alt

উপ-সম্পাদকীয়

আমেরিকার অলিগার্কি পতনের আখ্যান

এম এ হোসাইন

: শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫

একসময়ের যে দেশ নাগরিক গুণাবলি, প্রাতিষ্ঠানিক সততা এবং নৈতিক স্পষ্টতার গর্ব করত, সেই আমেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইলন মাস্কের প্রকাশ্য কলহ এখন আর শুধু দুই শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের সংঘর্ষ নয়Ñএটি একটি ভেঙে পড়া প্রজাতন্ত্রের শেষ পর্বের জীবন্ত প্রতিকৃতি। আজকের আমেরিকা আসলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা শাসিত হচ্ছে না; বরং এটি একশ্রেণির সোনায় মোড়ানো ধনকুবের অভিজাতদের দ্বারা পরিচালিত এক অভিনয়মঞ্চে পরিণত হয়েছে। ট্রাম্প-মাস্ক বিরোধ কেবল কোন সংবাদ নয়, এটি একটি নিখুঁত রোগের বহিঃপ্রকাশ।

এই দ্বন্দ্বের সূচনা, আপাতদৃষ্টিতে, এক প্রস্তাবিত আইনের সূত্রে। ট্রাম্পের প্রস্তাবিত কর সংস্কার বিল, যেটিকে তিনি “বিগ বিউটিফুল বিল” নামে অভিহিত করেছিলেন, মাস্কের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে এর আর্থিক দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং নির্দিষ্ট খাতে বরাদ্দ কমানোর কারণে, বিশেষত বৈদ্যুতিক যানবাহনের জন্য প্রাপ্ত ফেডারেল ভর্তুকি হ্রাস করার জন্য। মাস্কের জন্য এটি কোনো মতাদর্শগত প্রশ্ন ছিল না, এটি ছিল অর্থ ও লাভের হিসাব। টেসলাÑযে কোম্পানি বহু বছর ধরে সরকারি প্রণোদনার সুবিধাভোগী, তা প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলার হারানোর আশঙ্কায় পড়ে। মাস্কের এই সরকারি ব্যয় নিয়ে ক্ষোভ সম্ভবত রাষ্ট্রীয় ঋণের প্রতি নয়, বরং ব্যক্তিগত লাভের ক্ষতি নিয়েই বেশি ছিল।

তবে এই প্রেক্ষাপটে যে বৃহত্তর বিদ্রুপ বিরাজ করছে, তা শ্বাসরুদ্ধকর। বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তি, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের করদাতাদের অর্থে চুক্তি, ট্যাক্স ক্রেডিট ও ভর্তুকির মাধ্যমে তার বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন, তিনিই এখন সেই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার, যেটিকে তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করে এসেছেন, যতক্ষণ না তা সামান্য অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছে। এটি সরকারের আধিপত্যের বিরুদ্ধে কোনো নৈতিক সমালোচনা নয়; এটি কেবল লুটের অংশ কমে যাওয়ায় একজন কোটিপতির অসন্তোষের প্রকাশ।

প্রত্যাশিতভাবেই, ট্রাম্প পাল্টা জবাব দেন হুমকির মাধ্যমে। যদি মাস্ক তার প্রস্তাবিত আইন নিয়ে সমালোচনা করতে থাকেন, তাহলে ট্রাম্প স্পেসএক্সকে দেয়া “বিলিয়ন ডলারের” ফেডারেল চুক্তিগুলো পুনর্বিবেচনা করবেন, যেসব চুক্তি শুধু মাস্কের সাম্রাজ্যের জন্যই নয়, বরং আমেরিকার মহাকাশ কর্মসূচির ভবিষ্যতের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মাস্কÑযিনি কখনো উত্তেজনা এড়িয়ে চলেন না, পাল্টা কৌশলে ট্রাম্পের কুখ্যাত জেফ্রি এপস্টাইনের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন ইঙ্গিত দেন। এটি এমন একটি দাবি যা উসকানিমূলক এবং প্রমাণহীন, তবু এই ‘পোস্ট-ট্রুথ’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নির্ভর রাজনৈতিক মঞ্চে পুরোপুরি উপযোগী এবং কৌশলী।

এই প্রহসনের মাধ্যমে যে চিত্র ফুটে ওঠে, তা কেবল অকার্যকারিতা নয়Ñএটি এক নির্মম প্রহসন। শাসনব্যবস্থা যখন ধনকুবেরদের হাতে পড়ে, তখন তা রূপ নেয় একধরনের খেয়ালিপনায়, যা নাটকীয় এবং অনেক সময়ই ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ থেকে আলাদা করা যায় না। যখন করনীতি ও মহাকাশ গবেষণার মতো জাতীয় স্বার্থ নির্ভর করে দুজন ক্ষমতাধর ব্যক্তির ব্যক্তিগত অহমিকার ওপর, তখন প্রশ্ন উঠেই যায়: এটি কি এখনো কোনো প্রজাতন্ত্র, নাকি কেবল একটি রঙ্গমঞ্চ?

