alt

উপ-সম্পাদকীয়

দুর্নীতি নির্মূল করা কি সম্ভব?

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

: শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ শাসনামলের দুর্নীতির ওপর একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে। শ্বেতপত্র বলছে, বিগত ১৫ বছরে ২৮ উপায়ে দুর্নীতির মাধ্যমে ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অবৈধভাবে পাচার হয়েছে। দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এই শ্বেতপত্র তৈরি করেছেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে। অনুমাননির্ভর তথ্য আর গোঁজামিলে ভর্তি এই মূল্যবান শ্বেতপত্র। করিৎকর্মা প-িতরা তিন মাসে ৪০০ পৃষ্ঠার শ্বেতপত্রে দুর্নীতির ইতিবৃত্ত বর্ণনা করলেন, কিন্তু শ্বেতপত্রের বয়স ছয় মাস পার হয়ে গেলেও সরকার একজন চোরও ধরতে পারল না। আওয়ামী লীগ সরকার শ্বেতপত্র ছাড়াই চোর ধরা শুরু করেছিল, আইজিপি বেনজির আহমেদ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মতিউর রহমানের দুর্নীতির খতিয়ান মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচারও করেছে। শুধু বেনজির আর মতিউর এই দুজনেই কি ২৩৪ বিলিয়ন ডলার চুরি করেছে? যদি তাই না হয়, চোর তো আরও আছে।

বিগত পনের বছরের দুর্নীতিবাজদের শনাক্ত করে সময় নষ্ট করার সময় এখন অন্তর্বর্তী সরকারের নেই, তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত, এই অবস্থায় তারা বরং তাদের আমলের চুরি ও ঘুস-দুর্নীতি বন্ধ করুকÑ তাতেই দেশ অনেকটা শুদ্ধ হয়ে যাবে, জাতি জাতে উঠবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মুখে শুনে শুনে অন্তর্বর্তী সরকারও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। জিরো টলারেন্সের কঠোর নীতির মধ্যেই শেখ হাসিনার বাসার পিয়ন চারশ কোটি টাকার মালিক হয়ে গিয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের জিরো টলারেন্সের ভেতর উপদেষ্টাদের পিএ বা পিএসদের দুর্নীতির যে সব গল্প মিডিয়ায় এসেছে তা রীতিমতো ভয়াবহ। বিএনপিও জিরো টলারেন্সের কথা বলছে; ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নেয়া কথা ঘোষণা করেছেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। জামায়াতে ইসলাম সৎ লোকের শাসন চায়, জিরো টলারেন্সের কথা বলেছে কিনা জানি না। জিরো টলারেন্সের নীতিতে বিশ্বাসী বিএনপির আমলে দেশ পাঁচ-পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।

বিএনপির আমলে বিদেশে পাচার করা কিছু টাকা সিঙ্গাপুর থেকে আওয়ামী লীগ সরকার ফেরত আনতে সমর্থ হয়েছিল; কিন্তু আওয়ামী লীগ তাদের আমলে পাচার হওয়া একটি টাকাও ফেরত আনার চেষ্টা করেনি। করার কথাও নয়। কোন সরকার তাদের আমলের ঘুস আর দুর্নীতি শনাক্ত করে না। আওয়ামী লীগ শুরু করেছিল, শেষ করেনি। ক্যাসিনোকা-ের পর দুর্নীতি উচ্ছেদের কাজ হঠাৎ থেমে যায়। ক্ষমতায় থাকাকালীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে দলীয় সরকারের শক্ত অবস্থান না থাকায় ঘুস আর আর দুর্নীতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। ক্ষমতাচ্যুত না হওয়া পর্যন্ত দুদক ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতির নিশানাও খুঁজে পায় না, কিন্তু ক্ষমতা হারানোর পরদিনই শুরু হয় দুর্নীতির ফিরিস্তি। এখন আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হলেই তারা সমস্বরে বলতে থাকবে, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’। একই কথা এতদিন বলেছে বিএনপি।

ক্ষমতায় বসেই দলীয় সরকারের প্রধান কাজ তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা সব মামলা প্রত্যাহার করা। সেনাসমর্থিত ড. ফখরুদ্দীন সরকারে আমলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা সব মামলা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসেই প্রত্যাহার করে নিয়েছিল, বিএনপিও একই কাজ করেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বিএনপি, জামায়াত উভয় দলের অনেক মামলা নির্বাহী আদেশে ইতোমধ্যে নিষ্পন্ন হয়ে গেছে বা যাবে। তবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মামলা যে হয় না তা কিন্তু নয়, বিরোধী দলকে হেনস্তা করার সব উপকরণ সরকারের অধীনে থাকে বিধায় সরকার ইচ্ছা করলেই বিরোধী দলের শীর্ষ নেতার কোমরেও পিস্তল, হিরোইন গুঁজে দিতে পারে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ফেরির ‘প্লেট চুরির’ অভিযোগ এনে মামলা করা হয়েছিল। সাবের হোসেন চৌধুরী শুধু ধনী নন, ভদ্রলোকও। সত্য-মিথ্যানির্বিশেষে সব মামলা প্রত্যাহারের এই প্রবণতা যতদিন থাকবে ততদিন দেশ থেকে ঘুস, দুর্নীতি, অপরাধ দূর হবে না।

ঘুস, দুর্নীতি এখন জাতীয় ব্যাধি, এর চিকিৎসা কেউ চায় না। অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানও একই কথা বলেছেন, তার বক্তব্য হচ্ছে রাজনীতিবিদ, আমলা কেউই চায় না দুর্নীতি বন্ধ হোক। তিনি অপচয় ও অদক্ষতার কথাও উল্লেখ করেছেন। পরিকল্পনা উপদেষ্টা নরম মানুষ, নরম করে যা বলেছেন তা হলো দেশে ঘুস-দুর্নীতি বহালতবিয়তে আছে।তিনিও বিদ্যুৎ উপদেষ্টার মতো অপচয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেছেন, প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রদত্ত অপ্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা বাদ বা কমানোর পদক্ষেপ নেয়া হলেই প্রশাসনে অস্থিরতা বেড়ে যাবে। এই অস্থিরতার ভয়ে প্রকল্পের অপ্রয়োজনীয় খরচ বাদ দেয়া যাচ্ছে না। তাহলে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সংস্কার সংস্কার বলে মুখে ফেনা তুলছেন কেন? তিনিও তো সামাল দিতে পারছেন না। দলীয় সরকার ক্ষমতায় এলে সংস্কারের নামও কেউ মুখে নেবে না, কারণ তখন দলীয় শ্রমিক সংগঠনগুলোর ক্ষমতা হবে অপ্রতিরোধ্য। কোন কর্মকর্তা শ্রমিকদের কথা না শুনলেই ট্যাগ লাগানো হবে ‘স্বৈরাচারের দোসর’।

অন্তর্বর্তী সরকার দুর্নীতি উদ্ঘাটনের ক্ষেত্রে পক্ষাবলম্বন করছে, তারা কেবল বিগত পনের বছরের দুর্নীতির কথা বলে যাচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ তো আগেও দেশ শাসন করেছে, তখন কি দুর্নীতি হয়নি? অন্তর্বর্তী সরকার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কথা শুনলে মনে হয়, শুধু আওয়ামী লীগই দুর্নীতিবাজ, আওয়ামী লীগের লোকদের প্রশাসন থেকে সরিয়ে দিলে দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল হয়ে যাবে। তা-ই যদি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতীতি হয় তাহলে বিএনপির শাসনামলে বাংলাদেশ উপর্যুপরি পাঁচ-পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হলো কী করে! তারপরও বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা বিশ্বাস করে না যে, বিএনপির শীর্ষ নেতারা দুর্নীতিবাজ হতে পারে। একই কথা সমভাবে প্রযোজ্য আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টির ক্ষেত্রেওÑ এই দুটি দলের কর্মী সমর্থকরাও বিশ্বাস করে না যে তাদের দলের শীর্ষ নেতারাও চুরি করতে পারে, ঘুস খেতে পারে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যথার্থই বলেছেন, জনগণ ‘টাকা খেয়ে ভোট দিয়ে দেয়’। দলীয় প্রতীকে দলকানা এবং টাকার ভোটের আধিক্যের কারণেই দুর্নীতিবাজরা বারবার নির্বাচিত হয়, মনোনয়নও দেয়া হয় দুর্নীতিবাজদের।

