alt

উপ-সম্পাদকীয়

সরিষার তেল গবেষণায় সাফল্য

মিহির কুমার রায়

: রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ভোজ্যতেলের মধ্যে সরিষার তেলই প্রধান যা মোট উৎপাদনের প্রায় ৩৬ শতাংশ। সয়াবিন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল বীজ ফসল, যা বছরে প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার টন উৎপাদতি হয়। তবে এর পুরো পরিমান নিষ্কাশন ছাড়াই পোলট্রি ফিড হিসােেব ব্যবহার করা হয়। উল্লেখ্য, ভোজ্যতেল হিসাবে সরিষার তেলে সম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিডরে পরমিাণ ৩০ শতাংরে নিচে ও অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিডের পরমিাণ ৫০ শতাংশের ওপরে এবং ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ এর অনুপাত ১:২ বিদ্যমান, যা পুরোপুরি স্বাস্থ্যসম্মত।

কয়েক বছর আগেও মানুষ সরিষার তেল খাওয়া ভুলে গিয়েছিল। এখন সবাই সরিষার তেল খাচ্ছে। কারণ সয়াবিনের চেয়ে সরিষার তেলের উপকারিতা অনেক বেশি। এখানে উল্লেখ্য যে তেলবীজ আবাদি জমির প্রায় ৬০ শতাংশ সরিষায় এবং কমবেশি সব জেলাতেই সরিষার চাষ হয়। ডিএই সূত্রে জানা যায়, দেেেশ গত ২০২১-২২ র্অথবছরে প্রায় ৬ লাখ হক্টের জমিতে সরিষা আবাদে উৎপাদিত সরিষার পরিমাণ ছিল ৭ দশমিক ৩৫ লাখ টন এবং গত ২০২২-২৩

অর্থবছরের সরিষার আওতায় জমির পরিমাণ বাড়ে প্রায় ২ লাখ হেক্টর। সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিক ‘তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প’-এর আওতায় জুন ২০২৫ সালরে মধ্যে প্রত্যাশার অনুকূলে ভোজ্যতেলের চাহিদার ৪০ শতাংশ দেশীয় উৎপাদন দিয়ে মেটানো সম্ভব হবে। ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে বাংলাদেশে তেল জাতীয় ফসল সরিষা চাষের আওতায় জমির পরমিাণ বৃদ্ধিসহ উচ্চফলনশীল জাতের দ্রুত সম্প্রসারণ ও উৎপাদন কলাকৌশলে আধুনিক পদ্ধতির অনুসরণই একমাত্র উপায়।

বাংলাদেশে সাধারণত আমন ধান চাষের পর জমি পতিত থাকবে। এরপর সেই জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়। তেলে উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজন আমন ধানের পর জমি পতিত না রেখে স্বল্পমেয়াদি সরিষার আবাদ করা। এ জন্য দেশের বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে স্বল্প জীবনকালের (১০০ থেকে ১২০ দিন) অথচ উচ্চফলনশীল আমন ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন, যেগুলো মূল জমিতে চারা রোপণের মাত্র ৮০ থেকে ৯৫ দিনের মধ্যেই ঘরে তোলা যায়। এরপর জমি পতিত না রেখে উন্নত জাতের সরিষা চাষ করা সম্ভব হচ্ছে, যেগুলো ৮০-৮৫ দিনের মধ্যে পরিপক্ব হওয়ায় পর একই জমিতে আবার বোরো ধান চাষ করে প্রচলিত দুই ফসলি জমিকে তিন ফসলিতে রূপান্তর করা সম্ভব হচ্ছে। দেশে সরিষা বপন-পরর্বতী অগ্রহায়ণ (মধ্য নভেম্বর থেকে মধ্য ডিসেম্বর) মাসে নিম্নচাপজনিত বৃষ্টিপাতের কারণে জমিতে সাময়িক জলাবদ্ধতায় দেশি জাতের সরিষা টরি-৭সহ অন্যান্য উচ্চফলনশীল জাত নষ্ট হলেও বারি সরিষা-১৮ ও বারি সরিষা-১৯ জাত পাঁচ দিন পর্যন্ত সাময়িক জলাবদ্ধতা/জলমগ্নতা-সহিষ্ণু হওয়ায় কৃষকরা ফসলহানি থেকে রক্ষা পাচ্ছে। কাজেই উচ্চফলনশীল ও স্বল্পমেয়াদি বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৭সহ বারি সরিষা-১৮ জাতের আবাদ নিশ্চতকরণ; শস্যবিন্যাসে উল্লেখিতি সরিষার জাতগুলোর অন্তর্ভুক্তিকরণসহ পতিত জমি ও চরাঞ্চলে সরিষার জাতগুলোর আবাদ সম্প্রসারণের মাধ্যমে ভোজ্যতেলের আমদানিনির্ভরতা কমানো সম্ভব।

সম্প্রতি দেশে রপ্তানিযোগ্য ভোজ্য সরিষা তেল নিয়ে গবেষণায় সফলতার আলো দেখছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অধ্যাপক ড. জামিলুর রহমান।

২০২৩ সালে নতুন নিবন্ধিত তার এই ক্যানোলা গ্রেডের সরিষার জাতটির নাম ‘এসএইউ ক্যানোলা-১’। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ইরোসিক এসিডের পরিমাণ ১

শতাংশেরও নিচে থাকা জাতটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য। দেশের ভোজ্য সরিষা তেলে এই ক্ষতিকর ইরোসিক এসিড (৪০-৫০ শতাংশ) থাকায় বর্তমানে উন্নত দেশের

বাজারে ভোজ্যতেল রপ্তানিযোগ্য করতে পারে না বাংলাদেশ। এই জাতের সরিষার চাষ বাড়লে এই সমস্যার সমাধান মিলবে বলে আশা করছেন গবেষকরা।

এই জাতের সরিষার ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ নির্ধারণ করে দেখা গেছে নতুন

নিবন্ধিত এসএইউ ক্যানোলা-১ জাতটির ইরোসিক এসিডের পরিমাণ ০.৭ শতাংশ। পাশাপাশি জাতটিতে উচ্চমাত্রার ওমেগা-৯ (৫১%), ওমেগা-৬ (৩১%) এবং ওমেগা-৩ (৭%) থাকায় এর সরিষার তেল অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর ও উপকারী। জানা গেছে, উক্ত গবেষক ২০১৮ সাল থেকে ক্রুসিফেরি পরিবারের ব্রাসিকা জুনসিয়া প্রজাতির ২৫টি জার্মপাজম নিয়ে কাজ শুরু করেন। জুনসিয়া প্রজাতিটি টেট্রাপয়েড। এ জাতের গাছগুলোর ভিগোরিটি, প্রতিকূলতা সহিষ্ণুতা ও জীবনকাল অপেক্ষাকৃত বেশি। গবেষক নতুন এই জাতটির ইনব্রিডিং এবং রিকারেন্ট সিলেকশন, সেলফিং এর মাধ্যমে অন্যান্য বৈশিষ্ট্য ঠিক রেখেই জীবনকাল ১০৫ দিনে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন। ফলে রপ্তানিযোগ্যতার পাশাপাশি দেশের কৃষির শস্য বিন্যাসেও অধিকতর উপযোগিতার সৃষ্টি করেছে জাতটি।

