মুহম্মদ দিদারে আলম মুহসিন
বিগত কদিন ধরে দেশের সোশ্যাল ও মেইন স্ট্রিম মিডিয়ার প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে আবদুল হাই কানু নামে একজন মুক্তিযোদ্ধার অবমাননা। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের ভাষ্য অনুযায়ী, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাতিসা ইউনিয়নের লুদিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে কিছু লোক গত ২২ ডিসেম্বর গলায় জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা করেন। এদের মধ্যে অন্তত দ্জুন জামায়াত সমর্থক ছিলেন। জামায়াতে ইসলামী এ ঘটনায় সাংগঠনিক সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে এবং ঐ দ্জুনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে।
আবদুল হাই কানু ১৯৭১ সালে ৪নং সেক্টর কমান্ডার সি আর দত্তের অধীনে একজন প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে মৌলভীবাজার অঞ্চলে যুদ্ধ করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি বীরপ্রতীক খেতাব লাভ করেন। তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা-কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা কমিটির সাবেক সহসভাপতি। পারিবারিক সূত্রে অভিযোগ করা হয়, আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে তিনি দীর্ঘদিন এলাকায় থাকতে পারেননি। সরকার পতনের পর সবেমাত্র কয়েকদিন আগে বাড়ি আসেন। অন্যদিকে, গত ১৫ বছর আওয়ামী শাসনামলে তার বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত কর্মী-সমর্থকদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালানোর অনেক অভিযোগ রয়েছে। অনেকেই তার অত্যাচারে নিজ নিজ ঘরবাড়ি, এমনকি দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাতে বাধ্য হন বলে অভিযোগে প্রকাশ। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এতদিন যারা তার হাতে অত্যাচারিত হন, সেদিনের ঘটনা ছিল তাদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহির্প্রকাশ। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তার বিরুদ্ধে হত্যা, তথ্যপ্রযুক্তি, মারামারি ও রাজনৈতিকসহ অন্তত ৯টি মামলা রয়েছে।
ঘটনা যাই হোক, একজন মুক্তিযোদ্ধাকে এভাবে হেনস্তা করাকে অনেকেই ভালো ভাবে নেননি। অনলাইন-অফলাইন উভয় প্লাটফর্মে এটা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে, এমনকি প্রধান উপদেষ্টাও এ নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং থেকে নিন্দা জানিয়ে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামী শুধু তাদের দুজন সমর্থককে বহিষ্কার করেনি, এ ঘটনার নিন্দা এবং প্রতিবাদও জানিয়েছে। স্থানীয় বিএনপি এ ঘটনার প্রতিবাদে একটি মিছিল বের করে। দেশের বিভিন্ন সংগঠন এ ঘটনার নিন্দায় সোচ্চার হয়েছে। তাদের মতে, কারও বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে আইন-আদালত আছে। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে কাউকে এভাবে হেনস্তা করা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অনেকেই ভিক্টিম একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং হেনস্তাকারীদের কেউ কেউ জামায়াত সমর্থক হওয়ার সুবাদে এই ঘটনাকে একজন মুক্তিযোদ্ধার ওপর জামায়াতপন্থিদের হামলা হিসেবে চিত্রিত করার প্রয়াস পেয়েছেন।
অন্যদিকে, ভিক্টিম পতিত স্বৈরাচারের সময়কার একজন সুবিধাভোগী হওয়া এবং এলাকায় বিরোধীদের ওপর তার অত্যাচার নির্যাতনের দিকটিকে সামনে এনে অন্য একটি পক্ষ এটাকে স্রেফ একটি ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জের হিসেবে উপস্থাপন করতে ব্রতী হয়েছেন। তারা মনে করেন, তার দল ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি এলাকায় যে জুলুম নির্যাতন চালিয়েছেন সেটারই প্রতিক্রিয়ায় তার হাতে এর আগে যারা মজলুম হয়েছেন তারা আজ তাকে বাগে পেয়ে শোধ নেয়ার চেষ্টা করেছেন। তাদের বিবেচনায় জুলাই অভ্যুত্থানে পতিত স্বৈরাচারের অন্যান্য দোসরদের মতো তিনিও জনরোষের ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছিলেন এবং এখন ফিরে এসে ফের তিথু হওয়ার চেষ্টা করছেন। তারা মনে করেন, এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই নন, একজন স্বৈরাচারের দোসর ও নিপীড়ক আবদুল হাই হেনস্তার শিকার হয়েছেন।
