alt

উপ-সম্পাদকীয়

জলবায়ুর পরিবর্তন ও দেশের ভবিষ্যৎ

নাইমুর রহমান

: রোববার, ০৫ জানুয়ারী ২০২৫

জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান বিশ্বের অন্যতম আলোচিত ও উদ্বেগজনক সমস্যা। বৈশ্বিক প্রভাব যেমন উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সমানভাবে স্পর্শ করছে, তেমনই বাংলাদেশের মতো দেশের ওপর এর প্রভাব আরও ভয়াবহ। ভৌগোলিক অবস্থান, জনঘনত্ব এবং অর্থনৈতিক কাঠামোর দুর্বলতার কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা এ দেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয় দাঁড়িয়েছে। বিশেষত, কৃষি খাত এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অনাদিকালের ভবিষ্যৎ। হুমকির মুখে পড়ছে বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য।

ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছে। যার ফলে প্রাণহানি, ভূমি, ঘরবাড়ি, জীবিকার ক্ষতি ছাড়াও ব্যক্তি এবং বিভিন্ন গোষ্ঠী স্থানচ্যুত হতে বাধ্য হচ্ছে।

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে বাংলাদেশে গত ৩০ বছর ধরে উপকূলবর্তী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রতি বছর ৩ দশমিক ৮ থেকে ৫ দশমিক ৮ মিলিমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। সংখ্যাটা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে যা অদূরে আমাদের জন্য ভয়াবহ পরিনতি ডেকে আনবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইসিসিসিএডি)-এর তথ্য অনুযায়ী, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে উপকূলের মানুষের ঘরবাড়ি ও জীবিকা বিপন্ন হওয়ার কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় নয় লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে।

কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনের ফলে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে বাংলাদেশও তার কিছুটা প্রভাব পড়েছে। শিল্পোন্নত দেশগুলোর অতিরিক্ত জ্বালানি পোড়ানো এবং বায়ুম-লে কার্বন নির্গমন বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বাড়িয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার যেমনÑ তেল, গ্যাস এবং কয়লার অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীজুড়ে বনের এলাকা কমে যাওয়ায় কার্বন শোষণের ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।

বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, পরিবেশের পরিবেশের ভারসাম্যের কথা না-ই বা বললাম। অতএব এ থেকেই বোঝা যায় কতটা অপরিকল্পিত নগরীতে পরিণত হয়েছে ঢাকা শহর। যা ক্রমাগত জলবায়ু পরিবর্তন জন্য দায়ী কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি অন্যতম প্রধান খাত। মোট শ্রমশক্তির ৪০% এর বেশি মানুষ সরাসরি কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই খাতটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে ধান, গম এবং পাট প্রধান ফসল। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তিত হচ্ছে, যা ফসলের উৎপাদনকে প্রভাবিত করছে।

২০২২ সালে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে হাওর অঞ্চলে ধানের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং লবণাক্ত পানি জমির উর্বরতা হ্রাস করছে। ফলে চিংড়ি চাষ ব্যতীত অন্য ফসল চাষ করা কঠিন হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। ফলে, কৃষির উৎপাদন কমে যাওয়ায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আয় হ্রাস পাচ্ছে। এর দরুণ দারিদ্র আরও বাড়ছে একইসঙ্গে রপ্তানি আয় কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশের পাট এবং মৎস্য খাত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের মতে, ২০২৩ সালে শুধু বন্যার কারণে ২০ লাখ টন ধান উৎপাদন কম হয়েছে। এর ফলে রপ্তানি আয়ের ওপর চাপ পড়ছে। আবার, বিবিএস এর তথ্যানুযায়ী, পাট উৎপাদনে লবণাক্ততার কারণে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ২৫% কম আয় হয়েছে।

কৃষি ও মৎস্য খাত থেকে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ কমে যাচ্ছে। এর ফলে গ্রামীণ বেকারত্ব বাড়ছে, যা শহরে অভিবাসন বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে।

বাংলাদেশে জলবায়ু উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ, যা ২০৫০ সালের মধ্যে আরও দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পানিজনিত রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে বন্যার পরে ডায়রিয়া, টাইফয়েড এবং ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যায়।

টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা যেমনÑ বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং আধুনিক সেচপদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। উন্নত দেশগুলোকে আহ্বান করতে হবে কার্বন নির্গমন হ্রাসে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে। জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় তহবিল সংগ্রহ একটি কার্য়করী পদক্ষেপ। পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে নদীগুলো নিয়মিত ড্রেজিং করা। নগরায়নে গাছপালা এবং জলাধার সংরক্ষণ ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিবেশ সুরক্ষিত রাখতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশে দিন দিন বাড়ছে। কৃষি ও অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যেই সুস্পষ্ট। তবে যথাযথ পরিকল্পনা, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সচেতনতার মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব। বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন একটি টেকসই এবং সুষম উন্নয়ন কৌশল, যেখানে সরকার-বেসরকারি সংস্থা এবং জনগণ সম্মিলিতভাবে কাজ করবে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার প্রস্তুতিই হতে পারে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ বাংলাদেশ নিশ্চিত করার উপায়।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশের কৃষি ও অর্থনীতিতে সুস্পষ্ট। তবে পরিকল্পিত উদ্যোগ, প্রযুক্তির ব্যবহার, এবং বৈশ্বিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব। টেকসই উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ বাংলাদেশ নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব।

[লেখক: সংবাদকর্মী]

ব্রেন রট: বর্তমান সময়ের এক মারাত্মক ব্যাধি

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলুক দেশের গবেষণা

নির্মোহ ইতিহাস চর্চা ও রাষ্ট্র সংস্কার প্রয়াসে শিক্ষা

প্রসঙ্গ : থিয়েটার ফর থেরাপির তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক পাঠ

শ্বেতপত্রে নতুন কী আছে?

ছবি

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও জুনো ভাইয়ের স্মৃতি

পরিবেশ সুরক্ষায় সার্কুলার ইকোনমি

বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কেন

ভাড়া ‘নির্ধারণ’ কিংবা ‘নিয়ন্ত্রণ’ করবে কে?

ব্যাংক ও আর্থিক খাতের জন্য কেমন ছিল ২০২৪ সাল?

স্বৈরাচারের শেষ নেই...

ছবি

স্মরণ : বাংলা সাহিত্যের অমর কথাশিল্পী

দোষারোপের রাজনীতি আর কত

জ্ঞান, দক্ষতা ও সৃজনশীলতার বিকাশে চাই বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা

যৌন নিপীড়ন প্রসঙ্গে

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কতটা সফল হবে?

নতুন বছরের প্রত্যাশা

ছবি

মানবিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে জেগে উঠি নতুন বছরে

দোষারোপের রাজনীতি আর কত

প্রশাসনিক সংকট ও ভবিষ্যতের করণীয়

ছবি

বিপ্লবী রাজনীতির কাণ্ডারি : কমরেড মণি সিংহ

স্বাস্ব্য সংস্কার : কী কী বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া জরুরি

জনশিক্ষা, গণশিক্ষা ও পারিবারিক শিক্ষা : রাষ্ট্রসংস্কারের মৌলিক ভিত্তি

জাহাজ ভাঙা শিল্প ও পরিবেশ বিপর্যয়

ছিন্নমূল মানুষের ‘শীত-জীবন’

বিভাজিত তাবলিগ জামাতের দ্বন্দ্ব

কোন পথে দেশ?

অহেতুক মুক্তিযুদ্ধকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে কি লাভ হচ্ছে?

রম্যগদ্য : ‘অন্ডুল নাস্তি...’

অনিরাপদ সড়ক, সমাধান কোথায়?

চাই দৃশ্যমান পরিবর্তন

বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং পরিবেশ নিয়ে ভাবনা

সুন্দর সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন

ধনিক শ্রেণীর চলমান সংকট

ছবি

বৈচিত্র্যের সৌন্দর্য এবং আমাদের প্রান্তিক মানুষ

বায়ু দূষণের কারণে বাড়ছে ওষুধের ব্যবহার

tab

উপ-সম্পাদকীয়

জলবায়ুর পরিবর্তন ও দেশের ভবিষ্যৎ

নাইমুর রহমান

রোববার, ০৫ জানুয়ারী ২০২৫

জলবায়ু পরিবর্তন বর্তমান বিশ্বের অন্যতম আলোচিত ও উদ্বেগজনক সমস্যা। বৈশ্বিক প্রভাব যেমন উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সমানভাবে স্পর্শ করছে, তেমনই বাংলাদেশের মতো দেশের ওপর এর প্রভাব আরও ভয়াবহ। ভৌগোলিক অবস্থান, জনঘনত্ব এবং অর্থনৈতিক কাঠামোর দুর্বলতার কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা এ দেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয় দাঁড়িয়েছে। বিশেষত, কৃষি খাত এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি এতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অনাদিকালের ভবিষ্যৎ। হুমকির মুখে পড়ছে বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য।

ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হচ্ছে। যার ফলে প্রাণহানি, ভূমি, ঘরবাড়ি, জীবিকার ক্ষতি ছাড়াও ব্যক্তি এবং বিভিন্ন গোষ্ঠী স্থানচ্যুত হতে বাধ্য হচ্ছে।