ইতোমধ্যে এসএইউ ক্যানোলা-১ এর ঈশ্বরদী, পাবনা, সাতক্ষীরা, মানিকগঞ্জ,

সিলেটে ট্রায়াল করে সফল হয়েছেন এই গবেষক ।

এক গবেষণা প্রবন্ধে দেখা যায়, সাতক্ষীরা জেলার নগরহাটে বিনা সরিষা-৭, বিনা সরিষা-৮, বারি সরিষা-১১, বারি সরিষা ১৮ ও এসএইউ ক্যানোলা-১ জাতগুলোর তুলনামূলক চাষের ক্ষেত্রে প্রায় ১০৩ দিন জীবনকালে হেক্টরপ্রতি সর্বোচ্চ ২.১২ টন ফলন দিয়েছে জাতটি। ক্যানোলা গ্রেডের জাতটিতে বারি সরিষা ১৮ এর তুলনায় কম ইরোসিক এসিড থাকায় এর তেলের মান আরও ভালো হবে বলে আশা করছেন গবেষকরা। এছাড়া স্বাস্থ্যসম্মত সরিষা তেল এর মাধ্যমে দেশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রপ্তানি শিল্পেও বড় অবদান রাখবে বলে আশাবাদী তারা।

এখন দেশে তেলজাতীয় ফসলের আবাদ বাড়াতে ‘তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি’ শীর্ষক একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। প্রকল্পটি ২০২০ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়। শেষ হবে ২০২৫ সালের জুনে। প্রকল্পের ব্যয় ২২২ কোটি ১৬ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় গত বছর ১৩ হাজার ৯৭৯টি প্রদর্শনী করা হয়। এসব প্রদর্শনীতে ৩ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছিল।

তথ্যমতে, দেশে বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা প্রায ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে সরিষা, তিল ও সূর্যমুখী থেকে স্থানীয় ভাবে উৎপাদন হয মাত্র ৩ লাখ টন, যা চাহিদার ১২ শতাংশ। বাকি ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়। সরিষার আবাদ বাড়াতে হেক্টর প্রতি সরিষার উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্য রয়েছে। সে লক্ষ্যে গতানুগতি জাতের পরিবর্তে বারি-১৪, বারি-১৭, বারি-১৮, বিনা-৪ ও বিনা-৯ জাতের সরিষা আবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। দুটি ধান ফসলের মাঝখানে সরিষাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রোপা আমনে স্বল্প জীবনকালের ধান ব্রি ধান-৭১, ব্রি ধান-৭৫, ব্রি ধান- ৮৭, বিনা ধান-৭ ও বিনা ধান-১৭ এগুলো রোপনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে কৃষকদের। এরপর স্বল্পকালীন সরিষা বারি-১৪, বারি-১৭, বিনা-৪ ও বিনা-৯ জাতের সরিষা রোপণ করা হয়। অন্য ফসলের চেয়ে সরিষা সহজ ও অল্প খরচে চাষ করা যায়। খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এটি একটি সুসংবাদ নিঃসন্দেহে বলা যায়।

[লেখক : গবেষক ও অর্থনীতিবিদ ]

উপেক্ষিত উত্তরাঞ্চলের আদিবাসীরা

সিরিয়ায় রাজনৈতিক পালাবদল : কার লাভ, কার ক্ষতি?

অতীত থেকে মুক্তি এবং ইতিবাচক জীবনযাপন

মুক্তি সংগ্রামে তিনটি ধারা

বাসযোগ্যতার সূচকে ঢাকা কেন পিছিয়ে

শুধু নিচেই নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর

উপেক্ষিত আটকে পড়া পাকিস্তানিরা

রম্যগদ্য : সিন্দাবাদের বুড়ো ও আমরা

নেই কেনো সেই পাখি

বায়ুদূষণ থেকে মুক্তি কোন পথে

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র : রাষ্ট্র সংস্কারের দুর্গম পথ

পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র

বিজয়ের প্রেরণা

মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকার পুনর্বীক্ষণ

সিদরাত জেবিনের মৃত্যু অথবা প্রশ্নহীন বায়ুদূষণ

বিজয়ের গৌরব ও সম্ভাবনাময় তরুণ সমাজ

ছবি

মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি বন্ধুদের অবদান

ছবি

বিজয় সংগ্রামের সূচনার সন্ধানে

মানসম্মত কনটেন্ট ও টিআরপির দ্বৈরথ

জিকা ভাইরাস রোধে প্রয়োজন সচেতনতা

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক

স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার গুরুত্ব

ঢাকার বাতাস বিষাক্ত কেন

চরের কৃষি ও কৃষকের জীবন

নিম্ন আয়ের মানুষ ভালো নাই

সবার আগে নিজেকে পরিবর্তন করা দরকার

পুলিশ কবে পুলিশ হবে

জীবন ফিরে আসুক বাংলার নদীগুলোতে

কান্দন সরেন হত্যা ও ভূমি বিরোধ কি এড়ানো যেত না

পরিবারতত্ত্ব ও পরিবারতন্ত্র: রাষ্ট্র বিনির্মাণে সমস্যা কোথায়?

মানবাধিকার দিবস : মানুষের অধিকার নিয়ে কেন এত কথা?

আমলাতান্ত্রিক স্বচ্ছতা : সংস্কারের পথে নাকি পুনরাবৃত্তি?

খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কিছু কথা

ছবি

বেগম রোকেয়া : নারী জাগরণের অগ্রদূত

দুর্নীতির সর্বগ্রাসী বিস্তার বন্ধ করতে হবে

মা তোর বদনখানি মলিন হলে

tab

উপ-সম্পাদকীয়

সরিষার তেল গবেষণায় সাফল্য

মিহির কুমার রায়

রোববার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ভোজ্যতেলের মধ্যে সরিষার তেলই প্রধান যা মোট উৎপাদনের প্রায় ৩৬ শতাংশ। সয়াবিন দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল বীজ ফসল, যা বছরে প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার টন উৎপাদতি হয়। তবে এর পুরো পরিমান নিষ্কাশন ছাড়াই পোলট্রি ফিড হিসােেব ব্যবহার করা হয়। উল্লেখ্য, ভোজ্যতেল হিসাবে সরিষার তেলে সম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিডরে পরমিাণ ৩০ শতাংরে নিচে ও অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিডের পরমিাণ ৫০ শতাংশের ওপরে এবং ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬ এর অনুপাত ১:২ বিদ্যমান, যা পুরোপুরি স্বাস্থ্যসম্মত।

কয়েক বছর আগেও মানুষ সরিষার তেল খাওয়া ভুলে গিয়েছিল। এখন সবাই সরিষার তেল খাচ্ছে। কারণ সয়াবিনের চেয়ে সরিষার তেলের উপকারিতা অনেক বেশি। এখানে উল্লেখ্য যে তেলবীজ আবাদি জমির প্রায় ৬০ শতাংশ সরিষায় এবং কমবেশি সব জেলাতেই সরিষার চাষ হয়। ডিএই সূত্রে জানা যায়, দেেেশ গত ২০২১-২২ র্অথবছরে প্রায় ৬ লাখ হক্টের জমিতে সরিষা আবাদে উৎপাদিত সরিষার পরিমাণ ছিল ৭ দশমিক ৩৫ লাখ টন এবং গত ২০২২-২৩

অর্থবছরের সরিষার আওতায় জমির পরিমাণ বাড়ে প্রায় ২ লাখ হেক্টর। সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিক ‘তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্প’-এর আওতায় জুন ২০২৫ সালরে মধ্যে প্রত্যাশার অনুকূলে ভোজ্যতেলের চাহিদার ৪০ শতাংশ দেশীয় উৎপাদন দিয়ে মেটানো সম্ভব হবে। ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে বাংলাদেশে তেল জাতীয় ফসল সরিষা চাষের আওতায় জমির পরমিাণ বৃদ্ধিসহ উচ্চফলনশীল জাতের দ্রুত সম্প্রসারণ ও উৎপাদন কলাকৌশলে আধুনিক পদ্ধতির অনুসরণই একমাত্র উপায়।