তারপরও কথা থাকে। দেশে আইন আদালত আছে। একজন মানুষ অপরাধী হলে তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করা যেতে পারে। তাকে এভাবে অপদস্থ করা কিভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? বিপরীতে যে যুক্তিটা আসছে তা হলো, জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে এদেশে স্মরণকালের যে নৃশংসতম গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে, তার প্রতিক্রিয়ায় স্বৈরাচারের পতনের পর সারাদেশে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশ বাহিনীসহ আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা গণরোষের মুখে পালিয়েছে। এ ঘটনা তারই একরকম ধারাবাহিকতা। যদিও সব মহল থেকেই শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আহ্বান জানানো হচ্ছে, তথাপি বিচ্ছিন্ন ভাবে এরকম আরও ঘটনা ঘটা বিচিত্র নয়। এজন্য সবকে ধৈর্য ধারণ ও শান্তি বজায় রাখতে ক্রমাগত উৎসাহ জুগিয়ে যেতে হবে।
তবে, একটি বিষয় এদেশের সচেতন মহল ভালো চোখে দেখেননি। ঘটনার ধারাবাহিকতায় এটা যে একটা ব্যক্তিগত বা পারিবারিক দ্বন্দ্ব কিংবা পতিত স্বৈরাচারের সহযোগীদের প্রতি গণরোষের বহির্প্রকাশ তা সুস্পষ্ট হওয়ার পরও একটি মহল এটাতে রাজনৈতিক রং লাগিয়ে এটাকে মুক্তিযোদ্ধা অবমাননা হিসেবে চিত্রিত করে দেশব্যাপী একটা শোরগোল তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছে। পতিত স্বৈরাচার সবকিছুতে ‘মুক্তিযোদ্ধা বনাম রাজাকার’ ট্যাগিং করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের চিরায়ত সম্মান, মর্যাদা ও আবেদনকে যেভাবে লঘু করে ফেলেছে, মনে হচ্ছে এরা তাতে শেষ পেরেকটি ঠুকতে উদ্যত হয়েছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের একটি পর্যায়ে পতিত স্বৈরাচারের রাজাকার ট্যাগিং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে কিভাবে বারুদের মতো কাজ করেছিল এবং তাদের ‘তুমি কে, আমি কে, রাজাকার, রাজাকার’- এরকম সেøাগান দিতে উসকে দিয়েছিল, সেটা তো বেশি দিন আগের কথা নয়। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মুক্তিযুদ্ধ এ জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন, কিন্তু যেখানে সেখানে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেয়া আদৌ বিচক্ষণতার পরিচয় বহন করে কিনা তা ভাবার প্রয়োজন রয়েছে।
[লেখক: অধ্যাপক, ফার্মেসি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ]
মুহম্মদ দিদারে আলম মুহসিন
শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
বিগত কদিন ধরে দেশের সোশ্যাল ও মেইন স্ট্রিম মিডিয়ার প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে আবদুল হাই কানু নামে একজন মুক্তিযোদ্ধার অবমাননা। বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের ভাষ্য অনুযায়ী, কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাতিসা ইউনিয়নের লুদিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে কিছু লোক গত ২২ ডিসেম্বর গলায় জুতার মালা পরিয়ে হেনস্তা করেন। এদের মধ্যে অন্তত দ্জুন জামায়াত সমর্থক ছিলেন। জামায়াতে ইসলামী এ ঘটনায় সাংগঠনিক সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করে এবং ঐ দ্জুনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে।
আবদুল হাই কানু ১৯৭১ সালে ৪নং সেক্টর কমান্ডার সি আর দত্তের অধীনে একজন প্লাটুন কমান্ডার হিসেবে মৌলভীবাজার অঞ্চলে যুদ্ধ করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি বীরপ্রতীক খেতাব লাভ করেন। তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা-কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা কমিটির সাবেক সহসভাপতি। পারিবারিক সূত্রে অভিযোগ করা হয়, আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে তিনি দীর্ঘদিন এলাকায় থাকতে পারেননি। সরকার পতনের পর সবেমাত্র কয়েকদিন আগে বাড়ি আসেন। অন্যদিকে, গত ১৫ বছর আওয়ামী শাসনামলে তার বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াত কর্মী-সমর্থকদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালানোর অনেক অভিযোগ রয়েছে। অনেকেই তার অত্যাচারে নিজ নিজ ঘরবাড়ি, এমনকি দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাতে বাধ্য হন বলে অভিযোগে প্রকাশ। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এতদিন যারা তার হাতে অত্যাচারিত হন, সেদিনের ঘটনা ছিল তাদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহির্প্রকাশ। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তার বিরুদ্ধে হত্যা, তথ্যপ্রযুক্তি, মারামারি ও রাজনৈতিকসহ অন্তত ৯টি মামলা রয়েছে।
