মিথুশিলাক মুরমু
বাইবেলে প্রথম কোনো মানুষের জন্মদিন সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায় আদিপুস্তক ৪০:২০ পদেÑ ‘পরে তৃতীয় দিনে ফেরাউনের জন্মদিন, আর তিনি আপনার সকল দাসের জন্য ভোজ প্রস্তুত করিলেন এবং আপনার দাসগণের মধ্যে প্রধান পানপাত্রবাহকের ও প্রধান খাদ্যপ্রস্তুতকারকের মস্তক উঠাইলেন।’
বাইবেল অধ্যয়নকারী প-িতরা বলেন যে, জন্মদিনের প্রথম উল্লেখ ছিল প্রায় ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, এটি ফেরাউনের জন্মদিন। গ্রিকদের প্রায় এক হাজার বছর আগে মিসরের ফারাও প্রথম জন্মদিন পালন করেন। তারপর ইয়োব ১:৪ পদ বিশ্লেষণে বোঝা যায় যে, ইয়োবের সন্তানেরা তাদের জন্মদিন উদযাপন করতো। তারপর দেখি বাপ্তিষ্মদাতা যোহনের মৃত্যুর সঙ্গে রাজা হেরোদের জন্মদিন যোগসূত্রের প্রমাণ রয়েছে। ‘কিন্তু হেরোদের জন্মদিনের উৎসবে উপস্থিত হইলে হেরোদিয়ার কন্যা সভামধ্যে নাচিয়ে হেরোদকে সন্তুষ্ট করিল’ (মথি ১৪:৬)।
উপরিউক্ত জন্মদিন সম্পর্কে সবিস্তর কোনো বর্ণনা নেই। কিন্তু শান্তিরাজের জন্ম, মৃত্যু, পুনরুত্থান ও দ্বিতীয় আগমন সম্পর্কে অতীতের ভবিষৎ বাণী, বর্তমানের ঘটনাবলী এবং আগামীর পূর্বভাস বাইবেলে বর্ণিত রয়েছে।
প্রভু যিশুর জন্মে স্বর্গ, মর্ত্য, মানুষ্যকুল আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছিলো। মনুষ্যকুলের প-িতেরা তাকে খুঁজে বের করে উবু হয়ে প্রণাম জানিয়েছিলেন, তারা তার আগমণে স্রষ্টা ঈশ^রের বিশেষ আনুকূল্য দেখেছিলেন। সমগ্র পুরাতন নিয়মে ত্রাণকর্তার আগমন সম্পর্কে যে ভাববাণী আছে, তিনটি কারণে সেগুলো আমাদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করেÑ
প্রথমতÑ এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর মাপকাঠিতে আমরা যিশুর জীবনকে বিচার করে দেখতে পারি যে, তিনি সত্যই সেই প্রতিশ্রুত ত্রাণকর্তা কি-না!
দ্বিতীয়তÑ এই ভাববাণীগুলোর মাধ্যমে আমরা যিশু কে এবং তিনি কেন জগতে এসেছিলেন, তা আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি। এর মাধ্যমে আমরা তার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কাজ দেখতে পাই।
তৃতীয়তÑ আমরা জানতে পারি যে, ঈশ^র তার প্রতিজ্ঞা রক্ষা করেন। প্রভু যিশু জন্মের প্রায় ৭০০ বছর পূর্বে ভাববাদী যিশাইয় তার সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘একটি বালক আমাদের জন্য জন্মিয়াছেন, একটি পুত্র আমাদিগকে দত্ত হইয়াছে; আর তাহারই স্কন্ধের ওপরে কর্তৃত্বভার থাকিবে, এবং তাহার নাম হইবে আশ্চর্য্য মন্ত্রী, বিক্রমশালী ঈশ^র, সনাতন পিতা, শান্তিরাজ।’ তার জীবনকালে তিনি কথা, শিক্ষা, কাজ; সর্বোপরি প্রত্যেকটি স্তরেই পরিবর্তনের ছোঁয়া দিয়ে গেছেন।
পর্বত দত্ত উপদেশে উল্লেখ করেছেনÑ
১. অন্তরে যারা দীন, ধন্য তারা স্বর্গরাজ্য তাদেরই; ২. দুঃখে-শোকে কাতর যারা ধন্য তারা তারাই পাবে সান্ত¡না; ৩. বিনয়ী, কোমলপ্রাণ যারা, ধন্য তারা প্রতিশ্রুত দেশ একদিন হবে তাদেরই আপন দেশ; ৪. ধার্মিকতার দাবি পূরণের জন্য তৃষিত ব্যাকুল যারা, ধন্য তারা তারাই পরিতৃপ্ত হবে; ৫. দয়ালু যারা, ধন্য তারা তাদেরই দয়া করা হবে; ৬. অন্তরে যারা পবিত্র, ধন্য তারা তারাই পরমেশ^রকে দেখতে পাবে; ৭. শান্তি স্থাপন করে যারা, ধন্য তারা তারাই পরমেশ^রের সন্তান বলে পরিচিত হবে; ৮. ধর্মনিষ্ঠ বলে নির্যাতিত যারা, ধন্য তারা স্বর্গরাজ্য তাদেরই।
একমাত্র শান্তিরাজই বলতে পারেন, ‘তোমাদের জন্য শান্তি রেখে যাচ্ছি, তোমাদের দিয়ে যাচ্ছি আমারই শান্তি।’ মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত যিশু তার শিষ্যদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘তোমাদের শান্তি হোক’। তার শান্তির পথের ভিত্তি হচ্ছেÑ ন্যায্যতা, ত্যাগ, আত্মদান ও ভালোবাসা। গ্রাম-গঞ্জ, শহর-নগরে সাধারণ মানুষের সাথে মিশেছেন, শত-সহ¯্র বছরের কুসংস্কার, প্রথাকে ভেঙে সাম্যতা ও শান্তির পথ রচনা করেছেন। তার কণ্ঠেই তো মাননসই ‘শান্তির সাধক যারা তারাই সুখী হবে’।
অনেক সময় আমরা চিন্তা করতে পারি, প্রভু যিশু যুদ্ধবিগ্রহ বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন। সত্যিকার অর্থে সেটি তার কাজের আওতায় পড়েনি। তিনি ঈশ^র ও মানুষের মাঝে পাপের ফলে যে শান্তি বিনষ্ট হয়েছিল, সেই শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে এসেছিলেন।
ঈশ^র ও মানুষের মধ্যে সুসম্পর্ক পুনরুদ্ধার মধ্যে দিয়েই ধরাধামে শান্তি বিরাজিত হতে পারে। তার কণ্ঠেই উচ্চারিত হয়েছেÑ নরহত্যার সমতূল্য হচ্ছে ক্রোধ, ব্যভিচারের সমরূপ ব্যাখা করেছেন কামভাবে দৃষ্টিপাতকে।
শত্রুকে ভালোবাসতে এবং তাড়নাকারীর জন্য প্রার্থনা করার আদেশ দিয়েছেন। তার শেখানো প্রার্থনাতে স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন, ‘আর আমাদের অপরাধ সকল ক্ষমা কর, যেমন আমরাও আপন আপন অপরাধীদিগকে ক্ষমা করিয়াছি’। এমন এক স্বর্গীয় বিধান দিলেন, আমরা যদি ক্ষমা করি, একমাত্র সেক্ষেত্রেই তার ক্ষমা পেতে পারি। তার দিকে দুই হাত প্রসারিতের পূর্বে প্রতিবেশীর সঙ্গে বিরোধ মিটানোর বাধ্যবাধকতা এনেছেন। কেউ যদি তোমার দক্ষিণ গালে চড় মারে, অন্য গাল পেতে দিতে বলেছেন। কী অপূর্ব শিক্ষা! মানব সমাজকে শান্তির পথ দেখিয়েছেন প্রভু যিশু। শান্তির পথ যে কণ্টকাকীর্ণ থাকে সেটিও বলেছেন। শান্তির রাজপুত্র প্রভু যিশুখ্রিস্টকে অনুসরণ, ধারণ ও লালন করলেই শান্তির রাজ্য প্রতিষ্ঠা সম্ভবপর।
[লেখক : কলামিস্ট]
মিথুশিলাক মুরমু
বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
বাইবেলে প্রথম কোনো মানুষের জন্মদিন সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায় আদিপুস্তক ৪০:২০ পদেÑ ‘পরে তৃতীয় দিনে ফেরাউনের জন্মদিন, আর তিনি আপনার সকল দাসের জন্য ভোজ প্রস্তুত করিলেন এবং আপনার দাসগণের মধ্যে প্রধান পানপাত্রবাহকের ও প্রধান খাদ্যপ্রস্তুতকারকের মস্তক উঠাইলেন।’
বাইবেল অধ্যয়নকারী প-িতরা বলেন যে, জন্মদিনের প্রথম উল্লেখ ছিল প্রায় ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, এটি ফেরাউনের জন্মদিন। গ্রিকদের প্রায় এক হাজার বছর আগে মিসরের ফারাও প্রথম জন্মদিন পালন করেন। তারপর ইয়োব ১:৪ পদ বিশ্লেষণে বোঝা যায় যে, ইয়োবের সন্তানেরা তাদের জন্মদিন উদযাপন করতো। তারপর দেখি বাপ্তিষ্মদাতা যোহনের মৃত্যুর সঙ্গে রাজা হেরোদের জন্মদিন যোগসূত্রের প্রমাণ রয়েছে। ‘কিন্তু হেরোদের জন্মদিনের উৎসবে উপস্থিত হইলে হেরোদিয়ার কন্যা সভামধ্যে নাচিয়ে হেরোদকে সন্তুষ্ট করিল’ (মথি ১৪:৬)।
উপরিউক্ত জন্মদিন সম্পর্কে সবিস্তর কোনো বর্ণনা নেই। কিন্তু শান্তিরাজের জন্ম, মৃত্যু, পুনরুত্থান ও দ্বিতীয় আগমন সম্পর্কে অতীতের ভবিষৎ বাণী, বর্তমানের ঘটনাবলী এবং আগামীর পূর্বভাস বাইবেলে বর্ণিত রয়েছে।
প্রভু যিশুর জন্মে স্বর্গ, মর্ত্য, মানুষ্যকুল আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছিলো। মনুষ্যকুলের প-িতেরা তাকে খুঁজে বের করে উবু হয়ে প্রণাম জানিয়েছিলেন, তারা তার আগমণে স্রষ্টা ঈশ^রের বিশেষ আনুকূল্য দেখেছিলেন। সমগ্র পুরাতন নিয়মে ত্রাণকর্তার আগমন সম্পর্কে যে ভাববাণী আছে, তিনটি কারণে সেগুলো আমাদের কাছে বিশেষ গুরুত্ব বহন করেÑ
প্রথমতÑ এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলোর মাপকাঠিতে আমরা যিশুর জীবনকে বিচার করে দেখতে পারি যে, তিনি সত্যই সেই প্রতিশ্রুত ত্রাণকর্তা কি-না!
দ্বিতীয়তÑ এই ভাববাণীগুলোর মাধ্যমে আমরা যিশু কে এবং তিনি কেন জগতে এসেছিলেন, তা আরও ভালোভাবে বুঝতে পারি। এর মাধ্যমে আমরা তার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কাজ দেখতে পাই।
তৃতীয়তÑ আমরা জানতে পারি যে, ঈশ^র তার প্রতিজ্ঞা রক্ষা করেন। প্রভু যিশু জন্মের প্রায় ৭০০ বছর পূর্বে ভাববাদী যিশাইয় তার সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘একটি বালক আমাদের জন্য জন্মিয়াছেন, একটি পুত্র আমাদিগকে দত্ত হইয়াছে; আর তাহারই স্কন্ধের ওপরে কর্তৃত্বভার থাকিবে, এবং তাহার নাম হইবে আশ্চর্য্য মন্ত্রী, বিক্রমশালী ঈশ^র, সনাতন পিতা, শান্তিরাজ।’ তার জীবনকালে তিনি কথা, শিক্ষা, কাজ; সর্বোপরি প্রত্যেকটি স্তরেই পরিবর্তনের ছোঁয়া দিয়ে গেছেন।