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে বাংলাদেশে গত ৩০ বছর ধরে উপকূলবর্তী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা প্রতি বছর ৩ দশমিক ৮ থেকে ৫ দশমিক ৮ মিলিমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। সংখ্যাটা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েই চলেছে যা অদূরে আমাদের জন্য ভয়াবহ পরিনতি ডেকে আনবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইসিসিসিএডি)-এর তথ্য অনুযায়ী, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে উপকূলের মানুষের ঘরবাড়ি ও জীবিকা বিপন্ন হওয়ার কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় নয় লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে।

কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমনের ফলে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে বাংলাদেশও তার কিছুটা প্রভাব পড়েছে। শিল্পোন্নত দেশগুলোর অতিরিক্ত জ্বালানি পোড়ানো এবং বায়ুম-লে কার্বন নির্গমন বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বাড়িয়েছে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার যেমনÑ তেল, গ্যাস এবং কয়লার অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীজুড়ে বনের এলাকা কমে যাওয়ায় কার্বন শোষণের ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে।

বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, পরিবেশের পরিবেশের ভারসাম্যের কথা না-ই বা বললাম। অতএব এ থেকেই বোঝা যায় কতটা অপরিকল্পিত নগরীতে পরিণত হয়েছে ঢাকা শহর। যা ক্রমাগত জলবায়ু পরিবর্তন জন্য দায়ী কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি অন্যতম প্রধান খাত। মোট শ্রমশক্তির ৪০% এর বেশি মানুষ সরাসরি কৃষির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই খাতটি মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বাংলাদেশে ধান, গম এবং পাট প্রধান ফসল। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তিত হচ্ছে, যা ফসলের উৎপাদনকে প্রভাবিত করছে।

২০২২ সালে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে হাওর অঞ্চলে ধানের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং লবণাক্ত পানি জমির উর্বরতা হ্রাস করছে। ফলে চিংড়ি চাষ ব্যতীত অন্য ফসল চাষ করা কঠিন হয়ে উঠছে। বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি কৃষিনির্ভর। ফলে, কৃষির উৎপাদন কমে যাওয়ায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আয় হ্রাস পাচ্ছে। এর দরুণ দারিদ্র আরও বাড়ছে একইসঙ্গে রপ্তানি আয় কমে যাচ্ছে। বাংলাদেশের পাট এবং মৎস্য খাত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের মতে, ২০২৩ সালে শুধু বন্যার কারণে ২০ লাখ টন ধান উৎপাদন কম হয়েছে। এর ফলে রপ্তানি আয়ের ওপর চাপ পড়ছে। আবার, বিবিএস এর তথ্যানুযায়ী, পাট উৎপাদনে লবণাক্ততার কারণে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে ২৫% কম আয় হয়েছে।

কৃষি ও মৎস্য খাত থেকে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ কমে যাচ্ছে। এর ফলে গ্রামীণ বেকারত্ব বাড়ছে, যা শহরে অভিবাসন বৃদ্ধির কারণ হচ্ছে।

বাংলাদেশে জলবায়ু উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ, যা ২০৫০ সালের মধ্যে আরও দ্বিগুণ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পানিজনিত রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে বন্যার পরে ডায়রিয়া, টাইফয়েড এবং ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যায়।

টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা যেমনÑ বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ এবং আধুনিক সেচপদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। উন্নত দেশগুলোকে আহ্বান করতে হবে কার্বন নির্গমন হ্রাসে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে। জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় তহবিল সংগ্রহ একটি কার্য়করী পদক্ষেপ। পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে নদীগুলো নিয়মিত ড্রেজিং করা। নগরায়নে গাছপালা এবং জলাধার সংরক্ষণ ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিবেশ সুরক্ষিত রাখতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশে দিন দিন বাড়ছে। কৃষি ও অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যেই সুস্পষ্ট। তবে যথাযথ পরিকল্পনা, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সচেতনতার মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব। বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজন একটি টেকসই এবং সুষম উন্নয়ন কৌশল, যেখানে সরকার-বেসরকারি সংস্থা এবং জনগণ সম্মিলিতভাবে কাজ করবে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার প্রস্তুতিই হতে পারে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ বাংলাদেশ নিশ্চিত করার উপায়।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশের কৃষি ও অর্থনীতিতে সুস্পষ্ট। তবে পরিকল্পিত উদ্যোগ, প্রযুক্তির ব্যবহার, এবং বৈশ্বিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব। টেকসই উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ বাংলাদেশ নিশ্চিত করা আমাদের সবার দায়িত্ব।

[লেখক: সংবাদকর্মী]

back to top