ঘটনা যাই হোক, একজন মুক্তিযোদ্ধাকে এভাবে হেনস্তা করাকে অনেকেই ভালো ভাবে নেননি। অনলাইন-অফলাইন উভয় প্লাটফর্মে এটা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে, এমনকি প্রধান উপদেষ্টাও এ নিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস উইং থেকে নিন্দা জানিয়ে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামী শুধু তাদের দুজন সমর্থককে বহিষ্কার করেনি, এ ঘটনার নিন্দা এবং প্রতিবাদও জানিয়েছে। স্থানীয় বিএনপি এ ঘটনার প্রতিবাদে একটি মিছিল বের করে। দেশের বিভিন্ন সংগঠন এ ঘটনার নিন্দায় সোচ্চার হয়েছে। তাদের মতে, কারও বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে আইন-আদালত আছে। আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে কাউকে এভাবে হেনস্তা করা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। অনেকেই ভিক্টিম একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং হেনস্তাকারীদের কেউ কেউ জামায়াত সমর্থক হওয়ার সুবাদে এই ঘটনাকে একজন মুক্তিযোদ্ধার ওপর জামায়াতপন্থিদের হামলা হিসেবে চিত্রিত করার প্রয়াস পেয়েছেন।
অন্যদিকে, ভিক্টিম পতিত স্বৈরাচারের সময়কার একজন সুবিধাভোগী হওয়া এবং এলাকায় বিরোধীদের ওপর তার অত্যাচার নির্যাতনের দিকটিকে সামনে এনে অন্য একটি পক্ষ এটাকে স্রেফ একটি ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জের হিসেবে উপস্থাপন করতে ব্রতী হয়েছেন। তারা মনে করেন, তার দল ক্ষমতায় থাকাকালে তিনি এলাকায় যে জুলুম নির্যাতন চালিয়েছেন সেটারই প্রতিক্রিয়ায় তার হাতে এর আগে যারা মজলুম হয়েছেন তারা আজ তাকে বাগে পেয়ে শোধ নেয়ার চেষ্টা করেছেন। তাদের বিবেচনায় জুলাই অভ্যুত্থানে পতিত স্বৈরাচারের অন্যান্য দোসরদের মতো তিনিও জনরোষের ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছিলেন এবং এখন ফিরে এসে ফের তিথু হওয়ার চেষ্টা করছেন। তারা মনে করেন, এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই নন, একজন স্বৈরাচারের দোসর ও নিপীড়ক আবদুল হাই হেনস্তার শিকার হয়েছেন।
তারপরও কথা থাকে। দেশে আইন আদালত আছে। একজন মানুষ অপরাধী হলে তাকে আইনের হাতে সোপর্দ করা যেতে পারে। তাকে এভাবে অপদস্থ করা কিভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে? বিপরীতে যে যুক্তিটা আসছে তা হলো, জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে এদেশে স্মরণকালের যে নৃশংসতম গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে, তার প্রতিক্রিয়ায় স্বৈরাচারের পতনের পর সারাদেশে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশ বাহিনীসহ আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা গণরোষের মুখে পালিয়েছে। এ ঘটনা তারই একরকম ধারাবাহিকতা। যদিও সব মহল থেকেই শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আহ্বান জানানো হচ্ছে, তথাপি বিচ্ছিন্ন ভাবে এরকম আরও ঘটনা ঘটা বিচিত্র নয়। এজন্য সবকে ধৈর্য ধারণ ও শান্তি বজায় রাখতে ক্রমাগত উৎসাহ জুগিয়ে যেতে হবে।
তবে, একটি বিষয় এদেশের সচেতন মহল ভালো চোখে দেখেননি। ঘটনার ধারাবাহিকতায় এটা যে একটা ব্যক্তিগত বা পারিবারিক দ্বন্দ্ব কিংবা পতিত স্বৈরাচারের সহযোগীদের প্রতি গণরোষের বহির্প্রকাশ তা সুস্পষ্ট হওয়ার পরও একটি মহল এটাতে রাজনৈতিক রং লাগিয়ে এটাকে মুক্তিযোদ্ধা অবমাননা হিসেবে চিত্রিত করে দেশব্যাপী একটা শোরগোল তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছে। পতিত স্বৈরাচার সবকিছুতে ‘মুক্তিযোদ্ধা বনাম রাজাকার’ ট্যাগিং করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের চিরায়ত সম্মান, মর্যাদা ও আবেদনকে যেভাবে লঘু করে ফেলেছে, মনে হচ্ছে এরা তাতে শেষ পেরেকটি ঠুকতে উদ্যত হয়েছেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের একটি পর্যায়ে পতিত স্বৈরাচারের রাজাকার ট্যাগিং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে কিভাবে বারুদের মতো কাজ করেছিল এবং তাদের ‘তুমি কে, আমি কে, রাজাকার, রাজাকার’- এরকম সেøাগান দিতে উসকে দিয়েছিল, সেটা তো বেশি দিন আগের কথা নয়। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মুক্তিযুদ্ধ এ জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন, কিন্তু যেখানে সেখানে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেয়া আদৌ বিচক্ষণতার পরিচয় বহন করে কিনা তা ভাবার প্রয়োজন রয়েছে।
[লেখক: অধ্যাপক, ফার্মেসি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ]