্করার মাত্রা আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হন। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য যেমন জর্দ্দা, গুল, সাদাপাতা অথবা বর্তমান সময়ে নতুন আমাদানি ই-সিগারেট বা ইলেকট্রনিক সিগারেট সবই ডায়াবেটিস রোগের যেমন কারণ হতে পারে, তেমনি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও বাধা সৃষ্টি করতে পারে। সেই সঙ্গে অন্যান্য জটিল রোগ যেমনÑ হৃদরোগ, অন্ধত্ব ও নার্ভের সমস্যাসহ পায়ের পচনশীল রোগ গ্যাংগ্রিন হতে পারে। অতএব, ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে যেমন নিয়মিত ব্যায়াম, খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ ও জীবনযাপন পরিবর্তন করতে হবে তেমনি ধূমপান ও তামাক জাতীয় সব বস্তু জর্দ্দা, গুল, সাদাপাতা জীবন থেকে বর্জন করতে হবে। এভাবেই ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ হবে। সেই সঙ্গে অন্যান্য অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকা যাবে। ধূমপান ছেড়ে দিতে নিজের ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট, তবে অনেক ক্ষেত্রে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রয়োজন হতে পারে। ধূমপান ত্যাগ করলে নিজেকে যেমনÑ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষা করা যাবে, তেমনি পরিবার বা পারিপাশির্^ক জনসাধারণের জীবন ঝুঁকিমুক্ত থাকবে। তাই আজই ধূমপান ও তামাক ছাড়–ন।
[লেখক : প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মানস- মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা]
অরূপরতন চৌধুরী
সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪
টাইপ-২ ডায়াবেটিস বিশ^ব্যাপী সর্বাধিক দীর্ঘস্থায়ী রোগগুলোর মধ্যে একটি, যা সব ধরনের ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে ৯৫ শতাংশেরও বেশি। তবে টাইপ-২ ডায়াবেটিস সহজেই প্রতিরোধযোগ্য। ধূমপান ত্যাগ করা শুধু টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকিই হ্রাস করে না, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও অনেক সাহায্য করে এবং ডায়াবেটিসের জটিলতার ঝুুঁকি হ্রাস করে। গবেষণা প্রমাণ করে যে, ধূমপান রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে। ধূমপান ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা যেমন কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ, কিডনি জটিলতা এবং অন্ধত্বের ঝুুঁকিও বাড়ায়। ধূমপান ক্ষত নিরাময়ে বাধা সৃষ্টি করে এবং নিম্ন অঙ্গ পঙ্গুত্বের ঝুঁকি বাড়ায়, যা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর একটি উল্লেখযোগ্য বোঝা তৈরি করে। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে এবং ডায়াবেটিস জটিলতা এড়াতে মানুষকে ধূমপান বন্ধ করতে জোরালোভাবে উৎসাহিত করে। এই কথাটি পরিষ্কার যে ধূমপান ত্যাগ করা শুধু স্বাস্থ্যকর ফুসফুস এবং হৃদয়ের জটিলতা এড়াতে নয়; এটি টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করার ক্ষেত্রেও একটি শক্ত পদক্ষেপ। স্বাস্থ্যকর্মীরা তামাক ছাড়ার ক্ষেত্রে টাইপ-২ ডায়াবেটিসযুক্ত ব্যক্তিদের অনুপ্রাণিত ও গাইড করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন, একই সঙ্গে সরকারকেই এর গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করা জরুরি। যখন ডায়াবেটিস হয় তখন শরীর এ পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি হয় না বা ইনসুলিন খুব ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারে না। যখন পর্যাপ্ত ইনসুলিন থাকে না, বা কোষগুলো ইনসুলিনের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়, তখন বেশি পরিমাণে চিনি রক্তপ্রবাহে থাকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা যেমনÑ হৃদরোগ, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস এবং কিডনি রোগের কারণ হতে পারে। ডায়াবেটিস একটি অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া দ্বারা সৃষ্ট বলে মনে করা হয়, যা শরীরকে ইনসুলিন তৈরি করতে বাধা দেয়। সারা বিশে^ খুব কম লোকেরাই টাইপ-১ ডায়াবেটিস থাকে, যা প্রায়শই শিশু-কিশোর বা অল্প বয়স্কদের মধ্যে নির্ণয় করা হয়। ধূমপানের সঙ্গে ডায়াবেটিসের সম্পর্ক কী? গবেষণায় দেখা গেছে যে, ধূমপান টাইপ-২ ডায়াবেটিসের একটি কারণ, প্রকৃতপক্ষে, যারা সিগারেট পান করেন তাদের ধূমপান না করা লোকদের তুলনায় টাইপ-২ ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভবনা ৩০-৪০% বেশি। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যারা ধূমপান করেন, তাদের ইনসুলিন ডোজ বা মাত্রা কার্যকর করতে সমস্যা হওয়ার সম্ভবনা বেশি। একজন ধূমপায়ী যত বেশি সিগারেট পান করবেন, তার টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি তত বেশি। যে ধরনের ডায়াবেটিস থাকুক না কেন, ধূমপান বা তামাক গ্রহণ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা আরও শক্ত করে তোলে। যদি কারো ডায়াবেটিস হয় এবং তিনি যদি ধূমপান করেন তবে ডায়াবেটিস থেকে তার বিভিন্ন জটিলতা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। যেমনÑ হৃদরোগ, কিডনি রোগ এবং পায়ে দুর্বল রক্তপ্রবাহ যা সংক্রমণ, আলসার এবং সম্ভাব্য পা কেটে ফেলার কারণ হতে পারে (পায়ের আঙুল বা পায়ের অংশ অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শরীরের কোন অংশ কেটে ফেলা) তাছাড়া রেটিনোপ্যাথি চোখের রোগ যা অন্ধত্বের কারণ হতে পারে। পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি হাতে ও পায়ে ক্ষতিগ্রস্ত স্নায়ু যা অসাড়তা, ব্যথা, দুর্বলতা সৃষ্টি করে। তামাকজাত পণ্যগুলোতে পাওয়া নিকোটিন একটি রাসায়নিক বিষাক্ত পদার্থ যা রক্তে শর্করাকে বাড়িয়ে তোলে। সিগারেট এবং অন্যান্য তামাকজাত পন্যগুলোর রাসায়নিক পদার্থ দেহের ক্ষতি করে এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে (প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে)। দেহের এই প্রদাহ এবং নিকোটিন উভয়ই দেহের রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করে তোলে। যারা ধূমপান করেন তাদের পেটের চর্বি হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে, যা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বাড়িয়ে তোলে, এমনকি তাদের ওজন যদি বেশি না-ও থাকে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা চ্যালেঞ্জিং এবং ধূমপান সেটাকে আরও কঠিন করে তুলতে পারে। যেহেতু নিকোটিন রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়ায়, তাই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যারা ধূমপান করেন তাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য ধূমপান ছেড়ে দেয়া কেন প্রয়োজন : আপনি কতবার ধূমপান করেছেন বা কখন ছেড়ে দিলে আপনার স্বাস্থ্যের উন্নতি হবে। আপনি যখন ধূমপান বন্ধ করবেন সেই সময় থেকে আপনার শরীর নিজেই নিরাময় শুরু করবে। যেমনÑ ১২ ঘণ্টার মধ্যে, আপনার রক্তে কার্বন মনোক্সাইড (সিগারেটের ধোঁয়া থেকে একটি বিষাক্ত গ্যাস) স্বাভাবিক হয়ে যাবে। ২ সপ্তাহ থেকে ৩ মাসের মধ্যে, আপনার রক্ত সঞ্চালন এবং ফুসফুস আগের চাইতে উন্নত হবে। এক বছরের মধ্যে, আপনার রক্ত সঞ্চালন অনেক বেশি স্বাভাবিক হবে। এক বছরের মধ্যে আপনার হৃদরোগ ঝুঁকি যারা এখনও ধূমপান করে এমন ব্যক্তির চেয়ে অর্ধেক নেমে আসবে। ধূমপান ত্যাগ করলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা আরও সহজ করতে সহায়তা করে। শরীর ধূমপানমুক্ত হওয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্য না হওয়া পর্যন্ত রক্তে শর্করা পরিমাণ ঘন ঘন পরীক্ষা করতে হবে। নিকোটিন পণ্য যেমন নিকোটিন প্যাচ এবং লজেন্স ধূমপন বন্ধ করতে সহায়তা করার জন্য করতে পারে। এগুলো সরঞ্জাম ব্যবহারে ছাড়ার সম্ভাবনা দ্বিগুণ হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে নিকোটিনযুক্ত পণ্যগুলো রক্তে শর্করাকে বাড়িয়ে তোলে, তাই যদি ডায়াবেটিস থাকে তবে সেগুলো ব্যবহার সম্পর্কে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলা প্রয়োজন। প্রথম চেষ্টায় ছাড়তে সক্ষম না হলেও হাল ছাড়া ঠিক হবে না। পিছলে গেলেও মন খারাপ করার দরকার নাই, ভালোর জন্য ধূমপানমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এটি বেশ কয়েকবার প্রচেষ্টা নিতে হতে পারে (যদিও কিছু লোক তাদের প্রথমবারই ছেড়ে দেয়)। যদি ডায়াবেটিস থাকে এবং আপনি ধূমপান করেন তবে ধূমপান ত্যাগ করা এখনই আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকার আনবে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিরা যারা ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ছেড়ে দেন তারা রক্তে শর্করার মাত্রা আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হন। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য যেমন জর্দ্দা, গুল, সাদাপাতা অথবা বর্তমান সময়ে নতুন আমাদানি ই-সিগারেট বা ইলেকট্রনিক সিগারেট সবই ডায়াবেটিস রোগের যেমন কারণ হতে পারে, তেমনি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও বাধা সৃষ্টি করতে পারে। সেই সঙ্গে অন্যান্য জটিল রোগ যেমনÑ হৃদরোগ, অন্ধত্ব ও নার্ভের সমস্যাসহ পায়ের পচনশীল রোগ গ্যাংগ্রিন হতে পারে। অতএব, ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে যেমন নিয়মিত ব্যায়াম, খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ ও জীবনযাপন পরিবর্তন করতে হবে তেমনি ধূমপান ও তামাক জাতীয় সব বস্তু জর্দ্দা, গুল, সাদাপাতা জীবন থেকে বর্জন করতে হবে। এভাবেই ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ হবে। সেই সঙ্গে অন্যান্য অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকা যাবে। ধূমপান ছেড়ে দিতে নিজের ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ট, তবে অনেক ক্ষেত্রে মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ প্রয়োজন হতে পারে। ধূমপান ত্যাগ করলে নিজেকে যেমনÑ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষা করা যাবে, তেমনি পরিবার বা পারিপাশির্^ক জনসাধারণের জীবন ঝুঁকিমুক্ত থাকবে। তাই আজই ধূমপান ও তামাক ছাড়–ন।
[লেখক : প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, মানস- মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা]