কামরুজ্জামান
জগতে ভালো কে না থাকতে চায়; কিন্তু ভালো থাকাটা একটা কঠিন কাজ। মানুষকে সামাজিক জীব হিসেবে নানারকমের কাজ করতে হয়। আর এসব কাজ করতে গিয়ে ভালোমন্দ প্রভাব পড়ে। এর প্রভাব মানুষের ব্যক্তিগত জীবনেও এসে পড়ে। ফলে ভালো থাকাটা কঠিন হয়ে পড়ে। তারপরও একজন মানুষ ইচ্ছা করলে ভালো থাকতে পারে।
অনেক টাকা-পয়সা হলেই মানুষ ভালো থাকে না। ক্ষমতা আর প্রতিপত্তি হলেই মানুষ ভালো থাকে না। মানুষকে ভালো থাকতে হলে, ভালো কাজ ও নির্ভেজাল জীবনযাপন করতে হয়।
ভালো কাজ বলতে চাওয়া-পাওয়া ব্যতিরেকে প্রকৃতি ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাওয়াকে বোঝায়। কোনো একটি কাজ করার উদ্দেশ্য যদি হয় বিনিময়ে কোনো কিছু পাওয়ার তবে আশা ভঙ্গ হতে পারে। সেক্ষেত্রে ভালো থাকার সুযোগ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। একটা কথা আছেÑ ‘যার আশা যত বেশি তার কষ্ট তত বেশি।’ তাই মানবকল্যাণে কাজ করতে হলে নীরবে করে যেতে হবে। প্রতিদানে কোনো প্রত্যাশা করা যাবে না।
প্রকৃতির প্রতি সদয় হলেও ভালো থাকা যায়। মানুষের অযাচিত হস্তক্ষেপে প্রাকৃতিক পরিবেশ আজ হুমকির সম্মুখীন। প্রকৃতির সেবার মাধ্যমে মনের তৃপ্তি বা আত্ম সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। এক্ষেত্রে উচিত বেশি বেশি করে গাছ লাগানো।
মানুষের ভালো থাকা ও সুখে থাকা নির্ভর করে ব্যক্তির চাহিদা ও সন্তুষ্টির ওপর। কোনো কোনো মানুষ অল্পতেই খুশি থাকে, ভালো থাকে, সুখে থাকে। তবে জগতে ভালো থাকার মানুষের সংখ্যা খুবই কম।
মানুষের চাহিদা অফুরন্ত। আর এই চাহিদা মিটাতে গিয়ে মানুষ সম্পদের পেছনে দৌড়ায়। ধনী-গরিব সব মানুষের একই অবস্থা। যার যার অবস্থানে কেউ সন্তুষ্ট নয়। আর এই আর্থিক অবস্থানগত অসন্তুষ্ট মানুষকে ভালো থাকতে দেয় না। তারপরও ভালো থাকার চেষ্টা করা উচিত। প্রতিটি মানুষের উচিত নিজের জন্য হলেও ভালো থাকার চেষ্টা করা। আর ভালো থাকার উপায় হচ্ছেÑ
সৎ থাকা : সৎ থাকা ও সৎ জীবনযাপন করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। বর্তমান সময়ে তো আরও কঠিন। সৎ মানুষের অর্থসম্পদ কম থাকে। কিন্তু মানসিক শান্তি থাকে খুব বেশি। যে কোনো সৎ মানুষের মাথা উঁচু থাকে। কন্ঠস্বর থাকে বলিষ্ঠ। সৎ মানুষের শরীর ও মন থাকে ঝরঝরে। তাই ভালো থাকার জন্য সৎ থাকা উচিত। নিজে সৎ থাকলে আশপাশের পরিবেশও আস্তে আস্তে ভালো হয়ে উঠে।
কথা কম বলা : ভালো থাকার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে- কথা কম বলা। কথা বেশি বললে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গ্রাম অঞ্চলে একটা কথা আছেÑ ‘বেশি কথায় হারায় কাঁথা।’ আমাদের দেশের মানুষ বাকপটু। মনে করে বেশি কথা বললেই লোকে ভালো বলবে, জ্ঞানী ভাববে। বিষয়টি আসলে মোটেও ঠিক নয়। বেশি কথা বলা মানুষকে মানুষ অপছন্দ করে। বাঁচাল ভাবে। সুতরাং ভালো থাকতে হলে কথা কম বলা উচিত।
ভেবেচিন্তে কথা বলা : কথা বলার আগে তাড়াহুড়ো না করে সময় নিয়ে কথা বলা উচিত। কথায় আছে, ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না। কথা বলার আগে ভেবেচিন্তে কথা বলা উচিত। তাহলে মন খারাপ হবে না। ভালো থাকা যাবে।