ঘুস আর দুর্নীতির সংস্কার কোন সরকারই করেনি, কোন সরকার করবেও না। অন্যদিকে সংস্কার যতই করা হোক, বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধ হবে না, পাচার করা টাকা ফেরতও আসবে না। ঘুস এবং দুর্নীতি দেদার হলে অতিরিক্ত অর্থ বিদেশে পাচারের প্রয়োজন হয়, কারণ দেশে এত বেশি টাকা লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা নেই। অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের আমলে এক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের পরিচালক ছিলেন, তিনি ঘুসদাতাকে কোন ইতস্তত না করেই তার বিদেশি একাউন্টের নম্বর দিয়ে দিতেনÑ গল্পটি শুনেছি বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বজন শ্রদ্ধেয় সাবেক ডেপুটি গভর্নর প্রয়াত আল্লাহ মালিক কাজেমীর মুখে। তিনি আরও একটি কথা বলতেন, আইন যত কঠোর হয়, ঘুস আর দুর্নীতি তত বাড়ে। বিদেশে পাচার করা সব টাকা ঘুস বা দুর্নীতির নয়, এর মধ্যে সততার মাধ্যমে উপার্জিত টাকাও আছে। নিজের অর্থ বিদেশে নেয়া নিষিদ্ধ বলেই পাচার করা সব অর্থকে অবৈধ বলা হচ্ছে; কিন্তু ধনী দেশগুলোতে এমন নিষেধাজ্ঞা না থাকায় বিদেশে সব নাগরিকই অর্থ কোন অনুমতি ছাড়াই নিতে পারে, বিদেশে অর্থ নেয়াকে তারা পাচার বলে না, অবৈধ বলে না।

সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়ও দুর্নীতি হয়; সম্ভাব্য বিকল্প নেতৃত্ব দমাতে হলে জ্ঞাতসারে দুর্নীতি করার সুযোগ দিতে হয়। দুর্নীতিবাজ না হলেও দুর্নীতিবাজ বানাতে সরকারের বেশি সময় লাগে না। আওয়ামী লীগ আমলে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের আয়কর নথি নিয়ে কয়েকবার টানাটানি হয়েছে, আয়কর নথি নিয়ে টানাটানি হলেই তারা বিনাশর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন, সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা বন্ধ রেখেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে আন্দোলনরত কয়েকজন নেতার ফাইল নিয়েও নাকি টানাটানি হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং প্রেসিডেন্ট এরশাদ সরকারের আমলে প্রতিদ্বন্দ্বীদের দুর্নীতি করার সুযোগ দেয়া হতো, তারপর তাদের দুর্নীতির নথি প্রয়োজনে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে প্রস্তুত করে রাখা হতো। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের প্রয়াত রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদের একটি কথা গুরুত্বপূর্ণ। ড. ফখরউদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিকল্প নেতৃত্ব গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। এই চেষ্টার কারণে আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদসহ আরও কয়েকজন নেতা আওয়ামী লীগে ছিলেন অবহেলিত। তখনকার ভূমিকা নিয়ে তোফায়েল আহমেদের ব্যাখ্যা হচ্ছে, সেই সময়ে তার আয়কর নথি নিয়ে টানাটানি হয়েছিল এবং তার অভিমত আয়কর নথি শতভাগ ঠিক থাকলেও তার মধ্যে খুঁত বের করা অসম্ভব নয়। তাই তিনি বাধ্য হয়ে সরকারের গোপনীয় হুমকির মুখে আওয়ামী লীগে আলাদা নেতৃত্ব গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পর্যবেক্ষণ শতভাগ ঠিক। নির্বাচন মানেই টাকার খেলা। দেশব্যাপী ঘুস আর দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। চোরও চুরির বিচার চায়, ধর্ষকও ধর্ষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার। গণভবনে লুট হয় কোরআন শরিফ, লুট হয় হাঁস, মুরগি, মাছ, টেবিল, চেয়ার, ফ্যান, শাড়ি, ব্লাউজ, পেটিকোট, ব্রা। আরও একটি লজ্জাজনক ঘটনা ঘটেছে জাতীয় ফল মেলার উৎসবে। গণভবন এবং ফল লুটে ছিল না কোন না-খাওয়া মানুষ, ছিল না অনাহারক্লিষ্ট কঙ্কালসার ভবঘুরে, ছিল না ভাতমাগা গরিব-দুঃখী-ভিক্ষুকÑ ছিল প্যান্ট-শার্ট-পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা সুপুরুষ এবং দামি শাড়ি-কামিজ পরা নারী। তাদের অনেকের ছিল দাড়ি-টুপি-হিজাব-বোরকা। এদের অনেকেই ছিল দেশের সেরা মাদ্রাসা-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাক্তার, প্রকৌশলী, ব্যাংকার, সাংবাদিক, উকিল, ব্যবসায়ী, আলেম, ইমাম, মুয়াজ্জিন। সুযোগ পেলে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ শুধু গণভবন আর ফল মেলায় চুরি করে না, তারা ক্ষমতা পেলে রাজার আসনে বসেও চুরি করে। এই দেশে দুর্নীতি আর চুরি কখনোই বন্ধ হবে না, কারণ ক্ষমতায় থাকলে চোরও সাধু, ক্ষমতা হারালে সাধুও চোর হয়ে যায়।

[লেখক : সাবেক নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক]

জলবায়ু পরিবর্তন মডেলে গণিতের ব্যবহার

দুর্ঘটনাজনিত দুর্যোগ-পরবর্তী করণীয় কী?

ডেঙ্গু, জিকা আর চিকুনগুনিয়া : একই উৎস, ত্রিমুখী সংকট

কেন থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?

দরকার মানসম্মত শিক্ষা

ইসরায়েলের যুদ্ধনীতি ও বিশ্ব নিরাপত্তার সংকট

রম্যগদ্য : ‘বেইমান রাইট ব্রাদার্স’

মানসিক স্বাস্থ্যসেবা : আইনি কাঠামো, সংকট ও সম্ভাবনার দিক

ছবি

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র

দুর্যোগে অবিবেচকদেরকে কি দায়িত্বশীল ভাবা যায়?

ওয়াসার পদ্মা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট : এক জীবন্ত বোটানিক্যাল গার্ডেন

রেলপথের দুর্দশা : সমন্বিত পরিকল্পনা না হলে বিপর্যয় অনিবার্য

বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র নাকি ক্ষমতার অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ?

পিরোজপুরের স্কুলটির ফলাফল বিপর্যয় এবং আচরণগত অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ

কোনো শাসকই অপরাজেয় নয়

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি : বাঙালিকে রুচির দৈন্যে টেনে নামানো হচ্ছে

জনসংখ্যা ও যুবশক্তির চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

রাষ্ট্রের কাছে স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চাই

পার্বত্য চট্টগ্রাম : প্রাকৃতিক সম্পদ ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা

ইউরেশিয়ায় তৃতীয় বিকল্প গালফ কূটনীতি

‘বিপ্লবী সংস্কার’ কি সম্ভব

রম্যগদ্য : ‘ব্যাংক, ব্যাংক নয়’

মবতন্ত্রের জয়

ডিজিটাল ক্লান্তি ও ‘সর্বক্ষণ সক্রিয়’ সংস্কৃতির শ্রেণীগত রাজনীতি

ছবি

বোধের স্ফূরণ, না ‘মেটিকুলাস ডিজাইন’?

এসএসসিতে গণিত বিষয়ে ফল বিপর্যয় : কারণ ও উত্তরণের উপায়

দক্ষ মানবসম্পদ ও সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার

আফ্রিকায় হঠাৎ কেন যুক্তরাষ্ট্রের ঝোঁক?

ঢাকা মহানগর ও বুড়িগঙ্গা

জামাই মেলা : উৎসব, ঐতিহ্য ও কৃষ্টির রঙিন চিত্রপট

হারিয়ে যাওয়া ক্লাস, কঠোর মূল্যায়ন আর প্রশ্নের জটিলতায় নুয়ে পড়া এক প্রজন্ম

বৈষম্য দূর করে নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলুন

চিকিৎসা যেন বাণিজ্যের হাতিয়ারে পরিণত না হয়

পথশিশু ও বাংলাদেশে সামাজিক চুক্তির ব্যর্থতা

মেগা প্রকল্প : প্রশ্ন হওয়া উচিত স্বচ্ছতা নিয়ে

আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি

tab

উপ-সম্পাদকীয়

দুর্নীতি নির্মূল করা কি সম্ভব?

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ শাসনামলের দুর্নীতির ওপর একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে। শ্বেতপত্র বলছে, বিগত ১৫ বছরে ২৮ উপায়ে দুর্নীতির মাধ্যমে ২৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অবৈধভাবে পাচার হয়েছে। দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এই শ্বেতপত্র তৈরি করেছেন, খুব অল্প সময়ের মধ্যে। অনুমাননির্ভর তথ্য আর গোঁজামিলে ভর্তি এই মূল্যবান শ্বেতপত্র। করিৎকর্মা প-িতরা তিন মাসে ৪০০ পৃষ্ঠার শ্বেতপত্রে দুর্নীতির ইতিবৃত্ত বর্ণনা করলেন, কিন্তু শ্বেতপত্রের বয়স ছয় মাস পার হয়ে গেলেও সরকার একজন চোরও ধরতে পারল না। আওয়ামী লীগ সরকার শ্বেতপত্র ছাড়াই চোর ধরা শুরু করেছিল, আইজিপি বেনজির আহমেদ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মতিউর রহমানের দুর্নীতির খতিয়ান মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচারও করেছে। শুধু বেনজির আর মতিউর এই দুজনেই কি ২৩৪ বিলিয়ন ডলার চুরি করেছে? যদি তাই না হয়, চোর তো আরও আছে।

বিগত পনের বছরের দুর্নীতিবাজদের শনাক্ত করে সময় নষ্ট করার সময় এখন অন্তর্বর্তী সরকারের নেই, তারা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত, এই অবস্থায় তারা বরং তাদের আমলের চুরি ও ঘুস-দুর্নীতি বন্ধ করুকÑ তাতেই দেশ অনেকটা শুদ্ধ হয়ে যাবে, জাতি জাতে উঠবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের মুখে শুনে শুনে অন্তর্বর্তী সরকারও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। জিরো টলারেন্সের কঠোর নীতির মধ্যেই শেখ হাসিনার বাসার পিয়ন চারশ কোটি টাকার মালিক হয়ে গিয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকারের জিরো টলারেন্সের ভেতর উপদেষ্টাদের পিএ বা পিএসদের দুর্নীতির যে সব গল্প মিডিয়ায় এসেছে তা রীতিমতো ভয়াবহ। বিএনপিও জিরো টলারেন্সের কথা বলছে; ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নেয়া কথা ঘোষণা করেছেন দলটির যুগ্ম মহাসচিব শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। জামায়াতে ইসলাম সৎ লোকের শাসন চায়, জিরো টলারেন্সের কথা বলেছে কিনা জানি না। জিরো টলারেন্সের নীতিতে বিশ্বাসী বিএনপির আমলে দেশ পাঁচ-পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।