এই চিত্রটিকে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে দেখতে চাইলে রোম সাম্রাজ্যের উদাহরণ টানার প্রয়োজন নেই, বরং যুক্তরাষ্ট্রের গিল্ডেড এজ বা সোনালি যুগের অন্তিম পর্যায় অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। সে সময়েও কিছু কর্পোরেট রাজা বা ‘রবার ব্যারন’ নীতিনির্ধারণে মাত্রাতিরিক্ত প্রভাব খাটাতেন, আর নির্বাচিত রাজনীতিকরা কার্যত তাদের সুবিধাবাহক হয়ে উঠেছিলেন। পার্থক্য এই যে, কার্নেগি ও রকফেলারের মতো ব্যক্তিরা, তাদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, অন্তত নাগরিক মূল্যবোধের কিছু বাহ্যিক ভান রাখতেন। কিন্তু আজকের অলিগার্কদের সেই ভানটুকুও নেই। তারা গণতান্ত্রিক রীতিনীতি নিয়ে যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ অবজ্ঞা প্রকাশ করেন, তা অনেক বেশি নগ্ন এবং অনেক বেশি বিপজ্জনক।

উদাহরণস্বরূপ, মাস্ক প্রকাশ্যেই গর্ব করে বলেছেন যে, তার সমর্থন ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হতে সাহায্য করেছে। এটি কোনো সাধারণ রাজনৈতিক দাতার ভাষা নয়; এটি একধরনের মালিকানার দাবি। অপরদিকে, ট্রাম্পের ধারণা যেন আমেরিকার ধনকুবেরদের আনুগত্য তার জন্মগত অধিকার। এটি কোনো মতাদর্শগত মিল বা ভবিষ্যতের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে নয়, বরং একেবারে বিনিময়ভিত্তিক সুবিধার হিসাব।

তবে এই দ্বন্দ্বের সবচেয়ে শীতল এবং শঙ্কাজনক দিকটি হলো যা বলা হচ্ছে না, সেই নীরবতা। ট্রাম্প ও মাস্কÑদুজনই নিরঙ্কুশভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েল-নীতি সমর্থন করে চলেছেন, এমনকি যখন সেই নীতি আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে গাজার ভেতরে গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছে। ওয়াশিংটনে উভয় দলের সম্মতিতে ৯০,০০০ টনেরও বেশি সামরিক সহায়তা ইসরায়েলি বাহিনীর কাছে পাঠানো হয়েছেÑতবু এই মানবিক বিপর্যয় দুজনের কেউই তাদের টুইটার বার্তা বা বক্তৃতায় স্থান দেননি। কেন? কারণ এতে কোনো বিনিময়যোগ্য লাভ নেই। কোনো বিদেশি ভূখ-ে বেসামরিক মানুষের যন্ত্রণা তাদের কাছে গুরুত্ব পায় নাÑযেখানে পুরো গণনায় কেবল বাজার শেয়ার আর মিডিয়া চিত্র নিয়েই ভাবনা।

এটি নিছক উদাসীনতা নয়, এটি নৈতিক দায়িত্বের প্রতি প্রকাশ্য বৈরিতা। নেতৃত্ব মানেই যে আত্মত্যাগ কিংবা জবাবদিহিতা থাকতে হবে, সেই ধারণাকেই তারা প্রত্যাখ্যান করছেন। ট্রাম্প ও মাস্কÑযারা এখন আমেরিকান অভিজাত শ্রেণির প্রতীক। তারা কেবল নৈতিকভাবে জীর্ণ নন, বরং ক্রমাগত নৈতিকতার বিরুদ্ধেই অবস্থান নিচ্ছেন। তাদের দ্বন্দ্ব কোনো ভিন্ন ভিন্ন আমেরিকার স্বপ্ন নিয়ে নয়; বরং এই নিয়ে যে, প্রভাবের সাম্রাজ্যে কার আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে।

এটি অবশ্য মানে নয় যে তারা সমান ক্ষমতাবান। মাস্ক নিয়ন্ত্রণ করেন আমেরিকার অর্থনীতি ও প্রযুক্তিগত ভবিষ্যতের গুরুত্বপূর্ণ অংশÑস্যাটেলাইট, বৈদ্যুতিক গাড়ি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। বিপরীতে, ট্রাম্পের হাতে আছে একটি আন্দোলন, যা জনতাবাদ ও ব্যক্তিপূজার মিশ্রণ, তবে সেটি এখনও ভঙ্গুর প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে। তবু দুজনের একটি বিশ্বাস অভিন্ন: গণতন্ত্র হলো এমন এক ব্যবস্থাপনা, যেটিকে চালনা করতে হয়Ñসম্মান করতে নয়।

এই ধরনের পতনের ঐতিহাসিক নজির আগেও দেখা গেছে। ভাইমার জার্মানি, বেরলুসকোনির অধীনে ইতালি কিংবা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তিম দিনগুলোতেও, ধনকুবেরদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব অনেক সময় রাজনীতির ছদ্মবেশে প্রকাশ পেত। অথচ সেগুলো আসলে ছিল এক গভীর প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতার লক্ষণ। এমন ভোগ-বিলাস ও ভ-ামির পরিণতি সচরাচর নবজাগরণ নয়Ñসাধারণত তা হয় অবক্ষয়, অথবা তার চেয়েও খারাপ কিছু।

এই নাটকীয়তার বিস্ময়কর রূপ নিয়েও অবাক হওয়ার কিছু নেই। ট্রাম্প, বহুবার ঢাক-ঢোল পিটিয়ে এগিয়ে গিয়ে শেষমেশ পিছু হটেছেন। অন্যদিকে, মাস্ক, সব সাহসী উচ্চারণের পরেও ইতিমধ্যে স্পেসএক্স উৎক্ষেপণ স্থগিত রাখা নিয়ে দ্বিধা প্রকাশ শুরু করে দিয়েছেন। এরা কেউই দৃঢ় আদর্শে বিশ্বাসী ব্যক্তি নন। তারা এক একজন মঞ্চশিল্পী, যাদের আসল আগ্রহ ইতিহাস গড়ায় নয়, সংবাদ শিরোনামে রাজত্ব করায়।

তবুও এই দ্বন্দ্ব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি কোনোভাবেই গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত নয়। একটি সুস্থ প্রজাতন্ত্রে কোনো একক ব্যক্তি, বা এমনকি দুজনও, মহাকাশ কর্মসূচি, কর আইন কিংবা জাতীয় মর্যাদাকে ব্যক্তিগত ক্ষমতার খেলায় কাজে লাগাতে পারেন না। একটি সচল গণতন্ত্রে ধনকুবেরদের হাতে কংগ্রেস কিংবা সরকারি চুক্তির ওপর ভেটো ক্ষমতা থাকার কথা নয়। সমস্যা কেবল এই দুই ব্যক্তিতে সীমাবদ্ধ নয়Ñসমস্যা সেই ব্যবস্থায়, যা তাদের এতটা বেপরোয়া প্রভাব বিস্তারের সুযোগ দিয়েছে।

আমেরিকা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে একটি দেশের শাসনব্যবস্থা এখন এক প্রকার রিয়্যালিটি শো-এর রূপ নিয়েছে। প্রতিটি পর্ব আগের চেয়ে আরও বেশি অযৌক্তিক, কিন্তু যার বাস্তব প্রভাব পড়ছে কোটি কোটি মানুষের জীবনে। যদি এটিই হয়ে থাকে আজকের যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক ক্ষমতার রূপ যেখানে একজন ব্যর্থ জননেতা ও এক প্রযুক্তিনির্ভর স্বৈরাচারীর কুৎসিত লড়াই এর মঞ্চ, তবে এই প্রজাতন্ত্র এমন এক গভীর সংকটে পড়েছে, যা হয়তো এই দুই ব্যক্তির কেউই উপলব্ধি করেন না, কিংবা করতে চান না।

অবশেষে, ট্রাম্প-মাস্ক নাটক কেবল একটি বিকৃত বিভ্রান্তি এবং একটি গভীরতর পচনের বহিঃপ্রকাশ। আমেরিকানদের অনুসন্ধানের বিষয় হওয়া উচিত কে এই দ্বন্দ্বে জিতবে তা নয়, বরং এটি আদৌ কেন ঘটছে। কেন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে, যা একেকজন আহত আত্মমর্যাদার খামখেয়ালি ইচ্ছায় কেঁপে ওঠে? কেন রাষ্ট্রের গণ-আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে টুইটারের ঝগড়া, আদর্শ বা ভবিষ্যতের ভাবনা নয়?

উত্তরটি বেদনাদায়ক হলেও সুস্পষ্ট: হয়তোবা প্রজ্ঞার জায়গায় সম্পদকে বসানো হয়েছে, চরিত্রের বদলে প্রভাবকে মূল্য দেয়া হচ্ছে। আমেরিকান গণতন্ত্রÑযার ভিত্তি ছিল আলোকায়নের আদর্শ আর ম্যাডিসনের ভারসাম্যপূর্ণ রাষ্ট্রব্যবস্থাÑআজ তা পুঁজির স্বর্ণদ-ধারী অভিজাতদের এবং রাজনীতি ও গণমাধ্যমে তাদের চাটুকারদের হাতে বন্দি।

নতুন নেতৃত্ব, নতুন নীতি, কিংবা নতুন কোনো ধনকুবেরের আগমনে যে এই সংকটের সমাধান হবে, এমন ভাবা সহজ। কিন্তু প্রকৃত চাহিদা তার চেয়েও গভীর। এটি হলো এক সাংস্কৃতিক বিপ্লব, সত্যিকার অর্থে; সহিংসতার নয়, বরং মূল্যবোধের। এক প্রত্যাঘাত, যা ঘোষণা করে: প্রজাতন্ত্র তার নাগরিকদের, ধনকুবেরদের নয়।

এই রূপান্তর না আসা পর্যন্ত, আমেরিকান জনগণ থেকে যাবে এমন এক নাটকের দর্শক হিসেবে, যার চিত্রনাট্য তারা লেখেনি, পরিচালনাও করতে পারে না এবং প্রতিটি দৃশ্যে বাড়তে থাকবে তাদের আতঙ্ক, যখন দেখবে তাদের গণতন্ত্র ধীরে ধীরে নিলামে তুলে দিচ্ছে সবচেয়ে ধনী উত্তরাধিকারীরা।

তাই হ্যাঁ, এখনই সময় যুক্তরাষ্ট্রের ডিপ স্টেট বা রাজনৈতিক শক্তি গুলোর সতর্কতা অবলম্বন করার। তবে এটুকুই এখন বলা যায়: এই পথের শেষ গন্তব্য ধ্বংস, যদি না দ্রুত দিক পরিবর্তন করা হয়।

[লেখক : প্রাবন্ধিক]

সরকারি হাসপাতালের পরিবেশ

রম্যগদ্য : ‘উহু উহু, তোরে মাফ করা যায় না...’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট : সংকোচন, সংকট ও সম্ভাবনার প্রতিফলন

আম রপ্তানি : বাস্তবতা ও চ্যালেঞ্জ

ছবি

সামাজিকমাধ্যম গুরুত্বহীন নয়

জমির শ্রেণী চেনার উপায় ও পরিবর্তনের নিয়ম-কানুন

বাংলাদেশ : “রক্তে জন্ম আর পানিতে মরণ”

নতুন নোট, নতুন বিতর্ক

রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের হতাশা ও উপজেলা পর্যায়ের অদক্ষতা : কে নেবে দায়িত্ব?

তরল সম্পর্কের গোলকধাঁধা

পরিবার থেকে রাষ্ট্র : ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের উপায়

বাজেটে বৈষম্য কমানোর কোনো স্পষ্ট প্রতিফলন আছে কি

চোখের নজর কম হলে আর কাজল দিয়ে কী হবে

রম্যগদ্য : ‘নির্বাচন, না নীর-বচন...’

প্লাস্টিক দূষণ নয়, প্রকৃতির পাশে দাঁড়ান

কোরবানির পর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

ত্যাগের মহিমায় ঈদুল আজহা

নাম ও মর্যাদা : অর্থবহ নামকরণে বৈষম্য রোধের আহ্বান

ডিজিটাল পুঁজিবাদের যুগে নগর বাংলাদেশের শ্রেণী কাঠামো

পারিবারিক শিক্ষা ও রাষ্ট্রসংস্কার : ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের পথরেখা

প্রসঙ্গ : রাজধানীর যানজট

নবায়নযোগ্য জ্বালানি : চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

ছবি

তাহলে একাত্তরে হয়নিকো কোনো অপরাধ!