পর্বত দত্ত উপদেশে উল্লেখ করেছেনÑ
১. অন্তরে যারা দীন, ধন্য তারা স্বর্গরাজ্য তাদেরই; ২. দুঃখে-শোকে কাতর যারা ধন্য তারা তারাই পাবে সান্ত¡না; ৩. বিনয়ী, কোমলপ্রাণ যারা, ধন্য তারা প্রতিশ্রুত দেশ একদিন হবে তাদেরই আপন দেশ; ৪. ধার্মিকতার দাবি পূরণের জন্য তৃষিত ব্যাকুল যারা, ধন্য তারা তারাই পরিতৃপ্ত হবে; ৫. দয়ালু যারা, ধন্য তারা তাদেরই দয়া করা হবে; ৬. অন্তরে যারা পবিত্র, ধন্য তারা তারাই পরমেশ^রকে দেখতে পাবে; ৭. শান্তি স্থাপন করে যারা, ধন্য তারা তারাই পরমেশ^রের সন্তান বলে পরিচিত হবে; ৮. ধর্মনিষ্ঠ বলে নির্যাতিত যারা, ধন্য তারা স্বর্গরাজ্য তাদেরই।
একমাত্র শান্তিরাজই বলতে পারেন, ‘তোমাদের জন্য শান্তি রেখে যাচ্ছি, তোমাদের দিয়ে যাচ্ছি আমারই শান্তি।’ মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত যিশু তার শিষ্যদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘তোমাদের শান্তি হোক’। তার শান্তির পথের ভিত্তি হচ্ছেÑ ন্যায্যতা, ত্যাগ, আত্মদান ও ভালোবাসা। গ্রাম-গঞ্জ, শহর-নগরে সাধারণ মানুষের সাথে মিশেছেন, শত-সহ¯্র বছরের কুসংস্কার, প্রথাকে ভেঙে সাম্যতা ও শান্তির পথ রচনা করেছেন। তার কণ্ঠেই তো মাননসই ‘শান্তির সাধক যারা তারাই সুখী হবে’।
অনেক সময় আমরা চিন্তা করতে পারি, প্রভু যিশু যুদ্ধবিগ্রহ বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন। সত্যিকার অর্থে সেটি তার কাজের আওতায় পড়েনি। তিনি ঈশ^র ও মানুষের মাঝে পাপের ফলে যে শান্তি বিনষ্ট হয়েছিল, সেই শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে এসেছিলেন।
ঈশ^র ও মানুষের মধ্যে সুসম্পর্ক পুনরুদ্ধার মধ্যে দিয়েই ধরাধামে শান্তি বিরাজিত হতে পারে। তার কণ্ঠেই উচ্চারিত হয়েছেÑ নরহত্যার সমতূল্য হচ্ছে ক্রোধ, ব্যভিচারের সমরূপ ব্যাখা করেছেন কামভাবে দৃষ্টিপাতকে।
শত্রুকে ভালোবাসতে এবং তাড়নাকারীর জন্য প্রার্থনা করার আদেশ দিয়েছেন। তার শেখানো প্রার্থনাতে স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন, ‘আর আমাদের অপরাধ সকল ক্ষমা কর, যেমন আমরাও আপন আপন অপরাধীদিগকে ক্ষমা করিয়াছি’। এমন এক স্বর্গীয় বিধান দিলেন, আমরা যদি ক্ষমা করি, একমাত্র সেক্ষেত্রেই তার ক্ষমা পেতে পারি। তার দিকে দুই হাত প্রসারিতের পূর্বে প্রতিবেশীর সঙ্গে বিরোধ মিটানোর বাধ্যবাধকতা এনেছেন। কেউ যদি তোমার দক্ষিণ গালে চড় মারে, অন্য গাল পেতে দিতে বলেছেন। কী অপূর্ব শিক্ষা! মানব সমাজকে শান্তির পথ দেখিয়েছেন প্রভু যিশু। শান্তির পথ যে কণ্টকাকীর্ণ থাকে সেটিও বলেছেন। শান্তির রাজপুত্র প্রভু যিশুখ্রিস্টকে অনুসরণ, ধারণ ও লালন করলেই শান্তির রাজ্য প্রতিষ্ঠা সম্ভবপর।
[লেখক : কলামিস্ট]