মানুষের সাথে কথা দিয়ে কথা রাখা : কাউকে কথা দিলে ভেবেচিন্তে দেওয়া উচিত। হুটহাট করে, না বুঝে কাউকে কথা দেওয়া উচিত নয়। এতে ব্যক্তির সিদ্ধান্ত ভুল হলে আত্ম সূচনায় ভুগে। মন খারাপ হয়। ভালো থাকা কঠিন হবে পড়ে। মানুষ অনেক সময় আবেগতাড়িত হয়ে নিজের অবস্থান, যোগ্যতা ও সঙ্গতি চিন্তা না করে অন্যজনকে কথা দিয়ে ফেলে। পরে যখন বুঝতে পারে কাজটি ঠিক হয়নি তখন মানসিক অস্থিরতা দেখা দেয়। সিঁকেয় উঠে ভালো থাকা। একটি উদাহরণ দিয়ে বলি- ধরেন, আপনার কাছে একজন লোক এলো সাহায্যের জন্য। আপনি তার কথা শুনে আবেগতাড়িত হয়ে পড়লেন এবং বলে ফেললেন- ঠিক আছে আমি আপনাকে এতো টাকা দিয়ে সাহায্য করবো। আপনি হয়তো পরিমাণটা একটু বেশি বলে ফেলছেন। পরে যখন দেওয়ার সময় হলো তখন বুঝতে পারলেন আপনি ঠিক কাজটি করেননি। অথবা কারো সাথে কোথাও যাবার সময় ঠিক করে ফেললেন। অথচ আপনার মনে নেই ঐ সময়ে আপনার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার কথা। এই জাতীয় কাজগুলো করার আগে ভেবেচিন্তে করা উচিত। তাহলে আর মনের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি হবে না। ভালোও থাকা যাবে।
সামর্থ্যরে মধ্যে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করা : মানুষ পারিবারিক, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক অনেক কাজ থাকে, যেগুলো আর্থিক অনুদানে, স্বেচ্ছাশ্রমে কিংবা মানুষের সাহায্য সহযোগিতায় হয়ে থাকে। আর্থিক সাহায্য কিংবা কায়িক শ্রম দেওয়ার সামর্থ্য থাকলে তবেই দেওয়া উচিত এবং যা দেওয়া হবে তা নিঃস্বার্থভাবে দিলেই মন থেকে ভালো থাকা যায়। লোক দেখানো ভালো কাজ করেও মানুষ স্বার্থ উদ্ধার করে। আবার বিপদেও পড়ে। তাই সত্যিকার অর্থেই ভালো থাকতে হলে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যেতে হবে।
অন্যের কাছে প্রত্যাশা না করা : মানুষ আশা নিয়েই বাঁচে; কিন্তু সেই আশা তার কর্মক্ষমতা ও যোগ্যতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা প্রয়োজন। গ্রামাঞ্চলে একটি কথা আছেÑ ‘নিজের বল বড় বল।’ অর্থাৎ নিজের শক্তি হচ্ছে বড় শক্তি। এই সমাজের মানুষ ‘তেলের মাথায় ঢালে তেল, শুকনো মাথায় ভাঙ্গে বেল।’ সুতরাং নিজের যা আছে তাই নিয়ে চলা উচিত। অন্যের কাছে প্রত্যাশা করা ঠিক নয়। অন্যের কাছে প্রত্যাশা করলে না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সেক্ষেত্রে কষ্ট বাড়ে। ভালো থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।
অন্যকে নিয়ে সমালোচনা না করা : আমাদের দেশের মানুষের সাধারণ একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- অন্যের সমালোচনা করা। নিজেকে নিয়ে যতটা না ভাবে তার চেয়ে অনেক বেশি ভাবে অন্যের যোগ্যতা-অযোগ্যতা কাজ ও চরিত্রকে নিয়ে। এর ফলে যেটা হয় সমালোচনাকারী মানুষটি নিজে যেমন ব্যক্তিত্বহীন হয়ে পড়ে তেমনি অন্যকেও ছোট করে। এতে ভালো থাকার পরিবেশ নষ্ট হয়। তাই ভালো থাকার জন্য অন্যের সমালোচনা নয় আত্মসমালোচনা করা উচিত।
ধর্মীয় ও নৈতিক জীবনযাপন করা : যে মানুষ যেভাবেই চিন্তা করুক না কেন, মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী। ক্ষণস্থায়ী এ জীবনে মানুষ অনেক স্বপ্ন দেখে, অনেক কাজ করে। এসব কাজ করতে গিয়ে পরিসর কখনও কখনও এতো বিস্তৃতি ঘটে যে তখন আর সুখ বলে কিছু থাকে না। সময় থাকে না, থাকে শুধু ব্যস্ততা। শরীর এবং মনকে প্রফুল্ল রাখতে এবং পরকালে জান্নাত লাভ করতে ধর্মীয় আমল ও রীতিনীতি পালন করা প্রয়োজন। এটা ভালো থাকার জন্য সবচেয়ে উত্তম পথ।
ঋণ মুক্ত থাকা : নির্ভেজাল জীবনযাপন করতে হলে অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। ভালো থাকার আশায় মানুষ অনেক সময় টাকা ধার করে ও ঋণ করে। ঋণ করা ও ধারদেনা করা কখনও ভালো কাজ নয়। সেই ব্যক্তি সবচেয়ে নিকৃষ্টতম যিনি ঋণগ্রস্ত। সুতরাং ভালো থাকার জন্য ঋণের ঝামেলায় না যাওয়াই উত্তম।
ভালো থাকতে হলে সবার আগে প্রয়োজন মানসিক স্থিরতা। সৎ উপার্জনের মাধ্যমে জীবন পরিচালনা করা। পরিবার পরিজন, কাছের মানুষ ও আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলা।
এই সমাজ বড় বিচিত্র। ভালো মানুষকেও ভালো থাকতে দেয় না। যারা নিরিবিলি থাকতে চায়, ঝামেলা মুক্ত থাকতে চায়, সৎ জীবনযাপন করতে চায় তারাও সেভাবে থাকতে পারে না। আমাদের সমাজ কাঠামোটা অদ্ভুত এক প্রকোষ্ঠে নিপতিত। এর মাঝেই চাওয়া-পাওয়া কমিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করা উচিত। ভালো থাকার উপায়গুলো মেনে চলা উচিত।
[লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা কলেজ, গাজীপুর]
কামরুজ্জামান
শনিবার, ৩১ মে ২০২৫
জগতে ভালো কে না থাকতে চায়; কিন্তু ভালো থাকাটা একটা কঠিন কাজ। মানুষকে সামাজিক জীব হিসেবে নানারকমের কাজ করতে হয়। আর এসব কাজ করতে গিয়ে ভালোমন্দ প্রভাব পড়ে। এর প্রভাব মানুষের ব্যক্তিগত জীবনেও এসে পড়ে। ফলে ভালো থাকাটা কঠিন হয়ে পড়ে। তারপরও একজন মানুষ ইচ্ছা করলে ভালো থাকতে পারে।
অনেক টাকা-পয়সা হলেই মানুষ ভালো থাকে না। ক্ষমতা আর প্রতিপত্তি হলেই মানুষ ভালো থাকে না। মানুষকে ভালো থাকতে হলে, ভালো কাজ ও নির্ভেজাল জীবনযাপন করতে হয়।
ভালো কাজ বলতে চাওয়া-পাওয়া ব্যতিরেকে প্রকৃতি ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাওয়াকে বোঝায়। কোনো একটি কাজ করার উদ্দেশ্য যদি হয় বিনিময়ে কোনো কিছু পাওয়ার তবে আশা ভঙ্গ হতে পারে। সেক্ষেত্রে ভালো থাকার সুযোগ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। একটা কথা আছেÑ ‘যার আশা যত বেশি তার কষ্ট তত বেশি।’ তাই মানবকল্যাণে কাজ করতে হলে নীরবে করে যেতে হবে। প্রতিদানে কোনো প্রত্যাশা করা যাবে না।
প্রকৃতির প্রতি সদয় হলেও ভালো থাকা যায়। মানুষের অযাচিত হস্তক্ষেপে প্রাকৃতিক পরিবেশ আজ হুমকির সম্মুখীন। প্রকৃতির সেবার মাধ্যমে মনের তৃপ্তি বা আত্ম সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। এক্ষেত্রে উচিত বেশি বেশি করে গাছ লাগানো।
মানুষের ভালো থাকা ও সুখে থাকা নির্ভর করে ব্যক্তির চাহিদা ও সন্তুষ্টির ওপর। কোনো কোনো মানুষ অল্পতেই খুশি থাকে, ভালো থাকে, সুখে থাকে। তবে জগতে ভালো থাকার মানুষের সংখ্যা খুবই কম।
মানুষের চাহিদা অফুরন্ত। আর এই চাহিদা মিটাতে গিয়ে মানুষ সম্পদের পেছনে দৌড়ায়। ধনী-গরিব সব মানুষের একই অবস্থা। যার যার অবস্থানে কেউ সন্তুষ্ট নয়। আর এই আর্থিক অবস্থানগত অসন্তুষ্ট মানুষকে ভালো থাকতে দেয় না। তারপরও ভালো থাকার চেষ্টা করা উচিত। প্রতিটি মানুষের উচিত নিজের জন্য হলেও ভালো থাকার চেষ্টা করা। আর ভালো থাকার উপায় হচ্ছেÑ
সৎ থাকা : সৎ থাকা ও সৎ জীবনযাপন করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। বর্তমান সময়ে তো আরও কঠিন। সৎ মানুষের অর্থসম্পদ কম থাকে। কিন্তু মানসিক শান্তি থাকে খুব বেশি। যে কোনো সৎ মানুষের মাথা উঁচু থাকে। কন্ঠস্বর থাকে বলিষ্ঠ। সৎ মানুষের শরীর ও মন থাকে ঝরঝরে। তাই ভালো থাকার জন্য সৎ থাকা উচিত। নিজে সৎ থাকলে আশপাশের পরিবেশও আস্তে আস্তে ভালো হয়ে উঠে।
কথা কম বলা : ভালো থাকার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে- কথা কম বলা। কথা বেশি বললে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গ্রাম অঞ্চলে একটা কথা আছেÑ ‘বেশি কথায় হারায় কাঁথা।’ আমাদের দেশের মানুষ বাকপটু। মনে করে বেশি কথা বললেই লোকে ভালো বলবে, জ্ঞানী ভাববে। বিষয়টি আসলে মোটেও ঠিক নয়। বেশি কথা বলা মানুষকে মানুষ অপছন্দ করে। বাঁচাল ভাবে। সুতরাং ভালো থাকতে হলে কথা কম বলা উচিত।
ভেবেচিন্তে কথা বলা : কথা বলার আগে তাড়াহুড়ো না করে সময় নিয়ে কথা বলা উচিত। কথায় আছে, ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না। কথা বলার আগে ভেবেচিন্তে কথা বলা উচিত। তাহলে মন খারাপ হবে না। ভালো থাকা যাবে।
মানুষের সাথে কথা দিয়ে কথা রাখা : কাউকে কথা দিলে ভেবেচিন্তে দেওয়া উচিত। হুটহাট করে, না বুঝে কাউকে কথা দেওয়া উচিত নয়। এতে ব্যক্তির সিদ্ধান্ত ভুল হলে আত্ম সূচনায় ভুগে। মন খারাপ হয়। ভালো থাকা কঠিন হবে পড়ে। মানুষ অনেক সময় আবেগতাড়িত হয়ে নিজের অবস্থান, যোগ্যতা ও সঙ্গতি চিন্তা না করে অন্যজনকে কথা দিয়ে ফেলে। পরে যখন বুঝতে পারে কাজটি ঠিক হয়নি তখন মানসিক অস্থিরতা দেখা দেয়। সিঁকেয় উঠে ভালো থাকা। একটি উদাহরণ দিয়ে বলি- ধরেন, আপনার কাছে একজন লোক এলো সাহায্যের জন্য। আপনি তার কথা শুনে আবেগতাড়িত হয়ে পড়লেন এবং বলে ফেললেন- ঠিক আছে আমি আপনাকে এতো টাকা দিয়ে সাহায্য করবো। আপনি হয়তো পরিমাণটা একটু বেশি বলে ফেলছেন। পরে যখন দেওয়ার সময় হলো তখন বুঝতে পারলেন আপনি ঠিক কাজটি করেননি। অথবা কারো সাথে কোথাও যাবার সময় ঠিক করে ফেললেন। অথচ আপনার মনে নেই ঐ সময়ে আপনার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার কথা। এই জাতীয় কাজগুলো করার আগে ভেবেচিন্তে করা উচিত। তাহলে আর মনের মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি হবে না। ভালোও থাকা যাবে।
