alt

উপ-সম্পাদকীয়

বাংলাদেশ : “রক্তে জন্ম আর পানিতে মরণ”

এম মনির উদ্দিন

: শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫

ইডিজিএআর (ইমিউশনস ডাটাবেজ ফর গ্লোবাল অ্যাটমোস্ফেরিক রিসার্স) এর ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী গ্লোবাল গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ মোট ৫৩ বিলিয়ন টন। চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশ, রাশিয়া এবং ব্রাজিল একত্রে ২০২২ সালে বিশ্বের বৃহত্তম গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণকারী। এই দেশগুলোর সম্মিলিত জনসংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৫০.১ শতাংশ, বৈশ্বিক দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬১.২ শতাংশ, বৈশ্বিক জীবাষ্ম জ্বালানি খরচের ৬৩.৪ শতাংশ এবং বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ৬১.৬ শতাংশ করে থাকে। বিশ্বের

১৫২টি দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশ মিলে প্রতি বছর কার্বন-ডাই অক্সাইড নিঃসরণ করে মাত্র ১৭.৭ শতাংশ, যা দেশ প্রতি গড়ে ০.১১ শতাংশ। অথচ এই দরিদ্র দেশগুলোকেই আজকে লড়তে হচ্ছে জলবায়ুগত পরিবর্তনের রোষানলে পড়ে যার মধ্যে বাংলাদেশ মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে থাকা সপ্তম দেশ। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে, বিগত ১০০ বছরে পৃথিবীর বায়ুম-লের তাপমাত্রা বেড়েছে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অনেক বিজ্ঞানী বলছেন ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়বে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়বে অর্ধ মিটার। আমাদের দেশটি এমন একটি অবস্থানে রয়েছে যার একদিকে সমুদ্র আর আরেক দিকে হিমালয়। এ অবস্থায় পৃথিবী যতই গরম হচ্ছে সমুদ্র ততই ফুলে উঠছে। আর বিশ্বের মানচিত্র থেকে বাংলাদেশের মুছে যাওয়ার শঙ্কা ততই ঘনীভূত হচ্ছে। বিশ্বের তাপমাত্রা এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যে হারে বাড়ছে তাতে আইপিসিসির তথ্য অনুসারে ২০৫০ সাল নাগাদ উপকূলীয় ১৭ ভাগ এলাকা সমুদ্রের পানিতে তলিয়ে যাবে যার কারণে জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যা দাঁড়াবে ১৩.৩ থেকে ১৯.৯ মিলিয়ন। আর এজন্যই ব্রিটিশ সাংবাদিক জোহান হ্যারি জাতিসংঘের

জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক আন্তর্জাতিক পরিষদের (আইপিসিসি) তথ্যানুসারে বাংলাদেশকে এভাবেই দেখেছেন: বাংলাদেশ; ১৯৭১ থেকে ২০৭১, “রক্তে জন্ম আর পানিতে মরণ”। গবেষণায় বলা হচ্ছে ২০৩০ সাল নাগাদ দেশে বৃষ্টিপাত বেড়ে যাবে ১০ থেকে ১৫ ভাগ, যা ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। ২০৪০ সালের মধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলে ১৮ শতাংশ এবং দেশের অন্যান্য এলাকায় ৭ শতাংশ আবাদি জমি কমে যাবে। লবণাক্ততা বর্তমানে উপকূলীয় এলাকার ৬২ শতাংশ জমিকে প্রভাবিত করছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ ৮ কিলোমিটার উত্তরে অগ্রসর হওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০৪০ সালের মধ্যে দেশের মূল জাতীয় উৎপাদন বিশেষ করে ধান ও গমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০১৫ থেকে ২০৪০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ২ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যার

প্রভাবে দেশের মোট আয়তনের ১৮.৩ শতাংশ সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যেতে পারে।