ঈদযাত্রা হোক নিরাপদ

আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্য কৌশলে বাস্তববাদী বাঁক

রম্যগদ্য : ‘জনগণের ভালোবাসা কি আমার ব্যাংক-ব্যালেন্স বাড়াইবো?’

ভালো থাকার কঠিন কলা : কিছু সরল সত্য

নীরব ঘাতক তামাক

পরিবেশবান্ধব নগর গঠনে রাজনীতিবিদদের ভূমিকা

নিয়ন্ত্রণহীন নেটজগৎ ও ফেইসবুক : সমাজে বিভ্রান্তির ডিজিটাল উৎপত্তি

বস্তিবাসী নারী : অদৃশ্য শক্তির আখ্যান

চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল : বিতর্ক, নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থের প্রশ্ন

সংস্কারের ভবিষ্যত কী?

বজ্রপাত, ঘূর্ণিঝড় চায় না তো কেউ, প্রকৃতির নিয়মে আসে কিন্তু তাই!

কেন থমকে আছে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি

বদলাচ্ছে সমাজ, বদলাচ্ছে অর্জনের গল্প

tab

উপ-সম্পাদকীয়

আমেরিকার অলিগার্কি পতনের আখ্যান

এম এ হোসাইন

শনিবার, ১৪ জুন ২০২৫

একসময়ের যে দেশ নাগরিক গুণাবলি, প্রাতিষ্ঠানিক সততা এবং নৈতিক স্পষ্টতার গর্ব করত, সেই আমেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইলন মাস্কের প্রকাশ্য কলহ এখন আর শুধু দুই শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের সংঘর্ষ নয়Ñএটি একটি ভেঙে পড়া প্রজাতন্ত্রের শেষ পর্বের জীবন্ত প্রতিকৃতি। আজকের আমেরিকা আসলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা শাসিত হচ্ছে না; বরং এটি একশ্রেণির সোনায় মোড়ানো ধনকুবের অভিজাতদের দ্বারা পরিচালিত এক অভিনয়মঞ্চে পরিণত হয়েছে। ট্রাম্প-মাস্ক বিরোধ কেবল কোন সংবাদ নয়, এটি একটি নিখুঁত রোগের বহিঃপ্রকাশ।

এই দ্বন্দ্বের সূচনা, আপাতদৃষ্টিতে, এক প্রস্তাবিত আইনের সূত্রে। ট্রাম্পের প্রস্তাবিত কর সংস্কার বিল, যেটিকে তিনি “বিগ বিউটিফুল বিল” নামে অভিহিত করেছিলেন, মাস্কের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে এর আর্থিক দায়িত্বজ্ঞানহীনতা এবং নির্দিষ্ট খাতে বরাদ্দ কমানোর কারণে, বিশেষত বৈদ্যুতিক যানবাহনের জন্য প্রাপ্ত ফেডারেল ভর্তুকি হ্রাস করার জন্য। মাস্কের জন্য এটি কোনো মতাদর্শগত প্রশ্ন ছিল না, এটি ছিল অর্থ ও লাভের হিসাব। টেসলাÑযে কোম্পানি বহু বছর ধরে সরকারি প্রণোদনার সুবিধাভোগী, তা প্রায় ১.২ বিলিয়ন ডলার হারানোর আশঙ্কায় পড়ে। মাস্কের এই সরকারি ব্যয় নিয়ে ক্ষোভ সম্ভবত রাষ্ট্রীয় ঋণের প্রতি নয়, বরং ব্যক্তিগত লাভের ক্ষতি নিয়েই বেশি ছিল।

তবে এই প্রেক্ষাপটে যে বৃহত্তর বিদ্রুপ বিরাজ করছে, তা শ্বাসরুদ্ধকর। বিশ্বের ধনীতম ব্যক্তি, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের করদাতাদের অর্থে চুক্তি, ট্যাক্স ক্রেডিট ও ভর্তুকির মাধ্যমে তার বিপুল সম্পদ গড়ে তুলেছেন, তিনিই এখন সেই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সোচ্চার, যেটিকে তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করে এসেছেন, যতক্ষণ না তা সামান্য অস্বস্তিকর হয়ে উঠেছে। এটি সরকারের আধিপত্যের বিরুদ্ধে কোনো নৈতিক সমালোচনা নয়; এটি কেবল লুটের অংশ কমে যাওয়ায় একজন কোটিপতির অসন্তোষের প্রকাশ।

প্রত্যাশিতভাবেই, ট্রাম্প পাল্টা জবাব দেন হুমকির মাধ্যমে। যদি মাস্ক তার প্রস্তাবিত আইন নিয়ে সমালোচনা করতে থাকেন, তাহলে ট্রাম্প স্পেসএক্সকে দেয়া “বিলিয়ন ডলারের” ফেডারেল চুক্তিগুলো পুনর্বিবেচনা করবেন, যেসব চুক্তি শুধু মাস্কের সাম্রাজ্যের জন্যই নয়, বরং আমেরিকার মহাকাশ কর্মসূচির ভবিষ্যতের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মাস্কÑযিনি কখনো উত্তেজনা এড়িয়ে চলেন না, পাল্টা কৌশলে ট্রাম্পের কুখ্যাত জেফ্রি এপস্টাইনের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে এমন ইঙ্গিত দেন। এটি এমন একটি দাবি যা উসকানিমূলক এবং প্রমাণহীন, তবু এই ‘পোস্ট-ট্রুথ’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নির্ভর রাজনৈতিক মঞ্চে পুরোপুরি উপযোগী এবং কৌশলী।

এই প্রহসনের মাধ্যমে যে চিত্র ফুটে ওঠে, তা কেবল অকার্যকারিতা নয়Ñএটি এক নির্মম প্রহসন। শাসনব্যবস্থা যখন ধনকুবেরদের হাতে পড়ে, তখন তা রূপ নেয় একধরনের খেয়ালিপনায়, যা নাটকীয় এবং অনেক সময়ই ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ থেকে আলাদা করা যায় না। যখন করনীতি ও মহাকাশ গবেষণার মতো জাতীয় স্বার্থ নির্ভর করে দুজন ক্ষমতাধর ব্যক্তির ব্যক্তিগত অহমিকার ওপর, তখন প্রশ্ন উঠেই যায়: এটি কি এখনো কোনো প্রজাতন্ত্র, নাকি কেবল একটি রঙ্গমঞ্চ?

এই চিত্রটিকে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে দেখতে চাইলে রোম সাম্রাজ্যের উদাহরণ টানার প্রয়োজন নেই, বরং যুক্তরাষ্ট্রের গিল্ডেড এজ বা সোনালি যুগের অন্তিম পর্যায় অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। সে সময়েও কিছু কর্পোরেট রাজা বা ‘রবার ব্যারন’ নীতিনির্ধারণে মাত্রাতিরিক্ত প্রভাব খাটাতেন, আর নির্বাচিত রাজনীতিকরা কার্যত তাদের সুবিধাবাহক হয়ে উঠেছিলেন। পার্থক্য এই যে, কার্নেগি ও রকফেলারের মতো ব্যক্তিরা, তাদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, অন্তত নাগরিক মূল্যবোধের কিছু বাহ্যিক ভান রাখতেন। কিন্তু আজকের অলিগার্কদের সেই ভানটুকুও নেই। তারা গণতান্ত্রিক রীতিনীতি নিয়ে যে ঔদ্ধত্যপূর্ণ অবজ্ঞা প্রকাশ করেন, তা অনেক বেশি নগ্ন এবং অনেক বেশি বিপজ্জনক।

উদাহরণস্বরূপ, মাস্ক প্রকাশ্যেই গর্ব করে বলেছেন যে, তার সমর্থন ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হতে সাহায্য করেছে। এটি কোনো সাধারণ রাজনৈতিক দাতার ভাষা নয়; এটি একধরনের মালিকানার দাবি। অপরদিকে, ট্রাম্পের ধারণা যেন আমেরিকার ধনকুবেরদের আনুগত্য তার জন্মগত অধিকার। এটি কোনো মতাদর্শগত মিল বা ভবিষ্যতের অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির ভিত্তিতে নয়, বরং একেবারে বিনিময়ভিত্তিক সুবিধার হিসাব।

