গাজী তারেক আজিজ
উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে বলে একটা প্রবাদ আছে। আচ্ছা এই উদোর পিন্ডিটা কী? কেন এর প্রচলন শুরু হলো? আর রাজনীতিবিদদের সঙ্গেই এর সম্পর্ক কী? কীভাবে এই প্রবাদ রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে গেঁথে গিয়েছে? উদোর পি-ি বুধোর ঘাড়ে কথার শাব্দিক অর্থÑ এক বোকার দোষ অন্য বোকার ঘাড়ে চাপানো। আলংকারিক অর্থÑ একজনের দোষ অন্যজনের ওপর আরোপ করা। সুকুমার রায়ের লেখা হ-য-ব-র-ল গল্পের দুটি চরিত্রের নাম উদো ও বুধো। ধরে নেয়া যেতে পারে এভাবেই এই কথাটির বহুধা প্রচলন। তাহলে কেন রাজনীতিবিদদের সঙ্গে এই কথাটা এখন কীভাবে যায়? একটা দল কিংবা জোট যদি একাধিকবার ক্ষমতায় আসীন হয় একটানা ক্ষমতায় থাকলে যেমন সুবিধা রয়েছে। তেমনি অসুবিধাও রয়েছে। তবে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতায় থাকলে জনগণের কাছে জবাবদিহি থাকে। অন্যথায় শুধু উন্নয়ন কিংবা স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ভোটে নিরঙ্কুশ বিজয়ী কার্যত জনগণের কাছে জবাবদিহি থাকতে যে ভাষার বোধগম্যতা থাকতে হয় তা অনেকাংশেই থাকে না বললেই চলে।
একবার নির্বাচনে জয়ী হয়ে পরবর্তীতে জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার বৃথা চেষ্টায় শুধু জনসমর্থনহীন হয়ে নয় একেবারে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপিত হওয়ার নজিরও কম নেই। তারপরও কেন রাজনৈতিক নেতারা অতীত থেকে শিক্ষা না নিয়ে বর্তমানে বুঁদ হতে চান। কেন ক্ষমতার এত এত লোভ কাজ করে! ক্ষমতায় টিকে থাকতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যে বিরোধী দল থাকার কথা সে দলকেও নির্বিকার করে ফেলা হয়ে থাকে। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে বিরোধী দলকে অকার্যকর করতে বদ্ধপরিকর হয়। তাহলে ক্ষমতা হারিয়ে কেন তবে এত এত হাপিত্যেশ? আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোই নয় ব্যক্তি বিশেষেও একে অপরের প্রতি বিষোদগার করে ব্যক্তিক চরিত্র হননে সচেষ্ট হন। সরকার যেমন দোষ চাপিয়ে দেয় বিরোধী দলের ওপর। বিরোধী দলের হরতাল অবরোধের ফলে দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে। তেমনি বিরোধী দলও সরকারের নির্দিষ্ট সময়ের আগেই টেনেহিঁচড়ে ক্ষমতা থেকে নামাতে যা ইচ্ছা তা-ই করে শক্তিমত্তার জানান দিয়ে যায়। আদতে জনগণ রাজনৈতিক দলের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে প্রবলভাবে রাজনীতি বিমুখ হয়ে ওঠে। আর এমন করেই রাজনীতিবিদে আস্থা হারিয়ে অরাজনৈতিক ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের প্রতি ঝুঁকে যায়Ñ যা দৃশ্যমান বর্তমানের অন্তর্বর্তী সরকার। হয়তো কিছুদিন বাদে আসবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ঘুরে ফিরে এটা যে রাজনীতিবিদদেরই ব্যর্থতা তা তারা নিজেরা কোনোভাবেই মানতে চান না। এই যেমন গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে একটি শব্দ অনেক বেশি বেশি শোনা যাচ্ছে। আর তা হলো আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীকে একটা অভিধায় ডাকা হচ্ছে। তা হলো ফ্যাসিস্ট। অন্যদের ফ্যাসিস্টের দোসর। ঠিক যেটা স্বাধীনতা পরবর্তী জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী সমর্থককে রাজাকার বলা হয়ে থাকে। কাউকে রাজাকারের দোসর। যদিও তৎকালীন রাজাকার শব্দটি পাকিস্তান সরকার দিয়েছিল। কিছু অনুসারীকে তাদের কাজে লাগিয়ে তথ্য সংগ্রহ ও সহযোগিতার নিমিত্ত। এখন সেই রাজাকার শব্দটাই এত বেশি উচ্চারিত হয়ে আসছিল যা অনেকাংশেই গালিতুল্য মনে হতে থাকে। এখন কিংবা আরও কিছু বছর পর নিশ্চয়ই এই ফাসিস্ট শব্দটাও তেমনই মনে হতে পারে। ৯০ সাল পরবর্তী হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ স্বৈরাচার কিংবা তার অনুসারীদের স্বৈরাচারের দোসর ডাকা হতো।
এই যে একটা দল আরেকটা দল বা গোষ্ঠিকে ট্যাগ দিয়ে সমাজে বা রাজনীতিতে কোণঠাসা করার ফল যে খুব ভালো কিছু বয়ে আনে না তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আবার সরকার কোন কারণ ছাড়াই বিরোধী পক্ষকে দমন-পীড়ন করে। বিভিন্ন অজুহাতে মামলা, জেল-জুলুম যেন ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। সেই অবস্থা থেকেও যে উত্তরণ ঘটেনি তা-ও দেখাই যাচ্ছে। তাহলে কী দাঁড়াল? আবার কোনো একটা দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে যদি পারস্পরিক আদান প্রদানের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়া যায় তাতে দোষের কী? সেক্ষেত্রেও চলে লাগাতার দোষারোপের রাজনীতি। যেমন সাবেক বিএনপি জোট সরকার পাকিস্তানসহ মিডলইস্টের সঙ্গে বেশ ভালো সম্পর্কের কারণে জনশক্তি রপ্তানি করে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সচল ও চাঙ্গা করেছিল। আবার একই জায়গায় আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্র রাজনৈতিক মিত্রশক্তি ভারত এবং চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে একটা সমান্তরাল সম্পর্ক গড়লেও ট্যাগ দেয়া হয়। তাহলে কী বুঝতে পারি আমরা? কারো সঙ্গেই কি সম্পর্কের উন্নয়ন করা যাবে না? তাহলে এই যে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরী সম্পর্কের ফলে দীর্ঘমেয়াদে আমরাই যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি সেটা কে বোঝাবে? তারপর রয়েছে রাষ্ট্রে অভ্যন্তরে ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি। এত এত বিভাজনে আমরা ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছি। কি সামাজিক। কি অর্থনৈতিক। কি রাষ্ট্রীয়ভাবে। বহিঃবিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি কোথায় গিয়ে ঠেঁকছে? আর এই দ্বিধাবিভক্ত জাতিই আন্তর্জাতিক নেতৃত্ব খোঁজেন! যা নিজের সঙ্গে নিজের প্রতারণা বৈ আর কিছু কি? তাহলে এই গণতন্ত্র নিয়ে আমরা কী করিব? এই গণতন্ত্রের পাঠ আমরা কী করে পেলাম? এই গণতন্ত্র কি অনুসরণীয় হতে থাকবে আমাদের রাজনীতিতে? এরূপ অনেক অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে হয়তো মিলিয়ে দিতে পারা যাবে! কিন্তু তাতেও কি সমাধান মিলবে? আমরা কেন এত অসহিষ্ণু ও উগ্র আচরণ ধারণ করতে চলেছি? অচিরেই আমাদের এই ধরনের আচরণ থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এর বিকল্পও নেই। গণতন্ত্রের নামে আমরা যে অন্তর্বর্তী সরকারের মডেল দিচ্ছি কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামে মডেল দাঁড় করিয়েছি। তা কি আদৌ সুখকর হবে? তাহলে আমরা নির্বাচন আসলেই কেন কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে কিংবা আস্থায় রাখতে পারি না? আমাদের সমস্যা কোথায়? একটা স্বাধীন নির্বাচন কমিশন দাঁড় না করিয়ে পুরো সিস্টেমকেই হুমকিতে ফেলে দেয়া যত সহজ ততোটা কি উত্তরণের পথ দেখিয়েছে? আমরা অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সুইডেন বা এ ধরনের উন্নত দেশের থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের আত্মউন্নয়নে কাজে লাগাতে পারি না? একদা যে অস্ট্রেলিয়ায় অপরাধীদের দ্বীপান্তর করা হয়েছিল। সেই অপরাধীরা যদি একটা সভ্য রাষ্ট্রের উদাহরণ হতে পারে আমরা কেন পারি না। আমাদের হয়তো দুর্বলতা থাকতে পারে। তাই বলে আমাদের দেশের মানুষের শতভাগ নিশ্চয়ই অসৎ নয়! তাহলে আমরা সভ্য হবো নাকি বাগাড়ম্বর করে শুধু নগদ বা হাল লাভেই সন্তুষ্ট থেকে বৃহত পরিসরে দেশের ক্ষতি করেই ছাড়ব! এই পণ আমাদের? যদি না-ই হবে তাহলে একটা স্বাধীন দেশে এত এত বিভাজনের রাজনীতি। এত এত দোষারোপের রাজনীতি শুধু বন্ধই নয়। সমূলে উৎপাটন কেন করা হচ্ছে না? আর কতকাল আমরা বৈরী মানসিকতা ধারণ করে চলতে থাকব? নিশ্চয়ই এর শেষ আছে!
[লেখক: অ্যাডভোকেট, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ফেনী]
গাজী তারেক আজিজ
মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে বলে একটা প্রবাদ আছে। আচ্ছা এই উদোর পিন্ডিটা কী? কেন এর প্রচলন শুরু হলো? আর রাজনীতিবিদদের সঙ্গেই এর সম্পর্ক কী? কীভাবে এই প্রবাদ রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে গেঁথে গিয়েছে? উদোর পি-ি বুধোর ঘাড়ে কথার শাব্দিক অর্থÑ এক বোকার দোষ অন্য বোকার ঘাড়ে চাপানো। আলংকারিক অর্থÑ একজনের দোষ অন্যজনের ওপর আরোপ করা। সুকুমার রায়ের লেখা হ-য-ব-র-ল গল্পের দুটি চরিত্রের নাম উদো ও বুধো। ধরে নেয়া যেতে পারে এভাবেই এই কথাটির বহুধা প্রচলন। তাহলে কেন রাজনীতিবিদদের সঙ্গে এই কথাটা এখন কীভাবে যায়? একটা দল কিংবা জোট যদি একাধিকবার ক্ষমতায় আসীন হয় একটানা ক্ষমতায় থাকলে যেমন সুবিধা রয়েছে। তেমনি অসুবিধাও রয়েছে। তবে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ক্ষমতায় থাকলে জনগণের কাছে জবাবদিহি থাকে। অন্যথায় শুধু উন্নয়ন কিংবা স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের ভোটে নিরঙ্কুশ বিজয়ী কার্যত জনগণের কাছে জবাবদিহি থাকতে যে ভাষার বোধগম্যতা থাকতে হয় তা অনেকাংশেই থাকে না বললেই চলে।
একবার নির্বাচনে জয়ী হয়ে পরবর্তীতে জোর করে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার বৃথা চেষ্টায় শুধু জনসমর্থনহীন হয়ে নয় একেবারে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপিত হওয়ার নজিরও কম নেই। তারপরও কেন রাজনৈতিক নেতারা অতীত থেকে শিক্ষা না নিয়ে বর্তমানে বুঁদ হতে চান। কেন ক্ষমতার এত এত লোভ কাজ করে! ক্ষমতায় টিকে থাকতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় যে বিরোধী দল থাকার কথা সে দলকেও নির্বিকার করে ফেলা হয়ে থাকে। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে বিরোধী দলকে অকার্যকর করতে বদ্ধপরিকর হয়। তাহলে ক্ষমতা হারিয়ে কেন তবে এত এত হাপিত্যেশ? আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলোই নয় ব্যক্তি বিশেষেও একে অপরের প্রতি বিষোদগার করে ব্যক্তিক চরিত্র হননে সচেষ্ট হন। সরকার যেমন দোষ চাপিয়ে দেয় বিরোধী দলের ওপর। বিরোধী দলের হরতাল অবরোধের ফলে দেশ পিছিয়ে যাচ্ছে। তেমনি বিরোধী দলও সরকারের নির্দিষ্ট সময়ের আগেই টেনেহিঁচড়ে ক্ষমতা থেকে নামাতে যা ইচ্ছা তা-ই করে শক্তিমত্তার জানান দিয়ে যায়। আদতে জনগণ রাজনৈতিক দলের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে প্রবলভাবে রাজনীতি বিমুখ হয়ে ওঠে। আর এমন করেই রাজনীতিবিদে আস্থা হারিয়ে অরাজনৈতিক ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের প্রতি ঝুঁকে যায়Ñ যা দৃশ্যমান বর্তমানের অন্তর্বর্তী সরকার। হয়তো কিছুদিন বাদে আসবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। ঘুরে ফিরে এটা যে রাজনীতিবিদদেরই ব্যর্থতা তা তারা নিজেরা কোনোভাবেই মানতে চান না। এই যেমন গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে একটি শব্দ অনেক বেশি বেশি শোনা যাচ্ছে। আর তা হলো আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীকে একটা অভিধায় ডাকা হচ্ছে। তা হলো ফ্যাসিস্ট। অন্যদের ফ্যাসিস্টের দোসর। ঠিক যেটা স্বাধীনতা পরবর্তী জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মী সমর্থককে রাজাকার বলা হয়ে থাকে। কাউকে রাজাকারের দোসর। যদিও তৎকালীন রাজাকার শব্দটি পাকিস্তান সরকার দিয়েছিল। কিছু অনুসারীকে তাদের কাজে লাগিয়ে তথ্য সংগ্রহ ও সহযোগিতার নিমিত্ত। এখন সেই রাজাকার শব্দটাই এত বেশি উচ্চারিত হয়ে আসছিল যা অনেকাংশেই গালিতুল্য মনে হতে থাকে। এখন কিংবা আরও কিছু বছর পর নিশ্চয়ই এই ফাসিস্ট শব্দটাও তেমনই মনে হতে পারে। ৯০ সাল পরবর্তী হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ স্বৈরাচার কিংবা তার অনুসারীদের স্বৈরাচারের দোসর ডাকা হতো।
এই যে একটা দল আরেকটা দল বা গোষ্ঠিকে ট্যাগ দিয়ে সমাজে বা রাজনীতিতে কোণঠাসা করার ফল যে খুব ভালো কিছু বয়ে আনে না তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আবার সরকার কোন কারণ ছাড়াই বিরোধী পক্ষকে দমন-পীড়ন করে। বিভিন্ন অজুহাতে মামলা, জেল-জুলুম যেন ছিল নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। সেই অবস্থা থেকেও যে উত্তরণ ঘটেনি তা-ও দেখাই যাচ্ছে। তাহলে কী দাঁড়াল? আবার কোনো একটা দেশের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে যদি পারস্পরিক আদান প্রদানের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হওয়া যায় তাতে দোষের কী? সেক্ষেত্রেও চলে লাগাতার দোষারোপের রাজনীতি। যেমন সাবেক বিএনপি জোট সরকার পাকিস্তানসহ মিডলইস্টের সঙ্গে বেশ ভালো সম্পর্কের কারণে জনশক্তি রপ্তানি করে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সচল ও চাঙ্গা করেছিল। আবার একই জায়গায় আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্র রাজনৈতিক মিত্রশক্তি ভারত এবং চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে একটা সমান্তরাল সম্পর্ক গড়লেও ট্যাগ দেয়া হয়। তাহলে কী বুঝতে পারি আমরা? কারো সঙ্গেই কি সম্পর্কের উন্নয়ন করা যাবে না? তাহলে এই যে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরী সম্পর্কের ফলে দীর্ঘমেয়াদে আমরাই যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি সেটা কে বোঝাবে? তারপর রয়েছে রাষ্ট্রে অভ্যন্তরে ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি। এত এত বিভাজনে আমরা ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছি। কি সামাজিক। কি অর্থনৈতিক। কি রাষ্ট্রীয়ভাবে। বহিঃবিশ্বে আমাদের ভাবমূর্তি কোথায় গিয়ে ঠেঁকছে? আর এই দ্বিধাবিভক্ত জাতিই আন্তর্জাতিক নেতৃত্ব খোঁজেন! যা নিজের সঙ্গে নিজের প্রতারণা বৈ আর কিছু কি? তাহলে এই গণতন্ত্র নিয়ে আমরা কী করিব? এই গণতন্ত্রের পাঠ আমরা কী করে পেলাম? এই গণতন্ত্র কি অনুসরণীয় হতে থাকবে আমাদের রাজনীতিতে? এরূপ অনেক অনেক প্রশ্নের উত্তর খুঁজে হয়তো মিলিয়ে দিতে পারা যাবে! কিন্তু তাতেও কি সমাধান মিলবে? আমরা কেন এত অসহিষ্ণু ও উগ্র আচরণ ধারণ করতে চলেছি? অচিরেই আমাদের এই ধরনের আচরণ থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এর বিকল্পও নেই। গণতন্ত্রের নামে আমরা যে অন্তর্বর্তী সরকারের মডেল দিচ্ছি কিংবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামে মডেল দাঁড় করিয়েছি। তা কি আদৌ সুখকর হবে? তাহলে আমরা নির্বাচন আসলেই কেন কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে কিংবা আস্থায় রাখতে পারি না? আমাদের সমস্যা কোথায়? একটা স্বাধীন নির্বাচন কমিশন দাঁড় না করিয়ে পুরো সিস্টেমকেই হুমকিতে ফেলে দেয়া যত সহজ ততোটা কি উত্তরণের পথ দেখিয়েছে? আমরা অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সুইডেন বা এ ধরনের উন্নত দেশের থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের আত্মউন্নয়নে কাজে লাগাতে পারি না? একদা যে অস্ট্রেলিয়ায় অপরাধীদের দ্বীপান্তর করা হয়েছিল। সেই অপরাধীরা যদি একটা সভ্য রাষ্ট্রের উদাহরণ হতে পারে আমরা কেন পারি না। আমাদের হয়তো দুর্বলতা থাকতে পারে। তাই বলে আমাদের দেশের মানুষের শতভাগ নিশ্চয়ই অসৎ নয়! তাহলে আমরা সভ্য হবো নাকি বাগাড়ম্বর করে শুধু নগদ বা হাল লাভেই সন্তুষ্ট থেকে বৃহত পরিসরে দেশের ক্ষতি করেই ছাড়ব! এই পণ আমাদের? যদি না-ই হবে তাহলে একটা স্বাধীন দেশে এত এত বিভাজনের রাজনীতি। এত এত দোষারোপের রাজনীতি শুধু বন্ধই নয়। সমূলে উৎপাটন কেন করা হচ্ছে না? আর কতকাল আমরা বৈরী মানসিকতা ধারণ করে চলতে থাকব? নিশ্চয়ই এর শেষ আছে!
[লেখক: অ্যাডভোকেট, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ফেনী]