ফিরোজ আলী
বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বর্তমান অবস্থা, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই আমাদের দেশের জ্বালানি খাতের প্রেক্ষাপট বুঝতে হবে। বাংলাদেশ একটি দ্রুত উন্নয়নশীল দেশ, যেখানে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে জ্বালানির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই চাহিদা মেটাতে প্রথাগত জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝুঁকছে বাংলাদেশ। টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির মোট উৎপাদন ক্ষমতা ১৫৫০.৫৬ মেগাওয়াট, যার মধ্যে সৌরশক্তি ১২৫৬.৫৭ মেগাওয়াট, বায়ুশক্তি ৬২.৯ মেগাওয়াট, জলবিদ্যুৎ ২৩০ মেগাওয়াট, বায়োগ্যাস থেকে বিদ্যুৎ ০.৬৯ মেগাওয়াট এবং বায়োমাস থেকে বিদ্যুৎ ০.৪ মেগাওয়াট উৎপাদিত হচ্ছে। এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে, সৌরশক্তি বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে প্রধান ভূমিকা পালন করছে, যা মোট উৎপাদনের ৮১% এরও বেশি।
২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ১৬,৪৭৭ মেগাওয়াট। বর্তমানে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ৩১,১৯৪ মেগাওয়াট, যার মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে প্রায় ১১৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় ও গ্রিডে যুক্ত হয়, যা মোট উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় ৩-৪%। বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য উৎসের ব্যবহার বাড়াতে বাংলাদেশ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ৪,১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
বিদ্যুতের চাহিদা মূলত তিন ধরনের হয় : বেজ লোড, ইন্টারমিডিয়েট লোড এবং পিক লোড। বেজ লোড হলো সেই পরিমাণ বিদ্যুতের চাহিদা, যার নিচে চাহিদা কখনো নামে না এবং এটি সব সময় সরবরাহ করতে হয়। পিক লোড হলো দিনের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা, যা সাধারণত মোট চাহিদার প্রায় ১৫%।
বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহে ভারসাম্য বজায় রাখতে সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও আমদানির ওপর নির্ভর করছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের নভেম্বরে ভারতের আদানি পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ আমদানি প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমে যাওয়ায় বাংলাদেশ জ্বালানি তেল-ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে বাধ্য হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে এমন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নবায়নযোগ্য উৎসের ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকারকে সুপরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে।
সৌরশক্তির ব্যাপক ব্যবহারের পেছনে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ যেমন সোলার হোম সিস্টেম, সোলার মিনি গ্রিড এবং নেট মিটারিং পদ্ধতি চালু করা উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ৬ মিলিয়নেরও বেশি সোলার হোম সিস্টেম ইনস্টল করা হয়েছে, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় অফ-গ্রিড সোলার প্রোগ্রাম হিসেবে স্বীকৃত (স্রেডা, ২০২৩)। এছাড়াও, বায়ুশক্তির সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য কক্সবাজার এবং কুয়াকাটায় বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, যদিও এই খাতে এখনও ব্যাপক সম্ভাবনা রয়ে গেছে। বাংলাদেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র কাপ্তাই হাইড্রোপাওয়ার প্ল্যান্ট জাতীয় গ্রিডে ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে, যা দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য শক্তির গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। জলবিদ্যুৎ খাতে বাংলাদেশের সীমিত সম্পদের কারণে এই খাতের উন্নয়ন সীমিত, তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু নদীতে ছোট আকারের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই খাতের উন্নয়ন সম্ভব।
নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির পথে বাংলাদেশের কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। প্রথমত, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা এবং উচ্চ বিনিয়োগ ব্যয় এই খাতের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তি আমদানি নির্ভর হওয়ায় এর ব্যয় তুলনামূলকভাবে বেশি, যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। দ্বিতীয়ত, নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে। তৃতীয়ত, এই খাতে দক্ষ জনবলের অভাব এবং গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগের অভাব নবায়নযোগ্য জ্বালানির টেকসই উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করছে।
তবে, এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত প্রচেষ্টা চলছে। বাংলাদেশ সরকার ২০২১ সালে জাতীয় নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি প্রণয়ন করেছে, যার লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে দেশের মোট জ্বালানি চাহিদার ৪০% নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে মেটানো। এই লক্ষ্য অর্জনে সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিচ্ছে। এছাড়াও, বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের (জিসিএফ) মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে, যা এই খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল। সৌরশক্তির ব্যাপক ব্যবহার, বায়ুশক্তির সম্ভাবনা কাজে লাগানো, বায়োগ্যাস ও বায়োমাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের জ্বালানি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা সম্ভব। এছাড়াও, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম জোরদার করা গেলে এই খাতের উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে।
সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এবং সাধারণ নাগরিকদেরও এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি সবুজ ও টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই লক্ষ্য অর্জনে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন, যাতে বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে একটি রোল মডেল হিসেবে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
[লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ]
ফিরোজ আলী
রোববার, ০১ জুন ২০২৫
বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বর্তমান অবস্থা, চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে গভীরভাবে আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই আমাদের দেশের জ্বালানি খাতের প্রেক্ষাপট বুঝতে হবে। বাংলাদেশ একটি দ্রুত উন্নয়নশীল দেশ, যেখানে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে জ্বালানির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই চাহিদা মেটাতে প্রথাগত জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে ঝুঁকছে বাংলাদেশ। টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানির মোট উৎপাদন ক্ষমতা ১৫৫০.৫৬ মেগাওয়াট, যার মধ্যে সৌরশক্তি ১২৫৬.৫৭ মেগাওয়াট, বায়ুশক্তি ৬২.৯ মেগাওয়াট, জলবিদ্যুৎ ২৩০ মেগাওয়াট, বায়োগ্যাস থেকে বিদ্যুৎ ০.৬৯ মেগাওয়াট এবং বায়োমাস থেকে বিদ্যুৎ ০.৪ মেগাওয়াট উৎপাদিত হচ্ছে। এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে, সৌরশক্তি বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে প্রধান ভূমিকা পালন করছে, যা মোট উৎপাদনের ৮১% এরও বেশি।
২০২৪ সালের ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ১৬,৪৭৭ মেগাওয়াট। বর্তমানে দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ৩১,১৯৪ মেগাওয়াট, যার মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে প্রায় ১১৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় ও গ্রিডে যুক্ত হয়, যা মোট উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় ৩-৪%। বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য উৎসের ব্যবহার বাড়াতে বাংলাদেশ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ৪,১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
বিদ্যুতের চাহিদা মূলত তিন ধরনের হয় : বেজ লোড, ইন্টারমিডিয়েট লোড এবং পিক লোড। বেজ লোড হলো সেই পরিমাণ বিদ্যুতের চাহিদা, যার নিচে চাহিদা কখনো নামে না এবং এটি সব সময় সরবরাহ করতে হয়। পিক লোড হলো দিনের সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ চাহিদা, যা সাধারণত মোট চাহিদার প্রায় ১৫%।
বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহে ভারসাম্য বজায় রাখতে সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও আমদানির ওপর নির্ভর করছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালের নভেম্বরে ভারতের আদানি পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ আমদানি প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমে যাওয়ায় বাংলাদেশ জ্বালানি তেল-ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করতে বাধ্য হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন খাতে এমন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নবায়নযোগ্য উৎসের ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকারকে সুপরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে হবে।
সৌরশক্তির ব্যাপক ব্যবহারের পেছনে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ যেমন সোলার হোম সিস্টেম, সোলার মিনি গ্রিড এবং নেট মিটারিং পদ্ধতি চালু করা উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ৬ মিলিয়নেরও বেশি সোলার হোম সিস্টেম ইনস্টল করা হয়েছে, যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় অফ-গ্রিড সোলার প্রোগ্রাম হিসেবে স্বীকৃত (স্রেডা, ২০২৩)। এছাড়াও, বায়ুশক্তির সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য কক্সবাজার এবং কুয়াকাটায় বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে, যদিও এই খাতে এখনও ব্যাপক সম্ভাবনা রয়ে গেছে। বাংলাদেশের একমাত্র জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র কাপ্তাই হাইড্রোপাওয়ার প্ল্যান্ট জাতীয় গ্রিডে ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে, যা দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনে নবায়নযোগ্য শক্তির গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। জলবিদ্যুৎ খাতে বাংলাদেশের সীমিত সম্পদের কারণে এই খাতের উন্নয়ন সীমিত, তবে পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু নদীতে ছোট আকারের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই খাতের উন্নয়ন সম্ভব।
নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির পথে বাংলাদেশের কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। প্রথমত, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা এবং উচ্চ বিনিয়োগ ব্যয় এই খাতের উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রযুক্তি আমদানি নির্ভর হওয়ায় এর ব্যয় তুলনামূলকভাবে বেশি, যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। দ্বিতীয়ত, নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণ একটি বড় চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে। তৃতীয়ত, এই খাতে দক্ষ জনবলের অভাব এবং গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বিনিয়োগের অভাব নবায়নযোগ্য জ্বালানির টেকসই উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করছে।
তবে, এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত প্রচেষ্টা চলছে। বাংলাদেশ সরকার ২০২১ সালে জাতীয় নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি প্রণয়ন করেছে, যার লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে দেশের মোট জ্বালানি চাহিদার ৪০% নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে মেটানো। এই লক্ষ্য অর্জনে সরকার নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিচ্ছে। এছাড়াও, বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের (জিসিএফ) মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে, যা এই খাতের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
ভবিষ্যতে বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল। সৌরশক্তির ব্যাপক ব্যবহার, বায়ুশক্তির সম্ভাবনা কাজে লাগানো, বায়োগ্যাস ও বায়োমাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের জ্বালানি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা সম্ভব। এছাড়াও, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম জোরদার করা গেলে এই খাতের উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত হবে।
সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এবং সাধারণ নাগরিকদেরও এই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে হবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি সবুজ ও টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই লক্ষ্য অর্জনে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন, যাতে বাংলাদেশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে একটি রোল মডেল হিসেবে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।
[লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ]