alt

উপ-সম্পাদকীয়

কীভাবে আইন মেনে চলার সংস্কৃতি গড়ে তোলা যায়?

এ জি কায়কোবাদ

: রোববার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলেই গড়ে উঠবে সুশৃঙ্খল সমাজ। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ছাড়া কোনো দেশ বা সমাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতে পারে না। আইনই একটি দেশ ও জাতির স্থিতিশীলতার মূল ভিত্তি। কিন্তু অনেক সময় আমরা দেখি, আইন শুধু বাহিনীর কঠোর নজরদারির মাধ্যমে প্রয়োগ করার চেষ্টা করা হয়, অথচ নাগরিকরা যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে আইন মেনে চলার অভ্যাস গড়ে তুলতেন, তাহলে আইন প্রয়োগের প্রয়োজনই পড়ত না। বাস্তবতা হলো, কেবল কঠোর শাস্তির মাধ্যমে সমাজে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব নয়; বরং সমাজের প্রতিটি স্তরে যদি আইন মানার সংস্কৃতি তৈরি হয়, তবেই প্রকৃত আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব। তাই আইন প্রয়োগ নয়, বরং নাগরিকদের আইন মেনে চলার মানসিকতা তৈরি করাই হওয়া উচিত মূল লক্ষ্য।

আমাদের দেশে আইন ভঙ্গের প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ট্রাফিক আইন ভঙ্গ, কর ফাঁকি, ঘুষ-দুর্নীতি, অপরাধমূলক কর্মকা-, অনিয়মÑ এসবই প্রমাণ করে যে, অনেকেই আইন মানাকে নিজেদের দায়িত্ব মনে করেন না। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিদিন শহরের রাস্তায় দেখা যায়, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করে চালকরা গাড়ি চালান, যেখানে আইন মেনে চললে দুর্ঘটনা কমে যেত। একইভাবে, অনেক ব্যবসায়ী ভোক্তা অধিকার আইন মানেন না, খাদ্যে ভেজাল মেশান, ওজনে কারচুপি করেনÑ যার ফলে জনসাধারণের স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

অন্যদিকে, আমাদের দেশে অনেকেই মনে করেন যে, শাস্তির ভয় না থাকলে আইন মানার প্রয়োজন নেই। ফলে প্রশাসনের নজরদারি একটু শিথিল হলেই মানুষ আইন ভঙ্গ করতে শুরু করে। এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা। একজন সচেতন নাগরিক কখনো প্রশাসনের ভয়ে নয়, বরং নৈতিক দায়বদ্ধতা থেকে আইন মানার অভ্যাস গড়ে তুলবেÑ এটাই হওয়া উচিত সভ্য সমাজের বৈশিষ্ট্য। কেন আইন পালন করা জরুরি? আইন মানার অভ্যাস গড়ে তুললে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রÑ তিন পর্যায়েই ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

ব্যক্তি পর্যায়ে উপকারিতা :

নিরাপত্তা বৃদ্ধি : ট্রাফিক আইন মেনে চললে দুর্ঘটনার হার কমে যাবে, খাদ্য নিরাপত্তা আইন মানলে স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকবে।

নৈতিকতা ও সম্মান : যে ব্যক্তি আইন মেনে চলে, সে সমাজে একজন সুনাগরিক হিসেবে পরিচিত হয় এবং তার প্রতি অন্যদের শ্রদ্ধাবোধ বাড়ে।

মনের প্রশান্তি : আইন ভঙ্গ করা মানেই অপরাধবোধে ভোগা। আইন মেনে চললে মন ও বিবেক স্বচ্ছ থাকে।

সামাজিক পর্যায়ে উপকারিতা :

শৃঙ্খল সমাজ : প্রতিটি নাগরিক যদি আইন মেনে চলে, তাহলে সমাজে বিশৃঙ্খলা, অপরাধ, দুর্নীতি ও অনিয়ম অনেকটাই কমে যাবে।

সামাজিক আস্থা বৃদ্ধি : যখন সবাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়, তখন সমাজে বিশ্বাস ও পারস্পরিক আস্থা বাড়ে, যা একটি সুস্থ সমাজ গঠনে সহায়ক।

ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা : আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে দুর্নীতিমুক্ত ও সমতাভিত্তিক সমাজ গড়ে ওঠে।

রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উপকারিতা :

অর্থনৈতিক উন্নতি : কর ফাঁকি বন্ধ হলে দেশের রাজস্ব বাড়বে, যা উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করা যাবে।

আন্তর্জাতিক মর্যাদা বৃদ্ধি : যে দেশ যত বেশি আইন মানে, সে দেশ তত বেশি উন্নত ও সম্মানিত হয়।

সুশাসন প্রতিষ্ঠা : আইন মানার সংস্কৃতি থাকলে প্রশাসনকে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হয় না, ফলে রাষ্ট্র পরিচালনা আরও সহজ ও কার্যকর হয়।

কীভাবে আইন মেনে চলার সংস্কৃতি গড়ে তোলা যায়?

আইন মানার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হলে সমাজের বিভিন্ন স্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রথমেই পরিবার থেকে শুরু করতে হবে। একজন শিশুর আইন সম্পর্কে প্রথম শিক্ষা পাওয়া উচিত পরিবার থেকে। বাবা-মায়েরা যদি নিজেরা আইন মানার অভ্যাস গড়ে তোলেন এবং সন্তানদেরও আইন মেনে চলার গুরুত্ব বোঝান, তাহলে তারা ছোটবেলা থেকেই এ বিষয়ে সচেতন হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আইন, নৈতিকতা ও নাগরিক দায়িত্ব সম্পর্কে পাঠ্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। ছোটবেলা থেকেই যদি শিক্ষার্থীরা আইন মেনে চলার গুরুত্ব শিখতে পারে, তবে তারা বড় হয়ে আইন মেনে চলার দায়িত্ববোধ গড়ে তুলবে। গণমাধ্যমের উচিত আইনের গুরুত্ব ও তা মানার উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা। টেলিভিশন, সংবাদপত্র, অনলাইন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে যদি আইন মেনে চলার ইতিবাচক দিক তুলে ধরা হয়, তাহলে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা প্রশাসনের অন্যতম দায়িত্ব। তবে প্রশাসনকে শুধু শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দিকে নজর না দিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে। আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি যারা আইন মানছেন, তাদের উৎসাহিত করতে হবে। আইন মেনে চলার অভ্যাস গড়ে তোলা কেবল রাষ্ট্রের দায়িত্ব নয়, বরং প্রতিটি নাগরিকেরও দায়িত্ব। আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সাময়িক শৃঙ্খলা আনা সম্ভব হলেও, দীর্ঘমেয়াদে এটি টেকসই নয়। তাই আমাদের উচিত আইনকে বাধ্যতামূলক কিছু হিসেবে নয়, বরং নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করা। আইন মেনে চললে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রÑ সবারই উপকার হয়।

সুতরাং, আসুন আমরা আইন মেনে চলার অভ্যাস গড়ে তুলি, অন্যদেরও আইন মানতে উৎসাহিত করি এবং একটি উন্নত, সুশৃঙ্খল ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলার জন্য একসঙ্গে কাজ করি। মনে রাখবেনÑ শুধু আইন প্রয়োগ করলেই শৃঙ্খলা আসে না, বরং আইন মানার সংস্কৃতি গড়ে তুললেই প্রকৃত উন্নতি সম্ভব। তাই আসুন, শুধু শাস্তির ভয়ে নয়, বরং নৈতিক দায়বদ্ধতা থেকে আইন মেনে চলার সংস্কৃতি গড়ে তুলি।

[লেখক : কলেজ শিক্ষক]

দক্ষ মানবসম্পদ ও সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার

আফ্রিকায় হঠাৎ কেন যুক্তরাষ্ট্রের ঝোঁক?

ঢাকা মহানগর ও বুড়িগঙ্গা

জামাই মেলা : উৎসব, ঐতিহ্য ও কৃষ্টির রঙিন চিত্রপট

হারিয়ে যাওয়া ক্লাস, কঠোর মূল্যায়ন আর প্রশ্নের জটিলতায় নুয়ে পড়া এক প্রজন্ম

বৈষম্য দূর করে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলুন

চিকিৎসা যেন বাণিজ্যের হাতিয়ারে পরিণত না হয়

পথশিশু ও বাংলাদেশে সামাজিক চুক্তির ব্যর্থতা

মেগা প্রকল্প : প্রশ্ন হওয়া উচিত স্বচ্ছতা নিয়ে

আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি

স্মার্ট দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা : উপগ্রহ চিত্র ও ওয়েবসাইটের অপরিহার্যতা

ক্ষমতা ও জনপ্রশাসন : আমলাতন্ত্রের ছায়াতলে আমজনতা

জনসংখ্যা : সম্পদ না সংকট?

ব্রিকসে নতুন ভূ-রাজনৈতিক ব্যবস্থার উত্থান

রম্যগদ্য : ‘ল্যাংড়া-লুলা, আতুড়-পাতুড়’

আষাঢ়ী পূর্ণিমা : আত্মশুদ্ধির সাধনায় বুদ্ধের অনন্ত আলো

বদলে যাওয়া মাটিতে সাহসী বীজ : জলবায়ুর বিপরীতে বাংলাদেশের কৃষির অভিযোজনগাথা

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থান-গাথা : ‘শিকলে নাহি দিব ধরা’

প্রাচীন যৌধেয় জাতি ও তাদের সাম্যবাদী শাসন

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন

টেকসই উন্নয়নের স্বপ্নপূরণে উপগ্রহ চিত্রই চাবিকাঠি

রাবার শিল্প : সংকট, করণীয় ও উত্তরণের দিশা

রম্যগদ্য : দুধ, দই, কলা...

ছবি

কোপার্নিকাস : আলো হয়ে জন্ম নেওয়া বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবর্তক

জলবায়ু সংকটে মানবসভ্যতা

টেকসই অর্থনীতির জন্য চাই টেকসই ব্যাংকিং

ডিজিটাল দাসত্ব : মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : আস্থা ভঙ্গ ও জবাবদিহিতার সংকট

আসামি এখন নির্বাচন কমিশন

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

tab

উপ-সম্পাদকীয়

কীভাবে আইন মেনে চলার সংস্কৃতি গড়ে তোলা যায়?

এ জি কায়কোবাদ

রোববার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলেই গড়ে উঠবে সুশৃঙ্খল সমাজ। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ছাড়া কোনো দেশ বা সমাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতে পারে না। আইনই একটি দেশ ও জাতির স্থিতিশীলতার মূল ভিত্তি। কিন্তু অনেক সময় আমরা দেখি, আইন শুধু বাহিনীর কঠোর নজরদারির মাধ্যমে প্রয়োগ করার চেষ্টা করা হয়, অথচ নাগরিকরা যদি স্বতঃস্ফূর্তভাবে আইন মেনে চলার অভ্যাস গড়ে তুলতেন, তাহলে আইন প্রয়োগের প্রয়োজনই পড়ত না। বাস্তবতা হলো, কেবল কঠোর শাস্তির মাধ্যমে সমাজে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব নয়; বরং সমাজের প্রতিটি স্তরে যদি আইন মানার সংস্কৃতি তৈরি হয়, তবেই প্রকৃত আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব। তাই আইন প্রয়োগ নয়, বরং নাগরিকদের আইন মেনে চলার মানসিকতা তৈরি করাই হওয়া উচিত মূল লক্ষ্য।

আমাদের দেশে আইন ভঙ্গের প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ট্রাফিক আইন ভঙ্গ, কর ফাঁকি, ঘুষ-দুর্নীতি, অপরাধমূলক কর্মকা-, অনিয়মÑ এসবই প্রমাণ করে যে, অনেকেই আইন মানাকে নিজেদের দায়িত্ব মনে করেন না। উদাহরণস্বরূপ, প্রতিদিন শহরের রাস্তায় দেখা যায়, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করে চালকরা গাড়ি চালান, যেখানে আইন মেনে চললে দুর্ঘটনা কমে যেত। একইভাবে, অনেক ব্যবসায়ী ভোক্তা অধিকার আইন মানেন না, খাদ্যে ভেজাল মেশান, ওজনে কারচুপি করেনÑ যার ফলে জনসাধারণের স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

অন্যদিকে, আমাদের দেশে অনেকেই মনে করেন যে, শাস্তির ভয় না থাকলে আইন মানার প্রয়োজন নেই। ফলে প্রশাসনের নজরদারি একটু শিথিল হলেই মানুষ আইন ভঙ্গ করতে শুরু করে। এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বাস্তবতা। একজন সচেতন নাগরিক কখনো প্রশাসনের ভয়ে নয়, বরং নৈতিক দায়বদ্ধতা থেকে আইন মানার অভ্যাস গড়ে তুলবেÑ এটাই হওয়া উচিত সভ্য সমাজের বৈশিষ্ট্য। কেন আইন পালন করা জরুরি? আইন মানার অভ্যাস গড়ে তুললে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রÑ তিন পর্যায়েই ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।

ব্যক্তি পর্যায়ে উপকারিতা :

নিরাপত্তা বৃদ্ধি : ট্রাফিক আইন মেনে চললে দুর্ঘটনার হার কমে যাবে, খাদ্য নিরাপত্তা আইন মানলে স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকবে।

নৈতিকতা ও সম্মান : যে ব্যক্তি আইন মেনে চলে, সে সমাজে একজন সুনাগরিক হিসেবে পরিচিত হয় এবং তার প্রতি অন্যদের শ্রদ্ধাবোধ বাড়ে।

মনের প্রশান্তি : আইন ভঙ্গ করা মানেই অপরাধবোধে ভোগা। আইন মেনে চললে মন ও বিবেক স্বচ্ছ থাকে।

সামাজিক পর্যায়ে উপকারিতা :

শৃঙ্খল সমাজ : প্রতিটি নাগরিক যদি আইন মেনে চলে, তাহলে সমাজে বিশৃঙ্খলা, অপরাধ, দুর্নীতি ও অনিয়ম অনেকটাই কমে যাবে।

সামাজিক আস্থা বৃদ্ধি : যখন সবাই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়, তখন সমাজে বিশ্বাস ও পারস্পরিক আস্থা বাড়ে, যা একটি সুস্থ সমাজ গঠনে সহায়ক।

ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা : আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে দুর্নীতিমুক্ত ও সমতাভিত্তিক সমাজ গড়ে ওঠে।

রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে উপকারিতা :

অর্থনৈতিক উন্নতি : কর ফাঁকি বন্ধ হলে দেশের রাজস্ব বাড়বে, যা উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করা যাবে।

আন্তর্জাতিক মর্যাদা বৃদ্ধি : যে দেশ যত বেশি আইন মানে, সে দেশ তত বেশি উন্নত ও সম্মানিত হয়।

সুশাসন প্রতিষ্ঠা : আইন মানার সংস্কৃতি থাকলে প্রশাসনকে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হয় না, ফলে রাষ্ট্র পরিচালনা আরও সহজ ও কার্যকর হয়।

কীভাবে আইন মেনে চলার সংস্কৃতি গড়ে তোলা যায়?

আইন মানার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হলে সমাজের বিভিন্ন স্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। প্রথমেই পরিবার থেকে শুরু করতে হবে। একজন শিশুর আইন সম্পর্কে প্রথম শিক্ষা পাওয়া উচিত পরিবার থেকে। বাবা-মায়েরা যদি নিজেরা আইন মানার অভ্যাস গড়ে তোলেন এবং সন্তানদেরও আইন মেনে চলার গুরুত্ব বোঝান, তাহলে তারা ছোটবেলা থেকেই এ বিষয়ে সচেতন হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আইন, নৈতিকতা ও নাগরিক দায়িত্ব সম্পর্কে পাঠ্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি। ছোটবেলা থেকেই যদি শিক্ষার্থীরা আইন মেনে চলার গুরুত্ব শিখতে পারে, তবে তারা বড় হয়ে আইন মেনে চলার দায়িত্ববোধ গড়ে তুলবে। গণমাধ্যমের উচিত আইনের গুরুত্ব ও তা মানার উপকারিতা সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা। টেলিভিশন, সংবাদপত্র, অনলাইন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে যদি আইন মেনে চলার ইতিবাচক দিক তুলে ধরা হয়, তাহলে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা প্রশাসনের অন্যতম দায়িত্ব। তবে প্রশাসনকে শুধু শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দিকে নজর না দিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে। আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি যারা আইন মানছেন, তাদের উৎসাহিত করতে হবে। আইন মেনে চলার অভ্যাস গড়ে তোলা কেবল রাষ্ট্রের দায়িত্ব নয়, বরং প্রতিটি নাগরিকেরও দায়িত্ব। আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সাময়িক শৃঙ্খলা আনা সম্ভব হলেও, দীর্ঘমেয়াদে এটি টেকসই নয়। তাই আমাদের উচিত আইনকে বাধ্যতামূলক কিছু হিসেবে নয়, বরং নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করা। আইন মেনে চললে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রÑ সবারই উপকার হয়।

সুতরাং, আসুন আমরা আইন মেনে চলার অভ্যাস গড়ে তুলি, অন্যদেরও আইন মানতে উৎসাহিত করি এবং একটি উন্নত, সুশৃঙ্খল ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলার জন্য একসঙ্গে কাজ করি। মনে রাখবেনÑ শুধু আইন প্রয়োগ করলেই শৃঙ্খলা আসে না, বরং আইন মানার সংস্কৃতি গড়ে তুললেই প্রকৃত উন্নতি সম্ভব। তাই আসুন, শুধু শাস্তির ভয়ে নয়, বরং নৈতিক দায়বদ্ধতা থেকে আইন মেনে চলার সংস্কৃতি গড়ে তুলি।

[লেখক : কলেজ শিক্ষক]

back to top