জাঁ-নেসার ওসমান
“ব্যাংক, ব্যাংক নয়! মানে কী? এসব আবার কি ঢং শুরু করছেন! আপনেরা মিয়া আঁতেলেকচুয়ালরা আপনেগো চোয়াল নাড়ায়া যা ইচ্ছা তাই বলবেন আর আমরা সাধারণ পাবলিক তাই মাইন্না নিমু?
“ব্যাংক ব্যাংক নয়!! আমি কি বলতে চাচ্ছি তুই একটু বুঝবি না?”
“এতে না বোঝার কি আছে, আপনে মিয়া বলতাছেন, ব্যাংক ব্যাংক নয়। তারপর দুদিন পর বলবেন, এইযে সাংবাদিকরে কোর্টের চত্বরে গুন্ডা দিয়া পিটায়া রক্তাক্ত করল, তারপর কার্টুন আঁকলে কান চাপাতিতে থাপড়ায়া মাইরা ফ্যালাইলেন, হেলিকপ্টার থ্যেইক্কা গুল্লি মাইরা অবোধ শিশুরে মারলেন, ট্যাংক থ্যেইক্কা জ্যান্ত পোলাডারে মাইরা রাস্তায় ফ্যালাইলেন, তারপরে কোইবেন, স্বৈরাচার স্বৈরাচার নয়!!”
“হেলিকপ্টার থেকে গুলি করেনি সাউন্ড বোমা ফাটিয়েছে...”
“শব্দবোমা!! এই কতা কোইতে আপনের লজ্জা করলো না? মিয়া বাঙালি হয়া বাঙালিরে গুল্লি মারলো আর আপনে কন মমতাজের ফাইট্টা যায় গানের সাউন্ড ফাটাইছে?? আপনের কথা শুইন্না মিয়া সত্যিই বুকটা ফাইট্টা যায়, বুকটা ফাইট্টা যায়...”
“আরে বুড়বক আমিতো সেই বুকটা ফাইট্টা যায় মানে বুকের মানে, মানুষের হাহাকারের কথাই বলছিলাম।”
“ব্যাংকের সাথে মানুষের হাহাকার মাইনে কী?”
“আচ্ছা তুইই বল ব্যাংক কি জন্য?”
“সিম্পেল কথা, আইজকাল কেউ আর ঘরে টাকা রাখে না সব টাকা ব্যাংকে রাখে, প্রয়োজন মতো আবার টাকা ব্যাংক থেকে তুইল্লা খরচা করে সিম্পেল ব্যাপার এহানে বুকের হাহাকারের তো, কোনোই স্কোপ দেখি না!”
“তুমি ধনী ব্যক্তি তোমার কথা আলাদা কিন্তু ওই যে প্রান্তিক আমার মতো আপামর জনসাধারণ তারা এখন ব্যাংকে টাকা তুলতে গেলে ব্যাংক বলছে, ভাই স্বৈরাচারের দোসররা সব টাকা নিয়ে গেছে, আমরা একটু তারল্য সংকটে আছি, আপনি টাকা পরে নেন। আজকে টাকা দিতে পারবো না, আস্তে আস্তে দিবো, ব্যাংকে টাকা নেই...”
“এইটা আপনে কি বলচেন যে, আমি তো হুনছি এক সাংবাদিকের মানে স্বৈরাচারের দোসরের বৌ ও তিন মেয়ের মোট একশ পঞ্চাশটা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, হ্যেয়তো বৌ-পোলাপান সবতে মিল্লা ৫ আগস্টের পরপরই মোট প্রায় তিনশ আশি কোটি টাকা ব্যাংক থেকে তুইলালচে। আর আপনে কন মিয়া ব্যাংকে ট্যাকা নাই! হাগোলনি কোনো?”
