alt

উপ-সম্পাদকীয়

যাচ্ছে দিন, বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা

তরিকুল ইসলাম

: সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

রোডক্র্যাশে হতাহতদের স্মরণে প্রতি বছর নভেম্বর মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্বব্যাপী ‘ওয়ার্ল্ড ডে অব রিমেমব্রেন্স ফর রোড ট্রাফিক ভিক্টিমস’ পালন করা হয়। দিবসটি ঘিরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার বিভিন্ন কর্মসূচি থাকলেও রোধ করা যাচ্ছে না সড়ক দুর্ঘটনা। দেশে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে যানবাহনের চালক-যাত্রী। বাদ যাচ্ছে না সাধারণ পথচারীও। সড়কে চলতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে লাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে অনেক পথচারীকে। এ প্রাণহানি অত্যন্ত বেদনার। সড়ক দুর্ঘটনায় যিনি মারা যান, তার পরিবারকে দীর্ঘকাল ধরে বয়ে বেড়াতে হয় দুঃসহ যন্ত্রণা। আর যারা প্রাণে বেঁচে যান অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারিয়ে, তাদের জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। বেঁচেও তারা ভোগ করেন মৃত্যুসম যন্ত্রণা। কর্মশক্তি হারিয়ে পরিবার ও সমাজের জন্য হয়ে যান বোঝা। তাই নিরাপদ সড়কের দাবি যেমন দিন দিন জোরালো হচ্ছে, তেমনি এ লক্ষ্য অর্জনে নিরাপদ সড়ক গড়তে একটি ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’ প্রয়োজন।

রোডক্র্যাশে প্রতি বছর সারা বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা ১২ লাখ ছুঁই ছুঁই। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী রোডক্র্যাশে বছরে ১১ লাখ ৯০ হাজার মানুষ নিহত হয়। রোডক্র্যাশে প্রতি মিনিটে বিশ্বে ২ জন ব্যক্তি এবং দিনে মৃত্যু হয় ৩ হাজার ২০০ জনের। এছাড়া বিশ্বব্যাপী ৫ থেকে ২৯ বছর বয়সের মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণ রোডক্র্যাশ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত ‘গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেফটি-২০২৩’ এ এসব তথ্য উঠে এসেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী সব বয়সের মানুষের মৃত্যুর ১২তম প্রধান কারণ রোডক্র্যাশ। একই সঙ্গে কর্মক্ষম ১৮ থেকে ৫৯ বছর বয়সের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের মৃত্যুর কারণও রোডক্র্যাশ। প্রতি লাখে এই মৃত্যুর হার ১৫ শতাংশ। মৃত্যুর পাশাপাশি হতাহতের সংখ্যাও অনেক। রোডক্র্যাশে দুই থেকে পাঁচ কোটি মানুষ বিভিন্ন মাত্রায় আহত হয়। অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে দক্ষিণ-এশিয়া অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে। শতকরা হিসাবে এটি ২৮ শতাংশ। বিশ্বে রোডক্র্যাশে ১০ জনের মধ্যে ৯ জনের (৯২ শতাংশ) মৃত্যু হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এবং নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে মৃত্যুর সংখ্যা উন্নত দেশগুলোর তুলনায় ৩ গুণ বেশি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে রোডক্র্যাশে হতাহতের চিত্র প্রায় একই রকম। রোডক্র্যাশে হতাহতের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। এ কারণে বিশ্বে গড়ে ১০ থেকে ১২ শতাংশ জিডিপির ক্ষতি হয়।

