alt

উপ-সম্পাদকীয়

রঙ্গব্যঙ্গ : শাব্বাশ বিটিভি, জিন্দাবাদ, জিন্দাবাদ

জাঁ-নেসার ওসমান

: শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

‘ইয়েয়য়... সঠিক জায়গায় সঠিক লোককে দায়িত্ব অর্পণ করলে কি দারুণ কাজ হয়, তার প্রমাণ আমাদের সরকারি বিটিভি সেটা প্রমাণ করে দেখালো। এই প্রথম বিটিভির একজন মহাপরিচালক সত্যিকার অর্থে সরকারি তাঁবেদারি ছেড়ে, শিল্পের জন্য তার অনুষ্ঠান নির্মাণ করলেন। সাধু সাধু।’

হঠাৎ কি হলো, আপনে সাত সকালে, বেইন্না-ফজরত জন্ম থেকে জ্বলছি, মানে যখন শত শত ছাত্র-জনতা স্বৈরাচারের গুলি খেয়ে দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করছে তখন জন্ম থেকে সরকারি পা-চাটা বিটিভি বাতাবি লেবুর বাম্পার ফলনের সংবাদ প্রচার করছিলো।

‘ভাইরে তখন ছিলো সৈ¦রাচারের আমল, তোমার গড়া গণতন্ত্রের গলিতে গলিতে হিটলারের আদেশ পালনে সবাই সরকারি কর্মচারী বাধ্য। তাই মানবতা ফানবতা বাদ দিয়ে কর্তার ইচ্ছায় কর্ম-সম্পাদন করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানের প্রকৃত শিক্ষিত এক সময়কার ডাকসাইটে বিটিভির কর্মচারী পরে দিগন্ত টিভির দায়িত্বপ্রাপ্ত লৌহমানব এখন বিটিভির মহাপরিচালক। আমাদের বিটিভির মহাপরিচালক শিল্পীর স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, উনি সারা দেশবাসীকে দেখিয়ে দিলেন যে শিল্প উপস্থাপনা কত সুন্দর। সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পেয়েও শৈল্পিকরূপে কিভাবে সমাজের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা যায়।’

‘ভাই হইলোটা কি? সক্কাল বেলায় কি গঞ্জিকা সেবনে লিপ্ত ছিলেন নাকি? হঠাৎ বিটিভির গুণগানে মুগ্ধ!’ ‘এ যেন অনেকটা কথাশিল্পী শওকত ওসমানের ‘ক্রীতদাসের হাসির’ মতো, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে উপন্যাস লিখে সেই স্বৈরাচারের হাত থেকেই বছরের শ্রেষ্ঠ উপন্যাসের পুরস্কার পাওয়া। ইয়েয়য়...।’

‘থামেন থামেন, আপনে কিন্তু তহন থাইক্কা হালাই খালি পে্যঁচাইতেছেন, আসল কথা না কয়া, বিটিং অ্যারাউন্ড দ্য বুশ করতাছেন, বিটিভি কি এমন করলো যে আপনে তারে তিরস্কার না কইরা অস্কার দিতাছেন।’

‘ওই পুঁপ...পুঁপের পো, তুই গত ১৭ নভেম্বর দুই হাজার চব্বিশ সালের সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস স্যারের বক্তব্য শুনস নাই?’ ‘আরে কি কয়, শুনি নাই মানে! দিলের মইধ্যে প্রতিটা বক্তব্য ধারণ করছি আর স্যারের নিয়তটা পুরা ব্রেইনে ইমপ্রিন্ট করছি। স্যার বলেছেন, ‘আমাদের বিপ্লবে দেড় হাজার ছাত্র-শ্রমিক জনতার শহিদী মৃত্যু হয়। আমাদের সরকার প্রতিটি মৃত্যুর তথ্য অত্যন্ত যতেœর সঙ্গে জোগাড় করছে। প্রতিটি হত্যার বিচার আমরা করবোই।’ ভাবতে পারেন কত বড় আশার বাণী। সাগর-রুনি, ত্বকী, মুগ্ধ-আবু-সাঈদ, ছোট্ট রিয়ামণি, রায়হান সব সব- প্রতিটি হত্যার বিচার স্যার করবেনই করবেন। আজকে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ- দৌলা বাঁইচ্চা থাকলে তারে কি কইতাম জানেন?’

‘তুই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আবার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলারে টানস ক্য্যন?’ ‘টানি কারণ নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা যখন কইছিলোÑ ‘বাংলার ভাগ্যাকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা। তার শ্যামল প্রান্তরে আজ রক্তের আলপনা, জাতির সূর্য আজ, অস্তাচলগামী, কে তাকে আশা দেবে, কে তাকে ভরসা দেবে, কে শোনাবে জাগরণের সেই অভয় বাণী...।’ আমি তখন খাড়ায়া নবাবরে কইতাম, স্যার আমাগো প্রধান উপদেষ্টা আঁরার পোরধান অনেরে শুনাইবো আশার বাণী...।’

‘থাক থাক তোমাকে আর আশার বাণী শোনাতে হবে না’। ‘ক্যান ক্যান, এখানে আমি আবার কি ভুল বললাম?’ ‘তুমি কিছু ভুল বলোনি তবে, তোমার সে আশায় গুড়ে বালি।’ ‘মানে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা, তার কথা তার নিয়ত পুরা করতে পারবেন না! এটা আপনে কি বলছেন যে?’

‘আরে ভাই বর্তমান বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক সাহেব তোমার আশার গুড়ে বালি ঢেলে দিয়েছেন, কারণ তিনি পুরো বাংলাদেশের মানুষের চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়েছেন যে, তোমরা যতই আশা করো, বাস্তব অনেক কঠিন। বাস্তবে তোমাদের স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।’ ‘কি কন? বিটিভির মহাপরিচালক কখন বললেন যে, আমাদের স্বপ্ন পূরণ হবে না?’ ‘আচ্ছা ভাইডি, প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য যে সরাসরি জাতির উদ্দেশ্যে প্রচার করলেন এর দায়িত্ব কার?’ ‘ক্যান, ক্যামেরাম্যান, লাইট ডিরেক্টার, প্যানেল প্রডিউসার, আপলোড প্রোডিউসার, সুইচার, সাউন্ড রের্কডিং, মেকআপ ম্যান, টেলি-রেকর্ডিং, ফ্লোর ম্যানেজার, অটোকিউ, অনলাইন প্রোডিউসার, এডিটর...।’

‘থাম থাম বাপ, এক কথায় ক’ প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য সরাসরি জাতির উদ্দেশে প্রচারের মূল দায়িত্ব কার?’ ‘ক্যান, বিটিভির মহাপরিচালকের।’

‘জি, আমি সেই কথাটাই বলছিলাম, বিটিভির বর্তমান মহাপরিচালক সৎ সুন্দর সত্যের পূজারী কত সহজেই জাতিকে শৈল্পিকভাবে জানিয়ে দিলেন যে, দেখুন আপনারা যা ভাবছেন বাস্তব তা নয়, বাস্তবে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ক্ষণে ক্ষণে তার রং পাল্টাচ্ছেন। যদিও ব্যাপারটা সূক্ষ্ম, তবে যে কোনো দেশি-বিদেশি বোদ্ধা দর্শক বুঝবে।’

‘বিটিভির মহাপরিচালক আবার কখন বললেন, প্রধান উপদেষ্টা রং পাল্টাচ্ছেন?’ ‘ওম্মা’ এই না তুই বললি, তুই গত ১৭ নভেম্বর, জাতির উদ্দেশে আমাদের প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য ব্রেইনে পুরা ইমপ্রিন্ট করছস?’ ‘অবশ্যই আমি পুরা মনোযোগ দিয়া দেখছি।’ ‘তাহলে তুই কি দেখিস নাই, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস স্যার যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন লং শটে তার রং একটু লালচে, ম্যাড় ম্যাড়ে, আবার যখন মিড ক্লোজ শট দেখাচ্ছিল তখন আমাদের প্রধান উপদেষ্টা স্যারের রং পাল্টেছে।’

‘হ-হ, এইডা আমি খেয়াল করছি যে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস স্যারের রং একেক সময় একেক রকম।’ ‘জি স্যার, এটাই হচ্ছে চলচ্চিত্রের ভাষা। বিটিভির মহাপরিচালক কত সহজেই আমাদের মানে পুরো জাতিকে চলচ্চিত্রের ভাষায় দেখিয়ে দিলেন যে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ক্ষণে ক্ষণে রং পাল্টাচ্ছেন।’

‘আসলেই তো গুরু কথাটা ঠিক। আমাদের উপদেষ্টারা মাঝে মাঝেই তাদের সিদ্ধান্ত বদলাচ্ছেন! ও রে বাপরে বিটিভির মহাপরিচালক তো একটা রিয়েল জিনিয়াস। আসলেই উনি উনার সাবজেক্টটা জানেন এবং বোঝেন। উনি কত সহজেই, জাতিকে বুঝিয়ে দিলেন উপদেষ্টারা মাঝে মাঝেই রং পাল্টাচ্ছেন! এ যেন হো. মো. এরশাদের মতো, সিএমএলএ (ক্যান্সেল মাই লা অ্যানাউন্সমেন্ট)। এরশাদও ক্ষণে ক্ষণে রং পাল্টাতো!’

‘হয়তো পরিবেশের কারণে মাঝে মাঝে নিজ বক্তব্য থেকে সরে আসতে হয়। মহাবিপ্লবী লেনিনও বলেছেন ‘ওয়ান ’েপ ফরওয়ার্ড টু’’েপ ব্যাক’। এখন দ্যেখ কি হয়।’

‘জাতির কি হবে জানি না, তবে শাব্বাশ বিটিভির মহাপরিচালক, যিনি পুরো জাতিকে শৈল্পিক রূপে বাস্তবটা তুলে ধরলেন যে, প্রধান উপদেষ্টা রং পাল্টাচ্ছেন। দারুণ দারুণ। চলুন আমরা সারা জাতি মিল্লা কোরাশে কোই, বিটিভির মহাপরিচালক তুমি সত্য ন্যায়ের রাস্তা ধর, শিল্পের পথে এগিয়ে চল, আমরা আছি তোমার সঙ্গে!’

‘আমরা আছি তোমার সঙ্গে!’

[লেখক : চলচ্চিত্রকার]

জ্ঞানই শক্তি

বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস : জোর দিতে হবে প্রতিরোধে

ঋণ ব্যবস্থা : তেলা মাথায় ঢালো তেল, ন্যাড়া মাথায় ভাঙো বেল

বিচারকের ওপর হামলা কেন

বৈশ্বিক নিষ্ক্রিয়তার কবলে রোহিঙ্গা ইস্যু

আন্তর্জাতিক দাসপ্রথা বিলোপ দিবস

বৈষম্য ঘোচাতে চাই একটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়

রাজনীতির মূল লক্ষ্য জনকল্যাণ

সমস্যার সূতিকাগার

ছবি

বাংলাদেশে আলু চাষে আধুনিক উৎপাদন পদ্ধতি

দলীয় লেজুড়বৃত্তির শিক্ষক রাজনীতি বন্ধের পথ কী?

ব্যাংক সংস্কার : কাটবে কি অন্ধকার?

ছবি

নিত্যপণ্যের দামে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস

রম্যগদ্য: ম্যাড় ম্যাড়ে সোনা-কাহিনী

রাষ্ট্র সংস্কারে পাঠাগার

কেন এত ধ্বংস, কেন এত মৃত্যু

জলবায়ু সম্মেলন থেকে আমরা কী পেলাম

উচ্চশিক্ষায় মান বজায় রাখার চ্যালেঞ্জ

ছবি

যানজট আর্থ-সামাজিক বিড়ম্বনাকে প্রকট করে তুলছে

যাচ্ছে দিন, বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা

ছবি

স্বপ্ন দেখতে তো ভুল নেই

ছবি

আহমদুল কবির : সাংবাদিকতা এবং রাজনীতিতে

ইতিহাসের কাছে মানুষ কী চায়?

আর্থিক সংকট কতটা গভীর

আদিবাসী নেতাদের দেখে নেয়ার হুমকি

সম্পত্তিতে এতিম নাতি-নাতনির অংশ ও বাস্তবতা

দলীয় লেজুড়বৃত্তির শিক্ষক রাজনীতির নেতিবাচক প্রভাব

বোস-আইনস্টাইন সংখ্যায়ন তত্ত্বের শতবর্ষ

প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো বাঁচানো জরুরি

নবজাগরণ : সত্যিই কি জাতি জেগেছে?

গ্রামভিত্তিক কর্মসংস্থানে জোর দিতে হবে

ছবি

কে যাস রে ভাটির গাঙ বাইয়া

লটারিতে ভর্তি : কবে দূর হবে সরকারি স্কুলগুলোর ‘করোনা মহামারী’?

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য নীতি খুব একটা পরিবর্তন হবে কি

অবমূল্যায়ন, মুদ্রাস্ফীতি, মূল্যস্ফীতি এবং প্রাসঙ্গিক কিছু চিন্তা

মুজিব কি কেবলই ছবি

tab

উপ-সম্পাদকীয়

রঙ্গব্যঙ্গ : শাব্বাশ বিটিভি, জিন্দাবাদ, জিন্দাবাদ

জাঁ-নেসার ওসমান

শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪

‘ইয়েয়য়... সঠিক জায়গায় সঠিক লোককে দায়িত্ব অর্পণ করলে কি দারুণ কাজ হয়, তার প্রমাণ আমাদের সরকারি বিটিভি সেটা প্রমাণ করে দেখালো। এই প্রথম বিটিভির একজন মহাপরিচালক সত্যিকার অর্থে সরকারি তাঁবেদারি ছেড়ে, শিল্পের জন্য তার অনুষ্ঠান নির্মাণ করলেন। সাধু সাধু।’

হঠাৎ কি হলো, আপনে সাত সকালে, বেইন্না-ফজরত জন্ম থেকে জ্বলছি, মানে যখন শত শত ছাত্র-জনতা স্বৈরাচারের গুলি খেয়ে দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করছে তখন জন্ম থেকে সরকারি পা-চাটা বিটিভি বাতাবি লেবুর বাম্পার ফলনের সংবাদ প্রচার করছিলো।

‘ভাইরে তখন ছিলো সৈ¦রাচারের আমল, তোমার গড়া গণতন্ত্রের গলিতে গলিতে হিটলারের আদেশ পালনে সবাই সরকারি কর্মচারী বাধ্য। তাই মানবতা ফানবতা বাদ দিয়ে কর্তার ইচ্ছায় কর্ম-সম্পাদন করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানের প্রকৃত শিক্ষিত এক সময়কার ডাকসাইটে বিটিভির কর্মচারী পরে দিগন্ত টিভির দায়িত্বপ্রাপ্ত লৌহমানব এখন বিটিভির মহাপরিচালক। আমাদের বিটিভির মহাপরিচালক শিল্পীর স্বাধীনতায় বিশ্বাসী, উনি সারা দেশবাসীকে দেখিয়ে দিলেন যে শিল্প উপস্থাপনা কত সুন্দর। সরকারি কর্মচারীর দায়িত্ব পেয়েও শৈল্পিকরূপে কিভাবে সমাজের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা যায়।’

‘ভাই হইলোটা কি? সক্কাল বেলায় কি গঞ্জিকা সেবনে লিপ্ত ছিলেন নাকি? হঠাৎ বিটিভির গুণগানে মুগ্ধ!’ ‘এ যেন অনেকটা কথাশিল্পী শওকত ওসমানের ‘ক্রীতদাসের হাসির’ মতো, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে উপন্যাস লিখে সেই স্বৈরাচারের হাত থেকেই বছরের শ্রেষ্ঠ উপন্যাসের পুরস্কার পাওয়া। ইয়েয়য়...।’

‘থামেন থামেন, আপনে কিন্তু তহন থাইক্কা হালাই খালি পে্যঁচাইতেছেন, আসল কথা না কয়া, বিটিং অ্যারাউন্ড দ্য বুশ করতাছেন, বিটিভি কি এমন করলো যে আপনে তারে তিরস্কার না কইরা অস্কার দিতাছেন।’

‘ওই পুঁপ...পুঁপের পো, তুই গত ১৭ নভেম্বর দুই হাজার চব্বিশ সালের সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস স্যারের বক্তব্য শুনস নাই?’ ‘আরে কি কয়, শুনি নাই মানে! দিলের মইধ্যে প্রতিটা বক্তব্য ধারণ করছি আর স্যারের নিয়তটা পুরা ব্রেইনে ইমপ্রিন্ট করছি। স্যার বলেছেন, ‘আমাদের বিপ্লবে দেড় হাজার ছাত্র-শ্রমিক জনতার শহিদী মৃত্যু হয়। আমাদের সরকার প্রতিটি মৃত্যুর তথ্য অত্যন্ত যতেœর সঙ্গে জোগাড় করছে। প্রতিটি হত্যার বিচার আমরা করবোই।’ ভাবতে পারেন কত বড় আশার বাণী। সাগর-রুনি, ত্বকী, মুগ্ধ-আবু-সাঈদ, ছোট্ট রিয়ামণি, রায়হান সব সব- প্রতিটি হত্যার বিচার স্যার করবেনই করবেন। আজকে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ- দৌলা বাঁইচ্চা থাকলে তারে কি কইতাম জানেন?’

‘তুই প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আবার নবাব সিরাজ-উদ-দৌলারে টানস ক্য্যন?’ ‘টানি কারণ নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা যখন কইছিলোÑ ‘বাংলার ভাগ্যাকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা। তার শ্যামল প্রান্তরে আজ রক্তের আলপনা, জাতির সূর্য আজ, অস্তাচলগামী, কে তাকে আশা দেবে, কে তাকে ভরসা দেবে, কে শোনাবে জাগরণের সেই অভয় বাণী...।’ আমি তখন খাড়ায়া নবাবরে কইতাম, স্যার আমাগো প্রধান উপদেষ্টা আঁরার পোরধান অনেরে শুনাইবো আশার বাণী...।’

‘থাক থাক তোমাকে আর আশার বাণী শোনাতে হবে না’। ‘ক্যান ক্যান, এখানে আমি আবার কি ভুল বললাম?’ ‘তুমি কিছু ভুল বলোনি তবে, তোমার সে আশায় গুড়ে বালি।’ ‘মানে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা, তার কথা তার নিয়ত পুরা করতে পারবেন না! এটা আপনে কি বলছেন যে?’

‘আরে ভাই বর্তমান বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক সাহেব তোমার আশার গুড়ে বালি ঢেলে দিয়েছেন, কারণ তিনি পুরো বাংলাদেশের মানুষের চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়েছেন যে, তোমরা যতই আশা করো, বাস্তব অনেক কঠিন। বাস্তবে তোমাদের স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।’ ‘কি কন? বিটিভির মহাপরিচালক কখন বললেন যে, আমাদের স্বপ্ন পূরণ হবে না?’ ‘আচ্ছা ভাইডি, প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য যে সরাসরি জাতির উদ্দেশ্যে প্রচার করলেন এর দায়িত্ব কার?’ ‘ক্যান, ক্যামেরাম্যান, লাইট ডিরেক্টার, প্যানেল প্রডিউসার, আপলোড প্রোডিউসার, সুইচার, সাউন্ড রের্কডিং, মেকআপ ম্যান, টেলি-রেকর্ডিং, ফ্লোর ম্যানেজার, অটোকিউ, অনলাইন প্রোডিউসার, এডিটর...।’