“ভাই তুই কেন বাস্তবটা মানছিস না। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে গত সাত দিন ধরে এক রিটেইল ব্যাংক বন্ধ। পাশাপাশি একই ভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে গত পাঁচ দিন ধরে এক কমার্শিয়াল ব্যাংক বন্ধ, এখন তুই সাধারণ গ্রহকের কথা ভেবে দ্যেখ। বেচারারা চিকিৎসার জন্য হসপিটালের বিল শোধ করতে পারছে না। বাচ্চার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার ফি দিতে পারছে না। মাস শেষে বাড়িভাড়ার টাকা তুলতে পারছে না, ফলে চারিদিকে তোর ভাষায় বুকটা ফ্যাইট্টা যায় বুকটা ফ্যাইট্টা যায়। নিজের রক্ত পানি করা সৎ রোজগার ব্যাংকে রেখে এখন নিজেই আর সে টাকা তুলতে পারছে না!! এ-যাতনা কি তুই বুঝতে পারবি??”
“ওয়া কন কী!! তয় ব্যাংকের কাস্টমার এটিএম বুথ থ্যেইক্কা ক্রেডিট কার্ডে ট্যাকা তুইল্লা লইলে পারে।”
“আরে ভাই ব্যাংক বন্ধ মানে সাথে সাথে গোদের ওপর বিষ ফোঁড়ার মতো, এটিএম বুথও বন্ধ।”
“তয় পাবলিক ক্ষেপে না ক্যেন?”
“দু-এক ব্যাংকে পাবলিক ভাঙচুর ও অফিসারদের পিটিয়েছে। কিন্তু ভায়োলেন্স তো আর তারল্য সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। এই তারল্য সংকটে পড়ে ব্যাংকের কাউন্টারে কত গ্রাহকের বুকফাটা হাহাকার কান্না যদি তুই দেখতি, তাহলে তুই তোর অশ্রু সংবরণ করতে পারতি নারে। কানাডা থেকে প্রবাসী এক মহিলার ব্যাংকে নিজের টাকা পাওয়ার জন্য কাকুতি-মিনতি, তারপর কান্না-আহাজারি, সহ্য হয় না। সত্যি বুকটা ফাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায়।”
“এই জন্যেই তো কোই কি ব্যেবাগ ট্যাকার এই অবস্থা ক্যান? আসলেই স্বৈরাচারের দোসররা মহাস্মার্ট। দেখছেন হালার পোলারা কি করছে?”
“এর মাঝে তুই আবার স্বৈরাচারের স্মার্টনেস কি দেখলি রে ভাই?”
“ক্যা আপনে বুঝলেন না?”
“কি বুঝব। ব্যাংক গ্রাহকের ট্যাকা দিতে পারছে না! মানে ব্যাংক তার স্বভাবিক কাজ করতে পারছে না, অর্থাৎ ব্যাংক আর ব্যাংক নেই, ব্যাংক ব্যাংক নয়, এটা এখন স্বৈরাচারের কলঙ্কের একটা চালচিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে!!”
“আরে বুইজ্যা দ্যেখেন, এই যে কমার্শিয়াল, রিটেইল, ইনভেস্টমেন্ট, এজেন্ট ব্যাংক। হ্যেরপর সেভিংস, কারেন্ট, ডিমান্ড ডিপোজিট, মানি মার্কেট, টাইমড অ্যাকাউন্ট গত স্বৈরাচারের দোসররা এই সবের ধারেকাছে যায় নাই। হ্যেরা ঠিকই জানত চুরির ট্যাকা, ঘুষের ট্যাকা, চাকরি দ্যেওনের ট্যাকা, গরিবের জমির ট্যাকা ব্যাংকে রাখলে আর তুলতে পারবো না। কারণ আমেরিকার রিজার্ভ ব্যাংক থ্যেইক্কা হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের আট কোটি দশ লাখ ডলার হ্যাক করছে। ফলে হ্যেরা সব ট্যাকা বস্তা বস্তা ভইরা খাটের নিচে ফ্যালায়া রাখছে। স্বৈরাচারের দোসরগো নিজেগো ব্যাংক থাকতেও হ্যেরা, হ্যেগো আমলারা, বারো লাখ টাকার ছাগলটা সব সব সব্বাই বস্তা বস্তা ট্যাকা ঘরে... রাখছে। ব্যাংক আর ব্যাংকের কাজ ঠিকমতো করতে পারতাছে না। এক সেন্সে কথাটা ঠিকই কোইছেন; ব্যাংক ব্যাংক নয়...।”
[লেখক : চলচ্চিত্রকার ]
জাঁ-নেসার ওসমান
বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫
“ব্যাংক, ব্যাংক নয়! মানে কী? এসব আবার কি ঢং শুরু করছেন! আপনেরা মিয়া আঁতেলেকচুয়ালরা আপনেগো চোয়াল নাড়ায়া যা ইচ্ছা তাই বলবেন আর আমরা সাধারণ পাবলিক তাই মাইন্না নিমু?
