বাবুল রবিদাস
বাংলাদেশ দ-বিধি আইনের ৫০৯ ধারায় বলা আছে, যদি কোন ব্যক্তি কোন নারীর শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে যে নারী শুনতে পায় এমনভাবে কথা বলে বা শব্দ করে কিংবা যে নারী যাতে দেখতে পায় এমনভাবে কোনো অঙ্গভঙ্গি করে বা বস্তু প্রদর্শন করে কিংবা অনুরূপ নারীর গোপনীয়তার অধিকার লংঘন করে, তাহলে সেই ব্যক্তি এক বৎসর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের বিনাশ্রম কারাদ-ে কিংবা অর্থদ-ে কিংবা এতদুভয় দ-েই দ-িত হবে। এ উপাদানগুলোর মধ্যে থাকতে হবে-
১) অপরাধী কোন মন্তব্য করেছিল, ২) কোন শব্দ করেছিল, ৩) কোন অঙ্গভঙ্গি করেছিল, ৪) কোন বস্তু প্রদর্শন করেছিল, ৫) কোন নারীর নিভৃতবাসে অনধিকার প্রবেশ করেছিল।
এছাড়া : যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ বা ধর্ষণ চেষ্টার পাশাপাশি কোনো অযাচিত যৌন যোগাযোগ বা হুমকিসহ, আক্রমণসহ অনেকরূপ নেয়। অন্য ব্যক্তির শরীরের কোন অংশকে স্পর্শ করলে তখনই তাকে যৌন নির্যাতন বলে।
অনেক সময় যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে অনেক মেয়ে বা ছেলে মানসিকভাবে কষ্ট পায়, আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে এবং স্বাভাবিক হতে পারে না। যদি কেউ এরকম ঘটনার শিকার হয় তবে এ অবস্থায় তাকে সান্ত¡না দিতে হবে, সমবেদনা জানাতে যেন সে এ অবস্থা থেকে নিজেকে সামলে নিতে পারে। সব সময় মনে রাখতে হবে, যে যৌন নিপীড়ন করে সেই দোষী। তার সম্বন্ধে সবাইকে জানিয়ে দিতে হবে এবং নিজেদের সচেতন হয়ে চলতে হবে।
যৌন নিপীড়ন থেকে নিজেকে রক্ষা করার উপায়সমূহ :
১। অযাচিতভাবে কেউ বেশি আপনভাব দেখালে, সাহায্য বা উপকার করতে আসলে ভেবেচিন্তে তা গ্রহণ করতে হবে। ২। কাউকে ভালো লাগলে চট করে তার সাথে ভাব জমানো উচিত নয়। ৩। অচেনা কোনো নারী বা পুরুষের সাথে একা চলাফেরা করা যাবে না। ৪। কারও আচরণ বা কোনো কিছু অস্বস্তিকর মনে হলে তার সামনে কখনো একা যাওয়া যাবে না। ৫। সমবয়সী, বয়স্ক, ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বা প্রতিবেশীদের কাছ থেকে বিশেষ করে শারীরিক ঘনিষ্ঠতা থেকে সাবধানে থাকতে হবে। ৬। একা একা চলাফেরা না করে যতদূর সম্ভব দল বেঁধে চলাফেরা করতে হবে। ৭। কোনো দ্বিধা, প্রশ্ন বা সমস্যা দেখা দিলে মা-বাবার সাথে খোলাখুলি আলোচনা করতে হবে। ৮। কেউ যৌন নিপীড়ন বা ধর্ষণ করলে বা এ অবস্থার মুখোমুখি হলে চুপচাপ না থেকে অভিভাবককে জানাতে হবে। পরিচিত বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে যৌন নিপীড়নকারীর কথা জানিয়ে দিতে হবে যাতে সবাই তার কাছ থেকে সাবধানে থাকে।