বিএনপির আমলে বিদেশে পাচার করা কিছু টাকা সিঙ্গাপুর থেকে আওয়ামী লীগ সরকার ফেরত আনতে সমর্থ হয়েছিল; কিন্তু আওয়ামী লীগ তাদের আমলে পাচার হওয়া একটি টাকাও ফেরত আনার চেষ্টা করেনি। করার কথাও নয়। কোন সরকার তাদের আমলের ঘুস আর দুর্নীতি শনাক্ত করে না। আওয়ামী লীগ শুরু করেছিল, শেষ করেনি। ক্যাসিনোকা-ের পর দুর্নীতি উচ্ছেদের কাজ হঠাৎ থেমে যায়। ক্ষমতায় থাকাকালীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে দলীয় সরকারের শক্ত অবস্থান না থাকায় ঘুস আর আর দুর্নীতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। ক্ষমতাচ্যুত না হওয়া পর্যন্ত দুদক ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতির নিশানাও খুঁজে পায় না, কিন্তু ক্ষমতা হারানোর পরদিনই শুরু হয় দুর্নীতির ফিরিস্তি। এখন আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হলেই তারা সমস্বরে বলতে থাকবে, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’। একই কথা এতদিন বলেছে বিএনপি।

ক্ষমতায় বসেই দলীয় সরকারের প্রধান কাজ তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা সব মামলা প্রত্যাহার করা। সেনাসমর্থিত ড. ফখরুদ্দীন সরকারে আমলে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা সব মামলা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসেই প্রত্যাহার করে নিয়েছিল, বিএনপিও একই কাজ করেছে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বিএনপি, জামায়াত উভয় দলের অনেক মামলা নির্বাহী আদেশে ইতোমধ্যে নিষ্পন্ন হয়ে গেছে বা যাবে। তবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার মামলা যে হয় না তা কিন্তু নয়, বিরোধী দলকে হেনস্তা করার সব উপকরণ সরকারের অধীনে থাকে বিধায় সরকার ইচ্ছা করলেই বিরোধী দলের শীর্ষ নেতার কোমরেও পিস্তল, হিরোইন গুঁজে দিতে পারে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ফেরির ‘প্লেট চুরির’ অভিযোগ এনে মামলা করা হয়েছিল। সাবের হোসেন চৌধুরী শুধু ধনী নন, ভদ্রলোকও। সত্য-মিথ্যানির্বিশেষে সব মামলা প্রত্যাহারের এই প্রবণতা যতদিন থাকবে ততদিন দেশ থেকে ঘুস, দুর্নীতি, অপরাধ দূর হবে না।

ঘুস, দুর্নীতি এখন জাতীয় ব্যাধি, এর চিকিৎসা কেউ চায় না। অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানও একই কথা বলেছেন, তার বক্তব্য হচ্ছে রাজনীতিবিদ, আমলা কেউই চায় না দুর্নীতি বন্ধ হোক। তিনি অপচয় ও অদক্ষতার কথাও উল্লেখ করেছেন। পরিকল্পনা উপদেষ্টা নরম মানুষ, নরম করে যা বলেছেন তা হলো দেশে ঘুস-দুর্নীতি বহালতবিয়তে আছে।তিনিও বিদ্যুৎ উপদেষ্টার মতো অপচয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি আক্ষেপ করে বলেছেন, প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রদত্ত অপ্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা বাদ বা কমানোর পদক্ষেপ নেয়া হলেই প্রশাসনে অস্থিরতা বেড়ে যাবে। এই অস্থিরতার ভয়ে প্রকল্পের অপ্রয়োজনীয় খরচ বাদ দেয়া যাচ্ছে না। তাহলে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সংস্কার সংস্কার বলে মুখে ফেনা তুলছেন কেন? তিনিও তো সামাল দিতে পারছেন না। দলীয় সরকার ক্ষমতায় এলে সংস্কারের নামও কেউ মুখে নেবে না, কারণ তখন দলীয় শ্রমিক সংগঠনগুলোর ক্ষমতা হবে অপ্রতিরোধ্য। কোন কর্মকর্তা শ্রমিকদের কথা না শুনলেই ট্যাগ লাগানো হবে ‘স্বৈরাচারের দোসর’।

অন্তর্বর্তী সরকার দুর্নীতি উদ্ঘাটনের ক্ষেত্রে পক্ষাবলম্বন করছে, তারা কেবল বিগত পনের বছরের দুর্নীতির কথা বলে যাচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ তো আগেও দেশ শাসন করেছে, তখন কি দুর্নীতি হয়নি? অন্তর্বর্তী সরকার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কথা শুনলে মনে হয়, শুধু আওয়ামী লীগই দুর্নীতিবাজ, আওয়ামী লীগের লোকদের প্রশাসন থেকে সরিয়ে দিলে দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল হয়ে যাবে। তা-ই যদি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতীতি হয় তাহলে বিএনপির শাসনামলে বাংলাদেশ উপর্যুপরি পাঁচ-পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হলো কী করে! তারপরও বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা বিশ্বাস করে না যে, বিএনপির শীর্ষ নেতারা দুর্নীতিবাজ হতে পারে। একই কথা সমভাবে প্রযোজ্য আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টির ক্ষেত্রেওÑ এই দুটি দলের কর্মী সমর্থকরাও বিশ্বাস করে না যে তাদের দলের শীর্ষ নেতারাও চুরি করতে পারে, ঘুস খেতে পারে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস যথার্থই বলেছেন, জনগণ ‘টাকা খেয়ে ভোট দিয়ে দেয়’। দলীয় প্রতীকে দলকানা এবং টাকার ভোটের আধিক্যের কারণেই দুর্নীতিবাজরা বারবার নির্বাচিত হয়, মনোনয়নও দেয়া হয় দুর্নীতিবাজদের।

ঘুস আর দুর্নীতির সংস্কার কোন সরকারই করেনি, কোন সরকার করবেও না। অন্যদিকে সংস্কার যতই করা হোক, বিদেশে অর্থ পাচার বন্ধ হবে না, পাচার করা টাকা ফেরতও আসবে না। ঘুস এবং দুর্নীতি দেদার হলে অতিরিক্ত অর্থ বিদেশে পাচারের প্রয়োজন হয়, কারণ দেশে এত বেশি টাকা লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা নেই। অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের আমলে এক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের পরিচালক ছিলেন, তিনি ঘুসদাতাকে কোন ইতস্তত না করেই তার বিদেশি একাউন্টের নম্বর দিয়ে দিতেনÑ গল্পটি শুনেছি বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বজন শ্রদ্ধেয় সাবেক ডেপুটি গভর্নর প্রয়াত আল্লাহ মালিক কাজেমীর মুখে। তিনি আরও একটি কথা বলতেন, আইন যত কঠোর হয়, ঘুস আর দুর্নীতি তত বাড়ে। বিদেশে পাচার করা সব টাকা ঘুস বা দুর্নীতির নয়, এর মধ্যে সততার মাধ্যমে উপার্জিত টাকাও আছে। নিজের অর্থ বিদেশে নেয়া নিষিদ্ধ বলেই পাচার করা সব অর্থকে অবৈধ বলা হচ্ছে; কিন্তু ধনী দেশগুলোতে এমন নিষেধাজ্ঞা না থাকায় বিদেশে সব নাগরিকই অর্থ কোন অনুমতি ছাড়াই নিতে পারে, বিদেশে অর্থ নেয়াকে তারা পাচার বলে না, অবৈধ বলে না।

সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায়ও দুর্নীতি হয়; সম্ভাব্য বিকল্প নেতৃত্ব দমাতে হলে জ্ঞাতসারে দুর্নীতি করার সুযোগ দিতে হয়। দুর্নীতিবাজ না হলেও দুর্নীতিবাজ বানাতে সরকারের বেশি সময় লাগে না। আওয়ামী লীগ আমলে হেফাজতে ইসলামের নেতাদের আয়কর নথি নিয়ে কয়েকবার টানাটানি হয়েছে, আয়কর নথি নিয়ে টানাটানি হলেই তারা বিনাশর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন, সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলা বন্ধ রেখেছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে আন্দোলনরত কয়েকজন নেতার ফাইল নিয়েও নাকি টানাটানি হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং প্রেসিডেন্ট এরশাদ সরকারের আমলে প্রতিদ্বন্দ্বীদের দুর্নীতি করার সুযোগ দেয়া হতো, তারপর তাদের দুর্নীতির নথি প্রয়োজনে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে প্রস্তুত করে রাখা হতো। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের প্রয়াত রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদের একটি কথা গুরুত্বপূর্ণ। ড. ফখরউদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিকল্প নেতৃত্ব গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। এই চেষ্টার কারণে আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদসহ আরও কয়েকজন নেতা আওয়ামী লীগে ছিলেন অবহেলিত। তখনকার ভূমিকা নিয়ে তোফায়েল আহমেদের ব্যাখ্যা হচ্ছে, সেই সময়ে তার আয়কর নথি নিয়ে টানাটানি হয়েছিল এবং তার অভিমত আয়কর নথি শতভাগ ঠিক থাকলেও তার মধ্যে খুঁত বের করা অসম্ভব নয়। তাই তিনি বাধ্য হয়ে সরকারের গোপনীয় হুমকির মুখে আওয়ামী লীগে আলাদা নেতৃত্ব গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পর্যবেক্ষণ শতভাগ ঠিক। নির্বাচন মানেই টাকার খেলা। দেশব্যাপী ঘুস আর দুর্নীতির মহোৎসব চলছে। চোরও চুরির বিচার চায়, ধর্ষকও ধর্ষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার। গণভবনে লুট হয় কোরআন শরিফ, লুট হয় হাঁস, মুরগি, মাছ, টেবিল, চেয়ার, ফ্যান, শাড়ি, ব্লাউজ, পেটিকোট, ব্রা। আরও একটি লজ্জাজনক ঘটনা ঘটেছে জাতীয় ফল মেলার উৎসবে। গণভবন এবং ফল লুটে ছিল না কোন না-খাওয়া মানুষ, ছিল না অনাহারক্লিষ্ট কঙ্কালসার ভবঘুরে, ছিল না ভাতমাগা গরিব-দুঃখী-ভিক্ষুকÑ ছিল প্যান্ট-শার্ট-পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা সুপুরুষ এবং দামি শাড়ি-কামিজ পরা নারী। তাদের অনেকের ছিল দাড়ি-টুপি-হিজাব-বোরকা। এদের অনেকেই ছিল দেশের সেরা মাদ্রাসা-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাক্তার, প্রকৌশলী, ব্যাংকার, সাংবাদিক, উকিল, ব্যবসায়ী, আলেম, ইমাম, মুয়াজ্জিন। সুযোগ পেলে ‘আশরাফুল মাখলুকাত’ শুধু গণভবন আর ফল মেলায় চুরি করে না, তারা ক্ষমতা পেলে রাজার আসনে বসেও চুরি করে। এই দেশে দুর্নীতি আর চুরি কখনোই বন্ধ হবে না, কারণ ক্ষমতায় থাকলে চোরও সাধু, ক্ষমতা হারালে সাধুও চোর হয়ে যায়।

[লেখক : সাবেক নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক]

back to top