‘থাম থাম বাপ, এক কথায় ক’ প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য সরাসরি জাতির উদ্দেশে প্রচারের মূল দায়িত্ব কার?’ ‘ক্যান, বিটিভির মহাপরিচালকের।’

‘জি, আমি সেই কথাটাই বলছিলাম, বিটিভির বর্তমান মহাপরিচালক সৎ সুন্দর সত্যের পূজারী কত সহজেই জাতিকে শৈল্পিকভাবে জানিয়ে দিলেন যে, দেখুন আপনারা যা ভাবছেন বাস্তব তা নয়, বাস্তবে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ক্ষণে ক্ষণে তার রং পাল্টাচ্ছেন। যদিও ব্যাপারটা সূক্ষ্ম, তবে যে কোনো দেশি-বিদেশি বোদ্ধা দর্শক বুঝবে।’

‘বিটিভির মহাপরিচালক আবার কখন বললেন, প্রধান উপদেষ্টা রং পাল্টাচ্ছেন?’ ‘ওম্মা’ এই না তুই বললি, তুই গত ১৭ নভেম্বর, জাতির উদ্দেশে আমাদের প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য ব্রেইনে পুরা ইমপ্রিন্ট করছস?’ ‘অবশ্যই আমি পুরা মনোযোগ দিয়া দেখছি।’ ‘তাহলে তুই কি দেখিস নাই, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস স্যার যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন লং শটে তার রং একটু লালচে, ম্যাড় ম্যাড়ে, আবার যখন মিড ক্লোজ শট দেখাচ্ছিল তখন আমাদের প্রধান উপদেষ্টা স্যারের রং পাল্টেছে।’

‘হ-হ, এইডা আমি খেয়াল করছি যে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস স্যারের রং একেক সময় একেক রকম।’ ‘জি স্যার, এটাই হচ্ছে চলচ্চিত্রের ভাষা। বিটিভির মহাপরিচালক কত সহজেই আমাদের মানে পুরো জাতিকে চলচ্চিত্রের ভাষায় দেখিয়ে দিলেন যে আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ক্ষণে ক্ষণে রং পাল্টাচ্ছেন।’

‘আসলেই তো গুরু কথাটা ঠিক। আমাদের উপদেষ্টারা মাঝে মাঝেই তাদের সিদ্ধান্ত বদলাচ্ছেন! ও রে বাপরে বিটিভির মহাপরিচালক তো একটা রিয়েল জিনিয়াস। আসলেই উনি উনার সাবজেক্টটা জানেন এবং বোঝেন। উনি কত সহজেই, জাতিকে বুঝিয়ে দিলেন উপদেষ্টারা মাঝে মাঝেই রং পাল্টাচ্ছেন! এ যেন হো. মো. এরশাদের মতো, সিএমএলএ (ক্যান্সেল মাই লা অ্যানাউন্সমেন্ট)। এরশাদও ক্ষণে ক্ষণে রং পাল্টাতো!’

‘হয়তো পরিবেশের কারণে মাঝে মাঝে নিজ বক্তব্য থেকে সরে আসতে হয়। মহাবিপ্লবী লেনিনও বলেছেন ‘ওয়ান ’েপ ফরওয়ার্ড টু’’েপ ব্যাক’। এখন দ্যেখ কি হয়।’

‘জাতির কি হবে জানি না, তবে শাব্বাশ বিটিভির মহাপরিচালক, যিনি পুরো জাতিকে শৈল্পিক রূপে বাস্তবটা তুলে ধরলেন যে, প্রধান উপদেষ্টা রং পাল্টাচ্ছেন। দারুণ দারুণ। চলুন আমরা সারা জাতি মিল্লা কোরাশে কোই, বিটিভির মহাপরিচালক তুমি সত্য ন্যায়ের রাস্তা ধর, শিল্পের পথে এগিয়ে চল, আমরা আছি তোমার সঙ্গে!’

‘আমরা আছি তোমার সঙ্গে!’

[লেখক : চলচ্চিত্রকার]

back to top