ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ
জাতীয় বাজেট হচ্ছে একটি রাষ্ট্রের যাবতীয় কর্মকা-ের আয়-ব্যয়ের একটি বিশদ পরিকল্পনা ও আর্থিক বিবরণী। অনেক সময়ই কাগজের বিবরণী আর বাস্তব বিবরণীর বড় রকমের গরমিল লক্ষ্য করা যায়। এ গরমিলে ভারসাম্য আনার দায়িত্ব সরকারের বিভিন্ন স্টক হোল্ডারদের। সমন্বিত কর্মপ্রচেষ্টায় তা গণমুখী হয়ে উঠতে পারে। অন্যথায় তা জনকল্যাণ না হয়ে জনগণের দুর্ভোগের ইস্যুতে পরিণত হবে। একটি বাজেটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সম্পদের পুনর্বণ্টন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আয় বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা। এ লক্ষ্য পূরণে প্রতি অর্থবছরে বাজেটের আয়তন বাড়ছে।
বরাবরই বাজেটে সরকারের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে রাজস্বের পরিমাণ বাড়ানো। সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক টানাপোড়েন এবং প্রতিযোগিতাও আছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কোনোভাবেই উচ্চাভিলাষী বাজেটের ভাবনায় তাড়িত হওয়ার কোন সুযোগ নেই বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত ফুটে ওঠে। আগামী বাজেটের ধরন, আকার, প্রকার, গুরুত্ব এবং সর্বোপরি বাজেটে কি প্রাধান্য পাবে আর কি পাবে না ইত্যকার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে কার্যক্রম চলমান আছে। সংযোজন, বিয়োজন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন শেষে বাজেট সরকারিভাবে অনুমোদনের জন্য চূড়ান্তভাবে পেশ করা হবে। পেশকৃত বাজেট সরকারি অনুমোদন হওয়ার পর জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে জাতীয় কাজেটে ঘোষণা হয়ে থাকে।
বাজেট ঘোষণা হওয়ার পরপরই শুরু হয় বাজেট নিয়ে আলোচনা সমালোচনা। বাজেট সংশ্লিষ্ট মন্তব্য ও মতামতসমূহ যেমন- ঘাটতি বাজেট কিভাবে মোকাবেলা হবে, উন্নয়ন কর্মসূচি কেন উপেক্ষিত হলো? বাজেট কি উচ্চাভিলাষী অথবা বাজেট কি ধনীর স্বার্থ রক্ষা করছে, বাজেটে গরিবরা কেন উপেক্ষিত। এছাড়া বাজেটের রাজস্ব আয়ের চরিত্র চিত্রায়ন কি হবে- এতদ বিষয়ে রাষ্ট্রের সর্বস্তরের মানুষ চূড়ান্ত বাজেট পাশ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ঝড়ের বেগে মন্তব্য চলতে থাকে। সরকার অর্থবহ সমলোচনা ও বিশ্লেষণকে বিবেচনায় নিয়ে নিরেপক্ষতা ও বস্তুনিষ্ঠতার মাপকাঠিতে রাষ্ট্রীয় সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিতকরণে বাজেটকে চূড়ান্তরূপ দেয়া হয়ে থাকে।
আগামী বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় ভাতার পরিমাণ ও সুবিধাভোগী বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাসহ প্রায় ১০টি ভাতা বাড়ানোর চিন্তাভাবনা রয়েছে সরকারের। বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা বাড়তে পারে। বর্তমানে সারাদেশে ৬০ লাখ বয়স্ক নাগরিককে মাসিক ৬০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হয়। মাসিক ৫৫০ টাকা করে ২৭ লাখ ৭৫ হাজার বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। আর ৩২ লাখ ৩৪ হাজার অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা পান ৮৫০ টাকা করে। হিজড়া, বেদে, চা শ্রমিক ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ভাতা দিচ্ছে সরকার। তাদের ভাতাও বাড়তে পারে। একই সঙ্গে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট (ভিজিডি) কর্মসূচি ও ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির বরাদ্দ বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে পেশকৃত প্রস্তাবের আলোকে যথাযথ ব্যবস্থা গৃহিত হবে। তবে সঠিক তথ্য ও পরিসংখ্যানগত বিভ্রান্তির জন্য অনেক ক্ষেত্রেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় না এবং উদ্দেশ্য ব্যহত হয়। আশাকরা যায় যে, এবারের তালিকা রাজনৈতিক প্রভাব ও চাপমুক্ত হবে।
চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে কৃষি খাতে ভর্তুকি ২১ হাজার কোটি থেকে বাড়িয়ে ২৮ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। আগামী বাজেটেও এ খাতে বাড়তি বরাদ্দ অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। একই সঙ্গে খাদ্য ভর্তুকি বাবদ চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ৮ হাজার ৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মূলত ওএমএস, টিসিবি, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি সারা বছর চলমান রাখার লক্ষ্যে বর্ধিত হারে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আগামী বাজেটে এসব খাতে বাড়তি বরাদ্দ রাখা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সার্বিকভাবে কর্মসংস্থানে ধীরগতি রয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে আগামী বাজেটে কর্মসংস্থান বাড়ানোর বিষয়ে থাকছে বিশেষ নজর। বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের ভাষ্য, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে অর্থনীতিবিদরা ৮ লাখ কোটি টাকার নিচে বাজেট দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন; কিন্তু কর্মসংস্থান বাড়ানোর বিষয়টি মাথায় নিয়ে বাজেটের আকার কিছুটা বড় করা হচ্ছে। কারণ সরকারি ব্যয় বেশি সংকুচিত করে ফেললে কর্মসংস্থান বাড়বে না। একই সঙ্গে সরকার ব্যয় মেটাতে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ কম নেওয়া হবে; যাতে করে উদ্যোক্তাদের অর্থায়নে কোনো সমস্যা না হয়।
আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রণয়নের কাজ চলছে। এটি হবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট। নতুন বাজেটে অগ্রাধিকার পাবে খাদ্য নিরাপত্তা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং আর্থসামাজিক উন্নয়ন। গুরুত্ব পাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর স্বার্থ। এর অংশ হিসেবে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা ও ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রাথমিকভাবে ৮ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ পরিকল্পনার ভিত্তি হিসেবে সরকার ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তথ্য ও পরিসংখ্যানগত এক হিসাব প্রতিবেদন ও বাজেট চাহিদা পেয়েছ। প্রাক্কলিত এই হিসাব বিবরণী ও প্রতিবেদন থেকেই বাজেটের ব্যয় পরিকল্পনা প্রস্তুত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে গত আড়াই বছরেরও বেশি সময় দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। তবে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৭২ শতাংশ। গত জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে উঠেছিল। আগামী অর্থবছর (২০২৫-২৬) শেষে গড় মূল্যস্ফীতি সাড়ে ছয় শতাংশ নামিয়ে আনতে চায় সরকার। তাই সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারি ব্যয়ে সাশ্রয়ী পদক্ষেপ অব্যাহত রাখা হবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় কোনো ধরনের প্রকল্প নেওয়া হবে না। বাজেট তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এমন আলোচনা হয়েছে যে, খুব প্রয়োজন না পড়লে টাকা ছাপিয়ে ঋণ দেওয়া বন্ধ রাখা হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে শুল্ক-কর হ্রাস অব্যাহত রাখা হবে। একই সঙ্গে পণ্য সরবরাহ চেইনের সব স্তরের প্রতিবন্ধকতা দূর করা হবে। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রোধে প্রতিযোগিতা কমিশনকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আরও কী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, তা নির্ধারণে অর্থ বিভাগের সামষ্টিক অর্থনীতি অনুবিভাগ গবেষণা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গবেষণায় পওয়া ফলাফলের ভিত্তিতে কিছু উদ্যোগ আগামী বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে বাজেট ও জীবনযাত্রার সম্পর্ক অতি নিবিড় এবং বাস্তব। একটি পরিবার কিভাবে তাদের দৈনন্দিন জীবনকে নির্বাহ করবে তা নির্ভর করে তাদের আয়, চাহিদা এবং দ্রব্যমূল্যের ওপর। প্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের মূল্য যখন সহনীয় পর্যায়ে এবং সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে তখন তাদের জীবন কাটে স্বস্তিতে। অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যখন সাধারণ মানুষের আর্থিক সঙ্গতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে যায় তখন দরিদ্র এবং অতিদরিদ্র পরিবারে চলে অর্ধাহার, অনাহার এবং পারিবারিক অশান্তি। তাই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে একদিকে জনজীবনে নেমে আসে কষ্টের কালো ছায়া।
অন্যদিকে মুনাফাখোরি, কালোবাজারিদের কারণে দেশে বিরাজ করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাজার ও বাজেট বাস্তবায়নের মধ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান জরুরি। অন্যথায় আর্থসামাজিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। বিশ্ব অর্থ ব্যবস্থা যে ইঙ্গিত দিচ্ছে তাতে মনে হয় আগামী বাজেট বাস্তবায়ন খুবই চ্যালেঞ্জমুখী হবে। দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান ও ক্ষুদ্র ব্যবসার উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা ছাড়া মানুষের জীবন মানের কোন পরিবর্তন আসবে না- বরং বেঁচে থাকাই একটি চ্যালেঞ্জের বিষয় হবে। তবে বাজেট যেভাবেই প্রণীত হোক না কেন তাকে গণমুখী করা তথা সমাজের সকল শ্রেণী ও মানুষের স্বার্থে আঘাতহানিকর প্রকল্পসমূহের ব্যয় নির্বাহে আমাদের খুবই সজাগ থাকতে হবে। প্রয়োজনে এ জাতীয় প্রকল্পকে বাদ দিয়ে হলেও সাধারণ স্বার্থের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে বাজেট ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাকে খুবই নজরে আনতে হবে। বিশ্ব মুদ্রাস্ফীতি, মূল্যস্ফীতি, বাজার নিয়ন্ত্রণসহ সকল স্টেকহোল্ডারগণের নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে কার্যকর ব্যবস্থায় অবতীর্ণ হতে হবে।
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব যদি যথাযথ কর্তৃপক্ষ ঠিকমতো বাজার ব্যবস্থাপনার দিকে নজরদারি জারি রাখে। মধ্যস্বত্বভোগীদের মুনাফাখোরি মানসিকতা বদলাতে হবে। তাদের মুনাফাবাজির তৎপরতায় উৎসাহ দেওয়ার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। দাম চড়িয়ে দিলে ভোক্তাদেরও সচেতন হয়ে ভোগের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। উৎপাদন, আমদানি ও বাজারে সরবরাহে সমন্বয় ঘটাতে হবে। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর বিষয়টি আজ নতুন নয়। এতে জনজীবন যে বিপর্যস্ত হয়, কেউ বুঝতে চায় না। অসৎ ব্যবসায়ী, কালোবাজারি ও মুনাফালোভীদের কারণে এসব ঘটে। এজন্য সরকারের সদিচ্ছা ও মনিটরিং ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে সারা বছর। পণ্য বাজারে সরকারের নজরদারি ও সামাজিক সচেতনতা তৈরি করতে হবে। নিয়মিত মনিটর করতে হবে এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত বসাতে হবে। বিগত দিনে এবং এখনো বিভিন্ন ক্ষেত্রে এখন রাজনীতির অপপ্রয়োগ ও বাড়াবাড়ি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমাদের রাজনীতিকরা নিজেদের সুবিধার জন্য রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন। সাধারণ মানুষের কথা তারা ভাবেন বলে মনে হয় না। তারা প্রয়োজনে পুলিশকেও ধমকান। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়েও এ দেশে রাজনীতি হয়। পণ্য ক্রয়ে কেন শুধু ভারত কিংবা নির্দিষ্ট দেশের কথা কেন বেছে নিতে হবে? আরো তো দেশ আছে, তাদের কাছ থেকেও কেনা যায়। তা তো করা হয় না। এজন্য সরকারের মনিটরিং সেল ও ভ্রাম্যমাণ প্রশাসনিক বাহিনী দরকার বলে মনে করি।
