শামীউল আলীম শাওন
ফুটপাত দিয়ে হাঁটার মতো স্থান অবশিষ্ট নাই। হাঁটতে হবে সড়ক দিয়ে। সেখানেও হাঁটা সহজ নয়। কেননা ফুটপাত তো বটেই সড়কের অর্ধেকও দখল করেছেন ব্যবসায়ীরা। বাকি অর্ধেকের বড় একটা অংশ দখল করে চলে অবৈধ পার্কিং। যেখানে চলে গাড়ি রাখা আর অবশিষ্ট সড়কে যত্রতত্র যানবাহন থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করার প্রতিযোগিতার মধ্যে ‘কষ্ট’ করে চলাচল করে যানবাহন। হেঁটে যাবেন কী করে? এমন দৃশ্য এখন বরেন্দ্র অঞ্চলের পদ্মাপাড়ের প্রাচীন নগরী রাজশাহীর। ২০২২ সালের জনশুমারি ও গৃহগণনা অনুযায়ী ৯৭ বর্গকিলোমিটারের এ নগরীতে জনসংখ্যা ৫ লাখ ৫৩ হাজারের মতো। শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ আধুনিক নাগরিক সুবিধার কারণে আশপাশের জেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ আসেন পদ্মাপাড়ের এ জনপদে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী রাজশাহীতে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৬ হাজার মানুষের বসবাস। প্রতি বছর সাড়ে নয় হাজার মানুষ এখানে নতুন করে বসতি গড়েন। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) তথ্যমতে নগরীর আয়তন বাড়িয়ে ১৩২ বর্গকিলোমিটারে উন্নীত করতে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে সিটি করপোরেশন।
রাসিকের সূত্র দিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য বলছে রাজশাহীতে ব্যাটারিচালিত দুই শ্রেণীর অটোরিকশা চলে। এর মধ্যে ৮ জন যাত্রীবাহন ক্ষমতার অটোরিকশা রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার এবং দুজন যাত্রীবাহী ছোট অটোরিকশা রয়েছে আরও প্রায় ৫০ হাজার। সবমিলিয়ে অন্তত ৭০-৮০ হাজার শুধু অটোরিকশা চলাচল করছে মাত্র ৯৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের নগরীতে। এছাড়া রয়েছে অন্য যানবাহন। ২০২১ সালের নিবন্ধনের তথ্যমতে ৮ হাজার ৯০০টি অটোরিকশা রাসিক নিবন্ধিত।
রাসিক সূত্রে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য বলছে রাজশাহী মহানগরে প্রায় ২৭১ কিলোমিটার ফুটপাত পাকা করে টাইলস বসানো হয়েছে। এ খাতে খরচ হয়েছে ৭২ কোটি টাকার বেশি। একটি জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য বলছে রাজশাহীর তালাইমারী মোড় থেকে কাঁটাখালী বাজার পর্যন্ত সড়কটি নগরের প্রধান প্রবেশদ্বার। ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের এই ৪ দশমিক ১০ কিলোমিটার অংশ ছয় লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। তবে জমি অধিগ্রহণ করতে না পারায় পরিকল্পনামতো সড়ক প্রশস্ত হচ্ছে না। সরকারের অর্থায়নে রাসিকের সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এই সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। ৯৩ কোটি ৪৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয়ে কাজটি ২০২১ সালের ২০ অক্টোবর শুরু হয়। তবে রাস্তার কাজ পুরোটা শেষ না হলেও নতুন করে ফুটপাত দখল শুরু হয়েছে।
রাজশাহীজুড়ে নির্মিত ফুটপাতগুলো প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীবান্ধবও নয় সেই অভিযোগও রয়েছে। অন্য একটি জাতীয় গণমাধ্যমের তথ্য বলছে যে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মেইন ফটকের সামনে থেকে বিনোদনপুর বাজার পর্যন্ত মহাসড়কের পাশের ফুটপাতে বাঁশ ফেলে দখল করে রেখেছেন ব্যবসায়ী এবং ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা। এতে ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কে চলাচল করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় পথচারীরা। দখলের এমন পরিস্থিতি শুধু সেখানকার নয়; কোথাও বালুর স্তূপ, কোথাও ইটের খামাল, কোথাও পাথরের স্তূপ, আবার কোথাও রাস্তা বা ফুটপাতের উপরই চলছে নির্মাণযজ্ঞ। এর বাইরে যেটুকু ফাঁকা পড়ে আছে, সেখানে গড়ে উঠেছে অবৈধ দোকানপাটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। রাস্তার মাঝখানে চুলা বসিয়ে ভাজা হচ্ছে পেঁয়াজু-সিঙাড়া-পুরি। বিক্রি হচ্ছে আপেল, কমলাসহ নানা ধরনের ফল। রয়েছে কাপড় বিক্রির দোকান। রাস্তার প্রায় অর্ধেকজুড়ে বসেছে এসব দোকানপাট। ফলে গনকপাড়া দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ। এ রাস্তাটি রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট থেকে উত্তর দিকে রাজশাহী প্রেসক্লাবের সামনের।
এই রাস্তা দিয়ে সাহেব বাজারের মূল সড়কে উঠতে হয়। সম্প্রতি এই রাস্তায় হকারদের বসিয়েছে পুলিশ। প্রায় এক বছর ধরে এই রাস্তার অর্ধেক ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ একমুখী করে দিয়েছে। পুলিশের ব্যারিকেডের ভেতরেই বসেছে দেড় শতাধিক দোকানপাট। হেঁটে চলাচলের সময় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন পথচারীরাও। আর সাহেব বাজারের আশপাশ এলাকার চিত্র তো আরও ভয়াবহ। কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে ফুটপাতের ওপরে একধরনের টাইলস বসানো হলেও ফুটপাতগুলো ব্যবহারের সুযোগ পথচারীদের নেই। সাহেব বাজারসহ আশপাশের সব এলাকার ফুটপাত ব্যবসায়ীদের দখলে। এমনকি দোকানপাটের ভিড়ে ধাপ ফেলানোরও জায়গা পাওয়া যায় না। নগরীর অনেক জায়গায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যলয়ও গড়ে তোলা হয়েছে ফুটপাত-রাস্তা দখল করে। নগরজুড়েই ফুটপাত আর সড়কের উপর চলছে ফলমূল, জুতা-স্যান্ডেল, গেঞ্জি-লুঙ্গি, ভাজা-পোড়া, আলু-পটোল, মাছ-মাংসÑ সবই কেনাবেচা চলছে। সড়ক আর ফুটপাতই এখন যেন ব্যবসার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এর সঙ্গে মূল শহরের সড়কের উপর প্রাইভেট গাড়ি পার্কিং এখন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সাহেব বাজারে ঢুকলেই দেখা যায় সড়কে গাড়ি পার্কিং করে কেউ মার্কেটিং করছেন, নয় তো কারো না কারো সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যায়, জিরোপয়েন্ট হতে মণিচত্বর পর্যন্ত প্রাইভেট কারের লম্বা পার্কিং। অথচ পাশেই ট্রাফিক দাঁড়িয়ে থেকেও দেখে না দেখার ভান করে চলে যায়।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের সড়কের দুই পাশের ফুটপাত আবার দখলে নিয়েছে লাশবাহী গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স। গড়ে তোলা হয়েছে মাইক্রো- কার স্ট্যান্ড। মেডিকেল হাসপাতালের বিপরীতে বিএড কলেজের দেয়ালঘেঁষে ফুটপাতের গোটাটাই দখলে নিয়ে বসানো হয়েছে সারি সারি ভাতের হোটেল। যারা ফুটপাত তো বটেই রাস্তার কিছু অংশও নিজেদের কাজে ব্যবহার করেন। মেডিকেল হাসপাতালের উত্তরসংলগ্ন ফুটপাত দখলে নিয়ে বসানো হয়েছে ৫০টি দোকান। ফলে চিকিৎসা নিতে আসা হাজার হাজার মানুষকে চরম ভোগান্তিতে চলাচল করতে হচ্ছে। বেপরোয়া দখলের কারণে নগরীর গ্রেটার রোডের ফুটপাতের অস্তিত্ব বিলীন হয়েছে। এই সড়কের কাদিরগঞ্জে স্টিলের ফার্নিচার ব্যবসায়ীরা ফুটপাতের উপর মালামাল সাজিয়ে প্রদর্শন করছে।
