alt

উপ-সম্পাদকীয়

প্রসঙ্গ : রাজধানীর যানজট

শাহ মো. জিয়াউদ্দিন

: রোববার, ০১ জুন ২০২৫

রাজধানী ঢাকা এখন যানজটের নগরীতে পরিণত হয়েছে। ২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী ঢাকা শহরের মোট জনসংখ্যা ২ কোটি ৩২ লাখ ১৫ হাজার ১০৭ জন। দেশের মোট জনসংখ্যার ১২.৮ শতাংশ মানুষ বাস করেন এই মহানগরীতে। ফলে ঢাকা শহরকে ‘মেগাসিটি’ বলা হয়। জনঘনত্বের দিক দিয়ে এটি বিশ্বের শীর্ষেÑ৩০৬ বর্গ কিলোমিটারের এই শহরে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে গড়ে ২৩ হাজার লোকের বাস। অর্থাৎ প্রতি ১০ বর্গমিটারে বাস করেন প্রায় ২.৩ জন মানুষ। অথচ এর মধ্যে রয়েছে রাস্তা, খেলার মাঠ, জলাশয়, দালান, বৈদ্যুতিক খুঁটি এবং অন্যান্য কাঠামো। সেসব বাদ দিলে বাস্তবে এই সংখ্যা আরও বেশি হয়।

অর্থাৎ শুধু বসবাসের জন্যও যদি হিসাব করি, ১০ বর্গমিটারে ২.৩ জন মানুষের বাস করা অত্যন্ত কষ্টকর। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর চলাচলের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত রাস্তা ও পরিবহন। কিন্তু ঢাকা শহরে রাস্তার পরিমাণ মাত্র ২৪.৪৮ বর্গ কিলোমিটার, যা প্রয়োজনের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ। আদর্শ হিসেবে ঢাকা শহরের মোট আয়তনের কমপক্ষে ২৫ শতাংশ রাস্তা থাকা উচিত, অর্থাৎ ৭৬.৫ বর্গ কিলোমিটার। অথচ বর্তমান রাস্তাঘাটের ঘাটতি স্পষ্টÑ৩০৬ বর্গ কিলোমিটার থেকে ৭৬.৫ কেটে রাখলে বসবাসের জন্য অবশিষ্ট থাকে ২৩০ বর্গ কিলোমিটার। ফলে প্রতি বর্গমিটারে একজন মানুষের বাসও কঠিন হয়ে পড়ে।

যানজটের এই চিত্র শুধু গণনায় নয়, বাস্তব জীবনেও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। রাজধানীতে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগে। রাজধানী ঢাকায় বসবাসরত কর্মজীবীদের দৈনিক সময়ের এক-চতুর্থাংশ ব্যয় হয় শুধু যাতায়াতে। যানজটের কারণে দেশের জিডিপিতে প্রত্যক্ষভাবে ২.৫ শতাংশ ও পরোক্ষভাবে ৬ শতাংশ ক্ষতি হয়, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। একে সহজে ‘অর্থনৈতিক মহামারী’ বললেও ভুল হবে না।

যানজট মোকাবিলায় সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছেÑএলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল এসব বাস্তবায়িত হয়েছে। তারপরও যানজটের কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি। এরই মধ্যে সম্প্রতি একটি আলোচিত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছেÑঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের। গত ১৯ নভেম্বর উচ্চ আদালত তিন দিনের মধ্যে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের নির্দেশ দেন। নির্দেশে বলা হয়, দুই সিটি করপোরেশন, স্বরাষ্ট্র ও স্থানীয় সরকার সচিব এবং আইজিপিকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে হবে।

ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলোর কাঠামোগত ত্রুটি থাকলেও এগুলো পরিবেশবান্ধব। কারণ এগুলো ধোঁয়াহীন এবং কার্বন নিঃসরণ করে না। তবে সমস্যার একটি দিক হলো, ঢাকায় মোট কতটি রিকশা চলাচল করে তার নির্ভরযোগ্য কোনো সরকারি পরিসংখ্যান নেই। অনুমান করা হয়, বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে প্রায় ১২ লাখ রিকশা চলাচল করে। এই রিকশার ওপর নির্ভরশীল প্রায় ৬০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা। অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই যানটির সঙ্গে যুক্ত।

