alt

উপ-সম্পাদকীয়

যৌন নিপীড়ন প্রসঙ্গে

বাবুল রবিদাস

: বুধবার, ০১ জানুয়ারী ২০২৫

বাংলাদেশ দ-বিধি আইনের ৫০৯ ধারায় বলা আছে, যদি কোন ব্যক্তি কোন নারীর শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে যে নারী শুনতে পায় এমনভাবে কথা বলে বা শব্দ করে কিংবা যে নারী যাতে দেখতে পায় এমনভাবে কোনো অঙ্গভঙ্গি করে বা বস্তু প্রদর্শন করে কিংবা অনুরূপ নারীর গোপনীয়তার অধিকার লংঘন করে, তাহলে সেই ব্যক্তি এক বৎসর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের বিনাশ্রম কারাদ-ে কিংবা অর্থদ-ে কিংবা এতদুভয় দ-েই দ-িত হবে। এ উপাদানগুলোর মধ্যে থাকতে হবে-

১) অপরাধী কোন মন্তব্য করেছিল, ২) কোন শব্দ করেছিল, ৩) কোন অঙ্গভঙ্গি করেছিল, ৪) কোন বস্তু প্রদর্শন করেছিল, ৫) কোন নারীর নিভৃতবাসে অনধিকার প্রবেশ করেছিল।

এছাড়া : যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ বা ধর্ষণ চেষ্টার পাশাপাশি কোনো অযাচিত যৌন যোগাযোগ বা হুমকিসহ, আক্রমণসহ অনেকরূপ নেয়। অন্য ব্যক্তির শরীরের কোন অংশকে স্পর্শ করলে তখনই তাকে যৌন নির্যাতন বলে।

অনেক সময় যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে অনেক মেয়ে বা ছেলে মানসিকভাবে কষ্ট পায়, আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে এবং স্বাভাবিক হতে পারে না। যদি কেউ এরকম ঘটনার শিকার হয় তবে এ অবস্থায় তাকে সান্ত¡না দিতে হবে, সমবেদনা জানাতে যেন সে এ অবস্থা থেকে নিজেকে সামলে নিতে পারে। সব সময় মনে রাখতে হবে, যে যৌন নিপীড়ন করে সেই দোষী। তার সম্বন্ধে সবাইকে জানিয়ে দিতে হবে এবং নিজেদের সচেতন হয়ে চলতে হবে।

যৌন নিপীড়ন থেকে নিজেকে রক্ষা করার উপায়সমূহ :

১। অযাচিতভাবে কেউ বেশি আপনভাব দেখালে, সাহায্য বা উপকার করতে আসলে ভেবেচিন্তে তা গ্রহণ করতে হবে। ২। কাউকে ভালো লাগলে চট করে তার সাথে ভাব জমানো উচিত নয়। ৩। অচেনা কোনো নারী বা পুরুষের সাথে একা চলাফেরা করা যাবে না। ৪। কারও আচরণ বা কোনো কিছু অস্বস্তিকর মনে হলে তার সামনে কখনো একা যাওয়া যাবে না। ৫। সমবয়সী, বয়স্ক, ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বা প্রতিবেশীদের কাছ থেকে বিশেষ করে শারীরিক ঘনিষ্ঠতা থেকে সাবধানে থাকতে হবে। ৬। একা একা চলাফেরা না করে যতদূর সম্ভব দল বেঁধে চলাফেরা করতে হবে। ৭। কোনো দ্বিধা, প্রশ্ন বা সমস্যা দেখা দিলে মা-বাবার সাথে খোলাখুলি আলোচনা করতে হবে। ৮। কেউ যৌন নিপীড়ন বা ধর্ষণ করলে বা এ অবস্থার মুখোমুখি হলে চুপচাপ না থেকে অভিভাবককে জানাতে হবে। পরিচিত বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে যৌন নিপীড়নকারীর কথা জানিয়ে দিতে হবে যাতে সবাই তার কাছ থেকে সাবধানে থাকে।