এদিকে রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন রাস্তা প্রশস্ত করা হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে রাস্তার উন্নয়ন হলেও সরকার পতনের পর তা যেন অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। রাজশাহী নগরীর সড়কগুলো প্রশস্ত করার সঙ্গে ড্রেনও নির্মাণ করেছে সিটি করপোরেশন। তারপর ড্রেন পরিষ্কারের মুখে লোহার স্ল্যাবও বসানো হয়েছিল। কিন্তু এখন এই স্লাবগুলো রাতারাতি চুরি হয়ে যাচ্ছে। ফলে ফুটপাতের ড্রেনে পড়ে আহতের ঘটনা ঘটছে। এতে রাজশাহীর নতুন সড়কর ধারের নতুন ড্রেনে ঢাকনা নেই। ফলে ফুটপাত পরিণত হয়েছে মরণফাঁদে। রাজশাহী শহরজুড়ে পানি নিষ্কাশনের জন্য সড়কের দুই পাশে মাইলের পর মাইল করা হয়েছে বড় বড় ড্রেনও। কিন্তু চুরির কারণে এসব ড্রেনের ওপর স্ল্যাব ও ঢাকনা থাকছে না। বসানোর পর রাত হলেই এগুলো গায়েব হয়ে যাচ্ছে। ফলে ফুটপাত পরিণত হচ্ছে মরণফাঁদে।
রাজশাহীর ফুটপাত-সড়ক দখল আর অরক্ষিত হয়ে যাওয়ার ফলে পথচারীদের যাতায়ত করার ক্ষেত্রে পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তিতে। আর হতে হচ্ছে দুর্ঘটনার শিকার। এমন অবস্থায় রাজশাহীতে বসবাসকারীরা হয়ে গেছেন নিরূপায়। হেঁটে যাবেন কী করে? উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধান মিলবে কোথায়? এমনটাই প্রশ্ন তাদের মনে।
[লেখক : সভাপতি, ইয়ুথ অ্যাকশন ফর সোশ্যাল চেঞ্জ]
শামীউল আলীম শাওন
শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
ফুটপাত দিয়ে হাঁটার মতো স্থান অবশিষ্ট নাই। হাঁটতে হবে সড়ক দিয়ে। সেখানেও হাঁটা সহজ নয়। কেননা ফুটপাত তো বটেই সড়কের অর্ধেকও দখল করেছেন ব্যবসায়ীরা। বাকি অর্ধেকের বড় একটা অংশ দখল করে চলে অবৈধ পার্কিং। যেখানে চলে গাড়ি রাখা আর অবশিষ্ট সড়কে যত্রতত্র যানবাহন থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করার প্রতিযোগিতার মধ্যে ‘কষ্ট’ করে চলাচল করে যানবাহন। হেঁটে যাবেন কী করে? এমন দৃশ্য এখন বরেন্দ্র অঞ্চলের পদ্মাপাড়ের প্রাচীন নগরী রাজশাহীর। ২০২২ সালের জনশুমারি ও গৃহগণনা অনুযায়ী ৯৭ বর্গকিলোমিটারের এ নগরীতে জনসংখ্যা ৫ লাখ ৫৩ হাজারের মতো। শিক্ষা ও চিকিৎসাসহ আধুনিক নাগরিক সুবিধার কারণে আশপাশের জেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক মানুষ আসেন পদ্মাপাড়ের এ জনপদে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী রাজশাহীতে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৬ হাজার মানুষের বসবাস। প্রতি বছর সাড়ে নয় হাজার মানুষ এখানে নতুন করে বসতি গড়েন। রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) তথ্যমতে নগরীর আয়তন বাড়িয়ে ১৩২ বর্গকিলোমিটারে উন্নীত করতে মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে সিটি করপোরেশন।