তবে এই দ্বন্দ্বের সবচেয়ে শীতল এবং শঙ্কাজনক দিকটি হলো যা বলা হচ্ছে না, সেই নীরবতা। ট্রাম্প ও মাস্কÑদুজনই নিরঙ্কুশভাবে যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েল-নীতি সমর্থন করে চলেছেন, এমনকি যখন সেই নীতি আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে গাজার ভেতরে গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছে। ওয়াশিংটনে উভয় দলের সম্মতিতে ৯০,০০০ টনেরও বেশি সামরিক সহায়তা ইসরায়েলি বাহিনীর কাছে পাঠানো হয়েছেÑতবু এই মানবিক বিপর্যয় দুজনের কেউই তাদের টুইটার বার্তা বা বক্তৃতায় স্থান দেননি। কেন? কারণ এতে কোনো বিনিময়যোগ্য লাভ নেই। কোনো বিদেশি ভূখ-ে বেসামরিক মানুষের যন্ত্রণা তাদের কাছে গুরুত্ব পায় নাÑযেখানে পুরো গণনায় কেবল বাজার শেয়ার আর মিডিয়া চিত্র নিয়েই ভাবনা।

এটি নিছক উদাসীনতা নয়, এটি নৈতিক দায়িত্বের প্রতি প্রকাশ্য বৈরিতা। নেতৃত্ব মানেই যে আত্মত্যাগ কিংবা জবাবদিহিতা থাকতে হবে, সেই ধারণাকেই তারা প্রত্যাখ্যান করছেন। ট্রাম্প ও মাস্কÑযারা এখন আমেরিকান অভিজাত শ্রেণির প্রতীক। তারা কেবল নৈতিকভাবে জীর্ণ নন, বরং ক্রমাগত নৈতিকতার বিরুদ্ধেই অবস্থান নিচ্ছেন। তাদের দ্বন্দ্ব কোনো ভিন্ন ভিন্ন আমেরিকার স্বপ্ন নিয়ে নয়; বরং এই নিয়ে যে, প্রভাবের সাম্রাজ্যে কার আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে।

এটি অবশ্য মানে নয় যে তারা সমান ক্ষমতাবান। মাস্ক নিয়ন্ত্রণ করেন আমেরিকার অর্থনীতি ও প্রযুক্তিগত ভবিষ্যতের গুরুত্বপূর্ণ অংশÑস্যাটেলাইট, বৈদ্যুতিক গাড়ি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। বিপরীতে, ট্রাম্পের হাতে আছে একটি আন্দোলন, যা জনতাবাদ ও ব্যক্তিপূজার মিশ্রণ, তবে সেটি এখনও ভঙ্গুর প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে। তবু দুজনের একটি বিশ্বাস অভিন্ন: গণতন্ত্র হলো এমন এক ব্যবস্থাপনা, যেটিকে চালনা করতে হয়Ñসম্মান করতে নয়।

এই ধরনের পতনের ঐতিহাসিক নজির আগেও দেখা গেছে। ভাইমার জার্মানি, বেরলুসকোনির অধীনে ইতালি কিংবা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তিম দিনগুলোতেও, ধনকুবেরদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব অনেক সময় রাজনীতির ছদ্মবেশে প্রকাশ পেত। অথচ সেগুলো আসলে ছিল এক গভীর প্রাতিষ্ঠানিক ব্যর্থতার লক্ষণ। এমন ভোগ-বিলাস ও ভ-ামির পরিণতি সচরাচর নবজাগরণ নয়Ñসাধারণত তা হয় অবক্ষয়, অথবা তার চেয়েও খারাপ কিছু।

এই নাটকীয়তার বিস্ময়কর রূপ নিয়েও অবাক হওয়ার কিছু নেই। ট্রাম্প, বহুবার ঢাক-ঢোল পিটিয়ে এগিয়ে গিয়ে শেষমেশ পিছু হটেছেন। অন্যদিকে, মাস্ক, সব সাহসী উচ্চারণের পরেও ইতিমধ্যে স্পেসএক্স উৎক্ষেপণ স্থগিত রাখা নিয়ে দ্বিধা প্রকাশ শুরু করে দিয়েছেন। এরা কেউই দৃঢ় আদর্শে বিশ্বাসী ব্যক্তি নন। তারা এক একজন মঞ্চশিল্পী, যাদের আসল আগ্রহ ইতিহাস গড়ায় নয়, সংবাদ শিরোনামে রাজত্ব করায়।