বাংলাদেশে সাধারণত আমন ধান চাষের পর জমি পতিত থাকবে। এরপর সেই জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়। তেলে উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজন আমন ধানের পর জমি পতিত না রেখে স্বল্পমেয়াদি সরিষার আবাদ করা। এ জন্য দেশের বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে স্বল্প জীবনকালের (১০০ থেকে ১২০ দিন) অথচ উচ্চফলনশীল আমন ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন, যেগুলো মূল জমিতে চারা রোপণের মাত্র ৮০ থেকে ৯৫ দিনের মধ্যেই ঘরে তোলা যায়। এরপর জমি পতিত না রেখে উন্নত জাতের সরিষা চাষ করা সম্ভব হচ্ছে, যেগুলো ৮০-৮৫ দিনের মধ্যে পরিপক্ব হওয়ায় পর একই জমিতে আবার বোরো ধান চাষ করে প্রচলিত দুই ফসলি জমিকে তিন ফসলিতে রূপান্তর করা সম্ভব হচ্ছে। দেশে সরিষা বপন-পরর্বতী অগ্রহায়ণ (মধ্য নভেম্বর থেকে মধ্য ডিসেম্বর) মাসে নিম্নচাপজনিত বৃষ্টিপাতের কারণে জমিতে সাময়িক জলাবদ্ধতায় দেশি জাতের সরিষা টরি-৭সহ অন্যান্য উচ্চফলনশীল জাত নষ্ট হলেও বারি সরিষা-১৮ ও বারি সরিষা-১৯ জাত পাঁচ দিন পর্যন্ত সাময়িক জলাবদ্ধতা/জলমগ্নতা-সহিষ্ণু হওয়ায় কৃষকরা ফসলহানি থেকে রক্ষা পাচ্ছে। কাজেই উচ্চফলনশীল ও স্বল্পমেয়াদি বারি সরিষা-১৪, বারি সরিষা-১৭সহ বারি সরিষা-১৮ জাতের আবাদ নিশ্চতকরণ; শস্যবিন্যাসে উল্লেখিতি সরিষার জাতগুলোর অন্তর্ভুক্তিকরণসহ পতিত জমি ও চরাঞ্চলে সরিষার জাতগুলোর আবাদ সম্প্রসারণের মাধ্যমে ভোজ্যতেলের আমদানিনির্ভরতা কমানো সম্ভব।

সম্প্রতি দেশে রপ্তানিযোগ্য ভোজ্য সরিষা তেল নিয়ে গবেষণায় সফলতার আলো দেখছে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অধ্যাপক ড. জামিলুর রহমান।

২০২৩ সালে নতুন নিবন্ধিত তার এই ক্যানোলা গ্রেডের সরিষার জাতটির নাম ‘এসএইউ ক্যানোলা-১’। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ইরোসিক এসিডের পরিমাণ ১

শতাংশেরও নিচে থাকা জাতটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য। দেশের ভোজ্য সরিষা তেলে এই ক্ষতিকর ইরোসিক এসিড (৪০-৫০ শতাংশ) থাকায় বর্তমানে উন্নত দেশের

বাজারে ভোজ্যতেল রপ্তানিযোগ্য করতে পারে না বাংলাদেশ। এই জাতের সরিষার চাষ বাড়লে এই সমস্যার সমাধান মিলবে বলে আশা করছেন গবেষকরা।

এই জাতের সরিষার ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ নির্ধারণ করে দেখা গেছে নতুন

নিবন্ধিত এসএইউ ক্যানোলা-১ জাতটির ইরোসিক এসিডের পরিমাণ ০.৭ শতাংশ। পাশাপাশি জাতটিতে উচ্চমাত্রার ওমেগা-৯ (৫১%), ওমেগা-৬ (৩১%) এবং ওমেগা-৩ (৭%) থাকায় এর সরিষার তেল অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর ও উপকারী। জানা গেছে, উক্ত গবেষক ২০১৮ সাল থেকে ক্রুসিফেরি পরিবারের ব্রাসিকা জুনসিয়া প্রজাতির ২৫টি জার্মপাজম নিয়ে কাজ শুরু করেন। জুনসিয়া প্রজাতিটি টেট্রাপয়েড। এ জাতের গাছগুলোর ভিগোরিটি, প্রতিকূলতা সহিষ্ণুতা ও জীবনকাল অপেক্ষাকৃত বেশি। গবেষক নতুন এই জাতটির ইনব্রিডিং এবং রিকারেন্ট সিলেকশন, সেলফিং এর মাধ্যমে অন্যান্য বৈশিষ্ট্য ঠিক রেখেই জীবনকাল ১০৫ দিনে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছেন। ফলে রপ্তানিযোগ্যতার পাশাপাশি দেশের কৃষির শস্য বিন্যাসেও অধিকতর উপযোগিতার সৃষ্টি করেছে জাতটি।

ইতোমধ্যে এসএইউ ক্যানোলা-১ এর ঈশ্বরদী, পাবনা, সাতক্ষীরা, মানিকগঞ্জ,

সিলেটে ট্রায়াল করে সফল হয়েছেন এই গবেষক ।

এক গবেষণা প্রবন্ধে দেখা যায়, সাতক্ষীরা জেলার নগরহাটে বিনা সরিষা-৭, বিনা সরিষা-৮, বারি সরিষা-১১, বারি সরিষা ১৮ ও এসএইউ ক্যানোলা-১ জাতগুলোর তুলনামূলক চাষের ক্ষেত্রে প্রায় ১০৩ দিন জীবনকালে হেক্টরপ্রতি সর্বোচ্চ ২.১২ টন ফলন দিয়েছে জাতটি। ক্যানোলা গ্রেডের জাতটিতে বারি সরিষা ১৮ এর তুলনায় কম ইরোসিক এসিড থাকায় এর তেলের মান আরও ভালো হবে বলে আশা করছেন গবেষকরা। এছাড়া স্বাস্থ্যসম্মত সরিষা তেল এর মাধ্যমে দেশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রপ্তানি শিল্পেও বড় অবদান রাখবে বলে আশাবাদী তারা।

এখন দেশে তেলজাতীয় ফসলের আবাদ বাড়াতে ‘তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি’ শীর্ষক একটি প্রকল্প চলমান রয়েছে। প্রকল্পটি ২০২০ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়। শেষ হবে ২০২৫ সালের জুনে। প্রকল্পের ব্যয় ২২২ কোটি ১৬ লাখ ৮৭ হাজার টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় গত বছর ১৩ হাজার ৯৭৯টি প্রদর্শনী করা হয়। এসব প্রদর্শনীতে ৩ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়েছিল।

তথ্যমতে, দেশে বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা প্রায ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে সরিষা, তিল ও সূর্যমুখী থেকে স্থানীয় ভাবে উৎপাদন হয মাত্র ৩ লাখ টন, যা চাহিদার ১২ শতাংশ। বাকি ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়। সরিষার আবাদ বাড়াতে হেক্টর প্রতি সরিষার উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্য রয়েছে। সে লক্ষ্যে গতানুগতি জাতের পরিবর্তে বারি-১৪, বারি-১৭, বারি-১৮, বিনা-৪ ও বিনা-৯ জাতের সরিষা আবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। দুটি ধান ফসলের মাঝখানে সরিষাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। রোপা আমনে স্বল্প জীবনকালের ধান ব্রি ধান-৭১, ব্রি ধান-৭৫, ব্রি ধান- ৮৭, বিনা ধান-৭ ও বিনা ধান-১৭ এগুলো রোপনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে কৃষকদের। এরপর স্বল্পকালীন সরিষা বারি-১৪, বারি-১৭, বিনা-৪ ও বিনা-৯ জাতের সরিষা রোপণ করা হয়। অন্য ফসলের চেয়ে সরিষা সহজ ও অল্প খরচে চাষ করা যায়। খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এটি একটি সুসংবাদ নিঃসন্দেহে বলা যায়।

[লেখক : গবেষক ও অর্থনীতিবিদ ]

back to top