দেশে সড়ক দুর্ঘটনা উদ্বেগজনক জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বর্তমানে পাঁচ থেকে ২৯ বছর বয়সিদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। প্রতিবছর দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়। বিশেষ করে আহতদের সময়মতো হাসপাতালে না নিতে পারার কারণে বেশি মানুষ প্রাণ হারান। নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে স্বাস্থ্য খাতের বাজেটের ওপর চাপ কমবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত ‘গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেফটি-২০২৩’-এ আরও বলা হয়েছে- ২০১৫ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে বাংলাদেশে রোডক্র্যাশে মৃত্যু হয়েছে, ২১ হাজার ৩১৬ জনের। তবে পুলিশের রিপোর্টে বলা হয়েছে মৃত্যু হয়েছে মাত্র ২ হাজার ৩৭৬ জনের। একইভাবে ২০১৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে ২৪ হাজার ৯৪৪ জনের মৃত্যুর কথা বলা হলেও পুলিশের রিপোর্টে বলা হয়েছে মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৬৩৫ জনের। ২০২১ সালের রিপোর্টে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে মৃত্যু হয়েছে ৩১ হাজার ৫৭৮ জনের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০১৬ সালে প্রতি লাখে মৃত্যুহার ছিল ১৫.৩ শতাংশ এবং ২০২১ সালে এই মৃত্যুহার ছিল প্রতি লাখে ১৯ জনের মতো।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন অথরিটির (বিআরটিএ) এক হিসাবে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে দেশে ৩২২টি রোডক্র্যাশে মৃত্যু হয়েছে ৩৩৩ জনের।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোডক্র্যাশকে প্রতিরোধযোগ্য একটি অসংক্রামক রোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সংবিধানের ১৮ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও সুরক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এছাড়া অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ৩.৬ অর্জনে ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে রোডক্র্যাশে প্রাণহানির সংখ্যা ২৫ শতাংশ কমিয়ে আনার তাগিদ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বৈশ্বিক পর্যায়েও ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘভুক্ত সদস্য দেশগুলো বিশ্বব্যাপী রোডক্র্যাশে নিহত ও আহতের সংখ্যা শতকরা ৫০ ভাগ কমিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য গ্লোবাল প¬্যান ফর সেকেন্ড ডিকেড অব অ্যাকশন ফর রোড সেফটি ২০২১-২০৩০ এর আওতায় ৫টি স্তম্ভের কথা বলা হয়েছে। সেগুলো হলোÑ বহুমুখী যানবাহন ও ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা, নিরাপদ যানবাহন, নিরাপদ সড়ক অবকাঠামো, নিরাপদ সড়ক ব্যবহার, রোডক্র্যাশ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এছাড়া সড়ক ব্যবহারকারীদের জন্য ৫টি আচরণগত ঝুঁকি যেমনÑ গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ না করা, সিট বেল্ট ব্যবহার না করা, মানসম্মত হেলমেট পরিধান না করা, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো এবং শিশুবান্ধব বিশেষায়িত আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করাকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে তৎকালীন সরকার ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ নামে একটি আইন পাস করলেও আইনটি আজও পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি এবং আইনটিতে সড়ক ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষিত। বর্তমান সরকারের কাছে ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’ নামে একটি নতুন আইন প্রণয়নের জোর দাবি জানাচ্ছি।

বাংলাদেশে বিদ্যমান সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ ও সড়ক পরিবহন বিধিমালা-২০২২ মূলত পরিবহন-সংক্রান্ত আইন। তাই উল্লিখিত বৈশ্বিক ও জাতীয় পর্যায়ে উদ্যোগসমূহ যথাযথভাবে বাস্তবায়নে এই আইন ও বিধিমালা যথেষ্ট নয়। এজন্যই প্রয়োজন জাতিসংঘ প্রস্তাবিত বর্ণিত ৫টি স্তম্ভ এবং আচরণগত ঝুঁকির কারণগুলো বিবেচনায় নিয়ে একটি সমন্বিত ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’ প্রণয়ন ও এর বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

[লেখক : অ্যাডভোকেসি অফিসার (কমিউনিকেশন), স্বাস্থ্য সেক্টর, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন]

চালের দামে অস্বস্তি : সরকারি তথ্য ও বাজারের বাস্তবতার ফারাক

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল : নিরাপদ যাত্রার প্রত্যাশা

কর ফাঁকি : অর্থনীতির জন্য এক অশনি সংকেত

১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড় : উপকূলীয় সুরক্ষার শিক্ষা

যখন নদীগুলো অস্ত্র হয়ে ওঠে

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুণগত মান উন্নয়নে গবেষণা ও উদ্ভাবন

বজ্রপাত ও তালগাছ : প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা

কুষ্ঠ ও বৈষম্য : মানবাধিকারের প্রশ্নে একটি অবহেলিত অধ্যায়

ছবি

প্রান্তজনের বাংলাদেশ

অতীতের ছায়ায় নতুন বাংলাদেশ : দুর্নীতি, উগ্রপন্থা ও সরকারের দায়

সাইবার নিরাপত্তা : অদৃশ্য যুদ্ধের সামনে আমাদের প্রস্তুতি

ছবি

বাহান্নর গর্ভে জন্ম নেয়া এক ঝড়ের পাখি

প্রবাসী শ্রমিক : অর্থের যন্ত্র নয়, রাষ্ট্রের সহযোদ্ধা

রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির এক যুগ

ভোগবাদের বিরুদ্ধে পোপ ফ্রান্সিসের জলবায়ু বার্তা

রম্যগদ্য : হাসি নিষেধ...

পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের আন্দোলন : দাবি ও সমাধানের পথ

সিরিয়ার পতন কিভাবে আমেরিকার স্বার্থকে হুমকিতে ফেলছে

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র : বিকল্প রাষ্ট্রচিন্তার সন্ধানে

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

স্নায়ুরোগ চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন জরুরি

জলবায়ু পরিবর্তনের সম্ভাব্য প্রভাব ও করণীয়

শাসনব্যবস্থা : জনগণের প্রত্যাশা ও বাস্তবতার দ্বন্দ্ব

বয়নামা দলিল কখন স্বত্বের দলিল হিসেবে পরিগণিত হয়?

বর্ষার আগেই নদীভাঙনের আতঙ্কে উপকূলবাসী

ছবি

ভূমিকম্প ঝুঁকিতে দেশ : মোকাবিলায় প্রস্তুতি প্রয়োজন

‘রিসেটের’ পরাকৌশল কী হওয়া প্রয়োজন

প্রসঙ্গ : জাতীয় বাজেট

ব্রুনোর শ্মশান মঞ্চ

দুর্নীতির অবিশ্বাস্য খতিয়ান

সাম্য, ন্যায়বিচার, সুশাসন, বহুত্ববাদ : সবকা সাথ্ সবকা বিকাশ!

পশ্চিমবঙ্গে ভয়াবহ সংকটে ধর্মনিরপেক্ষতা

পেশাগত দায় ও নৈতিকতা

বিনোদনের রূপান্তর : সংস্কৃতির সংকোচন ও নতুন পথ

রম্যগদ্য : ‘চোর চাই, চোর...’

শুভ-অশুভ বলে কিছু কি আছে

tab

উপ-সম্পাদকীয়

যাচ্ছে দিন, বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা

তরিকুল ইসলাম

সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪

রোডক্র্যাশে হতাহতদের স্মরণে প্রতি বছর নভেম্বর মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্বব্যাপী ‘ওয়ার্ল্ড ডে অব রিমেমব্রেন্স ফর রোড ট্রাফিক ভিক্টিমস’ পালন করা হয়। দিবসটি ঘিরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার বিভিন্ন কর্মসূচি থাকলেও রোধ করা যাচ্ছে না সড়ক দুর্ঘটনা। দেশে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে যানবাহনের চালক-যাত্রী। বাদ যাচ্ছে না সাধারণ পথচারীও। সড়কে চলতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে লাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে অনেক পথচারীকে। এ প্রাণহানি অত্যন্ত বেদনার। সড়ক দুর্ঘটনায় যিনি মারা যান, তার পরিবারকে দীর্ঘকাল ধরে বয়ে বেড়াতে হয় দুঃসহ যন্ত্রণা। আর যারা প্রাণে বেঁচে যান অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারিয়ে, তাদের জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। বেঁচেও তারা ভোগ করেন মৃত্যুসম যন্ত্রণা। কর্মশক্তি হারিয়ে পরিবার ও সমাজের জন্য হয়ে যান বোঝা। তাই নিরাপদ সড়কের দাবি যেমন দিন দিন জোরালো হচ্ছে, তেমনি এ লক্ষ্য অর্জনে নিরাপদ সড়ক গড়তে একটি ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’ প্রয়োজন।

রোডক্র্যাশে প্রতি বছর সারা বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা ১২ লাখ ছুঁই ছুঁই। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী রোডক্র্যাশে বছরে ১১ লাখ ৯০ হাজার মানুষ নিহত হয়। রোডক্র্যাশে প্রতি মিনিটে বিশ্বে ২ জন ব্যক্তি এবং দিনে মৃত্যু হয় ৩ হাজার ২০০ জনের। এছাড়া বিশ্বব্যাপী ৫ থেকে ২৯ বছর বয়সের মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণ রোডক্র্যাশ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত ‘গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেফটি-২০২৩’ এ এসব তথ্য উঠে এসেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী সব বয়সের মানুষের মৃত্যুর ১২তম প্রধান কারণ রোডক্র্যাশ। একই সঙ্গে কর্মক্ষম ১৮ থেকে ৫৯ বছর বয়সের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের মৃত্যুর কারণও রোডক্র্যাশ। প্রতি লাখে এই মৃত্যুর হার ১৫ শতাংশ। মৃত্যুর পাশাপাশি হতাহতের সংখ্যাও অনেক। রোডক্র্যাশে দুই থেকে পাঁচ কোটি মানুষ বিভিন্ন মাত্রায় আহত হয়। অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে দক্ষিণ-এশিয়া অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে। শতকরা হিসাবে এটি ২৮ শতাংশ। বিশ্বে রোডক্র্যাশে ১০ জনের মধ্যে ৯ জনের (৯২ শতাংশ) মৃত্যু হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এবং নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে মৃত্যুর সংখ্যা উন্নত দেশগুলোর তুলনায় ৩ গুণ বেশি। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে রোডক্র্যাশে হতাহতের চিত্র প্রায় একই রকম। রোডক্র্যাশে হতাহতের কারণে অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। এ কারণে বিশ্বে গড়ে ১০ থেকে ১২ শতাংশ জিডিপির ক্ষতি হয়।

