আনোয়ারুল হক
পরাভূত শাসক শেখ হাসিনা পরপর তিনটি পাতানো নির্বাচন বা নির্বাচনের নামে প্রহসন করে একটি গণঅভ্যুত্থান বা অন্তত ‘শহুরে মানুষের অভ্যুত্থানের’ জন্য পটভূমি প্রস্তুত রেখেছিলেন। স্পষ্টতই তিনি, তার দল এবং দলীয় প্রভাবে সাজানো প্রশাসন একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে ভয় পেত। আবার জুলাই অভ্যুত্থানের পরেও নির্বাচনের কথা উঠলেই অন্তর্বর্তী শাসক আর তাদের ‘এম্পলয়ারদের’
চান্দি গরম হয়ে উঠত। নির্বাচনের দাবিদারদের ভারতীয় বা ‘র’-এর এজেন্ট তকমা দিয়ে দেওয়া হয়। একটি অর্থবহ নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং স্বাভাবিক গনতান্ত্রিক পুনর্গঠনের প্রয়োজনে কিছু জরুরি সংস্কার প্রয়োজন। ১০ মাস সেজন্য কম সময় ছিল না। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও কোনো অগ্রগতি নেই। মানুষের মাঝে এমন একটা ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, বিশেষ একটি দলের জন্য সুবিধা সৃষ্টির লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন ছাড়াই দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকতে চায়। সরকার আশাবাদী ছিল যে নির্বাচনের একটি তারিখ ঘোষণা করে দিলেই মানুষের সেই ধারণা পাল্টে যাবে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। ওই তারিখ ঘিরেই সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়বে। কিন্তু ঘটনা ঘটেছে উল্টো। ডিসেম্বর-জানুয়ারির সুবিধাজনক সময় বাদ দিয়ে এপ্রিলের বৈরী আবহাওয়ায় এবং প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারের সময় পড়বে রমজান মাসে-এ কারণে সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করার পরেও সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে মানুষের মাঝে নানা প্রশ্ন উঠেছে। রাজনৈতিক সভার আগে-পরে রাজনৈতিক নেতারা যে স্টাইলে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন ঈদুল আজহার জামাতের পরে প্রধান উপদেষ্টা অনেকটা সেই স্টাইলে নামাজিদের একাংশের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সে সময়ে কিছুটা লাজুক কণ্ঠে ২-৪ জনকে ৫ বছর ৫ বছর উচ্চারণ করতে শোনা যায়। এই উচ্চারণ আবার টেলিভিশন ও সোশ্যাল মিডিয়াকে দিয়ে বারবার প্রচার করানোয় সেই সন্দেহ আরও দানা বাঁধে। এর আগে কয়েকজন উপদেষ্টার বক্তব্য, যেমন- জনগণ এ সরকারকে পাঁচ বছর চায়, কে বলেছে আমরা নির্বাচিত না, এই সরকার শুধু নির্বাচন করার জন্য আসে নাই, তোমাদের (এনসিপি) নেতৃত্বে আরও দশ বছর কাজ করতে চাই-জনমানসে ও রাজনৈতিক দল সমূহের মধ্যে সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করে।
ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলো ও এনসিপি ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দলই এপ্রিল মাসের নির্বাচনের তারিখকে সমর্থন করেনি। জামায়াতে ইসলামীর জন্য খুবই বিব্রতকর বলে ডিসেম্বরে স্বাধীনতার বিজয়ের মাসে নির্বাচন না করার জন্য তাদের তীব্র চাপ আছে। তবে আওয়ামী লীগের অবর্তমানে দেশের বর্তমান রাজনীতিতে প্রায় নিরঙ্কুশ প্রাধান্য সৃষ্টিকারী দল বিএনপি মধ্য এপ্রিলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। এমন একটা সময় নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে যখন গ্রীষ্মের দাবদাহ শুরু হবে এবং ঠিক তার আগেই রমজান ও ঈদুল ফিতর। অনেকেই মনে করছেন, ডিসেম্বরে নির্বাচন করার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সরকার ইচ্ছা করেই এপ্রিলের কথা ঘোষণা করে নির্বাচন নিয়ে ঘোরপ্যাঁচ করছে। যাতে হয়তোবা নির্বাচনী সিডিউল ঘোষণার আগে আগে কোনো কোনো রাজনৈতিক শক্তিকে দিয়ে নির্বাচন পেছানোর দাবি তোলা যায়। একটা যমুনা মব আয়োজন করতে পারলেই অন্তত আরও ৬ মাস পিছিয়ে দেয়া যাবে।
