গোলাম মাওলা হাবিব
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কথা যদি চিন্তা করি তাহলে আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে অনেক দালানকোঠায় ঠাসা একটি নগরী। যেখানে-সেখানে এবড়ো থেবড়োভাবে স্তূপে স্তূপে ময়লার ভাগাড়। যেখানে হাজারো মানুষের আনাগোনা, সময়কে সহজে নষ্ট করার মনমতো জায়গা। বায়ুদূষণ, শব্দদূষণে ঘেরা একটা অস্বস্তিকর পরিবেশ। তারপরেও এই শহর থেকে রাষ্ট্রের যাবতীয় কার্যাবলি পরিচালিত হয়। যাকে ঘিরে লাখো মানুষ স্বপ্ন বুনে।
প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা অনেক মানুষ নিজেদের উন্নতি করতে চায়। যে শহরকে ঘিরে মানুষ তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চায়, সে শহরকে সুস্থ সুন্দর কজন ভাবে? পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বা পরিবেশবান্ধব রাখতে কজন চিন্তা করে?
একটি জরিপে দেখা যায় যে, ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় ৭ হাজার মেট্রিক টন ময়লা জমা হয়। এই ময়লার যথাযথ নিষ্কাশন না হওয়ার ফলে শহরের পরিবেশটা একদম অবাসযোগ্য হয়ে উঠছে। এই ময়লার স্তূপের কারণে ড্রেনের পানি বা বৃষ্টির পানি সঠিকভাবে চলাচল করতে পারে না। ফলে পরিবেশটা আরো দুর্গন্ধময় হয়ে যায়। আর এই ময়লার ভাগাড় থেকে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, কলেরা এবং টাইফয়েডের মতো বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। পরিবেশবান্ধব ঢাকা হওয়ার আরেকটি প্রতিবন্ধকতা হলো অতিরিক্ত ও অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মিল ফ্যাক্টরি ও কল-কারখানার মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠান করা। এই অতিরিক্ত ভবন নির্মাণের ফলে শহর ভূমিকম্প, বন্যা এবং ভূমিধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঝুঁকিতে থাকে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কমে যায়। যেটা ভবিষ্যতের জন্য বিপদ ডেকে আনবে। এর পাশাপাশি অনেক গাছ-পালা, পার্ক, জলাধার ধ্বংস হয়। যেটা পরিবেশের জন্য নেতিবাচক দিক।
শহরের অন্যতম আরেকটি সমস্যা হলো বায়ুদূষণ। বাংলাদেশের নাম এখন প্রতিনিয়ত আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উল্লিখিত হয়। সেটি বায়ুদূষণে প্রথম বা দ্বিতীয় স্থানে থাকার জন্য। বিশ্বব্যাংকের এক জরিপে দৃশ্যমান হয়েছে দেশে মৃত্যুর প্রায় ৩২% নাকি দূষণ প্রক্রিয়ার পরিণতি। সম্প্রতি প্রকাশিত কিছু গবেষণা বা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার বায়ুদূষণ এক দিনে ২৩টি সিগারেট খাওয়ার সমান ক্ষতি করতে পারে।
বলা হয়ে থাকে পানির অপর নাম জীবন। কিন্তু ঢাকা শহরের পানি মনে হয় এর বিপরীত অর্থ ধারণ করে। ঢাকা শহরে পানির উৎসের অন্যতম হলো শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ এবং ধলেশ্বরী নদী। যে নদীগুলো মানুষ বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা ও নদীতে ইঞ্জিনচালিত যানবাহন চালিয়ে দূষিত করছে। সে পানিগুলোই আমাদের ব্যবহার করতে হচ্ছে নিরূপায় হয়ে। যার ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগ (যেমন: ক্যানসার, চর্মরোগ, হেপাটাইটিস এ) এর মতো বড় বড় রোগের ঝুঁকি থাকে। এই জন্য আমাদের বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ বা ব্যবহারের উপযোগী জন্য কিছু কাজ করতে হবে। যেমন: বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ। খাল ও জলাধার পুনরুদ্ধার। দূষণমুক্ত পানির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা।
ঢাকা শহরে প্রবেশ করার পর যে সমস্যাটি সর্বপ্রথম সম্মুখীন হতে হয়, সেটা হচ্ছে যানজট। এই আধুনিক যুগে মানুষ বিভিন্ন টেকিনলজি ব্যবহার করে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে, সময় বাঁচায়। সে যুগে আমরা আমাদের সময়গুলো রাস্তায় জ্যামে গাড়িতে বসে অতিবাহিত করতে হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। বিশ্বের অন্যান্য দেশ উন্নত হতে হতে নিজেদেরও ছাড়িয়ে যাচ্ছে, সেখানে মনে হচ্ছে আমরা দিনকে দিন পিছিয়ে যাচ্ছি। ঢাকা শহরে পর্যাপ্ত রাস্তা না থাকা, অতিরিক্ত রিকশা এবং প্রাইভেট কারের চলাচল, ফুটপাতে দোকান স্থাপন হচ্ছে যানজটের অন্যতম কারণ।
ঢাকা শহরে অবস্থিত বিভিন্ন নদীগুলো (যেমন : বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, ইত্যাদি) ছিল ঢাকার অন্যতম আকর্ষণ ও সম্পদ। কিন্তু আফসোস আমরাই আমাদের এই সম্পদগুলোকে গলাটিপে হত্যা করছি। আজ এই নদীগুলোর জৌলুস নিভু নিভু প্রায়। আমাদের কাছ থেকে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এই নদীগুলোর জৌলুস ফিরিয়ে আনতে আমাদের সর্বোচ্চ সচেতন থাকতে হবে এবং এগুলো যাতে হারিয়ে না যায় সেজন্য সরকারকে কিছু আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে।
[লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়]
গোলাম মাওলা হাবিব
মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কথা যদি চিন্তা করি তাহলে আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে অনেক দালানকোঠায় ঠাসা একটি নগরী। যেখানে-সেখানে এবড়ো থেবড়োভাবে স্তূপে স্তূপে ময়লার ভাগাড়। যেখানে হাজারো মানুষের আনাগোনা, সময়কে সহজে নষ্ট করার মনমতো জায়গা। বায়ুদূষণ, শব্দদূষণে ঘেরা একটা অস্বস্তিকর পরিবেশ। তারপরেও এই শহর থেকে রাষ্ট্রের যাবতীয় কার্যাবলি পরিচালিত হয়। যাকে ঘিরে লাখো মানুষ স্বপ্ন বুনে।
প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা অনেক মানুষ নিজেদের উন্নতি করতে চায়। যে শহরকে ঘিরে মানুষ তার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চায়, সে শহরকে সুস্থ সুন্দর কজন ভাবে? পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বা পরিবেশবান্ধব রাখতে কজন চিন্তা করে?
একটি জরিপে দেখা যায় যে, ঢাকা শহরে প্রতিদিন প্রায় ৭ হাজার মেট্রিক টন ময়লা জমা হয়। এই ময়লার যথাযথ নিষ্কাশন না হওয়ার ফলে শহরের পরিবেশটা একদম অবাসযোগ্য হয়ে উঠছে। এই ময়লার স্তূপের কারণে ড্রেনের পানি বা বৃষ্টির পানি সঠিকভাবে চলাচল করতে পারে না। ফলে পরিবেশটা আরো দুর্গন্ধময় হয়ে যায়। আর এই ময়লার ভাগাড় থেকে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, কলেরা এবং টাইফয়েডের মতো বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। পরিবেশবান্ধব ঢাকা হওয়ার আরেকটি প্রতিবন্ধকতা হলো অতিরিক্ত ও অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মিল ফ্যাক্টরি ও কল-কারখানার মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠান করা। এই অতিরিক্ত ভবন নির্মাণের ফলে শহর ভূমিকম্প, বন্যা এবং ভূমিধসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঝুঁকিতে থাকে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কমে যায়। যেটা ভবিষ্যতের জন্য বিপদ ডেকে আনবে। এর পাশাপাশি অনেক গাছ-পালা, পার্ক, জলাধার ধ্বংস হয়। যেটা পরিবেশের জন্য নেতিবাচক দিক।
শহরের অন্যতম আরেকটি সমস্যা হলো বায়ুদূষণ। বাংলাদেশের নাম এখন প্রতিনিয়ত আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে উল্লিখিত হয়। সেটি বায়ুদূষণে প্রথম বা দ্বিতীয় স্থানে থাকার জন্য। বিশ্বব্যাংকের এক জরিপে দৃশ্যমান হয়েছে দেশে মৃত্যুর প্রায় ৩২% নাকি দূষণ প্রক্রিয়ার পরিণতি। সম্প্রতি প্রকাশিত কিছু গবেষণা বা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার বায়ুদূষণ এক দিনে ২৩টি সিগারেট খাওয়ার সমান ক্ষতি করতে পারে।
বলা হয়ে থাকে পানির অপর নাম জীবন। কিন্তু ঢাকা শহরের পানি মনে হয় এর বিপরীত অর্থ ধারণ করে। ঢাকা শহরে পানির উৎসের অন্যতম হলো শীতলক্ষ্যা, বুড়িগঙ্গা, তুরাগ এবং ধলেশ্বরী নদী। যে নদীগুলো মানুষ বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা ও নদীতে ইঞ্জিনচালিত যানবাহন চালিয়ে দূষিত করছে। সে পানিগুলোই আমাদের ব্যবহার করতে হচ্ছে নিরূপায় হয়ে। যার ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগ (যেমন: ক্যানসার, চর্মরোগ, হেপাটাইটিস এ) এর মতো বড় বড় রোগের ঝুঁকি থাকে। এই জন্য আমাদের বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ বা ব্যবহারের উপযোগী জন্য কিছু কাজ করতে হবে। যেমন: বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ। খাল ও জলাধার পুনরুদ্ধার। দূষণমুক্ত পানির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা।
ঢাকা শহরে প্রবেশ করার পর যে সমস্যাটি সর্বপ্রথম সম্মুখীন হতে হয়, সেটা হচ্ছে যানজট। এই আধুনিক যুগে মানুষ বিভিন্ন টেকিনলজি ব্যবহার করে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে, সময় বাঁচায়। সে যুগে আমরা আমাদের সময়গুলো রাস্তায় জ্যামে গাড়িতে বসে অতিবাহিত করতে হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। বিশ্বের অন্যান্য দেশ উন্নত হতে হতে নিজেদেরও ছাড়িয়ে যাচ্ছে, সেখানে মনে হচ্ছে আমরা দিনকে দিন পিছিয়ে যাচ্ছি। ঢাকা শহরে পর্যাপ্ত রাস্তা না থাকা, অতিরিক্ত রিকশা এবং প্রাইভেট কারের চলাচল, ফুটপাতে দোকান স্থাপন হচ্ছে যানজটের অন্যতম কারণ।
ঢাকা শহরে অবস্থিত বিভিন্ন নদীগুলো (যেমন : বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, ইত্যাদি) ছিল ঢাকার অন্যতম আকর্ষণ ও সম্পদ। কিন্তু আফসোস আমরাই আমাদের এই সম্পদগুলোকে গলাটিপে হত্যা করছি। আজ এই নদীগুলোর জৌলুস নিভু নিভু প্রায়। আমাদের কাছ থেকে ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এই নদীগুলোর জৌলুস ফিরিয়ে আনতে আমাদের সর্বোচ্চ সচেতন থাকতে হবে এবং এগুলো যাতে হারিয়ে না যায় সেজন্য সরকারকে কিছু আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে।
[লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়]