এ বয়সে অনেক মেয়েদেরই এ ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। এ ধরনের আচরণ হচ্ছে এক ধরনের যৌন নিপীড়ন। যে কোনো ধরনের আচরণ, কথা বা শারীরিক ছোঁয়া-তা যার দ্বারাই হোক না কেন, যদি অস্বস্তিকর হয়, তবে তাকে যৌন নিপীড়ন বলা যেতে পারে। যৌন নিপীড়ন যে কোনো জায়গায় যেমন- রাস্তাঘাটে, বাসে, কর্মক্ষেত্রে এমনকি বাসায়ও হতে পারে। অনেক সময় নিকট আপনজনও যৌন নিপীড়ন করতে পারে। ছোট ছেলেরা এবং অল্পবয়সী মেয়েরা যৌন নিপীড়নের শিকার বেশি হয়। যারা যৌন নিপীড়ন করে তারা অনেক সময় নানা ধরনের ভয় দেখায় যাতে এ ব্যাপারটা অন্যরা জানতে না পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোনো দ্বিধা না করে অভিভাবক বা বড় যাদের সাথে সহজে কথা বলা যায়, তাদের জানানো উচিত। এটা কোনোমতেই চুপচাপ সহ্য করা উচিত নয়। যৌন নিপীড়ন আইনত দ-নীয় অপরাধ।
যৌন নিপীড়নের মুখোমুখি হলে করণীয়:
১। তাকে জানিয়ে দিতে হবে যে এসব সে পছন্দ করে না এবং ব্যাপারটি অন্য কাউকে বলে দেবে। ২। বড় ভাইবোন বা বাবা-মাকে ঘটনাটা জানাতে হবে। ৩। ওই মানুষটির সাথে আর কখনো একা হওয়া যাবে না। ৪। সে অন্য কাউকে বলে দেবে বলে ভয় দেখালেও তার কথায় বিশ্বাস করা যাবে না। ৫। এ ব্যাপারে নিজেকে কখনো দোষী ভাবা উচিত নয়।
প্রত্যেক পরিবারে ছেলেমেয়ে আছে। তাই যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সকলকে সচেতন হতে হবে। সমাজের সকলকে ভিকটিমের সাথে সঙ্গ দিতে হবে। অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে জনমত তৈরী করতে পারলে এ সমাজে যৌন নিপীড়ন বন্ধ হবে বলে প্রত্যাশা করা যায়। আসুন সবাই মিলে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়াই। সন্তানদের মানুষের মত মানুষ হিসাবে গড়ে তুলি।
[লেখক : আইনজীবী, জজ কোর্ট, জয়পুরহাট ]
বাবুল রবিদাস
বুধবার, ০১ জানুয়ারী ২০২৫
বাংলাদেশ দ-বিধি আইনের ৫০৯ ধারায় বলা আছে, যদি কোন ব্যক্তি কোন নারীর শ্লীলতাহানির উদ্দেশ্যে যে নারী শুনতে পায় এমনভাবে কথা বলে বা শব্দ করে কিংবা যে নারী যাতে দেখতে পায় এমনভাবে কোনো অঙ্গভঙ্গি করে বা বস্তু প্রদর্শন করে কিংবা অনুরূপ নারীর গোপনীয়তার অধিকার লংঘন করে, তাহলে সেই ব্যক্তি এক বৎসর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের বিনাশ্রম কারাদ-ে কিংবা অর্থদ-ে কিংবা এতদুভয় দ-েই দ-িত হবে। এ উপাদানগুলোর মধ্যে থাকতে হবে-
১) অপরাধী কোন মন্তব্য করেছিল, ২) কোন শব্দ করেছিল, ৩) কোন অঙ্গভঙ্গি করেছিল, ৪) কোন বস্তু প্রদর্শন করেছিল, ৫) কোন নারীর নিভৃতবাসে অনধিকার প্রবেশ করেছিল।
এছাড়া : যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণ বা ধর্ষণ চেষ্টার পাশাপাশি কোনো অযাচিত যৌন যোগাযোগ বা হুমকিসহ, আক্রমণসহ অনেকরূপ নেয়। অন্য ব্যক্তির শরীরের কোন অংশকে স্পর্শ করলে তখনই তাকে যৌন নির্যাতন বলে।
অনেক সময় যৌন নিপীড়নের শিকার হয়ে অনেক মেয়ে বা ছেলে মানসিকভাবে কষ্ট পায়, আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে এবং স্বাভাবিক হতে পারে না। যদি কেউ এরকম ঘটনার শিকার হয় তবে এ অবস্থায় তাকে সান্ত¡না দিতে হবে, সমবেদনা জানাতে যেন সে এ অবস্থা থেকে নিজেকে সামলে নিতে পারে। সব সময় মনে রাখতে হবে, যে যৌন নিপীড়ন করে সেই দোষী। তার সম্বন্ধে সবাইকে জানিয়ে দিতে হবে এবং নিজেদের সচেতন হয়ে চলতে হবে।
