alt

উপ-সম্পাদকীয়

বায়ুদূষণ রোধে প্রয়োজন জনসচেতনতা

মাহতাব হোসাইন মাজেদ

: মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫

বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশে পরিণত হয়েছে। এই দূষিত বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়ার কারণে বাংলাদেশিদের গড় আয়ু কমে যাচ্ছে প্রায় ৬ দশমিক ৮ বছর। এলাকা ভেদে এ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। আর সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের মধ্যে বায়ু অন্যতম। আমাদের সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন দূষণমুক্ত পরিবেশ ও নির্মল বাতাস।

কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য, আমাদের দেশে দিন দিন নির্মল বায়ু বিলুপ্তির পথে যাচ্ছে। বিশ্বের যেসব দেশের বায়ু ভয়াবহ দূষণের শিকার বাংলাদেশ তার মধ্যে একটি। নতুন এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বাংলাদেশে ৬৪টি জেলার মধ্যে ৫৪টি জেলারই বায়ুর মান আদর্শ মাত্রার চেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে। আদর্শ মাত্রার মধ্যে আছে মাত্র ১০টি জেলার বায়ুর মান। এ অতিরিক্ত বায়ু দূষণের কারণে সবচেয়ে খারাপ প্রভাব পড়ছে মানুষের প্রজনন ক্ষমতায়।

সাম্প্রতিককালে বিশ্বের অন্যান্য স্থানের মতো এশিয়াতেও পরিবেশগত ইস্যুগুলোর মধ্যে বায়ুদূষণ অধিকতর প্রাধান্য লাভ করেছে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রগুলোতে সমস্যাটি প্রকট আকার ধারণ করেছে। চট্টগ্রাম, খুলনা, বগুড়া এবং রাজশাহী অঞ্চলের নগর এলাকাগুলোতে বায়ু দূষণের স্বাস্থ্যগত প্রতিক্রিয়া ঢাকার তুলনায় কম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শহর এলাকায় অনেক সময় এমন সব শিলা ও মৃত্তিকার ওপর বাড়ি-ঘর নির্মাণ করা হয় যাদের ভিত্তি থেকে তেজষ্ক্রিয় গ্যাস বিকীর্ণ হয়।

দীর্ঘ সময় এই গ্যাস নিঃশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করলে ফুসফুসের ক্যান্সার হতে পারে। বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় বায়ু দূষণ এখনও তেমন কোনো সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়নি। কেননা এসব এলাকায় যন্ত্রচালিত গাড়ির সংখ্যা যেমন কম, তেমনি শিল্প-কারখানার সংখ্যাও অল্প। তবে ইটের ভাটা এবং রান্নার চুলিস্ন থেকে শহরতলী ও গ্রামীণ এলাকায় যথেষ্ট পরিমাণে বায়ু দূষণ ঘটছে। গ্রামাঞ্চলে কাঠ, কয়লা এবং বিভিন্ন ধরনের জৈববস্তু জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ফলে গ্রামাঞ্চলে প্রধান বায়ু দূষক হলো কোনো নির্দিষ্ট কণিকা উপাদানে গঠিত বস্তু এবং উদ্বায়ী জৈব যৌগ।

বাংলাদেশে প্রধানত দুটি উৎস থেকে বায়ু দূষণ ঘটছে- শিল্প কারখানাসমূহে নির্গত ধোঁয়া এবং যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া। ইটের ভাটা, সার কারখানা, চিনি কল, কাগজ কল, পাটকল, বস্ত্র কারখানা, স্পিনিং মিল, ট্যানারি শিল্প, গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি, রুটি ও বিস্কুট কারখানা, রাসায়নিক ও ওষুধ শিল্প, সিমেন্ট কারখানা, মেটাল ওয়ার্কশপ, করাত কল প্রভৃতি শিল্প কারখানা প্রধানত বায়ুদূষণ ঘটাচ্ছে। এছাড়াও কর্ষিত জমি থেকে উৎপন্ন ধুলা এবং উপকূলীয় দ্বীপসমূহ ও উপকূলীয় ভূমি এলাকায় সন্নিকটস্থ সমুদ্র তরঙ্গসৃষ্ট লবণ কণা দ্বারা বায়ু দূষণ হয়ে থাকে। বায়ু দূষণের এসব উৎস থেকে প্রচুর পরিমাণে ধোঁয়া, বাষ্প, গ্যাস ও ধুলিকণা উৎপন্ন হয় যা কুয়াশা ও ধোঁয়াচ্ছন্ন পরিবেশ সৃষ্টি করে।

বাংলাদেশের কয়েক প্রকার শিল্পকারখানা যেমন ট্যানারি কারখানাগুলো প্রতিনিয়ত হাইড্রোজেন সালফাইড, অ্যামোনিয়া, ক্লোরিনসহ আরও কয়েক প্রকার গন্ধহীন রাসায়নিক পদার্থ নির্গত করছে যেগুলো একদিকে যেমন বিষাক্ত তেমনি অন্যদিকে স্থানীয় জনগণের বিরক্তি ও পীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এসব দূষক মাথাধরা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা সৃষ্টি করছে। অধিক হারে নগরায়নের কারণে নগরে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে অধিকতর হারে বায়ু দূষণ ঘটছে। বায়ুদূষণের কারণে সর্বাধিক ক্ষতির শিকার হয় শিশুরা। বায়ুতে অতিরিক্ত সীসার উপস্থিতি শিশুদের মানসিক বৃদ্ধিকে ব্যাহত করে। প্রতি বছর ঢাকা মহানগরীর বায়ুতে প্রায় ৫০ টন সিসা নির্গত হচ্ছে।

বায়ুদূষণ প্রতিরোধের প্রথম পদক্ষেপ হলো বায়ুম-লে নির্গমনের আগেই বায়ুদূষক উৎসের নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করা। এক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ, জ্বালানি পরিশোধন, মোটরগাড়ি চালনায় জনসচেতনা প্রভৃতি প্রয়োগ করা যেতে পারে-

যানবাহনের ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ : যানবাহন থেকে নির্গত বায়ুদূষক যেমন কার্বন মনো-অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড প্রধান। সিএনজিচালিত যানে এ দূষণ কম হয়।

কল-কারখানার ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ : এজন্য ধোঁয়া নির্গমন নল ও চিমনি থেকে বস্তুকণা পৃথক করার জন্য ছাকনি বা অন্য কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে।

বিকল্প জ্বালানি প্রয়োগ : জীবাশ্ম জ্বালানির পরিমাণ হ্রাস করে সৌরশক্তি, বায়োগ্যাস ইত্যাদির ব্যবহার বৃদ্ধি করা যায়।

পরিত্যক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: পরিত্যক্ত বর্জ্য না পুড়িয়ে মাটির নিচে পুঁতে ফেলা যায়।

কীটনাশক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ : কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে বিকল্প উপায়ে শস্যের রোগব্যাধি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

পচনযোগ্য দ্রব্য দ্রুত অপসারণ : হাটবাজার, বসতবাড়ি থেকে পচনশীল দ্রব্য দ্রুত অপসারণ করতে হবে। ডাস্টবিনের ময়লা দ্রুত শোধনাগারে পাঠাতে হবে।

অঞ্চল ভাগ : নগরে বসতি, শিল্প-কারখানা পরিকল্পিতভাবে স্থাপন করতে হবে।

বৃক্ষরোপণ : উদ্ভিদ প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে। উদ্ভিদ অক্সিজেন ত্যাগ করে ও কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে ভারসাম্য বজায় রাখে।

বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত একটি বিষয় হচ্ছে বায়ুদূষণ যা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক হারে বেড়েই চলেছে।বায়ুদুষণে দেশের এমন নাকাল অবস্থা হওয়া সত্ত্বেও নেই তেমন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। আর বর্তমান বায়ুদূষণের বিষয়টিতে বিশ্বেও সব শ্রেণি-পেশার মানুষদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সবাই বুঝতে শিখেছে বায়ুদূষণ একটি ভয়াবহ আতঙ্ক। তবুও জনগণের সচেতনতার পর্যায় কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অবধি পৌঁছতে পারেনি। বায়ুদূষণ প্রতিরোধে সরকার, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, অন্যান্য সংস্থা ও জনগণ সমন্বিত উদ্যোগ নিলে সুফল বয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। জাতীয়ভাবে পরিবেশ রক্ষার জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত, সচেতন হওয়া উচিত। সর্বোপরি, পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

[লেখক : প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি]

ছবি

নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতেই হবে

ছবি

উন্নয়ন ও প্রকৃতি

ছবি

কৃষকের চেয়ে বড় উদ্যোক্তা আর কে আছে

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষাগত ও সামাজিক সমস্যা

ট্রেড ইউনিয়ন ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট

সব অর্জনে কৃতিত্ব নিতে নেই

নাগাসাকি দিবস : পারমাণবিক বোমার অপপ্রয়োগ বন্ধ হোক

আদিবাসী অধিকার : দায় ঘোচানোর সুযোগ এসেছে, কাজে লাগাতে হবে রাষ্ট্রকেই

অদৃশ্য আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই : উষ্ণ বাংলাদেশে জলবায়ু-প্রসূত স্বাস্থ্য সংকট

নেতানিয়াহুর এক ভ্রান্ত কৌশলের মুখোমুখি ইসরায়েল

আসিয়ানে বাংলাদেশের অভিযাত্রা : সম্ভাবনার পথে কূটনৈতিক বাস্তবতা ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ

ভাঙছে নদী, গড়ছে দুঃখের গ্রাম

ছবি

গণঅভ্যুত্থান ও গণআকাক্সক্ষা : এক বছরে অর্জনটা কী?

ছবি

ভিন্নমত, ভিন্নপথ এবং প্রান্তজনের স্বপ্ন

আচরণগত অর্থনীতির আয়নায় বাংলাদেশিদের বিদেশযাত্রা

গরিবের ইলিশ শুধুই স্বপ্ন কেন?

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান : বৈষম্য ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে জাগরণ

শারীরিক শিক্ষা : সুস্থ ও সচেতন প্রজন্ম গড়ার সম্ভাবনা

জ্ঞানতীর্থের সংকট ও গবেষণাবিমুখ উচ্চশিক্ষা

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থান-গাথা : মেঘ থম থম করে

অলৌকিকতা, লৌকিকতা ও বিশ্বাসের বিভ্রান্তি

বিচারপতি গ্রেফতার, শুনানিতে পুলিশের অসহযোগিতা ও কিছু আইনি জিজ্ঞাসা

অপেক্ষার রাজনীতি ও সময়গত বৈষম্য : ঢাকা শহরের প্রেক্ষাপট

বৃক্ষরোপণ হোক পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন

আফ্রিকায় রাশিয়ার ভূরাজনৈতিক কৌশল

বিভীষিকাময় দুর্ঘটনা ও করুণ মৃত্যু

কেন এত তরুণ দেশ ছাড়তে চাচ্ছে

রেলওয়ে পরিচালনায় আমলাতন্ত্রের প্রভাব

রম্যগদ্য : ‘গোপালগঞ্জ, বাংলার গোপালগঞ্জ...’

দেশি মাছ রক্ষায় অভয়াশ্রম

আলুর বাজার বিপর্যয় : কৃষকের ভাগ্যে লোকসান

ছবি

নীল নদের পানি নীল নয়

বিশ্ব বাঘ দিবস

ঢাকার কি রিস্ক এনালাইসিস করা আছে?

ছবি

সোনার হরফে লেখা অনন্য শিক্ষকের নাম

পরীক্ষার পর পরীক্ষা, কিন্তু কোথায় মূল্যায়ন ও মূল্যবোধের ভিত্তি?

tab

উপ-সম্পাদকীয়

বায়ুদূষণ রোধে প্রয়োজন জনসচেতনতা

মাহতাব হোসাইন মাজেদ

মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫

বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশে পরিণত হয়েছে। এই দূষিত বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়ার কারণে বাংলাদেশিদের গড় আয়ু কমে যাচ্ছে প্রায় ৬ দশমিক ৮ বছর। এলাকা ভেদে এ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। আর সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের মধ্যে বায়ু অন্যতম। আমাদের সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন দূষণমুক্ত পরিবেশ ও নির্মল বাতাস।

কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য, আমাদের দেশে দিন দিন নির্মল বায়ু বিলুপ্তির পথে যাচ্ছে। বিশ্বের যেসব দেশের বায়ু ভয়াবহ দূষণের শিকার বাংলাদেশ তার মধ্যে একটি। নতুন এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বাংলাদেশে ৬৪টি জেলার মধ্যে ৫৪টি জেলারই বায়ুর মান আদর্শ মাত্রার চেয়ে খারাপ অবস্থায় আছে। আদর্শ মাত্রার মধ্যে আছে মাত্র ১০টি জেলার বায়ুর মান। এ অতিরিক্ত বায়ু দূষণের কারণে সবচেয়ে খারাপ প্রভাব পড়ছে মানুষের প্রজনন ক্ষমতায়।

সাম্প্রতিককালে বিশ্বের অন্যান্য স্থানের মতো এশিয়াতেও পরিবেশগত ইস্যুগুলোর মধ্যে বায়ুদূষণ অধিকতর প্রাধান্য লাভ করেছে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রগুলোতে সমস্যাটি প্রকট আকার ধারণ করেছে। চট্টগ্রাম, খুলনা, বগুড়া এবং রাজশাহী অঞ্চলের নগর এলাকাগুলোতে বায়ু দূষণের স্বাস্থ্যগত প্রতিক্রিয়া ঢাকার তুলনায় কম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শহর এলাকায় অনেক সময় এমন সব শিলা ও মৃত্তিকার ওপর বাড়ি-ঘর নির্মাণ করা হয় যাদের ভিত্তি থেকে তেজষ্ক্রিয় গ্যাস বিকীর্ণ হয়।

দীর্ঘ সময় এই গ্যাস নিঃশ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করলে ফুসফুসের ক্যান্সার হতে পারে। বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় বায়ু দূষণ এখনও তেমন কোনো সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত হয়নি। কেননা এসব এলাকায় যন্ত্রচালিত গাড়ির সংখ্যা যেমন কম, তেমনি শিল্প-কারখানার সংখ্যাও অল্প। তবে ইটের ভাটা এবং রান্নার চুলিস্ন থেকে শহরতলী ও গ্রামীণ এলাকায় যথেষ্ট পরিমাণে বায়ু দূষণ ঘটছে। গ্রামাঞ্চলে কাঠ, কয়লা এবং বিভিন্ন ধরনের জৈববস্তু জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ফলে গ্রামাঞ্চলে প্রধান বায়ু দূষক হলো কোনো নির্দিষ্ট কণিকা উপাদানে গঠিত বস্তু এবং উদ্বায়ী জৈব যৌগ।

বাংলাদেশে প্রধানত দুটি উৎস থেকে বায়ু দূষণ ঘটছে- শিল্প কারখানাসমূহে নির্গত ধোঁয়া এবং যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া। ইটের ভাটা, সার কারখানা, চিনি কল, কাগজ কল, পাটকল, বস্ত্র কারখানা, স্পিনিং মিল, ট্যানারি শিল্প, গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি, রুটি ও বিস্কুট কারখানা, রাসায়নিক ও ওষুধ শিল্প, সিমেন্ট কারখানা, মেটাল ওয়ার্কশপ, করাত কল প্রভৃতি শিল্প কারখানা প্রধানত বায়ুদূষণ ঘটাচ্ছে। এছাড়াও কর্ষিত জমি থেকে উৎপন্ন ধুলা এবং উপকূলীয় দ্বীপসমূহ ও উপকূলীয় ভূমি এলাকায় সন্নিকটস্থ সমুদ্র তরঙ্গসৃষ্ট লবণ কণা দ্বারা বায়ু দূষণ হয়ে থাকে। বায়ু দূষণের এসব উৎস থেকে প্রচুর পরিমাণে ধোঁয়া, বাষ্প, গ্যাস ও ধুলিকণা উৎপন্ন হয় যা কুয়াশা ও ধোঁয়াচ্ছন্ন পরিবেশ সৃষ্টি করে।

বাংলাদেশের কয়েক প্রকার শিল্পকারখানা যেমন ট্যানারি কারখানাগুলো প্রতিনিয়ত হাইড্রোজেন সালফাইড, অ্যামোনিয়া, ক্লোরিনসহ আরও কয়েক প্রকার গন্ধহীন রাসায়নিক পদার্থ নির্গত করছে যেগুলো একদিকে যেমন বিষাক্ত তেমনি অন্যদিকে স্থানীয় জনগণের বিরক্তি ও পীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এসব দূষক মাথাধরা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা সৃষ্টি করছে। অধিক হারে নগরায়নের কারণে নগরে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে অধিকতর হারে বায়ু দূষণ ঘটছে। বায়ুদূষণের কারণে সর্বাধিক ক্ষতির শিকার হয় শিশুরা। বায়ুতে অতিরিক্ত সীসার উপস্থিতি শিশুদের মানসিক বৃদ্ধিকে ব্যাহত করে। প্রতি বছর ঢাকা মহানগরীর বায়ুতে প্রায় ৫০ টন সিসা নির্গত হচ্ছে।

বায়ুদূষণ প্রতিরোধের প্রথম পদক্ষেপ হলো বায়ুম-লে নির্গমনের আগেই বায়ুদূষক উৎসের নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করা। এক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ, জ্বালানি পরিশোধন, মোটরগাড়ি চালনায় জনসচেতনা প্রভৃতি প্রয়োগ করা যেতে পারে-

যানবাহনের ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ : যানবাহন থেকে নির্গত বায়ুদূষক যেমন কার্বন মনো-অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড প্রধান। সিএনজিচালিত যানে এ দূষণ কম হয়।

কল-কারখানার ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ : এজন্য ধোঁয়া নির্গমন নল ও চিমনি থেকে বস্তুকণা পৃথক করার জন্য ছাকনি বা অন্য কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে।

বিকল্প জ্বালানি প্রয়োগ : জীবাশ্ম জ্বালানির পরিমাণ হ্রাস করে সৌরশক্তি, বায়োগ্যাস ইত্যাদির ব্যবহার বৃদ্ধি করা যায়।

পরিত্যক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: পরিত্যক্ত বর্জ্য না পুড়িয়ে মাটির নিচে পুঁতে ফেলা যায়।

কীটনাশক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ : কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে বিকল্প উপায়ে শস্যের রোগব্যাধি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

পচনযোগ্য দ্রব্য দ্রুত অপসারণ : হাটবাজার, বসতবাড়ি থেকে পচনশীল দ্রব্য দ্রুত অপসারণ করতে হবে। ডাস্টবিনের ময়লা দ্রুত শোধনাগারে পাঠাতে হবে।

অঞ্চল ভাগ : নগরে বসতি, শিল্প-কারখানা পরিকল্পিতভাবে স্থাপন করতে হবে।

বৃক্ষরোপণ : উদ্ভিদ প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে। উদ্ভিদ অক্সিজেন ত্যাগ করে ও কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে ভারসাম্য বজায় রাখে।

বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত একটি বিষয় হচ্ছে বায়ুদূষণ যা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক হারে বেড়েই চলেছে।বায়ুদুষণে দেশের এমন নাকাল অবস্থা হওয়া সত্ত্বেও নেই তেমন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। আর বর্তমান বায়ুদূষণের বিষয়টিতে বিশ্বেও সব শ্রেণি-পেশার মানুষদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সবাই বুঝতে শিখেছে বায়ুদূষণ একটি ভয়াবহ আতঙ্ক। তবুও জনগণের সচেতনতার পর্যায় কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অবধি পৌঁছতে পারেনি। বায়ুদূষণ প্রতিরোধে সরকার, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, অন্যান্য সংস্থা ও জনগণ সমন্বিত উদ্যোগ নিলে সুফল বয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। জাতীয়ভাবে পরিবেশ রক্ষার জন্য আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত, সচেতন হওয়া উচিত। সর্বোপরি, পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধে পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে পরিবেশ অধিদপ্তরকে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

[লেখক : প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি]

back to top