আবার সরকারি মহলে ভিন্ন চিন্তাও আছে। এনসিপি দলটি এখনো গুছিয়ে উঠতে পারেনি। আগামী ৬ মাস বা ১-২ বছরেও খুব একটা অগ্রগতির সম্ভাবনা নেই। এনসিপি নেতাদের অধিকাংশই জুলাই জাগরণের মুখ হওয়া সত্ত্বেও তাদের সভা-সমাবেশ করতে হয় ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলো কর্তৃক সরবরাহকৃত জনবল দিয়ে। এখন পর্যন্ত দলটি ‘সংস্কার আর বিচার’ জপ করা ছাড়া সুনির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দর্শন ও কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেনি। যতই দিন যাচ্ছে ততই স্পষ্ট হচ্ছে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আর আন্দোলনের বাহাদুরি এক কথা নয়। জুলাই আন্দোলনে রাজনৈতিক দলের বাইরে শিক্ষক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিল্পী, সাহিত্যিকসহ যেসব ক্রিয়াশীল শক্তি বিশেষত শ্রুমজীবী মানুষের সহযোগিতা এবং সমর্থনের কারণে এ আন্দোলনটি সর্বজনীন রূপ পেয়েছিল, ১০ মাস ধরে যেভাবে দেশ চলছে তা দেখে তারা প্রকাশ্যেই অসন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন।
বর্তমানে যে রাজনৈতিক মেরুকরণ সৃষ্টি হয়েছে তাতে করে নতুন দলের রাজনৈতিক অর্জন ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ঝুঁকির মুখে আছে। নির্বাচনী হাওয়ার মুখে তারা নিশ্চিতভাবেই কঠিন বাস্তবতার মুখে পড়েছেন।
ঈদের ছুটিতে তো গ্রামে ঘুরে এলাম। সেখানকার পরিস্থিতি শহর অপেক্ষা আরও ভিন্ন। গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামো আগের মতোই আছে। শুধু ভিন্নতা নেতৃত্বের আর রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যের। আগে নেতৃত্বে ছিল আওয়ামী লীগ, এখন বিএনপি। গ্রামে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব প্রকাশ্যে নেই। তবে এই ক্ষমতা কাঠামোর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ আছে। আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরাও এ কাঠামোর মধ্যে মিশে আছেন। তাদের কণ্ঠস্বর নিচু গলায় কিন্তু কোনো অনুশোচনা নেই। দলের ভুলত্রুটি তারা বোঝেন। কিন্তু মনে করেন সবকিছুই একটা ষড়যন্ত্রের ফল। দলের প্রতি আনুগত্য এখনো অটুট বিএনপি নেতাকর্মীদের কণ্ঠস্বর উঁচুতে। প্রশাসন ও থানা পুলিশকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা তারা রাখেন। দুখঃজনক বিষয় হলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা এক বাস্তবতা চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের অবসান হয়নি। কি শহর, কি গ্রাম। শুধু হাতবদল হয়েছে। এ ক্ষমতা কাঠামোতে ব্যতিক্রম হিসাবে কোথাও কোথাও জামায়াত এমনকি খুবই সীমিত জায়গায় বামপন্থিরা থাকলেও এনসিপির কোনো অস্তিত্ব নেই। এনসিপির কোন কেন্দ্রীয় নেতা এলাকায় গেলে প্রশাসন ও ধর্মীয় সংগঠনের সহযোগিতায় তাদের সমাবেশ বা পথসভা করতে হয়। তাই এনসিপি নেতা সারজিস আলম যথার্থই বলেছেন, ‘এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন হলে জয়লাভ তো দূরের কথা, অধিকাংশ আসনে জামানত হারাতে হবে।’ তবে এনসিপি নেতাদের একাংশ ঢাকাতে বসেই রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যের সদ্ব্যবহার করে অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন।
সরকারও দেশে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি করতে পারেনি। অর্থনীতির সূচকগুলো নিম্নগামী। নির্বাচিত সরকার অন্তর্বর্তী সরকারের এত দিনকার কাজগুলোকে কতটুকু স্বীকৃতি দেবে, সমন্বয়কতন্ত্রের নামে মব সৃষ্টি করে যে সমস্ত ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে নতুন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সে সবক্ষেত্রে কি পদক্ষেপ নেয়- এসব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষত বিএনপির কাছে প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার চাইছে বলে মনে হয়। জুলাই ঘোষণার আড়ালে অন্তর্বর্তী সরকার ও জুলাই সংগঠকরা দায়মুক্তি এবং শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক অবস্থান বা প্রস্থানের নিশ্চয়তা চান। এ লক্ষ্যেই সরকারের বিশেষ আগ্রহে এবং খালেদা জিয়ার হস্তক্ষেপ ও মধ্যবর্তিতায় নাকি লন্ডন বৈঠক। প্রধান উপদেষ্টা বিদেশের মাটিতে বসে ‘একটি মাত্র দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়’ বলে যে বিএনপিকে তাচ্ছিল্য করে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সামনে বক্তব্য দিলেন এবং তার এমপ্লয়ারদের দিয়ে যারাই নির্বাচন চান তারা ‘র’র এজেন্ট বা ভারতীয় আধিপত্যবাদের কাছে আত্মসমর্পণকারী বলে প্রচার চালালেন- দু’সপ্তাহ পার হওয়ার আগেই সেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিদেশের মাটিতে বসেই বৈঠক করতে হলো। এবং বৈঠক শেষে যদি কিন্তু রেখেও ঘোষণা দিতে হচ্ছে রমজানের পূর্বেই ফেব্রুয়ারি মাসেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। লন্ডন বৈঠকে উপদেষ্টা পরিষদের কাউকে না রেখে প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বিতর্কিত খলিলুর রহমানের উপস্থিতি ও আমির খসরুর সঙ্গে তার প্রস্তুতিমূলক বৈঠক এবং যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে সরকারের পক্ষ থেকে খলিলুর রহমানের প্রতিনিধিত্ব করা ইঙ্গিতবহ।
অন্যদিকে আলোচনায় আসন ভাগাভাগি ও ক্ষমতার অংশীদারিত্ব নিয়েও নানা কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ মডেলের বিতর্কিত নির্বাচন যেহেতু অতি সাম্প্রতিক তাই দূরবর্তী ১৯৭৯ মডেলের নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টিও নাকি আলোচনায় আছে। এনসিপি নেতৃত্বের একটা অংশ নাকি অন্তর্বর্তী সরকার, বিএনপি, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এমনকি সামরিক বাহিনীর কাছেও আসন ও ক্ষমতার অংশীদারিত্ব নিয়ে কথাবার্তা বলছেন। দেনদরবারও করেছেন তাই লন্ডন বৈঠকে যে বিষয়েই আলোচনা হোক না কেন এনসিপির অতি বিপ্লবীদের জন্য এবং ২০২৪-এর ছাত্র-গণআন্দোলনকে ঘিরে বৈপ্লবিক ব্যাখ্যাদানকারীদের জন্য এ পরিস্থিতি সুখকর নয়। তবে আজ এটাই নিদারুণ বাস্তবতা। প্রাক্তন সমন্বয়ক ও এনসিপি নেতাদের মধ্যে যারা ৫৬ ইঞ্চি বুকের ছাতি ফুলিয়ে ছড়ি ঘোরাতেন আপাতত তাদের কণ্ঠস্বরও নিম্নগামী।
ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের সঙ্গে একান্ত আলোচনার সময়ে কি কি বিষয়ে মতৈক্য বা মতানৈক্য হলো তা জনপরিসরে আসতে সময় লাগতে পারে বা সবটা হয়তো এখনই জানা যাবে না। কিন্তু এটা পরিষ্কার ড. মুহাম্মদ ইউনূস অস্থিরতার মধ্যে আছেন। তিনি নিশ্চয়ই বুঝেছেন নির্দলীয় অভিভাবকত্বের জায়গা থেকে সরে যেয়ে ড. ইউনূস ছাত্র নেতৃত্বকে যে নতুন দল গড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন, সে দলে পরিশীলিত রাজনৈতিকবোধ ও দায়িত্বশীলতা নেই। আবার একই সঙ্গে তিনি জামায়াতে ইসলামকে কাছে টেনে যে রাজনৈতিক মেরুকরণ দাঁড় করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন তার ফলশ্রুতিতে এনসিপির একাংশ এবং জামায়াত-হেফাজতের উচ্ছৃঙ্খলতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে তার সরকারের অক্ষমতা সুস্পষ্ট। এ পরিস্থিতিতে
তিনি অনেকটা অসহায়, অস্থির হয়ে পড়েছেন। ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তিনি বলেন, দেশে নির্বাচনের পরিবেশ নেই, নির্বাচন দিলে ব্যালট বাক্স রক্ষা করা যাবে না। নির্বাচন দিতে হলে তিনি পদত্যাগ করবেন। মাত্র ১৫ দিন পরেই ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে দেয়া ভাষণে নির্বাচনের ঘোষণা দেন এবং তার এক সপ্তাহ পরে লন্ডনে যেয়ে বলছেন নির্বাচনের জন্য চমৎকার পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে সেরা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তার মাঝে এ অস্থিরতা দেখে ও স্বল্প সময়ের মধ্যে বিপরীতমুখী কথাবার্তা শুনে পুরানো দিনের গানের লাইন মনে পড়ছে ‘যাতে থে জাপান, পহোচ গয়ে চিন...।’
তিনি কৃতী পুরুষ। বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব। যেখানে খুশি যেতে বা পৌঁছাতে পারেন। তবে যাওয়ার আগে এটা বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন, ইঁদুর মারার জন্য গত ১০ মাসে যে কেউটে সাপ পোষা হয়েছে জাতিকে যেন তার ছোবল খেতে না হয়।
যে ‘মব উল্লম্ফন’র রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয়েছে তার অবসান যেন তারা করে যান। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিতর্কিত ২০১৪, ‘১৮, ‘২৪ বা ১৯৭৯ মডেল নয় ১৯৯১ মডেলের মতো একটি অর্থবহ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনই আপাত সুরক্ষা। যেহেতু নির্বাচনী হাওয়া বইছে প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের দপ্তরে এবং বিভিন্ন কমিশনে কর্মরত দেশি, বিদেশি বা দ্বৈত নাগরিক, ছাত্রপ্রতিনিধি যারাই কর্মরত আছেন তারা রাজনৈতিক দল সংশ্লিষ্টতা পরিত্যাগ করবেন, রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকবেন অথবা সরকার থেকে বিদায় নেবেন। রাগ-অনুরাগের বশবর্তী হয়ে কারও পক্ষে বা বিপক্ষে কিছু বলবেন না। বর্তমান পরিস্থিতিতে এটাই সুরক্ষা। আমাদের বন্দর, আমাদের সীমান্তকে ভিনদেশের স্বার্থ রক্ষাকারী ইজারাদার ও পাহারাদারদের লোলুপ দৃষ্টি থেকে সুরক্ষা দিতে হবে। শান্তিতে নোবেল জয়ী অভিভাবকসম এই প্রবীণ ব্যক্তিত্বের কাছে জাতি এই সুরক্ষা আশা করতেই পারে। ড. ইউনূস এবং সুশীল সমাজের বেশ কয়েকজন সেরা মানুষদের নিয়ে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদ এই সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হলে সবাই মিলে কোরাস গাইতে হবেÑলই গো বুক পেতে অনল-বাণ...!
[লেখক : সাবেক ছাত্র নেতা ]
আনোয়ারুল হক
সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
পরাভূত শাসক শেখ হাসিনা পরপর তিনটি পাতানো নির্বাচন বা নির্বাচনের নামে প্রহসন করে একটি গণঅভ্যুত্থান বা অন্তত ‘শহুরে মানুষের অভ্যুত্থানের’ জন্য পটভূমি প্রস্তুত রেখেছিলেন। স্পষ্টতই তিনি, তার দল এবং দলীয় প্রভাবে সাজানো প্রশাসন একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনকে ভয় পেত। আবার জুলাই অভ্যুত্থানের পরেও নির্বাচনের কথা উঠলেই অন্তর্বর্তী শাসক আর তাদের ‘এম্পলয়ারদের’
চান্দি গরম হয়ে উঠত। নির্বাচনের দাবিদারদের ভারতীয় বা ‘র’-এর এজেন্ট তকমা দিয়ে দেওয়া হয়। একটি অর্থবহ নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং স্বাভাবিক গনতান্ত্রিক পুনর্গঠনের প্রয়োজনে কিছু জরুরি সংস্কার প্রয়োজন। ১০ মাস সেজন্য কম সময় ছিল না। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও কোনো অগ্রগতি নেই। মানুষের মাঝে এমন একটা ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যে, বিশেষ একটি দলের জন্য সুবিধা সৃষ্টির লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন ছাড়াই দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকতে চায়। সরকার আশাবাদী ছিল যে নির্বাচনের একটি তারিখ ঘোষণা করে দিলেই মানুষের সেই ধারণা পাল্টে যাবে এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। ওই তারিখ ঘিরেই সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়বে। কিন্তু ঘটনা ঘটেছে উল্টো। ডিসেম্বর-জানুয়ারির সুবিধাজনক সময় বাদ দিয়ে এপ্রিলের বৈরী আবহাওয়ায় এবং প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারের সময় পড়বে রমজান মাসে-এ কারণে সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করার পরেও সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে মানুষের মাঝে নানা প্রশ্ন উঠেছে। রাজনৈতিক সভার আগে-পরে রাজনৈতিক নেতারা যে স্টাইলে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন ঈদুল আজহার জামাতের পরে প্রধান উপদেষ্টা অনেকটা সেই স্টাইলে নামাজিদের একাংশের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সে সময়ে কিছুটা লাজুক কণ্ঠে ২-৪ জনকে ৫ বছর ৫ বছর উচ্চারণ করতে শোনা যায়। এই উচ্চারণ আবার টেলিভিশন ও সোশ্যাল মিডিয়াকে দিয়ে বারবার প্রচার করানোয় সেই সন্দেহ আরও দানা বাঁধে। এর আগে কয়েকজন উপদেষ্টার বক্তব্য, যেমন- জনগণ এ সরকারকে পাঁচ বছর চায়, কে বলেছে আমরা নির্বাচিত না, এই সরকার শুধু নির্বাচন করার জন্য আসে নাই, তোমাদের (এনসিপি) নেতৃত্বে আরও দশ বছর কাজ করতে চাই-জনমানসে ও রাজনৈতিক দল সমূহের মধ্যে সরকারের উদ্দেশ্য নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করে।
ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলো ও এনসিপি ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দলই এপ্রিল মাসের নির্বাচনের তারিখকে সমর্থন করেনি। জামায়াতে ইসলামীর জন্য খুবই বিব্রতকর বলে ডিসেম্বরে স্বাধীনতার বিজয়ের মাসে নির্বাচন না করার জন্য তাদের তীব্র চাপ আছে। তবে আওয়ামী লীগের অবর্তমানে দেশের বর্তমান রাজনীতিতে প্রায় নিরঙ্কুশ প্রাধান্য সৃষ্টিকারী দল বিএনপি মধ্য এপ্রিলে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। এমন একটা সময় নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে যখন গ্রীষ্মের দাবদাহ শুরু হবে এবং ঠিক তার আগেই রমজান ও ঈদুল ফিতর। অনেকেই মনে করছেন, ডিসেম্বরে নির্বাচন করার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সরকার ইচ্ছা করেই এপ্রিলের কথা ঘোষণা করে নির্বাচন নিয়ে ঘোরপ্যাঁচ করছে। যাতে হয়তোবা নির্বাচনী সিডিউল ঘোষণার আগে আগে কোনো কোনো রাজনৈতিক শক্তিকে দিয়ে নির্বাচন পেছানোর দাবি তোলা যায়। একটা যমুনা মব আয়োজন করতে পারলেই অন্তত আরও ৬ মাস পিছিয়ে দেয়া যাবে।
আবার সরকারি মহলে ভিন্ন চিন্তাও আছে। এনসিপি দলটি এখনো গুছিয়ে উঠতে পারেনি। আগামী ৬ মাস বা ১-২ বছরেও খুব একটা অগ্রগতির সম্ভাবনা নেই। এনসিপি নেতাদের অধিকাংশই জুলাই জাগরণের মুখ হওয়া সত্ত্বেও তাদের সভা-সমাবেশ করতে হয় ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলো কর্তৃক সরবরাহকৃত জনবল দিয়ে। এখন পর্যন্ত দলটি ‘সংস্কার আর বিচার’ জপ করা ছাড়া সুনির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দর্শন ও কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেনি। যতই দিন যাচ্ছে ততই স্পষ্ট হচ্ছে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আর আন্দোলনের বাহাদুরি এক কথা নয়। জুলাই আন্দোলনে রাজনৈতিক দলের বাইরে শিক্ষক, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিল্পী, সাহিত্যিকসহ যেসব ক্রিয়াশীল শক্তি বিশেষত শ্রুমজীবী মানুষের সহযোগিতা এবং সমর্থনের কারণে এ আন্দোলনটি সর্বজনীন রূপ পেয়েছিল, ১০ মাস ধরে যেভাবে দেশ চলছে তা দেখে তারা প্রকাশ্যেই অসন্তুষ্টি প্রকাশ করছেন।
বর্তমানে যে রাজনৈতিক মেরুকরণ সৃষ্টি হয়েছে তাতে করে নতুন দলের রাজনৈতিক অর্জন ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ঝুঁকির মুখে আছে। নির্বাচনী হাওয়ার মুখে তারা নিশ্চিতভাবেই কঠিন বাস্তবতার মুখে পড়েছেন।
ঈদের ছুটিতে তো গ্রামে ঘুরে এলাম। সেখানকার পরিস্থিতি শহর অপেক্ষা আরও ভিন্ন। গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামো আগের মতোই আছে। শুধু ভিন্নতা নেতৃত্বের আর রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যের। আগে নেতৃত্বে ছিল আওয়ামী লীগ, এখন বিএনপি। গ্রামে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব প্রকাশ্যে নেই। তবে এই ক্ষমতা কাঠামোর সঙ্গে তাদের যোগাযোগ আছে। আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরাও এ কাঠামোর মধ্যে মিশে আছেন। তাদের কণ্ঠস্বর নিচু গলায় কিন্তু কোনো অনুশোচনা নেই। দলের ভুলত্রুটি তারা বোঝেন। কিন্তু মনে করেন সবকিছুই একটা ষড়যন্ত্রের ফল। দলের প্রতি আনুগত্য এখনো অটুট বিএনপি নেতাকর্মীদের কণ্ঠস্বর উঁচুতে। প্রশাসন ও থানা পুলিশকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা তারা রাখেন। দুখঃজনক বিষয় হলো বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে দীর্ঘ সময় ধরে চলে আসা এক বাস্তবতা চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের অবসান হয়নি। কি শহর, কি গ্রাম। শুধু হাতবদল হয়েছে। এ ক্ষমতা কাঠামোতে ব্যতিক্রম হিসাবে কোথাও কোথাও জামায়াত এমনকি খুবই সীমিত জায়গায় বামপন্থিরা থাকলেও এনসিপির কোনো অস্তিত্ব নেই। এনসিপির কোন কেন্দ্রীয় নেতা এলাকায় গেলে প্রশাসন ও ধর্মীয় সংগঠনের সহযোগিতায় তাদের সমাবেশ বা পথসভা করতে হয়। তাই এনসিপি নেতা সারজিস আলম যথার্থই বলেছেন, ‘এ পরিস্থিতিতে নির্বাচন হলে জয়লাভ তো দূরের কথা, অধিকাংশ আসনে জামানত হারাতে হবে।’ তবে এনসিপি নেতাদের একাংশ ঢাকাতে বসেই রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যের সদ্ব্যবহার করে অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন।