রাসিকের সূত্র দিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য বলছে রাজশাহীতে ব্যাটারিচালিত দুই শ্রেণীর অটোরিকশা চলে। এর মধ্যে ৮ জন যাত্রীবাহন ক্ষমতার অটোরিকশা রয়েছে প্রায় ৩০ হাজার এবং দুজন যাত্রীবাহী ছোট অটোরিকশা রয়েছে আরও প্রায় ৫০ হাজার। সবমিলিয়ে অন্তত ৭০-৮০ হাজার শুধু অটোরিকশা চলাচল করছে মাত্র ৯৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের নগরীতে। এছাড়া রয়েছে অন্য যানবাহন। ২০২১ সালের নিবন্ধনের তথ্যমতে ৮ হাজার ৯০০টি অটোরিকশা রাসিক নিবন্ধিত।
রাসিক সূত্রে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য বলছে রাজশাহী মহানগরে প্রায় ২৭১ কিলোমিটার ফুটপাত পাকা করে টাইলস বসানো হয়েছে। এ খাতে খরচ হয়েছে ৭২ কোটি টাকার বেশি। একটি জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য বলছে রাজশাহীর তালাইমারী মোড় থেকে কাঁটাখালী বাজার পর্যন্ত সড়কটি নগরের প্রধান প্রবেশদ্বার। ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের এই ৪ দশমিক ১০ কিলোমিটার অংশ ছয় লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। তবে জমি অধিগ্রহণ করতে না পারায় পরিকল্পনামতো সড়ক প্রশস্ত হচ্ছে না। সরকারের অর্থায়নে রাসিকের সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এই সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে। ৯৩ কোটি ৪৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা ব্যয়ে কাজটি ২০২১ সালের ২০ অক্টোবর শুরু হয়। তবে রাস্তার কাজ পুরোটা শেষ না হলেও নতুন করে ফুটপাত দখল শুরু হয়েছে।
রাজশাহীজুড়ে নির্মিত ফুটপাতগুলো প্রবীণ ও প্রতিবন্ধীবান্ধবও নয় সেই অভিযোগও রয়েছে। অন্য একটি জাতীয় গণমাধ্যমের তথ্য বলছে যে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) মেইন ফটকের সামনে থেকে বিনোদনপুর বাজার পর্যন্ত মহাসড়কের পাশের ফুটপাতে বাঁশ ফেলে দখল করে রেখেছেন ব্যবসায়ী এবং ভ্রাম্যমাণ দোকানিরা। এতে ঝুঁকি নিয়ে মহাসড়কে চলাচল করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও স্থানীয় পথচারীরা। দখলের এমন পরিস্থিতি শুধু সেখানকার নয়; কোথাও বালুর স্তূপ, কোথাও ইটের খামাল, কোথাও পাথরের স্তূপ, আবার কোথাও রাস্তা বা ফুটপাতের উপরই চলছে নির্মাণযজ্ঞ। এর বাইরে যেটুকু ফাঁকা পড়ে আছে, সেখানে গড়ে উঠেছে অবৈধ দোকানপাটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। রাস্তার মাঝখানে চুলা বসিয়ে ভাজা হচ্ছে পেঁয়াজু-সিঙাড়া-পুরি। বিক্রি হচ্ছে আপেল, কমলাসহ নানা ধরনের ফল। রয়েছে কাপড় বিক্রির দোকান। রাস্তার প্রায় অর্ধেকজুড়ে বসেছে এসব দোকানপাট। ফলে গনকপাড়া দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ। এ রাস্তাটি রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্ট থেকে উত্তর দিকে রাজশাহী প্রেসক্লাবের সামনের।
এই রাস্তা দিয়ে সাহেব বাজারের মূল সড়কে উঠতে হয়। সম্প্রতি এই রাস্তায় হকারদের বসিয়েছে পুলিশ। প্রায় এক বছর ধরে এই রাস্তার অর্ধেক ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ একমুখী করে দিয়েছে। পুলিশের ব্যারিকেডের ভেতরেই বসেছে দেড় শতাধিক দোকানপাট। হেঁটে চলাচলের সময় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন পথচারীরাও। আর সাহেব বাজারের আশপাশ এলাকার চিত্র তো আরও ভয়াবহ। কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে ফুটপাতের ওপরে একধরনের টাইলস বসানো হলেও ফুটপাতগুলো ব্যবহারের সুযোগ পথচারীদের নেই। সাহেব