alt

উপ-সম্পাদকীয়

আজি নূতন রতনে ভূষণে যতনে...

আনোয়ারুল হক

: শনিবার, ২৯ মার্চ ২০২৫

জুলাই ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের দিনগুলোতে আমাদের ছাত্র তরুণদের কন্ঠে প্রায়শই শোনা যেতো ডিএল রায়ের গান ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি...’। ছাত্র নেতারাও তাদের সাথে কন্ঠ মেলাতেন। বিজয়ী গন অভ্যুত্থানের পরে ছাত্র নেতারা সরকারের এবং বৃহৎ ধনীক গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতায় নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার পরে দিজেন্দ্রলালের অন্যান্য গানের লিরিক্সও তাদের দৃষ্টি এড়ায়নি। নতুন দলের উত্তরাঞ্চলের সিপাহশালার সার্জিস আলমের পছন্দ হয়েছে ‘আজি নূতন রতনে ভূষণে যতনে...সাজিয়ে দাও’ গানটি। হ্যাঁ, তিনি সেজে উঠেছেন, নূতন রতনে, নূতন ভূষণে, অতিশয় যতনে!

‘আজি নতুন ছন্দে লিখব জীবন’- এ প্রত্যয়ে শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে তিনি নির্বাচনী প্রচারে গিয়েছেন দাদার বাড়ি পঞ্চগড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত বছরে তার একটি বক্তব্য ভাইরাল হয় যেখানে তিনি বলেন, ‘আমার আসলে এই মুহূর্তে কোনো টাকা নেই। ধার করে চলতেছি। এইটাই হচ্ছে রিয়েলিটি। আমার পকেটে মানিব্যাগও নেই।’ মানিব্যাগহীন সারজিস আলম বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে দীর্ঘকাল ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সহচরদের একজন হয়ে থেকে, খুব ভালো করেই জেনে গেছেন আলাদিনের চেরাগ হাতে থাকলে পকেটে মানিব্যাগ লাগে না! সেই আলাদিনের চেরাগ যে রাষ্ট ক্ষমতা তা দেশের মানুষেরও বুঝতে বাকি নেই।

গাড়ি বহরের শোডাউনকে কেন্দ্র করে সমালোচনার ঝড় উঠলে, সারজিস আলম বলে ওঠেন, কিসের দৈন্য, কিসের লজ্জা, কিসের ক্লেশ? তার দাদা আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন, নাতি একদিন নেতা হবে, নির্বাচনে দাঁড়াবে। আর এই দেশে নির্বাচনে দাঁড়ানো মানেই শতকোটি টাকা বিনিয়োগের প্রশ্ন। বিনিয়োগ সফল হলে হাজার কোটি মানি ব্যাক। তাই সকল ব্যাবস্থা দাদা করে রেখেছেন। তিনি এখানেই থামলে ভালো করতেন। তা না করে নির্বাচনী ডামাডোলে আর কি কি করতে হবে তা ব্যাখ্যা করে একদিকে নতুন দলের চেহারা অন্যদিকে তাদের প্রতি জনসমর্থনের অবস্থা জাতির সামনে তুলে ধরেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘নতুন বন্দোবস্ত বলতে আমরা যেটা কল্পনা করি, সেটা ছয় মাসের মধ্যে এপ্লাই করলে কোনো আসনে জেতা দূরের কথা অলমোস্ট ৯৫+% ক্ষেত্রে আমাদের জামানত হারানোর সম্ভাবনা থাকবে। মাঠের রাজনীতিতে টিকে থাকার জন্য পূর্বের বন্দোবস্তগুলো চাইলেই এখনই ছুঁড়ে ফেলা সম্ভব নয়। নতুন বন্দোবস্ত এপ্লাই করে দীর্ঘ মেয়াদে অপ্রাসঙ্গিক হওয়ার চেয়ে সাময়িকভাবে নতুন পুরনো মিশেলে এগিয়ে যাওয়াই ভালো। যতদিন না আমজনতা তাদের চিন্তাভাবনার পরিবর্তন করছে ততদিন আপনি সরাসরি নতুন চিন্তাগুলোকে বাস্তবায়ন করতে গেলে সময়ের সাথে সাথে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বেন।’