একসময় এ দেশের মানুষ পানি পান করার জন্য নদী, পুকুর, খাল, বিলের পানিই ব্যবহার করত, কিন্তু তা আজ অনেকটাই ইতিহাস। কিন্তু, ব্যতিক্রম দেশের দক্ষিণ- পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের ক্ষেত্রে যারা আজও রান্না, গৃহস্থালী কাজ এবং খাবারের জন্য পুকুর, ডোবার পানি ব্যবহার করছে। ঘূর্ণিঝড় সিডর অত্র এলাকায় আঘাত হেনেছিল ২০০৭ সালে আর আইলা ২০০৯ সালে। মাঝে আরো কয়েকটি মাঝারি ধরনের ঘূর্ণিঝড়ও হয়েছে এসব এলাকায়। তবে, এলাকাবাসীর তথ্যমতে সিডর এবং আইলার ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ বা পোল্ডার এখনো মেরামত হয়নি। ফলে, সাধারণ ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছাসে বাঁধের ভেতরের জমিতে লবণাক্ত পানি ঢুকে যায় যার ফলে ফসল উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে। ১৯৭৩ সনে দেশের লবণাক্ত জমির পরিমাণ ছিল দশমিক ৮৩ মিলিয়ন হেক্টর যা এভাবেই বাড়তে বাড়তে বর্তমানে এসে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক শূন্য ১ মিলিয়ন হেক্টরে। সাতক্ষীরা, খুলনা এবং বাগেরহাটের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় জেলাগুলোতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড়ের কারণে লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ স্বাদুপানির অভাবকে বাড়িয়ে তুলেছে। এই এলাকার মানুষের বসতবাড়ির চারপাশে পানি আর পানি। তবে, বিশুদ্ধ মিঠাপানি পান করার নেই কোন উৎস একমাত্র মৌসুমভিত্তিক কিছু পুকুর-ডোবা ছাড়া। ঐতিহ্যগতভাবে পানি সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা নারীরা এখনও শারীরিকভাবে কঠিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে দীর্ঘ দূরত্ব (প্রায়শই ২-৫ কিলোমিটার) হেঁটে যান। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, মোংলা (বাগেরহাট) ৬২.৯% এবং শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) ৭৮.১% মহিলাই একমাত্র পানি সংগ্রহকারী। এলাকার সব মানুষ পান করে পুকুরের পানি তা-ও যখন শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে যায় তখন এরা যেন চাতক পাখির মতো এক ফোটা খাবার পানির জন্য আকাশের পানে তাকিয়ে থাকে। কিছু এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানি পাওয়া গেলেও তার জন্য কমপক্ষে ৮০০ ফুট গভীরে পাইপ স্থাপন করতে হয় তারপরও সে পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি। শুষ্ক মৌসুমে স্বাদুপানির উৎস কমে যাওয়ায় মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুর প্রয়োজনীয় পানির সংকট তীব্র হয়। স্বাস্থ্যের পরিস্থিতিও সমানভাবে উদ্বেগজনক। দীর্ঘস্থায়ী লবণাক্ত পানির সংস্পর্শে আসার ফলে মহিলাদের প্রজননতন্ত্রের সংক্রমন (মোংলায় ৬৪.৮%, শ্যামনগর ৫৩.৮%), গর্ভাবস্থাজনিত উচ্চ রক্তচাপ এবং গর্ভপাত সমস্যা হচ্ছে। চিংড়ি ঘেরে লোনাপানিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে কাজ করার ফলে মহিলাদের চর্মরোগ (৯২.৩%) এবং মুত্রনালির সংক্রমন দেখা যাচ্ছে। চিংড়ি ঘেরে নিয়মিত কাজ করতে গিয়ে কিশোরী থেকে শুরু করে প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলারা তাদের মাসিক ঋতু¯্রাব বন্ধ রাখার জন্য বিভিন্ন ওষুধ গ্রহণ করছে, যা তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকিকে বাড়িয়ে তুলছে। বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এবং খুলনা জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেলো চিংড়ি চাষের ঘের। কথা হলো পাশ্ববর্তী এলাকার কৃষকদের সঙ্গে এবং তারা জানালেন যে, অতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়ায় বর্ষাকালে ঘেরগুলোতে লবণাক্ততা কম থাকায় চিংড়ি চাষে ফলন পাওয়া যাচ্ছে না এবং মোটেই তাদের জন্য লাভজনক হচ্ছেনা। পক্ষান্তরে, তারা রবি মৌসুমে এই ঘেরগুলোতে চিংড়ি চাষ না করে বোরো ধান চাষে বেশি আগ্রহী। তবে, প্রভাবশালী ঘের মালিকদের চাপে সাধারণ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকেরা ধান চাষ করতে পারে না। তাদের মতে, হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করলে ঘেরের জমিতে বিঘায় ৩০-৩৫ মণ ফলন পাওয়া যায়, যা তাদের পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য খুবই প্রয়োজন।

কৃষকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জানা যায়, শুষ্ক মৌসুমে বিশেষ করে সাতক্ষীরার কয়েকটি উপজেলায় বিপুল পরিমাণ জমিতে পানি থাকে না বা সেচ দেয়ার সুযোগ নেই সেখানে বোরো, গম, জোয়ার, চীনা, কাউন এবং অন্যান্য শুষ্ক মৌসুমের ফসল চাষ করার সুযোগ রয়েছে যদি জমির পাশ দিয়ে খাল খনন বা জমির একপাশে মিনি পুকুর করে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা যায়। তবে, কৃষকদের মতে, তাদের কাছে সরকারি কোন অফিস বিশেষ করে কৃষি বিভাগের কোন কর্মী কোন পরামর্শ বা সহযোগিতার জন্য যায় না। তাদের মতে, উপযুক্ত পরামর্শ পেলে এই অবহেলিত অঞ্চলে বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষের মাধ্যমে এই অবহেলিত জনপদের নি¤œ আয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা বাড়ানোর ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর এলাকায় পরিকল্পিতভাবে তাল ও খেজুর গাছ লাগানোর বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে, যা থেকে পুষ্টি সমৃদ্ধ তালের কাঁচা ও পাকা ফল, খেজুরের ফল সেইসঙ্গে স্থায়ী গুড় শিল্প গড়ে উঠতে পারে। গোলপাতার ফলকে ঘিরেও গুড় তৈরির ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা উন্নয়ন করার সুযোগ রয়েছে। এই অঞ্চলের শিক্ষিত বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে জলবায়ুবান্ধব অনেক ফল জাতীয় গাছের বাগান সৃজন বিশেষ করে আম, আমড়া, আমলকি, সফেদা, কদবেল, বিলাতি গাব, বড়ই ইত্যাদির সমন্বয়ে বাগান তৈরির মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ করা যায় যা এই অঞ্চলের মানুষের সার্বিক পুষ্টি নিরাপত্তায় অবদান রাখতে পারে। একটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় যে, দেশের সমতলের অনেক ঔষধি গাছসহ অন্যান্য প্রজাতির গাছ, যা অনেকাংশে বিলুপ্ত তবে এই অঞ্চলে রয়েছে সেইসব গাছের সমারোহ, যা এই অঞ্চলের ইকো-সিস্টেমকে এখনো বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করে রেখেছে। উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর দুরাবস্থা দূর করে তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান, মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার জন্য সরকারকে এই অঞ্চলকে ঘিরে দীর্র্ঘমেয়াদি কার্যক্রম গ্রহণ করা জরুরিভাবে প্রয়োজন। দেশের এই উপকূলীয় অঞ্চলকে রক্ষার জন্য স্থায়ী পাকা বাঁধ নির্মাণ করা জরুরি। কারণ, এই ধরনের কোন পদক্ষেপ এখনই গ্রহণ করতে না পারলে দিন দিন সমুদ্রের পানিতে জমি হারিয়ে জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তেই থাকবে যাদের পুনর্বাসন করা এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ভবিষ্যতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। বাংলাদেশের উপকূলীয় এই অঞ্চলের দুরাবস্থার জন্য জলবায়ুর পরিবর্তনই একমাত্র দায়ী। আর, জলবায়ুর এই পরিবর্তনে যে শীর্ষ দেশগুলো সবচেয়ে বেশি দায়ী তাদের এগিয়ে আসতে হবে বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভোগ কমাতে। কারণ, বাংলাদেশ বছরে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করে তা নিতান্তই সামান্য, অথচ জলবায়ুর ঝুঁকিতে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ঝুকিপূর্ণ। ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ুর পরিবর্তন বাংলাদেশের কৃষি জিডিপির এক-তৃতীয়াংশ ক্ষতির কারন হতে পারে। তাই, বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলো কর্তৃক বাংলাদেশের প্রতি জলবায়ুর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং বাংলাদেশের জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রতি বছর প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে বাংলাদেশ বর্তমান ক্ষতিকে প্রশমিত করার পাশাপাশি উপকূলীয় অঞ্চলকে রক্ষার জন্য স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। বাংলাদেশ জলবায়ু ন্যায়বিচার সেইসঙ্গে দাতাগোষ্ঠীর সহযোগিতা পেলে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবকে মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারবে।

[লেখক : প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর, গেইন বাংলাদেশ]

সরকারি হাসপাতালের পরিবেশ

আমেরিকার অলিগার্কি পতনের আখ্যান

রম্যগদ্য : ‘উহু উহু, তোরে মাফ করা যায় না...’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট : সংকোচন, সংকট ও সম্ভাবনার প্রতিফলন

আম রপ্তানি : বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ

ছবি

সামাজিকমাধ্যম গুরুত্বহীন নয়

জমির শ্রেণী চেনার উপায় ও পরিবর্তনের নিয়ম-কানুন

নতুন নোট, নতুন বিতর্ক

রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের হতাশা ও উপজেলা পর্যায়ের অদক্ষতা : কে নেবে দায়িত্ব?

তরল সম্পর্কের গোলকধাঁধা

পরিবার থেকে রাষ্ট্র : ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের উপায়

বাজেটে বৈষম্য কমানোর কোনো স্পষ্ট প্রতিফলন আছে কি

চোখের নজর কম হলে আর কাজল দিয়ে কী হবে

রম্যগদ্য : ‘নির্বাচন, না নীর-বচন...’

প্লাস্টিক দূষণ নয়, প্রকৃতির পাশে দাঁড়ান

কোরবানির পর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

ত্যাগের মহিমায় ঈদুল আজহা

নাম ও মর্যাদা : অর্থবহ নামকরণে বৈষম্য রোধের আহ্বান

ডিজিটাল পুঁজিবাদের যুগে নগর বাংলাদেশের শ্রেণী কাঠামো

পারিবারিক শিক্ষা ও রাষ্ট্রসংস্কার : ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের পথরেখা

প্রসঙ্গ : রাজধানীর যানজট

নবায়নযোগ্য জ্বালানি : চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

ছবি

তাহলে একাত্তরে হয়নিকো কোনো অপরাধ!

ঈদযাত্রা হোক নিরাপদ

আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্য কৌশলে বাস্তববাদী বাঁক

রম্যগদ্য : ‘জনগণের ভালোবাসা কি আমার ব্যাংক-ব্যালেন্স বাড়াইবো?’

ভালো থাকার কঠিন কলা : কিছু সরল সত্য

নীরব ঘাতক তামাক

পরিবেশবান্ধব নগর গঠনে রাজনীতিবিদদের ভূমিকা

নিয়ন্ত্রণহীন নেটজগৎ ও ফেইসবুক : সমাজে বিভ্রান্তির ডিজিটাল উৎপত্তি

বস্তিবাসী নারী : অদৃশ্য শক্তির আখ্যান

চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল : বিতর্ক, নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থের প্রশ্ন

সংস্কারের ভবিষ্যত কী?

বজ্রপাত, ঘূর্ণিঝড় চায় না তো কেউ, প্রকৃতির নিয়মে আসে কিন্তু তাই!

কেন থমকে আছে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি

বদলাচ্ছে সমাজ, বদলাচ্ছে অর্জনের গল্প

tab

উপ-সম্পাদকীয়

বাংলাদেশ : “রক্তে জন্ম আর পানিতে মরণ”

এম মনির উদ্দিন

শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫

ইডিজিএআর (ইমিউশনস ডাটাবেজ ফর গ্লোবাল অ্যাটমোস্ফেরিক রিসার্স) এর ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী গ্লোবাল গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের পরিমাণ মোট ৫৩ বিলিয়ন টন। চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশ, রাশিয়া এবং ব্রাজিল একত্রে ২০২২ সালে বিশ্বের বৃহত্তম গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণকারী। এই দেশগুলোর সম্মিলিত জনসংখ্যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৫০.১ শতাংশ, বৈশ্বিক দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬১.২ শতাংশ, বৈশ্বিক জীবাষ্ম জ্বালানি খরচের ৬৩.৪ শতাংশ এবং বৈশ্বিক গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের ৬১.৬ শতাংশ করে থাকে। বিশ্বের