অন্যদিকে ঢাকার সড়কগুলো প্রস্থে অনেক জায়গায় সংকীর্ণ, আর এতে চলছে প্রায় ৬ লাখ প্রাইভেটকার। এই প্রাইভেটকারগুলো দখল করে নেয় প্রায় ৪৫ শতাংশ রাস্তা। অথচ যানজটের আলোচনা-সমালোচনায় প্রাইভেটকারকে তেমনভাবে দায়ী করা হয় না। কিন্তু প্রকৃত চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। একটি উদাহরণে দেখা যায়Ñমোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন থেকে মিরপুর ১০ হয়ে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত চলাচল করে ‘তেঁতুলিয়া পরিবহন’ নামের একটি বাস, যার আসন সংখ্যা ৪৫। দাঁড়িয়ে আরও ৮-১০ জন চলতে পারেন, অর্থাৎ মোট ৫০-৫৫ জন যাত্রী পরিবহন সম্ভব। অন্যদিকে দুটি প্রাইভেটকারে বড়জোর ৮-৯ জন যাত্রী পরিবহন হয়, অথচ তারা একটি বাসের সমান জায়গা দখল করে।

সুতরাং, গণপরিবহন একটি বাস যেখানে ৫৫ জন পরিবহন করে, সেখানে প্রাইভেটকারে সেই জায়গায় যাত্রী হয় মাত্র ৮-৯ জন। এর ওপর আবার প্রাইভেটকারগুলো যত্রতত্র পার্কিং করে দীর্ঘ সময় রাস্তা দখল করে রাখে। যেমন নিউমার্কেট থেকে কলাবাগান হয়ে আসাদগেট পর্যন্ত দুই পাশে সারি সারি প্রাইভেটকার সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকে। এই অনিয়ন্ত্রিত পার্কিংও যানজটের বড় কারণ।

তবে প্রশ্ন হলোÑযানজটের জন্য আসলেই রিকশা দায়ী, না প্রাইভেটকার? ৬ লাখ প্রাইভেটকারে উপকারভোগী ১১-১৫ লাখ মানুষ, আর ১২ লাখ রিকশার উপকারভোগী প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ। সম্প্রতি আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে রিকশাচালকরা আন্দোলনে নামেন এবং বিভিন্ন সংস্থা ও আইনজীবীদের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আদেশ স্থগিত করেন। ফলে রিকশা আবার রাস্তায় ফিরেছে।

রিকশা মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তের অন্যতম বাহন হলেও এর সংখ্যাধিক্য অবশ্যই যানজটে ভূমিকা রাখে। তাই রাজধানীতে রিকশার চলাচলে নীতিমালা দরকার। প্রাইভেটকারের চলাচলেও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা দরকার। না হলে যানজট নিয়ন্ত্রণ হবে না।

তাছাড়া রাইড-শেয়ারিংয়ের নামে রাজধানীতে চলছে প্রায় ১১ লাখ মোটরসাইকেল, যেগুলো বেপরোয়া গতিতে ফুটপাত দিয়েও চলাচল করে। ফলে সাধারণ মানুষ ফুটপাতেও হাঁটতে পারছেন না। পরিসংখ্যান বলছে, শুধু ঢাকা শহরে যত মোটরসাইকেল চলে, তা সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রের মোটরসাইকেলের সংখ্যার চেয়েও বেশি! এই মোটরসাইকেলগুলোর জন্যও সড়ক দুর্ঘটনার হার দিন দিন বাড়ছে, যার ফলে জিডিপিতে ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। সরকারকে ভাবতে হবেÑযে পরিবহন মাধ্যমে বেশি মানুষ চলাচল করে, সেই বাহনকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে।

[ লেখক : উন্নয়নকর্মী ]

দেশি মাছ রক্ষায় অভয়াশ্রম

আলুর বাজার বিপর্যয় : কৃষকের ভাগ্যে লোকসান

ছবি

নীল নদের পানি নীল নয়

বিশ্ব বাঘ দিবস

ঢাকার কি রিস্ক এনালাইসিস করা আছে?

ছবি

সোনার হরফে লেখা অনন্য শিক্ষকের নাম

পরীক্ষার পর পরীক্ষা, কিন্তু কোথায় মূল্যায়ন ও মূল্যবোধের ভিত্তি?

বৃত্তি পরীক্ষায় কিন্ডারগার্টেন বাদ কেন?

সময়ের স্বৈরতন্ত্র : প্রতীক্ষা, ক্ষমতা ও জীবনের অসমতা

জলবায়ু পরিবর্তন মডেলে গণিতের ব্যবহার

দুর্ঘটনাজনিত দুর্যোগ-পরবর্তী করণীয় কী?

ডেঙ্গু, জিকা আর চিকুনগুনিয়া : একই উৎস, ত্রিমুখী সংকট

কেন থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?

দুর্নীতি নির্মূল করা কি সম্ভব?

দরকার মানসম্মত শিক্ষা

ইসরায়েলের যুদ্ধনীতি ও বিশ্ব নিরাপত্তার সংকট

রম্যগদ্য : ‘বেইমান রাইট ব্রাদার্স’

মানসিক স্বাস্থ্যসেবা : আইনি কাঠামো, সংকট ও সম্ভাবনার দিক

ছবি

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র

দুর্যোগে অবিবেচকদেরকে কি দায়িত্বশীল ভাবা যায়?