কী বুঝলেন? আছে কি পুরোনে ধাঁচের পরিবর্তনের কোন লক্ষণ! তাদের দল গঠন-পূর্বাপর রাজনীতি দেখে মনে হচ্ছে, মুখে নতুন বন্দোবস্তের কথা বললেও তারা পুরোনো রাজনৈতিক চর্চাই অনুশীলন করছেন। আর ২০২৪-এর গণজাগরণের মূল্যবোধে অর্থাৎ পেশী শক্তির প্রদর্শন আর টাকার খেলার বাইরে থেকে সৎ ও নিরীহভাবে ভোট করলে কোন আসনে জয়ী হওয়া তো দূরের কথা নতুন দলের ৯৫%+

আসনেই জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার সম্ভাবনাই যদি থাকে তবে তাদের মুখে কি এত বড় বড় কথা কিসের? এসব কথা শুনে মনে হয়, এবারের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ছাত্রছাত্রীরা যে নতুন দিনের মশাল প্রজ্বালন করেছিলেন, ক্লাস রুমে ফিরে যেতেই কি তা নিভে গেল? ঘটনা তো শুধু পঞ্চগড় থেকে নয়, শুরু আরো অনেক আগে থেকেই। এই তো মাস দুই আগে তৎকালীন সমন্বয়ক এখন নতুন দলের নেতা আব্দুল হান্নান মাসুদের হাতিয়া গমন উপলক্ষে ৮৩টি তোরণ নির্মিত হয়েছিল এবং সারজিস আলমের ন্যায় একই কায়দায় গাড়ির বহর। তিনি ঢাকা ফিরে আসলে একটি টকশোতে সঞ্চালক তাকে প্রশ্ন করেন এই কি নতুন দিন, নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি?

তিনি উত্তরে বলেন, ঐ দ্বীপে ইতোপূর্বে নাকি কখনো তার মত বড় নেতার জন্ম হয়নি। তাই এলাকার মানুষ আবেগ ও ভালোবাসা থেকে এসব আয়োজন করেছেন। অবশ্য দু’মাস না যেতেই পরবর্তী সফরে গোটা দেশবাসী ভালোবাসার দুখঃজনক ও নিন্দনীয় নমুনা প্রত্যক্ষ করলো; কিন্তু এরচেয়ে দুঃখজনক বিষয় ঐ টকশোতে সঞ্চালকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলছেন, তার এখন একটি গাড়ি দরকার। কেউ যদি তাকে একটি গাড়ি দেয় তিনি সানন্দে তা গ্রহণ করবেন।

আমি আমার কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এই জীবনে বহু ছাত্র নেতার অধঃপতন দেখেছি, শুনেছি; কিন্তু অনএয়ারে নিজের জন্য গাড়ি উপহার চাওয়ার মতো নির্লজ্জ উদাহরণ জানা নেই। প্রধান উপদেষ্টা তার নিয়োগ কর্তাদের এসব বক্তব্য শুনে কি বলবেন, বড় জানতে ইচ্ছে করে! আর এক নেতা তো ‘৫৬ ইঞ্চি’ বুকের ছাতি ফুলিয়ে প্রকাশ্যে বলছেন কিসের দেশ, কিসের সংবিধান, কিসের ভোট, আগে সেনানিবাস দখল তারপর সেকেন্ড রিপাবলিকের রাজত্ব! তার আগে ‘এবিসিডি’ পার্টির এক নেতাও একই বক্তব্য দিয়েছিলেন। এসব কিসের লক্ষণ? শুধুই কি নৈরাজ্য সৃষ্টি করে নির্বাচনকে ঝুলিয়ে রাখার প্রচেষ্টা? আমরা হাসিনার স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদী প্রবণতার শিকার হয়েছি। এবার কি আরো উগ্র ফ্যাসিবাদ দেখতে হবে? অন্তর্বর্তী সরকার এবং এবারের গণসংগ্রামের সব স্টেকহোল্ডাররা যদি এখনই যথাযথ ভূমিকা না রাখেন তবে অচিরেই ‘নূতন রতনে ভূষণে’ এক নব্য ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।

[লেখক : সাবেক ছাত্রনেতা]

জনসংখ্যা : সম্পদ না সংকট?

ব্রিকসে নতুন ভূ-রাজনৈতিক ব্যবস্থার উত্থান

রম্যগদ্য : ‘ল্যাংড়া-লুলা, আতুড়-পাতুড়’

আষাঢ়ী পূর্ণিমা : আত্মশুদ্ধির সাধনায় বুদ্ধের অনন্ত আলো

বদলে যাওয়া মাটিতে সাহসী বীজ : জলবায়ুর বিপরীতে বাংলাদেশের কৃষির অভিযোজনগাথা

ছবি

জুলাই অভ্যুত্থান-গাথা : ‘শিকলে নাহি দিব ধরা’

প্রাচীন যৌধেয় জাতি ও তাদের সাম্যবাদী শাসন

গণঅভ্যুত্থান-উত্তর ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের স্বপ্ন

টেকসই উন্নয়নের স্বপ্নপূরণে উপগ্রহ চিত্রই চাবিকাঠি

রাবার শিল্প : সংকট, করণীয় ও উত্তরণের দিশা

রম্যগদ্য : দুধ, দই, কলা...

ছবি

কোপার্নিকাস : আলো হয়ে জন্ম নেওয়া বৈপ্লবিক মতবাদের প্রবর্তক

জলবায়ু সংকটে মানবসভ্যতা

টেকসই অর্থনীতির জন্য চাই টেকসই ব্যাংকিং

ডিজিটাল দাসত্ব : মনোযোগ অর্থনীতি ও জ্ঞান পুঁজিবাদে তরুণ প্রজন্মের মননশীলতার অবক্ষয়

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : আস্থা ভঙ্গ ও জবাবদিহিতার সংকট

আসামি এখন নির্বাচন কমিশন

কোথায় হারাল একান্নবর্তী পরিবার?

এই শান্তি কি মহাঝড়ের পূর্বলক্ষণ?

মেগাসিটি : দারিদ্র্য যখন ‘অবাঞ্ছিত বর্জ্য’

ফলের রাজ্য পার্বত্য চট্টগ্রাম

ছবি

তৃতীয় শক্তির জন্য জায়গা খালি : বামপন্থীরা কি ঘুরে দাঁড়াতে পারে না

জমি আপনার, দখল অন্যের?

সিধু-কানু : ধ্বংসস্তূপের নিচেও জেগে আছে সাহস

ছবি

বাংলার অনন্য লোকসংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক চেতনা

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সাম্পান

তিন দিক থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি : করোনা, ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া

দেশের অর্থ পাচারের বাস্তবতা

খাদ্য নিরাপত্তার নতুন দিগন্ত

আবারও কি রোহিঙ্গাদের ত্যাগ করবে বিশ্ব?

প্লান্ট ক্লিনিক বদলে দিচ্ছে কৃষির ভবিষ্যৎ

ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী করতে করণীয়

রম্যগদ্য : ‘ডন ডনা ডন ডন...’

ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্ব : কে সন্ত্রাসী, কে শিকার?

সুস্থ ও শক্তিশালী জাতি গঠনে শারীরিক শিক্ষার গুরুত্ব

প্রতিরোধই উত্তম : মাদকমুক্ত প্রজন্ম গড়ার ডাক

tab

উপ-সম্পাদকীয়

আজি নূতন রতনে ভূষণে যতনে...

আনোয়ারুল হক

শনিবার, ২৯ মার্চ ২০২৫

জুলাই ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের দিনগুলোতে আমাদের ছাত্র তরুণদের কন্ঠে প্রায়শই শোনা যেতো ডিএল রায়ের গান ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি...’। ছাত্র নেতারাও তাদের সাথে কন্ঠ মেলাতেন। বিজয়ী গন অভ্যুত্থানের পরে ছাত্র নেতারা সরকারের এবং বৃহৎ ধনীক গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতায় নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার পরে দিজেন্দ্রলালের অন্যান্য গানের লিরিক্সও তাদের দৃষ্টি এড়ায়নি। নতুন দলের উত্তরাঞ্চলের সিপাহশালার সার্জিস আলমের পছন্দ হয়েছে ‘আজি নূতন রতনে ভূষণে যতনে...সাজিয়ে দাও’ গানটি। হ্যাঁ, তিনি সেজে উঠেছেন, নূতন রতনে, নূতন ভূষণে, অতিশয় যতনে!

‘আজি নতুন ছন্দে লিখব জীবন’- এ প্রত্যয়ে শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে তিনি নির্বাচনী প্রচারে গিয়েছেন দাদার বাড়ি পঞ্চগড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গত বছরে তার একটি বক্তব্য ভাইরাল হয় যেখানে তিনি বলেন, ‘আমার আসলে এই মুহূর্তে কোনো টাকা নেই। ধার করে চলতেছি। এইটাই হচ্ছে রিয়েলিটি। আমার পকেটে মানিব্যাগও নেই।’ মানিব্যাগহীন সারজিস আলম বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে দীর্ঘকাল ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সহচরদের একজন হয়ে থেকে, খুব ভালো করেই জেনে গেছেন আলাদিনের চেরাগ হাতে থাকলে পকেটে মানিব্যাগ লাগে না! সেই আলাদিনের চেরাগ যে রাষ্ট ক্ষমতা তা দেশের মানুষেরও বুঝতে বাকি নেই।

গাড়ি বহরের শোডাউনকে কেন্দ্র করে সমালোচনার ঝড় উঠলে, সারজিস আলম বলে ওঠেন, কিসের দৈন্য, কিসের লজ্জা, কিসের ক্লেশ? তার দাদা আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিলেন, নাতি একদিন নেতা হবে, নির্বাচনে দাঁড়াবে। আর এই দেশে নির্বাচনে দাঁড়ানো মানেই শতকোটি টাকা বিনিয়োগের প্রশ্ন। বিনিয়োগ সফল হলে হাজার কোটি মানি ব্যাক। তাই সকল ব্যাবস্থা দাদা করে রেখেছেন। তিনি এখানেই থামলে ভালো করতেন। তা না করে নির্বাচনী ডামাডোলে আর কি কি করতে হবে তা ব্যাখ্যা করে একদিকে নতুন দলের চেহারা অন্যদিকে তাদের প্রতি জনসমর্থনের অবস্থা জাতির সামনে তুলে ধরেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘নতুন বন্দোবস্ত বলতে আমরা যেটা কল্পনা করি, সেটা ছয় মাসের মধ্যে এপ্লাই করলে কোনো আসনে জেতা দূরের কথা অলমোস্ট ৯৫+% ক্ষেত্রে আমাদের জামানত হারানোর সম্ভাবনা থাকবে। মাঠের রাজনীতিতে টিকে থাকার জন্য পূর্বের বন্দোবস্তগুলো চাইলেই এখনই ছুঁড়ে ফেলা সম্ভব নয়। নতুন বন্দোবস্ত এপ্লাই করে দীর্ঘ মেয়াদে অপ্রাসঙ্গিক হওয়ার চেয়ে সাময়িকভাবে নতুন পুরনো মিশেলে এগিয়ে যাওয়াই ভালো। যতদিন না আমজনতা তাদের চিন্তাভাবনার পরিবর্তন করছে ততদিন আপনি সরাসরি নতুন চিন্তাগুলোকে বাস্তবায়ন করতে গেলে সময়ের সাথে সাথে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বেন।’

কী বুঝলেন? আছে কি পুরোনে ধাঁচের পরিবর্তনের কোন লক্ষণ! তাদের দল গঠন-পূর্বাপর রাজনীতি দেখে মনে হচ্ছে, মুখে নতুন বন্দোবস্তের কথা বললেও তারা পুরোনো রাজনৈতিক চর্চাই অনুশীলন করছেন। আর ২০২৪-এর গণজাগরণের মূল্যবোধে অর্থাৎ পেশী শক্তির প্রদর্শন আর টাকার খেলার বাইরে থেকে সৎ ও নিরীহভাবে ভোট করলে কোন আসনে জয়ী হওয়া তো দূরের কথা নতুন দলের ৯৫%+

আসনেই জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার সম্ভাবনাই যদি থাকে তবে তাদের মুখে কি এত বড় বড় কথা কিসের? এসব কথা শুনে মনে হয়, এবারের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ছাত্রছাত্রীরা যে নতুন দিনের মশাল প্রজ্বালন করেছিলেন, ক্লাস রুমে ফিরে যেতেই কি তা নিভে গেল? ঘটনা তো শুধু পঞ্চগড় থেকে নয়, শুরু আরো অনেক আগে থেকেই। এই তো মাস দুই আগে তৎকালীন সমন্বয়ক এখন নতুন দলের নেতা আব্দুল হান্নান মাসুদের হাতিয়া গমন উপলক্ষে ৮৩টি তোরণ নির্মিত হয়েছিল এবং সারজিস আলমের ন্যায় একই কায়দায় গাড়ির বহর। তিনি ঢাকা ফিরে আসলে একটি টকশোতে সঞ্চালক তাকে প্রশ্ন করেন এই কি নতুন দিন, নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতি?

তিনি উত্তরে বলেন, ঐ দ্বীপে ইতোপূর্বে নাকি কখনো তার মত বড় নেতার জন্ম হয়নি। তাই এলাকার মানুষ আবেগ ও ভালোবাসা থেকে এসব আয়োজন করেছেন। অবশ্য দু’মাস না যেতেই পরবর্তী সফরে গোটা দেশবাসী ভালোবাসার দুখঃজনক ও নিন্দনীয় নমুনা প্রত্যক্ষ করলো; কিন্তু এরচেয়ে দুঃখজনক বিষয় ঐ টকশোতে সঞ্চালকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলছেন, তার এখন একটি গাড়ি দরকার। কেউ যদি তাকে একটি গাড়ি দেয় তিনি সানন্দে তা গ্রহণ করবেন।

আমি আমার কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এই জীবনে বহু ছাত্র নেতার অধঃপতন দেখেছি, শুনেছি; কিন্তু অনএয়ারে নিজের জন্য গাড়ি উপহার চাওয়ার মতো নির্লজ্জ উদাহরণ জানা নেই। প্রধান উপদেষ্টা তার নিয়োগ কর্তাদের এসব বক্তব্য শুনে কি বলবেন, বড় জানতে ইচ্ছে করে! আর এক নেতা তো ‘৫৬ ইঞ্চি’ বুকের ছাতি ফুলিয়ে প্রকাশ্যে বলছেন কিসের দেশ, কিসের সংবিধান, কিসের ভোট, আগে সেনানিবাস দখল তারপর সেকেন্ড রিপাবলিকের রাজত্ব! তার আগে ‘এবিসিডি’ পার্টির এক নেতাও একই বক্তব্য দিয়েছিলেন। এসব কিসের লক্ষণ? শুধুই কি নৈরাজ্য সৃষ্টি করে নির্বাচনকে ঝুলিয়ে রাখার প্রচেষ্টা? আমরা হাসিনার স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদী প্রবণতার শিকার হয়েছি। এবার কি আরো উগ্র ফ্যাসিবাদ দেখতে হবে? অন্তর্বর্তী সরকার এবং এবারের গণসংগ্রামের সব স্টেকহোল্ডাররা যদি এখনই যথাযথ ভূমিকা না রাখেন তবে অচিরেই ‘নূতন রতনে ভূষণে’ এক নব্য ফ্যাসিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।

[লেখক : সাবেক ছাত্রনেতা]

back to top