alt

উপ-সম্পাদকীয়

বায়ুদূষণ থেকে মুক্তি কোন পথে

এনামুল হক খান

: বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে বায়ুদূষণের শীর্ষ নগরীতে পরিণত হয়েছে। বাতাসের সঙ্গে উড়ে বেড়াচ্ছে দূষিত পদার্থ। ফলে অনেকে শ্বাসকষ্টে ভুগছে, আবার চোখের সমস্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ থেকে নগরবাসীকে রক্ষার জন্য জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন। তা না হলে রাজধানীতে বসবাস করা দুষ্কর হবে। কারণ এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ছেলে-বুড়ো কেউই বাদ যাবে না। একদিকে রৌদ্রের প্রখরতা, ভ্যাপসা গরম, বাতাসে ধুলোবালি ও গাড়ির কালো ধোঁয়া উড়ছে। এমনি অবস্থায় পথচারীদের নিঃশ্বাস নেয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। এ অবস্থা আরো বৃদ্ধি পেলে বাসভবনে থেকেও এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে না। মহানগরীকে পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য রাখতে সবার সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এর জন্য রাজধানীর দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর থাকতে হবে সজাগ দৃষ্টি।

যে সংস্থাটি পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে সম্পৃক্ত তাকে এই কার্যক্রমে আরো বেশি যতœবান হওয়া চাই। আর গাড়ির কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ বিষয়টি যারা দেখছেন তাদেরও এর প্রতি লক্ষ্য রাখা দরকার।

লক্ষ্যণীয় যে, বাতাসে উড়ন্ত ছাই ভেসে বেড়ানোর দৃশ্য খালি চোখেই নজরে আসছে। ইতিহাস থেকে পাওয়া যায় ১৬১০ সালে ঈশাখাঁ বুড়িগঙ্গার তীরে রাজধানীর গোড়াপত্তন করেছিলেন। এই রাজধানী আজ শুধু বুড়িগঙ্গার তীরে সীমাবদ্ধ নেই, এর বিস্মৃতি হয়েছে অনেক। বর্তমানে ৩৬০ বর্গকিলোমিটার ছাড়িয়ে গেছে। চারিদিকেই নদী, যা বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা।

