alt

উপ-সম্পাদকীয়

ফৌজদারি মামলায় অপরাধের আলামত উদ্ধারে আইন মানতে বাধা কোথায়?

সিরাজ প্রামাণিক

: শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫

অপরাধ করেও দোষী ব্যক্তিরা খালাস পেয়ে যাচ্ছে-এরকম অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। খালাস কিংবা অব্যাহতি প্রাপ্তির প্রধান কারণসমূহ নিয়ে আজকের নিবন্ধ। ফৌজদারি কার্যবিধির ভাষ্যমতে, অপরাধের আলামত উদ্ধারে যে কোন ধরনের তল্লাশিতে অবশ্যই প্রত্যক্ষদর্শী নিরপেক্ষ সাক্ষী থাকতে হবে। তল্লাশি কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে দেখা উচিত নয়, বরং সাক্ষীদেরকে অবশ্যই উক্ত বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত পুরো তল্লাশির প্রত্যক্ষদর্শী হতে হবে এবং প্রতিটি জিনিস কোথায় পাওয়া গেছে তা স্পষ্টভাবে দেখতে সক্ষম হতে হবে। (৪৭ ডিএলআর ৬০৩)

ফৌজদারি কার্যবিধির সপ্তম অধ্যায়ের অধীনে তল্লাশি বিষয়ে ১০৩ ধারা বলছে, তল্লাশকারী কর্মকর্তা কমপক্ষে দুজন সামাজিক মর্যাদাসম্পন্ন বাসিন্দার উপস্থিতিতে তল্লাশির জায়গা হতে জব্দকৃত সমস্ত কিছুর তালিকা তৈরি করবেন। এই ধারা তৈরির উদ্দেশ্যে হলো তল্লাশকারী কর্মকর্তার সুষ্ঠু কর্মকা- নিশ্চিত করা এবং তল্লাশির বিষয়ে আদালতে দেয়া সাক্ষ্য যেন শুধু তল্লাশকারী কর্মকর্তার ওপর নির্ভরশীল না হয়। বরং স্থানীয় নিরপেক্ষ সাক্ষীদের সাক্ষ্যের ওপর নির্ভর করার মাধ্যমে তল্লাশির ক্ষেত্রে মিথ্যা জড়িত হওয়ার সমস্ত সম্ভাবনা কমানোই এর উদ্দেশ্যে।

আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে, কোনও জিনিস তল্লাশি ও জব্দ করার সময় হয়রানি, গল্প বানানো এবং হেরফের যেন না ঘটে। জনগণের আস্থা ও সুরক্ষাবোধ নিশ্চিত করার জন্যও এই বিধান। কোনো সাধারণ সাক্ষী এই অভিযান প্রত্যক্ষ না করলে বা জিনিস উদ্ধারে প্রত্যক্ষদর্শী না থাকলে আইনি বিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হবে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তথাকথিত উদ্ধারের বিষয়টি ব্যবহার করা যাবে না। রাবেয়া খাতুন বনাম রাষ্ট্র মামলা, ২৬ বিএলডি ৪৭৩ পৃষ্ঠা)।

আইন আরও বলছে, জব্দ তালিকায় সাক্ষীদের স্বাক্ষর থাকতে হবে। স্বাক্ষর প্রমাণ হলেই তল্লাশি ও জব্দকরণ সঠিক বলে ধরে নেয়া হবে। তল্লাশির ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক বিধান মানা না হলে তল্লাশি এবং জব্দকরন পুরোপুরি বেআইনি হবে। ফৌজদারী কার্যবিধির ১০৩ ধারা এবং পুলিশ রেগুলেশন ১৯৪৩ এর ২৮০ প্রবিধান এমনটিই বলছে।

মনে রাখবেন সাক্ষীদের জেরার উদ্দেশ্য হচ্ছে জবানবন্দিতে দেয়া বক্তব্য বদলে দিয়ে মামলার আকাক্সিক্ষত তথ্য বের করে আনা এবং সাক্ষীর বিশ^াসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা। জেরার আরেকটি উদ্দেশ্যে হলো প্রতিপক্ষের মামলা দুর্বল ও নিয়ন্ত্রিত বা নষ্ট করা এবং নিজ পক্ষের মামলা প্রতিষ্ঠা করা। এই চর্চাকে আইনবিদরা সত্য উদ্ঘাটনের অন্যতম প্রধান ও সবচেয়ে কার্যকর পরীক্ষা হিসেবে যথার্থ বর্ণনা করেছেন।

একটি কেইস স্টাডি থেকে জানা যায়, গোপন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পিডব্লিউ-১ এবং তার দপ্তরের আরও কয়েকজন কর্মচারী আসামি ধারার জন্য ঝটিকা অভিযান চালায় এবং রাত ৮ ঘটিকায় আসামির দোকান তল্লাশি করেন। ফলে তল্লাশিটি ছিল পূর্বনির্ধারিত ও পূর্বপরিকল্পিত। কিন্তু এই তল্লাশি স্থানীয় দুইজন সম্মানি ব্যক্তির উপস্থিতিতে করা হয়নি, এমনকি প্রতিবেশী দোকানদারদের উপস্থিতিতেও নয়। কোনও ব্যাখ্যা ছাড়াই জব্দ তালিকার একজন সাক্ষীকে ডাকা হয়নি। আরেকজন সাক্ষী পিডব্লিউ-২ তার উপস্থিতিতে তল্লাশি, উদ্ধার এবং জব্দকরণের বিষয়টি সমর্থন করেননি। ফলে এটি স্পষ্ট যে, ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৩ ধারার বাধ্যতামূলক বিধান প্রতিপালন করে তল্লাশির যথেষ্ট সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সে অনুযায়ী তল্লাশি করা হয়নি। [ আ. ওহাব ওরফে আব্দুল ওয়াহাব বনাম রাষ্ট্র, ৬০ ডিএল আর(২০০৮) ৪৮]।

কাজেই নিয়ম লঙ্ঘন করে ক্রিমিনাল কেসে যা করা হয় বা হচ্ছে বা ভবিষ্যতে করা হবে তাতে মানুষ অপরাধ করেও সহজে পার পেয়ে যাবে।

[ লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিমকোর্ট ]

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়

প্রযুক্তির ফাঁদে শৈশব : স্ক্রিন টাইম গিলে খাচ্ছে খেলার মাঠ

রমগদ্য : সিরাজগঞ্জে ‘ব্রিটিশ প্রেতাত্মা’

বামপন্থা : নীতির সঙ্গে নেতৃত্বের ভূমিকা

দাবি আদায়ে জনদুর্ভোগ : জনশিক্ষা ও সুশাসনের পথ

ইমাম রইস উদ্দিন হত্যাকাণ্ড : সুবিচার নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব

কারাগার, সংশোধনাগার ও ভবঘুরে কেন্দ্রগুলোর সংস্কার কি হবে

জ্বালানির বদল, জীবিকার ঝুঁকি

প্রসঙ্গ : রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও চট্টগ্রামে এস্কর্ট ডিউটি

দেশটা কারো বাপের নয়!

বুদ্ধের বাণীতে বিশ্বশান্তির প্রার্থনা

আর কত ধর্ষণের খবর শুনতে হবে?

সংস্কারের স্বপ্ন বনাম বাস্তবতার রাজনীতি

মধুমাসের স্মৃতি ও দেশীয় ফলের রসাল সমারোহ

মুর্শিদাবাদে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

লিঙ্গের রাজনীতি বা বিবাদ নয়, চাই মানবিকতার নিবিড় বন্ধন

বাজেট : বাস্তবতা, চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পারমাণবিক আলোচনার স্থবিরতা

রম্যগদ্য: “বাঙালি আমরা, নহি তো মেষ...”

সর্বজনীন শিক্ষার বলয়ের বাইরে আদিবাসীরা : অন্তর্ভুক্তির লড়াইয়ে বৈষম্যের দেয়াল

শোনার গান, দেখার টান : অনুভূতির ভোঁতা সময়

ছবি

ছিন্নপত্রে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও রবীন্দ্র চেতনা

ভেতরের অদৃশ্য অপরাধ : সমাজের বিপন্ন মানসিকতা

দারিদ্র্য ও বৈষম্য নিরসনে খাসজমি ও জলার গুরুত্ব

অবহেলিত কৃষক ও বাজার ব্যবস্থার বৈষম্য

রাক্ষুসে মাছের দাপটে বিপন্ন দেশীয় মাছ : করণীয় কী?

বজ্রপাতের আতঙ্কে জনজীবন

তাহলে কি ঘৃণায় ছেয়ে যাবে দেশ, মানবজমিন রইবে পতিত

কর্পোরেট ও ব্যক্তিগত সামাজিক দায়বদ্ধতা

‘রাখাইন করিডর’ : একটি ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

ভিন্নমতের ভয়, নির্বাচনের দোলাচল ও অন্তর্বর্তী সরকারের কৌশলী অবস্থান

সমুদ্রসম্পদ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

কৃষি শিক্ষা হোক উদ্যোক্তা গড়ার মাধ্যম

রঙ্গব্যঙ্গ : কোটের কেবল রং বদলায়

মে দিবসের চেতনা বনাম বাস্তবতা

শ্রম আইন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় চাই আন্তরিকতা

tab

উপ-সম্পাদকীয়

ফৌজদারি মামলায় অপরাধের আলামত উদ্ধারে আইন মানতে বাধা কোথায়?

সিরাজ প্রামাণিক

শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫

অপরাধ করেও দোষী ব্যক্তিরা খালাস পেয়ে যাচ্ছে-এরকম অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। খালাস কিংবা অব্যাহতি প্রাপ্তির প্রধান কারণসমূহ নিয়ে আজকের নিবন্ধ। ফৌজদারি কার্যবিধির ভাষ্যমতে, অপরাধের আলামত উদ্ধারে যে কোন ধরনের তল্লাশিতে অবশ্যই প্রত্যক্ষদর্শী নিরপেক্ষ সাক্ষী থাকতে হবে। তল্লাশি কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে দেখা উচিত নয়, বরং সাক্ষীদেরকে অবশ্যই উক্ত বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত পুরো তল্লাশির প্রত্যক্ষদর্শী হতে হবে এবং প্রতিটি জিনিস কোথায় পাওয়া গেছে তা স্পষ্টভাবে দেখতে সক্ষম হতে হবে। (৪৭ ডিএলআর ৬০৩)

ফৌজদারি কার্যবিধির সপ্তম অধ্যায়ের অধীনে তল্লাশি বিষয়ে ১০৩ ধারা বলছে, তল্লাশকারী কর্মকর্তা কমপক্ষে দুজন সামাজিক মর্যাদাসম্পন্ন বাসিন্দার উপস্থিতিতে তল্লাশির জায়গা হতে জব্দকৃত সমস্ত কিছুর তালিকা তৈরি করবেন। এই ধারা তৈরির উদ্দেশ্যে হলো তল্লাশকারী কর্মকর্তার সুষ্ঠু কর্মকা- নিশ্চিত করা এবং তল্লাশির বিষয়ে আদালতে দেয়া সাক্ষ্য যেন শুধু তল্লাশকারী কর্মকর্তার ওপর নির্ভরশীল না হয়। বরং স্থানীয় নিরপেক্ষ সাক্ষীদের সাক্ষ্যের ওপর নির্ভর করার মাধ্যমে তল্লাশির ক্ষেত্রে মিথ্যা জড়িত হওয়ার সমস্ত সম্ভাবনা কমানোই এর উদ্দেশ্যে।

আরেকটি উদ্দেশ্য হচ্ছে, কোনও জিনিস তল্লাশি ও জব্দ করার সময় হয়রানি, গল্প বানানো এবং হেরফের যেন না ঘটে। জনগণের আস্থা ও সুরক্ষাবোধ নিশ্চিত করার জন্যও এই বিধান। কোনো সাধারণ সাক্ষী এই অভিযান প্রত্যক্ষ না করলে বা জিনিস উদ্ধারে প্রত্যক্ষদর্শী না থাকলে আইনি বিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হবে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তথাকথিত উদ্ধারের বিষয়টি ব্যবহার করা যাবে না। রাবেয়া খাতুন বনাম রাষ্ট্র মামলা, ২৬ বিএলডি ৪৭৩ পৃষ্ঠা)।

আইন আরও বলছে, জব্দ তালিকায় সাক্ষীদের স্বাক্ষর থাকতে হবে। স্বাক্ষর প্রমাণ হলেই তল্লাশি ও জব্দকরণ সঠিক বলে ধরে নেয়া হবে। তল্লাশির ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক বিধান মানা না হলে তল্লাশি এবং জব্দকরন পুরোপুরি বেআইনি হবে। ফৌজদারী কার্যবিধির ১০৩ ধারা এবং পুলিশ রেগুলেশন ১৯৪৩ এর ২৮০ প্রবিধান এমনটিই বলছে।

মনে রাখবেন সাক্ষীদের জেরার উদ্দেশ্য হচ্ছে জবানবন্দিতে দেয়া বক্তব্য বদলে দিয়ে মামলার আকাক্সিক্ষত তথ্য বের করে আনা এবং সাক্ষীর বিশ^াসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা। জেরার আরেকটি উদ্দেশ্যে হলো প্রতিপক্ষের মামলা দুর্বল ও নিয়ন্ত্রিত বা নষ্ট করা এবং নিজ পক্ষের মামলা প্রতিষ্ঠা করা। এই চর্চাকে আইনবিদরা সত্য উদ্ঘাটনের অন্যতম প্রধান ও সবচেয়ে কার্যকর পরীক্ষা হিসেবে যথার্থ বর্ণনা করেছেন।

একটি কেইস স্টাডি থেকে জানা যায়, গোপন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পিডব্লিউ-১ এবং তার দপ্তরের আরও কয়েকজন কর্মচারী আসামি ধারার জন্য ঝটিকা অভিযান চালায় এবং রাত ৮ ঘটিকায় আসামির দোকান তল্লাশি করেন। ফলে তল্লাশিটি ছিল পূর্বনির্ধারিত ও পূর্বপরিকল্পিত। কিন্তু এই তল্লাশি স্থানীয় দুইজন সম্মানি ব্যক্তির উপস্থিতিতে করা হয়নি, এমনকি প্রতিবেশী দোকানদারদের উপস্থিতিতেও নয়। কোনও ব্যাখ্যা ছাড়াই জব্দ তালিকার একজন সাক্ষীকে ডাকা হয়নি। আরেকজন সাক্ষী পিডব্লিউ-২ তার উপস্থিতিতে তল্লাশি, উদ্ধার এবং জব্দকরণের বিষয়টি সমর্থন করেননি। ফলে এটি স্পষ্ট যে, ফৌজদারি কার্যবিধির ১০৩ ধারার বাধ্যতামূলক বিধান প্রতিপালন করে তল্লাশির যথেষ্ট সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সে অনুযায়ী তল্লাশি করা হয়নি। [ আ. ওহাব ওরফে আব্দুল ওয়াহাব বনাম রাষ্ট্র, ৬০ ডিএল আর(২০০৮) ৪৮]।

কাজেই নিয়ম লঙ্ঘন করে ক্রিমিনাল কেসে যা করা হয় বা হচ্ছে বা ভবিষ্যতে করা হবে তাতে মানুষ অপরাধ করেও সহজে পার পেয়ে যাবে।

[ লেখক : আইনজীবী, সুপ্রিমকোর্ট ]

back to top