বাজারসহ আশপাশের সব এলাকার ফুটপাত ব্যবসায়ীদের দখলে। এমনকি দোকানপাটের ভিড়ে ধাপ ফেলানোরও জায়গা পাওয়া যায় না। নগরীর অনেক জায়গায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যলয়ও গড়ে তোলা হয়েছে ফুটপাত-রাস্তা দখল করে। নগরজুড়েই ফুটপাত আর সড়কের উপর চলছে ফলমূল, জুতা-স্যান্ডেল, গেঞ্জি-লুঙ্গি, ভাজা-পোড়া, আলু-পটোল, মাছ-মাংসÑ সবই কেনাবেচা চলছে। সড়ক আর ফুটপাতই এখন যেন ব্যবসার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এর সঙ্গে মূল শহরের সড়কের উপর প্রাইভেট গাড়ি পার্কিং এখন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সাহেব বাজারে ঢুকলেই দেখা যায় সড়কে গাড়ি পার্কিং করে কেউ মার্কেটিং করছেন, নয় তো কারো না কারো সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। একটু লক্ষ্য করলে দেখা যায়, জিরোপয়েন্ট হতে মণিচত্বর পর্যন্ত প্রাইভেট কারের লম্বা পার্কিং। অথচ পাশেই ট্রাফিক দাঁড়িয়ে থেকেও দেখে না দেখার ভান করে চলে যায়।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের সড়কের দুই পাশের ফুটপাত আবার দখলে নিয়েছে লাশবাহী গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স। গড়ে তোলা হয়েছে মাইক্রো- কার স্ট্যান্ড। মেডিকেল হাসপাতালের বিপরীতে বিএড কলেজের দেয়ালঘেঁষে ফুটপাতের গোটাটাই দখলে নিয়ে বসানো হয়েছে সারি সারি ভাতের হোটেল। যারা ফুটপাত তো বটেই রাস্তার কিছু অংশও নিজেদের কাজে ব্যবহার করেন। মেডিকেল হাসপাতালের উত্তরসংলগ্ন ফুটপাত দখলে নিয়ে বসানো হয়েছে ৫০টি দোকান। ফলে চিকিৎসা নিতে আসা হাজার হাজার মানুষকে চরম ভোগান্তিতে চলাচল করতে হচ্ছে। বেপরোয়া দখলের কারণে নগরীর গ্রেটার রোডের ফুটপাতের অস্তিত্ব বিলীন হয়েছে। এই সড়কের কাদিরগঞ্জে স্টিলের ফার্নিচার ব্যবসায়ীরা ফুটপাতের উপর মালামাল সাজিয়ে প্রদর্শন করছে।
এদিকে রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন রাস্তা প্রশস্ত করা হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে রাস্তার উন্নয়ন হলেও সরকার পতনের পর তা যেন অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। রাজশাহী নগরীর সড়কগুলো প্রশস্ত করার সঙ্গে ড্রেনও নির্মাণ করেছে সিটি করপোরেশন। তারপর ড্রেন পরিষ্কারের মুখে লোহার স্ল্যাবও বসানো হয়েছিল। কিন্তু এখন এই স্লাবগুলো রাতারাতি চুরি হয়ে যাচ্ছে। ফলে ফুটপাতের ড্রেনে পড়ে আহতের ঘটনা ঘটছে। এতে রাজশাহীর নতুন সড়কর ধারের নতুন ড্রেনে ঢাকনা নেই। ফলে ফুটপাত পরিণত হয়েছে মরণফাঁদে। রাজশাহী শহরজুড়ে পানি নিষ্কাশনের জন্য সড়কের দুই পাশে মাইলের পর মাইল করা হয়েছে বড় বড় ড্রেনও। কিন্তু চুরির কারণে এসব ড্রেনের ওপর স্ল্যাব ও ঢাকনা থাকছে না। বসানোর পর রাত হলেই এগুলো গায়েব হয়ে যাচ্ছে। ফলে ফুটপাত পরিণত হচ্ছে মরণফাঁদে।
রাজশাহীর ফুটপাত-সড়ক দখল আর অরক্ষিত হয়ে যাওয়ার ফলে পথচারীদের যাতায়ত করার ক্ষেত্রে পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তিতে। আর হতে হচ্ছে দুর্ঘটনার শিকার। এমন অবস্থায় রাজশাহীতে বসবাসকারীরা হয়ে গেছেন নিরূপায়। হেঁটে যাবেন কী করে? উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধান মিলবে কোথায়? এমনটাই প্রশ্ন তাদের মনে।
[লেখক : সভাপতি, ইয়ুথ অ্যাকশন ফর সোশ্যাল চেঞ্জ]