১৫২টি দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশ মিলে প্রতি বছর কার্বন-ডাই অক্সাইড নিঃসরণ করে মাত্র ১৭.৭ শতাংশ, যা দেশ প্রতি গড়ে ০.১১ শতাংশ। অথচ এই দরিদ্র দেশগুলোকেই আজকে লড়তে হচ্ছে জলবায়ুগত পরিবর্তনের রোষানলে পড়ে যার মধ্যে বাংলাদেশ মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে থাকা সপ্তম দেশ। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে, বিগত ১০০ বছরে পৃথিবীর বায়ুম-লের তাপমাত্রা বেড়েছে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অনেক বিজ্ঞানী বলছেন ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের তাপমাত্রা বাড়বে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সমুদ্রের পানির উচ্চতা বাড়বে অর্ধ মিটার। আমাদের দেশটি এমন একটি অবস্থানে রয়েছে যার একদিকে সমুদ্র আর আরেক দিকে হিমালয়। এ অবস্থায় পৃথিবী যতই গরম হচ্ছে সমুদ্র ততই ফুলে উঠছে। আর বিশ্বের মানচিত্র থেকে বাংলাদেশের মুছে যাওয়ার শঙ্কা ততই ঘনীভূত হচ্ছে। বিশ্বের তাপমাত্রা এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যে হারে বাড়ছে তাতে আইপিসিসির তথ্য অনুসারে ২০৫০ সাল নাগাদ উপকূলীয় ১৭ ভাগ এলাকা সমুদ্রের পানিতে তলিয়ে যাবে যার কারণে জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যা দাঁড়াবে ১৩.৩ থেকে ১৯.৯ মিলিয়ন। আর এজন্যই ব্রিটিশ সাংবাদিক জোহান হ্যারি জাতিসংঘের

জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক আন্তর্জাতিক পরিষদের (আইপিসিসি) তথ্যানুসারে বাংলাদেশকে এভাবেই দেখেছেন: বাংলাদেশ; ১৯৭১ থেকে ২০৭১, “রক্তে জন্ম আর পানিতে মরণ”। গবেষণায় বলা হচ্ছে ২০৩০ সাল নাগাদ দেশে বৃষ্টিপাত বেড়ে যাবে ১০ থেকে ১৫ ভাগ, যা ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। ২০৪০ সালের মধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলে ১৮ শতাংশ এবং দেশের অন্যান্য এলাকায় ৭ শতাংশ আবাদি জমি কমে যাবে। লবণাক্ততা বর্তমানে উপকূলীয় এলাকার ৬২ শতাংশ জমিকে প্রভাবিত করছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ ৮ কিলোমিটার উত্তরে অগ্রসর হওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০৪০ সালের মধ্যে দেশের মূল জাতীয় উৎপাদন বিশেষ করে ধান ও গমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০১৫ থেকে ২০৪০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ২ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ২১০০ সাল নাগাদ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যার