এ বয়সে অনেক মেয়েদেরই এ ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। এ ধরনের আচরণ হচ্ছে এক ধরনের যৌন নিপীড়ন। যে কোনো ধরনের আচরণ, কথা বা শারীরিক ছোঁয়া-তা যার দ্বারাই হোক না কেন, যদি অস্বস্তিকর হয়, তবে তাকে যৌন নিপীড়ন বলা যেতে পারে। যৌন নিপীড়ন যে কোনো জায়গায় যেমন- রাস্তাঘাটে, বাসে, কর্মক্ষেত্রে এমনকি বাসায়ও হতে পারে। অনেক সময় নিকট আপনজনও যৌন নিপীড়ন করতে পারে। ছোট ছেলেরা এবং অল্পবয়সী মেয়েরা যৌন নিপীড়নের শিকার বেশি হয়। যারা যৌন নিপীড়ন করে তারা অনেক সময় নানা ধরনের ভয় দেখায় যাতে এ ব্যাপারটা অন্যরা জানতে না পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোনো দ্বিধা না করে অভিভাবক বা বড় যাদের সাথে সহজে কথা বলা যায়, তাদের জানানো উচিত। এটা কোনোমতেই চুপচাপ সহ্য করা উচিত নয়। যৌন নিপীড়ন আইনত দ-নীয় অপরাধ।

যৌন নিপীড়নের মুখোমুখি হলে করণীয়:

১। তাকে জানিয়ে দিতে হবে যে এসব সে পছন্দ করে না এবং ব্যাপারটি অন্য কাউকে বলে দেবে। ২। বড় ভাইবোন বা বাবা-মাকে ঘটনাটা জানাতে হবে। ৩। ওই মানুষটির সাথে আর কখনো একা হওয়া যাবে না। ৪। সে অন্য কাউকে বলে দেবে বলে ভয় দেখালেও তার কথায় বিশ্বাস করা যাবে না। ৫। এ ব্যাপারে নিজেকে কখনো দোষী ভাবা উচিত নয়।

প্রত্যেক পরিবারে ছেলেমেয়ে আছে। তাই যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সকলকে সচেতন হতে হবে। সমাজের সকলকে ভিকটিমের সাথে সঙ্গ দিতে হবে। অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে জনমত তৈরী করতে পারলে এ সমাজে যৌন নিপীড়ন বন্ধ হবে বলে প্রত্যাশা করা যায়। আসুন সবাই মিলে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়াই। সন্তানদের মানুষের মত মানুষ হিসাবে গড়ে তুলি।

[লেখক : আইনজীবী, জজ কোর্ট, জয়পুরহাট ]

ভাড়া ‘নির্ধারণ’ কিংবা ‘নিয়ন্ত্রণ’ করবে কে?

ব্যাংক ও আর্থিক খাতের জন্য কেমন ছিল ২০২৪ সাল?

স্বৈরাচারের শেষ নেই...

ছবি

স্মরণ : বাংলা সাহিত্যের অমর কথাশিল্পী

দোষারোপের রাজনীতি আর কত

জ্ঞান, দক্ষতা ও সৃজনশীলতার বিকাশে চাই বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কতটা সফল হবে?

নতুন বছরের প্রত্যাশা

ছবি

মানবিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে জেগে উঠি নতুন বছরে

দোষারোপের রাজনীতি আর কত

প্রশাসনিক সংকট ও ভবিষ্যতের করণীয়

ছবি

বিপ্লবী রাজনীতির কাণ্ডারি : কমরেড মণি সিংহ

স্বাস্ব্য সংস্কার : কী কী বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া জরুরি

জনশিক্ষা, গণশিক্ষা ও পারিবারিক শিক্ষা : রাষ্ট্রসংস্কারের মৌলিক ভিত্তি

জাহাজ ভাঙা শিল্প ও পরিবেশ বিপর্যয়

ছিন্নমূল মানুষের ‘শীত-জীবন’

বিভাজিত তাবলিগ জামাতের দ্বন্দ্ব

কোন পথে দেশ?

অহেতুক মুক্তিযুদ্ধকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে কি লাভ হচ্ছে?

রম্যগদ্য : ‘অন্ডুল নাস্তি...’

অনিরাপদ সড়ক, সমাধান কোথায়?

চাই দৃশ্যমান পরিবর্তন

বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং পরিবেশ নিয়ে ভাবনা

সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন

ধনিক শ্রেণীর চলমান সংকট

ছবি

বৈচিত্র্যের সৌন্দর্য এবং আমাদের প্রান্তিক মানুষ

বায়ু দূষণের কারণে বাড়ছে ওষুধের ব্যবহার

শুভ বড়দিন

উগান্ডায় নতুন ভাইরাস ডিঙ্গা ডিঙ্গা

পরিবেশবান্ধব ঢাকা চাই

বনভূমি রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন

ছবি

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা : ফ্যাসিবাদী প্রবণতা সৃষ্টির প্রথম ভ্রুণ

ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভূমিকা

প্রগতিতে অগ্রগতি

পরিবারতন্ত্র ও পরিবারতত্ত্ব : উত্তরণের উপায়

উপেক্ষিত উত্তরাঞ্চলের আদিবাসীরা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

যৌন নিপীড়ন প্রসঙ্গে

বাবুল রবিদাস

বুধবার, ০১ জানুয়ারী ২০২৫

বাংলাদেশ দ-বিধি আইনের ৫০৯ ধারায় বলা আছে, যদি কোন ব্যক্তি কোন নারীর শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে যে নারী শুনতে পায় এমনভাবে কথা বলে বা শব্দ করে কিংবা যে নারী যাতে দেখতে পায় এমনভাবে কোনো অঙ্গভঙ্গি করে বা বস্তু প্রদর্শন করে কিংবা অনুরূপ নারীর গোপনীয়তার অধিকার লংঘন করে, তাহলে সেই ব্যক্তি এক বৎসর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের বিনাশ্রম কারাদ-ে কিংবা অর্থদ-ে কিংবা এতদুভয় দ-েই দ-িত হবে। এ উপাদানগুলোর মধ্যে থাকতে হবে-

১) অপরাধী কোন মন্তব্য করেছিল, ২) কোন শব্দ করেছিল, ৩) কোন অঙ্গভঙ্গি করেছিল, ৪) কোন বস্তু প্রদর্শন করেছিল, ৫) কোন নারীর নিভৃতবাসে অনধিকার প্রবেশ করেছিল।

এছাড়া : যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ বা ধর্ষণ চেষ্টার পাশাপাশি কোনো অযাচিত যৌন যোগাযোগ বা হুমকিসহ, আক্রমণসহ অনেকরূপ নেয়। অন্য ব্যক্তির শরীরের কোন অংশকে স্পর্শ করলে তখনই তাকে যৌন নির্যাতন বলে।

অনেক সময় যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে অনেক মেয়ে বা ছেলে মানসিকভাবে কষ্ট পায়, আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে এবং স্বাভাবিক হতে পারে না। যদি কেউ এরকম ঘটনার শিকার হয় তবে এ অবস্থায় তাকে সান্ত¡না দিতে হবে, সমবেদনা জানাতে যেন সে এ অবস্থা থেকে নিজেকে সামলে নিতে পারে। সব সময় মনে রাখতে হবে, যে যৌন নিপীড়ন করে সেই দোষী। তার সম্বন্ধে সবাইকে জানিয়ে দিতে হবে এবং নিজেদের সচেতন হয়ে চলতে হবে।

যৌন নিপীড়ন থেকে নিজেকে রক্ষা করার উপায়সমূহ :

১। অযাচিতভাবে কেউ বেশি আপনভাব দেখালে, সাহায্য বা উপকার করতে আসলে ভেবেচিন্তে তা গ্রহণ করতে হবে। ২। কাউকে ভালো লাগলে চট করে তার সাথে ভাব জমানো উচিত নয়। ৩। অচেনা কোনো নারী বা পুরুষের সাথে একা চলাফেরা করা যাবে না। ৪। কারও আচরণ বা কোনো কিছু অস্বস্তিকর মনে হলে তার সামনে কখনো একা যাওয়া যাবে না। ৫। সমবয়সী, বয়স্ক, ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বা প্রতিবেশীদের কাছ থেকে বিশেষ করে শারীরিক ঘনিষ্ঠতা থেকে সাবধানে থাকতে হবে। ৬। একা একা চলাফেরা না করে যতদূর সম্ভব দল বেঁধে চলাফেরা করতে হবে। ৭। কোনো দ্বিধা, প্রশ্ন বা সমস্যা দেখা দিলে মা-বাবার সাথে খোলাখুলি আলোচনা করতে হবে। ৮। কেউ যৌন নিপীড়ন বা ধর্ষণ করলে বা এ অবস্থার মুখোমুখি হলে চুপচাপ না থেকে অভিভাবককে জানাতে হবে। পরিচিত বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে যৌন নিপীড়নকারীর কথা জানিয়ে দিতে হবে যাতে সবাই তার কাছ থেকে সাবধানে থাকে।

এ বয়সে অনেক মেয়েদেরই এ ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। এ ধরনের আচরণ হচ্ছে এক ধরনের যৌন নিপীড়ন। যে কোনো ধরনের আচরণ, কথা বা শারীরিক ছোঁয়া-তা যার দ্বারাই হোক না কেন, যদি অস্বস্তিকর হয়, তবে তাকে যৌন নিপীড়ন বলা যেতে পারে। যৌন নিপীড়ন যে কোনো জায়গায় যেমন- রাস্তাঘাটে, বাসে, কর্মক্ষেত্রে এমনকি বাসায়ও হতে পারে। অনেক সময় নিকট আপনজনও যৌন নিপীড়ন করতে পারে। ছোট ছেলেরা এবং অল্পবয়সী মেয়েরা যৌন নিপীড়নের শিকার বেশি হয়। যারা যৌন নিপীড়ন করে তারা অনেক সময় নানা ধরনের ভয় দেখায় যাতে এ ব্যাপারটা অন্যরা জানতে না পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোনো দ্বিধা না করে অভিভাবক বা বড় যাদের সাথে সহজে কথা বলা যায়, তাদের জানানো উচিত। এটা কোনোমতেই চুপচাপ সহ্য করা উচিত নয়। যৌন নিপীড়ন আইনত দ-নীয় অপরাধ।

যৌন নিপীড়নের মুখোমুখি হলে করণীয়:

১। তাকে জানিয়ে দিতে হবে যে এসব সে পছন্দ করে না এবং ব্যাপারটি অন্য কাউকে বলে দেবে। ২। বড় ভাইবোন বা বাবা-মাকে ঘটনাটা জানাতে হবে। ৩। ওই মানুষটির সাথে আর কখনো একা হওয়া যাবে না। ৪। সে অন্য কাউকে বলে দেবে বলে ভয় দেখালেও তার কথায় বিশ্বাস করা যাবে না। ৫। এ ব্যাপারে নিজেকে কখনো দোষী ভাবা উচিত নয়।

প্রত্যেক পরিবারে ছেলেমেয়ে আছে। তাই যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সকলকে সচেতন হতে হবে। সমাজের সকলকে ভিকটিমের সাথে সঙ্গ দিতে হবে। অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে জনমত তৈরী করতে পারলে এ সমাজে যৌন নিপীড়ন বন্ধ হবে বলে প্রত্যাশা করা যায়। আসুন সবাই মিলে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়াই। সন্তানদের মানুষের মত মানুষ হিসাবে গড়ে তুলি।

[লেখক : আইনজীবী, জজ কোর্ট, জয়পুরহাট ]

back to top