তবুও এই দ্বন্দ্ব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি কোনোভাবেই গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত নয়। একটি সুস্থ প্রজাতন্ত্রে কোনো একক ব্যক্তি, বা এমনকি দুজনও, মহাকাশ কর্মসূচি, কর আইন কিংবা জাতীয় মর্যাদাকে ব্যক্তিগত ক্ষমতার খেলায় কাজে লাগাতে পারেন না। একটি সচল গণতন্ত্রে ধনকুবেরদের হাতে কংগ্রেস কিংবা সরকারি চুক্তির ওপর ভেটো ক্ষমতা থাকার কথা নয়। সমস্যা কেবল এই দুই ব্যক্তিতে সীমাবদ্ধ নয়Ñসমস্যা সেই ব্যবস্থায়, যা তাদের এতটা বেপরোয়া প্রভাব বিস্তারের সুযোগ দিয়েছে।

আমেরিকা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে একটি দেশের শাসনব্যবস্থা এখন এক প্রকার রিয়্যালিটি শো-এর রূপ নিয়েছে। প্রতিটি পর্ব আগের চেয়ে আরও বেশি অযৌক্তিক, কিন্তু যার বাস্তব প্রভাব পড়ছে কোটি কোটি মানুষের জীবনে। যদি এটিই হয়ে থাকে আজকের যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক ক্ষমতার রূপ যেখানে একজন ব্যর্থ জননেতা ও এক প্রযুক্তিনির্ভর স্বৈরাচারীর কুৎসিত লড়াই এর মঞ্চ, তবে এই প্রজাতন্ত্র এমন এক গভীর সংকটে পড়েছে, যা হয়তো এই দুই ব্যক্তির কেউই উপলব্ধি করেন না, কিংবা করতে চান না।

অবশেষে, ট্রাম্প-মাস্ক নাটক কেবল একটি বিকৃত বিভ্রান্তি এবং একটি গভীরতর পচনের বহিঃপ্রকাশ। আমেরিকানদের অনুসন্ধানের বিষয় হওয়া উচিত কে এই দ্বন্দ্বে জিতবে তা নয়, বরং এটি আদৌ কেন ঘটছে। কেন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে এমন একটি ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে, যা একেকজন আহত আত্মমর্যাদার খামখেয়ালি ইচ্ছায় কেঁপে ওঠে? কেন রাষ্ট্রের গণ-আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে টুইটারের ঝগড়া, আদর্শ বা ভবিষ্যতের ভাবনা নয়?

উত্তরটি বেদনাদায়ক হলেও সুস্পষ্ট: হয়তোবা প্রজ্ঞার জায়গায় সম্পদকে বসানো হয়েছে, চরিত্রের বদলে প্রভাবকে মূল্য দেয়া হচ্ছে। আমেরিকান গণতন্ত্রÑযার ভিত্তি ছিল আলোকায়নের আদর্শ আর ম্যাডিসনের ভারসাম্যপূর্ণ রাষ্ট্রব্যবস্থাÑআজ তা পুঁজির স্বর্ণদ-ধারী অভিজাতদের এবং রাজনীতি ও গণমাধ্যমে তাদের চাটুকারদের হাতে বন্দি।

নতুন নেতৃত্ব, নতুন নীতি, কিংবা নতুন কোনো ধনকুবেরের আগমনে যে এই সংকটের সমাধান হবে, এমন ভাবা সহজ। কিন্তু প্রকৃত চাহিদা তার চেয়েও গভীর। এটি হলো এক সাংস্কৃতিক বিপ্লব, সত্যিকার অর্থে; সহিংসতার নয়, বরং মূল্যবোধের। এক প্রত্যাঘাত, যা ঘোষণা করে: প্রজাতন্ত্র তার নাগরিকদের, ধনকুবেরদের নয়।

এই রূপান্তর না আসা পর্যন্ত, আমেরিকান জনগণ থেকে যাবে এমন এক নাটকের দর্শক হিসেবে, যার চিত্রনাট্য তারা লেখেনি, পরিচালনাও করতে পারে না এবং প্রতিটি দৃশ্যে বাড়তে থাকবে তাদের আতঙ্ক, যখন দেখবে তাদের গণতন্ত্র ধীরে ধীরে নিলামে তুলে দিচ্ছে সবচেয়ে ধনী উত্তরাধিকারীরা।

তাই হ্যাঁ, এখনই সময় যুক্তরাষ্ট্রের ডিপ স্টেট বা রাজনৈতিক শক্তি গুলোর সতর্কতা অবলম্বন করার। তবে এটুকুই এখন বলা যায়: এই পথের শেষ গন্তব্য ধ্বংস, যদি না দ্রুত দিক পরিবর্তন করা হয়।

[লেখক : প্রাবন্ধিক]

back to top