দেশে সড়ক দুর্ঘটনা উদ্বেগজনক জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বর্তমানে পাঁচ থেকে ২৯ বছর বয়সিদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ সড়ক দুর্ঘটনা। প্রতিবছর দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষের মৃত্যু হয়। বিশেষ করে আহতদের সময়মতো হাসপাতালে না নিতে পারার কারণে বেশি মানুষ প্রাণ হারান। নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে স্বাস্থ্য খাতের বাজেটের ওপর চাপ কমবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত ‘গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেফটি-২০২৩’-এ আরও বলা হয়েছে- ২০১৫ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে বাংলাদেশে রোডক্র্যাশে মৃত্যু হয়েছে, ২১ হাজার ৩১৬ জনের। তবে পুলিশের রিপোর্টে বলা হয়েছে মৃত্যু হয়েছে মাত্র ২ হাজার ৩৭৬ জনের। একইভাবে ২০১৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে ২৪ হাজার ৯৪৪ জনের মৃত্যুর কথা বলা হলেও পুলিশের রিপোর্টে বলা হয়েছে মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৬৩৫ জনের। ২০২১ সালের রিপোর্টে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে মৃত্যু হয়েছে ৩১ হাজার ৫৭৮ জনের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০১৬ সালে প্রতি লাখে মৃত্যুহার ছিল ১৫.৩ শতাংশ এবং ২০২১ সালে এই মৃত্যুহার ছিল প্রতি লাখে ১৯ জনের মতো।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন অথরিটির (বিআরটিএ) এক হিসাবে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে দেশে ৩২২টি রোডক্র্যাশে মৃত্যু হয়েছে ৩৩৩ জনের।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রোডক্র্যাশকে প্রতিরোধযোগ্য একটি অসংক্রামক রোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সংবিধানের ১৮ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে জনস্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও সুরক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এছাড়া অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ৩.৬ অর্জনে ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে রোডক্র্যাশে প্রাণহানির সংখ্যা ২৫ শতাংশ কমিয়ে আনার তাগিদ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বৈশ্বিক পর্যায়েও ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘভুক্ত সদস্য দেশগুলো বিশ্বব্যাপী রোডক্র্যাশে নিহত ও আহতের সংখ্যা শতকরা ৫০ ভাগ কমিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য গ্লোবাল প¬্যান ফর সেকেন্ড ডিকেড অব অ্যাকশন ফর রোড সেফটি ২০২১-২০৩০ এর আওতায় ৫টি স্তম্ভের কথা বলা হয়েছে। সেগুলো হলোÑ বহুমুখী যানবাহন ও ভূমি ব্যবহার পরিকল্পনা, নিরাপদ যানবাহন, নিরাপদ সড়ক অবকাঠামো, নিরাপদ সড়ক ব্যবহার, রোডক্র্যাশ পরবর্তী ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এছাড়া সড়ক ব্যবহারকারীদের জন্য ৫টি আচরণগত ঝুঁকি যেমনÑ গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ না করা, সিট বেল্ট ব্যবহার না করা, মানসম্মত হেলমেট পরিধান না করা, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো এবং শিশুবান্ধব বিশেষায়িত আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা না করাকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে তৎকালীন সরকার ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ নামে একটি আইন পাস করলেও আইনটি আজও পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি এবং আইনটিতে সড়ক ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষিত। বর্তমান সরকারের কাছে ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’ নামে একটি নতুন আইন প্রণয়নের জোর দাবি জানাচ্ছি।

বাংলাদেশে বিদ্যমান সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ ও সড়ক পরিবহন বিধিমালা-২০২২ মূলত পরিবহন-সংক্রান্ত আইন। তাই উল্লিখিত বৈশ্বিক ও জাতীয় পর্যায়ে উদ্যোগসমূহ যথাযথভাবে বাস্তবায়নে এই আইন ও বিধিমালা যথেষ্ট নয়। এজন্যই প্রয়োজন জাতিসংঘ প্রস্তাবিত বর্ণিত ৫টি স্তম্ভ এবং আচরণগত ঝুঁকির কারণগুলো বিবেচনায় নিয়ে একটি সমন্বিত ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন’ প্রণয়ন ও এর বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

[লেখক : অ্যাডভোকেসি অফিসার (কমিউনিকেশন), স্বাস্থ্য সেক্টর, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন]

back to top