নদীবেষ্টিত রাজধানী পৃথিবীর অনন্য নগরী হওয়ার কথা। এই রাজধানীকে আমরা সেভাবে গড়ে তুলতে পারিনি। এই পারিনি বলেই নদীগুলো মরতে বসেছে। এ ব্যর্থতার দায় থেকে আমাদের রক্ষা পাওয়ার সুযোগ নেই। রাজধানীকে সবুজ-শ্যামল, দৃষ্টিনন্দন করে সাজিয়ে তোলার ও পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব আমাদের। যেখানে দূষণমুক্ত পরিবেশ ও নির্মল বাতাসে আজকের শিশু বেড়ে ওঠার কথা। সেখানে ধুলাবালি ও কালো ধোঁয়ায় একাকার। এতে সুস্থভাবে শিশুর বেড়ে ওঠা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণের সামগ্রিক পরিকল্পনা দরকার, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল দরকার। সরকার ঢাকা মহানগরীকে ১৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় সম্প্রসারণের জন্য পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এ রাজধানী দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে, বিস্তার লাভ করছে। এই সম্প্রসারণ হচ্ছে মানুষের আধিক্যের কারণে। মানুষ বাড়ছে তো বাড়ছেই।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হচ্ছে শিক্ষা, কর্মসংস্থান, ব্যবসা বাণিজ্য সবকিছু রাজধানীকেন্দ্রীক হওয়ার কারণে। এই জনসংখ্যা বৃদ্ধি আশাহত হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানী ঢাকা তার অতীত ঐতিহ্য ধরে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। পরিণত হচ্ছে বসবাস অযোগ্য নগরী রূপে। রাজধানীতে আজ পরিচ্ছন্ন বাতাস ও স্বচ্ছ জীবাণুহীন পানিপ্রাপ্তি দুষ্কর হয়ে পড়েছে। ঘর থেকে বেরোলেই জঞ্জাল, রাস্তায় কালো ধোঁয়া, স্যানিটেশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অপর্যাপ্ততা করে তুলছে আরো অসহনীয়। এই রাজধানীতে মুক্ত ও স্বচ্ছ বাতাস খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। নগরীর খাল-বিল, পুকুর-ডোবা নিঃশেষ হওয়ার কারণে বৃষ্টির পানি ও দৈনন্দিন ব্যবহৃত পানি নিঃস্বরণ বিঘিœত হচ্ছে। ফলে খানিক বৃষ্টিতে হচ্ছে জলাবদ্ধতা, যা পরিবেশকে বিষিয়ে তুলছে। তাছাড়া অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট, বাড়ি ও ইমারত নির্মাণ এই নগরীকে গড়ে তুলছে বিরাট এক বস্তিÍরূপে। এভাবে চলতে থাকলে এই রাজধানী অদূর ভবিষ্যতে পরিত্যক্ত নগরীর কাতারে শামিল হবে। এ থেকে উত্তোরণের কোন পথ থাকবে না। তাই রাজধানীকে সাজিয়ে তুলতে হবে বাসযোগ্য নগরীরূপে। যাতে আগামী প্রজন্ম বেড়ে উঠতে পারে নির্মল বায়ুতে, সতেজ, সুস্থ, সবল মানুষ হিসেবে। তবেই দেশের মাটির প্রতি থাকবে তাদের গভীর মমত্ববোধ। তথ্যমতে, শুরুতে রাজধানী স্বল্প পরিসরে বিস্তৃত ছিল, ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করেছে। এটি গড়ে উঠেছে চকবাজার ও আফগান দুর্গকে কেন্দ্র করে। আফগান দুর্গে হয়েছে কেন্দ্রীয় কারাগার। শুরুতে পাশের এলাকাতে গড়ে ওঠে শিল্প, বাণিজ্য ও প্রশাসনিক এলাকা। বসবাস শুরু করে উঁচু শ্রেণীর লোকেরা। পরবর্তিতে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ বসতি গড়ে বকসীবাজার, আরমানিটোলা, লক্ষ্মীবাজার, বেগম বাজার এলাকায়। মুর্শিদকুলী খাঁর আমলে রাজধানী মুর্শিদাবাদে স্থানান্তরিত হলে ঢাকায় সম্প্রসারণ স্তিমিত হয়। পরবর্তীতে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের ফলে ঢাকা আবার রাজধানীর মর্যাদা পায়, সম্প্রসারণ শুরু হয়। ব্রিটিশ আমলে উচ্চপদস্থ কর্মচারী ও নওয়াবরা বাসস্থান গড়ে বুড়িগঙ্গার তীরে। তখন অফিস আদালত ও প্রশাসনিক স্থাপনাসমূহ গড়ে ওঠে রমনা এলাকায়।

তখনই গেন্ডারিয়া, ওয়ারী আবাসিক এলাকায় পরিণত হয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর তেজগাঁও, হাজারীবাগ, পোস্তগোলা শিল্প এলাকা হিসেবে গড়ে ওঠে। আর চকবাজার, মিটফোর্ড ও ফরাশগঞ্জ এলাকা পরিণত হয় বাণিজ্য কেন্দ্রে। পরবর্তীতে এই বাণিজ্যকেন্দ্র ইসলামপুর, পাটুয়াটুলী, বাংলাবাজার, নওয়াবপুর হয়ে বর্তমানে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। আর তখনই আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে ওঠে ধানমন্ডি। এই নগরীর আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা, অফিস-আদালত, কলকারখানা স্থাপন পরিকল্পিত গড়ে ওঠেনি। শুধু তাই নয়, রাজধানীর চারদিকের নদীগুলো অপরিকল্পিত ব্যবহারের ফলে পানি দূষিত হয়েছে। নদীর তীরে যাওয়াই যায় না। মহানগরীর মানুষকে সুস্থ-সবল রাখতে নিতে হবে বাস্তবধর্মী কার্যক্রম। তা না হলে সবকিছু হয়ে উঠবে জঞ্জালে একাকার। নিতে হবে মাস্টার ড্রেন, সুয়ারেজ লাইন পরিচ্ছন্ন রাখার কার্যক্রম। ময়লা-আবর্জনা যত দ্রত সম্ভব সরিয়ে ফেলা হবে অন্যতম কাজ। সেই সঙ্গে নিতে হবে রাজধানীর রাস্তাগুলোতে পানি ছিটানোর কার্যক্রম। নগরীকে স্বাচ্ছন্দ্যময় রাখতে হলে খেলাধুলার স্থান, বিনোদন কেন্দ্র, পার্ক, লেক স্থাপন ও উন্মুক্ত স্থান সংরক্ষণ জরুরি। আজকের রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান রাজধানী গড়ার প্রথম পরিকল্পনার অংশ। এই স্থানটি থাকাতে মানুষ একটু নিঃশ্বাস ফেলার স্থান খুঁজে পায়। আগামী প্রজন্মের জন্য আরো এ ধরনের পার্ক স্থাপন প্রয়োজন। যাতে মানুষ মুক্ত ও বিশুদ্ধ বাতাস খুঁজে পায়। মুক্ত বাতাসেই মুক্ত চিন্তায় মানুষ আসা করা যায়। দূষিত বাতাসে মুক্ত চিন্তায় মানুষ গড়ে উঠতে পারে না। বায়ুদূষণের জন্য মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি বেশি দায়ী। যোগ হচ্ছে মানসম্মত জ্বালানি ব্যবহার না করা। পরিমিত লুব্রিকেটিং অয়েল ব্যবহার না করা, অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল পরিবহন করা। সবকিছুর জন্যই প্রয়োজন পরিকল্পনা গ্রহণ ও নিয়ন্ত্রণ।

এই রাজধানীকে আধুনিক, দৃষ্টিনন্দন ও বাস্তবসম্মত হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সেই সঙ্গে নাগরিকের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার নিশ্চয়তা বিধান দরকার। এখন আমরা নিজেরাই এই দেশের শাসনকর্তা, নিয়ন্ত্রণকারী ও পরিকল্পনাকারী। আজ আমাদের কোন বিদেশি প্রভু নেই। এই নগরীর লোকসংখ্যা এক কোটি ত্রিশ লাখ অতিক্রম করেছে অনেক আগেই। পরিকল্পনামাফিক না এগোলে রাজধানীর ভবিষৎ অন্ধকার। এখানে গড়ে উঠছে সারি সারি অট্টালিকা। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের সমৃদ্ধ নগরী রূপে একে গড়ে তুলতে হবে। নগরীর ডাস্টবিনগুলো ময়লা যথাসময়ে ডাম্পিং স্টেশনে নেয়া হচ্ছে কিনা নিশ্চিত হতে হবে, আর নিতে হবে পরিশোধনের কার্যক্রম। এর পাশাপাশি সুয়ারেজ লাইনের পরিচ্ছন্নতায়ও নিতে হবে অনুরূপ উদ্যোগ। আমরা জানি আদি যুগের বর্বর ও হতদরিদ্র মানুষকে উন্নত করেছে প্রযুক্তি। একটি নগরীকে সমৃদ্ধশালী করতে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমনস্ক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সব ক্ষেত্রে প্রযুক্তির সুফল কাজে লাগাতে হবে। বৃষ্টিবিহীন সময়ে রাজধানীর আইল্যান্ডগুলোতে স্বয়ংক্রিয় পানি ছিটানো পদ্ধতি সংযোজন হবে অন্যতম কাজ। এমনি করে নগরবাসীর স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্ব দিলেই নগরী হবে দৃষ্টিনন্দন ও পরিপাটি। রাজধানীর বায়ু হবে দূষণমুক্ত, নিরাপদ।

[লেখক : প্রকৌশলী]

নেই কেনো সেই পাখি

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র : রাষ্ট্র সংস্কারের দুর্গম পথ

পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র

বিজয়ের প্রেরণা

মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার পুনর্বীক্ষণ

সিদরাত জেবিনের মৃত্যু অথবা প্রশ্নহীন বায়ুদূষণ

বিজয়ের গৌরব ও সম্ভাবনাময় তরুণ সমাজ

ছবি

মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি বন্ধুদের অবদান

ছবি

বিজয় সংগ্রামের সূচনার সন্ধানে

মানসম্মত কনটেন্ট ও টিআরপির দ্বৈরথ

জিকা ভাইরাস রোধে প্রয়োজন সচেতনতা

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক

স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার গুরুত্ব

ঢাকার বাতাস বিষাক্ত কেন

চরের কৃষি ও কৃষকের জীবন

নিম্ন আয়ের মানুষ ভালো নাই

সবার আগে নিজেকে পরিবর্তন করা দরকার

পুলিশ কবে পুলিশ হবে

জীবন ফিরে আসুক বাংলার নদীগুলোতে

কান্দন সরেন হত্যা ও ভূমি বিরোধ কি এড়ানো যেত না

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র: রাষ্ট্র বিনির্মাণে সমস্যা কোথায়?

মানবাধিকার দিবস : মানুষের অধিকার নিয়ে কেন এত কথা?