সরকারও দেশে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি করতে পারেনি। অর্থনীতির সূচকগুলো নিম্নগামী। নির্বাচিত সরকার অন্তর্বর্তী সরকারের এত দিনকার কাজগুলোকে কতটুকু স্বীকৃতি দেবে, সমন্বয়কতন্ত্রের নামে মব সৃষ্টি করে যে সমস্ত ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে নতুন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সে সবক্ষেত্রে কি পদক্ষেপ নেয়- এসব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষত বিএনপির কাছে প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার চাইছে বলে মনে হয়। জুলাই ঘোষণার আড়ালে অন্তর্বর্তী সরকার ও জুলাই সংগঠকরা দায়মুক্তি এবং শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক অবস্থান বা প্রস্থানের নিশ্চয়তা চান। এ লক্ষ্যেই সরকারের বিশেষ আগ্রহে এবং খালেদা জিয়ার হস্তক্ষেপ ও মধ্যবর্তিতায় নাকি লন্ডন বৈঠক। প্রধান উপদেষ্টা বিদেশের মাটিতে বসে ‘একটি মাত্র দল ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়’ বলে যে বিএনপিকে তাচ্ছিল্য করে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সামনে বক্তব্য দিলেন এবং তার এমপ্লয়ারদের দিয়ে যারাই নির্বাচন চান তারা ‘র’র এজেন্ট বা ভারতীয় আধিপত্যবাদের কাছে আত্মসমর্পণকারী বলে প্রচার চালালেন- দু’সপ্তাহ পার হওয়ার আগেই সেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিদেশের মাটিতে বসেই বৈঠক করতে হলো। এবং বৈঠক শেষে যদি কিন্তু রেখেও ঘোষণা দিতে হচ্ছে রমজানের পূর্বেই ফেব্রুয়ারি মাসেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। লন্ডন বৈঠকে উপদেষ্টা পরিষদের কাউকে না রেখে প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বিতর্কিত খলিলুর রহমানের উপস্থিতি ও আমির খসরুর সঙ্গে তার প্রস্তুতিমূলক বৈঠক এবং যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে সরকারের পক্ষ থেকে খলিলুর রহমানের প্রতিনিধিত্ব করা ইঙ্গিতবহ।
অন্যদিকে আলোচনায় আসন ভাগাভাগি ও ক্ষমতার অংশীদারিত্ব নিয়েও নানা কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ মডেলের বিতর্কিত নির্বাচন যেহেতু অতি সাম্প্রতিক তাই দূরবর্তী ১৯৭৯ মডেলের নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টিও নাকি আলোচনায় আছে। এনসিপি নেতৃত্বের একটা অংশ নাকি অন্তর্বর্তী সরকার, বিএনপি, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এমনকি সামরিক বাহিনীর কাছেও আসন ও ক্ষমতার অংশীদারিত্ব নিয়ে কথাবার্তা বলছেন। দেনদরবারও করেছেন তাই লন্ডন বৈঠকে যে বিষয়েই আলোচনা হোক না কেন এনসিপির অতি বিপ্লবীদের জন্য এবং ২০২৪-এর ছাত্র-গণআন্দোলনকে ঘিরে বৈপ্লবিক ব্যাখ্যাদানকারীদের জন্য এ পরিস্থিতি সুখকর নয়। তবে আজ এটাই নিদারুণ বাস্তবতা। প্রাক্তন সমন্বয়ক ও এনসিপি নেতাদের মধ্যে যারা ৫৬ ইঞ্চি বুকের ছাতি ফুলিয়ে ছড়ি ঘোরাতেন আপাতত তাদের কণ্ঠস্বরও নিম্নগামী।
ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের সঙ্গে একান্ত আলোচনার সময়ে কি কি বিষয়ে মতৈক্য বা মতানৈক্য হলো তা জনপরিসরে আসতে সময় লাগতে পারে বা সবটা হয়তো এখনই জানা যাবে না। কিন্তু এটা পরিষ্কার ড. মুহাম্মদ ইউনূস অস্থিরতার মধ্যে আছেন। তিনি নিশ্চয়ই বুঝেছেন নির্দলীয় অভিভাবকত্বের জায়গা থেকে সরে যেয়ে ড. ইউনূস ছাত্র নেতৃত্বকে যে নতুন দল গড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন, সে দলে পরিশীলিত রাজনৈতিকবোধ ও দায়িত্বশীলতা নেই। আবার একই সঙ্গে তিনি জামায়াতে ইসলামকে কাছে টেনে যে রাজনৈতিক মেরুকরণ দাঁড় করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন তার ফলশ্রুতিতে এনসিপির একাংশ এবং জামায়াত-হেফাজতের উচ্ছৃঙ্খলতা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে তার সরকারের অক্ষমতা সুস্পষ্ট। এ পরিস্থিতিতে
তিনি অনেকটা অসহায়, অস্থির হয়ে পড়েছেন। ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে তিনি বলেন, দেশে নির্বাচনের পরিবেশ নেই, নির্বাচন দিলে ব্যালট বাক্স রক্ষা করা যাবে না। নির্বাচন দিতে হলে তিনি পদত্যাগ করবেন। মাত্র ১৫ দিন পরেই ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে দেয়া ভাষণে নির্বাচনের ঘোষণা দেন এবং তার এক সপ্তাহ পরে লন্ডনে যেয়ে বলছেন নির্বাচনের জন্য চমৎকার পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে সেরা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তার মাঝে এ অস্থিরতা দেখে ও স্বল্প সময়ের মধ্যে বিপরীতমুখী কথাবার্তা শুনে পুরানো দিনের গানের লাইন মনে পড়ছে ‘যাতে থে জাপান, পহোচ গয়ে চিন...।’
তিনি কৃতী পুরুষ। বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব। যেখানে খুশি যেতে বা পৌঁছাতে পারেন। তবে যাওয়ার আগে এটা বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন, ইঁদুর মারার জন্য গত ১০ মাসে যে কেউটে সাপ পোষা হয়েছে জাতিকে যেন তার ছোবল খেতে না হয়।
যে ‘মব উল্লম্ফন’র রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয়েছে তার অবসান যেন তারা করে যান। বর্তমান পরিস্থিতিতে বিতর্কিত ২০১৪, ‘১৮, ‘২৪ বা ১৯৭৯ মডেল নয় ১৯৯১ মডেলের মতো একটি অর্থবহ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনই আপাত সুরক্ষা। যেহেতু নির্বাচনী হাওয়া বইছে প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টাদের দপ্তরে এবং বিভিন্ন কমিশনে কর্মরত দেশি, বিদেশি বা দ্বৈত নাগরিক, ছাত্রপ্রতিনিধি যারাই কর্মরত আছেন তারা রাজনৈতিক দল সংশ্লিষ্টতা পরিত্যাগ করবেন, রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত থাকবেন অথবা সরকার থেকে বিদায় নেবেন। রাগ-অনুরাগের বশবর্তী হয়ে কারও পক্ষে বা বিপক্ষে কিছু বলবেন না। বর্তমান পরিস্থিতিতে এটাই সুরক্ষা। আমাদের বন্দর, আমাদের সীমান্তকে ভিনদেশের স্বার্থ রক্ষাকারী ইজারাদার ও পাহারাদারদের লোলুপ দৃষ্টি থেকে সুরক্ষা দিতে হবে। শান্তিতে নোবেল জয়ী অভিভাবকসম এই প্রবীণ ব্যক্তিত্বের কাছে জাতি এই সুরক্ষা আশা করতেই পারে। ড. ইউনূস এবং সুশীল সমাজের বেশ কয়েকজন সেরা মানুষদের নিয়ে গঠিত উপদেষ্টা পরিষদ এই সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হলে সবাই মিলে কোরাস গাইতে হবেÑলই গো বুক পেতে অনল-বাণ...!
[লেখক : সাবেক ছাত্র নেতা ]