ওয়াসার পদ্মা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট : এক জীবন্ত বোটানিক্যাল গার্ডেন

রেলপথের দুর্দশা : সমন্বিত পরিকল্পনা না হলে বিপর্যয় অনিবার্য

বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র নাকি ক্ষমতার অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ?

পিরোজপুরের স্কুলটির ফলাফল বিপর্যয় এবং আচরণগত অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ

কোনো শাসকই অপরাজেয় নয়

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি : বাঙালিকে রুচির দৈন্যে টেনে নামানো হচ্ছে

জনসংখ্যা ও যুবশক্তির চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

রাষ্ট্রের কাছে স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চাই

পার্বত্য চট্টগ্রাম : প্রাকৃতিক সম্পদ ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা

ইউরেশিয়ায় তৃতীয় বিকল্প গালফ কূটনীতি

‘বিপ্লবী সংস্কার’ কি সম্ভব

রম্যগদ্য : ‘ব্যাংক, ব্যাংক নয়’

মবতন্ত্রের জয়

ডিজিটাল ক্লান্তি ও ‘সর্বক্ষণ সক্রিয়’ সংস্কৃতির শ্রেণীগত রাজনীতি

ছবি

বোধের স্ফূরণ, না ‘মেটিকুলাস ডিজাইন’?

এসএসসিতে গণিত বিষয়ে ফল বিপর্যয় : কারণ ও উত্তরণের উপায়

tab

উপ-সম্পাদকীয়

প্রসঙ্গ : রাজধানীর যানজট

শাহ মো. জিয়াউদ্দিন

রোববার, ০১ জুন ২০২৫

রাজধানী ঢাকা এখন যানজটের নগরীতে পরিণত হয়েছে। ২০২৪ সালের হিসাব অনুযায়ী ঢাকা শহরের মোট জনসংখ্যা ২ কোটি ৩২ লাখ ১৫ হাজার ১০৭ জন। দেশের মোট জনসংখ্যার ১২.৮ শতাংশ মানুষ বাস করেন এই মহানগরীতে। ফলে ঢাকা শহরকে ‘মেগাসিটি’ বলা হয়। জনঘনত্বের দিক দিয়ে এটি বিশ্বের শীর্ষেÑ৩০৬ বর্গ কিলোমিটারের এই শহরে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে গড়ে ২৩ হাজার লোকের বাস। অর্থাৎ প্রতি ১০ বর্গমিটারে বাস করেন প্রায় ২.৩ জন মানুষ। অথচ এর মধ্যে রয়েছে রাস্তা, খেলার মাঠ, জলাশয়, দালান, বৈদ্যুতিক খুঁটি এবং অন্যান্য কাঠামো। সেসব বাদ দিলে বাস্তবে এই সংখ্যা আরও বেশি হয়।

অর্থাৎ শুধু বসবাসের জন্যও যদি হিসাব করি, ১০ বর্গমিটারে ২.৩ জন মানুষের বাস করা অত্যন্ত কষ্টকর। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর চলাচলের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত রাস্তা ও পরিবহন। কিন্তু ঢাকা শহরে রাস্তার পরিমাণ মাত্র ২৪.৪৮ বর্গ কিলোমিটার, যা প্রয়োজনের তুলনায় এক-তৃতীয়াংশ। আদর্শ হিসেবে ঢাকা শহরের মোট আয়তনের কমপক্ষে ২৫ শতাংশ রাস্তা থাকা উচিত, অর্থাৎ ৭৬.৫ বর্গ কিলোমিটার। অথচ বর্তমান রাস্তাঘাটের ঘাটতি স্পষ্টÑ৩০৬ বর্গ কিলোমিটার থেকে ৭৬.৫ কেটে রাখলে বসবাসের জন্য অবশিষ্ট থাকে ২৩০ বর্গ কিলোমিটার। ফলে প্রতি বর্গমিটারে একজন মানুষের বাসও কঠিন হয়ে পড়ে।

যানজটের এই চিত্র শুধু গণনায় নয়, বাস্তব জীবনেও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। রাজধানীতে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লাগে। রাজধানী ঢাকায় বসবাসরত কর্মজীবীদের দৈনিক সময়ের এক-চতুর্থাংশ ব্যয় হয় শুধু যাতায়াতে। যানজটের কারণে দেশের জিডিপিতে প্রত্যক্ষভাবে ২.৫ শতাংশ ও পরোক্ষভাবে ৬ শতাংশ ক্ষতি হয়, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। একে সহজে ‘অর্থনৈতিক মহামারী’ বললেও ভুল হবে না।

যানজট মোকাবিলায় সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছেÑএলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল এসব বাস্তবায়িত হয়েছে। তারপরও যানজটের কোনো স্থায়ী সমাধান হয়নি। এরই মধ্যে সম্প্রতি একটি আলোচিত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছেÑঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা বন্ধের। গত ১৯ নভেম্বর উচ্চ আদালত তিন দিনের মধ্যে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের নির্দেশ দেন। নির্দেশে বলা হয়, দুই সিটি করপোরেশন, স্বরাষ্ট্র ও স্থানীয় সরকার সচিব এবং আইজিপিকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে হবে।

ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলোর কাঠামোগত ত্রুটি থাকলেও এগুলো পরিবেশবান্ধব। কারণ এগুলো ধোঁয়াহীন এবং কার্বন নিঃসরণ করে না। তবে সমস্যার একটি দিক হলো, ঢাকায় মোট কতটি রিকশা চলাচল করে তার নির্ভরযোগ্য কোনো সরকারি পরিসংখ্যান নেই। অনুমান করা হয়, বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে প্রায় ১২ লাখ রিকশা চলাচল করে। এই রিকশার ওপর নির্ভরশীল প্রায় ৬০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা। অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই যানটির সঙ্গে যুক্ত।

অন্যদিকে ঢাকার সড়কগুলো প্রস্থে অনেক জায়গায় সংকীর্ণ, আর এতে চলছে প্রায় ৬ লাখ প্রাইভেটকার। এই প্রাইভেটকারগুলো দখল করে নেয় প্রায় ৪৫ শতাংশ রাস্তা। অথচ যানজটের আলোচনা-সমালোচনায় প্রাইভেটকারকে তেমনভাবে দায়ী করা হয় না। কিন্তু প্রকৃত চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। একটি উদাহরণে দেখা যায়Ñমোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন থেকে মিরপুর ১০ হয়ে আব্দুল্লাহপুর পর্যন্ত চলাচল করে ‘তেঁতুলিয়া পরিবহন’ নামের একটি বাস, যার আসন সংখ্যা ৪৫। দাঁড়িয়ে আরও ৮-১০ জন চলতে পারেন, অর্থাৎ মোট ৫০-৫৫ জন যাত্রী পরিবহন সম্ভব। অন্যদিকে দুটি প্রাইভেটকারে বড়জোর ৮-৯ জন যাত্রী পরিবহন হয়, অথচ তারা একটি বাসের সমান জায়গা দখল করে।

সুতরাং, গণপরিবহন একটি বাস যেখানে ৫৫ জন পরিবহন করে, সেখানে প্রাইভেটকারে সেই জায়গায় যাত্রী হয় মাত্র ৮-৯ জন। এর ওপর আবার প্রাইভেটকারগুলো যত্রতত্র পার্কিং করে দীর্ঘ সময় রাস্তা দখল করে রাখে। যেমন নিউমার্কেট থেকে কলাবাগান হয়ে আসাদগেট পর্যন্ত দুই পাশে সারি সারি প্রাইভেটকার সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকে। এই অনিয়ন্ত্রিত পার্কিংও যানজটের বড় কারণ।

তবে প্রশ্ন হলোÑযানজটের জন্য আসলেই রিকশা দায়ী, না প্রাইভেটকার? ৬ লাখ প্রাইভেটকারে উপকারভোগী ১১-১৫ লাখ মানুষ, আর ১২ লাখ রিকশার উপকারভোগী প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ। সম্প্রতি আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে রিকশাচালকরা আন্দোলনে নামেন এবং বিভিন্ন সংস্থা ও আইনজীবীদের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আদেশ স্থগিত করেন। ফলে রিকশা আবার রাস্তায় ফিরেছে।

রিকশা মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তের অন্যতম বাহন হলেও এর সংখ্যাধিক্য অবশ্যই যানজটে ভূমিকা রাখে। তাই রাজধানীতে রিকশার চলাচলে নীতিমালা দরকার। প্রাইভেটকারের চলাচলেও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা দরকার। না হলে যানজট নিয়ন্ত্রণ হবে না।

তাছাড়া রাইড-শেয়ারিংয়ের নামে রাজধানীতে চলছে প্রায় ১১ লাখ মোটরসাইকেল, যেগুলো বেপরোয়া গতিতে ফুটপাত দিয়েও চলাচল করে। ফলে সাধারণ মানুষ ফুটপাতেও হাঁটতে পারছেন না। পরিসংখ্যান বলছে, শুধু ঢাকা শহরে যত মোটরসাইকেল চলে, তা সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রের মোটরসাইকেলের সংখ্যার চেয়েও বেশি! এই মোটরসাইকেলগুলোর জন্যও সড়ক দুর্ঘটনার হার দিন দিন বাড়ছে, যার ফলে জিডিপিতে ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। সরকারকে ভাবতে হবেÑযে পরিবহন মাধ্যমে বেশি মানুষ চলাচল করে, সেই বাহনকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে।

[ লেখক : উন্নয়নকর্মী ]

back to top