“ব্যাংক ব্যাংক নয়!! আমি কি বলতে চাচ্ছি তুই একটু বুঝবি না?”
“এতে না বোঝার কি আছে, আপনে মিয়া বলতাছেন, ব্যাংক ব্যাংক নয়। তারপর দুদিন পর বলবেন, এইযে সাংবাদিকরে কোর্টের চত্বরে গুন্ডা দিয়া পিটায়া রক্তাক্ত করল, তারপর কার্টুন আঁকলে কান চাপাতিতে থাপড়ায়া মাইরা ফ্যালাইলেন, হেলিকপ্টার থ্যেইক্কা গুল্লি মাইরা অবোধ শিশুরে মারলেন, ট্যাংক থ্যেইক্কা জ্যান্ত পোলাডারে মাইরা রাস্তায় ফ্যালাইলেন, তারপরে কোইবেন, স্বৈরাচার স্বৈরাচার নয়!!”
“হেলিকপ্টার থেকে গুলি করেনি সাউন্ড বোমা ফাটিয়েছে...”
“শব্দবোমা!! এই কতা কোইতে আপনের লজ্জা করলো না? মিয়া বাঙালি হয়া বাঙালিরে গুল্লি মারলো আর আপনে কন মমতাজের ফাইট্টা যায় গানের সাউন্ড ফাটাইছে?? আপনের কথা শুইন্না মিয়া সত্যিই বুকটা ফাইট্টা যায়, বুকটা ফাইট্টা যায়...”
“আরে বুড়বক আমিতো সেই বুকটা ফাইট্টা যায় মানে বুকের মানে, মানুষের হাহাকারের কথাই বলছিলাম।”
“ব্যাংকের সাথে মানুষের হাহাকার মাইনে কী?”
“আচ্ছা তুইই বল ব্যাংক কি জন্য?”
“সিম্পেল কথা, আইজকাল কেউ আর ঘরে টাকা রাখে না সব টাকা ব্যাংকে রাখে, প্রয়োজন মতো আবার টাকা ব্যাংক থেকে তুইল্লা খরচা করে সিম্পেল ব্যাপার এহানে বুকের হাহাকারের তো, কোনোই স্কোপ দেখি না!”
“তুমি ধনী ব্যক্তি তোমার কথা আলাদা কিন্তু ওই যে প্রান্তিক আমার মতো আপামর জনসাধারণ তারা এখন ব্যাংকে টাকা তুলতে গেলে ব্যাংক বলছে, ভাই স্বৈরাচারের দোসররা সব টাকা নিয়ে গেছে, আমরা একটু তারল্য সংকটে আছি, আপনি টাকা পরে নেন। আজকে টাকা দিতে পারবো না, আস্তে আস্তে দিবো, ব্যাংকে টাকা নেই...”
“এইটা আপনে কি বলচেন যে, আমি তো হুনছি এক সাংবাদিকের মানে স্বৈরাচারের দোসরের বৌ ও তিন মেয়ের মোট একশ পঞ্চাশটা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, হ্যেয়তো বৌ-পোলাপান সবতে মিল্লা ৫ আগস্টের পরপরই মোট প্রায় তিনশ আশি কোটি টাকা ব্যাংক থেকে তুইলালচে। আর আপনে কন মিয়া ব্যাংকে ট্যাকা নাই! হাগোলনি কোনো?”
