alt

উপ-সম্পাদকীয়

রজিনাদের বেঁচে থাকার লড়াই

জাফর ইকবাল

: রোববার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরে বাবাকে হারিয়েছিলেন রজিনা বেগম। ২০২৪ সালের ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় রিমলের আঘাতে গর্ভে থাকা ৮ মাসের সন্তানকেও হারালেন তিনি। এই শোকের মাঝেও বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর পাড়ে রজিনাদের জীবনসংগ্রাম থেমে নেই।

পাথরঘাটা উপজেলার চরলাঠিমারা জিনতলা গ্রামের বাসিন্দা রজিনা (৩০) ও তার স্বামী আল আমিন প্যাদা (৩৮)। তাদের ঘরে দুটি কন্যাসন্তান আঁখি (১৭) ও পাখি (৭)। তৃতীয় সন্তানের আশায় আবার গর্ভধারণ করেছিলেন রজিনা। কিন্তু রিমালের আঘাতে সেই স্বপ্নভঙ্গ হয়।

২৬ মে রাতে ঘূর্ণিঝড় রিমালের তা-বের সময় রজিনা পরিবার নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে নাজুক রাস্তার কারণে তিনি পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন। পরদিন তার গর্ভস্থ সন্তান মারা যায়। এ সময়ে তাদের ঘরবাড়িও নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। বেঁচে থাকার অবলম্বন সব হারিয়ে আল আমিন এখন দাদনের টাকা দিয়ে মাছ ধরে সংসার চালাচ্ছেন।

ঝুঁকিপূর্ণ জীবনযাপন

পাথরঘাটা উপজেলার চরলাঠিমারা, তাফালবাড়ি ও ছোট টেংরার শতাধিক পরিবার নদীভাঙন ও ঝড়ের সঙ্গে লড়াই করে টিকে আছে। এদের বেশিরভাগই জেলে। রজিনার শ্বশুর মো. আলমগীর প্যাদা ২০০৭ সালে সিডরের সময় মাছ ধরার ট্রলারসহ নিখোঁজ হন। তার মতো আরও অনেকেই জীবন হারিয়েছেন সাগরে। এরপরও জীবিকার তাগিদে পরিবারগুলো ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরতে নদীতে যায়।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নিরাপদ পানির সুবিধা থেকেও বঞ্চিত তারা। বন্যার পানিতে ভাসা গ্রামে মলমূত্র, গোসল, পানীয় জল এক জায়গায় মিশে যায়। গর্ভবতী মায়েদের চিকিৎসা পেতে ৮ কিলোমিটার দুর্গম রাস্তা পাড়ি দিয়ে পাথরঘাটা হাসপাতালে যেতে হয়। রাস্তাগুলো কাঁচা, উঁচু-নিচু এবং চলাচলের অনুপযোগী।

দুর্বল বেড়িবাঁধ

পাথরঘাটা উপজেলায় ১২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধ রয়েছে, যার মধ্যে ৩০ কিলোমিটার অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। চরলাঠিমারা, তাফালবাড়ি, রুহিতা ও জ্ঞানপাড়ার বেড়িবাঁধগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। সামান্য দুর্যোগেই নদীর পানি গ্রামে ঢুকে পড়ে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে জিও ব্যাগ দিয়ে সাময়িক ব্যবস্থা নিচ্ছে, কিন্তু স্থায়ী সমাধান এখনো হয়নি।

সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা

ঘূর্ণিঝড় রিমালের পর ইউনিসেফের কান্ট্রি ডিরেক্টর মি. পিটার জর্জ এল মেস পাথরঘাটার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তারা তাকে সমস্যা তুলে ধরেন। তবে সিডরের পর ১৭ বছরেও ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ পুনর্নির্মাণ না হওয়া এই অঞ্চলের উন্নয়নের বড় বাধা।

জীবনসংগ্রামের গল্প

রজিনার পরিবারসহ অন্য পরিবারগুলো শত অভাবেও জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের ঘরবাড়ি, জীবিকা, এমনকি প্রিয়জন হারানোর পরও বেঁচে থাকার চেষ্টায় তারা অটল। রজিনার স্বামী আল আমিন প্রতিকূলতার মধ্যেও নদীতে মাছ ধরেন। তাদের মতো আরও পাঁচ শতাধিক পরিবার বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর পাড়ে বসবাস করছে।

তাদের জন্য মৌলিক চাহিদাগুলোর নিশ্চয়তা এবং ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ মেরামত অতি প্রয়োজন। স্থানীয় মানুষজন ও জনপ্রতিনিধিরা আশা করছেন, সরকার এবং দাতা সংস্থাগুলো তাদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।

[লেখক : সংবাদকর্মী ]

মকর সংক্রান্তি : বাঙালির উৎসব ও ঐতিহ্যের ধারক

শৃঙ্খলে আবদ্ধ সামাজিক মানুষ

দাবি আদায়ে জনদুর্ভোগ : অপসংস্কৃতি ও নৈতিক প্রশ্ন

মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে কূটতর্ক

শৃঙ্খলে আবদ্ধ সামাজিক মানুষ

মানব পাচার প্রতিরোধে প্রয়োজন সচেতনতা

সংবিধান সংশোধন : আমাদের বলার আছে

চিন্তা ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা

গ্রাম উন্নয়নে যুব সমাজের ভূমিকা

‘দেশজ নাট্যশৈলী’র কেন্দ্রীয় নাট্যআঙ্গিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি

ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ও কিছু প্রশ্ন

রাখাইন পরিস্থিতি : বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির বড় পরীক্ষা

রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব

রম্যগদ্য : নিশুতিরাতের আগন্তুক

গুরু রবিদাস জির কথা

গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালদের জন্য অশনিসংকেত

নতুন বছরের প্রত্যাশা

নৈতিকতা, শিক্ষা ও উন্নয়ন: আমাদের মুক্তির পথ

কোথায় নাই কোটা?

ছবি

ও আমার স্বপ্ন ঝরা আকুল করা জন্মভূমি

ব্রেন রট: বর্তমান সময়ের এক মারাত্মক ব্যাধি

যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলুক দেশের গবেষণা

নির্মোহ ইতিহাস চর্চা ও রাষ্ট্র সংস্কার প্রয়াসে শিক্ষা

জলবায়ুর পরিবর্তন ও দেশের ভবিষ্যৎ

প্রসঙ্গ : থিয়েটার ফর থেরাপির তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক পাঠ

শ্বেতপত্রে নতুন কী আছে?

ছবি

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও জুনো ভাইয়ের স্মৃতি

পরিবেশ সুরক্ষায় সার্কুলার ইকোনমি

বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না কেন

ভাড়া ‘নির্ধারণ’ কিংবা ‘নিয়ন্ত্রণ’ করবে কে?

ব্যাংক ও আর্থিক খাতের জন্য কেমন ছিল ২০২৪ সাল?

স্বৈরাচারের শেষ নেই...

ছবি

স্মরণ : বাংলা সাহিত্যের অমর কথাশিল্পী

দোষারোপের রাজনীতি আর কত

জ্ঞান, দক্ষতা ও সৃজনশীলতার বিকাশে চাই বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা

যৌন নিপীড়ন প্রসঙ্গে

tab

উপ-সম্পাদকীয়

রজিনাদের বেঁচে থাকার লড়াই

জাফর ইকবাল

রোববার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরে বাবাকে হারিয়েছিলেন রজিনা বেগম। ২০২৪ সালের ২৬ মে ঘূর্ণিঝড় রিমলের আঘাতে গর্ভে থাকা ৮ মাসের সন্তানকেও হারালেন তিনি। এই শোকের মাঝেও বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর পাড়ে রজিনাদের জীবনসংগ্রাম থেমে নেই।

পাথরঘাটা উপজেলার চরলাঠিমারা জিনতলা গ্রামের বাসিন্দা রজিনা (৩০) ও তার স্বামী আল আমিন প্যাদা (৩৮)। তাদের ঘরে দুটি কন্যাসন্তান আঁখি (১৭) ও পাখি (৭)। তৃতীয় সন্তানের আশায় আবার গর্ভধারণ করেছিলেন রজিনা। কিন্তু রিমালের আঘাতে সেই স্বপ্নভঙ্গ হয়।

২৬ মে রাতে ঘূর্ণিঝড় রিমালের তা-বের সময় রজিনা পরিবার নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে নাজুক রাস্তার কারণে তিনি পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হন। পরদিন তার গর্ভস্থ সন্তান মারা যায়। এ সময়ে তাদের ঘরবাড়িও নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। বেঁচে থাকার অবলম্বন সব হারিয়ে আল আমিন এখন দাদনের টাকা দিয়ে মাছ ধরে সংসার চালাচ্ছেন।

ঝুঁকিপূর্ণ জীবনযাপন

পাথরঘাটা উপজেলার চরলাঠিমারা, তাফালবাড়ি ও ছোট টেংরার শতাধিক পরিবার নদীভাঙন ও ঝড়ের সঙ্গে লড়াই করে টিকে আছে। এদের বেশিরভাগই জেলে। রজিনার শ্বশুর মো. আলমগীর প্যাদা ২০০৭ সালে সিডরের সময় মাছ ধরার ট্রলারসহ নিখোঁজ হন। তার মতো আরও অনেকেই জীবন হারিয়েছেন সাগরে। এরপরও জীবিকার তাগিদে পরিবারগুলো ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরতে নদীতে যায়।

শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নিরাপদ পানির সুবিধা থেকেও বঞ্চিত তারা। বন্যার পানিতে ভাসা গ্রামে মলমূত্র, গোসল, পানীয় জল এক জায়গায় মিশে যায়। গর্ভবতী মায়েদের চিকিৎসা পেতে ৮ কিলোমিটার দুর্গম রাস্তা পাড়ি দিয়ে পাথরঘাটা হাসপাতালে যেতে হয়। রাস্তাগুলো কাঁচা, উঁচু-নিচু এবং চলাচলের অনুপযোগী।

দুর্বল বেড়িবাঁধ

পাথরঘাটা উপজেলায় ১২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বেড়িবাঁধ রয়েছে, যার মধ্যে ৩০ কিলোমিটার অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। চরলাঠিমারা, তাফালবাড়ি, রুহিতা ও জ্ঞানপাড়ার বেড়িবাঁধগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। সামান্য দুর্যোগেই নদীর পানি গ্রামে ঢুকে পড়ে। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে জিও ব্যাগ দিয়ে সাময়িক ব্যবস্থা নিচ্ছে, কিন্তু স্থায়ী সমাধান এখনো হয়নি।

সরকারি ও বেসরকারি সহযোগিতা

ঘূর্ণিঝড় রিমালের পর ইউনিসেফের কান্ট্রি ডিরেক্টর মি. পিটার জর্জ এল মেস পাথরঘাটার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তারা তাকে সমস্যা তুলে ধরেন। তবে সিডরের পর ১৭ বছরেও ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ পুনর্নির্মাণ না হওয়া এই অঞ্চলের উন্নয়নের বড় বাধা।

জীবনসংগ্রামের গল্প

রজিনার পরিবারসহ অন্য পরিবারগুলো শত অভাবেও জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের ঘরবাড়ি, জীবিকা, এমনকি প্রিয়জন হারানোর পরও বেঁচে থাকার চেষ্টায় তারা অটল। রজিনার স্বামী আল আমিন প্রতিকূলতার মধ্যেও নদীতে মাছ ধরেন। তাদের মতো আরও পাঁচ শতাধিক পরিবার বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর পাড়ে বসবাস করছে।

তাদের জন্য মৌলিক চাহিদাগুলোর নিশ্চয়তা এবং ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ মেরামত অতি প্রয়োজন। স্থানীয় মানুষজন ও জনপ্রতিনিধিরা আশা করছেন, সরকার এবং দাতা সংস্থাগুলো তাদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।

[লেখক : সংবাদকর্মী ]

back to top