আমলাতান্ত্রিক স্বচ্ছতা : সংস্কারের পথে নাকি পুনরাবৃত্তি?

খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কিছু কথা

ছবি

বেগম রোকেয়া : নারী জাগরণের অগ্রদূত

দুর্নীতির সর্বগ্রাসী বিস্তার বন্ধ করতে হবে

মা তোর বদনখানি মলিন হলে

ব্যবসায়ী নেতৃত্বশূন্য ই-ক্যাব

মূল্যস্ফীতির হিসাব নির্ণয়ে নতুন পদ্ধতির প্রাসঙ্গিকতা

মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারের সফলতা চায়

সবার উপরে মানুষ সত্য

এইচএসসিতে ইংরেজিতে ফল বিপর্যয় কেন, করণীয় কী

ছবি

নিরাপদ এবং সুষম পরিবেশের পরিকল্পনা

ফার্মেসি শিক্ষা ও পেশার সংস্কার প্রয়োজন

মশার কয়েলের প্রভাব : জনস্বাস্থ্যের অদৃশ্য হুমকি

“আইনুন কাইনুন সর্বনেশে...”

tab

উপ-সম্পাদকীয়

বায়ুদূষণ থেকে মুক্তি কোন পথে

এনামুল হক খান

বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে বায়ুদূষণের শীর্ষ নগরীতে পরিণত হয়েছে। বাতাসের সঙ্গে উড়ে বেড়াচ্ছে দূষিত পদার্থ। ফলে অনেকে শ্বাসকষ্টে ভুগছে, আবার চোখের সমস্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ থেকে নগরবাসীকে রক্ষার জন্য জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন। তা না হলে রাজধানীতে বসবাস করা দুষ্কর হবে। কারণ এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ছেলে-বুড়ো কেউই বাদ যাবে না। একদিকে রৌদ্রের প্রখরতা, ভ্যাপসা গরম, বাতাসে ধুলোবালি ও গাড়ির কালো ধোঁয়া উড়ছে। এমনি অবস্থায় পথচারীদের নিঃশ্বাস নেয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। এ অবস্থা আরো বৃদ্ধি পেলে বাসভবনে থেকেও এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে না। মহানগরীকে পরিচ্ছন্ন ও বাসযোগ্য রাখতে সবার সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এর জন্য রাজধানীর দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর থাকতে হবে সজাগ দৃষ্টি।

যে সংস্থাটি পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে সম্পৃক্ত তাকে এই কার্যক্রমে আরো বেশি যতœবান হওয়া চাই। আর গাড়ির কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ বিষয়টি যারা দেখছেন তাদেরও এর প্রতি লক্ষ্য রাখা দরকার।

লক্ষ্যণীয় যে, বাতাসে উড়ন্ত ছাই ভেসে বেড়ানোর দৃশ্য খালি চোখেই নজরে আসছে। ইতিহাস থেকে পাওয়া যায় ১৬১০ সালে ঈশাখাঁ বুড়িগঙ্গার তীরে রাজধানীর গোড়াপত্তন করেছিলেন। এই রাজধানী আজ শুধু বুড়িগঙ্গার তীরে সীমাবদ্ধ নেই, এর বিস্মৃতি হয়েছে অনেক। বর্তমানে ৩৬০ বর্গকিলোমিটার ছাড়িয়ে গেছে। চারিদিকেই নদী, যা বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু, শীতলক্ষ্যা।

নদীবেষ্টিত রাজধানী পৃথিবীর অনন্য নগরী হওয়ার কথা। এই রাজধানীকে আমরা সেভাবে গড়ে তুলতে পারিনি। এই পারিনি বলেই নদীগুলো মরতে বসেছে। এ ব্যর্থতার দায় থেকে আমাদের রক্ষা পাওয়ার সুযোগ নেই। রাজধানীকে সবুজ-শ্যামল, দৃষ্টিনন্দন করে সাজিয়ে তোলার ও পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব আমাদের। যেখানে দূষণমুক্ত পরিবেশ ও নির্মল বাতাসে আজকের শিশু বেড়ে ওঠার কথা। সেখানে ধুলাবালি ও কালো ধোঁয়ায় একাকার। এতে সুস্থভাবে শিশুর বেড়ে ওঠা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ থেকে পরিত্রাণের সামগ্রিক পরিকল্পনা দরকার, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল দরকার। সরকার ঢাকা মহানগরীকে ১৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় সম্প্রসারণের জন্য পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এ রাজধানী দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে, বিস্তার লাভ করছে। এই সম্প্রসারণ হচ্ছে মানুষের আধিক্যের কারণে। মানুষ বাড়ছে তো বাড়ছেই।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হচ্ছে শিক্ষা, কর্মসংস্থান, ব্যবসা বাণিজ্য সবকিছু রাজধানীকেন্দ্রীক হওয়ার কারণে। এই জনসংখ্যা বৃদ্ধি আশাহত হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজধানী ঢাকা তার অতীত ঐতিহ্য ধরে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। পরিণত হচ্ছে বসবাস অযোগ্য নগরী রূপে। রাজধানীতে আজ পরিচ্ছন্ন বাতাস ও স্বচ্ছ জীবাণুহীন পানিপ্রাপ্তি দুষ্কর হয়ে পড়েছে। ঘর থেকে বেরোলেই জঞ্জাল, রাস্তায় কালো ধোঁয়া, স্যানিটেশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অপর্যাপ্ততা করে তুলছে আরো অসহনীয়। এই রাজধানীতে মুক্ত ও স্বচ্ছ বাতাস খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। নগরীর খাল-বিল, পুকুর-ডোবা নিঃশেষ হওয়ার কারণে বৃষ্টির পানি ও দৈনন্দিন ব্যবহৃত পানি নিঃস্বরণ বিঘিœত হচ্ছে। ফলে খানিক বৃষ্টিতে হচ্ছে জলাবদ্ধতা, যা পরিবেশকে বিষিয়ে তুলছে। তাছাড়া অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট, বাড়ি ও ইমারত নির্মাণ এই নগরীকে গড়ে তুলছে বিরাট এক বস্তিÍরূপে। এভাবে চলতে থাকলে এই রাজধানী অদূর ভবিষ্যতে পরিত্যক্ত নগরীর কাতারে শামিল হবে। এ থেকে উত্তোরণের কোন পথ থাকবে না। তাই রাজধানীকে সাজিয়ে তুলতে হবে বাসযোগ্য নগরীরূপে। যাতে আগামী প্রজন্ম বেড়ে উঠতে পারে নির্মল বায়ুতে, সতেজ, সুস্থ, সবল মানুষ হিসেবে। তবেই দেশের মাটির প্রতি থাকবে তাদের গভীর মমত্ববোধ। তথ্যমতে, শুরুতে রাজধানী স্বল্প পরিসরে বিস্তৃত ছিল, ধীরে ধীরে বিস্তার লাভ করেছে। এটি গড়ে উঠেছে চকবাজার ও আফগান দুর্গকে কেন্দ্র করে। আফগান দুর্গে হয়েছে কেন্দ্রীয় কারাগার। শুরুতে পাশের এলাকাতে গড়ে ওঠে শিল্প, বাণিজ্য ও প্রশাসনিক এলাকা। বসবাস শুরু করে উঁচু শ্রেণীর লোকেরা। পরবর্তিতে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ বসতি গড়ে বকসীবাজার, আরমানিটোলা, লক্ষ্মীবাজার, বেগম বাজার এলাকায়। মুর্শিদকুলী খাঁর আমলে রাজধানী মুর্শিদাবাদে স্থানান্তরিত হলে ঢাকায় সম্প্রসারণ স্তিমিত হয়। পরবর্তীতে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের ফলে ঢাকা আবার রাজধানীর মর্যাদা পায়, সম্প্রসারণ শুরু হয়। ব্রিটিশ আমলে উচ্চপদস্থ কর্মচারী ও নওয়াবরা বাসস্থান গড়ে বুড়িগঙ্গার তীরে। তখন অফিস আদালত ও প্রশাসনিক স্থাপনাসমূহ গড়ে ওঠে রমনা এলাকায়।

তখনই গেন্ডারিয়া, ওয়ারী আবাসিক এলাকায় পরিণত হয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর তেজগাঁও, হাজারীবাগ, পোস্তগোলা শিল্প এলাকা হিসেবে গড়ে ওঠে। আর চকবাজার, মিটফোর্ড ও ফরাশগঞ্জ এলাকা পরিণত হয় বাণিজ্য কেন্দ্রে। পরবর্তীতে এই বাণিজ্যকেন্দ্র ইসলামপুর, পাটুয়াটুলী, বাংলাবাজার, নওয়াবপুর হয়ে বর্তমানে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। আর তখনই আবাসিক এলাকা হিসেবে গড়ে ওঠে ধানমন্ডি। এই নগরীর আবাসিক এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা, অফিস-আদালত, কলকারখানা স্থাপন পরিকল্পিত গড়ে ওঠেনি। শুধু তাই নয়, রাজধানীর চারদিকের নদীগুলো অপরিকল্পিত ব্যবহারের ফলে পানি দূষিত হয়েছে। নদীর তীরে যাওয়াই যায় না। মহানগরীর মানুষকে সুস্থ-সবল রাখতে নিতে হবে বাস্তবধর্মী কার্যক্রম। তা না হলে সবকিছু হয়ে উঠবে জঞ্জালে একাকার। নিতে হবে মাস্টার ড্রেন, সুয়ারেজ লাইন পরিচ্ছন্ন রাখার কার্যক্রম। ময়লা-আবর্জনা যত দ্রত সম্ভব সরিয়ে ফেলা হবে অন্যতম কাজ। সেই সঙ্গে নিতে হবে রাজধানীর রাস্তাগুলোতে পানি ছিটানোর কার্যক্রম। নগরীকে স্বাচ্ছন্দ্যময় রাখতে হলে খেলাধুলার স্থান, বিনোদন কেন্দ্র, পার্ক, লেক স্থাপন ও উন্মুক্ত স্থান সংরক্ষণ জরুরি। আজকের রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান রাজধানী গড়ার প্রথম পরিকল্পনার অংশ। এই স্থানটি থাকাতে মানুষ একটু নিঃশ্বাস ফেলার স্থান খুঁজে পায়। আগামী প্রজন্মের জন্য আরো এ ধরনের পার্ক স্থাপন প্রয়োজন। যাতে মানুষ মুক্ত ও বিশুদ্ধ বাতাস খুঁজে পায়। মুক্ত বাতাসেই মুক্ত চিন্তায় মানুষ আসা করা যায়। দূষিত বাতাসে মুক্ত চিন্তায় মানুষ গড়ে উঠতে পারে না। বায়ুদূষণের জন্য মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি বেশি দায়ী। যোগ হচ্ছে মানসম্মত জ্বালানি ব্যবহার না করা। পরিমিত লুব্রিকেটিং অয়েল ব্যবহার না করা, অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল পরিবহন করা। সবকিছুর জন্যই প্রয়োজন পরিকল্পনা গ্রহণ ও নিয়ন্ত্রণ।

এই রাজধানীকে আধুনিক, দৃষ্টিনন্দন ও বাস্তবসম্মত হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সেই সঙ্গে নাগরিকের যাবতীয় সুযোগ-সুবিধার নিশ্চয়তা বিধান দরকার। এখন আমরা নিজেরাই এই দেশের শাসনকর্তা, নিয়ন্ত্রণকারী ও পরিকল্পনাকারী। আজ আমাদের কোন বিদেশি প্রভু নেই। এই নগরীর লোকসংখ্যা এক কোটি ত্রিশ লাখ অতিক্রম করেছে অনেক আগেই। পরিকল্পনামাফিক না এগোলে রাজধানীর ভবিষৎ অন্ধকার। এখানে গড়ে উঠছে সারি সারি অট্টালিকা। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের সমৃদ্ধ নগরী রূপে একে গড়ে তুলতে হবে। নগরীর ডাস্টবিনগুলো ময়লা যথাসময়ে ডাম্পিং স্টেশনে নেয়া হচ্ছে কিনা নিশ্চিত হতে হবে, আর নিতে হবে পরিশোধনের কার্যক্রম। এর পাশাপাশি সুয়ারেজ লাইনের পরিচ্ছন্নতায়ও নিতে হবে অনুরূপ উদ্যোগ। আমরা জানি আদি যুগের বর্বর ও হতদরিদ্র মানুষকে উন্নত করেছে প্রযুক্তি। একটি নগরীকে সমৃদ্ধশালী করতে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমনস্ক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সব ক্ষেত্রে প্রযুক্তির সুফল কাজে লাগাতে হবে। বৃষ্টিবিহীন সময়ে রাজধানীর আইল্যান্ডগুলোতে স্বয়ংক্রিয় পানি ছিটানো পদ্ধতি সংযোজন হবে অন্যতম কাজ। এমনি করে নগরবাসীর স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্ব দিলেই নগরী হবে দৃষ্টিনন্দন ও পরিপাটি। রাজধানীর বায়ু হবে দূষণমুক্ত, নিরাপদ।

[লেখক : প্রকৌশলী]

back to top