সামর্থ্যরে মধ্যে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করা : মানুষ পারিবারিক, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক অনেক কাজ থাকে, যেগুলো আর্থিক অনুদানে, স্বেচ্ছাশ্রমে কিংবা মানুষের সাহায্য সহযোগিতায় হয়ে থাকে। আর্থিক সাহায্য কিংবা কায়িক শ্রম দেওয়ার সামর্থ্য থাকলে তবেই দেওয়া উচিত এবং যা দেওয়া হবে তা নিঃস্বার্থভাবে দিলেই মন থেকে ভালো থাকা যায়। লোক দেখানো ভালো কাজ করেও মানুষ স্বার্থ উদ্ধার করে। আবার বিপদেও পড়ে। তাই সত্যিকার অর্থেই ভালো থাকতে হলে নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে যেতে হবে।
অন্যের কাছে প্রত্যাশা না করা : মানুষ আশা নিয়েই বাঁচে; কিন্তু সেই আশা তার কর্মক্ষমতা ও যোগ্যতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা প্রয়োজন। গ্রামাঞ্চলে একটি কথা আছেÑ ‘নিজের বল বড় বল।’ অর্থাৎ নিজের শক্তি হচ্ছে বড় শক্তি। এই সমাজের মানুষ ‘তেলের মাথায় ঢালে তেল, শুকনো মাথায় ভাঙ্গে বেল।’ সুতরাং নিজের যা আছে তাই নিয়ে চলা উচিত। অন্যের কাছে প্রত্যাশা করা ঠিক নয়। অন্যের কাছে প্রত্যাশা করলে না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সেক্ষেত্রে কষ্ট বাড়ে। ভালো থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।
অন্যকে নিয়ে সমালোচনা না করা : আমাদের দেশের মানুষের সাধারণ একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- অন্যের সমালোচনা করা। নিজেকে নিয়ে যতটা না ভাবে তার চেয়ে অনেক বেশি ভাবে অন্যের যোগ্যতা-অযোগ্যতা কাজ ও চরিত্রকে নিয়ে। এর ফলে যেটা হয় সমালোচনাকারী মানুষটি নিজে যেমন ব্যক্তিত্বহীন হয়ে পড়ে তেমনি অন্যকেও ছোট করে। এতে ভালো থাকার পরিবেশ নষ্ট হয়। তাই ভালো থাকার জন্য অন্যের সমালোচনা নয় আত্মসমালোচনা করা উচিত।
ধর্মীয় ও নৈতিক জীবনযাপন করা : যে মানুষ যেভাবেই চিন্তা করুক না কেন, মানুষের জীবন ক্ষণস্থায়ী। ক্ষণস্থায়ী এ জীবনে মানুষ অনেক স্বপ্ন দেখে, অনেক কাজ করে। এসব কাজ করতে গিয়ে পরিসর কখনও কখনও এতো বিস্তৃতি ঘটে যে তখন আর সুখ বলে কিছু থাকে না। সময় থাকে না, থাকে শুধু ব্যস্ততা। শরীর এবং মনকে প্রফুল্ল রাখতে এবং পরকালে জান্নাত লাভ করতে ধর্মীয় আমল ও রীতিনীতি পালন করা প্রয়োজন। এটা ভালো থাকার জন্য সবচেয়ে উত্তম পথ।
ঋণ মুক্ত থাকা : নির্ভেজাল জীবনযাপন করতে হলে অল্পতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। ভালো থাকার আশায় মানুষ অনেক সময় টাকা ধার করে ও ঋণ করে। ঋণ করা ও ধারদেনা করা কখনও ভালো কাজ নয়। সেই ব্যক্তি সবচেয়ে নিকৃষ্টতম যিনি ঋণগ্রস্ত। সুতরাং ভালো থাকার জন্য ঋণের ঝামেলায় না যাওয়াই উত্তম।
ভালো থাকতে হলে সবার আগে প্রয়োজন মানসিক স্থিরতা। সৎ উপার্জনের মাধ্যমে জীবন পরিচালনা করা। পরিবার পরিজন, কাছের মানুষ ও আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলা।
এই সমাজ বড় বিচিত্র। ভালো মানুষকেও ভালো থাকতে দেয় না। যারা নিরিবিলি থাকতে চায়, ঝামেলা মুক্ত থাকতে চায়, সৎ জীবনযাপন করতে চায় তারাও সেভাবে থাকতে পারে না। আমাদের সমাজ কাঠামোটা অদ্ভুত এক প্রকোষ্ঠে নিপতিত। এর মাঝেই চাওয়া-পাওয়া কমিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করা উচিত। ভালো থাকার উপায়গুলো মেনে চলা উচিত।
[লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা কলেজ, গাজীপুর]