“ভাই তুই কেন বাস্তবটা মানছিস না। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে গত সাত দিন ধরে এক রিটেইল ব্যাংক বন্ধ। পাশাপাশি একই ভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিয়ে গত পাঁচ দিন ধরে এক কমার্শিয়াল ব্যাংক বন্ধ, এখন তুই সাধারণ গ্রহকের কথা ভেবে দ্যেখ। বেচারারা চিকিৎসার জন্য হসপিটালের বিল শোধ করতে পারছে না। বাচ্চার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষার ফি দিতে পারছে না। মাস শেষে বাড়িভাড়ার টাকা তুলতে পারছে না, ফলে চারিদিকে তোর ভাষায় বুকটা ফ্যাইট্টা যায় বুকটা ফ্যাইট্টা যায়। নিজের রক্ত পানি করা সৎ রোজগার ব্যাংকে রেখে এখন নিজেই আর সে টাকা তুলতে পারছে না!! এ-যাতনা কি তুই বুঝতে পারবি??”
“ওয়া কন কী!! তয় ব্যাংকের কাস্টমার এটিএম বুথ থ্যেইক্কা ক্রেডিট কার্ডে ট্যাকা তুইল্লা লইলে পারে।”
“আরে ভাই ব্যাংক বন্ধ মানে সাথে সাথে গোদের ওপর বিষ ফোঁড়ার মতো, এটিএম বুথও বন্ধ।”
“তয় পাবলিক ক্ষেপে না ক্যেন?”
“দু-এক ব্যাংকে পাবলিক ভাঙচুর ও অফিসারদের পিটিয়েছে। কিন্তু ভায়োলেন্স তো আর তারল্য সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। এই তারল্য সংকটে পড়ে ব্যাংকের কাউন্টারে কত গ্রাহকের বুকফাটা হাহাকার কান্না যদি তুই দেখতি, তাহলে তুই তোর অশ্রু সংবরণ করতে পারতি নারে। কানাডা থেকে প্রবাসী এক মহিলার ব্যাংকে নিজের টাকা পাওয়ার জন্য কাকুতি-মিনতি, তারপর কান্না-আহাজারি, সহ্য হয় না। সত্যি বুকটা ফাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায়।”
“এই জন্যেই তো কোই কি ব্যেবাগ ট্যাকার এই অবস্থা ক্যান? আসলেই স্বৈরাচারের দোসররা মহাস্মার্ট। দেখছেন হালার পোলারা কি করছে?”
“এর মাঝে তুই আবার স্বৈরাচারের স্মার্টনেস কি দেখলি রে ভাই?”
“ক্যা আপনে বুঝলেন না?”
“কি বুঝব। ব্যাংক গ্রাহকের ট্যাকা দিতে পারছে না! মানে ব্যাংক তার স্বভাবিক কাজ করতে পারছে না, অর্থাৎ ব্যাংক আর ব্যাংক নেই, ব্যাংক ব্যাংক নয়, এটা এখন স্বৈরাচারের কলঙ্কের একটা চালচিত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে!!”
“আরে বুইজ্যা দ্যেখেন, এই যে কমার্শিয়াল, রিটেইল, ইনভেস্টমেন্ট, এজেন্ট ব্যাংক। হ্যেরপর সেভিংস, কারেন্ট, ডিমান্ড ডিপোজিট, মানি মার্কেট, টাইমড অ্যাকাউন্ট গত স্বৈরাচারের দোসররা এই সবের ধারেকাছে যায় নাই। হ্যেরা ঠিকই জানত চুরির ট্যাকা, ঘুষের ট্যাকা, চাকরি দ্যেওনের ট্যাকা, গরিবের জমির ট্যাকা ব্যাংকে রাখলে আর তুলতে পারবো না। কারণ আমেরিকার রিজার্ভ ব্যাংক থ্যেইক্কা হ্যাকাররা বাংলাদেশ ব্যাংকের আট কোটি দশ লাখ ডলার হ্যাক করছে। ফলে হ্যেরা সব ট্যাকা বস্তা বস্তা ভইরা খাটের নিচে ফ্যালায়া রাখছে। স্বৈরাচারের দোসরগো নিজেগো ব্যাংক থাকতেও হ্যেরা, হ্যেগো আমলারা, বারো লাখ টাকার ছাগলটা সব সব সব্বাই বস্তা বস্তা ট্যাকা ঘরে... রাখছে। ব্যাংক আর ব্যাংকের কাজ ঠিকমতো করতে পারতাছে না। এক সেন্সে কথাটা ঠিকই কোইছেন; ব্যাংক ব্যাংক নয়...।”
[লেখক : চলচ্চিত্রকার ]