যৌন নিপীড়ন থেকে নিজেকে রক্ষা করার উপায়সমূহ :
১। অযাচিতভাবে কেউ বেশি আপনভাব দেখালে, সাহায্য বা উপকার করতে আসলে ভেবেচিন্তে তা গ্রহণ করতে হবে। ২। কাউকে ভালো লাগলে চট করে তার সাথে ভাব জমানো উচিত নয়। ৩। অচেনা কোনো নারী বা পুরুষের সাথে একা চলাফেরা করা যাবে না। ৪। কারও আচরণ বা কোনো কিছু অস্বস্তিকর মনে হলে তার সামনে কখনো একা যাওয়া যাবে না। ৫। সমবয়সী, বয়স্ক, ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বা প্রতিবেশীদের কাছ থেকে বিশেষ করে শারীরিক ঘনিষ্ঠতা থেকে সাবধানে থাকতে হবে। ৬। একা একা চলাফেরা না করে যতদূর সম্ভব দল বেঁধে চলাফেরা করতে হবে। ৭। কোনো দ্বিধা, প্রশ্ন বা সমস্যা দেখা দিলে মা-বাবার সাথে খোলাখুলি আলোচনা করতে হবে। ৮। কেউ যৌন নিপীড়ন বা ধর্ষণ করলে বা এ অবস্থার মুখোমুখি হলে চুপচাপ না থেকে অভিভাবককে জানাতে হবে। পরিচিত বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে যৌন নিপীড়নকারীর কথা জানিয়ে দিতে হবে যাতে সবাই তার কাছ থেকে সাবধানে থাকে।
এ বয়সে অনেক মেয়েদেরই এ ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। এ ধরনের আচরণ হচ্ছে এক ধরনের যৌন নিপীড়ন। যে কোনো ধরনের আচরণ, কথা বা শারীরিক ছোঁয়া-তা যার দ্বারাই হোক না কেন, যদি অস্বস্তিকর হয়, তবে তাকে যৌন নিপীড়ন বলা যেতে পারে। যৌন নিপীড়ন যে কোনো জায়গায় যেমন- রাস্তাঘাটে, বাসে, কর্মক্ষেত্রে এমনকি বাসায়ও হতে পারে। অনেক সময় নিকট আপনজনও যৌন নিপীড়ন করতে পারে। ছোট ছেলেরা এবং অল্পবয়সী মেয়েরা যৌন নিপীড়নের শিকার বেশি হয়। যারা যৌন নিপীড়ন করে তারা অনেক সময় নানা ধরনের ভয় দেখায় যাতে এ ব্যাপারটা অন্যরা জানতে না পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কোনো দ্বিধা না করে অভিভাবক বা বড় যাদের সাথে সহজে কথা বলা যায়, তাদের জানানো উচিত। এটা কোনোমতেই চুপচাপ সহ্য করা উচিত নয়। যৌন নিপীড়ন আইনত দ-নীয় অপরাধ।
যৌন নিপীড়নের মুখোমুখি হলে করণীয়:
১। তাকে জানিয়ে দিতে হবে যে এসব সে পছন্দ করে না এবং ব্যাপারটি অন্য কাউকে বলে দেবে। ২। বড় ভাইবোন বা বাবা-মাকে ঘটনাটা জানাতে হবে। ৩। ওই মানুষটির সাথে আর কখনো একা হওয়া যাবে না। ৪। সে অন্য কাউকে বলে দেবে বলে ভয় দেখালেও তার কথায় বিশ্বাস করা যাবে না। ৫। এ ব্যাপারে নিজেকে কখনো দোষী ভাবা উচিত নয়।
প্রত্যেক পরিবারে ছেলেমেয়ে আছে। তাই যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সকলকে সচেতন হতে হবে। সমাজের সকলকে ভিকটিমের সাথে সঙ্গ দিতে হবে। অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে জনমত তৈরী করতে পারলে এ সমাজে যৌন নিপীড়ন বন্ধ হবে বলে প্রত্যাশা করা যায়। আসুন সবাই মিলে যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে দাঁড়াই। সন্তানদের মানুষের মত মানুষ হিসাবে গড়ে তুলি।
[লেখক : আইনজীবী, জজ কোর্ট, জয়পুরহাট ]