প্রভাবে দেশের মোট আয়তনের ১৮.৩ শতাংশ সমুদ্রগর্ভে তলিয়ে যেতে পারে।

একসময় এ দেশের মানুষ পানি পান করার জন্য নদী, পুকুর, খাল, বিলের পানিই ব্যবহার করত, কিন্তু তা আজ অনেকটাই ইতিহাস। কিন্তু, ব্যতিক্রম দেশের দক্ষিণ- পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের ক্ষেত্রে যারা আজও রান্না, গৃহস্থালী কাজ এবং খাবারের জন্য পুকুর, ডোবার পানি ব্যবহার করছে। ঘূর্ণিঝড় সিডর অত্র এলাকায় আঘাত হেনেছিল ২০০৭ সালে আর আইলা ২০০৯ সালে। মাঝে আরো কয়েকটি মাঝারি ধরনের ঘূর্ণিঝড়ও হয়েছে এসব এলাকায়। তবে, এলাকাবাসীর তথ্যমতে সিডর এবং আইলার ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ বা পোল্ডার এখনো মেরামত হয়নি। ফলে, সাধারণ ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছাসে বাঁধের ভেতরের জমিতে লবণাক্ত পানি ঢুকে যায় যার ফলে ফসল উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটে। ১৯৭৩ সনে দেশের লবণাক্ত জমির পরিমাণ ছিল দশমিক ৮৩ মিলিয়ন হেক্টর যা এভাবেই বাড়তে বাড়তে বর্তমানে এসে দাঁড়িয়েছে ১ দশমিক শূন্য ১ মিলিয়ন হেক্টরে। সাতক্ষীরা, খুলনা এবং বাগেরহাটের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় জেলাগুলোতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড়ের কারণে লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ স্বাদুপানির অভাবকে বাড়িয়ে তুলেছে। এই এলাকার মানুষের বসতবাড়ির চারপাশে পানি আর পানি। তবে, বিশুদ্ধ মিঠাপানি পান করার নেই কোন উৎস একমাত্র মৌসুমভিত্তিক কিছু পুকুর-ডোবা ছাড়া। ঐতিহ্যগতভাবে পানি সংগ্রহের দায়িত্বে থাকা নারীরা এখনও শারীরিকভাবে কঠিন এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে দীর্ঘ দূরত্ব (প্রায়শই ২-৫ কিলোমিটার) হেঁটে যান। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, মোংলা (বাগেরহাট) ৬২.৯% এবং শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) ৭৮.১% মহিলাই একমাত্র পানি সংগ্রহকারী। এলাকার সব মানুষ পান করে পুকুরের পানি তা-ও যখন শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে যায় তখন এরা যেন চাতক পাখির মতো এক ফোটা খাবার পানির জন্য আকাশের পানে তাকিয়ে থাকে। কিছু এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানি পাওয়া গেলেও তার জন্য কমপক্ষে ৮০০ ফুট গভীরে পাইপ স্থাপন করতে হয় তারপরও সে পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি। শুষ্ক মৌসুমে স্বাদুপানির উৎস কমে যাওয়ায় মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুর প্রয়োজনীয় পানির সংকট তীব্র হয়। স্বাস্থ্যের পরিস্থিতিও সমানভাবে উদ্বেগজনক। দীর্ঘস্থায়ী লবণাক্ত পানির সংস্পর্শে আসার ফলে মহিলাদের প্রজননতন্ত্রের সংক্রমন (মোংলায় ৬৪.৮%, শ্যামনগর ৫৩.৮%), গর্ভাবস্থাজনিত উচ্চ রক্তচাপ এবং গর্ভপাত সমস্যা হচ্ছে। চিংড়ি ঘেরে লোনাপানিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে কাজ করার ফলে মহিলাদের চর্মরোগ (৯২.৩%) এবং মুত্রনালির সংক্রমন দেখা যাচ্ছে। চিংড়ি ঘেরে নিয়মিত কাজ করতে গিয়ে কিশোরী থেকে শুরু করে প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলারা তাদের মাসিক ঋতু¯্রাব বন্ধ রাখার জন্য বিভিন্ন ওষুধ গ্রহণ করছে, যা তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকিকে বাড়িয়ে তুলছে। বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এবং খুলনা জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেলো চিংড়ি চাষের ঘের। কথা হলো পাশ্ববর্তী এলাকার কৃষকদের সঙ্গে এবং তারা জানালেন যে, অতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়ায় বর্ষাকালে ঘেরগুলোতে লবণাক্ততা কম থাকায় চিংড়ি চাষে ফলন পাওয়া যাচ্ছে না এবং মোটেই তাদের জন্য লাভজনক হচ্ছেনা। পক্ষান্তরে, তারা রবি মৌসুমে এই ঘেরগুলোতে চিংড়ি চাষ না করে বোরো ধান চাষে বেশি আগ্রহী। তবে, প্রভাবশালী ঘের মালিকদের চাপে সাধারণ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকেরা ধান চাষ করতে পারে না। তাদের মতে, হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করলে ঘেরের জমিতে বিঘায় ৩০-৩৫ মণ ফলন পাওয়া যায়, যা তাদের পরিবারের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য খুবই প্রয়োজন।

কৃষকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে জানা যায়, শুষ্ক মৌসুমে বিশেষ করে সাতক্ষীরার কয়েকটি উপজেলায় বিপুল পরিমাণ জমিতে পানি থাকে না বা সেচ দেয়ার সুযোগ নেই সেখানে বোরো, গম, জোয়ার, চীনা, কাউন এবং অন্যান্য শুষ্ক মৌসুমের ফসল চাষ করার সুযোগ রয়েছে যদি জমির পাশ দিয়ে খাল খনন বা জমির একপাশে মিনি পুকুর করে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করা যায়। তবে, কৃষকদের মতে, তাদের কাছে সরকারি কোন অফিস বিশেষ করে কৃষি বিভাগের কোন কর্মী কোন পরামর্শ বা সহযোগিতার জন্য যায় না। তাদের মতে, উপযুক্ত পরামর্শ পেলে এই অবহেলিত অঞ্চলে বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষের মাধ্যমে এই অবহেলিত জনপদের নি¤œ আয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা বাড়ানোর ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর এলাকায় পরিকল্পিতভাবে তাল ও খেজুর গাছ লাগানোর বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে, যা থেকে পুষ্টি সমৃদ্ধ তালের কাঁচা ও পাকা ফল, খেজুরের ফল সেইসঙ্গে স্থায়ী গুড় শিল্প গড়ে উঠতে পারে। গোলপাতার ফলকে ঘিরেও গুড় তৈরির ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা উন্নয়ন করার সুযোগ রয়েছে। এই অঞ্চলের শিক্ষিত বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে জলবায়ুবান্ধব অনেক ফল জাতীয় গাছের বাগান সৃজন বিশেষ করে আম, আমড়া, আমলকি, সফেদা, কদবেল, বিলাতি গাব, বড়ই ইত্যাদির সমন্বয়ে বাগান তৈরির মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ করা যায় যা এই অঞ্চলের মানুষের সার্বিক পুষ্টি নিরাপত্তায় অবদান রাখতে পারে। একটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয় যে, দেশের সমতলের অনেক ঔষধি গাছসহ অন্যান্য প্রজাতির গাছ, যা অনেকাংশে বিলুপ্ত তবে এই অঞ্চলে রয়েছে সেইসব গাছের সমারোহ, যা এই অঞ্চলের ইকো-সিস্টেমকে এখনো বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করে রেখেছে। উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর দুরাবস্থা দূর করে তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান, মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার জন্য সরকারকে এই অঞ্চলকে ঘিরে দীর্র্ঘমেয়াদি কার্যক্রম গ্রহণ করা জরুরিভাবে প্রয়োজন। দেশের এই উপকূলীয় অঞ্চলকে রক্ষার জন্য স্থায়ী পাকা বাঁধ নির্মাণ করা জরুরি। কারণ, এই ধরনের কোন পদক্ষেপ এখনই গ্রহণ করতে না পারলে দিন দিন সমুদ্রের পানিতে জমি হারিয়ে জলবায়ু উদ্বাস্তুর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তেই থাকবে যাদের পুনর্বাসন করা এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ভবিষ্যতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। বাংলাদেশের উপকূলীয় এই অঞ্চলের দুরাবস্থার জন্য জলবায়ুর পরিবর্তনই একমাত্র দায়ী। আর, জলবায়ুর এই পরিবর্তনে যে শীর্ষ দেশগুলো সবচেয়ে বেশি দায়ী তাদের এগিয়ে আসতে হবে বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভোগ কমাতে। কারণ, বাংলাদেশ বছরে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করে তা নিতান্তই সামান্য, অথচ জলবায়ুর ঝুঁকিতে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ঝুকিপূর্ণ। ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ুর পরিবর্তন বাংলাদেশের কৃষি জিডিপির এক-তৃতীয়াংশ ক্ষতির কারন হতে পারে। তাই, বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলো কর্তৃক বাংলাদেশের প্রতি জলবায়ুর ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং বাংলাদেশের জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য প্রতি বছর প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দের ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে বাংলাদেশ বর্তমান ক্ষতিকে প্রশমিত করার পাশাপাশি উপকূলীয় অঞ্চলকে রক্ষার জন্য স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। বাংলাদেশ জলবায়ু ন্যায়বিচার সেইসঙ্গে দাতাগোষ্ঠীর সহযোগিতা পেলে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবকে মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারবে।

[লেখক : প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর, গেইন বাংলাদেশ]

back to top