বাজেট ও বাজার পরিস্থিতির ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান ছাড়া আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। আশাকরি, নতুন বাজেট ঘোষণা নিত্যপণ্যের উর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরবে। নিত্যপণ্যের উর্ধ্বগতি ও বাজেট ২০২৫-২৬ এর ঘোষণা সাধারণ মানুষের অসহায়ত্ব ও হাহাকার কি বাড়াবে? বাজেটে মধ্যবিত্তের স্বার্থের বিষয় কতটা গুরুত্ব পাবে? আগামী বাজেট দারিদ্র্য বিমোচন নাকি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রধান্য পাবে?-এছাড়া কর্মসংস্থান ও ক্ষুদ্র ব্যবসা কতটা প্রাধান্য পাবে জনগনের মধ্যে এ জাতীয় প্রশ্নবানে জাতীয় বাজেট বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকে। সার্বিক বিবেচনায় বাজেট হবে গণমুখী। তাই বাজেট প্রণয়নের চেয়ে বাজেট বাস্তবায়নকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তাই আসুন, আমরা দেশের সার্বিক উন্নয়নের চেতনাকে সামনে নিয়ে বাজেট প্রণয়নের চেয়ে বাজেট বাস্তবায়নকে বেশি গুরুত্ব দিতে চেষ্টা করি। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের বাজেটে দারিদ্য বিমোচন, ক্ষুদ্র ব্যবসার সম্প্রসারণ, নিত্যপণ্যের মূল্য উর্ধ্বগতি রোধ, বিনিয়োগবান্ধব ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশের প্রতিফলন ঘটুক- এটাই জনগণের প্রত্যাশা।
[লেখক: সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি]
ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ
মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫
জাতীয় বাজেট হচ্ছে একটি রাষ্ট্রের যাবতীয় কর্মকা-ের আয়-ব্যয়ের একটি বিশদ পরিকল্পনা ও আর্থিক বিবরণী। অনেক সময়ই কাগজের বিবরণী আর বাস্তব বিবরণীর বড় রকমের গরমিল লক্ষ্য করা যায়। এ গরমিলে ভারসাম্য আনার দায়িত্ব সরকারের বিভিন্ন স্টক হোল্ডারদের। সমন্বিত কর্মপ্রচেষ্টায় তা গণমুখী হয়ে উঠতে পারে। অন্যথায় তা জনকল্যাণ না হয়ে জনগণের দুর্ভোগের ইস্যুতে পরিণত হবে। একটি বাজেটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সম্পদের পুনর্বণ্টন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আয় বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা। এ লক্ষ্য পূরণে প্রতি অর্থবছরে বাজেটের আয়তন বাড়ছে।
বরাবরই বাজেটে সরকারের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হলো মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতে রাজস্বের পরিমাণ বাড়ানো। সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক টানাপোড়েন এবং প্রতিযোগিতাও আছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে কোনোভাবেই উচ্চাভিলাষী বাজেটের ভাবনায় তাড়িত হওয়ার কোন সুযোগ নেই বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত ফুটে ওঠে। আগামী বাজেটের ধরন, আকার, প্রকার, গুরুত্ব এবং সর্বোপরি বাজেটে কি প্রাধান্য পাবে আর কি পাবে না ইত্যকার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে কার্যক্রম চলমান আছে। সংযোজন, বিয়োজন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন শেষে বাজেট সরকারিভাবে অনুমোদনের জন্য চূড়ান্তভাবে পেশ করা হবে। পেশকৃত বাজেট সরকারি অনুমোদন হওয়ার পর জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে জাতীয় কাজেটে ঘোষণা হয়ে থাকে।
বাজেট ঘোষণা হওয়ার পরপরই শুরু হয় বাজেট নিয়ে আলোচনা সমালোচনা। বাজেট সংশ্লিষ্ট মন্তব্য ও মতামতসমূহ যেমন- ঘাটতি বাজেট কিভাবে মোকাবেলা হবে, উন্নয়ন কর্মসূচি কেন উপেক্ষিত হলো? বাজেট কি উচ্চাভিলাষী অথবা বাজেট কি ধনীর স্বার্থ রক্ষা করছে, বাজেটে গরিবরা কেন উপেক্ষিত। এছাড়া বাজেটের রাজস্ব আয়ের চরিত্র চিত্রায়ন কি হবে- এতদ বিষয়ে রাষ্ট্রের সর্বস্তরের মানুষ চূড়ান্ত বাজেট পাশ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ঝড়ের বেগে মন্তব্য চলতে থাকে। সরকার অর্থবহ সমলোচনা ও বিশ্লেষণকে বিবেচনায় নিয়ে নিরেপক্ষতা ও বস্তুনিষ্ঠতার মাপকাঠিতে রাষ্ট্রীয় সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিতকরণে বাজেটকে চূড়ান্তরূপ দেয়া হয়ে থাকে।
আগামী বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় ভাতার পরিমাণ ও সুবিধাভোগী বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতাসহ প্রায় ১০টি ভাতা বাড়ানোর চিন্তাভাবনা রয়েছে সরকারের। বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা বাড়তে পারে। বর্তমানে সারাদেশে ৬০ লাখ বয়স্ক নাগরিককে মাসিক ৬০০ টাকা করে ভাতা দেওয়া হয়। মাসিক ৫৫০ টাকা করে ২৭ লাখ ৭৫ হাজার বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীকে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। আর ৩২ লাখ ৩৪ হাজার অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা পান ৮৫০ টাকা করে। হিজড়া, বেদে, চা শ্রমিক ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে ভাতা দিচ্ছে সরকার। তাদের ভাতাও বাড়তে পারে। একই সঙ্গে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, ভালনারেবল গ্রুপ ডেভেলপমেন্ট (ভিজিডি) কর্মসূচি ও ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচির বরাদ্দ বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে পেশকৃত প্রস্তাবের আলোকে যথাযথ ব্যবস্থা গৃহিত হবে। তবে সঠিক তথ্য ও পরিসংখ্যানগত বিভ্রান্তির জন্য অনেক ক্ষেত্রেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় না এবং উদ্দেশ্য ব্যহত হয়। আশাকরা যায় যে, এবারের তালিকা রাজনৈতিক প্রভাব ও চাপমুক্ত হবে।
চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে কৃষি খাতে ভর্তুকি ২১ হাজার কোটি থেকে বাড়িয়ে ২৮ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। আগামী বাজেটেও এ খাতে বাড়তি বরাদ্দ অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। একই সঙ্গে খাদ্য ভর্তুকি বাবদ চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ৮ হাজার ৫৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। মূলত ওএমএস, টিসিবি, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি সারা বছর চলমান রাখার লক্ষ্যে বর্ধিত হারে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। আগামী বাজেটে এসব খাতে বাড়তি বরাদ্দ রাখা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সার্বিকভাবে কর্মসংস্থানে ধীরগতি রয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে আগামী বাজেটে কর্মসংস্থান বাড়ানোর বিষয়ে থাকছে বিশেষ নজর। বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের ভাষ্য, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে অর্থনীতিবিদরা ৮ লাখ কোটি টাকার নিচে বাজেট দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন; কিন্তু কর্মসংস্থান বাড়ানোর বিষয়টি মাথায় নিয়ে বাজেটের আকার কিছুটা বড় করা হচ্ছে। কারণ সরকারি ব্যয় বেশি সংকুচিত করে ফেললে কর্মসংস্থান বাড়বে না। একই সঙ্গে সরকার ব্যয় মেটাতে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ কম নেওয়া হবে; যাতে করে উদ্যোক্তাদের অর্থায়নে কোনো সমস্যা না হয়।
আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রণয়নের কাজ চলছে। এটি হবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট। নতুন বাজেটে অগ্রাধিকার পাবে খাদ্য নিরাপত্তা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং আর্থসামাজিক উন্নয়ন। গুরুত্ব পাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর স্বার্থ। এর অংশ হিসেবে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতা ও ভাতার পরিমাণ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রাথমিকভাবে ৮ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ পরিকল্পনার ভিত্তি হিসেবে সরকার ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তথ্য ও পরিসংখ্যানগত এক হিসাব প্রতিবেদন ও বাজেট চাহিদা পেয়েছ। প্রাক্কলিত এই হিসাব বিবরণী ও প্রতিবেদন থেকেই বাজেটের ব্যয় পরিকল্পনা প্রস্তুত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে গত আড়াই বছরেরও বেশি সময় দেশে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে। গত জানুয়ারি মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। তবে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৭২ শতাংশ। গত জুলাই মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ দশমিক ১০ শতাংশে উঠেছিল। আগামী অর্থবছর (২০২৫-২৬) শেষে গড় মূল্যস্ফীতি সাড়ে ছয় শতাংশ নামিয়ে আনতে চায় সরকার। তাই সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় করে সরকারি ব্যয়ে সাশ্রয়ী পদক্ষেপ অব্যাহত রাখা হবে। রাজনৈতিক বিবেচনায় কোনো ধরনের প্রকল্প নেওয়া হবে না। বাজেট তৈরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এমন আলোচনা হয়েছে যে, খুব প্রয়োজন না পড়লে টাকা ছাপিয়ে ঋণ দেওয়া বন্ধ রাখা হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে শুল্ক-কর হ্রাস অব্যাহত রাখা হবে। একই সঙ্গে পণ্য সরবরাহ চেইনের সব স্তরের প্রতিবন্ধকতা দূর করা হবে। অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রোধে প্রতিযোগিতা কমিশনকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আরও কী পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, তা নির্ধারণে অর্থ বিভাগের সামষ্টিক অর্থনীতি অনুবিভাগ গবেষণা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গবেষণায় পওয়া ফলাফলের ভিত্তিতে কিছু উদ্যোগ আগামী বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে বাজেট ও জীবনযাত্রার সম্পর্ক অতি নিবিড় এবং বাস্তব। একটি পরিবার কিভাবে তাদের দৈনন্দিন জীবনকে নির্বাহ করবে তা নির্ভর করে তাদের আয়, চাহিদা এবং দ্রব্যমূল্যের ওপর। প্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের মূল্য যখন সহনীয় পর্যায়ে এবং সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে তখন তাদের জীবন কাটে স্বস্তিতে। অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যখন সাধারণ মানুষের আর্থিক সঙ্গতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়ে যায় তখন দরিদ্র এবং অতিদরিদ্র পরিবারে চলে অর্ধাহার, অনাহার এবং পারিবারিক অশান্তি। তাই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে একদিকে জনজীবনে নেমে আসে কষ্টের কালো ছায়া।
অন্যদিকে মুনাফাখোরি, কালোবাজারিদের কারণে দেশে বিরাজ করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাজার ও বাজেট বাস্তবায়নের মধ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান জরুরি। অন্যথায় আর্থসামাজিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। বিশ্ব অর্থ ব্যবস্থা যে ইঙ্গিত দিচ্ছে তাতে মনে হয় আগামী বাজেট বাস্তবায়ন খুবই চ্যালেঞ্জমুখী হবে। দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান ও ক্ষুদ্র ব্যবসার উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা ছাড়া মানুষের জীবন মানের কোন পরিবর্তন আসবে না- বরং বেঁচে থাকাই একটি চ্যালেঞ্জের বিষয় হবে। তবে বাজেট যেভাবেই প্রণীত হোক না কেন তাকে গণমুখী করা তথা সমাজের সকল শ্রেণী ও মানুষের স্বার্থে আঘাতহানিকর প্রকল্পসমূহের ব্যয় নির্বাহে আমাদের খুবই সজাগ থাকতে হবে। প্রয়োজনে এ জাতীয় প্রকল্পকে বাদ দিয়ে হলেও সাধারণ স্বার্থের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করতে হবে। এক্ষেত্রে বাজেট ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাকে খুবই নজরে আনতে হবে। বিশ্ব মুদ্রাস্ফীতি, মূল্যস্ফীতি, বাজার নিয়ন্ত্রণসহ সকল স্টেকহোল্ডারগণের নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি রোধে কার্যকর ব্যবস্থায় অবতীর্ণ হতে হবে।
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব যদি যথাযথ কর্তৃপক্ষ ঠিকমতো বাজার ব্যবস্থাপনার দিকে নজরদারি জারি রাখে। মধ্যস্বত্বভোগীদের মুনাফাখোরি মানসিকতা বদলাতে হবে। তাদের মুনাফাবাজির তৎপরতায় উৎসাহ দেওয়ার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। দাম চড়িয়ে দিলে ভোক্তাদেরও সচেতন হয়ে ভোগের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। উৎপাদন, আমদানি ও বাজারে সরবরাহে সমন্বয় ঘটাতে হবে। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর বিষয়টি আজ নতুন নয়। এতে জনজীবন যে বিপর্যস্ত হয়, কেউ বুঝতে চায় না। অসৎ ব্যবসায়ী, কালোবাজারি ও মুনাফালোভীদের কারণে এসব ঘটে। এজন্য সরকারের সদিচ্ছা ও মনিটরিং ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে সারা বছর। পণ্য বাজারে সরকারের নজরদারি ও সামাজিক সচেতনতা তৈরি করতে হবে। নিয়মিত মনিটর করতে হবে এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত বসাতে হবে। বিগত দিনে এবং এখনো বিভিন্ন ক্ষেত্রে এখন রাজনীতির অপপ্রয়োগ ও বাড়াবাড়ি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমাদের রাজনীতিকরা নিজেদের সুবিধার জন্য রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন। সাধারণ মানুষের কথা তারা ভাবেন বলে মনে হয় না। তারা প্রয়োজনে পুলিশকেও ধমকান। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য নিয়েও এ দেশে রাজনীতি হয়। পণ্য ক্রয়ে কেন শুধু ভারত কিংবা নির্দিষ্ট দেশের কথা কেন বেছে নিতে হবে? আরো তো দেশ আছে, তাদের কাছ থেকেও কেনা যায়। তা তো করা হয় না। এজন্য সরকারের মনিটরিং সেল ও ভ্রাম্যমাণ প্রশাসনিক বাহিনী দরকার বলে মনে করি।
বাজেট ও বাজার পরিস্থিতির ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান ছাড়া আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। আশাকরি, নতুন বাজেট ঘোষণা নিত্যপণ্যের উর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরবে। নিত্যপণ্যের উর্ধ্বগতি ও বাজেট ২০২৫-২৬ এর ঘোষণা সাধারণ মানুষের অসহায়ত্ব ও হাহাকার কি বাড়াবে? বাজেটে মধ্যবিত্তের স্বার্থের বিষয় কতটা গুরুত্ব পাবে? আগামী বাজেট দারিদ্র্য বিমোচন নাকি অবকাঠামো উন্নয়ন প্রধান্য পাবে?-এছাড়া কর্মসংস্থান ও ক্ষুদ্র ব্যবসা কতটা প্রাধান্য পাবে জনগনের মধ্যে এ জাতীয় প্রশ্নবানে জাতীয় বাজেট বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকে। সার্বিক বিবেচনায় বাজেট হবে গণমুখী। তাই বাজেট প্রণয়নের চেয়ে বাজেট বাস্তবায়নকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তাই আসুন, আমরা দেশের সার্বিক উন্নয়নের চেতনাকে সামনে নিয়ে বাজেট প্রণয়নের চেয়ে বাজেট বাস্তবায়নকে বেশি গুরুত্ব দিতে চেষ্টা করি। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের বাজেটে দারিদ্য বিমোচন, ক্ষুদ্র ব্যবসার সম্প্রসারণ, নিত্যপণ্যের মূল্য উর্ধ্বগতি রোধ, বিনিয়োগবান্ধব ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির অনুকূল পরিবেশের প্রতিফলন ঘটুক- এটাই জনগণের প্রত্যাশা।
[লেখক: সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি]