alt

উপ-সম্পাদকীয়

এইচএমপিভি ভাইরাস : প্রয়োজন জনসচেতনতা

মাহতাব হোসাইন মাজেদ

: রোববার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫

বিশ্বজুড়ে এখন নতুন আলোচিত ভাইরাসের নাম হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস, সংক্ষেপে যা এইচএমপিভি নামেও পরিচিতি। করোনার পর কোনো ভাইরাসের নাম শুনলেই ভয়ে চুপসে যান অনেকে। করোনার সেই ভয়াবহতা আর নেই। তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কার কথা প্রায়ই বলছেন বিজ্ঞানীরা। এবার সেই শঙ্কার মধ্যেই নতুন এক ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলো। অদ্ভুত নামের ভাইরাসটি বর্তমান সময়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। নতুন এই ভাইরাসের নাম দ্য হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি)। চীন, জাপান, মালয়েশিয়া ও ভারতের পর এবার বাংলাদেশেও শনাক্ত হলো ভাইরাসটি। চীনে আতঙ্ক ছড়ানো হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাসে (এইচএমপিভি) আক্রান্ত সানজিদা আক্তার (৩০) নামে এক নারী মারা গেছেন। ১৫ জানুয়ারি বুধবার রাতে রাজধানীর মহাখালী সংক্রামক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। দেশে এইচএমপিভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম কোনো রোগী মারা গেলেন। তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরব এলাকায় বলে জানা গেছে।

গত ১২ জানুয়ারি সানজিদার এইচএমপিভিতে আক্রান্ত হওয়ার খবর আসে। জানা যাচ্ছিল ওই নারীর বিদেশ সফরের কোনো ইতিহাস ছিল না। ২০১৭ থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ১৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

চলতি বছরের জানুয়ারির শুরুতে পূর্ব এশিয়ার দেশ চীনে প্রথম এর সংক্রমণ ধরা পড়ে। এর পর জাপানে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়। এইচএমপিভির প্রাদুর্ভাব মালয়েশিয়া ও ভারতেও রয়েছে।এদিকে বাংলাদেশে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস বা এইচএমপিভির বিস্তার ঠেকাতে গত ১৩ জানুয়ারি সোমবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বিশেষ নির্দেশনা জারি করে।

করোনা ভাইরাসের মতো এই ভাইরাসেও সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা। বিশেষ করে আগে যাদের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ছিল, তারা নতুন এই ভাইরাসের আক্রমণে নাজুক অবস্থায় আছেন। বিশেষ করে যাদের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা আছে। দেশে আগেও এইচএমপিভি ভাইরাসের অস্তিত্ব ছিল। এখনও শিশু আর প্রবীণদের শরীরে মিলবে এটির অস্তিত্ব। তবে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। করোনার মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই সংক্রমণ থেকে দূরে থাকা সম্ভব।

এইচএমপিভি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী এইচএমপিভি রোগ প্রতিরোধের উপায় :

হাত ধোয়া : বারবার প্রয়োজন মতো সাবান পানি অথবা অ্যালকোহল ভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে দিয়ে ভালো করে হাত ধুতে হবে। বাইরে থেকে আসার পর, জীবাণু আছে এমন কিছু ধরার পর, আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে আসার পর। অর্থাৎ সর্বক্ষেত্রে আপনার হাত ভাইরাস মুক্ত রাখতে হবে।

মুখম-ল স্পর্শ থেকে বিরত থাকুন : হাত দিয়ে মুখ, নাক ও চোখ স্পর্শ থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ হাত অনেক জিনিস স্পর্শ করে এবং তাতে ভাইরাস হাতে আসতে পারে। হাতে ভাইরাস থাকলে তা মুখ, নাক বা চোখে স্পর্শ করলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। যখনই স্পর্শ করার প্রয়োজন হবে আগে ভাল করে হাত ধুয়ে নিতে হবে।

সোশ্যাল ডিসটেন্স : আক্রান্ত ব্যক্তি বা আক্রান্ত হতে পারেন এমন সম্ভাবনাময় ব্যক্তিদের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে। কমপক্ষে ১ মিটার (৩ ফিট) দূরে থাকতে হবে। শুধু আক্রান্ত ব্যক্তি নয়, সম্ভব হলে সবার কাছ থেকেই দূরত্ব বজায় কথা বলা বা হাঁটাচলা করতে হবে।

শিষ্টাচার মেনে চলা : আক্রান্ত হলে কাশি শিষ্টাচার অনুশীলন করতে হবে। হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢেকে রাখতে হবে। কফ থুতু যেখানে-সেখানে ফেলা যাবে না। টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং যথাযথ স্থানে তা ফেলতে হবে।

এড়িয়ে চলা : যেসব জায়গায় মানুষ বেশি জড়ো হয় সেসব স্থান এড়িয়ে চলতে হবে। সব ধরণের সভা সমাবেশ, মিছিল, সামাজিক অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলতে হবে। এক কথায় মানুষের ভিড়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

গণপরিবহন : গণপরিবহন এড়িয়ে চলতে হবে। যদি একবারেই সম্ভব না হয় তাহলে সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করতে হবে এবং মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

স্পর্শ থেকে বিরত থাকা : অসংখ্য মানুষ স্পর্শ করে এমন আবরণ বা জিনিস স্পর্শ করবেন না। যেসব জিনিস পাবলিকলি ব্যবহৃত হয় তা হাত দিয়ে বা অন্য কোনভাবে স্পর্শ করার আগে সতর্ক থাকতে হবে। পাবলিক অফিসের ডেস্কে বসার আগে কম্পিউটার, কিবোর্ড এবং মাউস জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করে নেয়া উচিত। লিফটের বাটন, রেলিং, পাবলিক স্পেসের দরজার হাতল, নব, হোটেল রেস্টুরেন্টের গ্লাস, চায়ের কাপ প্রভৃতিও এ তালিকাভুক্ত। মোটকথা কারও স্পর্শে ভাইরাস থাকতে পারে এমন কিছু ব্যবহারের আগে সতর্ক হোন এবং স্যানিটাইজার বা সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করুন।

বাইরে থেকে আসার পর : বাইরে থেকে আসার পর ঘরে প্রবেশের সময় নিজের পোশাক ও ব্যবহার্য একটি নির্দিষ্ট ঘরে পরিবর্তনের অভ্যাস করুন এবং হাত ও উন্মুক্ত স্থান ভালো করে সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রয়োজন মনে করলে একবার ব্যবহার করা পোশাক পরিষ্কার না করে আবার ব্যবহার করবেন না। বাইরের পোশাক নিয়ে ঘরে ঢুকেই বিছানায় বা সোফায় বসার অভ্যাস ত্যাগ করুন।

ব্যবহার্য জিনিস : প্রতিনিয়ত স্পর্শ করতে হয় নিজের এমন ব্যবহার্য জিনিস যেমন মোবাইল, মানিব্যাগ, পানির বোতল, গ্লাস, কলম, চায়ের কাপ ইত্যাদি যতদূর সম্ভব স্যানিটাইজ করে ব্যবহার করুন।

মাস্ক ব্যবহার : মুখে মাস্ক পরে সামান্য সুরক্ষা পাওয়া যেতে পারে। ব্যাট-রিওভাইরাস তরল উৎস যেমন হাঁচি-কাশির ফোটা থেকে ফেস মাস্ক কিছুটা সুরক্ষা দিতে পারে। কিন্তু এর মাধ্যমে ভাইরাসের অতি সূক্ষ্মকতা আটকানো একেবারে সম্ভব নয়। তবে যিনি ভাইরাসে আক্রান্ত তার অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।

টাকা-পয়সা : ব্যাংক নোট বা টাকায় নানা ধরনের জীবাণুর উপস্থিতি থাকতে পারে। ফলে ব্যাংক নোটের মাধ্যমে সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনার কথাও বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন। তাই টাকা পয়সা হাত দিয়ে ধরার পর হাত ধুয়ে নিন এবং সচেতন থাকুন।

আলদা ব্যবহার : ঘরের ভেতর এবং বাইরের জন্যে ব্যবহার্য জিনিস আলাদা করে রাখুন। যেমন বাইরে যে সব পোশাক পরিধান করবেন তা ঘরের ভিতর ব্যবহার করবেন না। ঘরের জিনিসের সঙ্গে বাইরের জিনিস যেন না মিশে তা খেয়াল রাখবেন।

শিশু ও বয়স্কদের জন্যে বিশেষ কেয়ার : বয়স্ক মানুষদের বিশেষ করে যিনি অন্যান্য রোগে আক্রান্ত তাদের প্রতি স্পেশাল যতœ নিতে হবে। বয়স্ক মানুষ আক্রান্ত হলে মৃত্যুহার অনেক বেশি।

ভাইরাস একটি অদৃশ্য বিষয়। তা কিভাবে আপনাকে আক্রান্ত করবে তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তবে সবকিছুর মূল হচ্ছে নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখা। হাত না ধুয়ে নিজের মুখম-ল স্পর্শ করবেন না। সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য নিয়মিত ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিজে পরিষ্কার থাকবেন এবং আশপাশের সবাইকে পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে সচেতন করবেন।

[লেখক : প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি ]

প্রসঙ্গ: সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫

ছবি

নীরদ সি চৌধুরী : পেন্ডুলামের মতো দোলায়মান এক বাঙালি চরিত্র

ভোজবাজি ও ভানুমতির খেলা

সড়কে কিশোর মোটরবাইকার : নিয়ন্ত্রণ জরুরি

মব জাস্টিস আইনের শাসনের পরিপন্থি

ছবি

গভীর সংকট আর বড় সম্ভাবনা পাশাপাশি হাঁটছে

জ্ঞানদায়িনী মা সরস্বতী দেবী

‘সংখ্যাস্বল্প’ প্রান্তিক জনগোষ্ঠী

বিকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থা কেন প্রয়োজন?

সব ক্ষেত্রে বাংলাকে প্রাধান্য দিন

গুজব : মানবসৃষ্ট দুর্যোগ

অন্তর্বর্তী সরকার: নাগরিকদের প্রত্যাশা কি পূরণ হবে?

পাঠ্যবই সংকটে থমকে গেছে শিক্ষার চাকা

আরজি কর : শাসক রোষে ভিকটিমের পরিবার

চাই কৃষি খাতের টেকসই উন্নয়ন

একটি দেয়ালচিত্র ও কিছু কথা

শুল্ক বনাম উদ্ভাবন যুদ্ধ

রম্যগদ্য : “ডক্টর.জ্বী-ভাগো...”

বায়ুদূষণ মনিটরিংয়ে প্রযুক্তির ব্যবহার

ছবি

যোগেন ম-লের ‘বহুজনবাদী’ রাজনীতির প্রাসঙ্গিকতা

একটি দেয়ালচিত্র ও কিছু কথা

আলো, অন্ধকার ও চরিত্রবান জীবন

শিক্ষকরা কেন বারবার মার খাবে?

মনোবিশ্লেষক নাট্যক্রিয়া অনুশীলনের ক্ষেত্র হোক সহজতর

প্রসঙ্গ জেনারেশন জেড

বাড়ছে বেকারত্ব : প্রতিকারে জরুরি পদক্ষেপ নিন

প্রকৃতির প্রতি সদয় হতে হবে

ছবি

আভিজাত্যের বাঁধ এবং প্রান্তিক মানুষ

বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস

অর্থনীতি কোনদিকে যাচ্ছে?

বৈষম্যবিরোধী সংস্কার দরকার

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের পোস্টমর্টেম প্রসঙ্গে

রাজনীতির লালসালু ও ময়না দ্বীপ : জনগণের আস্থার সংকট

প্রদেশ গঠনের প্রস্তাব কি বাস্তবসম্মত

‘ভিলেজ পলিটিক্স’ ও সাধারণ গ্রামবাসী

রম্যগদ্য : ‘ধেয়ে আসছে বুলেট’

tab

উপ-সম্পাদকীয়

এইচএমপিভি ভাইরাস : প্রয়োজন জনসচেতনতা

মাহতাব হোসাইন মাজেদ

রোববার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫

বিশ্বজুড়ে এখন নতুন আলোচিত ভাইরাসের নাম হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস, সংক্ষেপে যা এইচএমপিভি নামেও পরিচিতি। করোনার পর কোনো ভাইরাসের নাম শুনলেই ভয়ে চুপসে যান অনেকে। করোনার সেই ভয়াবহতা আর নেই। তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণের আশঙ্কার কথা প্রায়ই বলছেন বিজ্ঞানীরা। এবার সেই শঙ্কার মধ্যেই নতুন এক ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলো। অদ্ভুত নামের ভাইরাসটি বর্তমান সময়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। নতুন এই ভাইরাসের নাম দ্য হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি)। চীন, জাপান, মালয়েশিয়া ও ভারতের পর এবার বাংলাদেশেও শনাক্ত হলো ভাইরাসটি। চীনে আতঙ্ক ছড়ানো হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাসে (এইচএমপিভি) আক্রান্ত সানজিদা আক্তার (৩০) নামে এক নারী মারা গেছেন। ১৫ জানুয়ারি বুধবার রাতে রাজধানীর মহাখালী সংক্রামক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। দেশে এইচএমপিভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম কোনো রোগী মারা গেলেন। তার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরব এলাকায় বলে জানা গেছে।

গত ১২ জানুয়ারি সানজিদার এইচএমপিভিতে আক্রান্ত হওয়ার খবর আসে। জানা যাচ্ছিল ওই নারীর বিদেশ সফরের কোনো ইতিহাস ছিল না। ২০১৭ থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ১৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

চলতি বছরের জানুয়ারির শুরুতে পূর্ব এশিয়ার দেশ চীনে প্রথম এর সংক্রমণ ধরা পড়ে। এর পর জাপানে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়। এইচএমপিভির প্রাদুর্ভাব মালয়েশিয়া ও ভারতেও রয়েছে।এদিকে বাংলাদেশে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস বা এইচএমপিভির বিস্তার ঠেকাতে গত ১৩ জানুয়ারি সোমবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বিশেষ নির্দেশনা জারি করে।

করোনা ভাইরাসের মতো এই ভাইরাসেও সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা। বিশেষ করে আগে যাদের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ছিল, তারা নতুন এই ভাইরাসের আক্রমণে নাজুক অবস্থায় আছেন। বিশেষ করে যাদের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা আছে। দেশে আগেও এইচএমপিভি ভাইরাসের অস্তিত্ব ছিল। এখনও শিশু আর প্রবীণদের শরীরে মিলবে এটির অস্তিত্ব। তবে আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। করোনার মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই সংক্রমণ থেকে দূরে থাকা সম্ভব।

এইচএমপিভি ভাইরাস আক্রান্ত রোগী এইচএমপিভি রোগ প্রতিরোধের উপায় :

হাত ধোয়া : বারবার প্রয়োজন মতো সাবান পানি অথবা অ্যালকোহল ভিত্তিক হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে দিয়ে ভালো করে হাত ধুতে হবে। বাইরে থেকে আসার পর, জীবাণু আছে এমন কিছু ধরার পর, আক্রান্ত কারও সংস্পর্শে আসার পর। অর্থাৎ সর্বক্ষেত্রে আপনার হাত ভাইরাস মুক্ত রাখতে হবে।

মুখম-ল স্পর্শ থেকে বিরত থাকুন : হাত দিয়ে মুখ, নাক ও চোখ স্পর্শ থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ হাত অনেক জিনিস স্পর্শ করে এবং তাতে ভাইরাস হাতে আসতে পারে। হাতে ভাইরাস থাকলে তা মুখ, নাক বা চোখে স্পর্শ করলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। যখনই স্পর্শ করার প্রয়োজন হবে আগে ভাল করে হাত ধুয়ে নিতে হবে।

সোশ্যাল ডিসটেন্স : আক্রান্ত ব্যক্তি বা আক্রান্ত হতে পারেন এমন সম্ভাবনাময় ব্যক্তিদের কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে। কমপক্ষে ১ মিটার (৩ ফিট) দূরে থাকতে হবে। শুধু আক্রান্ত ব্যক্তি নয়, সম্ভব হলে সবার কাছ থেকেই দূরত্ব বজায় কথা বলা বা হাঁটাচলা করতে হবে।

শিষ্টাচার মেনে চলা : আক্রান্ত হলে কাশি শিষ্টাচার অনুশীলন করতে হবে। হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢেকে রাখতে হবে। কফ থুতু যেখানে-সেখানে ফেলা যাবে না। টিস্যু ব্যবহার করতে হবে এবং যথাযথ স্থানে তা ফেলতে হবে।

এড়িয়ে চলা : যেসব জায়গায় মানুষ বেশি জড়ো হয় সেসব স্থান এড়িয়ে চলতে হবে। সব ধরণের সভা সমাবেশ, মিছিল, সামাজিক অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলতে হবে। এক কথায় মানুষের ভিড়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

গণপরিবহন : গণপরিবহন এড়িয়ে চলতে হবে। যদি একবারেই সম্ভব না হয় তাহলে সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরা করতে হবে এবং মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।

স্পর্শ থেকে বিরত থাকা : অসংখ্য মানুষ স্পর্শ করে এমন আবরণ বা জিনিস স্পর্শ করবেন না। যেসব জিনিস পাবলিকলি ব্যবহৃত হয় তা হাত দিয়ে বা অন্য কোনভাবে স্পর্শ করার আগে সতর্ক থাকতে হবে। পাবলিক অফিসের ডেস্কে বসার আগে কম্পিউটার, কিবোর্ড এবং মাউস জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করে নেয়া উচিত। লিফটের বাটন, রেলিং, পাবলিক স্পেসের দরজার হাতল, নব, হোটেল রেস্টুরেন্টের গ্লাস, চায়ের কাপ প্রভৃতিও এ তালিকাভুক্ত। মোটকথা কারও স্পর্শে ভাইরাস থাকতে পারে এমন কিছু ব্যবহারের আগে সতর্ক হোন এবং স্যানিটাইজার বা সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করুন।

বাইরে থেকে আসার পর : বাইরে থেকে আসার পর ঘরে প্রবেশের সময় নিজের পোশাক ও ব্যবহার্য একটি নির্দিষ্ট ঘরে পরিবর্তনের অভ্যাস করুন এবং হাত ও উন্মুক্ত স্থান ভালো করে সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রয়োজন মনে করলে একবার ব্যবহার করা পোশাক পরিষ্কার না করে আবার ব্যবহার করবেন না। বাইরের পোশাক নিয়ে ঘরে ঢুকেই বিছানায় বা সোফায় বসার অভ্যাস ত্যাগ করুন।

ব্যবহার্য জিনিস : প্রতিনিয়ত স্পর্শ করতে হয় নিজের এমন ব্যবহার্য জিনিস যেমন মোবাইল, মানিব্যাগ, পানির বোতল, গ্লাস, কলম, চায়ের কাপ ইত্যাদি যতদূর সম্ভব স্যানিটাইজ করে ব্যবহার করুন।

মাস্ক ব্যবহার : মুখে মাস্ক পরে সামান্য সুরক্ষা পাওয়া যেতে পারে। ব্যাট-রিওভাইরাস তরল উৎস যেমন হাঁচি-কাশির ফোটা থেকে ফেস মাস্ক কিছুটা সুরক্ষা দিতে পারে। কিন্তু এর মাধ্যমে ভাইরাসের অতি সূক্ষ্মকতা আটকানো একেবারে সম্ভব নয়। তবে যিনি ভাইরাসে আক্রান্ত তার অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।

টাকা-পয়সা : ব্যাংক নোট বা টাকায় নানা ধরনের জীবাণুর উপস্থিতি থাকতে পারে। ফলে ব্যাংক নোটের মাধ্যমে সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনার কথাও বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন। তাই টাকা পয়সা হাত দিয়ে ধরার পর হাত ধুয়ে নিন এবং সচেতন থাকুন।

আলদা ব্যবহার : ঘরের ভেতর এবং বাইরের জন্যে ব্যবহার্য জিনিস আলাদা করে রাখুন। যেমন বাইরে যে সব পোশাক পরিধান করবেন তা ঘরের ভিতর ব্যবহার করবেন না। ঘরের জিনিসের সঙ্গে বাইরের জিনিস যেন না মিশে তা খেয়াল রাখবেন।

শিশু ও বয়স্কদের জন্যে বিশেষ কেয়ার : বয়স্ক মানুষদের বিশেষ করে যিনি অন্যান্য রোগে আক্রান্ত তাদের প্রতি স্পেশাল যতœ নিতে হবে। বয়স্ক মানুষ আক্রান্ত হলে মৃত্যুহার অনেক বেশি।

ভাইরাস একটি অদৃশ্য বিষয়। তা কিভাবে আপনাকে আক্রান্ত করবে তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তবে সবকিছুর মূল হচ্ছে নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখা। হাত না ধুয়ে নিজের মুখম-ল স্পর্শ করবেন না। সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য নিয়মিত ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিজে পরিষ্কার থাকবেন এবং আশপাশের সবাইকে পরিষ্কার রাখার ব্যাপারে সচেতন করবেন।

[লেখক : প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি ]

back to top